26-01-2023, 04:52 PM
(This post was last modified: 27-01-2023, 03:02 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পঞ্চষষ্টিতম অধ্যায়
কদিন হয়ে গেল মোমো তার সঙ্গে দুই-একটা দরকারী কথা ছাড়া কোনো কথা বলছে না।সকাল বেলা হঠাৎ বলল,কদিন ধরে একটা জামা গায়ে তোমার অস্বস্তি হচ্ছে না?পিচেশের হদ্দ!
কি করব তুমি তো আমাকে মেসে যেতে দিলে না।
তর্ক করবে না জামা-প্যাণ্ট খুলে দেও।
প্যাণ্ট খুলে দেব মানে?
একটা শাড়ি এগিয়ে দিয়ে দীপশিখা বললেন,এইটা লুঙ্গির মত পরে খুলে দাও।
মোমো জামা প্যাণ্ট কাচতে যেতে "আমি কাচছি" বলে বাধা দিতে গেলে এমন চোখে তাকালো সুখ আর কথা বাড়ায় না।মোমো কারো শোনার পাত্রী নয় তারপর ওর মাথায় জল দিয়ে গরম জল দিয়ে সারা শরীর স্পঞ্জ করে দিলেন।রাতে শুয়ে শুয়ে এইসব কথা ভাবতে থাকে সুখ।মোমোর মনে কি আছে কে জানে।কালই সে চলে যাবে এই একদিনের জন্য কেন এইসব করছে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়লেন দীপশিখা।আজ কলেজ যাবেন না বলে এসেছেন।বাসি কাপড় বদলে লাইব্রেরীতে উকি দিয়ে দেখলেন,মনু গুমোচ্ছে।ঘুমোচ্ছে ঘুমোক দীপশিখা রান্না ঘরে ঢুকলেন।চা করে নিজের জন্য এক কাপ নিয়ে বাকীটা ফ্লাক্সে ঢেলে রাখলেন।গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে চা খেতে খেতে রান্না করতে থাকেন।ফোন বাজতে কানে লাগিয়ে বললেন,হ্যা বলছি...নটা নাগাদ এলেই হবে...হাসপাতালে কতক্ষন লাগবে জানিনা, তা ধরুন খুব বেশি হলে চারটে বেজে যাবে...আচ্ছা রাখছি।
সুখর ঘুম ভেঙ্গে গেছে।মোমো রান্না করছে সে ঘুমোচ্ছে বলেই হয়তো চা দেয়নি।বেসিনে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে ফিরে আসতে দেখল মোমো চা নিয়ে দাঁড়িয়ে, হাতের থেকে চায়ের কাপ নিতে মোমো বলল,আমরা নটার সময় বেরোব।
একবার ভাবে বলে,আমি একাই যেতে পারব তোমার কলেজ আছে কিন্তু মুখের চেহারা দেখে সুখর সেকথা বলতে ভরসা হল না।মনে মনে ভাবে এখান থেকে বেরোতে পারলে বাচা যায়। চা শেষ করে বারান্দায় গিয়ে দেখল মেলে দেওয়া জামা প্যাণ্ট নেই।রান্না ঘরে গিয়ে বলল,আমার জামা প্যাণ্ট?
