Thread Rating:
  • 159 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL গোলকধাঁধায় গোগোল (সমাপ্ত)
 আবার কিছুটা বিরতি নিয়ে বলতে শুরু করলেন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত, "কালো টাকার মালিকগুলোর মাথায় ভর করতেও দ্বিধাবোধ করে না এই অসুররা। তারপর সবগুলো জোট বেঁধে হামলে পড়ে শেয়ার বাজারে। বিশাল এক ধ্বস নামিয়ে গরীব মানুষগুলোর আশা-ভরসার বারোটা বাজিয়ে দেয়। কারো পূজো, কারো ঈদ, কারো বা দৈনন্দিন জীবনটাও মাটি হয়ে যায়। অসহায় মানুষগুলো হতাশায় মাথা খুটতে থাকে। সেই সাথে তাদের কন্ঠ থেকে বেরিয়ে আসে প্রবল আর্তনাদ। আসলে ওই  অসুরগুলো শুধুমাত্র একজন দুইজন নয়, ছড়িয়ে পড়েছে হাজার হাজার, লাখো লাখো মানুষের মাঝে। ওরা রাস্তার মোড়ে, কলেজ কিংবা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে, অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কুৎসিত ইঙ্গিত করে কিশোরী থেকে যুবতী বিদ্যার্থীদের দিকে। ওদেরকে আসুরিক প্রলোভনে জড়িয়ে পথ বিচ্যুত করতে চায়। কখনো বা হামলে পড়ে হিংস্র হায়েনার মতো। ওরা গরল ছুঁড়ে ঝলসে দিতে চায় বিধাতার হাতে গড়া সুন্দরকে। ওদের হায়েনার ন্যায় ধারালো দাঁতের ফাঁক দিয়ে ঝরে পড়ে কামনার লোল। ওদের লোভাতুর চোখের সামনে আমাদের সমাজের ভগিণীরা যেন আজ তীরের নিশানায় থাকা পাখির মতোই।"


"ওরা মানব সভ্যতার বাণীকে বিকৃত করে মানুষকে করে বিভ্রান্ত। মানুষে মানুষে জন্ম দেয় বিভেদ আর হানাহানির। সাম্প্রদায়িকদের শরীরে প্রবেশ করে ওরা ধর্মের নামে আকাশে ওড়ায় হিংসার বিষবাষ্প। ওরা এই পৃথিবীর মঙ্গল চায় না। ওরা চায় মহাতাণ্ডবে মেতে পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিতে আর বিকৃত বেলেল্লাপনায় মেতে উঠতে। তাই তোমাকে যে একদিন না একদিন আসতেই হতো হে অরুন্ধতী .. হে মহিষাসুরমর্দিনী .. তুমি তো দেবী দুর্গার আর এক রূপ। তোমাকে তো আসতেই হতো তোমার ত্রিনয়না, দশভূজা, রণরঙ্গিনী রূপে। তোমার খড়্গের প্রতি কোপে ছিন্ন হোক শত শত অসুরের পাপচর্চিত মস্তক। তোমার ত্রিশুল চিরে দিক যত অশুভ কামনার বুক। তোমার পদতলে পিষ্ট হোক অনাচারী দুর্বিত্তেরা। জয় হোক তোমার শুভশক্তির।" শেষের কথাগুলো বলার সময় ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তর গলার স্বর একদম অন্যরকম হয়ে গেছিলো। 

