Thread Rating:
  • 159 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL গোলকধাঁধায় গোগোল (সমাপ্ত)
"এক্সকিউজ মি .. মিনিট দশেক আপনারা অপেক্ষা করুন এখানে.. আমি একটু বাইরে থেকে আসছি .." কথাগুলো ঘরে উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত। প্রথমেই এই হসপিটালের অফিসে গিয়ে রেজিস্টার খাতা চেক করলেন, তারপর কাউকে একটা ফোন করে, কিছুক্ষণ ফোনে কথা বলে পুনরায় কেবিনে প্রবেশ করলেন তিনি।


"পুলিশ ফোর্স ডাকতে গিয়েছিলেন? নিশ্চয়ই ওকে অ্যারেস্ট করার জন্য?" কাবেরী দেবীর এইরূপ উক্তিতে, তার দিকে কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে গলাটা যতটা সম্ভব গম্ভীর করা যায় ততটা করে ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত বললেন "হুঁ .. তবে সঙ্গে মহিলা পুলিশও আছে .. আর একটাও অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় কথা বললে সোজা কোর্টে চালান করে দেবো আপনাকে.." থতমতো খেয়ে গিয়ে চুপ করে গেলেন কাবেরী দেবী।

"হসপিটালের রেকর্ড বলছে সুজাতা দেবীর ওইদিন নাইট ডিউটি ছিলো। তারমানে ভোরবেলা বাড়িতে ফিরে উনি অনির্বাণকে যে অবস্থায় দেখেছিলেন বলে এতক্ষণ দাবী করলেন, সেটা সম্পূর্ণ সত্যি। এর থেকে এটা প্রমাণ হয় .. অনির্বাণ রাতে আবার সেই ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখেছিলো .. যে দুঃস্বপ্ন দেখে ছোটবেলায় সে ভয়ে কুঁকড়ে উঠতো। এরপর অনির্বাণ এবং তার বন্ধু সুবীরের কলেজে ফোন করে খবর নিয়ে জানলাম সুবীর সম্পূর্ণ সত্য কথা বলেছে। দু'বছর আগে বাইশ এবং তেইশে এপ্রিল ওরা সুন্দরবন গেছিলো কলেজ এক্সকারশনে। সেখানে অনির্বাণও ছিলো ওদের সঙ্গে। তিনটে খুন করার যে দাবী আপনি করছেন, তার মধ্যে প্রথম দু'টো ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর হদিশ আপনি এখনো দিতে পারেননি। অথচ আপনার দাবীর বিপক্ষে, অর্থাৎ আপনি যে সেইদিন ওখানে উপস্থিত ছিলেন না এবং প্রথম ঘটনার ক্ষেত্রে উপস্থিত থাকলেও সেই কাজ আপনার পক্ষে করা সম্ভব ছিলো না, এর প্রত্যক্ষদর্শী এবং সরকারি প্রমাণ পেয়ে গেছি আমরা। এবার আপনি বলুন তো ..  ২২ আর ২৩ তারিখের কথা এই মুহূর্তে আপনার মনে পড়লো কিছু, অনির্বাণ? আর সুজাতা ম্যাডাম যেটা বললেন, অর্থাৎ আপনার দিদিমার মৃত্যুর ঘটনাটা। সেই ব্যাপারে কিছু আলোকপাত করতে পারেন?" গোগোলের বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত।

"হ্যাঁ, সুন্দরবনের এক্সকারশনের কথা মনে পড়েছে। কিন্তু দিদার মৃত্যুর সময়কার কোনো ঘটনা আমি এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। মাথাটা কিরকম যেন ঝিমঝিম করছে আমার। মনে করার চেষ্টা করছি, কিন্তু বিশ্বাস করুন কিছুতেই .. তাছাড়া একটা অন্য প্রশ্ন আমার মাথায় উঁকি দিচ্ছে বারবার‌ .. ঘটনা দুটো যদি আমি না ঘটিয়ে থাকি, তাহলে এই কাজ করলো কে? ইন্সিডেন্টগুলো তো আর মিথ্যে নয়!" কথাগুলো বলে দুই হাত দিয়ে নিজের মাথা চেপে ধরলো গোগোল।

- "আপনি যথার্থ বলেছেন অনির্বাণ .. ঘটনাগুলো আপনি না ঘটিয়ে থাকলে, কে ঘটালো? সে প্রসঙ্গে আমরা পরে আসছি। কিন্তু তার আগে আপনি বলুন .. তৃতীয় এবং চতুর্থ খুন, যেখানে দু'জনকে একসঙ্গে আপনি হত্যা করেছিলেন বলে দাবী করছেন .. এই কথাতে কি এখনো অনড় রয়েছেন?"

