13-02-2023, 02:59 PM
(This post was last modified: 15-02-2023, 09:16 PM by cuck son. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
বাড়ির কাজ শুরু হয়েছে , আমাকে এখন মেজো আপার বাড়িতে থাকতে হচ্ছে । অন্য কারো বাড়িতে থাকতে বেশ বিরক্ত লাগছে। তবে আমার চেয়ে বেশি বিরক্ত তিতলি , এই বয়সী ছেলে মেয়েরা উটকো ঝামেলা পছন্দ করে না । আর আমি উটকো ঝামেলা ছাড়া কিছুই না । একবার মেজো আপার কাছে বললাম যে আমি আর থাকতে চাই না , শুনে মেজো আপা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছিলো ।
বলেছিলো , “ এটা কি তোর পরের বাড়ি রে , আমার বাড়ি থাকতে তুই কেনো অন্য জায়গায় একা একা ভাড়া থাকবি?” কথা গুলো মেজো আপা যে মন থেকেই বলেছিলো সেটা আমি নিশ্চিত । কিন্তু আমি কিছুতেই এটা নিজের বাড়ি হিশেবে থাকতে পারছি না । বিশেষ করে ভাগ্নির সামনে পড়লে কেমন জানি অস্বস্তি লাগে । আরশির ঘটনার পর থেকেই তিতিলি আমাকে পছন্দ করে না। কে জানে কি ভেবে নিয়েছে মেয়েটা । আমিও সাহস করে কিছু বলতে যাই না , এই বয়সী ছেলে মেয়ে গুলো আনপ্রেডিক্টেবল।
বাড়ির কাজ দেখতে প্রায় রোজ আমাকে পাঠানো হয় । আমিও একটু ঘুরাঘুরি করে শেষে মতিনের ঘরে গিয়ে বসে থাকি । মন্ডি আমাকে নিয়ে তেমন বাড়তি আয়োজন করে না । এই দিকটা আমার ভালো লাগে , নয়তো জেতাম না ওদের ওখানে । বেশিরভাগ সময় মতিন থাকে না , অবশ্য এটাই ভালো থাকলে বাড়াবাড়ি করে খুব ।
কিন্তু মণ্ডি সম্পূর্ণ ভিন্ন , গল্প গুজব করে তারপর দুপুরের খাওয়ার সময় হলে বলে “ভাইজান গপসপ তো অইলো , ভাত খাইবেন নি , তরকারি অবশ্য বালা না”। বেশিরভাগ সময় আমি খাই না , মণ্ডিও সাধাসাধি করে না । তবে মাঝে মাঝে খাই , ওরা যা খায় তাই দিয়ে খাই । খাওয়া নিয়ে আমার তেমন আগ্রহ ছিলো না কোনদিন ই ।
তবে মাঝে মাঝে খাওয়ার কথা উঠলে মায়ের দোয়া রেস্তোরার রজবের কথা মনে পরে । শেষ পর্যন্ত আমি রজবের খোঁজ পেয়েছি , একদিন পুরনো মায়ের দোয়া হোটেল খোলা পেয়ে সেখানে ঢুকেছিলাম , দেখি মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে । তবে পুরনো বয় একজনকে পেয়ে গেলাম । আমাকে দেখে ছেলেটিই এগিয়ে এসেছিলো । “স্যারের শরীর ভালো নি?” সামনে এসে প্রশ্ন করতে প্রথমে চিনতে পারিনি ।
“রজব ভাই আপনের কথা জিগায় খুব” এ কথা বলতেই ছেলেটিকে চিনতে পেরেছিলাম । এই ছেলেটি পুরনো মায়ের দোয়া হোটেলে কাজ করতো । রজবের কি হয়েছে জিজ্ঞাস করতেই ছেলেটি আবেগ আপ্লূত হয়ে পরেছিলো । তবে যা বলল তাতে আমি নিজেও বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম । রজব আছে জেলে , তাও ছোটখাটো ব্যাপারে না একদম খুনের মামলা চলছে ওর নামে । নিজের মেয়ের জামাই কে খুন করেছে রজব ।
“ স্যারের একদিন সময় হইলে গিয়া দেখা কইরা আইসেন? আপনে গেলে একটু বল পাইবো ভাইয়ে” ভেজা চোখে বলেছিলো ছেলেটি । আমার মত নির্জীব একটা মানুষকে দেখে রজবের মত কর্ম চঞ্চল মানুষ কেমন করে বল পাবে সেটা আমি বুঝিনা। তবুও ঠিক করেছি একদিন গিয়ে দেখা করে আসবো ।
কিন্তু যাওয়া ও হয় না , ইচ্ছে করেই যাই না । রজব ছেলেটির ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বড় সপ্ন ছিলো । ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় রেস্তোরার মালিক হওয়ার সপ্ন ছিলো ওর মাঝে । তাই এমন ওকে জেলখানার গারদের পেছনে একজন খুনের আসামি হিশেবে দেখতে আমার ভালো লাগবে না ।
<><>