আমার ঘরে খাটের উপর আছে।
মোমোর ঘরে ঢুকে সুখ অবাক বিছানার উপর পাট করে রাখা জামা প্যাণ্ট।খাটের উপর ইস্ত্রি করা জামা প্যাণ্টের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।হাতের তালুতে চোখ মুছে ভাবে এক দিন কে কোথায় হারিয়ে যাব জানি না কিন্তু যতদিন বাচবো মোমোকে ভুলতে পারবো না।জামা প্যাণ্ট নিয়ে লাইব্রেরী ঘরে ফিরে এল।আত্মীয় স্বজন হতে বিচ্ছিন্ন একাকী জীবন মোমোর জন্য কষ্ট হয়।ডমিনেটিং টাইপ চরিত্রের জন্য মোমোর এই অবস্থা।নিজে যা ভাল বুঝবে করবে।বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ওর ভিতরে চলছে কত ভাঙ্গাগড়া।সবদিক ভেবে সুখর মনে হয়েছে, মোমোকে মোটেই স্বার্থপর বলা চলে না।
সুখ মনে মনে ভেবে নেয় হাসপাতালের কাজ মিটলে মেসে গিয়ে কাগজপত্র নিয়ে কলেজে যাবে।আজ আর সময় হবে না কাল যাবে প্লেজারে।একমাস হয়ে গেছে বেতনটা নিয়ে বলে আসবে আর কাজ করবে না।
খেতে এসো।
খেতে দিয়েছে সুখ উঠে ডাইনিং টেবিলে বসল।কেউ কোনো কথা বলে না চুপচাপ খেতে থাকে।মোমো এরকম কেন করছে বুঝতে পারে না।মোমোর রান্নার হাত ভালো। মায়ের কথা মনে পড়ল।মায়ের রান্নার সকলে প্রশংসা করতো। আবার সেই পুতুলদির হাতের রান্না খেতে হবে ভেবে মনে মনে হাসে সুখ।ফোন বাজতে দীপশিখা কানে লাগিয়ে বললেন,দশ মিনিট।ফোন রেখে বললেন,তাড়াতাড়ি খেয়ে জামা প্যাণ্ট পরে রেডি হয়ে নেও।
এমন গম্ভীর শীতল কণ্ঠস্বর সুখ কোনো কথা না বলে খেয়ে মুখ ধুয়ে জামা প্যাণ্ট পরতে থাকে।মোমোর দেরী হয় না,সাধারণ মেয়েদের মতো সাজগোজের বাতিক নেই।তাতেই তাকে সুন্দর লাগে।দুজনে নীচে নেমে আসতে সুখ দেখল একটা সাদা রঙের গাড়ী দাড়িয়ে।বুঝতে পারে মোমো গাড়ী ভাড়া করেছে।
গাড়িতে উঠে দীপশিখা বললেন,ন্যাশনাল।
মোমো কথা বলছে না সুখও উল্টোদিকের জানলা ঘেষে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।কাছেই হাসপাতাল গাড়ী থামতে ওরা নেমে ভিতরে চলে গেল। মোমো কথা বলছে না সুখও উল্টোদিকের জানলা ঘেষে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।কাছেই হাসপাতাল গাড়ী থামতে ওরা নেমে ভিতরে চলে গেল।
ভিতরে গিয়ে কাগজ প্ত্র জমা দিতে বাইরে অপেক্ষা করতে বলল।অনেকেই অপেক্ষা করছে।ফাকা জায়গা দেখে ওরা বসল।একজন ঢুকছে প্রায় পনেরো-কুড়ি মিনিট পর বের হচ্ছে ।দীপশিখার কেমন গা গোলাতে থাকে।উঠে বাইরে বেরিয়ে এসে ভাবলেন একটা কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়ার কথা।হাটতে হাটতে রাস্তায় চলে এলেন।মিনিট তিন দূরে একটা দোকান নজরে পড়ল। দোকানে গিয়ে একটা কোল্ড ড্রিঙ্কস নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পান করলেন।একটা বড় ঢেকুর বেরিয়ে এল।ঘড়ি দেখলেন দশটা বাজে প্রায়।আবার হাসপাতালের দিকে হাটতে থাকেন।নটা নাগাদ বেরিয়েছেন প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গেল।সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে দেখল মনু নেই।তাহলে কি ভিতরে গেছে?দীপশিখা একটা চেয়ারে বসলেন।
উপুড় করে শুইয়ে একজন নার্স ব্যাণ্ডেজ কেটে দিয়ে ক্ষতস্থান এবং চারপাশ স্পিরিট দিয়ে মুছে দিল।দুই-একবার টিপে জিজ্ঞেস করল ব্যথা আছে কিনা। একটা অয়েনমেণ্ট লিখে দিল ক্ষতস্থানে লাগাবার জন্য।সপ্তা খানেক সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়ে সুখকে ছেড়ে দিল।সুখ উঠে বসল,পিঠে হাত বুলিয়ে বেশ হালকা লাগে।বাইরে বেরিয়ে এক কোনে বসে থাকা মোমোকে দেখে অবাক হয়।মোমো তাহলে চলে যায়নি?তাকে দেখে উঠে দাড়িয়েছে।সুখ জামা তুলে দেখালো।দীপশিখা মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।মনুটা একেবারে ছেলে মানুষ।বাইরে বেরিয়ে এলেন।
সুখও বেরিয়ে কাছে গিয়ে বলল,মোমো তুমি যাওনি?খালি খালি তোমার কলেজ কামাই হয়ে গেল।
দীপশিখা একবার তাকিয়ে বললেন,নীচে চলো।কোনো অসুবিধে হচ্ছে নাতো?
