17-02-2023, 12:58 PM
একুল-ওকুল
অর্ক যে ওকে আর ভালবাসে না, জানে বিদিশা।
আজ না, অনেকদিন থেকেই।
খারাপ লাগত আগে খুব। অর্কর নৈর্ব্যক্তিকতা, ঔদাসীন্য সবটাই মনটা ভেঙে দিত বড্ড। খালি মনে হতো -"কেন এরকম হলো?" বা, "আমি কি এতই খারাপ?"
তখন কাঁদত বিদিশা। অভিমান, ঝগড়াও করেছে কতবার! প্রথম প্রথম অর্ক অস্বীকার করত সবটা। বলত "পাগল নাকি?" বা, "সেরকম কিছু না"। বলত, কিন্তু সেটা যে শুধু বলার জন্যই, বুঝতে পারত বিদিশা। অফিস থেকে ফিরেও দায়সারা একটা দুটো কথার পরেই মোবাইল নিয়ে খুটুরখাটুর, দশটা প্রশ্নের একটার উত্তর দেওয়া, তিরিক্ষি মেজাজ… আর রাত হলেই অন্ধকার ঘরে মোবাইলের আলোর জ্বলা -নেভা…
বুঝেছিল বিদিশা। নাহয় চাকরি বাকরিই করে না, কিন্তু বোকা তো নয় ও? এতবছর ধরে দেখছে অর্ককে, বুঝতে পারবে না? তবে বুঝতে পারলেও তারপরে কি করবে ভাবতে পারছিল না। ওই বাড়ি চলে যাবে? ডিভোর্স নেবে? বাবা মা দুজনেরই যথেষ্ট বয়স হয়েছে, ভাই-রত্না-শিমুলকে নিয়ে ভর ভরন্ত সংসার। সেখানে এক দুদিন গিয়ে থাকা যায়, কিন্তু সারাজীবনের মতো, তা যতই বাবার তৈরি বাড়িতে ওর ও অধিকার থাকুক না কেন - সম্ভব হতো না। আর, নিজস্ব একটা আর্থিক সংস্থান থাকলেও নাহয় কথা ছিল… সেটাও তো নেই…
'নেই' যে, তার কারণটা কিন্তু অর্কই। একটা চিটফান্ড কোম্পানির মিডিয়া - পাবলিসিটি ডিপার্টমেন্টে চাকরি করত বিদিশা। গ্রাফিক ডিজাইনিং এর কোর্স করা ছিল, কোম্পানির বিভিন্নরকম ব্রোশিওর, লিফলেট, হোর্ডিং এর ডিজাইন, নিউজপেপারে বিজ্ঞাপনের ক্রিয়েটিভ - এসব বানাত। কিন্তু কোম্পানির ব্যবসা ডুবল আর ডামাডোলে পড়ে চাকরিটাও খোয়া গেছিল বিদিশার, সেইসময়ের আরও লক্ষ লক্ষ মানুষের মতোই। তারপর অনেক চেষ্টা করেছে চাকরির। কিন্তু ডাক আসত না। এলেও ইন্টারভিউ বোর্ডে এমন ভাব করত সবাই যেন চিটফান্ডের টাকা ও ই নিয়ে নিয়েছে!
