26-01-2023, 08:59 PM
যৌনক্রিয়ার অস্তিত্ব রক্ষার মহারণে আলম সাহেবের বরাবরই মনে হয়েছে তার প্রথম কর্মস্থল পর্ণার এই সুডোল, সুঠাম, প্রবৃদ্ধ স্তনযুগল। যার ক্রমাগত মর্দনে যৌনতার চরম পর্যায়ে এক অপূর্ব কারুকার্য সৃষ্টির বিকাশ ঘটে। এরপর উদ্দাম যৌনক্রিয়ার সূচনা হয়। সেই খেলায় যেন কোনো বিষাক্ত গোখরোর তার শিকারের গর্তে প্রবেশ ঘটে। সেই বিষাক্ত সাপের প্রবেশের জন্য গর্তের এক জৈবিক গ্রন্থি থেকে গন্ধযুক্ত জেলির ক্ষরণ। যার গন্ধে সেই আদিমকাল থেকে পুরুষ ছুটে চলে নারীর পিছনে যৌনতার আকর্ষণে। ঠিক যেমনটা আলম সাহেব ছুটে চলে পর্ণার পেছনে।
সেই যৌনখেলায় যোনিদ্বারে ক্রমাগত আঘাতে তার লিঙ্গের চরম আনন্দ, আর তার সঙ্গিনী পর্ণার মুখ থেকে সেই প্রথম শেখা বর্ণপরিচয়ের বর্ণমালার সাজানো সুরের বহিঃপ্রকাশ। কখনও উপরে, কখনও নীচে লিঙ্গের প্রবেশ ও বহির্গমন। এই লড়াইয়ের কোনো শেষ নেই। সব থেকে মজার ব্যাপার হলো এই লড়াইতে হার-জিত নেই। হেরেও জেতা যায় আবার জিতেও হাসতে হাসতে হেরে যাওয়া যায়। এ যেন কোনো শিকারির শিকার নিয়ে খেলা। তাদের নগ্ন দুটি দেহ পূর্ণিমার স্নিগ্ধ আলোয় সহবাসে মত্ত। কখনও চরম উত্তেজনার মাঝে কাঁচা রক্তের মাখামাখি, আবার কখনও সারা দেহে আঁচড় কামড়ের দাগ। বহু উত্থান-পতনের মাঝে তাদের উদ্দাম যৌনতার গ্রাসে থকথকে সাদা জেলির মতো পোশাক পড়ে সৃষ্টির দূতের প্রবেশ কোনো এক গভীর খাদে। সেই জেলি থেকে বেরিয়ে আসে কোটি কোটি শক্তিশালী , সাহসী সৈন্য - যারা প্রত্যেকেই চায় জয়ী হতে .. এই উদ্দাম প্রতিযোগিতায়।
তারপর, তাদের মধ্যে কোনো একজন শক্তিশালী বীরপুরুষ বা কোনো সুন্দরী নারী করে আক্রমণ সেই আদিম পৃথিবীকে। যেখানে লুকিয়ে আছে নতুন প্রজন্মের সত্তা। জাগিয়ে তোলে সে তার সত্তাকে, ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় এক নতুন পৃথিবীবাসীর। নতুন সৃষ্টির আনন্দে যৌনতার চরম পর্যায়ে, চরম উত্তেজনার মুহূর্তে। সেইমুহূর্তে পর্ণা তার সর্বশক্তি দিয়ে তার সুডোল স্তনযুগলের দ্বারা জড়িয়ে ধরে তার সঙ্গী আলম সাহেবের দেহ, যে আগামী দিনে তার হবু সন্তানের পিতা হতে চলেছে। রতির চরম সন্তুষ্টিতে কামাগ্নির চলে যাওয়ার মুহূর্তে শিথিল লিঙ্গের পুরুষ অবসন্ন হয়ে শেষ করে সেই লড়াই, যে লড়াইয়ে শ্বাসরোধী ডানাকাটা এক খাঁচার পাখি জেনে গেছে শরীরী আনন্দের সাথে আর কোনোকিছুর তুলনা হয় না।
"আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি আলম। আমি জানি তুমি বিধর্মী আর আমি * ',। তুমি পঞ্চাশোর্ধ এক বয়স্ক ব্যক্তি আর আমি তোমার কন্যাসম। তুমি হয়তো ভাবছো আমার মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটেছে বা হয়তো আমি কোনো কার্যসিদ্ধির জন্য কথাগুলো বলছি। কিন্তু বিশ্বাস করো, এই ক'দিনে আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি তো নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো .. এখন আর তোমার বীর্যরস আমার ভেতরে নিতে অস্বীকার করিনা আমি। এই ক'দিন আইপিল খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি, জানো! আমি মা হতে চাই তোমার সন্তানের।" সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় লালু আলমের প্রাসাদোপম বাড়ির বেডরুমের বিছানায় শুয়ে তার লোমশ বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে কথাগুলো বললো পর্ণা।
তার শয্যাসঙ্গিনী পর্ণার মুখে কথাগুলো শুনে প্রথমে চমকে উঠছিলো লালু আলম। হ্যাঁ, প্রেম হয়তো জেগেছিল কোনো সময় আলম সাহেবের মনেও। তবে তাদের প্রেম তো শুধু মন নিয়ে খেলা নয়। তাদের পরস্পরের প্রেম তো শুধু দুটি তৃষ্ণার্ত ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ নয়। তাদের দুজনের প্রেম তো সেই মান্ধাতার আমলের চোখে চোখ মেলে চেয়ে থাকা নয়। তাদের প্রেম মানে শরীরী উন্মত্ততায় ভেসে যাওয়া। তাদের প্রেম মানে যৌনতার করাল গ্রাসে পরস্পরের কাছে আত্মসমর্পণ। তাদের প্রেম মানে নারী পুরুষের সহবাস। সেই সহবাস শরীরী উষ্ণ ছোঁয়া, তাদের দুই নগ্ন শরীরের যৌন সঙ্গম। সেই সহবাস যেন এক যুদ্ধক্ষেত্রের উত্থান-পতন। সেই সহবাস যেন এক অস্তিত্ব রক্ষার জন্য দুটি হিংস্র পশুর লড়াই। কিন্তু সেই প্রেমে যে মন দেওয়া নেওয়ার ব্যাপার থাকে, সেটা তো কখনো মনে হয়নি লালু আলমের!
