03-02-2023, 09:00 PM
পর্ব - দশ
কাঁপতে থাকা হাতটা ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠে আসছে আর সাথে গুটিয়ে নিচ্ছে ঊর্ধ্বাঙ্গ ঢেকে রাখা বস্ত্রটিকে। রুমার এমন দেরি অনির্বাণের কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না আর, চোখ দুটো যেন খুব বেশি তড়পাচ্ছে আজ। সেদিনের দেখা টুকু আজও চোখের সামনে আবছায়া ভেসে উঠে তবে আজ যে মনের ঈশান কোনে সুখের মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। এইতো আর কিছুক্ষণ তারপর যেন শত সাধনা শেষে উপঢৌকন হিসেবে পাওয়া রত্ন দুখানা প্রাণ ভরে অবলোকন করতে পারবে সে। বুকের উপর চেপে বসা দুটো মাংসের দলাও যে এতো অপরূপ শোভা নিজের মাঝে লুকিয়ে রাখতে পারে সেটা হয়তো পুরুষের কামনার আগুনে জ্বলতে থাকা চোখ ছাড়া আর কেউ আবিষ্কারই করতে পারতো না। এতো দূরে বসেও ছোট্ট একটা মোবাইলের ডিসপ্লেতে সেই সৌন্দর্যের দেখা পাবার আশায় হাসফাস করতে থাকা অনির্বাণ কে দেখে ঈষৎ দুষ্টুমি খেলতে থাকে রুমার মস্তিষ্কে।
ফর্সা পেট খানা উন্মুক্ত হতেই থেমে যায় প্রেয়সীর হাত দুটো আর তাতেই অপেক্ষার প্রহন গুনতে থাকা প্রেমিকের মনে কেমন ঝড় উঠতে যাচ্ছে সেটার পূর্বাভাস দেবার সাধ্য বুঝি স্বয়ং নাসার বিজ্ঞানীদেরও নেই। বড় বড় চোখে চেয়ে থাকা অনির্বাণের নিরাশ হওয়া মনে যেই দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে তাতে হাতের কাছে পাওয়া মূল্যবান গুপ্তধন ছোবার আগেই হারিয়ে যাওয়ার কষ্টটাই অধিকমাত্রায় ব্যক্ত হয়। রুমার এমন করে থেমে যাওয়াটা কোনভাবেই সহ্য হচ্ছে না যে তার, চোখ মুখের অভিব্যক্তি আর হাতে ইশারায় বাকি কাজটা সম্পাদন করবার তাগদা দিয়ে যাচ্ছে। আর এই তাড়াহুড়োর চক্করে প্রেয়সীর ফর্সা হালকা মেদ জুড়ে থাকা পেটের মাঝে গভীর নাভী খানা যে অপূর্ব শোভামণ্ডিত আলোকবর্ণছটায় চারদিক মোহিত করছে সেটা অনির্বাণের দৃষ্টির অগোচরেই রয়ে যাচ্ছে৷ অনির্বাণ দর্শনেন্দ্রিয় যে সৌন্দর্যের মায়ায় কবলে হারিয়ে আছে তার আগেও যে ওমন আকর্ষণ বিন্দু যে প্রেয়সীর দেহের মধ্যভাগে নিজের অবস্থানে সবটুকু মনোযোগ নিজের দিকে নেবার ক্ষমতা রাখে সেটাই যে ধরতে পারছে না। কোমল মোলায়েম মসৃণ ত্বকে ঢাকা পেটের পাশে হালকা ভাজে দৃষ্টি পড়লে যে পুরুষ মনে ভয়াবহ কাঁপন ধরাতে পারে সেটা অনির্বাণের জানা নেই নাকি আগে তার সেটা দেখাই হয়ে উঠেনি। আগে যদিও অবহেলায় মনের অনাদরে সেটা মিস করেও থাকে এবার কিন্তু ভাগ্যদেবী স্বয়ং ওর চোখের সামনেই দাড়িয়ে। ইশশ ও যদি মোবাইলের ঐ পাশে না থেকে রুমার পাশেই থাকতো তবে, নিজের উন্মুক্ত পেটের উপর প্রেমিকের ভারী উষ্ণ নিঃশ্বাসের অনুভবের কল্পনা করা মাত্রই শরীর টা শিরশিরানি দিয়ে উঠে। মনে হয় ওর শরীরের খুব কাছে নাভীমূলের আশেপাশেই অনির্বাণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর উষ্ণ নিঃশ্বাসের ওর দেহে উষ্ণতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। ভাবনায় ডুবে থাকা রুমার শরীর মস্তিষ্কের কল্পনার সাথে সাড়া দিতে থাকে, কেমন একটা উত্তেজনার অনূভুতি সমস্ত দেহে দৌড়াদৌড়ি করতে শুরু করেছে।