এমনি গোটা কয়েক ব্যর্থ ইন্টারভিউয়ের পরেই অর্কও বলেছিল ও বাড়িতে থাকলেই ভাল - বাড়িটা নাকি 'বাড়ি বাড়ি' লাগে। ও রাজি ছিল না। বারবার বলেছিল সব কোম্পানি কি একরকম হবে নাকি! কিন্তু, অর্ক জোর করছিল। আর, ওর শ্বশুরমশাইয়ের সেই সময়ই শরীর খারাপ হলো, সবমিলিয়ে আর কোথাও জয়েন করাই হলো না। অথচ এখনও মাঝেমাঝেই ফটোশপ, কোরেল ড্র, প্রিমিয়ার প্রো র স্বপ্ন দেখে বিদিশা। একটা আদ্যিকালের ল্যাপটপ আছে, তাতে প্র্যাকটিশ করে। ফ্রিলান্সিং এর চেষ্টা করেছে, কিন্তু এতবছর পরে ওর পোর্টফোলিও দুর্বল হয়ে গেছে তাই ভাল কাজ কিছুই পায়নি। ছূটকোছাটকা কাজ - লিফলেট ডিজাইন করার এসেছিল, কিন্তু টাকা বড্ড কম - খাটনিতে পোষাত না।
এদিকে সব জেনেও অর্ক মাঝেমাঝেই বড্ড কথা শোনায়। পান থেকে চুন খসলেই। বিদিশা ভাবত, বয়স হচ্ছে, তাই হয়ত মেজাজটাও খারাপ থাকে।
শ্রীরূপা নামের একটি মেয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল অর্ক। তার স্বামী একদিন ফোন করে সে কি গালাগাল অর্ক কে! আর পাশে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিদিশা যেন লজ্জায় নুইয়ে পড়েছিল।
যত না অর্কর লজ্জা, তারচেয়েও বেশি বিদিশার।
কিছু না জেনে, না করেও যেন ও ই অপরাধী। মনে হতো আত্মীয় স্বজন সবাই বোধহয় জেনে গেল! সবাই বোধহয় ওদের নিয়েই কথা বলছে!
রাগে - দুঃখে বিদিশা কথা বলতে গেছিল এই নিয়ে, কিন্তু অর্ক ওকে ব্লক করে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটাই লক করে দিল। যেন, নিজের কৃতকর্মটি দোষের না, শুধু বিদিশার জেনে যাওয়াটাই অপরাধ!
তবে আবার তেমনই কিছু ঘটাচ্ছে অর্ক। রাতে খুটুরখাটুর চলতেই থাকে ফোন নিয়ে। তবে এবার একটু কম মাতামাতি… রাতেও এক দুবারই আলো জ্বলে মোবাইলের।
মাঝে মাঝে বিদিশা ভাবে, যা খুশি কর বাবা, 'স্বামীর অধিকার' চাইতে আসিস না… না পেয়ে পেয়ে ঘেন্না ধরে গেছে! এখন আর ভাল লাগে না!
এভাবেই দিন কাটে।
অর্ক মেসেজ করে, মেসেজ পেয়ে আত্মহারা।
বিদিশা সংসার নিয়ে, আর বাকি সময় ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে।
এই তো জীবন - চারকোণা দুনিয়ায় বন্দী!
ভ্যালেন্টাইনস ডে এসে গেল।
এটা নাকি প্রমিক-প্রেমিকাদের বিশেষ দিন। তা অর্কও কি ওর নতুন প্রেমিকাকে কিছু দেবে?
কি দেবে?
শাড়ি- গয়না? নাকি টাকা?
ভাবতে ভাবতে হাসে বিদিশা।
ফুলে ফুলে হাসে।
ওদিকে অফিসে বসে অর্কর তখন বুকে লাবডুব!
মধ্য ফেব্রুয়ারি তে খুব বেশি গরম পড়েনি এখনও, তাও ঘামে ভিজে যাচ্ছে কপাল।
ক'মাস আগে ইন্সটাগ্রামে আলাপ হয়েছিল একটি মেয়ের সঙ্গে। জুঁই দাশগুপ্ত। আদতে কলকাতার মেয়ে, বেলজিয়ামে পড়াশোনা করতে গেছিল, ওখানেই চাকরি করে এখন। বেশ সুন্দরী, আর চাবুক ফিগার! নিজে থেকেই মেসেজ করেছিল অর্ককে। বলেছিল, ওর নাকি বয়ফ্রেন্ডের নামও 'অর্ক' ছিল, যে ব্যাটা ওকে ঠকিয়েছিল। বেচারা মেয়েটা!
আর, অর্কর প্রিয় ফুলও জুঁই!
চ্যাট করত রোজ ওরা। তবে টাইমের ডিফারেন্সের জন্য সবসময় চ্যাট হতো না। জুঁই নিজের ছবি, ব্রাসেলসের ছবি পাঠাত। ভাল লাগত অর্কর। এমনি একটা মেয়ে ওকে ভালোবাসে! উফ! কী মারাত্মক ব্যাপার!
