Thread Rating:
  • 30 Vote(s) - 2.63 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে)
#51
 পর্ব-১৭
 

        রুদ্র বসে আছে রিকসার বা পাশে, ডান পাশে বসে আছে রিয়া। সে সাবলীল ভাবে রুদ্রের সাথে কথা বলে যাচ্ছে। তাকে নানান প্রশ্ন করছে। কিন্তু রুদ্র আজ পুরোটা প্রাঞ্জল নয়। তার নার্ভাস ফিলিং হচ্ছে। সে ধীরে ধীরে ঘামছে। তার মূল কারণ রুদ্রের ডান হাতের ঊর্ধ্ববাহু রিয়া ধরে আছে। সে বেশ কিছুক্ষণ ধরে হাতটা সরিয়ে নেওয়ার জন্য রিয়াকে বলবে ভেবেও বলতে পারছে না৷ সে-ও রিয়ার হাতটা সরিয়ে দিতে পারছে না। তার শরীরের মধ্যে একটা মৃদু কম্পন অনুভব হচ্ছে। ক্রমশ ঘেমে যাচ্ছে। 
        একটা সামান্য কথার প্রসঙ্গে রিয়া তার হাতের ঊর্ধ্ববাহু ধরে বসে। তারপর কথা শেষ হয়ে, সেই প্রসঙ্গ শেষ হয়ে গেলেও রিয়া যেভাবে রুদ্রের ঊর্ধ্ববাহু ধরে ছিলো সেভাবে এখনো ধরে আছে। চক্ষুলজ্জার খাতিরে সে কিছু বলতে পারছে না, করতেও পারছে না। একটা অস্বস্তি ঝেঁকে বসেছে তার মধ্যে। সে দুই একবার হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু রিয়া তখন আরো শক্ত করে চেপে ধরে। রিয়া কি ইচ্ছে করে তার হাতের ঊর্ধ্ববাহু ধরে আছে?
        রিয়া কথা বলছে। তার হালকা লাল রংয়ের ঠোঁট কথার তালে তালে কাপছে। নাকের ঠিক উপরে ছোট্ট একটা টিপ। ডান কানের দুলটাও নড়ছে। বাতাসে দুই একটা অবাধ্য চুল উড়ে এসে মুখের উপর পরছে। রিয়া সেই চুলগুলো ডান হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। বাম হাত দিয়ে রুদ্রের ঊর্ধ্ববাহু ধরে আছে। রিয়া আজ খোপা করে নি। রুদ্রের খোলা চুল পছন্দ। রিয়া কি সে-টা জানে? বাতাসের কারণে চুল থেকে একটা ঘ্রাণ আসছে। এই ঘ্রাণটা তার চেনা। কিন্তু এটা ঠিক কি শ্যাম্পুর ঘ্রাণ এই মুহুর্তে তার মনে আসছে না। রিয়া বাসন্তী রং-এর একটা শাড়ি পরে আছে। সেই সাথে ম্যাচিং করে ব্লাউজ, চুড়ি পরেছে। রিয়াকে সুন্দর লাগছে। কিন্তু ঠিক কতটা সুন্দর লাগছে রুদ্র বুঝতে পারছে না। এই সব সৌন্দর্য ছাড়িয়ে রিয়ার কাজলে ডুবে থাকা চোখ দুটোর দিকে রুদ্রের চোখ স্থির হয়ে রইল। কাজলের রেখাটা চোখের কোনা ছাড়িয়ে কিছুটা বক্ররেখা মত এগিয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে রেখাটা মিলিয়ে গেছে। সামান্য কাজল চোখ দু'টোকে কী ভীষণ সুন্দর করে তুলেছে। আল্লাহর কি অপরুপ ক্ষুদ্র সৃষ্টি। 

        "ইরিনা যদি জিজ্ঞেস করে আজকের ব্যাপারে তাহলে তরুর ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলে খুশি হবো।" পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করতে রিয়াকে রুদ্র বলল। 
        "তাহলে কি বলবো?" রিয়া জানতে চাইলো।
        "ইরিনা বা অন্য কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আমরা কি কাজে এসেছি তাহলে অন্য কিছু একটা বলে দিও৷ যে কোনো কিছু।" 
        "কিন্তু কি বলবো সেটা আগে থেকে ভেবে না রাখলে দুইজনের কাছে জিজ্ঞেস করলে যদি আমরা দুইজন দুই রকম উত্তর দেই তাহলে বিষয়টা কেমন হয়ে যাবে না!" 
        "হ্যাঁ, সেটা অবশ্য ঠিক। আচ্ছা যেতে যেতে দুইজনেই ভাবতে থাকি। একটা না একটা বুদ্ধি মাথায় এসেই যাবে।" 
        "আচ্ছা।" 

