27-01-2023, 06:29 PM
পরিচ্ছেদ - ২ঃ নীললোহিতের অফিস --
সকাল সাড়ে দশটা , নীললোহিত ও বিপাশা ক্রিক রোতে স্টুডিওর অফিসে একটা টেবিলের দুপাশে মুখোমুখি দুটো চেয়ারে বসে রয়েছে। টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কিছু কাগজ , ছবি , আর দুকাপ ব্ল্যাক কফি। নীল তার সহকারিনী ও বন্ধু বিপাশাকে বলে --
-- " তোমাকে চৌধুরী পরিবারের প্রতিটি সদস্য সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব কিছু জানতে হবে, প্রত্যেকটা চরিত্র ভালোভাবে বিশ্লষণ করতে হবে। তবেই তুমি এই কাজে সাফল্য পাবে। "
এই বলে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে নীল বিপাশাকে চৌধুরী মহলের প্রত্যেকটি চরিত্রকে বিশ্লেষণ করে শোনায়। নীলের বিশ্লেষণ এই প্রকারের ---
১) রাজনারায়ণ চৌধুরীঃ
ইনি এই কাহিনীর নায়ক , সবেমাত্র সত্তর অতিক্রমকারী এক পুরুষ। এখনো অনন্ত পৌরুষের গর্ব আছে তাঁর। এখনো তাঁর মনের আকাশ থেকে ঝরে ঝরে ক্লান্ত হয়ে যায়নি বাসনার বৃষ্টিরা। এখনও ইচ্ছে হলে তিনি মধ্যরাতে চাবুক হাঁকাতে পারেন ঘুমন্ত কোলকাতার বুকে। ছবি আঁকার অদম্য ইচ্ছে এবং নারী মাংসের প্রতি অনন্ত লোভ তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আর এই দুই বাসনাকে চরিতার্থ করতে তিনি বারবার ঘর ছেড়েছেন। এমনকি নিজের নব বিবাহিতা স্ত্রীকে ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন পাশ্চাত্য আর্ট ও কালচারের পীঠস্থান ফ্রান্সে।
বিপাশা চেয়ে চেয়ে দেখে রাজনারায়ণ বাবুর নানা বয়সের অনেকগুলো ছবি -- কৈশোরের উদ্ভাসিত রাজনারায়ণ , যৌবনের উদীপ্ত রাজনারায়ণ , প্রৌঢ়ত্বের মলিন রাজনারায়ণ এবং বার্ধ্যকের ঝলমলে
রাজনারায়ণ।
বিপাশা, এই ছবিগুলো দেখে রাজনারায়ণ বাবু সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ছবি নিজের মনে মনে আঁকতে থাকে। রাজনারায়ণ বাবুর চোখ দুটো অসম্ভব উজ্জ্বল। মনে হয় , সবসময় উনি নতুন কিছু করার চেষ্টা করে চলেছেন। এই ভিডিও অ্যালবাম তৈরিও সে কথাকে প্রমাণ করে।
২) চন্দ্রলেখাঃ
একটা বছর ষাটের বৃদ্ধার ছবি দেখিয়ে নীল বলে ওঠে - ইনি চন্দ্রলেখা , রাজনারায়ণ বাবুর বিবাহিতা স্ত্রী। ইনিই এই ভিডিও ফ্লিমের সবচেয়ে কঠিন চরিত্র। দু-এক পলক দেখে নীল যেটুকু বুঝেছে তাতে ইনি বেশ চাপা স্বভাবের। বুক ফাটলেও এনার মুখ ফুটবে না , তাই বিপাশার কাছে এটা সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ এই পাষাণের বুকে ফাটল ধরিয়ে তাঁর ভেতর থেকে জল বের করার মতো তাঁর সমস্ত রাগ , দুঃখ , অভিমান, অভিযোগ সব বের করে আনতে হবে। আর জানতে হবে তাঁর জীবনের গোপন অভিলাষ , অজানা কোনো কথা।
৩) আশুতোষঃ
নীলের হাতে ধরা আর একটি ছবি - বলে আশুতোষ চৌধুরী। ঝকঝকে ব্যক্তিত্ব। থ্রী পিস স্যুট পড়া , চোখে রোদ চশমা। সমস্ত চেহারায় উচ্চাকাঙ্ক্ষা ঝরে পড়ছে। চল্লিশ বছর বয়সী এই ব্যক্তি মার্কিন মুলুকে বসবাসকারী অনাবাসী ভারতীয়। চল্লিশ ছুঁই ছুঁই এই ব্যক্তির উত্থান এক কাল্পনিক রূপকথার মতো। বর্তমানে তাঁর অবস্থা বেশ স্বচ্ছল , ব্যাংকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু ডলার তিনি জমিয়েছেন। সফল একজন ভারতীয় হিসেবে তিনি প্রবাসী বাঙালি মহুয়াকে বিবাহ করেছেন। তাঁদের একমাত্র সন্তান হলো লিসা। বাবার ভিডিও ফ্লিমের এই অদ্ভুত খেয়াল মেটাতে অনেক দিন পর তিনি সপরিবারে ভারতে আসছেন।
৪) মনোতোষঃ
একটি ছবি দেখিয়ে নীল বলে ইনি রাজনারায়ণ বাবুর মেজো ছেলে মনোতোষ চৌধুরী। চৌধুরী ভিলার ইনি সবচেয়ে ট্রাজিক চরিত্র। বংশের ধারা অনুসারে ইনি সুন্দর ও সুঠামদেহী , কিন্তু ছোট্টবেলায় গলার এক জটিল রোগে তিনি কথা বলার শক্তি হারিয়েছেন। আবার মনের মধ্যে যখন কোনো একটা আবেগ হামাগুড়ি দেয় , চেতনা আঁচড় কাটে বা তিনি তাঁর মনের ভাব ও ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে যান তখন তিনি একটু অস্বাভাবিক আচরণ করেন। সেই সময় তাঁর স্ত্রী স্বর্ণালী ছাড়া আর কেউ তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তবে একটা কথা না বললেই নয় তিনি অদ্ভুত সুন্দর ছবি আঁকেন। রং-তুলি দিয়ে তিনি ছবির মাধ্যমে তাকে প্রকাশ করেন। সেই সময় মনে হয় তাঁর মধ্যে রয়েছে এক অত্যন্ত সংবেদনশীল মন , তাঁর চোখে তখন দূর দিগন্তের ছায়া কিংবা গ্রাম বাংলার কাকবন্ধ্যা সরসীর জল।
তুমি জানো বিপাশা আমি অকারণে কোনো মানুষের প্রশংসা করি না। আমি তাঁর চোখে প্রতিভার যে বিচ্ছুরণ দেখেছি তাতে মনে হয়েছে তাঁর মুখে যদি ভাষা থাকতো তাহলে তিনি আধুনিক ছবির জগতে বিপ্লব এনে দিতে পারতেন।
কথা না বলতে পারার বেদনা থেকে তার মধ্যে জন্মেছে এক আশ্চর্য হীনমন্যতা। তাই তিনি সব সময় নিজেকে গুটিয়ে রাখেন । আমি যতটুকু বুঝেছি তাতে তাঁর একমাত্র ভালোবাসার জায়গাটা হলো এখন স্ত্রী স্বর্নালীর সান্নিধ্য। সেই সান্নিধ্যে সে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। তুমি যদি মনোতোষ বাবুকে ঠিকমতো হ্যান্ডেল করতে পারো তাহলে দেখবে এই বোবা মানুষটিই আকারে ইঙ্গিতে, তুলির আঁচড়ে এমন কিছু খবর দেবেন যা তোমাকে হতবাক করে দেবে।
সকাল সাড়ে দশটা , নীললোহিত ও বিপাশা ক্রিক রোতে স্টুডিওর অফিসে একটা টেবিলের দুপাশে মুখোমুখি দুটো চেয়ারে বসে রয়েছে। টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কিছু কাগজ , ছবি , আর দুকাপ ব্ল্যাক কফি। নীল তার সহকারিনী ও বন্ধু বিপাশাকে বলে --
-- " তোমাকে চৌধুরী পরিবারের প্রতিটি সদস্য সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব কিছু জানতে হবে, প্রত্যেকটা চরিত্র ভালোভাবে বিশ্লষণ করতে হবে। তবেই তুমি এই কাজে সাফল্য পাবে। "
এই বলে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে নীল বিপাশাকে চৌধুরী মহলের প্রত্যেকটি চরিত্রকে বিশ্লেষণ করে শোনায়। নীলের বিশ্লেষণ এই প্রকারের ---
১) রাজনারায়ণ চৌধুরীঃ
ইনি এই কাহিনীর নায়ক , সবেমাত্র সত্তর অতিক্রমকারী এক পুরুষ। এখনো অনন্ত পৌরুষের গর্ব আছে তাঁর। এখনো তাঁর মনের আকাশ থেকে ঝরে ঝরে ক্লান্ত হয়ে যায়নি বাসনার বৃষ্টিরা। এখনও ইচ্ছে হলে তিনি মধ্যরাতে চাবুক হাঁকাতে পারেন ঘুমন্ত কোলকাতার বুকে। ছবি আঁকার অদম্য ইচ্ছে এবং নারী মাংসের প্রতি অনন্ত লোভ তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আর এই দুই বাসনাকে চরিতার্থ করতে তিনি বারবার ঘর ছেড়েছেন। এমনকি নিজের নব বিবাহিতা স্ত্রীকে ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন পাশ্চাত্য আর্ট ও কালচারের পীঠস্থান ফ্রান্সে।
বিপাশা চেয়ে চেয়ে দেখে রাজনারায়ণ বাবুর নানা বয়সের অনেকগুলো ছবি -- কৈশোরের উদ্ভাসিত রাজনারায়ণ , যৌবনের উদীপ্ত রাজনারায়ণ , প্রৌঢ়ত্বের মলিন রাজনারায়ণ এবং বার্ধ্যকের ঝলমলে
রাজনারায়ণ।
বিপাশা, এই ছবিগুলো দেখে রাজনারায়ণ বাবু সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ছবি নিজের মনে মনে আঁকতে থাকে। রাজনারায়ণ বাবুর চোখ দুটো অসম্ভব উজ্জ্বল। মনে হয় , সবসময় উনি নতুন কিছু করার চেষ্টা করে চলেছেন। এই ভিডিও অ্যালবাম তৈরিও সে কথাকে প্রমাণ করে।
২) চন্দ্রলেখাঃ
একটা বছর ষাটের বৃদ্ধার ছবি দেখিয়ে নীল বলে ওঠে - ইনি চন্দ্রলেখা , রাজনারায়ণ বাবুর বিবাহিতা স্ত্রী। ইনিই এই ভিডিও ফ্লিমের সবচেয়ে কঠিন চরিত্র। দু-এক পলক দেখে নীল যেটুকু বুঝেছে তাতে ইনি বেশ চাপা স্বভাবের। বুক ফাটলেও এনার মুখ ফুটবে না , তাই বিপাশার কাছে এটা সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ এই পাষাণের বুকে ফাটল ধরিয়ে তাঁর ভেতর থেকে জল বের করার মতো তাঁর সমস্ত রাগ , দুঃখ , অভিমান, অভিযোগ সব বের করে আনতে হবে। আর জানতে হবে তাঁর জীবনের গোপন অভিলাষ , অজানা কোনো কথা।
৩) আশুতোষঃ
নীলের হাতে ধরা আর একটি ছবি - বলে আশুতোষ চৌধুরী। ঝকঝকে ব্যক্তিত্ব। থ্রী পিস স্যুট পড়া , চোখে রোদ চশমা। সমস্ত চেহারায় উচ্চাকাঙ্ক্ষা ঝরে পড়ছে। চল্লিশ বছর বয়সী এই ব্যক্তি মার্কিন মুলুকে বসবাসকারী অনাবাসী ভারতীয়। চল্লিশ ছুঁই ছুঁই এই ব্যক্তির উত্থান এক কাল্পনিক রূপকথার মতো। বর্তমানে তাঁর অবস্থা বেশ স্বচ্ছল , ব্যাংকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু ডলার তিনি জমিয়েছেন। সফল একজন ভারতীয় হিসেবে তিনি প্রবাসী বাঙালি মহুয়াকে বিবাহ করেছেন। তাঁদের একমাত্র সন্তান হলো লিসা। বাবার ভিডিও ফ্লিমের এই অদ্ভুত খেয়াল মেটাতে অনেক দিন পর তিনি সপরিবারে ভারতে আসছেন।
৪) মনোতোষঃ
একটি ছবি দেখিয়ে নীল বলে ইনি রাজনারায়ণ বাবুর মেজো ছেলে মনোতোষ চৌধুরী। চৌধুরী ভিলার ইনি সবচেয়ে ট্রাজিক চরিত্র। বংশের ধারা অনুসারে ইনি সুন্দর ও সুঠামদেহী , কিন্তু ছোট্টবেলায় গলার এক জটিল রোগে তিনি কথা বলার শক্তি হারিয়েছেন। আবার মনের মধ্যে যখন কোনো একটা আবেগ হামাগুড়ি দেয় , চেতনা আঁচড় কাটে বা তিনি তাঁর মনের ভাব ও ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে যান তখন তিনি একটু অস্বাভাবিক আচরণ করেন। সেই সময় তাঁর স্ত্রী স্বর্ণালী ছাড়া আর কেউ তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তবে একটা কথা না বললেই নয় তিনি অদ্ভুত সুন্দর ছবি আঁকেন। রং-তুলি দিয়ে তিনি ছবির মাধ্যমে তাকে প্রকাশ করেন। সেই সময় মনে হয় তাঁর মধ্যে রয়েছে এক অত্যন্ত সংবেদনশীল মন , তাঁর চোখে তখন দূর দিগন্তের ছায়া কিংবা গ্রাম বাংলার কাকবন্ধ্যা সরসীর জল।
তুমি জানো বিপাশা আমি অকারণে কোনো মানুষের প্রশংসা করি না। আমি তাঁর চোখে প্রতিভার যে বিচ্ছুরণ দেখেছি তাতে মনে হয়েছে তাঁর মুখে যদি ভাষা থাকতো তাহলে তিনি আধুনিক ছবির জগতে বিপ্লব এনে দিতে পারতেন।
কথা না বলতে পারার বেদনা থেকে তার মধ্যে জন্মেছে এক আশ্চর্য হীনমন্যতা। তাই তিনি সব সময় নিজেকে গুটিয়ে রাখেন । আমি যতটুকু বুঝেছি তাতে তাঁর একমাত্র ভালোবাসার জায়গাটা হলো এখন স্ত্রী স্বর্নালীর সান্নিধ্য। সেই সান্নিধ্যে সে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। তুমি যদি মনোতোষ বাবুকে ঠিকমতো হ্যান্ডেল করতে পারো তাহলে দেখবে এই বোবা মানুষটিই আকারে ইঙ্গিতে, তুলির আঁচড়ে এমন কিছু খবর দেবেন যা তোমাকে হতবাক করে দেবে।