জেল খানার মুল ফটকে বসে আছি ঘণ্টা খানেক হলো । রজবের সাথে দেখা করার কথা বললে আমাকে জিজ্ঞাস করা হয়েছিলো আমি কি হই। উত্তরে বলেছিলাম বন্ধু , যদিও রজবকে ঠিক বন্ধু বলা যায় কিনা জানি না । তবে এজকে এই শব্দটি ছাড়া অন্য কোন শব্দ খুঁজে পেলাম না । আসলে রজবের সাথে আমার সম্পর্ক কি সেটা আমি নিজেও জানি না ।
একটা পুলিশ কে দুশো টাকা দিয়েছি । বলেছে দেখা করিয়ে দেবে , আত্মীয়স্বজন ছাড়া নাকি খুনের আসামীর সাথে দেখা করা দুস্কর । আর এই দুস্কর কাজ কে সহজ করার জন্য একশো টাকার দুটো নোট দরকার । আমার মনে হচ্ছে নোট দুটো তেমন কাজ করছে না । তাই আমার দেখা করার চান্স আসছে না । উঠে চলে আসবো ভাবছি ঠিক সেই সময় আমার ডাক এলো ।
আমি জেল খানার ভেতরে ঢুকলাম , জীবনে ভাবিনি এখানে আসবো । যেমনটা ভেবেছিলাম জেলখানা তেমন নয় , চারিদিকে সুন্দর ছিমছাম ভাবে সাজানো । জায়গায় জায়গায় ফুল গাছ লাগানো । এবং সেই ফুল গাছের যথেষ্ট যত্ন করা হয় দেখেই বোঝা যাচ্ছে ।
“স্যার আপনে” আমাকে দেখে রজন বেশ আশ্চর্য হয়েছে । আমিও কম আশ্চর্য হলাম না । রজব কে চেনাই যাচ্ছে না , ছক দুটো কোটরে ঢুকে গেছে । স্বাস্থ্য ভেঙ্গে গেছে , এই রজব আর মায়ের দোয়া হোটেলের রজবের মাঝে কোন মিল নেই ।
দুজনেই কিছুক্ষন চুপ করে ছিলাম , আসলে কি নিয়ে কথা বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না । আগে রজবের সাথে আমার কথা হতো খাওয়া দাওয়া নিয়ে । রজব নানা রকম খাবার রান্না করে আমাকে খাওয়াত আর সেই রান্নার কথা বলত । মাঝে মাঝে অবশ্য নিজের সপ্ন নিয়েও কথা বলত ।
“ কি হয়েছে রজব , এই অবস্থা কেনো হলো?” কিছুক্ষন চুপ থেকে জিজ্ঞাস করালাম আমি
রজব সহসা কোন উত্তর দিলো না , মুচকি হাসল সুধু । তারপর বলল “সবই কপাল স্যার, আমার কথা বাদ দেন , আপনের শরিল কেমন?”
রজব কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে জীবনের কাছে হেরে গেছে ও । নিজের লালিত সপ্ন গুলি কে কবর দিয়ে ফেলেছে । আশাহত চোখের দৃষ্টি বলে দিচ্ছে সামনে আর কিছুই দেখতে পায়না তারা । মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো , নিজের দল ভারী হতে দেখে খুশি হওয়ার বদলে মুষড়ে পড়লাম ।
শেষে বিদায় বেলায় এসে রজব নিজেকে মেলে ধরলো , আমার হাত দুটো ধরে কেঁদে ফেলল ,”স্যার যদি পারেন আমার পরিবারের খোঁজ নিয়েন, আপনেরে আমার বড় ভাইয়ের মতন মনে হয়, আপনে আসেন জানলে মইরাও শান্তি পামু”
মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বেড়িয়ে এসেছিলাম , আমার একটা মিথ্যা আশ্বাসে রজবের মুখে হাসি ফুটে উঠেছিলো , সত্যি সত্যি হাসি। বানানো মেকি হাসি নয় । মাঝে মাঝে মনে হয় আমার মত একটা মানুষের উপরও কেউ এমন ভরসা করতে পারে । এসেছিলাম রজবের মনের বল বৃদ্ধি করতে ফিরে যাচ্ছি নিজের মন ভারী করে ।
বাড়িতে ফিরতে ইচ্ছে হলো না , এমনিতেই হাঁটাহাঁটি করতে লাগলাম । হাটতে হাটতে একটা পার্কার মত জায়গায় চলে এলাম । মধ্য দুপুরে সুন্দর ছায়া ঘেরা জায়গা । একটা নিরবিলি জায়গা দেখে বসে পরলাম । রজবের বর্তমান অবস্থা দেখে মন খারাপ হয়েছে , তবে ভেতর ভেতর একটা অনুসুচনা ও হচ্ছে । আর অনুসুচনা আমাকে আরও বেশি কাবু করে ফেলছে । যদিও অনুসুচনা হওয়ার কারন খুব দুর্বল । আমি চেষ্টা করলেও হয়ত আজ এই দিনকে ফেরাতে পারতাম না । রজব হয়ত আমার কথা শুনত না ।
তবে চেষ্টা করা উচিৎ ছিলো বলে মনে হচ্ছে । হয়ত আরও একটু কঠিন ভাবে বুঝিয়ে বললে রজব সেদিন আমার কথা শুনত । মেয়ের বিয়ে তখন দিতো না । “ আমার কি এসে যায়” হয়ত এই ভেবে সেদিন আমি কিছু বলিনি ।
“ কথা বলার জন্য সঙ্গী খুঁজছেন?”