- "এখন, এই মুহূর্তে আপনার এই প্রশ্নের আমি কি জবাব দিই বলুন তো! এতদিন ধরে যা ধ্রুব সত্যি বলে জেনে এসেছি, তা যদি হঠাৎ করে মিথ্যে প্রমাণ হয়ে যায়, তাহলে কি পরিমাণ মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়, সেটা আপনি বুঝতে পারছেন? আমার মাথা কাজ করছে না। তবে এক্ষেত্রে বোধহয় আমিই সঠিক। যদিও তারিখটা আমার বলে দেওয়ার দরকার নেই, প্রায় সব লিডিং নিউজ পেপারে বেরিয়েছিলো ওসমান আর জাকির মৃত্যুর খবরটা। ২০শে অক্টোবর ছিলো তারিখটা। আর একটু আগে আপনি প্রত্যক্ষদর্শীর কথা বলছিলেন না? তাকে তো আপনি নিজের সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছেন। ধনঙ্গী ভাই .. তুমি তো গিয়েছিলে আমার সঙ্গে মায়াবন্দরে। বাকিটা তুমিই না হয় বলো ইন্সপেক্টরকে .." 

"আপনি কোথায় গেছেন, কি করেছেন .. সে আপনি জানেন .. মুঝে কিঁউ বিচ মে ঘাসিট রহে হো আপ? এইসব খুনের মধ্যে আমি নেই আর আমি আপনার সঙ্গে কোথাও যাইনি .." তাকে সাক্ষী মানতে যাওয়ায়, গোগোলের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি ভরে কথাগুলো বললো ধনঙ্গী ভাই।

"তার মানে, এক্ষেত্রেও আপনার খুন করার স্বপক্ষে কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া গেলো না। তবে তার থেকে এটা প্রমাণ হয় না যে, ওই দুটো খুন আপনি করেননি। কারণ, যে তারিখটার কথা আপনি বলছেন, ওই নির্দিষ্ট তারিখে গঙ্গানগরে আপনার থাকার কোনো অকাট্য প্রমাণ নেই .. আমি অফিসিয়াল প্রমাণের কথা বলছি। হ্যাঁ, আপনার মামণি বলতেই পারেন যে আপনি ওনার সঙ্গে ছিলেন। তবে কোর্টে কেসটা উঠলে প্রমাণ করতে পারবেন না। কিন্তু .. মায়াবন্দর হত্যাকাণ্ডে যাদের নাম খবরে আসেনি, অথচ যারা বা যিনি এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত প্রত্যক্ষদর্শী তার সঙ্গে কিছুক্ষণ আগে কথা বলে এলাম। সেই জন্যই তখন বলেছিলাম - একটা কাজ সেরে আসতে কিছুটা দেরি হয়ে গেলো। বর্ণালী রায় .. রেলপাড়ের কলেজের বাংলার দিদিমণি। তবে উনি কি বলেছেন সেটা আমি পরে ডিসক্লোস করবো .. তার আগে মিস পর্ণা বলবেন এক্সাক্টলি সেই রাতে কি হয়েছিলো।" ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তর কথাগুলো শুনে বিস্ফোরিত নেত্রে তাকিয়ে থাকলো গোগোল, তার গলা দিয়ে একটা কথাও বের হলো না।

★★★★

এরপর পর্ণার বলা বাকি কথাগুলো ..

