14-02-2023, 06:29 PM
ভালােবাসা মানে একমুঠো রােদ আর বসন্তের মন মাতানো হাওয়া। ভালােবাসা মানে মনের সাগরে স্বপ্নের তরী বাওয়া। ভালােবাসা মানে শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের জমি। ভালােবাসা মানে সব সীমা ছাড়িয়ে শুধু তুমি আর আমি। আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি .. ভালোবাসার দিবস। তাই নিয়ে এলাম দুটি পর্ব সম্বলিত একটি অন্যরকম প্রেমের কাহিনী .. আপনাদের সকলের ভালোবাসা একান্তভাবে কাম্য।
ভায়োলিন এবং ..
কাহিনী এবং প্রচ্ছদঃ- বুম্বা
রূপনগর এয়ারপোর্টে নেমেই শরীরে কাঁপুনি দিয়ে উঠলো শশাঙ্কর .. ঘড়িতে তখন সন্ধ্যে সাতটা। ও ভাবতেই পারেনি এখানে এত ঠাণ্ডা পড়তে পারে। জ্যাকেট পড়েও শীতকে ঠেকানো যাচ্ছে না। হু হু করে হিমেল বাতাস বইছে .. বেশি ঠান্ডা কোনোদিনই সহ্য করতে পারেনা শশাঙ্ক। এখনই একটা আশ্রয় যোগাড় করতে না পারলে এই শীতে তার অবস্থা আরও সঙ্গিন হবে, এটা বেশ বুঝতে পারলো শশাঙ্ক।
সমস্ত ফর্মালিটিস মিটিয়ে এয়ারপোর্টের বাইরে বেরিয়ে শশাঙ্ক সোজা এগিয়ে গেলো ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের দিকে। অবাক কান্ড .. সেই মুহূর্তে একটাই টেক্সি দাঁড়িয়েছিল। এর আগে কখনো রূপনগরে আসেনি সে। ওর ছাব্বিশ বছরের জীবনের পুরোটাই কেটেছে সুন্দরপুরে।
সুন্দরপুরের মতো না হলেও, রূপনগর বেশ বড় শহর। মিনিট পনেরো পরে বড় রাস্তা ছেড়ে ট্যাক্সিটা একটা সরু গলির মধ্যে ঢুকলো। তারপর বেশ কিছুক্ষণ এ গলি সে গলি দিয়ে চলার পর, এসে পৌঁছালো আবার একটা চওড়া রাস্তায়। এখানে বেশ অন্ধকার আর অদ্ভুতরকমের একটা নিস্তব্ধতা। শশাঙ্ক জানতে চাইলো "এখানে এত অন্ধকার কেন?"
"এটা অফিসপাড়া, স্যার। এখানে দিনের বেলায় জমজমাট থাকে, রাতে সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে যায়।" ট্যাক্সি ড্রাইভারের এই উক্তিতে "বুঝেছি, আমাকে একটা ভালো দেখে হোটেলে নিয়ে চলুন.." গম্ভীরভাবে এটুকুই বললো শশাঙ্ক।
তারপর ট্যাক্সিটা আরেকটু এগিয়ে আবার একটা গলির মধ্যে ঢুকে পড়লো। গলির ভেতর কিছুটা অগ্রসর হয়ে একটি হোটেলের সামনে দাঁড়ালো ট্যাক্সিটা। শশাঙ্ক বুঝতে পারলো এটা একটা ব্লাইন্ড লেন .. হোটেলটা গলির একদম শেষ প্রান্তে।
ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে শীতে কাঁপতে কাঁপতে হোটেলটায় প্রবেশ করলো শশাঙ্ক। আগে থেকে বুক করা না থাকলেও, চমৎকার একটা ঘর পেয়ে গেলো সে। রুমে ঢুকে প্রথমেই জামাকাপড় খুলে বাথরুমে গিয়ে গিজার চালিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো শশাঙ্ক। কিছুক্ষণের মধ্যেই সান্ধ্যভোজ হিসেবে গরম কফি আর চিকেন পকোড়া এসে গেলো। এখন সবে রাত আটটা .. অথচ রাত বারোটা-একটার আগে ঘুমই আসে না তার। এতক্ষণ সময় কাটবে কি করে .. এটা ভেবেই চিন্তিত হয়ে পড়লো শশাঙ্ক।