আকাশ কুসুম যখন ভাবছিলাম তখন হঠাত কথা গুলো শুনে আমার ধ্যান ভাংলো । দেখি সামনে একটি মেয়ে দাড়িয়ে * পরা । সুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে । বেশ অবাক হলাম আমি , হঠাত এমন প্রশ্ন কেনো? “জী আমাকে কিছু বলছেন?” আমি জানতে চাইলাম । বেশ অবাক লাগছে , হঠাত করে মেয়েটি আমাকে কেনো জিজ্ঞাস করছে কথা বলার সঙ্গী খুজছি কিনা।
মেয়েটি আমার পাশে বসে পরলো , বলল “জী আপ্নাকেই বলছি , একা একা বোর হচ্ছেন নিশ্চয়ই?”
মেয়েটির কণ্ঠ বেশ সুন্দর , কথা বলার ভঙ্গিও বেশ ভালো । এমন কণ্ঠ যার তার সঙ্গে কথা বলতে যে কেউ চাইবে । কিন্তু আমার প্রস্ন হচ্ছে মেয়েটি যেচে এসে কথা বলতে চাইছে কেনো?
“ আপনি চাইলে আমার জানা সুন্দর স্পট আছে , দুজনে গল্প করতে পারি, কেউ ডিস্টার্ব করবে না” মেয়েটি আবারো বলল
“ জী না মানে , আপনি কি আমাকে চেনেন?” আমি বোকার মত জিজ্ঞাস করলাম ।
সুন্দর করে হাসল মেয়েটি , বলল “ পরিচিত হতে কতক্ষন লাগে, কথা বলতে বলতেই পরিচয় হয়ে যাবে”
“ জী বলুন” আমি বললাম ,
“ আপনি কতক্ষন বসবেন?”
“ ঠিক বলতে পারছি না” আমি এখনো কিছু বুঝতে পারছি না মেয়েটির কথা ।
“ সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০০০ , সন্ধার পর অন্য রেট” মেয়েটি এতো স্বাভাবিক ভাবে বলল যে কয়েক মুহূর্ত লেগে গেলো আমার বুঝতে। আগে জানতাম পার্ক গুলোতে রাতের বেলায় পতিতারা ঘুরে বেড়ায় । কিন্তু এমন ব্যাপার ও যে আছে সেটা জানতাম না । কথা বলে সময় কাটানোর জন্য মানুষ টাকা ব্যয় করে !!!
“ ঠিক আছে , আপনি ৫০০ দেবেন, চলুন ভেতরে যাই” মেয়েটি সাবলিল ভাবে বলে উঠলো
আমি যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি , এরকম ব্যাপার আগে দেখিনি কোনদিন । “ না না এখানেই বসি” আমি বললাম আমতা আমতা করে ,
“আপনি শিওর? ভেতরে নিরিবিলি ছিলো” মেয়েটির চোখ দুটো বলে দিচ্ছে এবার সে অবাক হচ্ছে ।
“ না মানে আমি একা বসতে চাচ্ছিলাম” আমি বুঝিয়ে বললাম ।
“ একা একা কি সময় কাটে? , চলুন খুব সুন্দর কাটবে আপনার সময় , চাইলে বাড়তি কিছু হবে”
“ প্লীজ আমার মনটা ভালো নেই একটু একা থাকতে চাচ্ছিলাম” আমি অনুরোধ করলাম সত্যি বলতে মেয়েটার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগছিলো আমার , কৌতূহল হচ্ছিলো , কিন্তু ভয় ও হচ্ছিলো এক ধরনের ।
“ আমার সাথে শেয়ার করবেন , আমি খুব ভালো স্রোতা” মেয়েটি ওঠার নাম নিচ্ছে না । আসলে আশেপাশে আমি ছাড়া আর কেউ নেইও যে মেয়েটি তার কাছে যাবে ।
“ চলুন , ঠিক আছে আরও দুশো কম দেবেন” মেয়েটি আমাকে চুপ থাকতে দেখে বলল ।
এমন সময় আরও একজন কে এসে বসতে দেখা গেলো , ২৫-২৬ এর যুবক বয়স । মেয়েটি আমাকে আরও একবার জিজ্ঞাস করে তারপর উঠে গেলো । ধিরে ধিরে ওই ছেলেটির কাছে এগিয়ে যাচ্ছে । হয়ত একি প্রশ্ন করবে তাকে । আমি মেয়েটির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
কিছুক্ষন পর * পরা মেয়েটি ওই ছেলের সাথে নিরবিলি জায়গায় চলে গেলো । জায়গাটা আবারো ফাকা হয়ে গেলো। সুধু আমি আর কিছু কাক । কাক গুলো এতক্ষন ছিলো না নতুন এসে জুটেছে । মনটা আবার রজবের দিকে চলে গেলো । ভাবলাম ওই মেয়েটার সাথে কিছুক্ষন কথা বললেই মনে হয় ভালো হতো। কিন্তু কি কথা বলতাম , কথা বলার তো কিছুই নেই ।
কিছুক্ষন পর একটা ছেলে আর মেয়ে এসে বসলো , কলেজ ড্রেস অথবা কলেজ ড্রেস ও হতে পারে । আমাদের সময় কলেজে ড্রেস ছিলো না আজকাল কলেজ ড্রেস আছে । কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কলেজে যেতে হয় , ঠিক কলেজের মতন । তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে এরা কলেজের ছেলে মেয়ে । কলেজ বাঙ্ক করে এখানে এসছে । কিছুক্ষন বসছে আবার উঠে দারাচ্ছে , একে অপরের হাত ধরে হাঁটছে । আবার দুষ্টুমি করছে , ছেলেটা মনে হয় দুষ্টু কোন কথা বলেছে , মেয়েটা তাই মারছে । ছেলেটা দৌরে পালানোর চেষ্টা করছে হাসতে হাসতে ।
আচ্ছা এই যে মেয়েটা কলেজ বাঙ্ক করে বন্ধুর সাথে ঘুরাঘুরি করছে , এতে কি কেলেঙ্কারি হয়ে যাচ্ছে ? রজব তো এই কেলেঙ্কারির ভয়েই মেয়ে কে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলো ।
আর ওই * পরা মেয়েটা?
