Thread Rating:
  • 40 Vote(s) - 2.7 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
হোগলমারা রহস্য- রতিপতি (সমাপ্ত)
(18-01-2023, 03:42 PM)MNHabib Wrote:
রান্না-বান্না সারতে সারতে রাত ন’টা বেজে গেল। তারপর তিনজনে একসঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে সাড়ে ন’টা নাগাদ খেতে বসল। খাওয়া সেরে লিসা-মঞ্জুর এঁটোকাঁটা ধোবার ফাঁকে রুদ্র একটা সিগারেট শেষ করে নিল। তারপর মেয়ে দুটো বেরিয়ে এলে রুদ্র ওদের সাথে নিয়ে দুপুরের গচ্ছিত করা গাঁইতি, বেলচা, ঝুড়ি আর এ্যাসিড এবং কার্বোলিকটা এক জায়গা করে দরজার পাশে রেখে তিনজনে মিলে উপরে চলে গেল।
মঞ্জুর ঘরে বসে রুদ্র পুরো প্ল্যানটা বুঝিয়ে দিল ওদের। কিভাবে কখন কি করতে হবে সেটা রুদ্র ওদেরকে স্পষ্ট করে দিল। তারপর আচমকা “এই যাহ্…!” -বলে সে চমকে উঠল।
লিসা কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইল -“কি হলো…! অমন করে চমকে উঠলে কেন…?”
“আরে আসল জিনিসটাই তো রেডি করা হয়নি…”
“কি…?” -মঞ্জু জিজ্ঞেস করল।
“মশাল টা…! চলো চলো… নিচে যাই…” -বলেই রুদ্র ঝটিতি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
বাধ্য হয়েই লিসা-মঞ্জুও ওকে অনুসরণ করল। নিচে এসে রুদ্র একটা লোহার রডের সঙ্গে শক্ত করে একটা মোটা লাঠি বেঁধে নিল। তারপর মঞ্জুকে বলল -“তোমার পুরনো জিন্স থাকলে নিয়ে এসো।”
মঞ্জু ঝটপট একটা পুরনো জিন্স এনে দিলে রুদ্র তার একটা পা কেটে একটা ক্যারি ব্যাগ খুলল। তার ভেতরে সাদা সাদা কিউব দেখে মঞ্জু জিজ্ঞেস করল -“এগুলো আবার কি…?”
“কর্পুর। এটা দিলে মশালটা অনেক ক্ষণ জ্বলবে।” -রুদ্র লোহার রডের গায়ে জিন্সের পা-টাকে জড়তে জড়তে তার ফাঁকে ফাঁকে অনেকটা কর্পুর গুঁজে দিল। তারপর লোহার মজবুত তার পাকিয়ে পাকিয়ে কাপড়টাকে ভালো করে বেঁধে দিল। এভাবে রুদ্র দুটো মশাল বানিয়ে সেদুটোকে পলিথিন দিয়ে জড়ে দিল। লিসা জিজ্ঞেস করল -“পলিথিন দিলে কেন…?”
“যাতে কর্পুরটা উবে না যায়, বুঝলে…” -রুদ্রর মগজ ওদের থেকে অনেক বেশী শার্প।
দেখতে দেখতে ঘড়িতে সাড়ে এগারোটা বেজে গেল। রুদ্র এবার বাইরে বেরতে উদ্যত হলো। ওর নিজেরই কেমন গা ছমছম করছে। কিন্তু সেটা সে মেয়েদুটোকে বুঝতে দিচ্ছে না।
“রুদ্রদা…! গা কাঁটা দিচ্ছে আমার…! কেমন একটা উৎকণ্ঠা হচ্ছে…” -লিসা বলল।
“আমারও রুদ্রদা…” -মঞ্জুও লিসার সমর্থনে বলল।
“ভয় কি…? আমি তো আছি…! আর তাছাড়া গুপ্তধন পেতে গেলে একটু ঝুঁকি তো নিতেই হবে…” -রুদ্ররও বুকটা দুরু দুরু করছে।
অবশেষে প্রয়োজনীয় সব উপকরণ নিয়ে ওরা মোটামুটি পৌনে বারোটা নাগাদ বাইরে বের হয়ে এলো। গোলাকার বাগানের বাম দিক ধরে হেঁটে বাগানের গেটের সামনে এসে গেটটা খুলে রুদ্র ভেতরে প্রবেশ করল। পিছু পিছু লিসা-মঞ্জু। বাগানের ভেতরে প্রবেশ করে রুদ্র “জোড়া-সাদী”-র মূর্তির উঁচু বেদির তলায় বসে পড়ল। এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলো কেউ ওদের দেখছে কি না। মেইন ফটকের দিকে তাকিয়ে সেই ছায়ামূর্তিটাও খুঁজল। কিন্তু কোথাও, কাউকে দেখতে পেল না। মনে মনে সে আশ্বস্ত হলো। বার বার সে কব্জি উল্টে ঘড়ির দিকে দেখছিল। বারোটা বাজতে বাকি পনেরোটা মিনিট যেন পুরো জীবনের মত লম্বা মনে হচ্ছিল ওর। নিজের গোয়েন্দা জীবনে এমন গুপ্তধনের সন্ধান ওর এটাই প্রথম। একটা বাড়তি উত্তেজনা তো হচ্ছেই। প্রতিটা মিনিট যেন এক একটা বছরের মত করে কাটছে। পাশ থেকে লিসা বলল -“আর কত মিনিট বাকি রুদ্রদা…?”
