Thread Rating:
  • 38 Vote(s) - 3.37 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL গোপন কথাটি রবে না গোপনে
#11
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ

স্বর্ণালীর উপাখ্যান

পরিচ্ছেদ - ১ঃ একটা নতুন সকালের জন্ম

কথামতো এক ভোরে নীল ও বিপাশা এসে হাজির চৌধুরী ভিলার ছাদে। ছাদের এক কোণায় কার্নিস ধরে দাঁড়িয়ে আছে স্বর্ণালী। মায়াবী এক সকালের জন্ম হচ্ছে কোলকাতায়। সূর্য তখনও ওঠেনি। পূর্বাকাশে রক্তিম আলোর বন্যা , আর ঘুম ভাঙা পাখিদের কুজন জানান দিচ্ছে আবার একটা সকাল হচ্ছে। ক্যামেরা চলছে , কিন্তু কোনো সংলাপ নেই। এই মুহূর্তে বিপাশা স্বর্ণালীর নানান অভিব্যক্তি ধরে রাখছে।

গঙ্গার দিক থেকে আসা ঠান্ডা হাওয়ায় স্বর্ণালীর চুল উড়ছে। সে হাত দিয়ে বারবার মুখের উপর এসে পড়া চুলগুলোকে সরিয়ে দিচ্ছে। স্বর্ণালী আনমনে আকাশ দেখতে দেখতে ভাবে এখানে যেমন অদূরে বহমান গঙ্গা , ঠিক তেমনই মুর্শিদাবাদে তাদের ঘরের পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা পথে বয়ে যাচ্ছে ময়ূরাক্ষী নদী। বাবা তাকে প্রতিদিন ভোরে তুলে দিতো। সে দেখতো একটা সকালের জন্ম , দেখতো কুঁড়ি থেকে ফুলে পরিণত হওয়া গোলাপটাকে। তারপর পূর্বাকাশে আলোর বন্যা, ঝলমল করে উঠতো চারপাশ।
সেই অভ্যাসটা এখনও রয়ে গেছে। যদিও কোলকাতার সূর্যোদয়টা ওখানকার মতো নয় , তবুও কাশীপুরে গঙ্গার তীরে অবস্থিত এই অট্টালিকার ছাদ থেকে পুণ্যতোয়া গঙ্গা, ঝাঁকে ঝাঁকে পায়রার ওড়াওড়ি - এসব দেখতেও ভালোলাগে।

ভোরের এই সময়টুকু স্বর্ণালী নিজের মতো করে উপভোগ করে। তার মনে এখন অনেক স্মৃতির গুঞ্জন। তবে আজ একটু সতর্ক সে । এই মুহূর্তে তার সমস্ত চলাফেরা, মুখের অভিব্যক্তি - সবই ক্যামেরা বন্দী হচ্ছে। না হলে এই সময় প্রকৃতির স্নেহ পরশে একটু কেঁদে নিয়ে সে হাল্কা করে নিজের বুকের ভেতর জমাট বাঁধা দুঃখ-কষ্টের পাহাড়টাকে।
সেটুকু বাদ দিয়ে স্বর্ণালীর অভিব্যক্তি অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক। নীল ও বিপাশা অবাক হয়ে দেখে পুব আকাশের রং বদলের সঙ্গে সঙ্গে গভীর চিন্তায় মগ্ন স্বর্ণালীর মুখের অভিব্যক্তিও বদলে যাচ্ছে। পরের অধ্যায়ে স্বর্ণালীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দিতে নিঃশব্দে ক্যামেরা বিপাশার হাতে ছেড়ে দিয়ে নীল ওখান থেকে সরে যায়।

পরিচ্ছেদ - ২ঃ

স্বর্ণালীর সাক্ষাৎকার

ক্যামেরা নিয়ে বিপাশা স্বর্ণালীর সঙ্গে সঙ্গে যেতে লাগলো। স্বর্ণালীর এক একটি অভিব্যক্তি ধরে রাখছে সেলুলয়েড পর্দা। এরপর এডিটিং এর সময় তার কাটাছেঁড়া করা হবে। অপ্রয়োজনীয় ও বক্তার ক্ষতি করতে পারে এমন বক্তব্য ছেঁটে বাদ দেওয়া হবে।

স্বর্ণালী রান্নাঘর থেকে তাঁর স্বামীর জন্য ও নিজেদের জন্য কয়েক কাপ চা করে নিয়ে এল । শোবার ঘরে এসে দেখে মনোতোষ তখনও ওঠেননি। তাঁর চা টা হটপটে রেখে দিয়ে দুটো কাপে নিজের ও বিপাশার জন্য চা ঢালল। তারপর লাগোয়া পাশের ঘরে (মনোতোষ বাবুর ছবি আঁকার ঘর) বিপাশাকে নিয়ে বসল।

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বিপাশা স্বর্ণালীকে বলে - আমি আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করবো , আপনি ইচ্ছে হলে জবাব দেবেন নাহলে দেবেন না।

স্বর্ণালী বলে - বাবা (শ্বশুর মশাই) হুকুম করেছেন না বলে উপায় আছে। আপনি জিজ্ঞেস করুন।

বিপাশা জিজ্ঞেস করে - আচ্ছা স্বর্ণালী দেবী, এই যে আপনার মতো রুচিশীল, সুন্দরীর বিয়ে প্রতিবন্ধীর সঙ্গে না হয়ে কোনো স্বাভাবিক মানুষের সঙ্গেও তো হতে পারতো ? এই চিন্তা আপনাকে কষ্ট দেয় না ?

স্বর্ণালী একটু ম্লান হেসে উত্তর দেয় - আমি যে দারিদ্র্যতার মধ্যে মানুষ হয়েছি তাতে এই বাড়িতো আমার কাছে স্বর্গ। আমি দরিদ্র ব্রাক্ষণ পরিবারের মেয়ে। আমরা তিন বোন। আমিই ওদের মধ্যে বড়ো। আমাদের দুবেলা ঠিকমতো খাবার জুটতো না। এখানে সে সমস্যা তো নেইই , বরং ব্যাপক প্রাচুর্যের মধ্যে আছি। আর চারদিকে যা শুনছি তাতে অনেকেরই স্বাভাবিক স্বামী নিজের বউকে বাড়িতে রেখে দিয়ে অন্যের বউয়ের সঙ্গে বা বারবনীতার সঙ্গে ফস্টিনস্টি করে। আমার স্বামীর তো সেই দোষ নেই। তিনি কথা বলতে পারেন না এটাতো ঈশ্বরের অভিশাপ। আর তিনি কথা বলতে না পারলেও আকারে ইঙ্গিতে এবং তুলির টানে আমাকে যে কথা বলতে চান সেটা আমার বুঝতে এতটুকু অসুবিধা হয় না। তিনি আমাকে যে কতটা ভালোবাসেন তা বোঝাতে আমাকে মডেল বানিয়ে শকুন্তলা সিরিজ এঁকেছেন এবং নিজেকে দুষ্মন্তের আসনে বসিয়েছেন। এই দেখুন সেই ছবিগুলো।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: গোপন কথাটি রবে না গোপনে - by কলমচি৪৫ - 31-01-2023, 08:00 AM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)