অচেনা মানুষের সাথে নিরিবিলিতে কথা বলে টাকা উপার্জন করছে । হয়ত বাড়িতে অসুস্থ পিতা রয়েছে , অথবা অসুস্থ মা । নয়তো অবুঝ সন্তান । এই টাকা নিয়ে তাদের ভরন পোষণ করছে । এটা কি কেলেঙ্কারির মাঝে পরে? হ্যাঁ পরে অন্তত আমার চোখে রজবের চোখে এই জীবন কলঙ্কের । কিন্তু বেঁচে তো আছে ।
<><><>
রজবের ঘটনায় মনটা কয়েদিন খুব খারাপ যাচ্ছিলো , তাই মতিন এসে যখন বলল চল বন্ধু ঘুরে আসি। আমি না করলাম না , কোথায় যাবে সেটাও জিজ্ঞাস করলাম না । এমনিতে মেজো আপার বাড়িতে থেকে হাঁপিয়ে উঠছিলাম । কিন্তু বলতে পারছিলাম না যে চলে যাই । বাসা ভাড়া বাবদ বিল্ডারস কম্পানি থেকে যে টাকাটা পাচ্ছি সেটা মেজো আপার হাতেই যাচ্ছে ।
মতিন আমাকে কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাবে সেই নিয়ে প্রথমে চিন্তা না করলেও বাসে ওঠার পর মন কেমন খুঁত খুঁত করতে লাগলো। কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়না অনেক দিন , সেই ইউনিভার্সিটিতে থাকার সময় বন্ধুরা মিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম । এর পর আর যাওয়া হয়নি অনেককাল । মতিন কিন্তু কোনদিন ই এই ঘুরাঘুরি করা ছেলে ছিলো না । আমরা কলেজে যখন সবাই মিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম তখন মতিন যায়নি আমাদের সাথে । তাই ঠিক মতিনের উপর ভরসা হচ্ছিলো না ।
প্রায় সাত ঘণ্টা বাস জার্নি করে মতিন আমাকে একটা গ্রামের বাজারে এনে নামালো । সব দোকানপাট বন্ধ । সুধু একটা দোকানে আলো জ্বলছে । বুঝলাম মতিনের সাথে আসা ভুল হয়েছে । এ কোথায় এনে ফেলল আমাকে । অবশ্য মতিন আমাকে যদি কোন আলো ঝলমলে , কোলাহল যুক্ত টুরিস্ট এলাকায় নিয়ে যেত তারপর ও আমি ভাবতাম , মতিনের সাথে ঘুরতে আসা ভুল হয়েছে । আমার আসলে বেড়ানোর কোন আগ্রহ নেই । জাস্ট মেজো আপার বাসা থেকে কয়েক দিনের জন্য মুক্তি পাওয়ার ইচ্ছা । সেই সাথে রজবের ঘটনা থেকে মন কে দূরে সরিয়ে নেয়া ।
সেই কানা রাতেই দোকানি একটা ভ্যান যোগার করে দিলো আমাদের । মোবাইল ফোনের কারিশমা সত্যি ই অতল । গ্রাম্য এলাকা হলেও বেশ সুন্দর রাস্তা , ভ্যান কোন রকম ঝাকুনি ছাড়াই এগিয়ে চলছে । মিনিট বিশেক ভ্যান চলার পর একটা বাড়ির সামনে এসে থামল । টিনের বেড়া দেয়া চারিকে , সেই বেড়া ঘেঁষে লম্বা লম্বা নারকেল গাছ রাতের অন্ধকারে প্রহরীর মত দাড়িয়ে আছে যেন ।
“ তোকে বলেছিলাম না আমার চাচার বাড়িতে নিয়া আসবো , এই হইলো সেই চাচার বাড়ি” সব কটা দাত বের করে হাসছে মতিন। প্রথমে বুঝতে না পারলেও একটু পর বুঝতে পারলাম এটা নিলুফারদের বাড়ি । মতিনের বিশ্বাস নিলুফারের সাথে বিয়ে হলে আমার অসুখ সেরে যাবে ।
আমি বোবা হয়ে গেলাম , প্রচণ্ড রাগ হলো মতিনের উপর । ইচ্ছে হচ্ছে এখনি ভেনে উঠে ফিরতি পথ ধরি । কিন্তু ততক্ষণে ভ্যান চলে গেছে অনেক দূর । বাড়ি থেকেও কেউ একজন বেড়িয়ে এসেছে “কে রে ঐখানে”
“চাচাজি আমি মতিন” মতিন উত্তর দেয় ।
<><><>