 সেই রাতে আমি আলম সাহেবের সঙ্গে ওর বাড়ির বেডরুমের বিছানাতেই ছিলাম। আমার মুখে এই কথাগুলো শুনে হয়তো আপনারা আমাকে খুব খারাপ মেয়ে ভাবছেন। কিন্তু তাতে আমার কিছু করার নেই ..  একজন বোন হিসেবে না হোক, মানুষ হিসেবে একজন মানুষকে বাঁচানোর জন্য যেটা সত্যি, আমাকে তো সেটা বলতেই হবে। আমরা দু'জনে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ছিলাম, কিছু ব্যক্তিগত কথা বলছিলাম নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। সেই সময় হঠাৎ করেই সাক্ষাৎ যমদূতের মতো ঘরে প্রবেশ করলো কামরাজ। যারা নিজেরা অসৎ হয়, সমাজের জন্য ক্ষতিকারক হয় .. তারা কখনো অন্যের ভালো হয়ে ওঠার প্রচেষ্টাকে সহ্য করতে পারে না। কামরাজের ক্ষেত্রেও সেই একই জিনিস ঘটেছিলো। আলম সাহেবের অনেক অনুনয় বিনয় আমার অনবরত করতে থাকা আকুতি .. কোনো কাজে আসছিলো না।

 কামরাজ একসময় পকেট থেকে একটা রিভলবার বের করে আলম সাহেবের দিকে তাক করে বললো - এবার মরার জন্য প্রস্তুত হও। এই কথা বলার পরক্ষণেই গুলি করলো কামরাজ। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘরে যে জিরো পাওয়ারের বাল্বটা জ্বলছিলো সেটা হঠাৎ করেই ফিউজ হয়ে গেলো। এই কথা বলছি কারণ লোডশেডিং হয়নি, ঘরের এসি তখনো চলছিলো। আলো নেভার সঙ্গে সঙ্গেই আলম সাহেব বিছানার উপর ঝুঁকে পড়েছিলো, তাই গুলিটা তার বুকে না লেগে কাঁধের উপর লেগেছিলো। আমার তখন সঙ্গীন অবস্থা .. বাড়িতে যারা ছিলো তাদের আগেই খুন করে এসেছে কামরাজ এ কথা সে আগেই জানিয়েছে। বাড়ির নিচে গাড়িতে অপেক্ষা করছিলো আর এক দুর্বৃত্ত মানিক সামন্ত .. তাই পালাবার কোনো পথ ছিলো না আমার। আলম সাহেবের এই অবস্থায় উনাকে বাঁচানোর জন্য চিৎকার করবো, নাকি পরের গুলিটার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাবো ঠিক করতে পারছিলাম না।

 ঠিক তখনই তিনি এলেন মহা সমারোহে, দীপ্তি ছড়িয়ে প্রলয় তার। কাকে নিতে এলো অজানা তখন, হয়তো যার নামে আছে পরোয়ানার ভার। মৃত্যুর ডাক বদ্ধ কুঠুরিতে, ঠিকানায় নেই আপন-পর। ভেদাভেদে গড়া দূরত্ব আজ, সীমানা শুধুই নিজের ঘর। ধীরে ধীরে চোখ সয়ে এলো সেই ঘন অন্ধকারে। এক অনির্বচনীয় দ্যুতি ছড়িয়ে আমার চোখের সামনে ক্রমশ প্রকাশিত হলেন তিনি। আমি স্পষ্ট দেখলাম বিছানার ঠিক সামনে আমার থেকে এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক রমণী। সাদা রঙের লাল পেড়ে শাড়ি জড়ানো তার গায়ে, কপালে চন্দনের ফোঁটা, হাতে দীর্ঘ ধাতব শলাকার মতো ধারালো একটা অস্ত্র .. যেটাকে দেখতে অনেকটা বর্শার মতো। অতঃপর তার মুখের দিকে‌ দৃষ্টি গেলো আমার, জানেন তিনি কে? বিশ্বাস করবেন আপনারা আমাকে? আরে, আপনারা কি বিশ্বাস করবেন .. আমি নিজেই আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি। স্পষ্ট দেখলাম আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন দেবী অরুন্ধতী। হ্যাঁ আপনারা ঠিকই শুনেছেন .. আমি তাঁকে দেবী সম্মোধন করলাম। শুধুমাত্র তার নাম নেওয়া বা তাকে পিসি সম্মোধন করার ধৃষ্টতা আমার নেই। যিনি পিসি, মাসি, মা এইসব পারিবারিক সম্পর্ক থেকে অনেক ঊর্ধ্বে বিরাজ করেন। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করতে পুনরায় যার আগমন ঘটেছে এই পৃথিবীতে।