না না একেবারে ফিট।
দীপশিখা নামতে থাকেন সঙ্গে সুখ।বুঝতে পারে তাকে মেস পর্যন্ত পৌছে দেবে।নীচে নেমে ওরা গাড়ীতে উঠে বসতে গাড়ী ছেড়ে দিল।গাড়ী মৌলালী পৌছে যখন ধর্মতলায় ঢুকছে সুখ বলল,এদিকে কোথায়?
আজ তোমার রেজাল্ট বেরিয়েছে না?
সুখ বুঝতে পারে কলেজে যাচ্ছে কিন্তু কাগজপত্তর তো সব মেসেই পড়ে আছে।সুখ বলল,কিন্তু এ্যাডমিট কার্ড তো মেসে।
মেস কোথায়?
হ্যারিসন রোডে গ্রেস সিনেমার কাছে।
ধর্মতলার মোড়ে গিয়ে সেন্ট্রাল এ্যাভিনিউ ধরবেন।
সুখ ধন্দ্বে পড়ে যায় মোমো কি করতে চাইছে।খুলে বলছে না কিছুই,খুলে বললে কি হয়েছে।তার জন্য কলেজ কামাই করল সুখ সেজন্য কঠোর হতে পারেনা।
গ্রেস সিনেমার কাছে গাড়ী দাড়াতে মোমো নেমে পড়ল।সুখ নামতে দিপশিখা বললেন,মেসে তোমার যা আছে সব নিয়ে এসো।
সুখর ধৈর্যচ্যুতি ঘটে বলল,তুমি এমনভাবে অর্ডার করছো যেন দিদিমণি।আমি কি তোমার ছাত্র?
বলে আসবে মেসে আর আসবে না।
সুখ অসহায় বোধ করে অথচ মুখের উপর কিছু বলতেও পারে না।রাস্তা পার হয়ে মেসে ঢুকে গেল। মনু চলে যেতে দীপশিখা গাড়িতে উঠে বসলেন।কোথায় ঢুকলো দেখলেন।মনে হচ্ছে মনু পরীক্ষা দিয়েছে কথাটা মিথ্যে নয়।তাহলে এইসব করতো কেন?ওর চোখে লালসা নজরে পড়েনি যত জানছেন অবাক হচ্ছেন।ফেরার পথে কয়েক প্রস্থ জামা প্যাণ্ট কিনে দেবেন।বলছে পাস করবেই।এত দেরী করছে কেন?অনেক মালপত্তর আছে নাকি ডিকিতে ধরবে তো?
একবার মনে হল অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যাবার রাস্তা নেই তো?একবার নেমে দেখার কথা মনে হল।নজরে পড়ল একটা তোবড়ানো স্যুটকেশ হাতে ঝুলিয়ে আসছে মনু।মিথ্যে সন্দেহ করছিলেন।
এতদেরী হল?