বলেছিলো , “ এটা কি তোর পরের বাড়ি রে , আমার বাড়ি থাকতে তুই কেনো অন্য জায়গায় একা একা ভাড়া থাকবি?” কথা গুলো মেজো আপা যে মন থেকেই বলেছিলো সেটা আমি নিশ্চিত । কিন্তু আমি কিছুতেই এটা নিজের বাড়ি হিশেবে থাকতে পারছি না । বিশেষ করে ভাগ্নির সামনে পড়লে কেমন জানি অস্বস্তি লাগে । আরশির ঘটনার পর থেকেই তিতিলি আমাকে পছন্দ করে না। কে জানে কি ভেবে নিয়েছে মেয়েটা । আমিও সাহস করে কিছু বলতে যাই না , এই বয়সী ছেলে মেয়ে গুলো আনপ্রেডিক্টেবল।
বাড়ির কাজ দেখতে প্রায় রোজ আমাকে পাঠানো হয় । আমিও একটু ঘুরাঘুরি করে শেষে মতিনের ঘরে গিয়ে বসে থাকি । মন্ডি আমাকে নিয়ে তেমন বাড়তি আয়োজন করে না । এই দিকটা আমার ভালো লাগে , নয়তো জেতাম না ওদের ওখানে । বেশিরভাগ সময় মতিন থাকে না , অবশ্য এটাই ভালো থাকলে বাড়াবাড়ি করে খুব ।
কিন্তু মণ্ডি সম্পূর্ণ ভিন্ন , গল্প গুজব করে তারপর দুপুরের খাওয়ার সময় হলে বলে “ভাইজান গপসপ তো অইলো , ভাত খাইবেন নি , তরকারি অবশ্য বালা না”। বেশিরভাগ সময় আমি খাই না , মণ্ডিও সাধাসাধি করে না । তবে মাঝে মাঝে খাই , ওরা যা খায় তাই দিয়ে খাই । খাওয়া নিয়ে আমার তেমন আগ্রহ ছিলো না কোনদিন ই ।
তবে মাঝে মাঝে খাওয়ার কথা উঠলে মায়ের দোয়া রেস্তোরার রজবের কথা মনে পরে । শেষ পর্যন্ত আমি রজবের খোঁজ পেয়েছি , একদিন পুরনো মায়ের দোয়া হোটেল খোলা পেয়ে সেখানে ঢুকেছিলাম , দেখি মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে । তবে পুরনো বয় একজনকে পেয়ে গেলাম । আমাকে দেখে ছেলেটিই এগিয়ে এসেছিলো । “স্যারের শরীর ভালো নি?” সামনে এসে প্রশ্ন করতে প্রথমে চিনতে পারিনি ।
“রজব ভাই আপনের কথা জিগায় খুব” এ কথা বলতেই ছেলেটিকে চিনতে পেরেছিলাম । এই ছেলেটি পুরনো মায়ের দোয়া হোটেলে কাজ করতো । রজবের কি হয়েছে জিজ্ঞাস করতেই ছেলেটি আবেগ আপ্লূত হয়ে পরেছিলো । তবে যা বলল তাতে আমি নিজেও বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম । রজব আছে জেলে , তাও ছোটখাটো ব্যাপারে না একদম খুনের মামলা চলছে ওর নামে । নিজের মেয়ের জামাই কে খুন করেছে রজব ।
“ স্যারের একদিন সময় হইলে গিয়া দেখা কইরা আইসেন? আপনে গেলে একটু বল পাইবো ভাইয়ে” ভেজা চোখে বলেছিলো ছেলেটি । আমার মত নির্জীব একটা মানুষকে দেখে রজবের মত কর্ম চঞ্চল মানুষ কেমন করে বল পাবে সেটা আমি বুঝিনা। তবুও ঠিক করেছি একদিন গিয়ে দেখা করে আসবো ।
কিন্তু যাওয়া ও হয় না , ইচ্ছে করেই যাই না । রজব ছেলেটির ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বড় সপ্ন ছিলো । ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় রেস্তোরার মালিক হওয়ার সপ্ন ছিলো ওর মাঝে । তাই এমন ওকে জেলখানার গারদের পেছনে একজন খুনের আসামি হিশেবে দেখতে আমার ভালো লাগবে না ।
<><>
জেল খানার মুল ফটকে বসে আছি ঘণ্টা খানেক হলো । রজবের সাথে দেখা করার কথা বললে আমাকে জিজ্ঞাস করা হয়েছিলো আমি কি হই। উত্তরে বলেছিলাম বন্ধু , যদিও রজবকে ঠিক বন্ধু বলা যায় কিনা জানি না । তবে এজকে এই শব্দটি ছাড়া অন্য কোন শব্দ খুঁজে পেলাম না । আসলে রজবের সাথে আমার সম্পর্ক কি সেটা আমি নিজেও জানি না ।
