Thread Rating:
  • 37 Vote(s) - 2.95 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller আউট অফ কলকাতা
#84
পর্ব ২৩


সিলিংএর লাল আলোতে চারিপাশের দৃশ্য যেন আরও ভয়ংকর করে উঠেছিল। একটু আগে এই ঘরের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনা রুদ্রর কাছে যেন একটা বাজে স্বপ্ন বলে মনে হতে লাগল। সে তিস্তার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। যদি একবার সে ফিরে চায়! তবে দীপা তখন অন্য একটা ব্যাপার নিয়ে ভাবতে ব্যাস্ত। তিস্তার পাসে মেঝের উপর বসে দীপা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। তারপর কি মনে হতে ওর কাঁধের ক্ষতর দিকে তাকাল। তারপর হাত বারিয়ে ক্ষতর জায়গাটার ওপর থেকে পোশাকটা ছিঁড়ে সরিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে সেই দিকে তাকিয়ে রইল দীপা, তারপর হঠাৎ বলল :

"না রুদ্র, আই থিংক উই ক্যান শেভ হার....ওর এখনো চান্স আছে। আই উইল নট গিভ আপ..." বলে সামনের দিকে ঝুঁকে তিস্তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট রেখল দীপা, তারপর বলল, "তোমার কিচ্ছু হবে না তিস্তা। অন্তত আমি বেঁচে থাকতে তো না..." 

"কিন্তু দীপা..?"

"ওর কিচ্ছু হবে বললাম তো। বাট তুই প্লিজ ভেঙে পরিস না রু, তুই ভেঙে পড়লে আমাকে কে সাপোর্ট করবে রু..? আই নিড ইউ...উই নিড ইউ টুডে...", দীপা বলে উঠল। 

আর দীপার সেই কথা শুনে হঠাৎ যেন রুদ্রর মনে আবার সাহস সঞ্চার হল। 'তাদের এখন সেখান থেকে পালাতেই হবে আর সেইটাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য', এই কথা ভেবে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের চোখ মুছে রুদ্র বলল,"আমাদের এক্ষুনি এখন থেকে পালাতে হবে। আমার মনে হয়না ওরা শুধু তিনজনই এসেছে এখানে... কিন্তু তিস্তার এই অবস্থায় কি করে কি করবো আমরা....ওকে কি ভাবে...." 

"যেমন ভাবে সব সময় হয়ে আসছে, সেই ভাবে", বলে দুহাতে তিস্তাকে ধরে রুদ্রর হাতে ওকে সোপে দিলো দীপা, তারপর তিস্তার স্কার্ট থেকে কাপড়ের দুটো বড় টুকরো ছিঁড়ে সেটাকে ওর কাঁধের জখমের উপর একবার আড়াআড়ি একবার সোজা করে বগলের নিচ দিয়ে চেপে শক্ত করে বেঁধে দিলো | তারপর রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বললঃ 

"এতে আপাতত আমাদের কাজ চলে যাবে, বাট আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব....",তবে নিজের কথা শেষ করবার আগেই হঠাৎ করে অফিসের সদর দরজাটার দিক থেকে কেমন একটা আওয়াজ ওদের কানে ভেসে এলো। হ্যাঁ, দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ। দরজার ওইপাশ থেকে কেউ বা কারা সেই লোহার দরজা ধাক্কাছে। আর সেই আওয়াজের মান শুনে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে ওরা দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে|   

নষ্ট করার মতন সময় ছিল না ওদের কাছে, তাই তিস্তাকে আবার দীপার কাছে দিয়ে দৌড়ে পাণ্ডে-জির অফিসের সেই বইয়ের কেসের দিকে ছুটে গেল রুদ্র| অন্যদিকে তিস্তাকে নিজের শরীরে ভর দিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে সেই দিকে এগোতে লাগল দীপা| রুদ্র বইয়ের কেসের সমানে পৌঁছে চেঁচিয়ে বলল : 

"কোন বইটা....এখানে তো অনেক বই রয়েছে...."

"সব থেকে পুরনো বইগুলোর মধ্যে খোঁজ.....যেগুলোর ওপর আগের দিন আমরা সব থেকে বেশি ধুলো জমে থাকতে দেখেছিলাম সেইগুলো....বাট তাড়াতাড়ি রুদ্র....তাড়াতাড়ি...উই ডোন্ট হ্যাভ মাচ টাইম"

সেই শুনে রুদ্র আর একটুও সময় ব্যায় না করে একটার পর একটা ধুলোয় ঢাকা বই ঠেলতে লাগল আর হঠাৎ করেই সামনের দেওয়াল সরে গিয়ে তাদের পালানোর গোপন পথটা বেরিয়ে এলো। ইতিমধ্যে তিস্তাকে নিয়ে দীপাও সেখানে উপস্থিত হল। 

"এটা তো হল, কিন্তু ব্যাক-প্যাকটা....ব্যাক-প্যাকটা কোথায়?" তিস্তার শেষ কথা মনে পরে গেল রুদ্রর।