        রুদ্র ভেবেছিল রিয়া অন্তত এবার তার হাতটা ছেড়ে দিবে। সে সেই কারণে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু রিয়া হয়তো ভুলেই গেছে, সে রুদ্রের হাত ধরে আছে। 
        রুদ্রের আগের মত এখন আর অতোটা অস্বস্তি কিংবা নার্ভাস ফিলিং হচ্ছে না। বিষয়টা ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। তবুও একটা সুন্দরী মেয়ে এভাবে হাত ধরে থাকলে যে কেউ-ই কিছুটা নার্ভাস হয়ে যাবে। 

        "আমাকে একটা মালা কিনে দিবে?"
        রুদ্র খানিকটা অন্যমনস্ক ছিল। তরুর খোঁজ পাওয়া যাবে কি-না সেটা ভাবছিল আনমনে। তখনই রিয়ার কথা শুনে সে সম্বিত ফিরে পেয়ে রিয়ার দিকে তাকালো। তাদের রিকসা থেমে আছে। আশেপাশে সব গাড়ি, রিকসা, সিএনজিও থেমে আছে। তারা জ্যামের ঠিক মাঝে আছে। সে এতোটাই তার ভাবনায় ডুবে ছিল যে সে খেয়াল করে নি। 
        "কি হলো? জ্যাম ছেড়ে দিবে তো। একটা বেলী ফুলের মালা কিনে দিবে?" 
        রুদ্র দেখলো, রিকসার পাশে ছোট একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে বেলী ফুলের মালা। রুদ্র কথা বাড়ালো না। সে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে দুইটা বেলী ফুলের মালা কিনে রিয়াকে দিলো।
        তখনি জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে। রিকসা চলতে শুরু করেছে। রিয়ার মুখে খুশি। সে হাসছে। মালা দুটো সে ডান হাতে পরলো। তারপর হাতটা বাড়িয়ে রুদ্রের সামনে ধরে জিজ্ঞেস করলো, "সুন্দর না?"
        "হ্যাঁ!" রুদ্র ছোট্ট করে উত্তর দিলো। 
        "ধন্যবাদ।" রিয়া কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। 

        "আচ্ছা, তোমার প্রিয় ফুল কি?" রিয়া আবার প্রশ্ন করলো।
        "প্রিয় ফুল!" কথাটা আনমনে বলে রুদ্র কিছু একটা ভাবছে।
        রুদ্রকে ভাবতে দেখে রিয়া বলল, "কি ভাবছ?"
        "আমার প্রিয় ফুল কি সেটাই।" 
        "ধরো, কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার প্রিয় ফুল কি? তাহলে প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই আমার উত্তর হবে বেলী। এটা বলার জন্য আমাকে ভাবতে হবে না। এভাবে ভেবে প্রিয় জিনিসটা বাছাই করা যায় না। কোনো মানুষ কিংবা কোনো বস্তু প্রিয় হওয়ার কোনো কারণ থাকে না। শুধু ভালো লাগে, তাই প্রিয়।" 
        "তাহলে আমার কি কোনো প্রিয় ফুল নেই?"
       "অবশ্যই আছে। কিন্তু তুমি কনফিউজড, কোন ফুলটা তোমার প্রিয়। যখন কোনো কিছুতে মানুষ কনফিউজড থাকে তখন সেই সময়টাতে যেটা আমরা প্রিয় মনে করি সেটা অনেক সময় আমাদের প্রিয় না-ও হতে পারে। এবং পরে আমরা সেটা উপলব্ধি করতে পারি। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।"
        "আচ্ছা, তাহলে আমি ভেবে, কনফিউজড মিটিয়ে, অন্য কোনো সময় তোমাকে বলব, আমার প্রিয় ফুল কি!" 
        "আচ্ছা বলো। সমস্যা নেই।" 

        তারা বসে আছে ধানমন্ডি লেকের পাশে একটা গাছের নিচে। রিয়ার কাজিন এখনো আসে নি। রিয়া ফোন করলে সে বলেছে, দশ মিনিট সময় লাগবে।
        "পেয়ারা খাবে?" রিয়া জিজ্ঞেস করলো।
        "এখন?" রুদ্র উল্টো প্রশ্ন করলো।
        "হ্যাঁ! আমি খাওয়াবো।" বলেই রিয়া হাসলো। 

        তারা যেখানে বসে আছে তার থেকে কিছুটা দূরে একটা ছেলে পেয়ারা বিক্রি করছিল। রিয়া সেদিকে উঠে গেলো। একটা পেয়ারা দেখিয়ে সেটাকে কেটে বেশি ঝাল দিয়ে মাখিয়ে দিতে বলে আগের জায়গায় ফিরে এলো। 

        "বোরিং লাগছে?" রিয়া ফিরে এসে রুদ্রের পাশে বসতে বসতে কথাটা বলল।
        "হঠাৎ এই প্রশ্ন?" রুদ্র জানতে চাইলো।
        "তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তাই জিজ্ঞেস করলাম!"
        "তেমন না। আসলে...!" রুদ্র কথা শেষ করতে পারলো না।
        "আমার সঙ্গ কি তোমাকে বিরক্ত করছে? না-কি আমার এই ছটফটানি চঞ্চলতা তোমাকে বিরক্ত করছে?"
        "রিয়া, তেমন কিছু না।" 
        "কিছুটা তেমন। আমি তো কিছুটা হলেও বুঝি যে তুমি বিরক্ত হচ্ছ। আসলে, আজকে কেনো জানি বাচ্চাদের মত পাগলামি করতে ইচ্ছে করছে। জানো, এখন কি ইচ্ছে করছে..?" 
        রিয়া তার সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই যে ছেলেটা পেয়ারা বিক্রি করছিল সে এসে দাঁড়িয়ে আছে তাদের সামনে। তার হাতে একটা বাটি। সেটাতে পেয়ারা ভর্তা। ছালেটা পেয়ারার বাটি'টা এগিয়ে দিয়ে বলল, "আপা, আপনাদের পেয়ারা।" 
        রিয়া হাত বাড়িয়ে পেয়ারাটা নিলো। ছেলেটা চলে গেলে রিয়া বলল, "আমার এই রকম ব্যবহারের জন্য সরি।" কথাটা বলে হেসে দিয়ে সে আবার বলল, "পেয়ারা খাও। আমার-তো দেখেই জিভে পানি চলে আসছে।" 
        রুদ্র এক পিচ পেয়ারা নিয়ে গালে দিলো। তারপর সে বলল, "আমি তোমার ব্যবহারে বা তোমার কারণে বিরক্ত হচ্ছি না। আসলে, আমি তরুর ব্যাপারে ভাবছি। যদি এবারও তেমন কিছু জানা না যায় তাহলে আর কোনো আশা থাকবে না। তরুর শেষ চিঠিটা পড়ার পর একবারের জন্য হলেও আমি মানুষটাকে দেখতে চাই। কেনো দেখতে চাই, তাও জানিনা। শুধু তাকে দেখতে চাই। সরাসরি তার সাথে একবার কথা বলতে চাই। আমি মানুষটার সম্পর্কে জানতে চাই। তার গল্পটা জানতে চাই। একটা মানুষ দীর্ঘ আট মাসের বেশি সময় ধরে আমাকে চিঠি দিয়ে আসছে। সরি, আমাকে না কিন্ত চিঠিগুলো আমার কাছেই আসছে। অদ্ভুত ভাবেই একটা কৌতুহল এবং মায়া জন্মে গেছে মানুষটার উপর। এছাড়া মনের মধ্যে অসংখ্য প্রশ্ন যেগুলোর উত্তর আমার জানা নেই। আমি সেগুলোর উত্তর জানতে চাই। এবং সেই সব প্রশ্নের উত্তর আমাকে একমাত্র তরুই দিতে পারবে। তাই হয়তো আমি কিছুটা আপসেট, যদি শেষ মুহুর্তে তরুর দেখা না পাই?" রুদ্র দীর্ঘ সময় কথা বলে থামলো। সে আবার বলল, "আমাকে এরকম লাগার কারণ এটাই। তুমি যেটা ভাবছ সেটা ভুল। তারচেয়ে বড় কথা, একমাত্র তুমি-ই আমাকে সাহায্য করছ। এতে আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ। তাহলে, আমি কেনো বিরক্ত হবো? বিরক্ত হওয়ার প্রশ্নই আসে না।" রুদ্র কথা শেষ করে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নিলো। 

        রিয়া পেয়ারা খেতে খেতে রুদ্রের কথা শুনছিল। সে আর কিছু বলতে পারলো না। তার মধ্যে তার কাজিন চলে এসেছে। সে এসেছি সৌজন্য বজায় রেখে রিয়াকে "হাই" বলল।
        রুদ্রের সাথে তার কাজিনের পরিচয় করিয়ে দিতে হলো না। খালেদ বসতে বসতে নিজেই বলল, "হাই, আমি খালেদ।"
        রুদ্র হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, "আমি রুদ্র। রিয়ার বন্ধু।" 
        "হ্যাঁ জানি, রিয়া তোমার ব্যাপারেই বলেছে।"
        রুদ্র অবাক হলো। তার ব্যাপারে ঠিক কি বলেছে? কিন্তু সেটা জানা চেয়ে তার কাছে তরুর খোঁজ জানা জরুরি। সে সরাসরি বলল, "রিয়া নিশ্চয়ই আপনাকে তরুর ব্যাপারে বলেছে?"
        "হ্যাঁ, বলেছে।"
        "তরুর কোনো ঠিকানা জানতে পেরেছেন, কিংবা ফোন নাম্বার?" 
        "আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে..!" কথাটা বলে খালেদ কিছুক্ষণ থামলো। সে তার কথা গুছিয়ে নিয়ে আবার বলল, "আপনাকে তরু নামের একটা মেয়ে দীর্ঘ সময় চিঠি দিয়ে আসছে।" 
        "হ্যাঁ!" রুদ্র বলল।
        "আপনি নিশ্চয়ই জেনেছেন যে চিঠিগুলো একদিনে মানে একবারে আমাদের কুরিয়ারে জমা দেওয়া হয়েছিল। এবং প্রতিটা চিঠির উপরে যে তারিখ ছিলো আমাদের শুধু সেই তারিখেই চিঠিগুলো ডেলিভারি দিতে বলা হয়েছিলো।" 
        "হ্যাঁ, এতটুকু আপনাদের অফিসের লোকেরাই বলেছে।" 
        "আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে, যে আপনাকে চিঠিগুলো দিয়েছে সে কোনো ঠিকানা কিংবা তার নাম্বার দেয় নি। এমনকি সে বলেছে, যদি চিঠিগুলো কোনো কারণে ফেরত আসে তাহলে সেগুলো তার কাছে পৌঁছে দেওয়া লাগবে না। সে কোনো ভাবেই তার পরিচয় কাউকে জানায় নি। তার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। সে কেনো এতোটা গোপনীয়তা বজায় রেখেছে জানিনা। কিন্তু...! " 
        খালেদের কথার মাঝে রুদ্র বলল, "কোনো ভাবেই কি তরুর কোনো তথ্য জানা সম্ভব না?" রুদ্র কথাটা বলার সময় তার কন্ঠটা খানিকটা কেপে উঠলো।
        "এই কথাগুলো আমি রিয়াকেও বলেছিলাম। কিন্তু ও প্রচুর রিকোয়েস্ট করতেছিলো আমাকে। যদি কোনো উপায় থাকে তরুর ঠিকানা জানার। তখন আমি অনেক ভেবেছি আসলেই কোনো উপায় আছে কি-না। হঠাৎ একদিন রাতে ব্যাপারটা মাথায় আসে। মেয়েটা আপনাকে চিঠি পাঠানোর সময় পরিচয় গোপন করেছে, তার মানে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। কিন্তু অন্য কাউকে যদি কখনো চিঠি কিংবা পার্সেল পাঠায় তাহলে নিশ্চয়ই সেখানে ঠিকানা গোপন করার প্রসঙ্গ আসবে না। তখন পরের দিন সকালে আগেই অফিসে চলে যাই। অনেকটা সময় নিয়ে আমাদের কম্পিউটারে বিগত দিনের যত ডাটা ছিল তার মধ্যে তরু নামের কেউ কি কখনো কোনো পার্সেল কিংবা চিঠি পাঠিয়েছে কি-না বা তার নামে কোনো কিছু এসেছে কি-না সেটার খোঁজ করি।" খালেদ এটুকু বলে থামলো। সে একটানা কথা বলার কারণে হাপিয়ে উঠেছে। তার পিপাসা পেয়েছে। 
        রিয়া এবং রুদ্র দুইজনে অধীর আগ্রহ নিয়ে কথাগুলো শুনছিল। দুই জনের মধ্যে কৌতুহল কাজ করছিল৷ এমন সময় খালেদকে থেমে যেতে দেখে দুইজনই বিরক্ত হলো। 
        "কি হলো? তরুর কোনো খোঁজ পেয়েছিস?" রিয়া কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করল।
        "গলাটা শুকিয়ে গেছে। একটু পানি খাওয়া দরকার।" 
        তাদের কারো কাছেই পানি ছিলো না। কিন্তু একটু দূরেই একজন মহিলা লেবুর শরবত বিক্রি করতেছিলো। রুদ্র উঠে গিয়ে তিন জনের জন্য তিন গ্লাস ঠান্ড লেবুর শরবত নিয়ে এলো। 
        "অনেক তথ্য। অনেক সময়ের কাজ। এদিকে অফিসের ব্যস্ততা। তখন খোঁজ করা সম্ভব ছিলো না। অফিস শেষে বাকী তথ্যগুলো খুজে দেখি।" ফাহিম বলল।
        "খালেদ, তুই কথা এতো ঘুরাচ্ছিস কেনো?" রিয়া এবার কিছুটা রাগী কন্ঠে বলল।
        "হ্যাঁ কিছু একটা পেয়েছি।" খালেদ বলল।
        "তরুর সম্পর্কে?" রুদ্র জানতে চাইলো।
        "এই তরু কি-না সেটা জানিনা। তবে অনেক দিন আগে তরু নামে একজনের কাছে একটা পার্সেল আসে। সেটা আমরা ডেলিভারি দেই। সেখানে প্রাপকের ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার ছিলো। কিন্তু যে নাম্বার ছিলো সেই নাম্বারে আমি ফোন দিয়েছি কয়েকবার। নাম্বারটা বন্ধ।" 
        রিয়া এবং রুদ্রের মুখে আবার হতাশার ছাপ ফুটে উঠলো। রুদ্র বলল, "ঠিকানাটা এনেছেন?"
        খালেদ পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে রুদ্রের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, "এখানে ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার আছে।" 
        রুদ্র কাগজটা পকেটে পুড়ে নিলো। তারপর সে বলল, "ধন্যবাদ।" 
        খালেদ বলল, "ধন্যবাদ দিতে হবে না। আসলে এটা আপনার কাজে আসবে কি-না সেটা আমি ঠিক জানিনা।"
        "আরেকটা ব্যাপার।" রুদ্র বলল।
        "হ্যাঁ, বলন।" খালেদ বলল।
        "যে পার্সেলটা পাঠিয়েছিল তার ঠিকানাটা বা ফোন নাম্বারটা দেওয়া যাবে? যদি এই ঠিকানায় তরুর কোনো খোঁজ না পাই তাহলে তার সাথে যোগাযোগ করে যদি কিছু জানা যায়।"
        "পার্সেলটা আসে চট্রগ্রাম থেকে। যে পাঠায় তার সেভাবে কোনো ঠিকানা নেই। নাম ছিলো, ফোন নাম্বার ছিলো ঠিকানায় শুধু চট্রগ্রাম ছিলো। আসলে পার্সেলটা হোম ডেলিভারি জন্য পাঠিয়েছিলো বলে তরুর বাসার ঠিকানা জানা সম্ভব হয়েছে। সেটা না হলে আরো বিপদে পড়ে যেতাম। আজকাল তো ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করে পার্সেল ডেলিভারি দেওয়া হয়। যদি না কেউ কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা না দিয়ে থাকে। ব্যাপারটা নিশ্চয়ই আপনি বুঝেন।" খালেদ বলল।
        "হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক।" রুদ্র বলল।
        "এছাড়া আপনার চিঠিগুলোর ঠিকানা দেখেছি। আমি আশ্চর্য হয়েছে। সেখানে নির্দিষ্ট করে বাসার ঠিকানা দেওয়া আছে। এবং ফ্লোর নাম্বার ও দেওয়া আছে। যেহেতু কোনো ফোন নাম্বার নেই তাই এতোটা নির্দিষ্ট করেই ঠিকানা দিয়েছে। আরেকটা কারণ হতে পারে, মেয়েটা নিশ্চিত করতে চেয়েছে চিঠিগুলো যেনো সঠিক ঠিকানায়, ঠিক বাসায় যায়। কেউ যাতে ফিরিয়ে না দেয়। এই জন্য এভাবে চিঠিগুলো পাঠিয়েছে। কিন্তু বিষয়টা আসলেই অদ্ভুত। এরকম কোনো কিছু আমি কখনো দেখিনি।" খালেদ কথাটা বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। 
        রুদ্র এবং রিয়াও দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এতো হতাশার মধ্যেও রুদ্র কিছুটা আশার আলো দেখছে। তরুর ঠিকানা তার কাছে আছে। সে অবশ্য জানেনা, এই তরুই সে কি-না। যে তাকে চিঠি দেয়। 
        "আমাকে যেতে হবে। একটু ব্যস্ততার মধ্যে আছি।" খালেদ বলল।
        "এখনই চলে যাবি? কিছু খেয়ে যা।" রিয়া বলল।
        "হ্যাঁ, চলুন। কোথাও বসে কিছু খাওয়া যাক। আপনি এতোটা কষ্ট করলেন আর আপনাকে এভাবে চলে যেতে দেই কি করে?" রুদ্র বলল।
        "আজ আমাকে যেতেই হবে। অন্য কোনো দিন ট্রিট দিলে হবে। প্লিজ, অনুরোধ করবেন না।" 

        রিয়া এবং রুদ্র তবুও খালেদকে অনুরোধ করলো। কিন্তু সে শেষমেশ চলে গেলো। অন্য কোনো দিন ক্যাম্পাসে আসবে বলে কথা দিয়ে গেলো।
        খালেদ চলে যাওয়ার পরে তারাও উঠে গেলো। সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে। তারা একটা রিকসা নিলো। 
        সন্ধ্যার শহরটা বড্ড এলোমেলো। চারদিকে কোলাহল। অফিস ফেরত মানুষ বাসায় ফেরার তাড়া। সেই সাথে বড্ড জ্যাম রাস্তায়। তারা দীর্ঘ সময় জ্যামের মধ্যে বসে আছে। তারা এখনও ধানমন্ডির ভেতরেই।
        "আমি এখানে নেমে যাই।" হঠাৎ রুদ্র বলে উঠল।
        "এখানে? কেনো?" রিয়া অবাক হলো।
        "তরুর ঠিকানায় খোঁজ নেওয়া দরকার।" 
        "এই রাতে? ক'টা বাজে দেখেছ? কাল একসাথে যাওয়া যাবে। এক রাতই তো।" 
        রুদ্র তবুও জোরাজোরি করলো। কিন্তু রিয়া তাকে যেতে দিলো না। তারা সেই থেকে নিশ্চুপে রিকসায় বসে আছে।
        "কাল আমাকে রেখে আবার একা চলে যেও না।" রিয়া মৌনতা ভেঙে বলল।
        "তুমি কেনো যাবে?" 
        "তরুকে আমিও দেখতে চাই।" 
        রুদ্র কিছুক্ষণ ভেবে বলল, "আচ্ছা যেও।" 
        "কথা দিচ্ছো তো, একা যাবে না, সঙ্গে নিবে?"
        "আচ্ছা, কথা দিলাম।" 

        রিয়ার বাসায় তারা চলে এসেছে। রিয়া চাচ্ছিলো আজ রুদ্রকে সে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসবে কিন্তু রুদ্র এটা শুনলো না। তাই তাকে এখন তার বাসায় নামতে হলো। সে চলে যেতে যেতে বলল, "আমাকে রেখে একাই চলে যেও না।" 
        রুদ্র মুখে হাসি এনে বলল, "যাবো না।" 



চলবে...!



.


===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে) - by Bangla Golpo - 28-01-2023, 03:30 PM



Users browsing this thread: 13 Guest(s)