একটা পুলিশ কে দুশো টাকা দিয়েছি । বলেছে দেখা করিয়ে দেবে , আত্মীয়স্বজন ছাড়া নাকি খুনের আসামীর সাথে দেখা করা দুস্কর । আর এই দুস্কর কাজ কে সহজ করার জন্য একশো টাকার দুটো নোট দরকার । আমার মনে হচ্ছে নোট দুটো তেমন কাজ করছে না । তাই আমার দেখা করার চান্স আসছে না । উঠে চলে আসবো ভাবছি ঠিক সেই সময় আমার ডাক এলো ।
আমি জেল খানার ভেতরে ঢুকলাম , জীবনে ভাবিনি এখানে আসবো । যেমনটা ভেবেছিলাম জেলখানা তেমন নয় , চারিদিকে সুন্দর ছিমছাম ভাবে সাজানো । জায়গায় জায়গায় ফুল গাছ লাগানো । এবং সেই ফুল গাছের যথেষ্ট যত্ন করা হয় দেখেই বোঝা যাচ্ছে ।
“স্যার আপনে” আমাকে দেখে রজন বেশ আশ্চর্য হয়েছে । আমিও কম আশ্চর্য হলাম না । রজব কে চেনাই যাচ্ছে না , ছক দুটো কোটরে ঢুকে গেছে । স্বাস্থ্য ভেঙ্গে গেছে , এই রজব আর মায়ের দোয়া হোটেলের রজবের মাঝে কোন মিল নেই ।
দুজনেই কিছুক্ষন চুপ করে ছিলাম , আসলে কি নিয়ে কথা বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না । আগে রজবের সাথে আমার কথা হতো খাওয়া দাওয়া নিয়ে । রজব নানা রকম খাবার রান্না করে আমাকে খাওয়াত আর সেই রান্নার কথা বলত । মাঝে মাঝে অবশ্য নিজের সপ্ন নিয়েও কথা বলত ।
“ কি হয়েছে রজব , এই অবস্থা কেনো হলো?” কিছুক্ষন চুপ থেকে জিজ্ঞাস করালাম আমি
রজব সহসা কোন উত্তর দিলো না , মুচকি হাসল সুধু । তারপর বলল “সবই কপাল স্যার, আমার কথা বাদ দেন , আপনের শরিল কেমন?”
রজব কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে জীবনের কাছে হেরে গেছে ও । নিজের লালিত সপ্ন গুলি কে কবর দিয়ে ফেলেছে । আশাহত চোখের দৃষ্টি বলে দিচ্ছে সামনে আর কিছুই দেখতে পায়না তারা । মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো , নিজের দল ভারী হতে দেখে খুশি হওয়ার বদলে মুষড়ে পড়লাম ।
শেষে বিদায় বেলায় এসে রজব নিজেকে মেলে ধরলো , আমার হাত দুটো ধরে কেঁদে ফেলল ,”স্যার যদি পারেন আমার পরিবারের খোঁজ নিয়েন, আপনেরে আমার বড় ভাইয়ের মতন মনে হয়, আপনে আসেন জানলে মইরাও শান্তি পামু”
মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বেড়িয়ে এসেছিলাম , আমার একটা মিথ্যা আশ্বাসে রজবের মুখে হাসি ফুটে উঠেছিলো , সত্যি সত্যি হাসি। বানানো মেকি হাসি নয় । মাঝে মাঝে মনে হয় আমার মত একটা মানুষের উপরও কেউ এমন ভরসা করতে পারে । এসেছিলাম রজবের মনের বল বৃদ্ধি করতে ফিরে যাচ্ছি নিজের মন ভারী করে ।
বাড়িতে ফিরতে ইচ্ছে হলো না , এমনিতেই হাঁটাহাঁটি করতে লাগলাম । হাটতে হাটতে একটা পার্কার মত জায়গায় চলে এলাম । মধ্য দুপুরে সুন্দর ছায়া ঘেরা জায়গা । একটা নিরবিলি জায়গা দেখে বসে পরলাম । রজবের বর্তমান অবস্থা দেখে মন খারাপ হয়েছে , তবে ভেতর ভেতর একটা অনুসুচনা ও হচ্ছে । আর অনুসুচনা আমাকে আরও বেশি কাবু করে ফেলছে । যদিও অনুসুচনা হওয়ার কারন খুব দুর্বল । আমি চেষ্টা করলেও হয়ত আজ এই দিনকে ফেরাতে পারতাম না । রজব হয়ত আমার কথা শুনত না ।
তবে চেষ্টা করা উচিৎ ছিলো বলে মনে হচ্ছে । হয়ত আরও একটু কঠিন ভাবে বুঝিয়ে বললে রজব সেদিন আমার কথা শুনত । মেয়ের বিয়ে তখন দিতো না । “ আমার কি এসে যায়” হয়ত এই ভেবে সেদিন আমি কিছু বলিনি ।
“ কথা বলার জন্য সঙ্গী খুঁজছেন?”
