15-02-2023, 10:41 PM
সার্থক জনম
নিশিকান্ত সর্দার শহরে অনেক নাম ডাক করে ফেলেছেন ৷ ডাক্তার মোক্তার ব্যারিস্টার থাকলেও এ শহরে ভালো দর্জির খুব অভাব ৷ তাই তার কাছে দুজন আরও দর্জি কাজ করে আর তাতেও সামাল দেওয়া যায় না কাজের ভার ৷ আগে এ লাইনে এক টাকা বা দুই তিন টাকার বেশি কেউ দিত না ৷ তবে এখন হাত দিলেই ১০-২০ টাকা পাওয়া যায় ৷ দুটো মেশিন আর আরেকটা হাতকল চালিয়ে সারা দিনে ৫০০ টাকাও রোজগার হয়ে যায় তার ৷ সুখের মুখ দেখতে শুরু করেছে নিশিকান্ত ৷ দোকানটা চালা থেকে পাকা করে নিয়েছে গত বছর ৷ কিন্তু নিশিকান্তর নামডাক তার নরম সৎ ব্যবহারের জন্য ৷ পুলিশ এর পোশাক বানায় সে ৷ তাই বড় কত্তাদের সাথে ভালো হাত নিশিকান্তর ৷ সব ঠিক চললেও তার সুখের কাঁটা নিশিকান্তর মেয়ে চঞ্চলা ৷ সে যেমন সুন্দরী তেমনি চঞ্চল ৷ তার উপর ভরা যৌবন ৷ বিকেলে ছেলেরা ভিড় করে চঞ্চলাকে দেখার জন্য দোকানের সামনে ৷ নিশিকান্তর কড়া হুকুম বিকেলে চঞ্চলার দোকানে আশা বারণ ৷ সে সকালে চা দেয় আর দোকান পরিষ্কার করে দিয়ে যায় ৷ আজাদ, ফইজুল, শ্যামল নিশিকান্তর কানে কাজ করে ৷ তারা সকলেই পৌঢ় ৷ নিশিকান্তকে তাড়াতাড়ি চঞ্চলার বিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়েছে ৷ নিশিকান্ত ভালো যুতসই ছেলে পাচ্ছেন না ৷ এদিকে নিশিকান্তর দোকানের সামনের চায়ের দোকানে ৪ টে বড় লোকের ঘরের ছেলে বসে চা খাচ্ছে ৷ চঞ্চলা দোকানে চা দিতে এসেছে ৷ দোকানের চা তার সহ্য হয় না ৷ চঞ্চলাকে দেখেই ব্রতীন কনুই গুঁজে কপিলকে ইশারা করে ৷ কপিল সরোজকে দেখে বলে " দেখ দেখ মাল খানা দেখ যেন পাকা আম, আগে তো এই তল্লাটে দেখি নি ? পেলে দিন বর্তে যাবে মাইরি !" প্রবীর মাথা নাড়িয়ে ঠাণ্ডা মাথায় বলে " দেখে লাভ নেই, নিশিকান্তর মেয়ে নাম চঞ্চলা !" "এইই রে কেলো করেছে, নিশিকান্ত কে না টানলে হচ্ছিল না ? লোকটার এত ভালো রেপু শালা কিছু করা যাবে না !" ব্রতীন আফসোস করে ! কপিল " না ভাই তোরা যা পারিস কর আমি এমন মাল ছাড়ছি না!" কপিলের বাবা কলেজের প্রিন্সিপাল অখিল রঞ্জন মজুমদার, তাকেও লোকে এক ডাকে চেনে ৷ তাই তার সাহস অন্যদের থেকে একটু বেশি ৷
"দেখলেন দাদা দেখলেন, আপনাকে তো আগেই বলেছিলাম মেয়েটার তাড়া তাড়ি বিয়ে দিন, ছেলে গুলো যেন হাঁ করে গিলছে !" ফইজুল চেঁচিয়ে ওঠে নিশিকান্তর দিকে ৷ চঞ্চলা মাথা নামিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ায় ৷ নিশিকান্তর দোকানের পিছনেই বাড়ি ৷ কিন্তু বাজার ঘুরে বাড়ি যেতে হয় রাস্তা নেই বলে ৷ প্রবীর আর বাকিরা যে যার মোটর সাইকেল নিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো ৷ কপিল লম্বায় ৫-৯ ইঞ্চি, সুদর্শন বখে যাওয়া ছেলেদের মত নয় ৷ চালক চতুর বটে ৷ চঞ্চলাকে দেখে তার পাগল হওয়া স্বাভাবিক ৷ আজ চঞ্চলাকে রাস্তায় ডেকে কথা বলবেই কপিল ৷ নিশিকান্ত আজাদ এদের চোখ এড়িয়ে কপিল বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ৷ বাজার ফাঁকা এখনো লোক আসে নি বাজারে ৷ প্রবীর আর কপিল পড়তে আসে বাজারের কাছে ৷ একজন প্রফেসর থাকেন ৷ বলাই এর চায়ের দোকান ফেলে বাঁ দিকে বাঁক নিয়ে চঞ্চলা লম্বা লম্বা পা ফেলতে থাকে ৷ তার পড়া আছে সকালে ৷ সে প্রথম বর্ষে ইংলিশ অনার্স পড়ে এই শহরের নামী কলেজে ৷ কপিল বাইক নিয়ে চঞ্চলার একদম পাশে এসে সজোরে দাঁড়িয়ে পড়ে ৷ হতচকিত হয়ে চঞ্চলা কপিলের দিকে তাকিয়ে মুখ নামিয়ে চলতে উদ্যত হয় ৷ কিন্তু কপিল আজ তাকে তার কথা বলেই থামবে ৷ "এই যে হ্যাঁ আপনাকে বলছি, একটু দাঁড়ান !" চঞ্চলা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে কপিল কে ৷ জীবনে কেউ তার পথ আটকায়নি এই ভাবে ৷ চঞ্চলা খানিকটা রুঢ় হয়েই বলে " ভদ্রতা জানেন না ভদ্র বাড়ির মেয়েকে রাস্তায় এই ভাবে অপমান করছেন ?" কপিল এর মাথায় ভূত চেপে বসে ৷ " দেখুন অত শত আমি বুঝি না, আপনাকে দেখে আমার জীবন সঙ্গিনী পেয়ে গিয়েছি মনে হয়েছে তাই আপনাকেই আমার জীবন সঙ্গিনী হিসাবে পেতে চাই, তার জন্য আমায় কি করতে হবে সেটা বলুন ?" চঞ্চলা খানিকটা কৌতুক করার বাহানায় বলে " যান না এই কথাটাই আমার বাবাকে গিয়ে বলুন তিনি যদি সম্মতি দেন তাহলেই আমার সম্মতি পাবেন !" এই কথা বলার পর রেগে মেগে কত কত হয়ে চঞ্চলা বলে " আর সম্মতি না পেলে আমাকে দ্বিতীয় বার পথ আটকাবার চেষ্টা করবেন না কথাটা যেন মনে থাকে !" পিলারের মত দাঁড়িয়ে থাকে কপিল ৷ চঞ্চলা হেঁটে ক্ষণিকেই মিশে যায় অলিগলিতে ৷ কপিল একটা সিগারেট কেনে সামনের রাস্তার দোকান থেকে ৷ সিগারেট খাওয়া সে সবে দু চার মাস হল শিখেছে ৷ মাথা গরম হলেও সেটা কপিলের খারাপ লাগলো না কিন্তু বেশ অপমানিত মনে হলো তাকে ৷ ICSE তে ৯৬ শতাংশ নাম্বার নিয়ে পাশ করে শহরের নামী কলেজে টেকনোলজি পড়ছে কপিল ৷ তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল সে বিষয়ে সন্দেহই নেই ৷ তা বলে চঞ্চলা তাকে এমন ভাবে শাসাবে? কিছুই বুঝে পায় না কপিল ৷ শেষবেশ BES এর কলোনিতে ফাঁকা ফ্যাক্টরি তে চলে যায় সে ৷ ব্রতীনকে সেলফোনে মেলায়, " চলে আয় বেস এর ফ্যাক্টরিতে, প্রবীরকে নিয়ে জরুরি কথা আছে !" সরোজ মাঝে মাঝে আসে তবে তার কাছে বাইক নেই আর তাকে দোকানে কাজ করতে হয় সময় সময় ৷ তার বাবা মা কেউই সক্ষম নয় ৷