কিন্তু তাদের এই অবাধ উদ্দাম যৌনখেলার উদ্দেশ্য তো সেই সৃষ্টি .. কোনো এক নতুন প্রজন্মের। একটু আগে পর্ণা তাকে জানিয়েছে সে তার সন্তানের মা হতে চায়। তার যৌবনকালে বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন শ্রেণীর, বিভিন্ন ধর্মের নারীকে ভোগ করেছে সে। কোনোদিন তার মনে হয়নি নিজের পরিবার তৈরীর কথা, নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা। আজ পর্ণার মুখে কথাগুলো শুনে প্রাথমিকভাবে অবাক হলেও, হঠাৎ করেই তার মনটা আনন্দে ভরে উঠলো। "আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি যা চাও তাই হবে। নিকাহ্ করবে আমাকে?" মধুর কন্ঠে পর্ণার গালদুটো ধরে জানতে চাইলো লালু আলম। "হুঁ .." এইটুকু বলে আলম সাহেবের লোমশ বুকে মুখ লুকালো পর্ণা। ঘড়িতে তখন প্রায় রাত সাড়ে ন'টা।
"কিন্তু সেটা তো হওয়ার নয়, আমার যে একটু অন্যরকম প্ল্যান আছে!" গুরুগম্ভীর গলায় এই কথাগুলো ঘরময় প্রতিধ্বনিত হওয়ার মুহূর্তে ভেজানো থাকা বেডরুমের দরজার পাল্লাদুটো হঠাৎ করে খুলে গেলো। চমকে উঠে সেই দিকে তাকালো পর্ণা আর লালু আলম .. দু'জনেই।
আলম সাহেব দেখতে পেলো তার শোওয়ার ঘরে ঘনিয়ে ওঠা আঁধারের বুক চিরে এক জমাট-বাঁধা ঘন অন্ধকার দাঁড়িয়ে আছে। ধীরে ধীরে সেই চোখ সয়ে যাওয়া অন্ধকার যখন মানুষের অবয়ব নিতে লাগলো, তখন সে দেখলো গায়ের রঙ মিশকালো, গাট্টাগোট্টা চেহারার অধিকারী, সম্পূর্ণ টাকমাথা, সারা মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, বাঁ'দিকের চোখের ভুরু'র কিছু অংশ কাটা, অত্যধিক ড্রাগ সেবনের ফলে রক্তবর্ণ দুটি হিংস্র চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। ভয়ার্ত কন্ঠে তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো "কামরাজ .. তু..তুমি এ..এখানে .."
"আমি তো মেন্টাল এ্যাসাইলামে ছিলাম, সেখান থেকে কি করে বেরোলাম? আদৌ কি আমি সুস্থ, নাকি এখনো মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত এবং অসুস্থ? নিচে এতগুলো সিকিউরিটির ঘেরাটোপ পেরিয়ে এখানে এখন কিভাবে এলাম? এত কৈফিয়ত আমি এখন দিতে পারবো না। তাছাড়া একজন মৃত্যু পথযাত্রীর এত কথা জেনেই বা কি লাভ?"
"মৃত্যু পথযাত্রী? কে? আ..আপনি কি বলতে চাইছেন?" নিজের নগ্ন দেহে কোনোরকমে বিছানায় পড়ে থাকা চাদরটা জড়িয়ে নিয়ে প্রচন্ড ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো পর্ণা।
"ও মা .. এটাও বুঝলে না? ম্যাডাম দেখছি অঙ্কে একেবারেই কাঁচা। এটা তো খুব সহজে অঙ্ক .. না বোঝার তো কিছু নেই! ঠিক আছে, আমিই না হয় বুঝিয়ে দিচ্ছি তাহলে। তোমার এই বুড়ো নাগরটাকে এখন খুন করে তোমার সঙ্গে ফুলশয্যা করবো আমি। ঠিক যেভাবে এখানে আসার আগে নিচের চারটে সিকিউরিটিকে খুন করে এসেছি .." ধূর্ত শয়তানের মতো হাসতে হাসতে কথাগুলো বললো কামরাজ।
কথাগুলো শোনার পর ভয়ে শিউরে উঠলো পর্ণা। তাকে বুকে চেপে ধরে আলম সাহেব আকুতি করে বললো "এত বড় ক্ষতি তুমি করোনা আমাদের, তোমাকে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি কামরাজ। হ্যাঁ, স্বীকার করছি আমি একসময় অনেক অন্যায় কাজে তোমাদের সহযোগিতা করেছি। কিন্তু এখন আমি নিজেকে সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলার চেষ্টা করছি। বিশ্বাস করো .. আমি সত্যি বলছি। এই মেয়েটা, মানে পর্ণাকে দেখার পর থেকে আমি জীবনের নতুন মানে খুঁজে পেয়েছি। এখন আমিও চাই আমার একটা পরিবার হোক, আমার সন্তান আসুক, জনগণ আমাকে ভয় না পেয়ে সম্মান করুক। একটা সুস্থ জীবন যাপন করতে চাইছি আমি। এইভাবে আমার স্বপ্নটাকে ভেঙে দিও না .. প্লিজ!"
"আমি জানি তো তুই সত্যি কথা বলছিস। পার্টিতে এখন আমার বন্ধু সামন্ত কোণঠাসা আর তুই পরের বারের বিধানসভার এমএলএর টিকিটটা নিজের নামে নিশ্চিত করে ফেলেছিস .. সব খবর পেয়েছি আমি। আমাদের একটার পর একটা বিজনেস ডুবে চলেছে আর তোর কনস্ট্রাকশনের ব্যবসা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও আমি জানি এর পেছনে ওই অনির্বাণের হাত আছে .. আগে তোকে শেষ করবো, তারপর ওকে। সর্বোপরি গঙ্গানগরে রমরমিয়ে চলা নিষিদ্ধ ড্রাগ র্যাকেট আর জাল ওষুধের ব্যবসার মূল কান্ডারী যে আমি আর সামন্ত এটাও পুলিশ জানতে পেরে গেছে। পুলিশ এখন আমাদের ক্ষ্যাপা কুকুরের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমরা শাস্তি পাবো আর তুমি এখানে একটা কচি মেয়েকে বিয়ে করে সুখে সংসার করবে! সেটা তো আমরা হতে দিতে পারি না। নিচে গাড়িতে অপেক্ষা করছে সামন্ত, তোকে এখন এখানে খুন করে তোর হবু স্ত্রীকে নিয়ে এখন আমরা এখান থেকে বেরিয়ে যাবো। মাগীটাকে রাস্তায় ভোগ করে খালাস করে ফেলে দেবো। তারপর আউট অফ দ্য টাউন, না না, ভুল বললাম .. আউট অফ দ্য স্টেট হয়ে যাবো। ব্যাস আমাদের আর টিকিটিও ছুঁতে পারবে না পুলিশ বা প্রশাসন।
"ক্ষমা করো .. ক্ষমা করো আমাদের তুমি কামরাজ। তোমাদের পতনের জন্য তো আমি দায়ী নয়। এর জন্য দায়ী তোমাদের অতিরিক্ত লোভ-লালসা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। আমাকে প্রাণে মেরো না .. দয়া করো। আচ্ছা ঠিক আছে, আমার সমস্ত সম্পত্তি, এই কনস্ট্রাকশনের বিজনেস আমি তোমার হাতে তুলে দেবো। তাহলে আমাদের ছেড়ে দেবে তো?" করজোড়ে অনুরোধ করলো লালু আলম।
"আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি তোমার পরিবর্তন দেখে আলম সাহেব। তোমার প্রতিটি কথায় আমি'র বদলে এখন 'আমরা' প্রকাশ পাচ্ছে। তারমানে তুমি শুধুমাত্র নিজের কথা আর ভাবছো না, তার সঙ্গে এই মেয়েছেলেটার কথাও ভাবছো। কিন্তু আমি যে বহুকাল ধরে হৃদয়মাঝে পুষে রেখেছি একটা মানবরূপী দানব .. এ কথা তো তোমার অজানা নয় আলম! চিরকাল আমি নোংরা মানসিকতার ব্যক্তি ছিলাম। হিংস্র পশু, রক্তচোষা দুর্বৃত্ত ছিলাম আমি। আর এখন? সাক্ষাৎ যমদূতে পরিণত হয়েছি। আমি মনুষ্যত্ব ভুলে ধারণ করেছি এক অসভ্য বর্বরের সাজ। আমার সমস্ত শুভ চেতনা, বিবেক, বুদ্ধিকে ধারালো বিষাক্ত দাঁতের আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছি। তাই আমার থেকে কোন দয়া বা ক্ষমার প্রত্যাশা তুমি করো না।" চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো বললো কামরাজ।
তারপর প্যান্টের পকেট থেকে একটা ম্যাগনাম বিএফআর রিভলভার বের করে লালু আলমের দিকে তাক করে কামরাজ বলে উঠলো "আমার নষ্ট হৃদয়ে আজ আজন্মের পশুত্বের ক্ষুধা। কোনো খাদ্যেই আজ আমার অরুচি নেই। কখনো আমি বিকৃতকাম লম্পট, আবার কখনো আমি হত্যাকারী। সদ্য বয়ঃসন্ধিতে পা রাখা কোমল কিশোরী, তন্বী তনয়া কিংবা স্বাস্থ্যবতী রমণী .. সবকিছুই চেটেপুটে খাই আমি। আজ যেমন তোর পাশে ল্যাংটো হয়ে শুয়ে থাকা এই মাগীটাকে খাবো। একদিন তোকে বন্ধু বলেছিলাম ঠিকই, কিন্তু আমার যে আর আজ কিছু করার নেই। আমার মনুষ্যত্ব, আমার হৃদপিণ্ড অবিরত গিলে খাচ্ছে কতগুলো অস্থির ঘুণপোকা। মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে আমি এক আজ আস্ত নরপিশাচ। চোখে শুধু কামের আগুন জ্বলে আমার আর রক্ত নিয়ে খেলা করি। এবার মরার জন্য প্রস্তুত হও।"
গোগোল সেই যে সন্ধ্যেবেলা বেরিয়ে গিয়েছিলো, গভীর রাতে সিটি হসপিটালে ফিরে এলো সে। হসপিটালের প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢোকার পর দেখলো ক্যাম্পাস প্রায় শুনশান। ওয়েটিং রুমে প্রবেশ করে তার চোখে পড়লো অন্যান্য পেশেন্টের বাড়ির পরিচিতদের মতো বসে বসে অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে ছোট্ট শিউলি এবং তার পাশে হিয়া। স্বপনবাবুকে কোথাও দেখতে পেলো না সে, তারমানে উনাকে হয়তো বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গোগোলের কাছে কার্ড ছিলো, রিসেপশনিস্টকে বলে উপরে উঠে গেলো সে।
অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হচ্ছিলো না গোগোলের। সময় যেন থেমে গেছে, চারিদিক স্তব্ধ। ভোরের অপেক্ষায় রাত যেন আর কাটতে চাইছিলো না। রাতের অন্ধকারে জোনাকির আলোয় আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলতে দুলতে ভোরের স্নিগ্ধ আলোতে টগরকে দেখার অপেক্ষা করছিলো গোগোল। সুগন্ধি কোনো ফুলের সুরভী মেখে হয়তো সে সামনে এসে দাঁড়িয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলবে "এই .. আমাকে একদম ফরফরানি বলবে না তো .. আমি পছন্দ করি না" .. ধীরে ধীরে ফিকে হচ্ছে অন্ধকার। পাখির কলতান, নীল আকাশ, সবুজ মাঠ, এইমাত্র উঁকি দেয়া সুর্যের রঙের বাহার, সাদা মেঘের শুভ্র সাজে সে আসবে। সে অবশ্যই আসবে তার নিজের জন্য নতুন ভোর নিয়ে। সে আসবে নতুন জীবন নিয়ে .. সেই অপেক্ষায়।
ভোরের দিকে জ্ঞান এলো টগরের .. ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটেই রাখা হয়েছে ওকে। জ্ঞান আসার পর চোখ খুলে দু'জনকে দেখতে চেয়েছে টগর। ডক্টর বসাকের পরামর্শ নিয়ে ডিউটিতে থাকা সিস্টার শিউলি আর গোগোলকে আইসিউর ভেতরে নিয়ে গেলো। মিনিট কুড়ি পর শিউলিকে সঙ্গে নিয়ে ভেতর থেকে গোগোল বেরিয়ে এসে দেখলো সারি সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে তার মামণি, হিয়া, ডাক্তার আঙ্কেল, স্বপনবাবু আর কাবেরী আন্টি।
"কতবার করে হিয়াকে বললাম বাড়িতে ফিরে আয়, মেয়ে আমার কথা শুনলে তো! জেদ করে এখানেই থেকে গেলো সারারাত। আমরা এইমাত্র এলাম .. ওই মেয়েটি এখন কেমন আছে?" প্রথম উক্তিটি কাবেরী দেবীর দিক থেকেই এলো।
এই কথার কোনো উত্তর না দিয়ে সিস্টারের দিকে তাকালো গোগোল। "একটু আগে জ্ঞান ফিরেছে .. তবে কন্ডিশন খুব একটা ভালো নয় .." জানিয়ে দিলো সিস্টার।
এই প্রসঙ্গে কাবেরী দেবী আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে ডক্টর দাশগুপ্ত বলে উঠলেন "গোগোল .. বলছিলাম তোমার মামণি কিন্তু কাল থেকে তোমাকে অনেকবার ফোন করার চেষ্টা করেছে। বেশিরভাগ সময় বলছিলো নট রিচেবল। তারপর সন্ধ্যের দিকে একবার রিং হলো, কিন্তু তুমি বোধয় ব্যস্ত ছিলে, ফোনটা ধরতে পারোনি। সুজাতা তোমাকে কিছু বলতে চায়। জানি এই সিচুয়েশনে এই কথাগুলো বলার সময় নয়, কিন্তু তোমার মামণি তো কোনো কথাই শুনতে চাইছে না। কাল থেকে একটা কিচ্ছু মুখে তোলেনি। আমি ওকে বলেছি যে ও সাংঘাতিক অন্যায় করেছে .. বাইরের লোকের কথা বিশ্বাস করে ও অনেক বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছে। কিন্তু মানুষ মাত্রই তো ভুল করে, বলো! তুমি যদি প্লিজ ওর কথাগুলো একটু শুনতে .."