রুদ্র এতক্ষণ ঘোড়ার মূর্তিদ্বয়ের ছায়া, যেটা ঠিক একটা উড়ন্ত বাজপাখীর মতই মনে হচ্ছিল দেখতে সেটাই একমনে দেখছিল। ছায়াটা একটু একটু করে বাম দিকে সরে যাচ্ছিল। লিসার গলার আএয়াজ শুনে চমকে উঠে বলল -“আঁ…! হ্যাঁ, আর পাঁচ মিনিট…”
“উফ্…! বারোটা যে কখন বাজবে…!” -মঞ্জুও ছায়াটার দিকেই দেখছিল।
আরও পাঁচ মিনিটের একটা ‘অনাদিকালের প্রতীক্ষা’-র পর অবশেষে রুদ্রর হাতঘড়ির কাঁটাদুটো বারোটার ঘরে পোঁছে গেল। রুদ্র সঙ্গে সঙ্গে সেই ছায়াটার চারিদিকে চক দিয়ে একটা বলয় এঁকে দিল। পূর্ণিমার ঝলমলে আলোয় সেই বলয় পরিস্কার বোঝা যাচ্ছিল। রুদ্র উঠে গাঁইতিটা দিয়ে মেঝেতে বিছানো ইটের উপরে কাটা বলয়ের মাঝে কোপ মারতে যাবে এমন সময় লিসা টর্চটা জ্বেলে ধরল। সঙ্গে সঙ্গে রুদ্র ওকে ধমক দিয়ে বলল -“বন্ধ করো ইডিয়েট…! এত আলোতেও দেখতে পাচ্ছো না…?”
লিসাও ভয়ে ভয়ে টর্চটা বন্ধ করে দিয়ে জিজ্ঞেস করল -“কেন রুদ্রদা…! ভালোই তো হতো। তুমি আরও স্পষ্টভাবে দেখতে পেতে…!”
“গাধী, এতরাতে এই বাগানে টর্চ জ্বালার আলো যদি কেউ দেখে নেয়…! কবে বুদ্ধি খুলবে তোমার…?”
লিসার নিজের মুর্খামি বুঝতে পারল -“সরি রুদ্রদা…! আমি সেভাবে ভাবতেই পারিনি।”
“ভাবতে হবে…” -রুদ্র গাইতি দিয়ে প্রথম কোপটা মারল।
বহুদিনের গাঁথা ইঁটের ফাঁকে সেই কোপ তেমন প্রভাব ফেলতে পারল না। রুদ্র তবুও বারংবার কোপ মারতেই থাকল। আট-দশটা কোপ মারার পর অবশেষে একটা ইট আলগা হয়ে গেল। সেটা মঞ্জুকে সরাতে বলে রুদ্র আবার কোপ মারতে লাগল। এভাবে প্রায় দেড় মিটার ব্যাসের একটা বৃত্ত বরাবর ইট গুলো তুলে নিয়ে তলা থেকে নরম মাটি বের করে নিল। লিসা-মঞ্জু দুজনে মিলে ইটগুলো সাইডে সরিয়ে দিয়েছিল আগেই। রুদ্র তারপর গাঁইতি দিয়ে মাটি খুঁড়তে লাগল। গর্তে বেশ খানিকটা মাটি জমে গেলে সেগুলো বেলচা দিয়ে চেঁছে তুলে ঝুড়ি ভরে সাইডে ফেলে দিয়ে আবার খুঁড়তে লাগল। কিন্তু প্রায় দু মিটার পর্যন্ত খুঁড়েও কিছুই না পেয়ে মঞ্জু হতাশ হয়ে গেল -“ধুর…! কিছুই নেই। ওই মাগীবাজ রাইরমণ কোনো গুপ্তধন টুপ্তধন রেখেই যায়নি…”
“না…! সেটা হতেই পারে না। রুদ্রদেব সান্যালের এ্যাজ়াম্পশান ভুল হতেই পারে না। আরও খুঁড়ে দেখি না…” -রুদ্র আবার কোপ মারতে লাগল।
আরও প্রায় আধ মিটার মত খুঁড়ার পর আর একটা কোপ মারতেই খুব জোরে টং করে একটা আওয়াজ হলো। গাঁইতির সুঁচালো ডগাটা কোনো ধাতব জিনিসের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েই এই শব্দ হয়েছে। শব্দটা শোনা মাত্র মাঝরাতে তিনজন নারী-পুরুষ উজ্জ্বল জ্যোৎস্নার আলোয় একে অপরের দিকে তাকালো। সবাই যেন চমকে উঠেছে। কেউ কোনো কথা না বলে চুপচাপ কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইল। তারপর লিসাই আচমকা বলে উঠল -“খোঁড়ো রুদ্রদা, খোঁড়ো…”