"ওই...ওইখানে, নীচের ড্রয়ারে" দীপা বলে উঠলো | সেই শুনে রুদ্র দৌড়ে পাণ্ডে-জির টেবিলের সামনে গিয়ে টেবিলের সব থেকে নীচের ড্রয়ার খুলে সেই ব্যাগপ্যাকটাকে টেনে বের করল | তারপর ওটাকে ধরে নীচে মেঝেতে নামিয়ে ওটার চেন খুলতেই ভেতরের সব কিছু দেখতে পেলো যার মধ্যে ছিল দুটো হ্যান্ড-গান, কয়েক রাউন্ড ম্যাগাজিন, একগুচ্ছ চাবি, দুটো টর্চ, আর একটা সেলফোন | সেগুলো একপাশে সরাতেই বেরিয়ে পড়লো একটা ছোট ধাতব কাস্কেট, একটা নোটবুক, নগদ কিছু টাকার বান্ডিল আর তাদের চারজনের আই ডি কার্ড। এত কিছু সরঞ্জাম দেখে এটা ওদের কাছে স্পষ্ট হল যে ইমার্জেন্সি সিচুয়েশানের জন্য সব পরিকল্পনা আগে থেকেই করে রেখেছিলেন পাণ্ডে-জি। রুদ্র ব্যাগের জিনিসগুলো ঘাঁটতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে হঠাৎ করে ওর হাতটা খপ করে ধরে ওকে ইশারায় চুপ করতে বলল দীপা|

আর চুপ করতেই ওদের কানে ভেসে এলো করা যেন দরজার ওইপারে দৌড় দৌড়ী করছে আর প্রায় সাথে সাথেই দরজায় প্রচণ্ড জোরে কিছু দিয়ে মারার আওয়াজ ভেসে এলো| সেই শুনে আর সময় নষ্ট না করে রুদ্র দীপা আর তিস্তা ওই গোপন প্যাসেজের ভেতরে ঢুকল। রুদ্র পেছনে ঘুরে সেই প্যাসেজের দরজা বন্ধ করতে যেতেই দীপা হঠাৎ বললঃ 

"এই...এই আমার ফোনটা ওখানে আছে.....ওতে আমাদের..." 

"ওই ফোনের আর কোনও অস্তিত্ব নেই দীপা, চলো এখন থেকে....", বলে দীপা আর তিস্তাকে ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে পিছনের লিভার টেনে গুপ্ত পথে ঢোকার দুয়ার বন্ধ করে দিলো রুদ্র।

আর পেছনের সেই দরজাটা বন্ধ হতেই তাদের কে ঘিরে ধরল দুর্ভেদ্য অন্ধকারে। সেই অন্ধকারে ব্যাগ হাতড়ে কোন মতে টর্চটা বের করে জ্বলতেই কিছুটা দূরে একটা কঙ্কালসার লিফট দেখতে পেল ওরা। এই সেই লিফট যার কথা দীপাকে বলেছিল তিস্তা| 

হাতে টর্চ নিয়ে নিজেদের গন্তব্য আলোকিত করে আস্তে আস্তে সেই দিকে এগিয়ে যেতে লাগল ওরা| কিছুটা এগতেই ওরা লক্ষ্য করল যে লিফটের সিলিংয়ে টিম টিম করে একটা ছোট বাল্ব জ্বলছে আর তারই ক্ষীণ আলোতে ভেতরে থাকা দু'টো সুইচ দেখতে পেলো ওরা| একটাতে লেখা টি আর আরেকটায় বি আর সম্ভবত সেই দুটোর মানে টপ আর বটম। লিফটের কোন দরজা না থাকায় আর অপেক্ষা না করে তিস্তাকে নিয়ে দীপা লিফটে উঠতে যেতেই ওকে বাধা দিলো রুদ্র |

"না...না দাড়াও, লিফটার যা অবস্থা আগে আমি উঠি দেখি", বলে টর্চের আলো সামনের দিকে ফেলে লিফটে উঠল রুদ্র, তারপর আশ্বস্ত হয়ে বলল, "ঠিক আছে, এইবার তোমরা এস", বলে বাকি দুজনের দিকে নিজের হাত বাড়াল | দীপা এক হাতে তিস্তাকে জাপটে ধরে আর আরেক হাত দিয়ে রুদ্রর হাত ধরে লিফটে উঠল। আর বহুকাল পুরনো সেই লিফট তিন তিনটে মানুষের ওজনে আপনা হতেই নীচের দিকে কিছুটা নেমে গেল।সেই দেখে আর সময় ব্যায় না করে রুদ্র বি লেখা সুইচটা টিপে ধরল। 

'ঘটাং' করে একটা যান্ত্রিক আওয়াজ করে লিফটটা নড়ে উঠলো আর তার সাথে সাথে লিফটের সিলিঙে থাকা বাল্বটা ফ্ল্যাশ করে উঠে কেটে গেল। সেই আঁধার ঢাকা গহ্বরে কিছু দেখতে না পেলেও ওরা বেশ বুঝতে পারল যে আস্তে আস্তে নীচের দিকে সেই অন্ধকারের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে ওরা | লিফটা যত নীচে নামতে লাগল ততই চারিপাশটা গুমোট হয়ে উঠতে লাগল। 

আর সেই অন্ধকার গহ্বরে নিজের হাত বারিয়ে দীপা আর তিস্তাকে নিজের বুকে চেপে ধরল রুদ্র| কত কিছুই না ঘটে গেল এইটুকু সময়ে মধ্যে, সে ভাবল, কিন্তু পরক্ষনেই দীপার শরীর স্পর্শ করতেই সে আনুভব করল যে দীপা সেই আগের বারের মতনই এবারেও সম্পূর্ণ উলঙ্গ!
[Image: Nep5awV.png]
[+] 7 users Like Anuradha Sinha Roy's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: আউট অফ কলকাতা - by Anuradha Sinha Roy - 01-02-2023, 12:00 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)