তার ডাক্তার আঙ্কেলের কথায় ভাবলেশহীন মুখ করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো গোগোল। তারপর সুজাতার দিকে তাকিয়ে বললো "না না আমি কিছু মনে করিনি। তুমি যা বলেছো, একদম ঠিক কথাই বলেছো। আমার এই অল্প বয়সের মধ্যেই অনেক বিপদের সম্মুখীন হয়েছি আমি। অনেক বক্রপথ, অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে এলাম। এখনো একা এবং শুধুমাত্র একা বহু কন্টকাকীর্ণ পথ হাঁটতে হবে আমাকে .. তা আমি জানি। এ জীবনে আমি আর শান্তি পাবো না, এই গোলকধাঁধা থেকে কোনোদিন বের হতে পারবো না .. সেটা আমি এতদিনে বুঝে গিয়েছি মামণি। হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছিলে এর জন্য হয়তো আমিই দায়ী, কারণ আমার বাবার রক্ত বইছে আমার শরীরে। তবে কি জানো তো, আমি চিরকাল নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকেছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। কারোর কোনো কটু কথা, ভুল বোঝা, অহেতুক অপমান .. আমাকে আমার লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবেনা। তুমি আমাকে যে কথাগুলো বলেছো সেগুলো এখন অতীত। ওইসব নিয়ে আমি এখন ভাবতে চাই না আর তুমিও ভেবোনা। তাই ওই প্রসঙ্গ থাক .. প্লিজ। ওই ব্যাপারে আর নতুন করে কোনো কথা শুনতে চাই না তোমার মুখ থেকে।"
কথাগুলো বলে গোগোল চলে যেতে গেলে, ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে সুজাতা বলে উঠলো "আমি জানি, আমি জানি তুই তোর মামণির প্রতি অভিমান করেছিস। আমাকে ক্ষমা করে দে না সোনা মানিক আমার! আমার তখন বুদ্ধিভ্রম হয়েছিল রে, ভালো-মন্দ সব জ্ঞান লোপ পেয়ে গিয়েছিলো .. আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। তাইতো আমার এরকম সোনার টুকরো একটা ছেলেকে আমি সন্দেহ করে ফেলেছিলাম, অনেক অনেক অনেক খারাপ কথা বলছি তোকে। আমি জানি তার জন্য আমার নরকেও ঠাঁই হবে না। ভুল হয়ে গেছে রে .. রাগের মাথায় ভুল করে ফেলেছি। ক্ষমা করবি না তোর এই অভাগা নির্বোধ মামণিটাকে?"
"সরি টু ডিস্টার্ব এভরিবডি .. এখানে বোধহয় ফ্যামিলি ড্রামা চলছিলো .. তাই না? উপস, সরি সরি .. এই পুলিশে চাকরি করে করে আজকাল ইমোশন টিমোশন সব জলাঞ্জলি দিয়ে দিয়েছি আমি। না মানে, আমি বলতে চাইছিলাম এখানে পারিবারিক কথোপকথন হচ্ছিলো, আমি একটু বিরক্ত করলাম আপনাদের সবাইকে। তা এখানে যিনি ভর্তি আছেন, মানে ওই মেয়েটি, আই মিন টগর .. সে এখন কেমন আছে?" হঠাৎ করে কথাগুলো কানে আসতেই গোগোল ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখলো সামনে পুলিশের উর্দিধারী, দীর্ঘকায়, গৌরবর্ণ এবং সুদর্শন বছর তিরিশের এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে।
"সে এখন কেমন আছে তা জেনে আপনার কি দরকার? তাছাড়া যে ভর্তি আছে তার নাম যে টগর সেটা আপনি জানলেন কি করে?" বিস্ময় প্রকাশ করে জিজ্ঞাসা করলো গোগোল।
- "কি করে জানলাম? কি করে .. কি করে .. কি করে .. এই দেখো কি করে যে জানলাম সেটা তো এই মুহূর্তে কিছুতেই মনে করতে পারছি না। আমার আবার শর্ট টার্ম মেমোরি লসের ব্যামো আছে। এইভাবে চলতে থাকলে চাকরি-টাকরি আর বেশিদিন থাকবে বলে মনে হচ্ছে না আমার। তবে আমি কিন্তু আপনার নামও জানি। আপনিই তো মিস্টার অনির্বাণ মুখার্জি, ওরফে গোগোল .. অনেক সুখ্যাতি শুনেছি আপনার। ব্যবসায়ী থেকে চাকরিজীবী, পথচলতি মানুষ থেকে রাস্তার পাগল .. সবাই তো আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ মশাই। তবে হ্যাঁ, একটা ভালো খবর আছে, সেটাই প্রথমে দিয়ে দিই আপনাকে। আপনি যে মহিলাটিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন আপনাদের রেলপাড়ের ক্লাবের পেছনের বারান্দায়। তাকে আমি একটা হোমে রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। হঠাৎ এই কাজের প্রয়োজন পড়লো কেনো, সেটা না হয় রাস্তায় যেতে যেতে বলবো! ওহো, আমার পরিচয়টাই তো দেয়া হয়নি আপনাকে। সন্দীপ সেনগুপ্ত .. স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ।"
- "সন্দীপ? সেনগুপ্ত? এটা কি করে সম্ভব? আর তাছাড়া রাস্তায় যেতে যেতে বলবো মানে? আমি আপনার সঙ্গে কোথায় যাবো আর কেনই বা যাবো?"