নিশিকান্ত সর্দার শহরে অনেক নাম ডাক করে ফেলেছেন ৷ ডাক্তার মোক্তার ব্যারিস্টার থাকলেও এ শহরে ভালো দর্জির খুব অভাব ৷ তাই তার কাছে দুজন আরও দর্জি কাজ করে আর তাতেও সামাল দেওয়া যায় না কাজের ভার ৷ আগে এ লাইনে এক টাকা বা দুই তিন টাকার বেশি কেউ দিত না ৷ তবে এখন হাত দিলেই ১০-২০ টাকা পাওয়া যায় ৷ দুটো মেশিন আর আরেকটা হাতকল চালিয়ে সারা দিনে ৫০০ টাকাও রোজগার হয়ে যায় তার ৷ সুখের মুখ দেখতে শুরু করেছে নিশিকান্ত ৷ দোকানটা চালা থেকে পাকা করে নিয়েছে গত বছর ৷ কিন্তু নিশিকান্তর নামডাক তার নরম সৎ ব্যবহারের জন্য ৷ পুলিশ এর পোশাক বানায় সে ৷ তাই বড় কত্তাদের সাথে ভালো হাত নিশিকান্তর ৷ সব ঠিক চললেও তার সুখের কাঁটা নিশিকান্তর মেয়ে চঞ্চলা ৷ সে যেমন সুন্দরী তেমনি চঞ্চল ৷ তার উপর ভরা যৌবন ৷ বিকেলে ছেলেরা ভিড় করে চঞ্চলাকে দেখার জন্য দোকানের সামনে ৷ নিশিকান্তর কড়া হুকুম বিকেলে চঞ্চলার দোকানে আশা বারণ ৷ সে সকালে চা দেয় আর দোকান পরিষ্কার করে দিয়ে যায় ৷ আজাদ, ফইজুল, শ্যামল নিশিকান্তর কানে কাজ করে ৷ তারা সকলেই পৌঢ় ৷ নিশিকান্তকে তাড়াতাড়ি চঞ্চলার বিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়েছে ৷ নিশিকান্ত ভালো যুতসই ছেলে পাচ্ছেন না ৷ এদিকে নিশিকান্তর দোকানের সামনের চায়ের দোকানে ৪ টে বড় লোকের ঘরের ছেলে বসে চা খাচ্ছে ৷ চঞ্চলা দোকানে চা দিতে এসেছে ৷ দোকানের চা তার সহ্য হয় না ৷ চঞ্চলাকে দেখেই ব্রতীন কনুই গুঁজে কপিলকে ইশারা করে ৷ কপিল সরোজকে দেখে বলে " দেখ দেখ মাল খানা দেখ যেন পাকা আম, আগে তো এই তল্লাটে দেখি নি ? পেলে দিন বর্তে যাবে মাইরি !" প্রবীর মাথা নাড়িয়ে ঠাণ্ডা মাথায় বলে " দেখে লাভ নেই, নিশিকান্তর মেয়ে নাম চঞ্চলা !" "এইই রে কেলো করেছে, নিশিকান্ত কে না টানলে হচ্ছিল না ? লোকটার এত ভালো রেপু শালা কিছু করা যাবে না !" ব্রতীন আফসোস করে ! কপিল " না ভাই তোরা যা পারিস কর আমি এমন মাল ছাড়ছি না!" কপিলের বাবা কলেজের প্রিন্সিপাল অখিল রঞ্জন মজুমদার, তাকেও লোকে এক ডাকে চেনে ৷ তাই তার সাহস অন্যদের থেকে একটু বেশি ৷
"দেখলেন দাদা দেখলেন, আপনাকে তো আগেই বলেছিলাম মেয়েটার তাড়া তাড়ি বিয়ে দিন, ছেলে গুলো যেন হাঁ করে গিলছে !" ফইজুল চেঁচিয়ে ওঠে নিশিকান্তর দিকে ৷ চঞ্চলা মাথা নামিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ায় ৷ নিশিকান্তর দোকানের পিছনেই বাড়ি ৷ কিন্তু বাজার ঘুরে বাড়ি যেতে হয় রাস্তা নেই বলে ৷ প্রবীর আর বাকিরা যে যার মোটর সাইকেল নিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো ৷ কপিল লম্বায় ৫-৯ ইঞ্চি, সুদর্শন বখে যাওয়া ছেলেদের মত নয় ৷ চালক চতুর বটে ৷ চঞ্চলাকে দেখে তার পাগল হওয়া স্বাভাবিক ৷ আজ চঞ্চলাকে রাস্তায় ডেকে কথা বলবেই কপিল ৷ নিশিকান্ত আজাদ এদের চোখ এড়িয়ে কপিল বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ৷ বাজার ফাঁকা এখনো লোক আসে নি বাজারে ৷ প্রবীর আর কপিল পড়তে আসে বাজারের কাছে ৷ একজন প্রফেসর থাকেন ৷ বলাই এর চায়ের দোকান ফেলে বাঁ দিকে বাঁক নিয়ে চঞ্চলা লম্বা লম্বা পা ফেলতে থাকে ৷ তার পড়া আছে সকালে ৷ সে প্রথম বর্ষে ইংলিশ অনার্স পড়ে এই শহরের নামী কলেজে ৷ কপিল বাইক নিয়ে চঞ্চলার একদম পাশে এসে সজোরে দাঁড়িয়ে পড়ে ৷ হতচকিত হয়ে চঞ্চলা কপিলের দিকে তাকিয়ে মুখ নামিয়ে চলতে উদ্যত হয় ৷ কিন্তু কপিল আজ তাকে তার কথা বলেই থামবে ৷ "এই যে হ্যাঁ আপনাকে বলছি, একটু দাঁড়ান !" চঞ্চলা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে কপিল কে ৷ জীবনে কেউ তার পথ আটকায়নি এই ভাবে ৷ চঞ্চলা খানিকটা রুঢ় হয়েই বলে " ভদ্রতা জানেন না ভদ্র বাড়ির মেয়েকে রাস্তায় এই ভাবে অপমান করছেন ?" কপিল এর মাথায় ভূত চেপে বসে ৷ " দেখুন অত শত আমি বুঝি না, আপনাকে দেখে আমার জীবন সঙ্গিনী পেয়ে গিয়েছি মনে হয়েছে তাই আপনাকেই আমার জীবন সঙ্গিনী হিসাবে পেতে চাই, তার জন্য আমায় কি করতে হবে সেটা বলুন ?" চঞ্চলা খানিকটা কৌতুক করার বাহানায় বলে " যান না এই কথাটাই আমার বাবাকে গিয়ে বলুন তিনি যদি সম্মতি দেন তাহলেই আমার সম্মতি পাবেন !" এই কথা বলার পর রেগে মেগে কত কত হয়ে চঞ্চলা বলে " আর সম্মতি না পেলে আমাকে দ্বিতীয় বার পথ আটকাবার চেষ্টা করবেন না কথাটা যেন মনে থাকে !" পিলারের মত দাঁড়িয়ে থাকে কপিল ৷ চঞ্চলা হেঁটে ক্ষণিকেই মিশে যায় অলিগলিতে ৷ কপিল একটা সিগারেট কেনে সামনের রাস্তার দোকান থেকে ৷ সিগারেট খাওয়া সে সবে দু চার মাস হল শিখেছে ৷ মাথা গরম হলেও সেটা কপিলের খারাপ লাগলো না কিন্তু বেশ অপমানিত মনে হলো তাকে ৷ ICSE তে ৯৬ শতাংশ নাম্বার নিয়ে পাশ করে শহরের নামী কলেজে টেকনোলজি পড়ছে কপিল ৷ তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল সে বিষয়ে সন্দেহই নেই ৷ তা বলে চঞ্চলা তাকে এমন ভাবে শাসাবে? কিছুই বুঝে পায় না কপিল ৷ শেষবেশ BES এর কলোনিতে ফাঁকা ফ্যাক্টরি তে চলে যায় সে ৷ ব্রতীনকে সেলফোনে মেলায়, " চলে আয় বেস এর ফ্যাক্টরিতে, প্রবীরকে নিয়ে জরুরি কথা আছে !" সরোজ মাঝে মাঝে আসে তবে তার কাছে বাইক নেই আর তাকে দোকানে কাজ করতে হয় সময় সময় ৷ তার বাবা মা কেউই সক্ষম নয় ৷