স্যুটকেশ ভিতরে ঢুকিয়ে পায়ের কাছে রাখতে রাখতে বলল,ছাড়তে চাইছিল না।অনেক উল্টোপাল্টা বলে আসতে হয়েছে।দীপশিখা দেখলেন বাড়ীটার দরজায় মোটামত একজন মহিলা দাঁড়িয়ে এদিকে লক্ষ্য করছে।দীপশিখা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেন,ওই মহিলা কে?
উনিই তো মিস শেখোয়াত।
কলেজের সামনে গাড়ী দাড়াতে সুখ নেমে ঢুকে গেল।দীপশিখা স্যুটকেশটা কোলে তুলে খুললেন।কয়েকটা জামা প্যাণ্ট টুথ ব্রাশ আয়না চিরুণী তার মাঝে একটা ফাইল।ফাইলটা খুলে চোখ বোলাতে থাকেন।কলেজ ফাইন্যাল উচ্চ মাধ্যমিকের এ্যাডমিট কার্ড রেজাল্ট সব সাজানো।রেজাল্ট দেখে বিস্ময়ের ঘোর কাটেনা।দীপশিখা ছাত্রী হিসেবে ভাল ছিলেন কিন্তু তারও রেজাল্ট এত ভালো হয় নি।ছাত্রী পড়ানো কাজ মানুষ চিনতে পারার অহঙ্কার চুরচুর ভেঙ্গে পড়ল।এতদিন মনুর সম্পর্কে কিইনা ভেবেছেন মনে করে লজ্জিত বোধ করেন।পাস করবেই এত নিশ্চিত কিভাবে হল বুঝতে পারেন।
চারপাশে তাকিয়ে হারিয়ে যান অতীতে।দীপশিখা স্কটিশে পড়তেন তারপর কলকাতা ইউনিভার্সিটি তখন এই কফি হাউসে কত আড্ডা দিয়েছেন। সেইদিনগুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে।ইশারা ইঙ্গিত কম পান নি কিন্তু অহঙ্কারের জন্য বেশীদূর গড়াতে পারেনি।সেদিন কিছু একটা হলে হয়তো জীবনের গতিপথ বদলে যেতো।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাথ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে হাটতে থাকেন।
কদিন হয়ে গেল মোমো তার সঙ্গে দুই-একটা দরকারী কথা ছাড়া কোনো কথা বলছে না।সকাল বেলা হঠাৎ বলল,কদিন ধরে একটা জামা গায়ে তোমার অস্বস্তি হচ্ছে না?পিচেশের হদ্দ!
কি করব তুমি তো আমাকে মেসে যেতে দিলে না।
তর্ক করবে না জামা-প্যাণ্ট খুলে দেও।
প্যাণ্ট খুলে দেব মানে?
একটা শাড়ি এগিয়ে দিয়ে দীপশিখা বললেন,এইটা লুঙ্গির মত পরে খুলে দাও।
মোমো জামা প্যাণ্ট কাচতে যেতে "আমি কাচছি" বলে বাধা দিতে গেলে এমন চোখে তাকালো সুখ আর কথা বাড়ায় না।মোমো কারো শোনার পাত্রী নয় তারপর ওর মাথায় জল দিয়ে গরম জল দিয়ে সারা শরীর স্পঞ্জ করে দিলেন।রাতে শুয়ে শুয়ে এইসব কথা ভাবতে থাকে সুখ।মোমোর মনে কি আছে কে জানে।কালই সে চলে যাবে এই একদিনের জন্য কেন এইসব করছে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়লেন দীপশিখা।আজ কলেজ যাবেন না বলে এসেছেন।বাসি কাপড় বদলে লাইব্রেরীতে উকি দিয়ে দেখলেন,মনু গুমোচ্ছে।ঘুমোচ্ছে ঘুমোক দীপশিখা রান্না ঘরে ঢুকলেন।চা করে নিজের জন্য এক কাপ নিয়ে বাকীটা ফ্লাক্সে ঢেলে রাখলেন।গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে চা খেতে খেতে রান্না করতে থাকেন।ফোন বাজতে কানে লাগিয়ে বললেন,হ্যা বলছি...নটা নাগাদ এলেই হবে...হাসপাতালে কতক্ষন লাগবে জানিনা, তা ধরুন খুব বেশি হলে চারটে বেজে যাবে...আচ্ছা রাখছি।
সুখর ঘুম ভেঙ্গে গেছে।মোমো রান্না করছে সে ঘুমোচ্ছে বলেই হয়তো চা দেয়নি।বেসিনে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে ফিরে আসতে দেখল মোমো চা নিয়ে দাঁড়িয়ে, হাতের থেকে চায়ের কাপ নিতে মোমো বলল,আমরা নটার সময় বেরোব।
একবার ভাবে বলে,আমি একাই যেতে পারব তোমার কলেজ আছে কিন্তু মুখের চেহারা দেখে সুখর সেকথা বলতে ভরসা হল না।মনে মনে ভাবে এখান থেকে বেরোতে পারলে বাচা যায়। চা শেষ করে বারান্দায় গিয়ে দেখল মেলে দেওয়া জামা প্যাণ্ট নেই।রান্না ঘরে গিয়ে বলল,আমার জামা প্যাণ্ট?