- "আজ ভোররাতে পুলিশ মিস্টার লালু আলমের বাড়ির নিচে একটি বিলাসবহুল গাড়ির ভেতর থেকে এলাকার বিধায়ক মানিক সামন্তর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করে। তারপর মিস্টার আলমের বেডরুম থেকে এলাকার বিখ্যাত অথবা কুখ্যাত বিজনেসম্যান .. কামরাজের দুমড়ানো মোচড়ানো মৃতদেহ উদ্ধার করে। মৃতদেহদুটি ফরেন্সিকের জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশের অনুমান মধ্যরাতে ওদের হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও চারজন সিকিউরিটির মৃতদেহ ওই বাড়ির বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মিস্টার আলম মিউনিসিপাল হসপিটালে ভর্তি রয়েছে, উনার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার সঙ্গিনী মিস পর্ণা এখনো সংজ্ঞাহীন। সেন্স ফিরলে নিশ্চয়ই উনার সঙ্গে আমরা কথা বলবো। তবে আমাদের কাছে খবর আছে কাল সন্ধ্যের সময় আপনি হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, তারপর মাঝরাতে ফেরেন। এতক্ষণ কোথায় ছিলেন, কি করছিলেন .. এই সমস্ত কথা তো এখানে দাঁড়িয়ে বলা সম্ভব নয়। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা আপনাকে থানায় নিয়ে যাচ্ছি। আর 'সন্দীপ' তাও আবার 'সেনগুপ্ত' .. এই নাম আর পদবী শুনে আপনার চমকে ওঠার বা বলা ভালো বিস্মিত হওয়াটাই স্বাভাবিক এবং এর কারণটাও আমি জানি। তবে এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি .. সব সন্দীপ সেনগুপ্তরা খারাপ এবং অসৎ পুলিশ অফিসার হয় না। কিছু কিছু সন্দীপ সেনগুপ্ত ভালো এবং সৎ হয়। আসুন মিস্টার মুখার্জি .. উই আর গেটিং লেট। রাস্তায় যেতে যেতে কথা হবে .. বাই এভরিবডি।"
সেই যৌনখেলায় যোনিদ্বারে ক্রমাগত আঘাতে তার লিঙ্গের চরম আনন্দ, আর তার সঙ্গিনী পর্ণার মুখ থেকে সেই প্রথম শেখা বর্ণপরিচয়ের বর্ণমালার সাজানো সুরের বহিঃপ্রকাশ। কখনও উপরে, কখনও নীচে লিঙ্গের প্রবেশ ও বহির্গমন। এই লড়াইয়ের কোনো শেষ নেই। সব থেকে মজার ব্যাপার হলো এই লড়াইতে হার-জিত নেই। হেরেও জেতা যায় আবার জিতেও হাসতে হাসতে হেরে যাওয়া যায়। এ যেন কোনো শিকারির শিকার নিয়ে খেলা। তাদের নগ্ন দুটি দেহ পূর্ণিমার স্নিগ্ধ আলোয় সহবাসে মত্ত। কখনও চরম উত্তেজনার মাঝে কাঁচা রক্তের মাখামাখি, আবার কখনও সারা দেহে আঁচড় কামড়ের দাগ। বহু উত্থান-পতনের মাঝে তাদের উদ্দাম যৌনতার গ্রাসে থকথকে সাদা জেলির মতো পোশাক পড়ে সৃষ্টির দূতের প্রবেশ কোনো এক গভীর খাদে। সেই জেলি থেকে বেরিয়ে আসে কোটি কোটি শক্তিশালী , সাহসী সৈন্য - যারা প্রত্যেকেই চায় জয়ী হতে .. এই উদ্দাম প্রতিযোগিতায়।
তারপর, তাদের মধ্যে কোনো একজন শক্তিশালী বীরপুরুষ বা কোনো সুন্দরী নারী করে আক্রমণ সেই আদিম পৃথিবীকে। যেখানে লুকিয়ে আছে নতুন প্রজন্মের সত্তা। জাগিয়ে তোলে সে তার সত্তাকে, ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় এক নতুন পৃথিবীবাসীর। নতুন সৃষ্টির আনন্দে যৌনতার চরম পর্যায়ে, চরম উত্তেজনার মুহূর্তে। সেইমুহূর্তে পর্ণা তার সর্বশক্তি দিয়ে তার সুডোল স্তনযুগলের দ্বারা জড়িয়ে ধরে তার সঙ্গী আলম সাহেবের দেহ, যে আগামী দিনে তার হবু সন্তানের পিতা হতে চলেছে। রতির চরম সন্তুষ্টিতে কামাগ্নির চলে যাওয়ার মুহূর্তে শিথিল লিঙ্গের পুরুষ অবসন্ন হয়ে শেষ করে সেই লড়াই, যে লড়াইয়ে শ্বাসরোধী ডানাকাটা এক খাঁচার পাখি জেনে গেছে শরীরী আনন্দের সাথে আর কোনোকিছুর তুলনা হয় না।
"আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি আলম। আমি জানি তুমি বিধর্মী আর আমি * ',। তুমি পঞ্চাশোর্ধ এক বয়স্ক ব্যক্তি আর আমি তোমার কন্যাসম। তুমি হয়তো ভাবছো আমার মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটেছে বা হয়তো আমি কোনো কার্যসিদ্ধির জন্য কথাগুলো বলছি। কিন্তু বিশ্বাস করো, এই ক'দিনে আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি তো নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো .. এখন আর তোমার বীর্যরস আমার ভেতরে নিতে অস্বীকার করিনা আমি। এই ক'দিন আইপিল খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি, জানো! আমি মা হতে চাই তোমার সন্তানের।" সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় লালু আলমের প্রাসাদোপম বাড়ির বেডরুমের বিছানায় শুয়ে তার লোমশ বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে কথাগুলো বললো পর্ণা।
তার শয্যাসঙ্গিনী পর্ণার মুখে কথাগুলো শুনে প্রথমে চমকে উঠছিলো লালু আলম। হ্যাঁ, প্রেম হয়তো জেগেছিল কোনো সময় আলম সাহেবের মনেও। তবে তাদের প্রেম তো শুধু মন নিয়ে খেলা নয়। তাদের পরস্পরের প্রেম তো শুধু দুটি তৃষ্ণার্ত ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ নয়। তাদের দুজনের প্রেম তো সেই মান্ধাতার আমলের চোখে চোখ মেলে চেয়ে থাকা নয়। তাদের প্রেম মানে শরীরী উন্মত্ততায় ভেসে যাওয়া। তাদের প্রেম মানে যৌনতার করাল গ্রাসে পরস্পরের কাছে আত্মসমর্পণ। তাদের প্রেম মানে নারী পুরুষের সহবাস। সেই সহবাস শরীরী উষ্ণ ছোঁয়া, তাদের দুই নগ্ন শরীরের যৌন সঙ্গম। সেই সহবাস যেন এক যুদ্ধক্ষেত্রের উত্থান-পতন। সেই সহবাস যেন এক অস্তিত্ব রক্ষার জন্য দুটি হিংস্র পশুর লড়াই। কিন্তু সেই প্রেমে যে মন দেওয়া নেওয়ার ব্যাপার থাকে, সেটা তো কখনো মনে হয়নি লালু আলমের!