পাশে শুয়ে থাকা বিদিশার দিকে তাকিয়ে তখন ঘেন্না আসত অর্কের। কোথায় জুঁই, আর কোথায় বিদিশা! যেন চাঁদে আর পা*দে!
তা, ক'দিন আগে জুঁই বলল ও নাকি একটা গিফট দিতে চায় অর্ককে। ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষ্যে। একটা আইফোন! ওর থেকে অফিসের ঠিকানাও নিল। পার্সেলের ছবিও পাঠাল…
আনন্দ হচ্ছিল অর্কর খুব।
জুঁই ওকে এত, এত এত ভালবাসে?
আস্ত একটা আইফোন!!??
কিন্তু দু'দিন ধরে মোটা গলার একটা লোক ফোন করে রোজ বলছে এয়ারপোর্টের কাস্টমস ডিপার্টমেন্টে আইফোনটা আটকে আছে। হাজার কুড়ি জমা দিতে হবে।
কাগজ পড়ে অর্ক। তাই বুঝে গেছে এটা একটা চাল! পুরো ব্যাপারটাই সাজানো ছিল! জুঁই দাশগুপ্ত! বেলজিয়ামে থাকে… ব্রাসেলসের ছবি - সবটা সাজানো… ঠকানো হলো ওকে… উফ! এ যে কী যন্ত্রণা! যে ভালবাসে ভেবেছিল, সে ই এমন 'ফেক' হলো!
যদি অফিসে চলে আসে!
উফ! কী যে হবে! মান-সম্মান সব যাবে!
আর এইভাবে ঠকার কথাটা তো কাউকে বলতেও পারবে না!
নাহ্, অনেক হয়েছে - আর চ্যাট করবে না কখনও। ভগবান জাস্ট এইবারটা বাঁচিয়ে দিক…
ইনস্টাগ্রাম খুলে জুঁইকে ব্লক করতে গিয়ে দেখে অ্যাকাউন্টটাই নেই!
ফেক শা*লী! না, শা*লা বোধহয়!
লোক ঠকিয়ে আর ক'দিন চলবে! ছিঃ!
মনে মনে অভিশাপ দেয় অর্ক, 'জুঁই'কে!
তাতে অবশ্য বিদিশার কিচ্ছু এসে যায় না!
ইনস্টাতে 'জুঁই'য়ের অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাটিভেট করতে করতে হাসে ও!
বিদিশার ট্যালেন্ট কেমন - জানলই না অর্ক! সারাজীবন "তোমার দ্বারা কিস্যু হবে না" ই বলে গেল! গ্রাফিক ডিজাইনার হবার সুবাদে ইন্টারনেটে পাওয়া হাই রেজলিউশান ছবিতে মুখ আর পোষাক সুপার ইম্পোজ করা, বিদেশী শহরের ছবি দেওয়া, পার্সেলের ছবি দেওয়া - ওর কাছে খুব শ্রমসাধ্য কাজ ছিল না! আর, কলেজের বন্ধু অমিতকে "এই, আমার বরকে একটা প্র্যাংক কল করবি? একটু মজা করব" বলতেই ও ফোন করে দিল! আর কিছু না হোক, বিদিশা জানে, অর্ক কেমন নার্ভাস লোক। পুলিশে জানানো তো দূর, কলব্যাক করতেও পারবে না…
ঠিক হয়েছে!
জব্দ হয়েছে!
ফুলে ফুলে হাসছিল বিদিশা…
তবু, চোখের কোণে জল…
জুঁইয়ের সঙ্গে কথা বলার সময় কেমন আগের অর্ককে খুঁজে পেত ও… তেমনি দায়িত্ববান, নরম… উইটি…
বেলজিয়ামের সময়ের ব্যবধান মেনে মেসেজ করত ও…
আর অপেক্ষা করত অর্কর মেসেজের…
নিষিদ্ধ অপেক্ষা যেন এক…
সব বন্ধ হয়ে গেল…
আবার এক বাড়িতে দুজন মানুষ… যেন দুটি পৃথক দ্বীপ..!