আকাশ কুসুম যখন ভাবছিলাম তখন হঠাত কথা গুলো শুনে আমার ধ্যান ভাংলো । দেখি সামনে একটি মেয়ে দাড়িয়ে * পরা । সুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে । বেশ অবাক হলাম আমি , হঠাত এমন প্রশ্ন কেনো? “জী আমাকে কিছু বলছেন?” আমি জানতে চাইলাম । বেশ অবাক লাগছে , হঠাত করে মেয়েটি আমাকে কেনো জিজ্ঞাস করছে কথা বলার সঙ্গী খুজছি কিনা।
মেয়েটি আমার পাশে বসে পরলো , বলল “জী আপ্নাকেই বলছি , একা একা বোর হচ্ছেন নিশ্চয়ই?”
মেয়েটির কণ্ঠ বেশ সুন্দর , কথা বলার ভঙ্গিও বেশ ভালো । এমন কণ্ঠ যার তার সঙ্গে কথা বলতে যে কেউ চাইবে । কিন্তু আমার প্রস্ন হচ্ছে মেয়েটি যেচে এসে কথা বলতে চাইছে কেনো?
“ আপনি চাইলে আমার জানা সুন্দর স্পট আছে , দুজনে গল্প করতে পারি, কেউ ডিস্টার্ব করবে না” মেয়েটি আবারো বলল
“ জী না মানে , আপনি কি আমাকে চেনেন?” আমি বোকার মত জিজ্ঞাস করলাম ।
সুন্দর করে হাসল মেয়েটি , বলল “ পরিচিত হতে কতক্ষন লাগে, কথা বলতে বলতেই পরিচয় হয়ে যাবে”
“ জী বলুন” আমি বললাম ,
“ আপনি কতক্ষন বসবেন?”
“ ঠিক বলতে পারছি না” আমি এখনো কিছু বুঝতে পারছি না মেয়েটির কথা ।
“ সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০০০ , সন্ধার পর অন্য রেট” মেয়েটি এতো স্বাভাবিক ভাবে বলল যে কয়েক মুহূর্ত লেগে গেলো আমার বুঝতে। আগে জানতাম পার্ক গুলোতে রাতের বেলায় পতিতারা ঘুরে বেড়ায় । কিন্তু এমন ব্যাপার ও যে আছে সেটা জানতাম না । কথা বলে সময় কাটানোর জন্য মানুষ টাকা ব্যয় করে !!!
“ ঠিক আছে , আপনি ৫০০ দেবেন, চলুন ভেতরে যাই” মেয়েটি সাবলিল ভাবে বলে উঠলো
আমি যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি , এরকম ব্যাপার আগে দেখিনি কোনদিন । “ না না এখানেই বসি” আমি বললাম আমতা আমতা করে ,
“আপনি শিওর? ভেতরে নিরিবিলি ছিলো” মেয়েটির চোখ দুটো বলে দিচ্ছে এবার সে অবাক হচ্ছে ।
“ না মানে আমি একা বসতে চাচ্ছিলাম” আমি বুঝিয়ে বললাম ।
“ একা একা কি সময় কাটে? , চলুন খুব সুন্দর কাটবে আপনার সময় , চাইলে বাড়তি কিছু হবে”
“ প্লীজ আমার মনটা ভালো নেই একটু একা থাকতে চাচ্ছিলাম” আমি অনুরোধ করলাম সত্যি বলতে মেয়েটার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগছিলো আমার , কৌতূহল হচ্ছিলো , কিন্তু ভয় ও হচ্ছিলো এক ধরনের ।
“ আমার সাথে শেয়ার করবেন , আমি খুব ভালো স্রোতা” মেয়েটি ওঠার নাম নিচ্ছে না । আসলে আশেপাশে আমি ছাড়া আর কেউ নেইও যে মেয়েটি তার কাছে যাবে ।
“ চলুন , ঠিক আছে আরও দুশো কম দেবেন” মেয়েটি আমাকে চুপ থাকতে দেখে বলল ।
এমন সময় আরও একজন কে এসে বসতে দেখা গেলো , ২৫-২৬ এর যুবক বয়স । মেয়েটি আমাকে আরও একবার জিজ্ঞাস করে তারপর উঠে গেলো । ধিরে ধিরে ওই ছেলেটির কাছে এগিয়ে যাচ্ছে । হয়ত একি প্রশ্ন করবে তাকে । আমি মেয়েটির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
কিছুক্ষন পর * পরা মেয়েটি ওই ছেলের সাথে নিরবিলি জায়গায় চলে গেলো । জায়গাটা আবারো ফাকা হয়ে গেলো। সুধু আমি আর কিছু কাক । কাক গুলো এতক্ষন ছিলো না নতুন এসে জুটেছে । মনটা আবার রজবের দিকে চলে গেলো । ভাবলাম ওই মেয়েটার সাথে কিছুক্ষন কথা বললেই মনে হয় ভালো হতো। কিন্তু কি কথা বলতাম , কথা বলার তো কিছুই নেই ।
কিছুক্ষন পর একটা ছেলে আর মেয়ে এসে বসলো , কলেজ ড্রেস অথবা কলেজ ড্রেস ও হতে পারে । আমাদের সময় কলেজে ড্রেস ছিলো না আজকাল কলেজ ড্রেস আছে । কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কলেজে যেতে হয় , ঠিক কলেজের মতন । তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে এরা কলেজের ছেলে মেয়ে । কলেজ বাঙ্ক করে এখানে এসছে । কিছুক্ষন বসছে আবার উঠে দারাচ্ছে , একে অপরের হাত ধরে হাঁটছে । আবার দুষ্টুমি করছে , ছেলেটা মনে হয় দুষ্টু কোন কথা বলেছে , মেয়েটা তাই মারছে । ছেলেটা দৌরে পালানোর চেষ্টা করছে হাসতে হাসতে ।
আচ্ছা এই যে মেয়েটা কলেজ বাঙ্ক করে বন্ধুর সাথে ঘুরাঘুরি করছে , এতে কি কেলেঙ্কারি হয়ে যাচ্ছে ? রজব তো এই কেলেঙ্কারির ভয়েই মেয়ে কে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলো ।
আর ওই * পরা মেয়েটা?