শশাঙ্কর হঠাৎ মনে পড়লো ভায়োলিনটার কথা। ওটা তো সঙ্গে করেই এনেছে সে .. ভায়োলিন বাজিয়েই কিছুটা সময় অতিবাহিত করা যাবে। কফিটা শেষ করে খাট থেকে নেমে পড়লো শশাঙ্ক। আগের মতো এখন আর অতটা ঠান্ডা লাগছে না, সেই জুবুথুবু ভাবটাও এখন অনেকটা কেটে গিয়েছে। ভায়োলিনটা বের করে খাটের উপর বসলো সে। ঠিক তখনই খুব চেনা একটা সুর মনে পড়লো শশাঙ্কর .. আবছা একটা মুখও ভেসে উঠলো মনের মধ্যে। ঠিক যেন সেই মুখটা ওর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভেসে ওঠা সেই মুখটাকে সামনে রেখেই বাজাতে শুরু করলো শশাঙ্ক।
হঠাৎ করেই কিছু একটা মনে পড়ে যাওয়াতে নিজের মনেই হেসে উঠলো সে। বাজনা থামিয়ে দিলো শশাঙ্ক। 'অপর্ণা দি যে রূপনগরেই থাকে, এ কথা তো তার আগে মনে পড়েনি! ওর নম্বরটাও সম্ভবত তার কাছে ছিলো। কিন্তু সেটা এই মুহূর্তে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। কারণ, নতুন মোবাইলটা নেওয়ার পর পুরনো অনেক ফোন নম্বর এই মোবাইলে তোলা হয়নি। আচ্ছা, সে তো পুরনো ফোনটাও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। একবার খুঁজে দেখার চেষ্টা করলে কেমন হয়!' এই ভেবে ভায়োলিনটা খাটের উপর রেখে ব্যাগের ভেতর থেকে পুরনো মোবাইলটা বের করে একটু খোঁজাখুঁজি করতেই অপর্ণার নম্বরটা পেয়ে গেলো সে।
প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করে, তারপর অবশেষে ওই নম্বরে ফোন করলো শশাঙ্ক। দু'বার রিং হওয়ার পরেই অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে এলো একটি মেয়েলি কন্ঠ, "কে?"
"বলো তো .. কে?" কিছুটা কৌতুকের সুরেই বললো শশাঙ্ক।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে, "শশাঙ্ক .. তাই না? হোয়াট এ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ! যাক, তাও যে আমাকে এতদিন পর তোর মনে পড়লো, সেটাই বড় কথা .." উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলো ফোনের অপর প্রান্তের নারী কন্ঠটি।
শশাঙ্ক সেই কথার কোনো উত্তর না দিয়ে কিছুটা রহস্য করে বললো "আমি এখন কোথায় বলো তো? এনি গেস? বুঝতে পারলে না তো .. এখন আমি রূপনগরে।"
"বাব্বা .. তুই তো চমকের পর চমক দিয়ে যাচ্ছিস! কিন্তু এখানে কি কোনো কাজে এসেছিস? কোথায় উঠেছিস?" ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জিজ্ঞাসা করলো অপর্ণা।
শশাঙ্ক ঠিকানাটা বললো, তার সঙ্গে হোটেলের নামটাও। তারপর আব্দারের সুরে বলে উঠলো "এখানে একবার আসবে .. প্লিজ? এখন .."