 "ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী যে কটা খুন হয়েছে, সেগুলোর বর্ণনা পুলিশ রেকর্ডে যেভাবে দেওয়া আছে, তার সঙ্গে পর্ণা এবং বর্ণালী ম্যাডামের করা ঘটনার বর্ণনাগুলো হুবহু মিলে যাচ্ছে। আমার স্থির বিশ্বাস এবং এটাই সম্ভবত ধ্রুব সত্য .. অসুর বিনাশের পর কালের নিয়মে এবং হয়তো বা দেবী শক্তির কল্যাণে অনির্বাণের ভেতরের সেই প্রতিশোধের আগুন এখন নিভে গিয়েছে। তাই বর্তমানে তার দেখা সেই স্বপ্নগুলোর কথা কিছুই মনে পড়ছে না। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি কোনোদিন সেই দুঃস্বপ্নের কিছু স্মৃতি ফিরে আসে, তাহলে মিলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, তার সঙ্গেও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং বর্ণালী ম্যাডাম আর পর্ণার বর্ণনার সঙ্গে কি অদ্ভুত সাদৃশ্য রয়েছে। এর পেছনে সঠিক কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়, কিছু সময় অলৌকিক শক্তির উপরেও নির্ভর করতে হয় আমাদের। অতঃপর .. যখন প্রমাণ হয়েই গেছে অনির্বাণ কিছু করেনি, পুরোটাই তার দুঃস্বপ্ন, তখন চিন্তা করবেন না .. এই সম্পর্কে একটা কথাও আমি পুলিশকে বলবো না। না মানে, আমি বলতে চাইছি আমাদের ডিপার্টমেন্টে জানাবো না। যদি পুলিশের তরফ থেকে ভবিষ্যতে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাহলে, আপনারা প্রত্যেকে নিজেদের মুখ বন্ধ রাখলেই হলো। বর্ণালী ম্যাডামও এই কথা কোনোদিন কোথাও শেয়ার করবে না এই আশ্বাস আমাকে দিয়েছে। আপনারা সবাই এখন নিশ্চিন্তে বাড়ি যেতে পারেন। অনির্বাণকে সঙ্গে নিয়ে যান .. ও এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। আমার ডিউটি শেষ .. তাহলে আমি এখন চলি। পরে আবার কোথাও  কখনো হয়তো দেখা হয়ে যেতেও পারে। কি বলেছিলাম মনে আছে বন্ধু? সব সন্দীপ সেনগুপ্তরা খারাপ হয় না .. কেউ কেউ ভালোও হয়।" শেষের কথাগুলো গোগোলের উদ্দেশ্যে বলে দ্রুত কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন সন্দীপ।

★★★★

"কখনো প্রভাতের আকাশে শ্বেতশুভ্র মেঘমালার মধ্যে এখনো খুঁজে বেড়াই আমার মা'কে, আবার কখনো দুর্যোগের রাতে ঘন কালো মেঘের ঘনঘটায় খোঁজার চেষ্টা করি তাকে। জৈষ্ঠ মাস শেষ হয়ে যখন আষাঢ় আসে, তপ্ত হয়ে শুকিয়ে যাওয়া প্রকৃতি যখন অপেক্ষায় থাকে বর্ষার .. আমিও তখন অপেক্ষা করি আমার হারিয়ে যাওয়া মায়ের জন্য। কখন বৃষ্টি আসবে .. কখন সে এসে সবকিছু শান্ত করবে! আমিও অপেক্ষায় থাকি আমার মায়ের .. যে তার হাতের পরশে আমার এতদিনের অপেক্ষা আমার এতদিনের চাপা কষ্ট এক মুহূর্তে মুছিয়ে দেবে। অপেক্ষা করতে করতে করতে মায়ের অপেক্ষায় পার করলাম তেরোটা বছর .. তবুও তো সে আমাকে দেখা দিলো না। তুমি কত মানুষকে দেখা দিলে .. অথচ আমাকে একবারটির জন্যেও দেখা দিলে না মা?" কথাগুলো বলতে বলতে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো গোগোল। তাকে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের কাছে টেনে নিয়ে সান্তনা দিতে লাগলো সুজাতা। 

একে একে বিদায় নিলো গোগোলের চার বন্ধু, ধনঙ্গী ভাই এবং কাবেরী দেবী। সুজাতা, ডক্টর দাসগুপ্ত, হিয়া এবং পর্ণা তখনো কেবিনে উপস্থিত ছিলো। "ভদ্রলোকের ফোন নম্বরটা নেওয়া হলো না। এত বড় উপকার করলেন আমাদের। শুধু উপকার কেনো বলছি .. এমন এক মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী করে গেলেন আমাদের, যেটা আমৃত্যু মনে থাকবে। কাল  দুপুরের দিকে আমাদের বাড়িতে লাঞ্চে ইনভাইট করার ইচ্ছে আছে উনাকে। ঠিক আছে পুলিশ স্টেশনে ফোন করে উনার নম্বরটা নিয়ে নিলেই হবে। তুমি কি বলো সুজাতা?" ডক্টর দাশগুপ্তর এই কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো সুজাতা। 