ওদিকে অনির্বাণ যেন এবার ধৈর্য হারা হবার কাছাকাছি চলে এসেছে কিন্তু না পারছে কিছু করতে না পারছে কিছু বলতে। আগের থেকে অনেকটা পরিণত করে নিয়েছে নিজেকে এই খেলায়, কোন তাড়াহুড়ো করবে না নয়তো সবটাই হাতছাড়া হতে পারে। তবে নিজেকেও তো ধরে রাখার একটা সীমারেখা আছে সেটার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে সে তাইতো বারংবার তাগদা দিয়ে যাচ্ছে রুমা কে ওর হাত দুটো যেন বাকি জামাটুকু গুটিয়ে নিয়ে বুকের সৌন্দর্য দুটো উন্মুক্ত করে দেয় অনির্বাণের লোলুপ দৃষ্টির কাছে। প্রেমিকের আনচান ভাবটা দেখে তার মনের ভেতর কি চলছে সেটা কিছুটা হলেও বোধগম্য হয় রুমার কাছে আর সেটার প্রতিক্রিয়াতেই ঠোঁটের কিনারে হালকা হাসির রেখা ফোঁটে উঠে। আর অপেক্ষায় রাখাতে চায় না সে অনির্বাণ কে যেটা করতেই হবে সেটাতে আর দেরি কিসের?
চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে হাতের মুঠো দুটো শক্ত করে নেয় রুমা, শরীর রোমাঞ্চে মেতে থাকলেও মনে তো কত কি ভাবনায় ভেসে যাচ্ছে। চাইলেই কি আর এতো সহজে সবটা করা যায়, না আর দেরি করতে পারবে না সে। একবার পেছন ফিরে বোন ঘুমোচ্ছে সেটা দেখে নিশ্চিন্ত হয়েই এক ঝটকায় জামার বাকি অংশটুকু মুড়ে নেয় বুকের উপর পর্যন্ত। অন্তর্বাসের আগল ছাড়া ভারী দুধ দুটো ছিটকে বেড়িয়ে আসে জামার আড়াল থেকে। জামার সাথে হালকা সংঘর্ষের ফল সরূপ অদ্ভুত একটা নাচনে নিজেদের দুলাতে থাকে, আর সেই দোলনের ঠেউ সুনামির মত আছড়ে পড়ছে মোবাইলের অপরপ্রান্তে বসে থাকা অনির্বাণের চোখের কোণে। বুকের উপর বসিয়ে দেয়া মাংসের দলা দুটো নিজেদের ভারে হালকা ঝুলে গিয়েছে আর ঝুলন প্রান্তে কালো বৃত্তাকার চাকতির মাঝে হালকা বাদামী রঙের এবড়োখেবড়ো বোটা দুটো যেন পৃথিবীর মূল আকর্ষণ বিন্দু। চোখে পড়া মাত্রই যেন মুখের ভেতরে খানিক আগেও শুষ্ক থাকা জিভটা মূহুর্তের মাঝে ভিজে উঠে। রসালো লকলকে জিভটা চঞ্চল হয়ে উঠে নিজের স্পর্শে রুমার খোলা বুকটা সিক্ত করে দিতে৷ অনির্বাণের চোখের পিপাসা বুঝি আজ শেষ হবার নয় কিন্তু সমস্ত আগ্রহে জল ঢেলে দিয়ে রুমা তড়িৎ গতিতে নিজের গুটিয়ে রাখা জামা খানা দিয়ে নিজের সৌন্দর্যের অহংকার গুলোকে আবৃত করে নেয়৷ আর ছোটে গিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়েই আগে কলটা ডিসকানেক্ট করে দেয়। উত্তেজনার বশেই হয়তো ফ্যান চলার মাঝেও রুমা খানিকটা ঘেমে উঠেছে। দ্রুত শ্বাস উঠানামা করছে আর সেই সাথে শরীরের কাঁপন, বাতিটা নিভিয়ে দিয়েই নিজের অশান্ত হয়ে উঠা দেহটাকে সন্তপর্ণে বিছানায় এলিয়ে দেয়।
মোবাইলের নোটিফিকেশনের আওয়াজ হয়,মুখের সামনে আনতেই দেখে অনির্বাণের মেসেজ
লাভ ইউ সো মাচ জান, কাল পরীক্ষাটা নিশ্চিত ভালোই হবে।
রুমার ঠোঁটের দুটো বেঁকে উঠে মুচকি হাসিতে,
সেটাই যেন হয় না হলে কিন্তু...
আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়ো। গুড নাইট।
ওকে গুড নাইট।
চাইলেই কি আর এমন মূহুর্তের পর ঘুম আসে? দুটো শরীর দুটো জায়গায় ছটফটিয়ে যাচ্ছে ভেতরের উত্তেজনাটাকে কোনমতে প্রশমিত করে নেবার আশায়। উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা রুমা বালিশে মুখ গুজে নিজেকে শান্ত করার সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ওর সারা শরীর জুড়ে প্রচন্ড বেগে বইতে থাকা রক্তের উত্তাপে হাত পা গুলো নিসপিস করছে। ভারী নিঃশ্বাস গুলো বালিশে আছড়ে পড়ে ভুস ভুস শব্দের তৈরী করছে৷
ঐদিকে অনির্বাণের চোখ জোড়া অপলক দৃষ্টিতে মোবাইলের উজ্জ্বল পর্দায় তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে জিভের ছোঁয়াতে শুকনো ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নিচ্ছে। ভিডিও কলের ফাঁকে দুষ্টু অনির্বাণ রুমার উন্মুক্ত ঊর্ধ্বাঙ্গের কয়েক স্ক্রিনশট নিয়ে রেখেছে আর সেগুলো দেখতে দেখতে আরও গরম করে তুলেছে শরীরটাকে। শারীরিক প্রতিক্রিয়ায় একটা হাত চলে যায় ট্রাউজারের ভিতরে আর ফুঁসতে থাকা নিজের বাড়াটাকে মুঠোতে পুড়ে সামনে পিছনে হাত চালাতে থাকে।
★★★★★
আজ শুক্রবার ছুটির দিন মাধুরী ভেবেছিল একটু বেলা করেই উঠবে, তবে সেটা আর হলো কই? ভোর বেলায় হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে যায় একটা গানের সুরে। গানটা কোথা থেকে আসছে সেটা তার জানা, রাধা বিনোদ মন্দিরে দর্শন আরতি শুরু হয়েছে। সেটারই আরতি কীর্তনের মাঝারি পাল্লার শব্দ ওর দোতলার ঘরের কোন এক ফাঁক গলে প্রতিদিনের মত আজও ঘরে ঢুকে পড়েছে। অন্যদিন হলে মাথার নিচে বালিশ টা মাথার উপরে চেপে ধরে আবার ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করতো। কিন্তু আজ কি যেন হয়েছে গানের গলার স্বরটা নতুন লাগছে সেই সাথে কেমন একটা মাতাল মাতাল ভাব লেগে আছে সেই সুরে। এতোদিনকার যেই সময়টা ওর কাছে বিচ্ছিরি রকমের বিরক্তিকর লাগতো আজ সেটাই অদ্ভুত ভাবে ভালো ঠেকছে মনের বাঁকা উঠোনে। ইচ্ছে করছিলো ছুটে গিয়ে একবার দেখে আসুক কে সেই মানুষটা যার গলার স্বরে ওমন মায়া আশ্রয় করে আছে। কিন্তু শরীরের আলস্যের কাছে মনের চাহিদা তেমন একটা পাত্তা পেল না, এমনিতেও কাল অনেক রাত করে ঘুমিয়েছিল। হালকা করে পা ছড়াতেই ডান হাতে কোন খসখসে কাগজের ঘসা লাগলো, পাশ ফিরতেই মনে পড়লো কাল রাতে ঐ অচেনা ব্যক্তির হাতে আঁকা ওর ছবিটা অনেকক্ষণ ধরে দেখছিলো শুয়ে শুয়ে। আনমনে ছবিটা আবারো হাত তুলে নেয়, পরম যত্নে আলতো করে ছবিটা মেলে ধরে। মাধুরী আপন মনে ভাবতে থাকে সত্যিই কি ওর হাসিটা এতোটাই সুন্দর নাকি যে এঁকেছে সে একটু বাড়বাড়ন্ত করেই হাসিটা কে মিষ্টি করে তুলেছে৷ এমন ভাবনার মাঝেই ওর ঠোঁটের কোনে হাসির চিকন রেখা প্রস্ফুটিত হতে থাকে।