কথাটা শুনে অপর্না প্রায় আঁতকে উঠে বললো, "অসম্ভব .. বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডা .. আমি এখন ঘরে রুম হিটার জ্বালিয়ে বসে বসে বই পড়ছি, এখন এখান থেকে কোথাও নড়তে পারবো না। তোর হোটেলটা এখান থেকে বেশ কিছুটা দূরে, তাছাড়া এখন অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছে। এই সময় এমনিতেই ওই এলাকাটা একদম জনশূন্য হয়ে যায়। যদি সময় সুযোগ করে উঠতে পারি, তাহলে কাল সকালে অবশ্যই দেখা করবো .."
"আমি একটা ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য এখানে এসেছি অপর্ণা দি। কাল সকাল দশটায় ইন্টারভিউ। তারপর, ওখান থেকেই সোজা এয়ারপোর্টে চলে যাবো।" শশাঙ্কর মুখে কথাগুলো শুনে অপর্ণা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর জিজ্ঞাসা করলো, "তোর মতো একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর একমাত্র ছেলে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে এসেছে? সে যাই হোক, আচ্ছা .. তুই এখনো ভায়োলিন বাজাস?"
- "হ্যাঁ, বাজাই তো .."
- "এখানে তো আনিসনি, তাই না?"
- "এনেছি তো .. একবারটি প্লিজ এসো না গো অপর্ণা দি! একা একা ভীষণ বোর হচ্ছি হোটেল রুমে। সবে তো এখন সোয়া আটটা বাজে। তুমি চিন্তা করো না, ফেরার সময় আমি তোমাকে নিজে পৌঁছে দিয়ে আসবো।"
শশাঙ্কর কথা শেষ হওয়া মাত্রই ফোনটা কেটে দিলো অপর্না। তুলতুলে নরম বিছানায় নিজের শরীর এলিয়ে দিয়ে শশাঙ্ক একটা সিগারেট ধরিয়ে ভাবলো .. সত্যিই সে একটা অন্যায় আব্দার করে ফেলেছে। এত রাতে, তার উপর আবার এই ঠান্ডায় খুব এমার্জেন্সি না হলে বাড়ির বাইরে কেউ বেরোয় না। তাও আবার এমন একজনের জন্য, যার সঙ্গে তার সেই অর্থে কোনোদিন কোনো সম্পর্কই গড়ে ওঠেনি। শশাঙ্কর মনে পড়ে গেলো বছর তিনেক আগেকার কথা।
এমবিএর ফাইনাল ইয়ার চলছিলো তখন শশাঙ্কর। ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে প্রতিবারের মতোই একটা বার্ষিক পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছিলো। শশাঙ্ক ভায়োলিনে একটি জনপ্রিয় হিন্দি গানের সুর বাজাচ্ছিলো, আর সবাই তাকে ঘিরে বসেছিলো। কয়েকদিন আগে কলা বিভাগে ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হয়ে এসেছিলো অপর্ণা। সম্পূর্ণ অন্য ডিপার্টমেন্ট এবং পৃথক বিল্ডিং হওয়ার জন্য শশাঙ্ক আগে দেখেননি তাকে। ওই পিকনিকেই সে প্রথম দেখে অপর্ণাকে। হয়তো পুরোটাই কাকতালীয় ব্যাপার। হয়তো বা দু'জনের দেখা হওয়ার কথা ছিলো না .. অথচ দেখা হয়েছিল। আর ওই সামান্য কিছু সময়ের মধ্যেই অপর্ণাকে অসম্ভব ভালো লেগে গিয়েছিল শশাঙ্কর। অপর্ণার মতো এত ঝলমলে এবং প্রাণোচ্ছল মেয়ে সে আগে কখনো দেখেনি। তার হাসিটা যেন জলপ্রপাতের মতো। চুলগুলো পিঠ দিয়ে গড়িয়ে আরো নিচে নেমে ছড়িয়ে পড়েছে ক্রমশ। আলাপচারিতার পর জানা গেলো, অপর্ণা তার থেকে প্রায় বছর চারেকের বড়। "ম্যাডাম" বলে সম্বোধন না করলেও "অপর্ণা দি" বলেই তাকে ডেকেছিল শশাঙ্ক। মন্ত্রমুগ্ধের মতো অপর্ণা তার ভায়োলিনের বাজনা শুনে যাচ্ছিল। একটার পর একটা অনুরোধ করে যাচ্ছিল নতুন গানের সুর বাজানোর জন্য। তারপর একসময় খাওয়া দাওয়া শেষ হলে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের পিছন দিকের চমৎকার বাগানটায় বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে বেরিয়েছিল তারা। ফুল উপহার দিয়েছিল একে অপরকে।