খুব কান্না পাচ্ছিল বিদিশার…
খুব… খুব…।।
অর্ক যে ওকে আর ভালবাসে না, জানে বিদিশা।
আজ না, অনেকদিন থেকেই।
খারাপ লাগত আগে খুব। অর্কর নৈর্ব্যক্তিকতা, ঔদাসীন্য সবটাই মনটা ভেঙে দিত বড্ড। খালি মনে হতো -"কেন এরকম হলো?" বা, "আমি কি এতই খারাপ?"
তখন কাঁদত বিদিশা। অভিমান, ঝগড়াও করেছে কতবার! প্রথম প্রথম অর্ক অস্বীকার করত সবটা। বলত "পাগল নাকি?" বা, "সেরকম কিছু না"। বলত, কিন্তু সেটা যে শুধু বলার জন্যই, বুঝতে পারত বিদিশা। অফিস থেকে ফিরেও দায়সারা একটা দুটো কথার পরেই মোবাইল নিয়ে খুটুরখাটুর, দশটা প্রশ্নের একটার উত্তর দেওয়া, তিরিক্ষি মেজাজ… আর রাত হলেই অন্ধকার ঘরে মোবাইলের আলোর জ্বলা -নেভা…
বুঝেছিল বিদিশা। নাহয় চাকরি বাকরিই করে না, কিন্তু বোকা তো নয় ও? এতবছর ধরে দেখছে অর্ককে, বুঝতে পারবে না? তবে বুঝতে পারলেও তারপরে কি করবে ভাবতে পারছিল না। ওই বাড়ি চলে যাবে? ডিভোর্স নেবে? বাবা মা দুজনেরই যথেষ্ট বয়স হয়েছে, ভাই-রত্না-শিমুলকে নিয়ে ভর ভরন্ত সংসার। সেখানে এক দুদিন গিয়ে থাকা যায়, কিন্তু সারাজীবনের মতো, তা যতই বাবার তৈরি বাড়িতে ওর ও অধিকার থাকুক না কেন - সম্ভব হতো না। আর, নিজস্ব একটা আর্থিক সংস্থান থাকলেও নাহয় কথা ছিল… সেটাও তো নেই…
'নেই' যে, তার কারণটা কিন্তু অর্কই। একটা চিটফান্ড কোম্পানির মিডিয়া - পাবলিসিটি ডিপার্টমেন্টে চাকরি করত বিদিশা। গ্রাফিক ডিজাইনিং এর কোর্স করা ছিল, কোম্পানির বিভিন্নরকম ব্রোশিওর, লিফলেট, হোর্ডিং এর ডিজাইন, নিউজপেপারে বিজ্ঞাপনের ক্রিয়েটিভ - এসব বানাত। কিন্তু কোম্পানির ব্যবসা ডুবল আর ডামাডোলে পড়ে চাকরিটাও খোয়া গেছিল বিদিশার, সেইসময়ের আরও লক্ষ লক্ষ মানুষের মতোই। তারপর অনেক চেষ্টা করেছে চাকরির। কিন্তু ডাক আসত না। এলেও ইন্টারভিউ বোর্ডে এমন ভাব করত সবাই যেন চিটফান্ডের টাকা ও ই নিয়ে নিয়েছে!