ঠিক সেই মুহূর্তে কেবিনের দরজায় টোকা পড়লো। সুবীর গিয়ে দরজাটা খুলে দিতেই পুলিশ ইউনিফর্মে থাকা ইন্সপেক্টর গোস্বামী ভেতরে প্রবেশ করলেন .. তার সঙ্গে থানার মেজবাবু বিকাশ দত্ত। তারপর পর্ণার দিকে তাকিয়ে বললেন, "হুঁ .. তাহলে আমরা ঠিক জায়গাতেই এসেছি। আপনি তো আচ্ছা বেয়াক্কেলে মেয়ে দেখছি! সেই যে তখন নিজের ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে উপরে উঠে এলেন .. কোথায় যাচ্ছেন, কখন ফিরবেন .. একটা খবর দেওয়ার পর্যন্ত প্রয়োজন বোধ করেননি? পুলিশের অনুমতি ছাড়া এইভাবে যেখানে সেখানে চলে যাওয়া যায় না। আপনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হন নি, তাছাড়া আপনার স্টেটমেন্ট রেকর্ড করা হয়নি এখনো পুলিশের। প্লিজ, কাইন্ডলি নিচে আসুন ম্যাডাম।"

ইন্সপেক্টর গোস্বামীর মুখে কথাগুলো শুনে ঘরে উপস্থিত প্রত্যেকটি মানুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। "কিন্তু আপনাদের ডিপার্টমেন্টের একজন .. মানে আমি সন্দীপ সেনগুপ্তর কথা বলছি .. তিনি তো .. আচ্ছা উনার ফোন নম্বরটা কি পাওয়া যাবে?" জিজ্ঞাসা করলেন ডক্টর দাসগুপ্ত।

"আপনারা ওনাকে চিনলেন কি করে? হ্যাঁ, উনি কলকাতা থেকে একটি বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে নিষিদ্ধ ড্রাগ এবং জাল ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার কেসটা সলভ করতে আমাদের এখানে আই মিন গঙ্গানগরে এসেছিলেন। অদ্ভুত ক্ষমতা লোকটির মশাই। যেখানে আমরা এতদিনেও বাস টার্মিনাসে ধরা পড়া লোকটির পেট থেকে একটা কথাও বার করতে পারিনি। সেখানে উনি .. কি আর বলবো আপনাদের .. উপরমহল থেকে ওনাকে এই কেসটা সলভ করার জন্য আটচল্লিশ ঘন্টার সময় দেওয়া হয়েছিলো ঠিকই। কিন্তু উনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই লোকটাকে ইন্টারোগেশন করে সমস্ত কথা বার করে নেয়। কিন্তু কথায় বলে .. ভগবান ভালো মানুষদের বেশিদিন এই পৃথিবীতে রাখে না। তাই বলে এরকম একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যাবে, তাও আবার আমাদের এখানে এসে এত দ্রুত একটা বড় কেস সলভ করার পর! এটা আমাদের কাছে শুধু দুঃখের নয়, লজ্জারও বটে।" নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কথাগুলো বললেন ইন্সপেক্টর গোস্বামী। 

"কি হয়েছে একটু খুলে বলুন তো পুলিশ আঙ্কেল .." ছোটবেলা থেকেই ইন্সপেক্টর গোস্বামীকে দেখে আসছে গোগোল এবং উভয়ের মধ্যে একটা আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে। তাই উনাকে আঙ্কেল বলেই সম্বোধন করে সে।

"সে কি .. তোমরা জানো না? আচ্ছা তার আগে বলো তো, তোমার কি শরীর খারাপ? তুমি হসপিটালে এডমিট হয়েছো কেনো? অবশ্য শরীর খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক, যা একটা ঝড় বয়ে গেলো তোমাদের উপর দিয়ে। খারাপ লাগে টগরের জন্য।" ইন্সপেক্টর গোস্বামীর এই কথার উত্তরে গোগোল কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো। তাকে ততক্ষণাৎ হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে হিয়া বলে উঠলো, "হ্যাঁ, ওর শরীরটা একটু খারাপ হয়েছিলো .. এখন অবশ্য ঠিক আছে। উনিই, আই মিন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তই ওকে ভর্তি করে এখানে। টগর চলে যাওয়ার দিন থেকেই তো উনি আছেন আমাদের সঙ্গে। তবে আপনি ইন্সপেক্টর সন্দীপ সেনগুপ্তর কথা কি যেন বলছিলেন স্যার?"

"আছেন নয় .. ছিলেন বলো মা। গতকাল রাতে নিজের কোয়ার্টারে ফেরার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন ইন্সপেক্টর সন্দীপ সেনগুপ্ত। আমি হান্ডেট পার্সেন্ট সিওর মানিক সামন্তর দল অর্থাৎ রুলিং পার্টির হাইকম্যান্ড থেকে এই কাজ করা হয়েছে। আসলে দুর্নীতির শিকর তো একদম উপর পর্যন্ত পৌছে গেছে। তাই কান টানলে মাথা আসতে পারে .. সেই ভয়ে সরিয়ে দেওয়া হলো সৎ , নির্ভীক , কর্তব্যপরায়ন পুলিশ অফিসারটিকে। তবে আমরা এর শেষ পর্যন্ত দেখে ছাড়বো। ঠিক আছে আপনার এখানে কাজ মিটে গেলে তাড়াতাড়ি নিচে আসুন, আমরা এগোচ্ছি।" শেষ কথাগুলো পর্ণার উদ্দেশ্যে বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন ইন্সপেক্টর গোস্বামী এবং তার পেছন পেছন মেজবাবু বিকাশ দত্ত।

কিছুক্ষণ স্তম্বিত হয়ে বসে রইলো সবাই। "আমি তাহলে উঠি .." এই বলে উঠে দাঁড়ালো পর্ণা। তৎক্ষণাৎ পর্ণার সামনে এসে তার দুটো হাত ধরে হিয়া মৃদু কন্ঠে বললো "সবকিছুই তো দেখলে, শুনলে এবং অনুধাবন করলে।  কি সাঙ্ঘাতিক ঘটনা ঘটে গেলো বা ঘটে চলছিল এতক্ষণ ধরে আমাদের সবার সঙ্গে, সেটা নিশ্চয়ই তুমি বুঝতে পেরেছো। এই নিয়ে এখন বিশ্লেষণ করার সময় আমাদের কারোর নেই। এখন আমাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং প্রথম সিদ্ধান্তটা তোমাকেই নিতে হবে। তবে আমি তোমাকে নিজে থেকে কিছু বলছি না বা কোনো অনুরোধ করছি না। লাটসাহেব আমি মিন তোমার দাদাকে কাল ওখান থেকে সোজা এই হসপিটালে নিয়ে এসেছিলেন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত। একটা জিনিস লক্ষ্য করলে ..   পুলিশ তোমার দাদার সম্পর্কে মার্ডার রিলেটেড একটা কথাও জিজ্ঞাসা করলো না। তোমার দাদার নামে কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো এফআইআর বা কোনো ডায়েরী হয়নি। বুঝতে পারছো তো আমি কি বলতে চাইছি? এখানে এতক্ষন যা কিছু ঘটলো সেই সম্পর্কে সবকিছু ভুলে যাও। ভেবে নাও এটা একটা দুঃস্বপ্ন ছিলো বা হয়তো সুখের স্বপ্ন। তোমাকে দেখে আমার বুদ্ধিমতী মেয়ে বলেই মনে হয়েছে। তাই নিচে গিয়ে পুলিশকে কি স্টেটমেন্ট দেবে সেটা সম্পূর্ণ তোমার সিদ্ধান্ত।"

তারপর গোগোলকে উদ্দেশ্য করে বললো "কে বলেছে তোমার মা তোমাকে দেখা দেননি? উনি ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তর রূপ ধরে এসে তোমাকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেলেন .. এটাও বুঝতে পারোনি বকুরাম? তবে এই কথাগুলো শুধুমাত্র আমাদের এই চারজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুক। এর বাইরে যেন কেউ না জানে এমনকি আমার মাও নয়।" 

"চিন্তা নেই, একটা কথাও বলবো না পুলিশকে। আলম সাহেবের মতো আমিও অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম, তাই কিছুই দেখিনি .. শুধু এইটুকুই বলবো। তবে এই কথাগুলো আমাকে না বললেও চলতো হিয়া, নাকি বৌদি বলবো? খুব তাড়াতাড়ি তোমাদের বিয়ের খবরটা শুনতে চাই কিন্তু। অনেক তো সংগ্রাম হলো, এবার একটু সুখের মুখ দেখো তোমরা। বেস্ট অফ লাক .. চললাম .." বিদায় নিলো পর্ণা।

★★★★

একে একে সবাই বিদায় নিলো। বদ্ধ কেবিনে বন্দী হয়ে রয়ে গেলো শুধুমাত্র গোগোল আর হিয়া। এক সময় নিবিড় আলিঙ্গনে বদ্ধ হলো দুজনে।

"আমার মনের জিজ্ঞাসা, আমার মনের ব্যথা বেদনা আমারই থাক। বৃষ্টিগুলো আমার চোখ দিয়েই ঝরুক। ঝর্ণার জল শুধু আমার হৃদয় দিয়েই নির্গত হোক। অশান্ত সমুদ্রের ঢেউ উঠলে আমার মনেই উঠুক। আর সেই অজানা ঠিকানাহীন ঢেউয়ে শুধু আমিই ভেসে যেতে চাই। আমার এই কষ্টের সঙ্গী করতে চাইনা কাউকে। চোখ দিয়ে ঝরা জলের মূল্য যে কতো, তা হয়তো বা কোনোদিন কল্পনাও করতে পারবে না আমি। তাই  চাইনা এই নিয়ে ভেবে আমার প্রিয়তমার মাথার উপর পুরো আকাশটাই ভেঙ্গে পড়ুক, মেঘে ঢেকে চোখ দুটি অন্ধ হোক। আমার প্রিয়তমার জন্য সুখের নরম ছোঁয়ায় তার হৃদয়ে আবেগের ঝর্ণা ঝরে পড়ুক। হিয়ার মুখে চাঁদের হাসিতে চারিদিকে আলোকিত হোক। কারণ আমি যে তাকে বড্ড ভালোবাসি। তাই সর্বদা তার হৃদয়ে আনন্দের বন্যা দেখতে চাই। সেই নিয়ন্ত্রণহীন বন্যায় তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ুক ভালোবাসার ছোঁয়া। পাখিদের গানে গানে মনটা আনন্দে ভরে উঠুক হিয়ার। হাসনাহেনার গন্ধে তার চারিপাশ শুভাসিত হোক। জ্যোৎস্না রাতের আলোতে হিয়ার চোখ দু’টি পুলকিত হয়ে উঠুক।" অস্ফুটে বলে উঠলো গোগোল।

সেই কবে থেকে মনের গভীরে আগ্নেয়গিরির জলন্ত লাভা ঢেলে সহাবস্থান করেছে গোগোল। মননে আগ্নেয়াস্ত্রের ভান্ডার মজুদ রেখেছে। তবুও তার অন্তরে গোমতীর কোনো ধারা বাহিত হয়নি এতদিন। ধরাধামে বিজয়া দশমী পালিত হয়েছে প্রতিনিয়ত। প্রতিশোধের জ্বলন্ত চোখেও শিশির ভেজা স্বপ্ন দেখেছে সে। যে স্বপ্ন কখনো না পেরেছে হৃদয়ে গজিয়ে ওঠা ঘা শুকিয়ে দিতে, না পেরেছে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে সবকিছু শেষ করে দিতে। গোলকধাঁধায় পরে রয়েছে তার মন, দেহ আর রোজনামচার ভঙ্গিমা। কখনো মানবতা রক্ষা, আবার কখনো সরীসৃপ হয়ে সমতল দেওয়ালের উপরে উঠে দাঁড়িয়ে পরা। অথচ আজ প্রমাণিত সবই তো ছিলো তার কল্পনা প্রসূত। কখন যে সমাপ্ত সঙ্গীতের সূচনা হবে তাও সে জানেনা। চারিপাশের এত শুভাকাঙ্ক্ষী থাকা সত্ত্বেও, এমনকি তার মনের মানুষ হিয়ার উপস্থিতিতেও পালহীন নৌকা নিয়ে  নদীতে  দাঁড়িয়ে একা সে। 

যদিও কখনো ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলির উপসংহারের দ্বিধাদ্বন্দ্ব পেরিয়ে আবার সে এগিয়ে যেতে পারে, তাহলে হয়তো চলার পথের শত শত ক্যাকটাস পেরিয়ে, ব্যর্থতার হাতছানি এড়িয়ে সাফল্যের চাবিকাঠি আসবে তার হাতে। প্রেম-ভালবাসা, বিবাহ এবং পরবর্তীতে সন্তান .. এই সবকিছুই তো জীবনের অঙ্গ। তাই যতদিন সে বেঁচে থাকবে, ততদিন তাকে জীবনের রঙ্গমঞ্চের এই নাটক চালিয়ে যেতে হবে। তারপর একদিন যখন আগ্নেয়গিরি ঠান্ডা হয়ে যাবে .. শান্ত হয়ে যাবে এই মনের ব্যাকুলতা, সেইদিন হয়তো মুক্তি পাবে আমাদের গোগোল এই গোলকধাঁধা থেকে।


•• অন্তিম খণ্ডের সমাপ্তি ••


|| পাঠক বন্ধুদের উদ্দেশ্যে ||

এতদিন তোমরা আমার এই উপন্যাসের পাশে থেকেছো
হয়তো কেউ কেউ আমাকে ভালোবেসেছো
আবার হয়তো কেউ কেউ ঘৃণা করেছো
শুধু একটাই অনুরোধ .. আমাকে ভুলে যেওনা কখনো

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


Like Reply


Messages In This Thread
RE: গোলকধাঁধায় গোগোল (চলছে) - by Bumba_1 - 06-02-2023, 09:07 PM



Users browsing this thread: 58 Guest(s)