  তারপর সেই নরপিশাচটার দৃষ্টি গেলো অস্ত্রধারী দেবী অরুন্ধতীর দিকে। স্পষ্ট লক্ষ্য করলাম কামরাজের নৃশংস-কদাকার মুখে হঠাৎ করেই আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। ''তু..তুমি মানে আ..আপনি এখানে, এভাবে? কি..কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? আপনি তো ..'' কথাগুলো বলতে বলতে এক'পা এক'পা করে পেছচ্ছিলো সে। দৃষ্টি সামনের দিকে থাকায় তার পিছনে কি রয়েছে সেদিকে খেয়াল করতে পারেনি শয়তানটা। পেছাতে গিয়ে হঠাৎ করেই খাটের পাশে রাখা চেয়ারটার পায়ার সঙ্গে তার পা জড়িয়ে মাটিতে পড়ে যায় কামরাজ, তার হাত থেকে ছিটকে পড়ে রিভলভারটা। আরো কয়েক পা এগিয়ে দেবী অরুন্ধতী তখন মাটিতে পড়ে যাওয়া অসুররূপী কামরাজের ঠিক সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

অজানা আতঙ্ক এবং বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে বাস্তবের মাটিতে তখন ফিরে এসেছে কামরাজ। কথায় বলে অফেন্স ইজ দা বেস্ট ডিফেন্স .. তাই নিজেকে বাঁচানোর তাগিদেই হোক কিংবা 'একজন নারী আমার কি ক্ষতি করতে পারে' এই ভেবেই হোক ''তুমি যেই হও না কেন .. তোমাকে আমি একটুও ভয় পাচ্ছি না। তোমার সাহস বড্ড বেড়ে গেছে, তাই না? ভুলে গেছো সেদিনের কথা, যেদিন তোমাকে আমরা .. ও ভালো কথা, বাড়ির নিচে গাড়িতে তোমার আরেক যম অপেক্ষা করছে। ওর চোখ এড়িয়ে তুমি উপরে এলে কি করে? আর যখন এসেই পড়েছ, তখন আমার হাতেই যে তোমাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে ..'' কথাগুলো বলার পরেই মুখটা কিরকম যেন হিংস্র হয়ে উঠলো কামরাজের। হাতে ভর দিয়ে মাটি থেকে উঠে দাঁড়াতে গেলো সে। ঠিক সেই মুহূর্তে কড়কড় করে একটা শব্দ হওয়াতে ওপরের দিকে তাকালো দুর্বৃত্তটা। দেবী অরুন্ধতীর হাতের ধারালো ধাতব দীর্ঘ শলাকার মতো অস্ত্রটা তখন আর তাঁর হাতে ছিলো না, শূন্যে ভাসছিলো সেটা। তারপর হঠাৎ অস্ত্রটার ধারালো ফলার মতো ছুঁচোলো অংশটা কামরাজের অভিমুখে ঘুরে গিয়ে দ্রুতবেগে তার দিকে ধেয়ে এলো। তারপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেটা গিয়ে বিঁধলো তার বুকের বাঁ দিকে। প্রবলবেগে একটা আর্তনাদ করে উঠলো নরপিশাচটা। অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে চোখদুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছিলো কামরাজের।

"তোমার যন্ত্রণার এখনো অনেক বাকি কামরাজ .. নিরীহ অসহায় মানুষদের চিরতরে ধ্বংস করে যে অমানুষ পৈশাচিক আনন্দলাভ করে, তাকে তো এত সহজে মরতে দেওয়া যাবে না। একটু আগে যার কথা বলছিলে, সে আর ইহ জগতে নেই। এখানে আসার আগে তাকেও .." সারা ঘরময় প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো দেবী অরুন্ধতীর কন্ঠস্বর। যে কন্ঠে ছিলো মাতৃত্বের মধু-মাখানো পরশ, আবার বিদ্রোহিনী নারীর দৃঢ় শব্দের স্তর। তারপর নিজের একটা পা তুলে দিলেন নরপিশাচটার বুকের উপর। অপরিসীম যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত হতে হতে অসুররূপী কামরাজের গগনভেদী চিৎকার ক্রমশ গোঙানিতে পরিণত হলো দেবী অরুন্ধতীর পায়ের পাতার নিচে।  