রুদ্র নতুন উদ্যমে আরও দ্রুত খুড়তে লাগল। প্রতিটা কোপেই সেই টং করে শব্দটা হচ্ছে দেখে রুদ্র কোপ মারার শক্তি কমিয়ে দিল। তারপর উপরের সবটা মাটি কোপানো হয়ে গেলে নরম মাটির মধ্যে বেলচা ভরে ঠেলতেই ঘর ঘর করে শব্দ হচ্ছিল। রুদ্র লিসাকে বলল -“হাতটা গর্তের ভেতরে এনে টর্চটা এবার একবার জ্বালো তো…”
লিসা তেমনটা করতেই রুদ্রর চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল। মাটির তলায় একটা লোহার চাদর নির্মীত একটা পাল্লা, যেটা বাম দিকে মোটা মোটা কব্জা দিয়ে ফ্রেমের সঙ্গে আঁটকানো আছে। আর পাল্লাটা উল্টো দিকে একটা একটা লোহার রিং দিয়ে বন্ধ করা। কিন্তু বহুদেন থেকে মাটির তলায় থাকার কারণে মরচে ধরে যাওয়া কব্জা বা রিংটা তখনও এতটাই মোটা যে রুদ্র দেখেই বুঝে গেল, এটা ভাঙা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। তাই সে লিসাকে দিকে হাত বাড়িয়ে বলল -“এ্যাসিডের বোতলটা আর সাথে দেখো দুটো গ্লাভস্ আছে, দাও আমাকে, আর তোমরা একটু সরে যাও।”
রুদ্র ভবিষ্যৎ অনুমান করে দুটো ফায়ার-প্রুফ গ্লাভস্ কিনে রেখে ছিল। সেদুটো পরে নিয়ে খুব সন্তর্পনে এ্যাসিডের বোতলের কাঁচের কর্কটা খুলে একটু পেছনে পিছিয়ে গিয়ে মরচে ধরা সেই রিংটার উপরে একটু একটু করে কিছুটা এ্যাসিড ঢেলে দিল। তারপর আবার খুব সাবধানে কর্কটা এঁটে দিয়ে বোতলটা ভালোভাবে বন্ধ করে লিসাকে দিয়ে দিল। গাঢ় এ্যাসিড এসে পড়তেই রিংটাকে গালার মত গলিয়ে দিল। রুদ্র তবুও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। এ্যাসিডের প্রভাব কমতে সময় লাগে। তারপর হাতের গ্লাভস্ দুটো খুলে বোতলে আনা জলের বেশ খানিকটা ঢেলে এদিক ওদিক পড়ে থাকা এ্যাসিডকে পাতলা করে দিল, যাতে হাত পুড়ে না যায়। রুদ্র পাল্লাটা তুলছে না দেখে লিসা জিজ্ঞেস করল -“কি হলো রুদ্রদা…! পাল্লাটা খোলো…!”
“চুপচাপ থাকো না…! মগজ যখন ফাঁকা তখন না হয় আমি কখন কি করছি সেটাই দেখে যাও…! এখুনি হাত দিতে যাবো দিয়ে যদি এ্যাসিডে হাত পুড়ে যায়…! আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।” -রুদ্র আরও বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। তারপর প্রায় মিনিট দশেক পরে সে পাল্লার প্রান্তটা দুহাতে ধরে উপরে তুলতে চেষ্টা করল। কিন্তু পাল্লাটা এতটাই ভারী যে তার একার শক্তি দিয়ে কিছুই করা গেল না। তাই সে লিসা-মঞ্জুকেও ডেকে নিয়ে ওরা তিনজনে মিলে নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে অবশেষে পাল্লাটা তুলেই ফেলল। পাল্লাটা তুলতেই অন্ধকার থেকে একটা প্রচন্ড উৎকট, ঝাঁঝালো গন্ধ বেরিয়ে এসে ওদের নাকে ধাক্কা মারল। অনেকটা এ্যামোনিয়াম সালফেট, ক্লোরিন আর মিথেনের সংমিশ্রণ যেন। সাথে একটু হাইড্রোজেন সালফাইডও। গন্ধটা নাকে আসতেই রুদ্র বুঝে গেল ভেতরটা বিষাক্ত গ্যাসে ভর্তি হয়ে আছে, তাই এখুনি গুহায় যাওয়া যাবে না।
পাল্লাটা খোলা হতেই মঞ্জু গলায় উৎফুল্লতা মিশিয়ে বলল -“চলো রুদ্রদা, ভেতরে যাই…!”