আমার ঘরে খাটের উপর আছে।
মোমোর ঘরে ঢুকে সুখ অবাক বিছানার উপর পাট করে রাখা জামা প্যাণ্ট।খাটের উপর ইস্ত্রি করা জামা প্যাণ্টের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।হাতের তালুতে চোখ মুছে ভাবে এক দিন কে কোথায় হারিয়ে যাব জানি না কিন্তু যতদিন বাচবো মোমোকে ভুলতে পারবো না।জামা প্যাণ্ট নিয়ে লাইব্রেরী ঘরে ফিরে এল।আত্মীয় স্বজন হতে বিচ্ছিন্ন একাকী জীবন মোমোর জন্য কষ্ট হয়।ডমিনেটিং টাইপ চরিত্রের জন্য মোমোর এই অবস্থা।নিজে যা ভাল বুঝবে করবে।বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ওর ভিতরে চলছে কত ভাঙ্গাগড়া।সবদিক ভেবে সুখর মনে হয়েছে, মোমোকে মোটেই স্বার্থপর বলা চলে না।
সুখ মনে মনে ভেবে নেয় হাসপাতালের কাজ মিটলে মেসে গিয়ে কাগজপত্র নিয়ে কলেজে যাবে।আজ আর সময় হবে না কাল যাবে প্লেজারে।একমাস হয়ে গেছে বেতনটা নিয়ে বলে আসবে আর কাজ করবে না।
খেতে এসো।
খেতে দিয়েছে সুখ উঠে ডাইনিং টেবিলে বসল।কেউ কোনো কথা বলে না চুপচাপ খেতে থাকে।মোমো এরকম কেন করছে বুঝতে পারে না।মোমোর রান্নার হাত ভালো। মায়ের কথা মনে পড়ল।মায়ের রান্নার সকলে প্রশংসা করতো। আবার সেই পুতুলদির হাতের রান্না খেতে হবে ভেবে মনে মনে হাসে সুখ।ফোন বাজতে দীপশিখা কানে লাগিয়ে বললেন,দশ মিনিট।ফোন রেখে বললেন,তাড়াতাড়ি খেয়ে জামা প্যাণ্ট পরে রেডি হয়ে নেও।
এমন গম্ভীর শীতল কণ্ঠস্বর সুখ কোনো কথা না বলে খেয়ে মুখ ধুয়ে জামা প্যাণ্ট পরতে থাকে।মোমোর দেরী হয় না,সাধারণ মেয়েদের মতো সাজগোজের বাতিক নেই।তাতেই তাকে সুন্দর লাগে।দুজনে নীচে নেমে আসতে সুখ দেখল একটা সাদা রঙের গাড়ী দাড়িয়ে।বুঝতে পারে মোমো গাড়ী ভাড়া করেছে।
গাড়িতে উঠে দীপশিখা বললেন,ন্যাশনাল।
মোমো কথা বলছে না সুখও উল্টোদিকের জানলা ঘেষে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।কাছেই হাসপাতাল গাড়ী থামতে ওরা নেমে ভিতরে চলে গেল। মোমো কথা বলছে না সুখও উল্টোদিকের জানলা ঘেষে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।কাছেই হাসপাতাল গাড়ী থামতে ওরা নেমে ভিতরে চলে গেল।