কিন্তু তাদের এই অবাধ উদ্দাম যৌনখেলার উদ্দেশ্য তো সেই সৃষ্টি .. কোনো এক নতুন প্রজন্মের। একটু আগে পর্ণা তাকে জানিয়েছে সে তার সন্তানের মা হতে চায়। তার যৌবনকালে বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন শ্রেণীর, বিভিন্ন ধর্মের নারীকে ভোগ করেছে সে। কোনোদিন তার মনে হয়নি নিজের পরিবার তৈরীর কথা, নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা। আজ পর্ণার মুখে কথাগুলো শুনে প্রাথমিকভাবে অবাক হলেও, হঠাৎ করেই তার মনটা আনন্দে ভরে উঠলো। "আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি যা চাও তাই হবে। নিকাহ্ করবে আমাকে?" মধুর কন্ঠে পর্ণার গালদুটো ধরে জানতে চাইলো লালু আলম। "হুঁ .." এইটুকু বলে আলম সাহেবের লোমশ বুকে মুখ লুকালো পর্ণা। ঘড়িতে তখন প্রায় রাত সাড়ে ন'টা।
★★★★
"কিন্তু সেটা তো হওয়ার নয়, আমার যে একটু অন্যরকম প্ল্যান আছে!" গুরুগম্ভীর গলায় এই কথাগুলো ঘরময় প্রতিধ্বনিত হওয়ার মুহূর্তে ভেজানো থাকা বেডরুমের দরজার পাল্লাদুটো হঠাৎ করে খুলে গেলো। চমকে উঠে সেই দিকে তাকালো পর্ণা আর লালু আলম .. দু'জনেই।
আলম সাহেব দেখতে পেলো তার শোওয়ার ঘরে ঘনিয়ে ওঠা আঁধারের বুক চিরে এক জমাট-বাঁধা ঘন অন্ধকার দাঁড়িয়ে আছে। ধীরে ধীরে সেই চোখ সয়ে যাওয়া অন্ধকার যখন মানুষের অবয়ব নিতে লাগলো, তখন সে দেখলো গায়ের রঙ মিশকালো, গাট্টাগোট্টা চেহারার অধিকারী, সম্পূর্ণ টাকমাথা, সারা মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, বাঁ'দিকের চোখের ভুরু'র কিছু অংশ কাটা, অত্যধিক ড্রাগ সেবনের ফলে রক্তবর্ণ দুটি হিংস্র চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। ভয়ার্ত কন্ঠে তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো "কামরাজ .. তু..তুমি এ..এখানে .."
"আমি তো মেন্টাল এ্যাসাইলামে ছিলাম, সেখান থেকে কি করে বেরোলাম? আদৌ কি আমি সুস্থ, নাকি এখনো মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত এবং অসুস্থ? নিচে এতগুলো সিকিউরিটির ঘেরাটোপ পেরিয়ে এখানে এখন কিভাবে এলাম? এত কৈফিয়ত আমি এখন দিতে পারবো না। তাছাড়া একজন মৃত্যু পথযাত্রীর এত কথা জেনেই বা কি লাভ?"
"মৃত্যু পথযাত্রী? কে? আ..আপনি কি বলতে চাইছেন?" নিজের নগ্ন দেহে কোনোরকমে বিছানায় পড়ে থাকা চাদরটা জড়িয়ে নিয়ে প্রচন্ড ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো পর্ণা।
"ও মা .. এটাও বুঝলে না? ম্যাডাম দেখছি অঙ্কে একেবারেই কাঁচা। এটা তো খুব সহজে অঙ্ক .. না বোঝার তো কিছু নেই! ঠিক আছে, আমিই না হয় বুঝিয়ে দিচ্ছি তাহলে। তোমার এই বুড়ো নাগরটাকে এখন খুন করে তোমার সঙ্গে ফুলশয্যা করবো আমি। ঠিক যেভাবে এখানে আসার আগে নিচের চারটে সিকিউরিটিকে খুন করে এসেছি .." ধূর্ত শয়তানের মতো হাসতে হাসতে কথাগুলো বললো কামরাজ।
কথাগুলো শোনার পর ভয়ে শিউরে উঠলো পর্ণা। তাকে বুকে চেপে ধরে আলম সাহেব আকুতি করে বললো "এত বড় ক্ষতি তুমি করোনা আমাদের, তোমাকে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি কামরাজ। হ্যাঁ, স্বীকার করছি আমি একসময় অনেক অন্যায় কাজে তোমাদের সহযোগিতা করেছি। কিন্তু এখন আমি নিজেকে সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলার চেষ্টা করছি। বিশ্বাস করো .. আমি সত্যি বলছি। এই মেয়েটা, মানে পর্ণাকে দেখার পর থেকে আমি জীবনের নতুন মানে খুঁজে পেয়েছি। এখন আমিও চাই আমার একটা পরিবার হোক, আমার সন্তান আসুক, জনগণ আমাকে ভয় না পেয়ে সম্মান করুক। একটা সুস্থ জীবন যাপন করতে চাইছি আমি। এইভাবে আমার স্বপ্নটাকে ভেঙে দিও না .. প্লিজ!"
"আমি জানি তো তুই সত্যি কথা বলছিস। পার্টিতে এখন আমার বন্ধু সামন্ত কোণঠাসা আর তুই পরের বারের বিধানসভার এমএলএর টিকিটটা নিজের নামে নিশ্চিত করে ফেলেছিস .. সব খবর পেয়েছি আমি। আমাদের একটার পর একটা বিজনেস ডুবে চলেছে আর তোর কনস্ট্রাকশনের ব্যবসা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও আমি জানি এর পেছনে ওই অনির্বাণের হাত আছে .. আগে তোকে শেষ করবো, তারপর ওকে। সর্বোপরি গঙ্গানগরে রমরমিয়ে চলা নিষিদ্ধ ড্রাগ র্যাকেট আর জাল ওষুধের ব্যবসার মূল কান্ডারী যে আমি আর সামন্ত এটাও পুলিশ জানতে পেরে গেছে। পুলিশ এখন আমাদের ক্ষ্যাপা কুকুরের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমরা শাস্তি পাবো আর তুমি এখানে একটা কচি মেয়েকে বিয়ে করে সুখে সংসার করবে! সেটা তো আমরা হতে দিতে পারি না। নিচে গাড়িতে অপেক্ষা করছে সামন্ত, তোকে এখন এখানে খুন করে তোর হবু স্ত্রীকে নিয়ে এখন আমরা এখান থেকে বেরিয়ে যাবো। মাগীটাকে রাস্তায় ভোগ করে খালাস করে ফেলে দেবো। তারপর আউট অফ দ্য টাউন, না না, ভুল বললাম .. আউট অফ দ্য স্টেট হয়ে যাবো। ব্যাস আমাদের আর টিকিটিও ছুঁতে পারবে না পুলিশ বা প্রশাসন।
"ক্ষমা করো .. ক্ষমা করো আমাদের তুমি কামরাজ। তোমাদের পতনের জন্য তো আমি দায়ী নয়। এর জন্য দায়ী তোমাদের অতিরিক্ত লোভ-লালসা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। আমাকে প্রাণে মেরো না .. দয়া করো। আচ্ছা ঠিক আছে, আমার সমস্ত সম্পত্তি, এই কনস্ট্রাকশনের বিজনেস আমি তোমার হাতে তুলে দেবো। তাহলে আমাদের ছেড়ে দেবে তো?" করজোড়ে অনুরোধ করলো লালু আলম।
"আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি তোমার পরিবর্তন দেখে আলম সাহেব। তোমার প্রতিটি কথায় আমি'র বদলে এখন 'আমরা' প্রকাশ পাচ্ছে। তারমানে তুমি শুধুমাত্র নিজের কথা আর ভাবছো না, তার সঙ্গে এই মেয়েছেলেটার কথাও ভাবছো। কিন্তু আমি যে বহুকাল ধরে হৃদয়মাঝে পুষে রেখেছি একটা মানবরূপী দানব .. এ কথা তো তোমার অজানা নয় আলম! চিরকাল আমি নোংরা মানসিকতার ব্যক্তি ছিলাম। হিংস্র পশু, রক্তচোষা দুর্বৃত্ত ছিলাম আমি। আর এখন? সাক্ষাৎ যমদূতে পরিণত হয়েছি। আমি মনুষ্যত্ব ভুলে ধারণ করেছি এক অসভ্য বর্বরের সাজ। আমার সমস্ত শুভ চেতনা, বিবেক, বুদ্ধিকে ধারালো বিষাক্ত দাঁতের আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছি। তাই আমার থেকে কোন দয়া বা ক্ষমার প্রত্যাশা তুমি করো না।" চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো বললো কামরাজ।
তারপর প্যান্টের পকেট থেকে একটা ম্যাগনাম বিএফআর রিভলভার বের করে লালু আলমের দিকে তাক করে কামরাজ বলে উঠলো "আমার নষ্ট হৃদয়ে আজ আজন্মের পশুত্বের ক্ষুধা। কোনো খাদ্যেই আজ আমার অরুচি নেই। কখনো আমি বিকৃতকাম লম্পট, আবার কখনো আমি হত্যাকারী। সদ্য বয়ঃসন্ধিতে পা রাখা কোমল কিশোরী, তন্বী তনয়া কিংবা স্বাস্থ্যবতী রমণী .. সবকিছুই চেটেপুটে খাই আমি। আজ যেমন তোর পাশে ল্যাংটো হয়ে শুয়ে থাকা এই মাগীটাকে খাবো। একদিন তোকে বন্ধু বলেছিলাম ঠিকই, কিন্তু আমার যে আর আজ কিছু করার নেই। আমার মনুষ্যত্ব, আমার হৃদপিণ্ড অবিরত গিলে খাচ্ছে কতগুলো অস্থির ঘুণপোকা। মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে আমি এক আজ আস্ত নরপিশাচ। চোখে শুধু কামের আগুন জ্বলে আমার আর রক্ত নিয়ে খেলা করি। এবার মরার জন্য প্রস্তুত হও।"
★★★★
গোগোল সেই যে সন্ধ্যেবেলা বেরিয়ে গিয়েছিলো, গভীর রাতে সিটি হসপিটালে ফিরে এলো সে। হসপিটালের প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢোকার পর দেখলো ক্যাম্পাস প্রায় শুনশান। ওয়েটিং রুমে প্রবেশ করে তার চোখে পড়লো অন্যান্য পেশেন্টের বাড়ির পরিচিতদের মতো বসে বসে অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে ছোট্ট শিউলি এবং তার পাশে হিয়া। স্বপনবাবুকে কোথাও দেখতে পেলো না সে, তারমানে উনাকে হয়তো বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গোগোলের কাছে কার্ড ছিলো, রিসেপশনিস্টকে বলে উপরে উঠে গেলো সে।
অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হচ্ছিলো না গোগোলের। সময় যেন থেমে গেছে, চারিদিক স্তব্ধ। ভোরের অপেক্ষায় রাত যেন আর কাটতে চাইছিলো না। রাতের অন্ধকারে জোনাকির আলোয় আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলতে দুলতে ভোরের স্নিগ্ধ আলোতে টগরকে দেখার অপেক্ষা করছিলো গোগোল। সুগন্ধি কোনো ফুলের সুরভী মেখে হয়তো সে সামনে এসে দাঁড়িয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলবে "এই .. আমাকে একদম ফরফরানি বলবে না তো .. আমি পছন্দ করি না" .. ধীরে ধীরে ফিকে হচ্ছে অন্ধকার। পাখির কলতান, নীল আকাশ, সবুজ মাঠ, এইমাত্র উঁকি দেয়া সুর্যের রঙের বাহার, সাদা মেঘের শুভ্র সাজে সে আসবে। সে অবশ্যই আসবে তার নিজের জন্য নতুন ভোর নিয়ে। সে আসবে নতুন জীবন নিয়ে .. সেই অপেক্ষায়।
ভোরের দিকে জ্ঞান এলো টগরের .. ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটেই রাখা হয়েছে ওকে। জ্ঞান আসার পর চোখ খুলে দু'জনকে দেখতে চেয়েছে টগর। ডক্টর বসাকের পরামর্শ নিয়ে ডিউটিতে থাকা সিস্টার শিউলি আর গোগোলকে আইসিউর ভেতরে নিয়ে গেলো। মিনিট কুড়ি পর শিউলিকে সঙ্গে নিয়ে ভেতর থেকে গোগোল বেরিয়ে এসে দেখলো সারি সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে তার মামণি, হিয়া, ডাক্তার আঙ্কেল, স্বপনবাবু আর কাবেরী আন্টি।
"কতবার করে হিয়াকে বললাম বাড়িতে ফিরে আয়, মেয়ে আমার কথা শুনলে তো! জেদ করে এখানেই থেকে গেলো সারারাত। আমরা এইমাত্র এলাম .. ওই মেয়েটি এখন কেমন আছে?" প্রথম উক্তিটি কাবেরী দেবীর দিক থেকেই এলো।
এই কথার কোনো উত্তর না দিয়ে সিস্টারের দিকে তাকালো গোগোল। "একটু আগে জ্ঞান ফিরেছে .. তবে কন্ডিশন খুব একটা ভালো নয় .." জানিয়ে দিলো সিস্টার।
এই প্রসঙ্গে কাবেরী দেবী আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে ডক্টর দাশগুপ্ত বলে উঠলেন "গোগোল .. বলছিলাম তোমার মামণি কিন্তু কাল থেকে তোমাকে অনেকবার ফোন করার চেষ্টা করেছে। বেশিরভাগ সময় বলছিলো নট রিচেবল। তারপর সন্ধ্যের দিকে একবার রিং হলো, কিন্তু তুমি বোধয় ব্যস্ত ছিলে, ফোনটা ধরতে পারোনি। সুজাতা তোমাকে কিছু বলতে চায়। জানি এই সিচুয়েশনে এই কথাগুলো বলার সময় নয়, কিন্তু তোমার মামণি তো কোনো কথাই শুনতে চাইছে না। কাল থেকে একটা কিচ্ছু মুখে তোলেনি। আমি ওকে বলেছি যে ও সাংঘাতিক অন্যায় করেছে .. বাইরের লোকের কথা বিশ্বাস করে ও অনেক বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছে। কিন্তু মানুষ মাত্রই তো ভুল করে, বলো! তুমি যদি প্লিজ ওর কথাগুলো একটু শুনতে .."