এমনি গোটা কয়েক ব্যর্থ ইন্টারভিউয়ের পরেই অর্কও বলেছিল ও বাড়িতে থাকলেই ভাল - বাড়িটা নাকি 'বাড়ি বাড়ি' লাগে। ও রাজি ছিল না। বারবার বলেছিল সব কোম্পানি কি একরকম হবে নাকি! কিন্তু, অর্ক জোর করছিল। আর, ওর শ্বশুরমশাইয়ের সেই সময়ই শরীর খারাপ হলো, সবমিলিয়ে আর কোথাও জয়েন করাই হলো না। অথচ এখনও মাঝেমাঝেই ফটোশপ, কোরেল ড্র, প্রিমিয়ার প্রো র স্বপ্ন দেখে বিদিশা। একটা আদ্যিকালের ল্যাপটপ আছে, তাতে প্র্যাকটিশ করে। ফ্রিলান্সিং এর চেষ্টা করেছে, কিন্তু এতবছর পরে ওর পোর্টফোলিও দুর্বল হয়ে গেছে তাই ভাল কাজ কিছুই পায়নি। ছূটকোছাটকা কাজ - লিফলেট ডিজাইন করার এসেছিল, কিন্তু টাকা বড্ড কম - খাটনিতে পোষাত না।
এদিকে সব জেনেও অর্ক মাঝেমাঝেই বড্ড কথা শোনায়। পান থেকে চুন খসলেই। বিদিশা ভাবত, বয়স হচ্ছে, তাই হয়ত মেজাজটাও খারাপ থাকে।
শ্রীরূপা নামের একটি মেয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল অর্ক। তার স্বামী একদিন ফোন করে সে কি গালাগাল অর্ক কে! আর পাশে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিদিশা যেন লজ্জায় নুইয়ে পড়েছিল।
যত না অর্কর লজ্জা, তারচেয়েও বেশি বিদিশার।
কিছু না জেনে, না করেও যেন ও ই অপরাধী। মনে হতো আত্মীয় স্বজন সবাই বোধহয় জেনে গেল! সবাই বোধহয় ওদের নিয়েই কথা বলছে!
রাগে - দুঃখে বিদিশা কথা বলতে গেছিল এই নিয়ে, কিন্তু অর্ক ওকে ব্লক করে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটাই লক করে দিল। যেন, নিজের কৃতকর্মটি দোষের না, শুধু বিদিশার জেনে যাওয়াটাই অপরাধ!
তবে আবার তেমনই কিছু ঘটাচ্ছে অর্ক। রাতে খুটুরখাটুর চলতেই থাকে ফোন নিয়ে। তবে এবার একটু কম মাতামাতি… রাতেও এক দুবারই আলো জ্বলে মোবাইলের।
মাঝে মাঝে বিদিশা ভাবে, যা খুশি কর বাবা, 'স্বামীর অধিকার' চাইতে আসিস না… না পেয়ে পেয়ে ঘেন্না ধরে গেছে! এখন আর ভাল লাগে না!
এভাবেই দিন কাটে।
অর্ক মেসেজ করে, মেসেজ পেয়ে আত্মহারা।
বিদিশা সংসার নিয়ে, আর বাকি সময় ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে।
এই তো জীবন - চারকোণা দুনিয়ায় বন্দী!
ভ্যালেন্টাইনস ডে এসে গেল।
এটা নাকি প্রমিক-প্রেমিকাদের বিশেষ দিন। তা অর্কও কি ওর নতুন প্রেমিকাকে কিছু দেবে?
কি দেবে?
শাড়ি- গয়না? নাকি টাকা?
ভাবতে ভাবতে হাসে বিদিশা।
ফুলে ফুলে হাসে।
ওদিকে অফিসে বসে অর্কর তখন বুকে লাবডুব!
মধ্য ফেব্রুয়ারি তে খুব বেশি গরম পড়েনি এখনও, তাও ঘামে ভিজে যাচ্ছে কপাল।
ক'মাস আগে ইন্সটাগ্রামে আলাপ হয়েছিল একটি মেয়ের সঙ্গে। জুঁই দাশগুপ্ত। আদতে কলকাতার মেয়ে, বেলজিয়ামে পড়াশোনা করতে গেছিল, ওখানেই চাকরি করে এখন। বেশ সুন্দরী, আর চাবুক ফিগার! নিজে থেকেই মেসেজ করেছিল অর্ককে। বলেছিল, ওর নাকি বয়ফ্রেন্ডের নামও 'অর্ক' ছিল, যে ব্যাটা ওকে ঠকিয়েছিল। বেচারা মেয়েটা!
আর, অর্কর প্রিয় ফুলও জুঁই!
চ্যাট করত রোজ ওরা। তবে টাইমের ডিফারেন্সের জন্য সবসময় চ্যাট হতো না। জুঁই নিজের ছবি, ব্রাসেলসের ছবি পাঠাত। ভাল লাগত অর্কর। এমনি একটা মেয়ে ওকে ভালোবাসে! উফ! কী মারাত্মক ব্যাপার!
