25-01-2023, 09:49 PM
মজিদ মিয়াঁর মেয়ে আর মেয়ের জামাই এসেছে নির্বাচন উপলক্ষে মজিদ মিয়াঁর বাড়ি । তাই কালাম জাউল্লা কে বলে দেয়া আছে বড় একটা কাতল মাছ যোগার করে রাখতে । একদম নদীর মাছ হতে হবে , এমনিতে মজিদ মিয়াঁ আজকাল বড় বড় মাছ প্রায় কিনছে । কিন্তু সেগুলোর কোনটাই নদীর মাছ নয় , চাষ করা মাছ । কিন্তু সরাকারি দলের হোমড়া চোমড়া দের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে বলে স্যার আপনার জন্য নদীর টাকটা মাছ পাঠিয়েছি । এতে কাজ হয় , একটা টাকার বান্ডেল এর চেয়ে একটি ডাউস সাইজের মাছ মানুষ কে খুশি করে বেশি । মজিদ মিয়াঁ এসব কাজে বেশ পটু , এমনি এমনি তো চুল পাকায় নি ।
তবে মেয়ের জামাই এর সাথে এসব করা যাবে না । এক মাত্র মেয়ের জামাই বলে কথা । তা ছাড়া ছেলেটা বড় মাছের মাথা পেলে খুশি হয় , মজা করে খায় । সেটা দেখে মজিদ মিয়াঁর ও মনটা খুশি হয় । এমনিতে খুব বড় লোক বাড়ির ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেয়নি মজিদ মিয়াঁ । টাকা পয়সা দিয়ে কি হবে , টাকা পয়সা দেদার আছে মজিদ মিয়াঁর কাছে । এক মাত্র মেয়ে জামাই নিয়ে সাড়া জীবন সুখে কাটাতে পারবে । এসব ভেবে মোটামুটি সচ্ছল পরিবারের শান্ত শিষ্ট ছেলে দেখে মেয়ে বিয়ে দিয়েছে । একদম হাভাতে পরিবারেও দেয় নি , ওদের স্বভাব ভালো হয় না ।
নির্বাচনের আর মাত্র তিনদিন , ব্যাস্ততা এরি মাঝে খুব বেড়ে গেছে , চারদিকে মিটিং মিছিল চলছে । চেয়ারম্যানের সাথে সমান টেক্কা দিচ্ছে মজিদ মিয়াঁ । দু হাতে টাকা ওড়াচ্ছে , কোন কার্পণ্য করছে না । এই যেমন এখন রাত সাড়ে আটটায় উঠানে বসে মিটিং চলছে । গ্রামের গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা এসেছে । এরা সবাই মজিদ মিয়াঁ কে সাপোর্ট দিচ্ছে ।
আউজকার খেইলটা সেইরম হইসে , খালু । অগো মিছিল আর আমাগো মিছিল একদম সামনা সামনি , হালায় কি কমু আমাগো চিল্লান এর সামনে অগো আওয়াজ ই হুনা যায় না । হের পর দিলাম দাবড়ানি , এক দাবড়ানিতে খাল পার । সব লুঙ্গি খুইল্লা খালে গিয়া পরসে হা হা হা …
কথা গুলো বলছে মজিদ মিয়াঁর শালির (বউয়ের ছোট বোন) ছেলে বজলু। গ্রামের ছেলে , থাকে ঢাকা । নির্বাচনে মজিদা মিয়াঁর হয়ে কাজ করতে এসেছে । এমনিতে কথা বেশি বললেও মটামুটি কাজের ছেলে । মিছিল মিটিং এসব বজলু ই দেখাশুনা করছে। মজিদ মিয়াঁ যদিও জানে লুঙ্গি খুলে খালে নামার কথাটা বানানো । কিন্তু ধাওয়া একটা করা হয়েছিলো চেয়ারম্যানের পার্টি কে , এটা সত্য কথা । থানা থেকে ফোন এসেছিলো মজিদ মিয়াঁর কাছে । ওসি সাহেব কে এর জন্য হাজার দশেক টাকা পাঠাতে হয়েছে। অবশ্য টাকা জাওয়াতে মজিদ একটুও মন খারাপ করেনি , বরং খুশি হয়েছে ।