না আজ আর শুয়ে থাকতে মন চাইছে না। উঠবেই যখন তখন একবার কি মন্দিরের চত্বরে একটা চক্কর মারবে কি? তাহলে কপাল গুনে ওমন মায়াধরা কন্ঠস্বরের মালিকের সাথে দেখা হয়েও যেতে পারে। যেমন ভাবা তেমন কাজ, চট করে মাধুরী বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমে চলে যায়।
কিন্তু কপাল হয়তো বড়ই মন্দ আজ, না হলে হঠাৎ করেই ঐ কণ্ঠটা থেমে গেল কেন? কোনমতে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসতে না আসতেই আবার কীর্তনের সুর শুনতে পারছে তবে আগের সেই গলা নয়৷ মনটা মূহুর্তে খারাপ হয়ে যায়, এখন গিয়েও তো লাভ নেই ঐ মানুষটাকে কি আর চিনতে পারবে! মনের আকাশটা বিষন্নতার মেঘে ঢেকে গেলো মূহুর্তেই সেই মেঘের আধারে মাধুরীর মুখটা কেমন ম্লান হয়ে গেছে। একবার ভেবেছিল আবার গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিবে কিন্তু মন চাইলো না তাই রুম লাগোয়া বেলকনির দিকে এগিয়ে যায়।
বারান্দায় দাঁড়াতেই চোখ পড়ে বিপরীতে সেই বাড়িটাতে। দোতলার বারান্দায় একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে, মহিলা বললে ভুল হবে এ যেন দেবী সরস্বতী স্বয়ং দাঁড়িয়ে আছে মাধুরীর সামনে। কোমড় অব্দি লম্বা খোলা চুলে গামছার ঝাঁট দিয়ে শুকাচ্ছে। দুধে আলতা গায়ের রঙে সিঁদুরে রাঙানো সিঁথিতে মুখটা যেন আর বেশি উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছে, উজ্জ্বল লাল রঙের শাড়িতে মানুষ থেকে দেবীতে রূপান্তরিত করেছে। মাধুরী একমনে বিপরীতের বারান্দায় দাঁড়ানো সেই দেবীর রূপ দর্শন করে চলেছে। হঠাৎ মহিলাটি কিছুটা নিচের দিকে ঝুঁকে কাউকে কিছু একটা বলে উঠে,
নিখিল ও নিখিল কৌশিক কি মন্দির থেকে ফিরেছে?
নামটা শুনতেই মাধুরীর কান দুটো খাঁড়া হয়ে যায়! সময়ের চেয়েও দ্রুত গতিতে সজাগ হয়ে উঠে মস্তিষ্ক। শরীরের প্রতিটা লোমকূপে ছড়িয়ে পড়েছে অজানা উত্তেজনা, কি যেন নামটা বললো? কৌশিক! কোন কৌশিক? এটা ওদের কলেজের স্যার নয়তো! ধ্যাত ঐ নামে কি পৃথিবীতে একটাই মানুষ আছে নাকি। সামনে তাকাতেই দেখে ঐ মহিলাটা ওখান থেকে চলে গিয়েছে, না এখানে আর ভালো লাগছে তাই মাধুরী নিচে ওর মায়ের হাতে বানানো ছোট বাগানের দিকে চলে যায়।
শুক্রবারে দোকানে একটু বেশিই চাপ থাকে, ছুটির দিনে সকালটাতে পাড়ার সবাই নাস্তা খেতে আসে বশির চাচার দোকানে। উনার সাথে পাড়ার মানুষের সম্পর্কটা খদ্দের দোকানদের চেয়েও অনেক উপরে অনেকটা আত্মীয়র মতো। আজ সকালের খাবার ঔষধ কিছুই না খেয়ে চলে এসেছে দোকানে, আর সেটার জন্য বড় মেয়ের কাছে বকুনি খাবে সেটাও তার মনে মনে জানা। তাই তো কাজের ফাঁকে বারবার পথের দিকে খেয়াল করছে কখন খাবার হাতে রাগী হাবভাবে দোকানের দিকে তেড়ে আসবে আলেয়া। বা দিকের কোনায় পেতে রাখা গোটা তিনেক বেঞ্চে