কিন্তু তাদের এই সুন্দর সময় কাটানো খুব একটা দীর্ঘ হয়নি। অপর্ণার মোবাইলে একটা কল এসে যাওয়াতে ছন্দপতন ঘটে গিয়েছিল। "আমার বাবার হঠাৎ করেই শরীরটা খারাপ হয়েছে .. আই হ্যাভ টু গো নাও .." মোবাইলে কথা বলার পর শশাঙ্ককে এইটুকু জানিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো বেরিয়ে গিয়েছিলো অপর্ণা। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিল শশাঙ্ক। তার হয়তো অপর্ণার সঙ্গে যাওয়া উচিৎ ছিলো, বা অনুরোধ করা উচিৎ ছিলো তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যে তো এইরকম কিছু বলার বা অনুরোধ করার সেই অধিকারবোধ তৈরিই হয়নি। তাড়াহুড়ায় অপর্ণার ফোন নম্বর এবং ঠিকানা কোনোটাই নিতে পারেনি সে।
সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা, তাই কয়েকদিন ছুটি ছিলো শশাঙ্কর। পরীক্ষার দিন ইউনিভার্সিটিতে এসে আর্টস ডিপার্টমেন্টে গিয়ে অপর্ণার খোঁজ করার পর সে জানতে পারে মাসখানেক হলো কয়েকদিনের জন্য কলা বিভাগে ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হয়ে এসেছিলো অপর্ণা। তার সময়কাল উত্তীর্ণ হওয়াতে সে ফিরে গিয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও অপর্ণার ফোন নম্বর জোগাড় করতে পারেনি শশাঙ্ক।
তার বছরখানেক পর পিসির বাড়ি থেকে ফেরার সময় মেট্রোর কম্পার্টমেন্টে শশাঙ্কর সঙ্গে হঠাৎ করেই দেখা হয়েছিলো অপর্ণার। অপর্ণার মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে গিয়েছিল শশাঙ্ক .. তার মাথায় সিঁদুর জ্বলজ্বল করছিলো। তারপর তার মুখ থেকে সবকিছু জেনেছিলো শশাঙ্ক। তার কোথায় বিয়ে হয়েছে, ছেলে কি করে .. এই সবকিছু। কথাগুলো শুনতে ভালো লাগছিলো না তার, কিন্তু অপর্ণা ননস্টপ কথা বলে যাচ্ছিলো। দু'টো স্টেশন পরেই নেমে গিয়েছিলো অপর্ণা। কৌতুহলবশত শশাঙ্ক তার ফোন নম্বরটা নিয়েছিলো ঠিকই, কিন্তু বিবাহিতা অপর্ণার সঙ্গে যোগাযোগ করার বা তাকে ফোন করার কোনো আগ্রহ দেখায়নি শশাঙ্ক। অথচ অথচ এই ক'বছরে অপর্ণার কথা ওর বারবারই মনে পড়েছে। কিন্তু কাজের চাপে সেই অর্থে কখনো কনসেন্ট্রেট করতে পারেনি পুরো বিষয়টা নিয়ে। তবুও যেনো সর্বদা একটা অদ্ভুত টান অনুভব করেছে অপর্ণার প্রতি।
শশাঙ্কর চোখটা একটু লেগে গিয়েছিল। সেই সময় ওর রুমের ইন্টারকম টেলিফোনটা হঠাৎ বেজে উঠলো। বিছানা থেকে উঠে ফোনটা ধরতেই রিসেপশন থেকে জানালো "একজন মহিলা এসেছেন .. আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন।"
এরকম একটা অচেনা জায়গায় তার সঙ্গে কে দেখা করতে আসতে পারে .. তাও আবার একজন মহিলা! তবে কি .. "নাম কিছু বলেছে?" জিজ্ঞাসা করলো শশাঙ্ক।
"অপর্ণা .." রিসেপশন থেকে জানানো হলো।
নামটা শুনেই চমকে উঠলো শশাঙ্ক। একটা অদ্ভুত রকমের উত্তেজনা হতে থাকলো তার শরীরে। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, "পাঠিয়ে দিন.."
একটু পরেই অপর্না এসে ঢুকলো শশাঙ্কর রুমে। প্রায় দুই বছর পর আবার দু'জনের দেখা হলো। শশাঙ্কর এখন ছাব্বিশ বছর বয়স, অপর্ণার প্রায় তিরিশ। "বাব্বা .. বাইরে যতটা ঠান্ডা, ভেতরে ততটাই গরম .." এই বলে ঘরে ঢুকেই হাঁটু পর্যন্ত লম্বা উপরের লং-কোটটা খুলে ফেললো সে। শশাঙ্ক দেখলো একটা গাঢ় নীল রঙের জিন্স আর লাল রঙের স্কিন টাইট টি-শার্ট পড়ে এসেছে অপর্ণা। ঘড়িতে তখন রাত প্রায় ন'টা।
আগের চেয়ে কিঞ্চিৎ স্বাস্থ্যবতী হয়েছে সে, সাধারণ বাঙালি মেয়েদের তুলনায় একটু বেশিই লম্বা অপর্ণা। ওর গায়ের রঙটা শশাঙ্কর থেকে তো বটেই, এমনকি যে কোনো খাঁটি মেমসাহেবকে পর্যন্ত প্রতিযোগিতাতে ফেলে দিতে পারে। তার সঙ্গে রয়েছে এক মন মাতানো পশ্চিমী লাবণ্য .. যেটা অবশ্যই পরিবেশ নির্ভর, যা বাংলার মেয়েদের কাছে চিরকাল ঈর্ষার কারণ। স্নিগ্ধ লাবণ্যের সঙ্গে বুদ্ধির দীপ্তি ছড়িয়ে রয়েছে অপর্ণার সমস্ত মুখমন্ডলে। কিন্তু সে দীপ্তি চোখ ধাঁধায়া না - ঠিক যেন দুধ-সাদা পিটার্স ল্যাম্প, যা আলো ছড়ায়, কিন্তু জ্বালা দেয় না। ভারী বক্ষ এবং গুরু নিতম্বিনী না হলেও ক্ষীণ কটির অধিকারিণী অপর্ণার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলো না শশাঙ্কর।
"কি রে .. ওইরকম হাঁ করে কি দেখছিস আমার দিকে? আমি যে আসবো .. এটা ভাবতে পারিস নি, তাই তো?" অপর্ণার কথায় ঘোর কাটলো শশাঙ্কর। "এখনো ভাবতে পারছি না, মনে হচ্ছে যেন স্বপ্ন দেখছি .." আমতা আমতা করে বললো শশাঙ্ক।
কথাবার্তা যত এগোতে থাকলো, ধীরে ধীরে দুজনেই স্বাভাবিক হয়ে উঠলো পরস্পরের কাছে .. বিশেষ করে শশাঙ্ক। "কি খাবে বলো .. মিক্সড ফ্রাইড রাইস আর ড্রাই চিলি-চিকেন অর্ডার দিই?" শশাঙ্কর কথায় হেসে উঠলো অপর্ণা, "অ্যাজ ইউ উইশ .." হাসলে তার গালে এখনও টোল পরে।