“না, এখুনি নয়। কেমন উৎকট গন্ধ পেলে না…! ভেতরে মনে হয় এতটুকুও অক্সিজেন নেই। ঢুকলেই মারা যাবো। আগে ভেতরে একটু বাতাস চলাচল হোক। কতকাল থেকে আবদ্ধ হয়ে আছে বলো তো…!” -রুদ্রর জ্ঞান এবং অনুমান ওদের দুজনের চাইতেই বেশী।
সব রকমের লাইট বন্ধ রেখে প্রায় আধ ঘন্টা ওরা ঘোড়ার মূর্তিদুটোর পাশে বসে রইল। রুদ্র আবার এদিক-ওদিক দেখে নিয়েছে। নাহ্, কেউ কোথাও নেই। যাক বাবা, নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। তবে গতরাতে সে ফটকের পাশে যেটা দেখেছিল, সেটা কি তার চোখের ভুল…! হতেও পারে। অনেক সময় চোখ সেটাই দেখে, যেটা মন আমাদের দেখায়। তাই রুদ্র ব্যাপারটা ঝেড়ে ফেলে দিল।
আধ ঘন্টা পরে রুদ্র একটা মোটা কাপড়ে আগুন ধরিয়ে ওই গর্তে ফেলে দিল। সেটা দেখে লিসা-মঞ্জু দুজনেই অবাক হয়ে জানতে চাইল এমনটা রুদ্র কেন করল। রুদ্র বলল -“আগুনটা যদি সঙ্গে সঙ্গেই নিভে যায়, তাহলে বুঝতে হবে ভেতরে অক্সিজেন এখনও তেমন নেই। কিন্তু যদি আগুন স্বাভাবিক সময় ধরেই জ্বলে তাহলে বুঝব, ভেতরে স্বাভাবিক পরিমাপে অক্সিজেন জমে গেছে। রুদ্রর অনুমান মত আগুনটা বেশ কিছুক্ষণ জ্বলল। কিন্তু তবুও রুদ্র আরও কয়েক মিনিট পরে বলল -“দাও, এবার একটা মশাল দাও। আর লিসা, তুমি কার্বলিক এ্যাসিডটা রেডি রাখো।”
মশালে আগুন দিতেই তার আলোতে ওরা দেখল পাল্লার মুখ থেকে অনেক গুলো সিঁড়ি ধাপে ধাপে ক্রমশ বক্রাকারে নিচে নেমে গেছে। রুদ্র বলল -“চলো…”
ছমছমে গা নিয়ে তিনজনেই একটা একটা করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগল। বিচক্ষণ চোখ দিয়ে রুদ্র দেখতে থাকল কোথাও কোনো সাপ-খোপ আছে কি না। কিন্তু প্রায় পনেরোটা সিঁড়ি নেমে গেলেও সাপ তেমন চোখে পড়ল না। ওরা আরও নামতে থাকল। প্রতিটা পদক্ষেপ খুব সাবধানে রেখে আরও নেরোটা সিঁড়ি নেমে এসে একটা চাতালে পোঁছতেই রুদ্রর চোখদুটো বিস্ফারিত হয়ে গেল। সেই চাতাল থেকে প্রায় ফুট তিনেক নিচে প্রায় পনেরো ফুট বাই পনেরো ফুট মেঝের উত্তর দিকে ঠিক মাঝ বরাবর জায়গায় একটা দু’-ফুট বাই দু’-ফুট বেদী, যেটা আনুমানিক চার ফুট লম্বা হবে, তার উপরে একটা কালো পাথরের শিব মূর্তি স্থাপন করা। তবে অবাক করার মত বিষয়টা হলো, কোথাও একটাও সাপ নেই। আসলে গুহার মুখ থেকে শুরু করে ভেতরে মন্দিরের দেওয়াল পর্যন্ত সবই শক্ত গ্রানাইট পাথর দিয়ে নির্মীত। সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় দেওয়ালে হাত দিয়ে রুদ্র সেটা লক্ষ্য করেছিল। আর মেঝেটাও সেই গ্রানাইট দিয়েই সোলিং করা। বাইরের বাতাস এবং ধুলো বালি থেকে বিচ্ছন্ন থাকার কারণে ভেতরে তেমন ময়লাও নেই। তবে যেখানে সেখানে প্রচুর মাকড়সার ঝুল ঝুলছে। মাকড়সারা কোথা থেকে যে এমন নিশ্ছিদ্র ঘেরাটোপেও ঢুকে যায়, সেটা রুদ্র বুঝতে পারে না।
“ওয়াও…! সো বিউটিফুল…!” -লিসা শিবঠাকুরকে প্রণাম করল।
“রিয়েলি আমেজ়িং…” -লিসাকে অনুকুণ করে মঞ্জুও শিবঠাকুরকে প্রণাম করল।
রুদ্র মনে মনে ভাবল, মাগীরা শিবের মত বর চায়। বর কি হবে রে খানকি রা…! আমার আছে তো একটা…! যাইহোক, রুদ্রও অবাক সুরে তাল মেলালো -“সত্যিই…! মাটির তলায় এমন একটা মন্দির…! জাস্ট কল্পনা করা যায় না। মশালটা হাতে নিয়েই সেই চাতালের বাম পাশ ধরে আরও ছ’টা সিঁড়ি নেমে ওরা মন্দিরের মেঝেতে চলে এলো। অন্য মশালের লাঠিটা দিয়ে মাকড়সার ঝুলগুলো ঝেড়ে এগোতে এগোতে ওরা লক্ষ্য করল, মেঝেতে সামান্য একটা ধুলোর প্রলেপ পড়েছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, গুপ্তধনের কোনো চিহ্ন কোথাওই নেই।
লিসা সেটা লক্ষ্য করে বলল -“হ্যাঁ গো রুদ্র দা, কোখায় গুপ্তধন…! এ যে বসতবাড়ির মত পরিস্কার যায়গা…! কেবল কিছু ঝুল আর ধুলো পড়েছে এই যা…!”