বয়োজ্যেষ্ঠদের আড্ডা বসেছে আর সেই আড্ডার মধ্যমনি হেমেন্দ্র বাবু। বড্ড রসিক মানুষ আর সেই সাথে সেন্স অব হিউমার টাও বেশ, যেকোন কথার মাঝেই আসর জমিয়ে তুলতে বরাবরই উস্তাদ। একটু দূরে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সেই আড্ডার বিষয়বস্তু কর্নপাত করার মাঝেই মাঝে মাঝে মুচকি হেসে উঠছে কৌশিক। কাল সারা রাত জেগে কলেজের শিট তৈরী করছিলো হঠাৎ কি মনে হতেই ভোর বেলা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে মন্দিরের দিকে চলে গেল। যাবার আগে মাকে জানিয়ে গিয়েছিল নইলে ওর মা যে ওকে ঘরে দেখতে না পেয়ে হুলস্থুল কান্ড ঘটিয়ে ছাড়বে। এমনিতে ঠাকুর দেবতায় তেমন কোন বিশ্বাস নেই তবে গান গাইতে ভালোবাসে তাই আজ আরতি কীর্তন টা ধরেছিল। সেখান থেকে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক হাঁটতে হাঁটতে চায়ের পিপাসা পেতেই বশির চাচার দোকানেই আসা। এর মাঝেই কৌশিক বশির চাচার মাঝে মোটামুটি পরিচয় পর্ব সাড়া হয়ে গিয়েছে।
হঠাৎ করেই হনহনিয়ে দোকানে ঢুকে একটু জোড়ে শব্দ করে টিফিনবাক্স টা টেবিলে রাখে আলেয়া। মেয়ের অভিমানের জায়গাটা বশির চাচার জানা তাই তো মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,
আলেয়া আইলি নাকি!
না, আর কেডা আইতো নাকি?
(খিল খিল করে হাসতে থাকে বশির চাচা)
গোষা হইচে নাহি!
গোষা করতাম কে, আমি কেডা। যেইডা মন চায় হেইডাই করো। আমার কথা তো হুনবা না...
ওরে বাফরে আর কিছু কওন লাগতো না আমি অহনি খাইয়া লইতাছি। তর কতা কহন হুনলাম না আবার...
ওদের বাবা মেয়ের মান অভিমানের পালা দেখে মনটা আনন্দে ভরে উঠে কৌশিকের। চায়ের কাপ হাতেই এগিয়ে যায় তাদের দিকে,
চাচা আপনি খেয়ে নিন নইলে মেয়ের ঝাড়ি খেয়েই পেট ভরতে হবে সকাল সকাল। ততোক্ষণে আমি না হয় এদিকটা সামলে নেব।
হঠাৎ আগন্তুকের গলার স্বরে আতকে উঠে পেছন ফেরে তাকায় আলেয়া, মানুষটি তার চেনা নয় আগে কোথাও দেখেছে বলেও মনে পড়ছে না। তবে কেন ওদের মাঝে এসে কথা বলছে, মেয়ের মুখের অভিব্যক্তি দেখে বশির চাচা কিছু একটা আন্দাজ করে,
উনি তোদের কলেজের স্যার, এইনে নতুন আইসে।
বশির চাচার কথা শুনে এবার আলেয়া একটু ধাতস্ত হয়,
আদাব স্যার৷ স্যরি আপনাকে চিনতে পারি নাই।
ইটস ওকে, আসলে এখানে তোমাদের পাড়ায় আর কলেজে দু জায়গাতেই আমি নতুন তাই চিনতে পারো নি। তা তুমি কোন ডিপার্টমেন্ট আছো?
আমি পলিটিক্যাল সায়েন্স অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।
ওহহ! তাই হয়তো আমাকে দেখো নি। আমি তো একাদশ দ্বাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাস করাই।
তা স্যার এখানে কোথায় বাসা নিয়েছেন?
ঐতো মন্দিরের ওদিকে পুরনো একটা বাড়ি ছিল সেটাই রিকনস্ট্রাকশন করেছি। তা পড়াশোনা কেমন চলছে সাথে কি আরও কিছু করছো?
ভালোই, টুকটাক টিউশনি করাই হাত খরচটা চলে যায়। আব্বার উপর কিছুটা হলেও চাপ কম হয়।
বেশ ভালতো, তা একদিন সময় করে আমাদের বাসায় এসো মা তোমাকে দেখলে খুব খুশি হবে। আর আমিও চাইছিলাম পাড়ায় বাচ্চাদের জন্য একটা কোচিং ক্লাস খুলতে, তুমি যদি ওখানে একটু সময় দিতে পারো তবে ভালোই হয়।
সত্যিই স্যার! আপনার কোচিং ক্লাসে আমাকে নেবেন!
কেন নয়! তোমার মাঝে শাসন করা গুন আছে ঐ যে মাত্র চাচা কে করলে। আমার কোচিং এ এমন একটা কড়া ম্যাডাম চাই (কথাটা বলেই কৌশিক হাসতে থাকে)
স্যারের কথায় আলেয়া কিঞ্চিৎ লজ্জা পায়, লাজে রাঙা হয়ে উঠে ওর চোখ মুখ
আমি মোটেও অতটা কড়া নই, আব্বা একটা কথাও ঠিক মত শুনে না তাই তো, স্যার আপনে একটু আব্বারে বুঝায়ে কন।
বশির চাচার দিকে তাকিয়ে
চাচা ও কিন্তু ঠিক কথাই বলেছে, নিজের খেয়াল রাখতে হবে তো নাকি। আচ্ছা আমি এখন যাই না হলে মা এদিক ওদিক খোঁজ শুরু করবে (আলেয়ার দিকে ফিরে) তুমি কিন্তু এসো বাড়িতে। সময় হলে আজই এসে যাও আমি বাসায় থাকবো কেমন! এখন যাই তাহলে....
বিদায় নিয়ে কৌশিক বাড়ির পথ ধরে হাঁটতে থাকে। ওদিকে নাস্তা শেষে সকালের ঔষধ খেয়ে আবার কাজে লেগে পড়েছে বশির চাচা। পেছনে বসা আলেয়া জিনিস গোছাতে গোছাতে বারবার কৌশিকের চলে যাওয়া পথটার দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে, এতো বড় একজন মানুষ কিন্তু কত সহজ সরল কথাবার্তা। চেহারা মাঝে একটা গাম্ভীর্যতা থাকলেও মনের দিক থেকে একদম মাটির মানুষ। ওকে কোচিং এ ক্লাস নিতে বললো, এটা হলে ভালই হয় এমনিতেও আজকাল টিউশনি শেষে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। বাড়িতে সবাই টেনশন করে, পাড়ায় রাত হলেও তেমন কোন অসুবিধা হবে না।
গতকাল পরীক্ষা ভালোই হয়েছিল অনির্বাণের, আর ভালো না হয়ে কোথায় যাবে। ওমন ম্যাডামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আর শাসনে পড়ালেখা করার পর পরীক্ষার আগ রাতে ঐরকম একখানা উপহার পাওয়ার পরও যদি পরীক্ষা খারাপ হতো তবে তো স্টুডেন্ট জাতির মুখে কালিমা লেপন হয়ে যেত চিরকালের মত। পরীক্ষা শেষে কলেজ থেকে বেড়তেই দেখে রুমা একপাশে ওর জন্য অপেক্ষা করছে। অনির্বাণ ডানে বায়ে তাকিয়ে চট করে বন্ধুদের থেকে সটকে পড়ে নইলে ওরা সবাই খুব বাজে ভাবে ওকে আর রুমাকে নিয়ে লেগপুল করবে।
অনির্বাণ কে আসতে দেখেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ঝালমুড়ির দোকানে দু প্লেট মুড়ির অর্ডার করে দেয় রুমা। কেন জানি আজ অনির্বাণের দিকে ঠিকমত তাকাতে পারছে না সে। কেমন একটা জড়তা ভাব কাজ করছিলো মনের মাঝে। তবে কি সেটা আগের রাতের ঐ মূহুর্ত গুলোর জন্য? অনির্বাণের অবাধ্য হাত এর আগেও কতবার ওর শরীর জুড়ে চষে বেড়িয়েছে তখন তো এতোটা ইতস্ততা কাজ করে নি মনে তবে কি নিজেকে নগ্ন করার মত যে সাহসী কাজটা করে ফেলেছে সেটার রেশ এখনো মন টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছে? মন বড্ড অশান্ত হয়ে উঠেছিল তাই কোনমতে দু একটা আলাপচারিতা শেষেই বাড়ির পথ ধরেছিল বলতে গেলে অনেকটা পালিয়ে এসেছিল।
আজ অনির্বাণ দেখা করতে চেয়েছিল তবে ঐ আড়ষ্টভাব টা কাটিয়ে উঠতে না পাড়ায় কিছু একটা বলে কাটিয়ে নিয়েছে রুমা। পড়ার টেবিলে বসেও পড়াতে কিছুতেই মন বসাতে পারছে না সে, পা দুটো অবিরাম উপর নিচ নাচিয়ে যাচ্ছে সেই কখন থেকে। যদি কোন কারণে পড়াতে মনোযোগ বসাতে না পারে তখন এমনটাই করে রুমা। চোখ বন্ধ করতেই ঐ রাতের দৃশ্যগুলো ভেসে উঠে, আর সে কথা গুলো ভাবলেই কেমন আনচান করে উঠে শরীরটা। অদ্ভুত রকমের উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে মুখ জুড়ে, কান দুটো থেকে যেন গরম ভাপ বের হচ্ছে এমন অনুভব হয়। আগের রাতের ঘটনার পর গতকাল রাতে অনির্বাণ ওমন দুষ্টু দুষ্টু মেসেজ গুলো ভেতর থেকে উত্তেজিত করে তুলছিল ওকে। রক্তের বাড়তি বেগের প্রভাবে শরীর উষ্ণ হয়ে উঠছিল স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই। শ্বাস গুলো ধীরে ধীরে ভারী হয়ে উঠতে থাকে সময়ের কালক্ষেপণে, হঠাৎ করেই যেন আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠে প্রতিটা লোমকূপ। হাত পায়ের ছটফটানি শান্ত থাকতে দিচ্ছিলো না রুমাকে। কিসব অদ্ভুত চিন্তাভাবনা মাথায় জেঁকে বসছিলো হয়তো শরীরের উত্তেজনা কে প্রশমিত করার জন্য।
না আর পারছে না ভাবতে, এমন করে উচাটন মন নিয়ে পড়াশোনায় মন বসাসো সম্ভব না। তবে পড়তে তো ওকে হবেই না হলে সাজানো স্বপ্ন গুলো যে বৃথা হয়ে যাবে এক এক করে। তাই সাময়িক শারীরিক সুখের ক্রমিকমান উত্তেজনাটার লাগাম টেনে ধরতেই হবে রুমাকে। আর সেটাই ওকে ওর লক্ষ্যে অবিচল রাখতে পারবে।
অনেকক্ষণ ধরে টেবিলের উপর পড়ে থাকা একটা মোবাইল বেজেই চলেছে, কিন্তু সেটা ধরার মত কাউকেই তো দেখা যাচ্ছে না ঘরটাতে। জানালার পর্দার ফাঁক গলে অল্প আলোতে মোটামুটি পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে ঘরটাকে। তেমন কিছুই নেই একটা বিছানা, টেবিলে কিছু বইপত্র আর একপাশে অগোছালো আলনা। মাথার উপর ক্যাচ ক্যাচ আওয়াজ করে ঘুরে চলেছে সিলিং ফ্যানটা। ও নিয়ে তিনবার ফোনটা বাজতে বাজতে বন্ধ হয়ে গেল। আবার ফোনটা বেজে উঠলো, হঠাৎ করেই পাশের দরজাটা খোলে যেতেই কেউ একজন বাথরুম থেকে ছুটে বেড়িয়ে এসে ফোনটা তুলে নিয়ে কানে ধরে,
কি ব্যাপার কই থাকিস? এতোবার ফোন করতে হয় কেন?
উস্তাদ বাথরুমে ছিলাম তাই আর কি!
তা মালের কি খবর? উপর থেকে বারবার ডেলিভারির জন্য চাপ আসতাছে।
মাল দেখা হয়ে গেসে, আগে বাগে তো আনতে হবে নাকি! একটু তো সময় লাগবেই, বলো সবুর করতে তবেই একদম কড়া একটা মাল পাবে।
সেটা না হয় বলবো নে, কিন্তু মনে রাখিস মাল যে ঠিকঠাক হাতে উঠে নইলে কিন্তু গর্দান যাবে।
(খিলখিল করে হাসতে থাকে)
এই পর্যন্ত কোন কাঁচা কাজ করছি নাকি? এবারো হবে না। আচ্ছা রাখি একটা কাজে বাইরে যেতে হবে।