অচেনা মানুষের সাথে নিরিবিলিতে কথা বলে টাকা উপার্জন করছে । হয়ত বাড়িতে অসুস্থ পিতা রয়েছে , অথবা অসুস্থ মা । নয়তো অবুঝ সন্তান । এই টাকা নিয়ে তাদের ভরন পোষণ করছে । এটা কি কেলেঙ্কারির মাঝে পরে? হ্যাঁ পরে অন্তত আমার চোখে রজবের চোখে এই জীবন কলঙ্কের । কিন্তু বেঁচে তো আছে ।
<><><>
রজবের ঘটনায় মনটা কয়েদিন খুব খারাপ যাচ্ছিলো , তাই মতিন এসে যখন বলল চল বন্ধু ঘুরে আসি। আমি না করলাম না , কোথায় যাবে সেটাও জিজ্ঞাস করলাম না । এমনিতে মেজো আপার বাড়িতে থেকে হাঁপিয়ে উঠছিলাম । কিন্তু বলতে পারছিলাম না যে চলে যাই । বাসা ভাড়া বাবদ বিল্ডারস কম্পানি থেকে যে টাকাটা পাচ্ছি সেটা মেজো আপার হাতেই যাচ্ছে ।
মতিন আমাকে কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাবে সেই নিয়ে প্রথমে চিন্তা না করলেও বাসে ওঠার পর মন কেমন খুঁত খুঁত করতে লাগলো। কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়না অনেক দিন , সেই ইউনিভার্সিটিতে থাকার সময় বন্ধুরা মিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম । এর পর আর যাওয়া হয়নি অনেককাল । মতিন কিন্তু কোনদিন ই এই ঘুরাঘুরি করা ছেলে ছিলো না । আমরা কলেজে যখন সবাই মিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম তখন মতিন যায়নি আমাদের সাথে । তাই ঠিক মতিনের উপর ভরসা হচ্ছিলো না ।
প্রায় সাত ঘণ্টা বাস জার্নি করে মতিন আমাকে একটা গ্রামের বাজারে এনে নামালো । সব দোকানপাট বন্ধ । সুধু একটা দোকানে আলো জ্বলছে । বুঝলাম মতিনের সাথে আসা ভুল হয়েছে । এ কোথায় এনে ফেলল আমাকে । অবশ্য মতিন আমাকে যদি কোন আলো ঝলমলে , কোলাহল যুক্ত টুরিস্ট এলাকায় নিয়ে যেত তারপর ও আমি ভাবতাম , মতিনের সাথে ঘুরতে আসা ভুল হয়েছে । আমার আসলে বেড়ানোর কোন আগ্রহ নেই । জাস্ট মেজো আপার বাসা থেকে কয়েক দিনের জন্য মুক্তি পাওয়ার ইচ্ছা । সেই সাথে রজবের ঘটনা থেকে মন কে দূরে সরিয়ে নেয়া ।
সেই কানা রাতেই দোকানি একটা ভ্যান যোগার করে দিলো আমাদের । মোবাইল ফোনের কারিশমা সত্যি ই অতল । গ্রাম্য এলাকা হলেও বেশ সুন্দর রাস্তা , ভ্যান কোন রকম ঝাকুনি ছাড়াই এগিয়ে চলছে । মিনিট বিশেক ভ্যান চলার পর একটা বাড়ির সামনে এসে থামল । টিনের বেড়া দেয়া চারিকে , সেই বেড়া ঘেঁষে লম্বা লম্বা নারকেল গাছ রাতের অন্ধকারে প্রহরীর মত দাড়িয়ে আছে যেন ।
“ তোকে বলেছিলাম না আমার চাচার বাড়িতে নিয়া আসবো , এই হইলো সেই চাচার বাড়ি” সব কটা দাত বের করে হাসছে মতিন। প্রথমে বুঝতে না পারলেও একটু পর বুঝতে পারলাম এটা নিলুফারদের বাড়ি । মতিনের বিশ্বাস নিলুফারের সাথে বিয়ে হলে আমার অসুখ সেরে যাবে ।
আমি বোবা হয়ে গেলাম , প্রচণ্ড রাগ হলো মতিনের উপর । ইচ্ছে হচ্ছে এখনি ভেনে উঠে ফিরতি পথ ধরি । কিন্তু ততক্ষণে ভ্যান চলে গেছে অনেক দূর । বাড়ি থেকেও কেউ একজন বেড়িয়ে এসেছে “কে রে ঐখানে”
“চাচাজি আমি মতিন” মতিন উত্তর দেয় ।
<><><>