পাশে শুয়ে থাকা বিদিশার দিকে তাকিয়ে তখন ঘেন্না আসত অর্কের। কোথায় জুঁই, আর কোথায় বিদিশা! যেন চাঁদে আর পা*দে!
তা, ক'দিন আগে জুঁই বলল ও নাকি একটা গিফট দিতে চায় অর্ককে। ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষ্যে। একটা আইফোন! ওর থেকে অফিসের ঠিকানাও নিল। পার্সেলের ছবিও পাঠাল…
আনন্দ হচ্ছিল অর্কর খুব।
জুঁই ওকে এত, এত এত ভালবাসে?
আস্ত একটা আইফোন!!??
কিন্তু দু'দিন ধরে মোটা গলার একটা লোক ফোন করে রোজ বলছে এয়ারপোর্টের কাস্টমস ডিপার্টমেন্টে আইফোনটা আটকে আছে। হাজার কুড়ি জমা দিতে হবে।
কাগজ পড়ে অর্ক। তাই বুঝে গেছে এটা একটা চাল! পুরো ব্যাপারটাই সাজানো ছিল! জুঁই দাশগুপ্ত! বেলজিয়ামে থাকে… ব্রাসেলসের ছবি - সবটা সাজানো… ঠকানো হলো ওকে… উফ! এ যে কী যন্ত্রণা! যে ভালবাসে ভেবেছিল, সে ই এমন 'ফেক' হলো!
যদি অফিসে চলে আসে!
উফ! কী যে হবে! মান-সম্মান সব যাবে!
আর এইভাবে ঠকার কথাটা তো কাউকে বলতেও পারবে না!
নাহ্, অনেক হয়েছে - আর চ্যাট করবে না কখনও। ভগবান জাস্ট এইবারটা বাঁচিয়ে দিক…
ইনস্টাগ্রাম খুলে জুঁইকে ব্লক করতে গিয়ে দেখে অ্যাকাউন্টটাই নেই!
ফেক শা*লী! না, শা*লা বোধহয়!
লোক ঠকিয়ে আর ক'দিন চলবে! ছিঃ!
মনে মনে অভিশাপ দেয় অর্ক, 'জুঁই'কে!
তাতে অবশ্য বিদিশার কিচ্ছু এসে যায় না!
ইনস্টাতে 'জুঁই'য়ের অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাটিভেট করতে করতে হাসে ও!
বিদিশার ট্যালেন্ট কেমন - জানলই না অর্ক! সারাজীবন "তোমার দ্বারা কিস্যু হবে না" ই বলে গেল! গ্রাফিক ডিজাইনার হবার সুবাদে ইন্টারনেটে পাওয়া হাই রেজলিউশান ছবিতে মুখ আর পোষাক সুপার ইম্পোজ করা, বিদেশী শহরের ছবি দেওয়া, পার্সেলের ছবি দেওয়া - ওর কাছে খুব শ্রমসাধ্য কাজ ছিল না! আর, কলেজের বন্ধু অমিতকে "এই, আমার বরকে একটা প্র্যাংক কল করবি? একটু মজা করব" বলতেই ও ফোন করে দিল! আর কিছু না হোক, বিদিশা জানে, অর্ক কেমন নার্ভাস লোক। পুলিশে জানানো তো দূর, কলব্যাক করতেও পারবে না…
ঠিক হয়েছে!
জব্দ হয়েছে!
ফুলে ফুলে হাসছিল বিদিশা…
তবু, চোখের কোণে জল…
জুঁইয়ের সঙ্গে কথা বলার সময় কেমন আগের অর্ককে খুঁজে পেত ও… তেমনি দায়িত্ববান, নরম… উইটি…
বেলজিয়ামের সময়ের ব্যবধান মেনে মেসেজ করত ও…
আর অপেক্ষা করত অর্কর মেসেজের…
নিষিদ্ধ অপেক্ষা যেন এক…
সব বন্ধ হয়ে গেল…
আবার এক বাড়িতে দুজন মানুষ… যেন দুটি পৃথক দ্বীপ..!
খুব কান্না পাচ্ছিল বিদিশার…
খুব… খুব…।।