 "আজ তোমার মৃত্যু হবে .. এই কথা তুমি নিজেও এখন বুঝতে পারছো। কিন্তু মৃত্যুর আগে অমানুষিক মৃত্যুযন্ত্রণা কি জিনিস এবার তুমি তা বুঝবে। তোমার কাছে তোমার শরীরের সব থেকে গর্বের যে অংশটা, যেটা দিয়ে কত যে অসহায় মহিলার সতীত্ব হরণ করেছো, তা বোধহয় গুনে শেষ করা যাবে না। তাই আজ তোমার মৃত্যুর আগেই চিরতরে বিনাশ হবে তোমার শরীরে সেই অংশটি .." দেবী অরুন্ধতী নিজের কথা শেষ করে কামরাজের বুকের উপর থেকে নিজের পা'টা সরিয়ে নিলেন। তারপর অসুরটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহূর্তের মধ্যে প্রবল বেগে পদাঘাত করলেন নরপিশাচটার জঙ্ঘার উপর। ভেঙে গুঁড়িয়ে গেলো কামরাজের জঙ্ঘা .. সঙ্গে তার পৌরষত্ব।

কামরাজের শরীরের উপর থেকে দেবী অরুন্ধতী ততক্ষণে নিজের পা সরিয়ে নিলেও বর্ষার মতো ধারালো অস্ত্রটা তখনও তার বুকে গেঁথে ছিলো। কিন্তু সেই সময় আর বাধা দেওয়া, যন্ত্রণায় দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয় চিৎকার করা .. এর কোনো অবস্থাতেই ছিলো না দুর্বৃত্তটা। এতক্ষণ মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত হয়ে থাকলেও এখন মনে-প্রানে মৃত্যুকেই আহ্বান করে যাচ্ছিলো নরপিশাচ কামরাজ। এই বিভীষিকাময় যন্ত্রণা আর যে তার শরীর নিতে পারছিলো না! দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছিলো তার। স্পষ্ট ভাবে দেবী অরুন্ধতীর মুখ দেখতে না পেলেও, তাঁর উপস্থিতি অনুধাবন করে সেইদিকে হাতজোড় করে বলে অসুররূপী কামরাজ উঠলো "আমি আমার সব দোষ স্বীকার করছি, আমি মহাপাতক। হে দেবী .. আপনার কাছে আমার একটাই অনুরোধ .. এবার পুরোপুরি শেষ করে দিন আমাকে, জ্বালা জুড়োক শরীরের। এই শারীরিক যন্ত্রণা আমি আর সহ্য করতে পারছি না। একজন মৃত্যু পথযাত্রীর এই অনুরোধ রাখুন দয়া করে .. আপনার কাছ থেকে আমি মৃত্যুভিক্ষা চাইছি।"

এই মুহূর্তটার জন্যই সম্ভবত অপেক্ষা করছিলেন দেবী অরুন্ধতী। ছলে-বলে-কৌশলে বা শক্তি দিয়ে শত্রুর বিনাশ তো অবশ্যই করা যায়, কিন্তু উল্টো দিকের ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করার আগে হাতজোড় করে তার সমস্ত দোষ স্বীকার করে মৃত্যুভিক্ষার অনুরোধ করে .. তার মতো তৃপ্তিদায়ক পরিস্থিতি বোধহয় খুব কমই হয়। এমত অবস্থায় দেবী অরুন্ধতী আর সময় নষ্ট না করে অর্ধমৃত কামরাজের একটা হাত ধরে মাটি থেকে কিছুটা তুলে আধশোয়া অবস্থায় নিয়ে এসে "তবে তাই হোক .. মুক্তি লাভ করো তুমি .." এইটুকু বলে অসুরটার বুকের গভীরে তীক্ষ্ণ শলাকাটা ঢুকিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়ে পুনরায় তাকে মাটিতে ফেলে দিলেন।