ভিতরে গিয়ে কাগজ প্ত্র জমা দিতে বাইরে অপেক্ষা করতে বলল।অনেকেই অপেক্ষা করছে।ফাকা জায়গা দেখে ওরা বসল।একজন ঢুকছে প্রায় পনেরো-কুড়ি মিনিট পর বের হচ্ছে ।দীপশিখার কেমন গা গোলাতে থাকে।উঠে বাইরে বেরিয়ে এসে ভাবলেন একটা কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়ার কথা।হাটতে হাটতে রাস্তায় চলে এলেন।মিনিট তিন দূরে একটা দোকান নজরে পড়ল। দোকানে গিয়ে একটা কোল্ড ড্রিঙ্কস নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পান করলেন।একটা বড় ঢেকুর বেরিয়ে এল।ঘড়ি দেখলেন দশটা বাজে প্রায়।আবার হাসপাতালের দিকে হাটতে থাকেন।নটা নাগাদ বেরিয়েছেন প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গেল।সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে দেখল মনু নেই।তাহলে কি ভিতরে গেছে?দীপশিখা একটা চেয়ারে বসলেন।
উপুড় করে শুইয়ে একজন নার্স ব্যাণ্ডেজ কেটে দিয়ে ক্ষতস্থান এবং চারপাশ স্পিরিট দিয়ে মুছে দিল।দুই-একবার টিপে জিজ্ঞেস করল ব্যথা আছে কিনা। একটা অয়েনমেণ্ট লিখে দিল ক্ষতস্থানে লাগাবার জন্য।সপ্তা খানেক সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়ে সুখকে ছেড়ে দিল।সুখ উঠে বসল,পিঠে হাত বুলিয়ে বেশ হালকা লাগে।বাইরে বেরিয়ে এক কোনে বসে থাকা মোমোকে দেখে অবাক হয়।মোমো তাহলে চলে যায়নি?তাকে দেখে উঠে দাড়িয়েছে।সুখ জামা তুলে দেখালো।দীপশিখা মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।মনুটা একেবারে ছেলে মানুষ।বাইরে বেরিয়ে এলেন।
সুখও বেরিয়ে কাছে গিয়ে বলল,মোমো তুমি যাওনি?খালি খালি তোমার কলেজ কামাই হয়ে গেল।
দীপশিখা একবার তাকিয়ে বললেন,নীচে চলো।কোনো অসুবিধে হচ্ছে নাতো?
না না একেবারে ফিট।
দীপশিখা নামতে থাকেন সঙ্গে সুখ।বুঝতে পারে তাকে মেস পর্যন্ত পৌছে দেবে।নীচে নেমে ওরা গাড়ীতে উঠে বসতে গাড়ী ছেড়ে দিল।গাড়ী মৌলালী পৌছে যখন ধর্মতলায় ঢুকছে সুখ বলল,এদিকে কোথায়?
আজ তোমার রেজাল্ট বেরিয়েছে না?
সুখ বুঝতে পারে কলেজে যাচ্ছে কিন্তু কাগজপত্তর তো সব মেসেই পড়ে আছে।সুখ বলল,কিন্তু এ্যাডমিট কার্ড তো মেসে।
মেস কোথায়?
হ্যারিসন রোডে গ্রেস সিনেমার কাছে।
ধর্মতলার মোড়ে গিয়ে সেন্ট্রাল এ্যাভিনিউ ধরবেন।
সুখ ধন্দ্বে পড়ে যায় মোমো কি করতে চাইছে।খুলে বলছে না কিছুই,খুলে বললে কি হয়েছে।তার জন্য কলেজ কামাই করল সুখ সেজন্য কঠোর হতে পারেনা।
গ্রেস সিনেমার কাছে গাড়ী দাড়াতে মোমো নেমে পড়ল।সুখ নামতে দিপশিখা বললেন,মেসে তোমার যা আছে সব নিয়ে এসো।
সুখর ধৈর্যচ্যুতি ঘটে বলল,তুমি এমনভাবে অর্ডার করছো যেন দিদিমণি।আমি কি তোমার ছাত্র?
বলে আসবে মেসে আর আসবে না।
সুখ অসহায় বোধ করে অথচ মুখের উপর কিছু বলতেও পারে না।রাস্তা পার হয়ে মেসে ঢুকে গেল। মনু চলে যেতে দীপশিখা গাড়িতে উঠে বসলেন।কোথায় ঢুকলো দেখলেন।মনে হচ্ছে মনু পরীক্ষা দিয়েছে কথাটা মিথ্যে নয়।তাহলে এইসব করতো কেন?ওর চোখে লালসা নজরে পড়েনি যত জানছেন অবাক হচ্ছেন।ফেরার পথে কয়েক প্রস্থ জামা প্যাণ্ট কিনে দেবেন।বলছে পাস করবেই।এত দেরী করছে কেন?অনেক মালপত্তর আছে নাকি ডিকিতে ধরবে তো?
একবার মনে হল অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যাবার রাস্তা নেই তো?একবার নেমে দেখার কথা মনে হল।নজরে পড়ল একটা তোবড়ানো স্যুটকেশ হাতে ঝুলিয়ে আসছে মনু।মিথ্যে সন্দেহ করছিলেন।
এতদেরী হল?
স্যুটকেশ ভিতরে ঢুকিয়ে পায়ের কাছে রাখতে রাখতে বলল,ছাড়তে চাইছিল না।অনেক উল্টোপাল্টা বলে আসতে হয়েছে।দীপশিখা দেখলেন বাড়ীটার দরজায় মোটামত একজন মহিলা দাঁড়িয়ে এদিকে লক্ষ্য করছে।দীপশিখা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেন,ওই মহিলা কে?
উনিই তো মিস শেখোয়াত।
কলেজের সামনে গাড়ী দাড়াতে সুখ নেমে ঢুকে গেল।দীপশিখা স্যুটকেশটা কোলে তুলে খুললেন।কয়েকটা জামা প্যাণ্ট টুথ ব্রাশ আয়না চিরুণী তার মাঝে একটা ফাইল।ফাইলটা খুলে চোখ বোলাতে থাকেন।কলেজ ফাইন্যাল উচ্চ মাধ্যমিকের এ্যাডমিট কার্ড রেজাল্ট সব সাজানো।রেজাল্ট দেখে বিস্ময়ের ঘোর কাটেনা।দীপশিখা ছাত্রী হিসেবে ভাল ছিলেন কিন্তু তারও রেজাল্ট এত ভালো হয় নি।ছাত্রী পড়ানো কাজ মানুষ চিনতে পারার অহঙ্কার চুরচুর ভেঙ্গে পড়ল।এতদিন মনুর সম্পর্কে কিইনা ভেবেছেন মনে করে লজ্জিত বোধ করেন।পাস করবেই এত নিশ্চিত কিভাবে হল বুঝতে পারেন।
চারপাশে তাকিয়ে হারিয়ে যান অতীতে।দীপশিখা স্কটিশে পড়তেন তারপর কলকাতা ইউনিভার্সিটি তখন এই কফি হাউসে কত আড্ডা দিয়েছেন। সেইদিনগুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে।ইশারা ইঙ্গিত কম পান নি কিন্তু অহঙ্কারের জন্য বেশীদূর গড়াতে পারেনি।সেদিন কিছু একটা হলে হয়তো জীবনের গতিপথ বদলে যেতো।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাথ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে হাটতে থাকেন।