রুদ্র বলল-“না লিসা, ওই কাগজ, এই গুহা, এই মন্দির… এত সব কিছু মিথ্যে হতে পারে না। কিছু তো আছেই, নইলে এত রহস্য লুকোনো হতো না। আমাদের খুঁজতে হবে।”
রুদ্র হাতে মশালটা নিয়ে দেওয়ালগুলো পরীক্ষা করতে লাগল। পাথরের দেওয়ালের গায়ে খোদাই করে আগে কালকার অনেক মূর্তি বানানো আছে। কোথাও বা ছবি আঁকা আছে। রুদ্রকে দেখে লিসা-মঞ্জুও মশালের সীমিত আলোয় দেওয়াল গুলো হাঁতড়াতে লাগল। হঠাৎ মঞ্জুর চোখ পড়ল অজন্তার গুহাচিত্রের মত একটা প্রতিমূর্তির উপর। সেখানে একজন বলিষ্ঠ পুরুষ একজন মহিলার ডান উরুর তলায় হাত ভরে পা-টাকে উপরে তুলে তলা থেকে নিজের লিঙ্গটা ঢুকিয়ে রেখেছে ওই মহিলার দুই উরুসন্ধিতে। সেটা দেখে হাসতে হাসতে মঞ্জু বলল -“রুদ্রদা, এদিকে এসো, দেখো, বোকাচোদা মাগীবাজ রাইরমণের কীর্তি। পাথর কুঁদিয়েছে, তাও আবার মন্দিরের ভেতরে, তো সেখানেও চোদার ভঙ্গির। দেখলে, শালা কুত্তাটা গুদ ছাড়া কিছুই বুঝতো না…!”
“তোমার জেঠুও তো সেই গুদের চক্করেই শেষ হলেন, কি বলো…! উনিও তো সেই রাইরমণই ছিলেন…!” -লিসা মস্করা করল।
“লিসাদি…! বারণ করেছি না, ওই শুয়োরের বাচ্চার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক জুড়াবে না…!” -মঞ্জুর স্বরে রাগ।
“আরে চুপ করো না…! ফালতু না বকে দেওয়াল গুলো ভালো করে লক্ষ্য করো…!” -রুদ্র ধমক দিল।
কিন্তু চারটে দেওয়ালই তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তিনজনে মিলেও তেমন কোনো ক্লু-ই খুঁজে পেল না। মঞ্জু বিরক্ত হয়ে বলল -“না গো রুদ্রদা…! কোথাও কিছুই নেই। সবই মরীচিকা। চলো, চলে যাই। আমার মা-টা অকারণে মারা গেল গো…!”
“রুদ্রদেব সান্যাল এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নয়, বুঝলে…!” -বলে রুদ্র মেঝের ঠিক মাঝখানে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে গেল। খোঁজার মত আর তেমন কিছুই এখানে নেই। কোনো লুকোনো পথ, কোনো সুইচ কিছুই নেই। এখন বাকি রইলেন কেবল স্বয়ং শিব ঠাকুর। রুদ্র একমনে কিছুক্ষণ ভাবার পর মশালটা নিয়ে আরও এগিয়ে শিবের বিগ্রহটার কাছে এসে ভালো করে নিরীক্ষণ করতে লাগল। কিন্তু এখানেও তেমন কিছু চোখে পড়ল না। এবার রুদ্রও মনে মনে হতাশ হয়ে পড়ছিল। ঠিক সেই সময়েই ওর চোখ পড়ে গেল শিব ঠাকুরের স্তন বৃন্ত যূগলের উপরে। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে সে বুঝতে পারল যে শিবঠাকুরের বাম স্তনবৃন্তটা ডান স্তনবৃন্তের চাইতে বেশ খানিকটা মোটা। কাকতালীয় ভাবেই সে আগে ডান স্তনবৃন্ত নেড়ে দেখল, পাথরের মতই শক্ত। সে মনে মনে ভাবতে লাগল। ব্যাপারটা ওর একটু অদ্ভুত লাগল। কিন্তু ভাবল, হতেও পারে, হয়ত যিনি বিগ্রহটা বানিয়েছেন, এটা উনার ফল্ট। কিন্তু পরক্ষণেই আবার ভাবল, নাহ…, তা কি করে হয়…! যেখানে বাকি সবই এত নিখুঁত, সেখানে এটা এমনি হয়ে যাওয়া কোনো ভুল হতেই পারে না। এটা ইচ্ছে করেই করা। কোনো গোপন রহস্য আছে এর মধ্যে। সেটা অনুমান করেই সে বৃন্তটার উপর ডানহাতটা রাখল। হাত রাখতেই সে বুঝতে পারল যে এই স্তনবৃন্তটাও পাথেররই, তবে একটু নড়ছে। সে বৃন্তটাকে ডানে-বামে, উপর নিচে নড়াতে লাগল। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না, কেবল বৃন্তটা আরও নড়বড়ে হওয়া ছাড়া।
তারপর কি মনে করে বৃন্তটার উপরে ভেতরমুখী একটা চাপ দিতেই শিবঠাকুরের বিগ্রহের বুকের উপরটা একটা ঢাকনার মত হয়ে বামপ্রান্তটা খুলে ডানদিকে ঢলে গেল। আর তার ভেতরে একটা ছোটো খোঁপে একটা চামড়ার থলে। সেটা বের করে বাঁধনটা খুলতেই তার ভেতরে প্রায় গোটা দশেক উজ্জ্বল, চকচকে মূদ্রা। সেদিকে চোখ পড়তেই লিসা-মঞ্জুও এগিয়ে এসে রুদ্রর দুই পাশে দাঁড়িয়ে থ’ হয়ে গেল। “রুদ্রদাআআআ…! গুপ্তধন…!!!”
মঞ্জুও সেই আনন্দে যুক্ত হয়ে উল্লাস করতে লাগল -“রুদ্রদা…! এগুলো কি সোনা…?”
“অবশ্যই…” -রুদ্রর চোখদুটোও চকচক করে উঠল।
সবাই গুপ্তধন লাভের আনন্দে মেতে ওঠা মাত্র আচমকা পেছন থেকে রুদ্রর মাথার পেছনে একটা বাঁশের ডগা সজোরে আঘাত করল। আর সঙ্গে সঙ্গে রুদ্র সামনে লুটিয়ে পড়ল। ঘটনার আকস্মিকতায় লিসা আর মঞ্জু দুজনেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। রুদ্রর হাত থেকে মশালটা নিচে পড়ে যেতেই ভেতরে আলো অনেকটা কমে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লিসা-মঞ্জু দেখল কেউ একজন ছুটে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল। লিসা রুদ্রকে জোরে জোরে ধাক্কা দিয়েও কোনো সাড়া পেল না। মঞ্জু রুদ্রদা রুদ্রদা বলে কাঁদতে লাগল। লিসার গলাও ধরে এলো। কিন্তু একজন পোড় খাওয়া গোয়েন্দার এ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে লিসা নিজের নার্ভ ধরে রাখার চেষ্টা করল। সে এদিকে মেঝেতে পড়ে থেকে থেকে মশালটা নিভে গেল। লিসা পকেট থেকে দেশলাইটা বের করে আগুন জ্বালিয়ে মশালটা আবার জ্বালিয়ে ডানহাতটা রুদ্রর নাকের কাছে এনে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল -“থ্যাঙ্ক গড্…! হি ইজ় ব্রীদিং…! মঞ্জু জলের বোতলটা দাও…”
মঞ্জু জলের বোতলটা এগিয়ে দিলে লিসা রুদ্রর চোখে-মুখে জলের সজোরে ঝাপটা মারতে লাগল। কয়েকটা ঝাপটার পরেই রুদ্র নড়ে উঠল। জ্ঞান ফিরতেই মাথার পেছনে হাত রেখে তীব্র ব্যথার মুখভঙ্গি করে জিজ্ঞেস করল -“কি হয়েছিল…?”
“কেউ তোমার মাথায় বাঁশের ডগা দিয়ে জোরে আঘাত করে চলে গেল।” -লিসা রুদ্রর দিকে জলের বোতলটা এগিয়ে দিল।
এমন সময় মঞ্জু চমকিত গলায় বলে উঠল -“থলেটা কই…?”
রুদ্র একটু জল খেয়ে বলল -“নেই ওটা। খুঁজে লাভ নেই। পাবে না। ওই থলিটার জন্যই আমাকে আঘাত করা হয়েছিল।”
“কিন্তু কে…? কে মারল তোমার মাথায়…?” -মঞ্জুর কৌতুহল যেন শেষ হবার নয়।
“তোমাদের কাজের লোক… হরিহর। বেশ কিছুদিন থেকেই ও আমাদের কার্যকলাপ ফলো করে আসছিল। সম্ভবত তোমার জে… সরি, রাইরমণ ওকে এমনটা করতে নির্দেশ দিয়েছিল…”
“কিন্তু এত তাম-ঝাম করে কি লাভ হলো…? স্বর্ণমূদ্রাগুলো তো হরিহর নিয়ে চলে গেল…!” -লিসা হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
রুদ্র ততক্ষণে একটু ধাতস্থ হয়ে এসেছে। মশালের ক্রমশ ক্ষীণ হতে থাকা আলোয় রুদ্রকে লিসা-মঞ্জু গভীর চিন্তিত দেখতে পেল। শিবঠাকুরের বিহগ্রের তলার বেদিতে হেলান দিয়ে বসে ভাবতে ভাবতে বলল -“উঁহু…! ব্যাপারটা কেমন মনে হচ্ছে…! মাত্র ওই কটা স্বর্ণমূদ্রার জন্য এত আয়োজন…! মেনে নিতে পারছিনা। ওই কটা স্বর্ণমূদ্রার জন্য মাটির তলায় এমন একটা ব্যয়বহুল মন্দির তৈরী করার কি দরকার ছিল উনার ? ভাবো, লিসা… ভাবো…! কোথাও একটা ভুল তো করছি আমি, যার কারণে এখনও শূন্যহাতেই বসে আছি। মাত্র পনেরো-কুড়িটা স্বর্ণমূদ্রার জন্য এত পরিশ্রম করাবেন উনি…! উঁহুঃ…! ডাল মে কুছ্ কালা হ্যে…!”
“কিন্তু কই…! কোথাওই তো কোনো চিহ্নমাত্র নেই। তুমি কি এবার গাঁইতি নিয়ে এই মেঝে খুঁড়বে…?” -লিসা জিজ্ঞেস করল।
রুদ্র লিসার এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বরং কিছুক্ষণ চুপকরে দাঁড়িয়ে রইল। ভাবখানা এমন যেন সে খুব গভীর ভাবে কোনো বিষয় নিয়ে ভাবছে। তারপর সে আচমকা বলে উঠল -“আচ্ছা, কবিতার শেষ লাইনে ‘ককোদর’ শব্দটা ছিল না…! ‘ককোদর’ মানে তো সাপ। ‘ককোদর ত্রাতা’মানে সাপ সেই গুপ্তধনটাকে রক্ষণ করে রেখেছে। কিন্তু এখানে একটাও সাপ নেই কেন ? আর চারিদিক যেভাবে গ্রানাইট দ্বারা নির্মীত, তাতে সাপের এখানে প্রবেশ করাও কার্যত অসম্ভব। তাহলে ‘ককোদর ত্রাতা’ কিভাবে হলো…? গোটা কবিতাটাই কি তবে মিথ্যে…? তাহলে এই শিবমন্দিরটা এখানে কি করছে…? এটাকে তো আর মিথ্যে বলতে পারি না…!”
“সেটা তো ঠিকই। কিন্তু এখানে গুপ্তধনের কি লক্ষণ তুমি দেখছো…?” -মঞ্জু জিজ্ঞেস করল।
“সেটাই তো মঞ্জু…! কিছু একটা তো মিস্ করছি অবশ্যই। কিন্তু কি…?” -রুদ্র আবার শিবের মূর্তিটার দিকে এগোলো, “উহঃ, কি ব্যথা করছে গো মাথায়…!”
লিসা পেছন থেকে বলল -“এখানে সাপ তো একটাই আছে, ঠাকুরের গলায়। কিন্তু সেটা তো পাথরের। সে আবার কি রক্ষণ করবে…?”
“আমিও সেটাই ভাবছি, জানো…!” -রুদ্র শিবের গলায় জড়ানো সাপটার উপর হাত বুলাতে লাগল। কিন্তু শক্ত পাথরের সেই সাপ রুদ্র হাত বুলানোতে কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখালো না। রুদ্র সাপটাকে ভালো করে নেড়ে-চেড়ে দেখল। কিন্তু কিছুই হলো না। ‘ককোদর ত্রাতা’ কথাটা ওকে উত্যক্ত করছিল। কিন্তু সেও কোথাও কিছু না পেয়ে এবার বিরক্ত হয়ে “ধুর…!” -বলে বিরক্তি প্রকাশ করে সাপটাকে ধরে হাতটা মূর্তির ডান দিকে ঘুরিয়ে দিতেই আচমকা হড়-মড় করে একটা শব্দ হলো। সঙ্গে সঙ্গে মেঝের মাঝ বরাবর একটা জায়গা থেকে তিনটে পাথর খন্ড হড়কে পিছিয়ে গেল। আর পাথর তিনটি সরে যেতেই তার তলায় আনুমানিক চার ফুট বাই চার ফুটের একটা চৌকো গর্ত উন্মুক্ত হয়ে গেল। ঘন ধূলো আর ঝুলে ভর্তি সেই গর্তটা উন্মোচিত হতেই মশালটা নিভিয়ে গেল। রুদ্র সঙ্গে সঙ্গে অপর মশালটা জ্বালিয়ে গর্তের কাছে আসতেই দেখল গর্তে ঝুল-ধূলায় ঢাকা প্রায় দুই বাই তিন ফুটের একটা বাক্স পড়ে রয়েছে। সেটা দেখতে পেয়েই তিনজনে একসঙ্গে বলে উঠল -“এই তো…! ওয়াও…!”