তার ডাক্তার আঙ্কেলের কথায় ভাবলেশহীন মুখ করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো গোগোল। তারপর সুজাতার দিকে তাকিয়ে বললো "না না আমি কিছু মনে করিনি। তুমি যা বলেছো, একদম ঠিক কথাই বলেছো। আমার এই অল্প বয়সের মধ্যেই অনেক বিপদের সম্মুখীন হয়েছি আমি। অনেক বক্রপথ, অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে এলাম। এখনো একা এবং শুধুমাত্র একা বহু কন্টকাকীর্ণ পথ হাঁটতে হবে আমাকে .. তা আমি জানি। এ জীবনে আমি আর শান্তি পাবো না, এই গোলকধাঁধা থেকে কোনোদিন বের হতে পারবো না .. সেটা আমি এতদিনে বুঝে গিয়েছি মামণি। হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছিলে এর জন্য হয়তো আমিই দায়ী, কারণ আমার বাবার রক্ত বইছে আমার শরীরে। তবে কি জানো তো, আমি চিরকাল নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকেছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। কারোর কোনো কটু কথা, ভুল বোঝা, অহেতুক অপমান .. আমাকে আমার লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবেনা। তুমি আমাকে যে কথাগুলো বলেছো সেগুলো এখন অতীত। ওইসব নিয়ে আমি এখন ভাবতে চাই না আর তুমিও ভেবোনা। তাই ওই প্রসঙ্গ থাক .. প্লিজ। ওই ব্যাপারে আর নতুন করে কোনো কথা শুনতে চাই না তোমার মুখ থেকে।"
কথাগুলো বলে গোগোল চলে যেতে গেলে, ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে সুজাতা বলে উঠলো "আমি জানি, আমি জানি তুই তোর মামণির প্রতি অভিমান করেছিস। আমাকে ক্ষমা করে দে না সোনা মানিক আমার! আমার তখন বুদ্ধিভ্রম হয়েছিল রে, ভালো-মন্দ সব জ্ঞান লোপ পেয়ে গিয়েছিলো .. আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। তাইতো আমার এরকম সোনার টুকরো একটা ছেলেকে আমি সন্দেহ করে ফেলেছিলাম, অনেক অনেক অনেক খারাপ কথা বলছি তোকে। আমি জানি তার জন্য আমার নরকেও ঠাঁই হবে না। ভুল হয়ে গেছে রে .. রাগের মাথায় ভুল করে ফেলেছি। ক্ষমা করবি না তোর এই অভাগা নির্বোধ মামণিটাকে?"
"সরি টু ডিস্টার্ব এভরিবডি .. এখানে বোধহয় ফ্যামিলি ড্রামা চলছিলো .. তাই না? উপস, সরি সরি .. এই পুলিশে চাকরি করে করে আজকাল ইমোশন টিমোশন সব জলাঞ্জলি দিয়ে দিয়েছি আমি। না মানে, আমি বলতে চাইছিলাম এখানে পারিবারিক কথোপকথন হচ্ছিলো, আমি একটু বিরক্ত করলাম আপনাদের সবাইকে। তা এখানে যিনি ভর্তি আছেন, মানে ওই মেয়েটি, আই মিন টগর .. সে এখন কেমন আছে?" হঠাৎ করে কথাগুলো কানে আসতেই গোগোল ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখলো সামনে পুলিশের উর্দিধারী, দীর্ঘকায়, গৌরবর্ণ এবং সুদর্শন বছর তিরিশের এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে।
"সে এখন কেমন আছে তা জেনে আপনার কি দরকার? তাছাড়া যে ভর্তি আছে তার নাম যে টগর সেটা আপনি জানলেন কি করে?" বিস্ময় প্রকাশ করে জিজ্ঞাসা করলো গোগোল।
- "কি করে জানলাম? কি করে .. কি করে .. কি করে .. এই দেখো কি করে যে জানলাম সেটা তো এই মুহূর্তে কিছুতেই মনে করতে পারছি না। আমার আবার শর্ট টার্ম মেমোরি লসের ব্যামো আছে। এইভাবে চলতে থাকলে চাকরি-টাকরি আর বেশিদিন থাকবে বলে মনে হচ্ছে না আমার। তবে আমি কিন্তু আপনার নামও জানি। আপনিই তো মিস্টার অনির্বাণ মুখার্জি, ওরফে গোগোল .. অনেক সুখ্যাতি শুনেছি আপনার। ব্যবসায়ী থেকে চাকরিজীবী, পথচলতি মানুষ থেকে রাস্তার পাগল .. সবাই তো আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ মশাই। তবে হ্যাঁ, একটা ভালো খবর আছে, সেটাই প্রথমে দিয়ে দিই আপনাকে। আপনি যে মহিলাটিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন আপনাদের রেলপাড়ের ক্লাবের পেছনের বারান্দায়। তাকে আমি একটা হোমে রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। হঠাৎ এই কাজের প্রয়োজন পড়লো কেনো, সেটা না হয় রাস্তায় যেতে যেতে বলবো! ওহো, আমার পরিচয়টাই তো দেয়া হয়নি আপনাকে। সন্দীপ সেনগুপ্ত .. স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ।"
- "সন্দীপ? সেনগুপ্ত? এটা কি করে সম্ভব? আর তাছাড়া রাস্তায় যেতে যেতে বলবো মানে? আমি আপনার সঙ্গে কোথায় যাবো আর কেনই বা যাবো?"
- "আজ ভোররাতে পুলিশ মিস্টার লালু আলমের বাড়ির নিচে একটি বিলাসবহুল গাড়ির ভেতর থেকে এলাকার বিধায়ক মানিক সামন্তর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করে। তারপর মিস্টার আলমের বেডরুম থেকে এলাকার বিখ্যাত অথবা কুখ্যাত বিজনেসম্যান .. কামরাজের দুমড়ানো মোচড়ানো মৃতদেহ উদ্ধার করে। মৃতদেহদুটি ফরেন্সিকের জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশের অনুমান মধ্যরাতে ওদের হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও চারজন সিকিউরিটির মৃতদেহ ওই বাড়ির বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মিস্টার আলম মিউনিসিপাল হসপিটালে ভর্তি রয়েছে, উনার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার সঙ্গিনী মিস পর্ণা এখনো সংজ্ঞাহীন। সেন্স ফিরলে নিশ্চয়ই উনার সঙ্গে আমরা কথা বলবো। তবে আমাদের কাছে খবর আছে কাল সন্ধ্যের সময় আপনি হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, তারপর মাঝরাতে ফেরেন। এতক্ষণ কোথায় ছিলেন, কি করছিলেন .. এই সমস্ত কথা তো এখানে দাঁড়িয়ে বলা সম্ভব নয়। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা আপনাকে থানায় নিয়ে যাচ্ছি। আর 'সন্দীপ' তাও আবার 'সেনগুপ্ত' .. এই নাম আর পদবী শুনে আপনার চমকে ওঠার বা বলা ভালো বিস্মিত হওয়াটাই স্বাভাবিক এবং এর কারণটাও আমি জানি। তবে এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি .. সব সন্দীপ সেনগুপ্তরা খারাপ এবং অসৎ পুলিশ অফিসার হয় না। কিছু কিছু সন্দীপ সেনগুপ্ত ভালো এবং সৎ হয়। আসুন মিস্টার মুখার্জি .. উই আর গেটিং লেট। রাস্তায় যেতে যেতে কথা হবে .. বাই এভরিবডি।"
(ক্রমশ)
ভালো লাগলে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন
লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন