25-01-2023, 09:50 PM
মেম্বার সাব , এমনে চললে তো হইবো না , শরিল এর যত্ন নিতে হইবো …… দিন সাতেক হচ্ছে শরীর ভালো যাচ্ছে না মজিদ মিয়াঁর। প্রায় তিন বছর জেল খেটে ফেরার পর থেকে প্রায় অসুস্থ থাকছে । ডাক্তার এসে বার বার বলে যাচ্ছে ঢাকা গিয়ে বড় হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে । কিন্তু মজিদ মিয়াঁ যেতে রাজি নয় । বলে যা হবার এখানেই হবে । পাঁচ বছর আগে নির্বাচনে হারার পর থেকে মজিদ মিয়াঁ আর আগের মত নেই । এখনো মানুষজন তাকে মেম্বার সাব বলে ঠিক । কিন্তু সে এখন তাও নয় । নির্বাচনে হারের পর ধিরে ধিরে আশেপাশে থাকা লোকজন কেটে পড়েছে । কেউ আগের মত পাত্তা দেয় না , বিচার সালিস নিয়ে আসে না ।
সম্পদ আর জমিজমাও আগের মত নেই । অনেক সম্পদ জবরদখল হয়ে গেছে । যা টুকটাক আছে তা দিয়ে যদিও সচ্ছল ভাবে চলে যাচ্ছে , কিন্তু মজিদ মিয়াঁর অহঙ্কারে খুব বড় আঘাত লেগেছে । তার জমি অন্যে ভোগ দখল করছে এটা সে মেনে নিতে পারেনি । সেখান থেকে তৈরি হয়েছিলো ঝগড়া , সেই ঝগরা থেকে মারপিট । আর সেই মারপিট এর আসামি হয়ে জেলে যেতে হয়েছে । যদিও মামলা টেকেনি, কিন্তু তিন বছর বিনা দোষে জেলে থাকতে হয়েছে ।
শইলের যত্ন কইরা আর কি হইবো ডাক্তার সাব , মনঃটাই তো মইরা গেসে …… এই বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মজিদ মিয়াঁ।
আব্বা এমুন কথা কইয়েন না , পাশ থেকে বলে ওঠে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে । মজিদ মিয়াঁ মেয়ের দিকে একবার তাকায়, ছয় বছরের ছেলে সাথে নিয়ে বিছানার পাশে দাড়িয়ে মেয়েটি। তবে বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না, চোখ ফিরিয়ে নিতে হয় । আজকাল মেয়ের দিকে তাকালে বুকে কয়েক টন ওজনের চাপ অনুভব করে মজিদ মিয়াঁ । কেমন ছিলো আর কেমন হয়ে গেছে এক মাত্র মেয়ে তার । মুখের দিকে তাকানো যায় না । এক সময় যে মুখের দিকে তাকালে মজিদ মিয়াঁ স্বর্গীয় প্রসান্তি পেত , আজ সে মুখ শুকিয়ে মলিন হয়ে গেছে । মাস তিনেক হলো মজিদ মিয়াঁর মেয়ে তার বাড়িতেই আছে । তালাক হয়ে গেছে জামাই এর সাথে।
মজিদ মিয়াঁ যতটুকু সম্ভব মেয়েকে জিজ্ঞাস করেছিলো , কি হয়েছে , কেনো তালাক হলো । কিন্তু মেয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারে না । মেয়ের মা ও জীবিত নেই যে দুটো কথা মেয়ের পেট থেকে বের করে আনবে । আর বাপ হয়ে মেয়ের সাথে কতটুকুই বাঁ ফ্রি হতে পারে মজিদ মিয়াঁ । তবুও লজ্জা সরম এর বালাই খেয়ে জিজ্ঞাস করেছিলো মেয়ে ভুল চুক কিছু করেছে কিনা । কিন্তু তাও নাকি মেয়ে করেনি । তাহলে তালাক কেনো হলো এটাই ভেবে পায়না মজিদ মিয়াঁ । ভালোই তো ছিলো দুজনে , হ্যাঁ গোপনে খবর পেয়েছিলো যে জামাই নাকি নেশা ভাং ধরেছে , অসৎ পাল্লায় পড়েছে । এবং এর পেছনে নাকি চেয়ারম্যানের হাত আছে ।
জমি সম্পদ নিয়ে দুঃখ মজিদ মিয়াঁর আছে , কিন্তু সবচেয়ে বড় দুঃখ এই তালাক প্রাপ্ত মেয়ে । ছয় বছরের পুত্র সন্তান নিয়ে এখন এই মেয়ের কি গতি হবে উপরওয়ালা ছাড়া কেউ বলতে পারে না ।
<><>
মাস খানেক হচ্ছে জামাইটা আবার মজিদ মিয়াঁর বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করছে । তাকানো যায় না ছেলেটার দিকে , রাজপুত্রের মত ছিলো দেখতে । মজিদ মিয়াঁ নিজের শ্যামলা মেয়ের জন্য রাজপুত্রের মত ছেলে খুঁজে বিয়ে দিয়েছিলেন । এখন এই ছেলেকে দেখলে কেউ আগের রুপ কল্পনাও করতে পারবে না ।
প্রথম প্রথম কয়দিন মজিদ মিয়াঁর রাগ হতো , তারপর ধিরে ধিরে রাগ কমে । বাস্তবতা মজিদ মিয়াঁকে রাগ কমাতে বাধ্য করে । এতো বড় ছেলে সন্তান সহ এই মেয়েকে আর কে বিয়ে করবে ? যদি জামাই আবার মেয়েকে নিতে চায় তাহলে ঝামেলা মিটে যায়। ভালো হোক মন্দ হোক , মেয়েদের স্বামী হচ্ছে মেয়েদের ঢালের মত । এই ঢাল না থাকলে মেয়েরা শেয়াল শকুন এর শিকারে পরিনত হয় ।
মজিদ মিয়াঁ ভাবে , তিনি আর কতদিন বেঁচে থাকবেন । একদিন না একদিন তাকে যেতে হবে । তখন তো আর মেয়েটাকে বে আব্রু রেখে যাওয়া যাবে না । একদিন দূর থেকে ডাক দেয় জামাই কে । প্রথমে ভয়ে পালাতে চেষ্টা করে জামাই , কিন্তু মজিদ মিয়াঁর অভয়ে মাথা নিচু করে সামনে এসে দাড়ায় ।
কামটা ক্যান করসিলা ? কাঁপা গলায় জিজ্ঞাস করে মজিদ মিয়াঁ ।
জামাই কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকে । ওই মিয়াঁ কথা কও না ক্যান …… খেঁকিয়ে ওঠে মজিদ মিয়াঁ । অনেক ধৈর্য নিয়ে নিজেকে শান্ত রেখেছে সে ।
ভুল হইয়া গেসে আব্বা , মিন মিন করে বলে ।
কিয়ের ভুল , আমার মাইয়ার জীবন টা নষ্ট কইরা দিলা , তোমার কি আর একটা বিয়া করতে পারবা , আমার মাইয়ার কি হইবো। কাতর স্বরে বলে মজিদ মিয়াঁ এবার ।
আব্বা আমারে আর একবার সুজুগ দেন আব্বা ,আমি ওরে আবার ঘরে নিবো … মেয়ের জামাই আবেগ প্রবন হয়ে ওঠে ।
সেদিন রাতে খাওয়ার সময় মজিদ মিয়াঁ মেয়ের সাথে কথা বলে , মারে মাইয়া মানুষের অনেক কিছু সহ্য করতে হয় , জামাই যদি তরে আবার ঘরে নিতে চায় , আমি কি কথা কমু ?
মজিদ মিয়াঁর মেয়ের আঙুল গুলি ভাত মাখতে মাখতে থেমে যায় , কিন্তু মুখে দিয়ে কথা বের হয় না, চুপ করে থাকে । ব্যাপারটা মজিদ মিয়াঁ সম্মতির লক্ষন হিসেবে নিয়ে নেয় । বলে তাইলে কাইল আইতে কই জামাই রে ?
কারে জামাই বলতেসেন আব্বা , সে কি আপনের জামাই আসে আর? এবার কথা বলে ওঠে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে ।
কি কস , জামাই থাকবো না ক্যান , রাগের মাথায় কইরা ফালাইসে । ব্যাটা মানুষ খারাপ পাল্লায় পরসিলো , রাগের মাথায় কইসে । আজকা আইসিলো আমার কাছে ।
আব্বা আপনে সব জানেন না , বলে আচলে মুখ ঢেকে কেঁদে ওঠে মেয়ে ।
সেটা দেখে মজিদ মিয়াঁ কিছুক্ষনের জন্য চুপ হয়ে যায় । প্লেটের ভাত নাড়াচাড়া করে । তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে … জানি রে মা সব জানি , এমনে এমনে তো আর চুল পাঁকে নাই …… ব্যাটা ছেলেরা এমন আরও কত কিছু করে , অগো সব দোষ দেখতে নাই রে মা , মাইয়া গো এইসব একটু আধটু সহ্য করতে হয় । এতো বড় একটা পোলা তোর , স্বামীর ঘর ছাড়া আর গতি আছে নি ।
ক্যান আব্বা আপনের এতো সম্পত্তি , এই দিয়া আমার আর আমার পোলার কি চলবো না ?
সেইটা চলবো রে মা , কিন্তু এই দুনিয়ায় মাইয়া মানুষের একা থাকতে নাই । স্বামী ছাড়া জেনানা হইলো খোলা মিষ্টির দোকান । আমি যতদিন আছি ভালো থাকবি কিন্তু আমি তো আর চিরদিন থাকুম নারে মা । স্বামীর আশ্রয় ছাড়া মাইয়া মানুষ দুনিয়ায় চলতে পারে না । আর রাগের মাথায় তালাক কইলেই কি তালাক হয় । পোলাটার দিকে একটু চাইয়া দেখ , বাপ ছাড়া মানুষ হইবো কেমনে ?
আমি আমার পোলারে মানুষ ঠিক করতে পারবো আব্বা , আপনে টেনশন কইরেন না , এখন খান চুপ কইরা ।
আগের দিন হলে হয়ত মজিদ মিয়াঁকে এভাবে কেউ ধমক দিতে পারত না । নিজের মেয়েও না , কিন্তু এখন আগের তেজ আর নাই । চুপ করে গেলো মজিদ মিয়াঁ , কিছুক্ষন প্লেটের ভাত নাড়াচাড়া করে উঠে গেলো । রাতে ভালো ঘুম হলো না মজিদ মিয়াঁর, পাশের ঘর থেকে মেয়ের মুখ গুজে কান্না করার শব্দ পেলেন ।
দিন দশেক চিন্তা করলেন মজিদ মিয়াঁ । অনেক ভেবে চিনতে বের করলেন এক বুদ্ধি । সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে তার কন্যা , এসব মেয়েরা স্বামী ছাড়া কিছুই বুঝে না । হয়ত এখন রেগে আছে , কিন্তু স্বামী সামনে এসে দারালে এদের রাগ বরফের মত গলে পানি হয়ে যাবে । যে চিন্তা সেই কাজ , জামাই কে এক দুপুরে বাড়িতে ডাকলেন ।
নির্ধারিত দিনের সকাল বেলা , এক বিশাল কাতল মাছ কিনে আনলেন মজিদ মিয়াঁ । এনে মেয়েকে ডাকলেন , কই রে মা , দেখ কি আনসি । সুন্দর কইরা পাকা , মাথাটা আলাদা রান্দবি ।
এইটা কি করসেন আব্বা , এতো বড় মাছ কে খাইবো , মোটে আমরা তিনজন মানুষ , মাছ তো নষ্ট হইবো । মেয়ে মাছ দেখে আঁতকে উঠলো ।
খাওয়ের মানুষের অভাব হইবো না মা , তুই আগে রান্না কর ।
দুপুরে জামাই নিয়ে হাজির মজিদ মিয়াঁ । মেয়ে জামাই কে দেখে কিছুক্ষন চুপ করে দাড়িয়ে থেকে , কিছু না বলে ভেতরে চলে যায় । লক্ষন মজিদ মিয়াঁর কাছে ভালো ঠেকে না । দুপুরে খাওয়ার সময় ও মেয়ে সামনে আসে না । মজিদ মিয়াঁ নাতি আর জামাই কে নিয়ে খায় । মাছের মাথা জামাই এর পাতে তুলে দেয় । অনেক জ্ঞান দেয় জামাই কে , ভবিষ্যতে যেন এমন না হয় সেই দিকে খেয়েল রাখতে বলে ।
খাওয়া শেষে মজিদ মিয়াঁ নাতিকে কাছে ডেকে নেয় । আর জামাই কে বলে মেয়ের মান ভাঙ্গাতে । মজিদ মিয়াঁ গোপনে জুম্মা ঘরের ইমাম এর কাছ থেকে খবর নিয়েছে । রাগের মাথায় তালাক নাকি তালাক না । তাই মেয়ে আর মেয়ের জামাই এক ঘরে একা থাকলে অসুবিধা নাই ।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল আসে , মজিদ মিয়াঁ নাতি কে নিয়ে ভাত ঘুম দিয়ে ওঠে । দেখে জামাই আর মেয়ে রান্না ঘরের দাওয়ায় বসে আছে , টুকটাক কথাও হচ্ছে দুজনার মাঝে । আনন্দে মজিদ মিয়াঁর এতদিন রোগে ভোগা শরীরে নতুন শক্তির সঞ্চার হয় ।
<><><>
সম্পদ আর জমিজমাও আগের মত নেই । অনেক সম্পদ জবরদখল হয়ে গেছে । যা টুকটাক আছে তা দিয়ে যদিও সচ্ছল ভাবে চলে যাচ্ছে , কিন্তু মজিদ মিয়াঁর অহঙ্কারে খুব বড় আঘাত লেগেছে । তার জমি অন্যে ভোগ দখল করছে এটা সে মেনে নিতে পারেনি । সেখান থেকে তৈরি হয়েছিলো ঝগড়া , সেই ঝগরা থেকে মারপিট । আর সেই মারপিট এর আসামি হয়ে জেলে যেতে হয়েছে । যদিও মামলা টেকেনি, কিন্তু তিন বছর বিনা দোষে জেলে থাকতে হয়েছে ।
শইলের যত্ন কইরা আর কি হইবো ডাক্তার সাব , মনঃটাই তো মইরা গেসে …… এই বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মজিদ মিয়াঁ।
আব্বা এমুন কথা কইয়েন না , পাশ থেকে বলে ওঠে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে । মজিদ মিয়াঁ মেয়ের দিকে একবার তাকায়, ছয় বছরের ছেলে সাথে নিয়ে বিছানার পাশে দাড়িয়ে মেয়েটি। তবে বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না, চোখ ফিরিয়ে নিতে হয় । আজকাল মেয়ের দিকে তাকালে বুকে কয়েক টন ওজনের চাপ অনুভব করে মজিদ মিয়াঁ । কেমন ছিলো আর কেমন হয়ে গেছে এক মাত্র মেয়ে তার । মুখের দিকে তাকানো যায় না । এক সময় যে মুখের দিকে তাকালে মজিদ মিয়াঁ স্বর্গীয় প্রসান্তি পেত , আজ সে মুখ শুকিয়ে মলিন হয়ে গেছে । মাস তিনেক হলো মজিদ মিয়াঁর মেয়ে তার বাড়িতেই আছে । তালাক হয়ে গেছে জামাই এর সাথে।
মজিদ মিয়াঁ যতটুকু সম্ভব মেয়েকে জিজ্ঞাস করেছিলো , কি হয়েছে , কেনো তালাক হলো । কিন্তু মেয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারে না । মেয়ের মা ও জীবিত নেই যে দুটো কথা মেয়ের পেট থেকে বের করে আনবে । আর বাপ হয়ে মেয়ের সাথে কতটুকুই বাঁ ফ্রি হতে পারে মজিদ মিয়াঁ । তবুও লজ্জা সরম এর বালাই খেয়ে জিজ্ঞাস করেছিলো মেয়ে ভুল চুক কিছু করেছে কিনা । কিন্তু তাও নাকি মেয়ে করেনি । তাহলে তালাক কেনো হলো এটাই ভেবে পায়না মজিদ মিয়াঁ । ভালোই তো ছিলো দুজনে , হ্যাঁ গোপনে খবর পেয়েছিলো যে জামাই নাকি নেশা ভাং ধরেছে , অসৎ পাল্লায় পড়েছে । এবং এর পেছনে নাকি চেয়ারম্যানের হাত আছে ।
জমি সম্পদ নিয়ে দুঃখ মজিদ মিয়াঁর আছে , কিন্তু সবচেয়ে বড় দুঃখ এই তালাক প্রাপ্ত মেয়ে । ছয় বছরের পুত্র সন্তান নিয়ে এখন এই মেয়ের কি গতি হবে উপরওয়ালা ছাড়া কেউ বলতে পারে না ।
<><>
মাস খানেক হচ্ছে জামাইটা আবার মজিদ মিয়াঁর বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করছে । তাকানো যায় না ছেলেটার দিকে , রাজপুত্রের মত ছিলো দেখতে । মজিদ মিয়াঁ নিজের শ্যামলা মেয়ের জন্য রাজপুত্রের মত ছেলে খুঁজে বিয়ে দিয়েছিলেন । এখন এই ছেলেকে দেখলে কেউ আগের রুপ কল্পনাও করতে পারবে না ।
প্রথম প্রথম কয়দিন মজিদ মিয়াঁর রাগ হতো , তারপর ধিরে ধিরে রাগ কমে । বাস্তবতা মজিদ মিয়াঁকে রাগ কমাতে বাধ্য করে । এতো বড় ছেলে সন্তান সহ এই মেয়েকে আর কে বিয়ে করবে ? যদি জামাই আবার মেয়েকে নিতে চায় তাহলে ঝামেলা মিটে যায়। ভালো হোক মন্দ হোক , মেয়েদের স্বামী হচ্ছে মেয়েদের ঢালের মত । এই ঢাল না থাকলে মেয়েরা শেয়াল শকুন এর শিকারে পরিনত হয় ।
মজিদ মিয়াঁ ভাবে , তিনি আর কতদিন বেঁচে থাকবেন । একদিন না একদিন তাকে যেতে হবে । তখন তো আর মেয়েটাকে বে আব্রু রেখে যাওয়া যাবে না । একদিন দূর থেকে ডাক দেয় জামাই কে । প্রথমে ভয়ে পালাতে চেষ্টা করে জামাই , কিন্তু মজিদ মিয়াঁর অভয়ে মাথা নিচু করে সামনে এসে দাড়ায় ।
কামটা ক্যান করসিলা ? কাঁপা গলায় জিজ্ঞাস করে মজিদ মিয়াঁ ।
জামাই কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকে । ওই মিয়াঁ কথা কও না ক্যান …… খেঁকিয়ে ওঠে মজিদ মিয়াঁ । অনেক ধৈর্য নিয়ে নিজেকে শান্ত রেখেছে সে ।
ভুল হইয়া গেসে আব্বা , মিন মিন করে বলে ।
কিয়ের ভুল , আমার মাইয়ার জীবন টা নষ্ট কইরা দিলা , তোমার কি আর একটা বিয়া করতে পারবা , আমার মাইয়ার কি হইবো। কাতর স্বরে বলে মজিদ মিয়াঁ এবার ।
আব্বা আমারে আর একবার সুজুগ দেন আব্বা ,আমি ওরে আবার ঘরে নিবো … মেয়ের জামাই আবেগ প্রবন হয়ে ওঠে ।
সেদিন রাতে খাওয়ার সময় মজিদ মিয়াঁ মেয়ের সাথে কথা বলে , মারে মাইয়া মানুষের অনেক কিছু সহ্য করতে হয় , জামাই যদি তরে আবার ঘরে নিতে চায় , আমি কি কথা কমু ?
মজিদ মিয়াঁর মেয়ের আঙুল গুলি ভাত মাখতে মাখতে থেমে যায় , কিন্তু মুখে দিয়ে কথা বের হয় না, চুপ করে থাকে । ব্যাপারটা মজিদ মিয়াঁ সম্মতির লক্ষন হিসেবে নিয়ে নেয় । বলে তাইলে কাইল আইতে কই জামাই রে ?
কারে জামাই বলতেসেন আব্বা , সে কি আপনের জামাই আসে আর? এবার কথা বলে ওঠে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে ।
কি কস , জামাই থাকবো না ক্যান , রাগের মাথায় কইরা ফালাইসে । ব্যাটা মানুষ খারাপ পাল্লায় পরসিলো , রাগের মাথায় কইসে । আজকা আইসিলো আমার কাছে ।
আব্বা আপনে সব জানেন না , বলে আচলে মুখ ঢেকে কেঁদে ওঠে মেয়ে ।
সেটা দেখে মজিদ মিয়াঁ কিছুক্ষনের জন্য চুপ হয়ে যায় । প্লেটের ভাত নাড়াচাড়া করে । তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে … জানি রে মা সব জানি , এমনে এমনে তো আর চুল পাঁকে নাই …… ব্যাটা ছেলেরা এমন আরও কত কিছু করে , অগো সব দোষ দেখতে নাই রে মা , মাইয়া গো এইসব একটু আধটু সহ্য করতে হয় । এতো বড় একটা পোলা তোর , স্বামীর ঘর ছাড়া আর গতি আছে নি ।
ক্যান আব্বা আপনের এতো সম্পত্তি , এই দিয়া আমার আর আমার পোলার কি চলবো না ?
সেইটা চলবো রে মা , কিন্তু এই দুনিয়ায় মাইয়া মানুষের একা থাকতে নাই । স্বামী ছাড়া জেনানা হইলো খোলা মিষ্টির দোকান । আমি যতদিন আছি ভালো থাকবি কিন্তু আমি তো আর চিরদিন থাকুম নারে মা । স্বামীর আশ্রয় ছাড়া মাইয়া মানুষ দুনিয়ায় চলতে পারে না । আর রাগের মাথায় তালাক কইলেই কি তালাক হয় । পোলাটার দিকে একটু চাইয়া দেখ , বাপ ছাড়া মানুষ হইবো কেমনে ?
আমি আমার পোলারে মানুষ ঠিক করতে পারবো আব্বা , আপনে টেনশন কইরেন না , এখন খান চুপ কইরা ।
আগের দিন হলে হয়ত মজিদ মিয়াঁকে এভাবে কেউ ধমক দিতে পারত না । নিজের মেয়েও না , কিন্তু এখন আগের তেজ আর নাই । চুপ করে গেলো মজিদ মিয়াঁ , কিছুক্ষন প্লেটের ভাত নাড়াচাড়া করে উঠে গেলো । রাতে ভালো ঘুম হলো না মজিদ মিয়াঁর, পাশের ঘর থেকে মেয়ের মুখ গুজে কান্না করার শব্দ পেলেন ।
দিন দশেক চিন্তা করলেন মজিদ মিয়াঁ । অনেক ভেবে চিনতে বের করলেন এক বুদ্ধি । সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে তার কন্যা , এসব মেয়েরা স্বামী ছাড়া কিছুই বুঝে না । হয়ত এখন রেগে আছে , কিন্তু স্বামী সামনে এসে দারালে এদের রাগ বরফের মত গলে পানি হয়ে যাবে । যে চিন্তা সেই কাজ , জামাই কে এক দুপুরে বাড়িতে ডাকলেন ।
নির্ধারিত দিনের সকাল বেলা , এক বিশাল কাতল মাছ কিনে আনলেন মজিদ মিয়াঁ । এনে মেয়েকে ডাকলেন , কই রে মা , দেখ কি আনসি । সুন্দর কইরা পাকা , মাথাটা আলাদা রান্দবি ।
এইটা কি করসেন আব্বা , এতো বড় মাছ কে খাইবো , মোটে আমরা তিনজন মানুষ , মাছ তো নষ্ট হইবো । মেয়ে মাছ দেখে আঁতকে উঠলো ।
খাওয়ের মানুষের অভাব হইবো না মা , তুই আগে রান্না কর ।
দুপুরে জামাই নিয়ে হাজির মজিদ মিয়াঁ । মেয়ে জামাই কে দেখে কিছুক্ষন চুপ করে দাড়িয়ে থেকে , কিছু না বলে ভেতরে চলে যায় । লক্ষন মজিদ মিয়াঁর কাছে ভালো ঠেকে না । দুপুরে খাওয়ার সময় ও মেয়ে সামনে আসে না । মজিদ মিয়াঁ নাতি আর জামাই কে নিয়ে খায় । মাছের মাথা জামাই এর পাতে তুলে দেয় । অনেক জ্ঞান দেয় জামাই কে , ভবিষ্যতে যেন এমন না হয় সেই দিকে খেয়েল রাখতে বলে ।
খাওয়া শেষে মজিদ মিয়াঁ নাতিকে কাছে ডেকে নেয় । আর জামাই কে বলে মেয়ের মান ভাঙ্গাতে । মজিদ মিয়াঁ গোপনে জুম্মা ঘরের ইমাম এর কাছ থেকে খবর নিয়েছে । রাগের মাথায় তালাক নাকি তালাক না । তাই মেয়ে আর মেয়ের জামাই এক ঘরে একা থাকলে অসুবিধা নাই ।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল আসে , মজিদ মিয়াঁ নাতি কে নিয়ে ভাত ঘুম দিয়ে ওঠে । দেখে জামাই আর মেয়ে রান্না ঘরের দাওয়ায় বসে আছে , টুকটাক কথাও হচ্ছে দুজনার মাঝে । আনন্দে মজিদ মিয়াঁর এতদিন রোগে ভোগা শরীরে নতুন শক্তির সঞ্চার হয় ।
<><><>