লিসা বলে উঠল -“রুদ্রদা…! গুপ্তধন…!”
মঞ্জুও পাশ থেকে বলল -“আই ডোন্ট বিলীভ দিস্…!”
রুদ্র ওদের শান্ত হতে বলে কাছে ডেকে বলল -“আমাকে এটা তুলে আনতে হেল্প করো…”
লিসা-মঞ্জু ছুটে এসে বাক্সের এক দিকের সাথে লেগে থাকা কড়া দুটো ধরে আর রুদ্র অন্য দিকের কড়া দুটো ধরে চেড়ে বাক্সটা উপরে তুলে আনল। চাড়ার সময়েই ওরা বুঝে গেছে, বাক্সটা বেশ ভারি। মানে ভেতরে অনেক কিছুই আছে। বাক্সটা উপরে রেখে রুদ্র লক্ষ্য করল উচ্চতায় সেটা প্রায় দু’ফুট মত হবে। কিন্তু বাক্সটা খুলতে গিয়ে রুদ্র দেখল পাল্লার সামনের দিকে দুই পাশে দুটো তালা লাগানো, যেদুটো বেশ বড়ো এবং ভারী। অর্থাৎ তালাদুটো ভাঙা এক কথায় অসম্ভব। রুদ্র আবার তড়িঘড়ি গ্লাভস্ দুটো পকে নিয়ে লিসার কাছ থেকে এ্যাসিডের বোতলটা চেয়ে কাচের কর্কটা সাবধানে খুলে দিল। তারপর পুড়ে যাওয়া মশালের লাঠিটা দিয়ে তালাদুটো চেড়ে ধরে তালার বাঁকানো আঁকশি আর বডির সংযোগস্থলে দুটোতেই একটু একটু করে ঢেলে দিল।
ঝাঁঝালো, তীব্র শক্তিশালী এ্যাসিড নিমেষেই আঁকশি দুটো গলিয়ে দিল আর তালা দুটো খুলে গেল। আগের বার এ্যাসিড ব্যবহার করার মতই এবারও সে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপরে পাল্লাটা চাড়তে চেষ্টা করল। কিন্তু পাল্লাটা এতটাই ভারী যে বলিষ্ঠ রুদ্রও সেটা একা চাড়তে পারল না। তাই লিসা-মঞ্জুও হাত লাগালো। তিনজনের মিলিত শক্তিতে পাল্লাটা শেষমেশ খুলে যেতেই তিনজনেরই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল।
ভেতরে এক বাক্স অমূল্য সম্পদ। সোনা, রুপোর কয়েন, হীরে মুক্তোর মালা, ছোট-বড়ো একক হীরে, জহরৎ, চুনী, পান্না, নীলকান্তমণি, আরও কত কি…! বর্তমান বাজারে তার দাম যে কত টাকা হতে পারে সেটা রুদ্রও কল্পনা করতে পারল না। লিসা সীমাহীন আনন্দে নেচে হাততালি দিতে দিতে বলল -“গুপ্তধন…! ইউ হ্যাভ ডান্ ইট্ রুদ্রদা…! ইউ আর রিয়েলি ইমপেকেবল্…!”
এত গহীন একটা রহস্য উন্মোচন করার তৃপ্তিতে রুদ্রকেও বেশ গর্বিত দেখাচ্ছিল -“চলো, এটাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে।”
তারপর তিনজনে মিলে বহু কষ্টে বাক্সটাকে উপরে এনে বাড়ির ভেতরে ভরে নিল। পূর্ব আকাশে তখন নতুন ভোরের লাল আভা ফুটে উঠেছে।
---- সমাপ্ত ----


সমাপ্তিটা ঠিক মনমতো না হলেও কিছু করার ছিলনা। কেননা মূল লেখক ঠিক এভাবেই গল্পের সমাপ্তি টেনেছে বিধায় তাই পোস্ট করতে হলো। সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

yourock yourock
Like Reply


Messages In This Thread
RE: হোগলমারা রহস্য- রতিপতি - by free123skk - 01-02-2023, 12:10 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)