রাত শেষের ভোরের আকাশে হঠাৎ আগুন শিহরণ, বীভৎস ডঙ্কারে কাঁপে নিস্তব্ধতা। বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কে যেন চলে যায় চুপি চুপি। মাটিতে রক্তের তাজা গন্ধ। আবিরে ছোঁয়েনি বসন্ত আকাশ, ভীত নিরাশারা ক্লান্ত, স্তব্ধ। খুশির মুখেরা মুখোশে ঢাকা, আজ দুঃখেরা সব মুক, জব্দ। দেবী দর্শন এবং অসুর বধ .. চোখের সামনে এরকম তৃপ্তিদায়ক, অথচ রোমহর্ষক এবং বীভৎস দৃশ্য বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারলো না আমার মতো পাপী-তাপী মানুষ। মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম বিছানায় .. পরক্ষণেই জ্ঞান হারালাম। তারপর পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে।

★★★★ 

এতক্ষণ পর্ণার কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে যাচ্ছিলো কেবিনে উপস্থিত সকলে। "আমি জানি কথাগুলো শুনে আপনারা অনেকেই নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেননি এখনো পর্যন্ত। এটাই স্বাভাবিক, কারণ যার কোনো অস্তিত্ব নেই এটা যখন আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে শুরু করি, ঠিক সেই সময় যদি হঠাৎ করে যদি তার অস্তিত্বের আভাস‌ পাওয়া যায় .. তখন আমরা যারপরনাই বিস্মিত হয়ে যাই। বর্ণালী ম্যাডামের মুখে কথাগুলো শোনার পর আমিও প্রথমে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম। পর্ণা এবং বর্ণালী এরা পরস্পরকে চেনে না, অতীতেও এদের কোনোদিন দেখা হয়নি। অথচ শুনলে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন .. এদের দু'জনের দেওয়া দুই বিভীষিকাময় রাতের বর্ণনা হুবহু এক। সেক্ষেত্রে স্থান, সময়কাল, দুর্বৃত্তের পরিচয় ভিন্ন হলেও উভয় ক্ষেত্রেই দেবী অরুন্ধতীর উপস্থিতি এবং তাঁর দ্বারা শত্রু বিনাশের যে বর্ণনা আমি পেয়েছি, তার মধ্যে অদ্ভুত সাদৃশ্য রয়েছে। এখন বর্ণালী ম্যাডাম সেখানে কি করে পৌঁছেছিলেন এই প্রসঙ্গ  এই মুহূর্তে একেবারেই গুরুত্বহীন। অর্থাৎ মায়াবন্দরে ওসমান মন্ডল এবং জ্যাকির হত্যা অনির্বানের হাতে হয়নি .. এটাও প্রমাণিত হলো।"  মৌনতা ভেঙে প্রথম কথাগুলো বললেন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত।

কিছুটা দম নিলেন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত, তারপর আবার বলতে শুরু করলেন "অনৈতিক এবং অধর্ম দিন দিন বেড়েই চলেছে। যা খুশি তাই করে যাচ্ছে আধুনিক যুগের অসুররা। জগতের হেন অশুভ কম্ম নেই যা তারা করছে না। চুরি-ডাকাতি, সন্ত্রাস, ;.,, এমনকি হত্যা .. যত ধরণের অনাচার-ব্যাভিচার আছে তার কোনোটাই তাদের অপকর্মের তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে না। একদা সেই লম্পট-দুশ্চরিত্র অসুরেরা কামরাজ আর মানিক সামন্তর রূপ ধারণ করে অরুন্ধতীর সর্বনাশ করেছিলো। তারপর অসুররূপী নিশীথ বটব্যাল ভোগ করেছিলো তার কন্যাসম মৌমিতাকে। মৌমিতার মাতৃদেবী স্বপ্নাকে হত্যা করেছিল সে। একে একে সেই দুর্বৃত্ত অসুরেরা ওসমান আর জ্যাকির মতো পাপিষ্ঠের দেহে ভর করে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো বর্ণালীর জীবন। এই অসুরদের থেকে রক্ষা পায়নি বা  রক্ষা পায়না কোনো অবলা নারী। প্রতিমা থেকে রূপসা, কাকলি থেকে বৈশালী সবাই এদের লালসার শিকার হয়েছে।"
 
Like Reply


Messages In This Thread
RE: গোলকধাঁধায় গোগোল (চলছে) - by Bumba_1 - 06-02-2023, 09:03 PM



Users browsing this thread: 24 Guest(s)