তয় মজিদ ভাই আপনের মার্কা টা কিন্তু সেইরাম হইসে , একদম বাঘ মার্কা । আর কামেও এপনে বাঘের লাহান ই । কলিম শেখ সাইড থেকে বলে । মজিদ মিয়া শুনে খুশি হয় । বলে তা আর কইসো মিয়া , মার্কা দিয়াই তো ওরে শেষ কইরা দিলাম , ওর হইলো হরিন আর আমার বাঘ , হরিন কি কোনদিন বাঘের লগে পারে হা হা হা … হালকা আলাপ চারিতায় মজিদ মিয়াঁ নিজেও অংশ গ্রহন করে । প্রথম প্রথম মনে একটু ভয় থাকলেও এখন আর ভয় পায় না । বরং নতুন এক ক্ষমতার স্বাদ অনুভব করে ।
আলোচনা চলতে থাকে লম্বা সময় ধরে , প্রায় সবাই মজিদ মিয়াঁর গুণগান করে নানা পন্থায় । ব্যাপক আমোদ হয় মজিদ মিয়াঁর, নিজের অতীত মনে পরে যায় । এক সময় কি ছিলো আর এখন কি হয়েছে । ছোট বেলায় বাবা মা মারা গিয়েছিলো নৌকা ডুবিতে। এর পর আশ্রয় হয় তখনকার চেয়ারম্যানের বাড়ি । টুকটাক ফুট ফরমায়েয়েশ খাটতো সে , এর চড় ওর লাথি সহ্য করতে হতো ছোট্ট ছোট্ট ভুলের জন্য ।
এর পর ঘটে এক ঘটনা , এক সালিস থেকে ফিরছিলো তখনকার চেয়ারম্যান, সাথে মজিদ মিয়াঁ । ততদিনে মজিদ মিয়াঁ একটু বড় হয়েছে । ২০ বছরের তাগড়া জোয়ান সে । রাতের বেলা শর্টকাট রাস্তা হিসেবে জমির আইল ধরে হাটছিলো মজিদ মিয়াঁ আর চেয়ারম্যান । মজিদ মিয়াঁর হাতে টর্চ আর বগলে ছাতা । হঠাত করেই আক্রান্ত হয় ওরা , বেশি লোক ছিলো না জনা তিনেক , অর্ধ উলঙ্গ মানুষ পড়নে সুধু লুঙ্গি , তাও কাছা দেয়া । নিজের জানের তোয়াক্কা করেনি মজিদ মিয়াঁ ,ঝাপিয়ে পরেছিলো । না চেয়ারম্যান কে রক্ষা করার কোন তাগিদ অনুভব করেনি মজিদ মিয়াঁ সেদিন । বরং নিজের ভেতর থেকে এক প্রচণ্ড রাগ উঠে এসেছিলো কেনো জানি । হাতের টর্চ দিয়ে ঘায়েল করে তিন হামলা কারিকে । তিনজন যখন পালিয়ে যায় তখন দেখতে পায় থরথর করে কাঁপছে চেয়ারম্যান । তখন চেয়ারম্যান ও খুব বয়সী না ৪০ এর মত হবে বয়স । সেই থেকে মজিদ মিয়াঁ হয়ে যায় চেয়ারম্যানের সবচেয়ে কাছের মানুষ । আর সেই সুবাদে সকল কুকর্মের সাক্ষি । সরকারি টাকা চুরি ছাড়াও প্রাক্তন চেয়ারম্যানের মেয়ে ঘটিত দুর্বলতা ছিলো । আর সেই খায়েস পুরন করতে সাহায্য করতো মজিদ মিয়াঁ ।
এর পর অবশ্য মজিদ মিয়াকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । ধিরে ধিরে বিপুল সম্পদ এর মালিক হয়েছে , নিজে ইউ পি মেম্বার হয়েছে । বিয়ে থা করেছে বড় গেরস্থ বাড়িতে । আর এখন চেয়ারম্যান হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাড়িয়ে । ভাবতে ভাবতে গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে মজিদ মিয়াঁর । কি একটা জীবন পার করেছে সে । ধ্যান মগ্ন হয়ে ভাবছিলো মজিদ মিয়াঁ আসে পাশের লোকদের কথা কানে আসছিলো না এতক্ষন । হঠাত কে জেনো ডেকে ওঠে দাদা… ও দাদা …
ধ্যান ভঙ্গ হয় মজিদ মিয়াঁর , সমবেত সবাই হাসছে কি যেন একটা হাসির কথা বলেছে বজলু । মজিদ মিয়াঁ পাশে তাকায় দেখে মজনু দাড়িয়ে , উদলা গায়ে নিজের বিশাল ভুরি বের করে ।
কি হইসে… খেঁকিয়ে জিজ্ঞাস করে মজিদ মিয়াঁ । ফুপু ডাকে আপনেরে , হেরা খাইতে বইসে , আপনেরে ছাড়া খাইবো না।
এই ফুপু হচ্ছে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে । বছর দুয়েক আগে যার বিয়ে হয়েছিলো । মেয়েটা বিয়ের পর একটু সাহসি হয়ে উঠছে । আগে বাবার সামনে কথা বলতে ভয় পেত । এখন প্রায়ই হুকুম জারি করে । মজিদ মিয়াঁ অবশ্য এতে আমোদ পায় । বিয়ের আগে মেয়েকে কড়া শাসনে রাখলেও এখন আর শাসন করার কিছু নেই । এখন মেয়ে স্বামীর দায়িত্বে আছে , বাবা হিসেবে সে যতদিন দায়িত্ব পালন করার করে দিয়েছে । তাই এখন বাবা কে ভয় পাওয়ার কিছু নেই , এখন ভয় পাবে স্বামী কে , আর মর্জি করবে বাবার সাথে , এটাই দুনিয়ার নিয়ম । মজিদ মিয়াও মেয়েকে লাই দেয় আজকাল । এই যেমন এখন মিটিং ভেঙ্গে দিয়ে মজনুর পেছন পেছন হাঁটা দেয় । মেয়ে আর জামাই এর সাথে নৈশ ভোজে অংশ গ্রহন করার জন্য ।
জামাইয়ের পাতে বড় কাতল মাছের মাথা দেয়া হয়েছে , মজিদ মিয়াঁ সন্তুষ্ট হয় সাইজ দেখে । তারচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট হয় জামাই আর মেয়ের মুখের খুশির ঝলকানি দেখে । যদিও জামাই বার বার বলছে মাথাটা জেনো মজিদ মিয়াঁর পাতে দেয়া হয় । কিন্তু সেটা হবার নয় , মেয়ে বলে আহা খান না আপনে , আব্বা এতো সখ কইরা আনসে আপনের লইগা ।
মজিদ মিয়াঁ আজকাল খুব বেশি খায় না , পেটে সহ্য হয় না । তাই নিজে অল্প ভাত নিয়ে , বসে বসে মেয়ে আর মেয়ের জামাই এর খাওয়া দেখে । জামাই মজা করে কাতল মাছের মাথা খাচ্ছে , তা দেখে মেয়ে খুশি হচ্ছে । আর ওদের আনন্দ দেখে মজিদ মিয়াঁর আনন্দ হচ্ছে ।
আব্বা আপনে এইটুক ভাত নিলেন ? হঠাত প্রশ্ন করে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে । আরও ভাত নেন , আর মাছ নেন আরেক টুকরা, মাছটা যা স্বাদ আর কি তেল । মজিদ মিয়াঁর পাতে ভাত দেয়ার জন্য এগিয়ে আসে মেয়ে ।
প্রতিবাদ করে মজিদ মিয়াঁ , আরে না না , জামাই রে আর এক টুকরা দে , একদম টাটকা মাছ , পাক্কা সাত কেজি ওজন ।
জামাইকে জোড় করে আরও এক টুকরা মাছ দেয়া হয় ।
আব্বা পরশু আপনেই জিতবেন , দেইখেন । মেয়ে খেতে খেতে বলে আবার ।
তাই নাকিরে মা? তুই এতো নিশ্চিন্ত হইলি কেমনে রে , তুই কি নির্বাচন কমসন এর লোক নি রে হা হা হা …… আজকাল মজিদ মিয়াঁ মেয়ের সাথে হালকা মশকরা ও করে ।
না আব্বা , আমি স্বপন দেখসি , দেইখেন আপনেই জিতবেন , আর আমি হমু চেয়ারম্যানের মাইয়া হি হি হি ……
মজিদ মিয়াঁর খুব আমোদ হয় , এই দিকটা ভাবেনি মজিদ মিয়াঁ । সুধু নিজে চেয়ারম্যান হবে এটাই ভেবেছিলো সে , কিন্তু তার আশেপাশের মানুষ গুলির ও যে পদোন্নতি হবে সেটা এতদিন ভেবে দেখেনি । তার মেয়ে হবে চেয়ারম্যানের মেয়ে , তার বউ হবে চেয়ারম্যানের বউ , মজনু হবে চেয়ারম্যানের চাকর … ভাবতে ভাবতে মুচকি হেসে ফেলে মজিদ মিয়াঁ ।
<><><>
তবে মেয়ের জামাই এর সাথে এসব করা যাবে না । এক মাত্র মেয়ের জামাই বলে কথা । তা ছাড়া ছেলেটা বড় মাছের মাথা পেলে খুশি হয় , মজা করে খায় । সেটা দেখে মজিদ মিয়াঁর ও মনটা খুশি হয় । এমনিতে খুব বড় লোক বাড়ির ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেয়নি মজিদ মিয়াঁ । টাকা পয়সা দিয়ে কি হবে , টাকা পয়সা দেদার আছে মজিদ মিয়াঁর কাছে । এক মাত্র মেয়ে জামাই নিয়ে সাড়া জীবন সুখে কাটাতে পারবে । এসব ভেবে মোটামুটি সচ্ছল পরিবারের শান্ত শিষ্ট ছেলে দেখে মেয়ে বিয়ে দিয়েছে । একদম হাভাতে পরিবারেও দেয় নি , ওদের স্বভাব ভালো হয় না ।
নির্বাচনের আর মাত্র তিনদিন , ব্যাস্ততা এরি মাঝে খুব বেড়ে গেছে , চারদিকে মিটিং মিছিল চলছে । চেয়ারম্যানের সাথে সমান টেক্কা দিচ্ছে মজিদ মিয়াঁ । দু হাতে টাকা ওড়াচ্ছে , কোন কার্পণ্য করছে না । এই যেমন এখন রাত সাড়ে আটটায় উঠানে বসে মিটিং চলছে । গ্রামের গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা এসেছে । এরা সবাই মজিদ মিয়াঁ কে সাপোর্ট দিচ্ছে ।
আউজকার খেইলটা সেইরম হইসে , খালু । অগো মিছিল আর আমাগো মিছিল একদম সামনা সামনি , হালায় কি কমু আমাগো চিল্লান এর সামনে অগো আওয়াজ ই হুনা যায় না । হের পর দিলাম দাবড়ানি , এক দাবড়ানিতে খাল পার । সব লুঙ্গি খুইল্লা খালে গিয়া পরসে হা হা হা …
কথা গুলো বলছে মজিদ মিয়াঁর শালির (বউয়ের ছোট বোন) ছেলে বজলু। গ্রামের ছেলে , থাকে ঢাকা । নির্বাচনে মজিদা মিয়াঁর হয়ে কাজ করতে এসেছে । এমনিতে কথা বেশি বললেও মটামুটি কাজের ছেলে । মিছিল মিটিং এসব বজলু ই দেখাশুনা করছে। মজিদ মিয়াঁ যদিও জানে লুঙ্গি খুলে খালে নামার কথাটা বানানো । কিন্তু ধাওয়া একটা করা হয়েছিলো চেয়ারম্যানের পার্টি কে , এটা সত্য কথা । থানা থেকে ফোন এসেছিলো মজিদ মিয়াঁর কাছে । ওসি সাহেব কে এর জন্য হাজার দশেক টাকা পাঠাতে হয়েছে। অবশ্য টাকা জাওয়াতে মজিদ একটুও মন খারাপ করেনি , বরং খুশি হয়েছে ।
তয় মজিদ ভাই আপনের মার্কা টা কিন্তু সেইরাম হইসে , একদম বাঘ মার্কা । আর কামেও এপনে বাঘের লাহান ই । কলিম শেখ সাইড থেকে বলে । মজিদ মিয়া শুনে খুশি হয় । বলে তা আর কইসো মিয়া , মার্কা দিয়াই তো ওরে শেষ কইরা দিলাম , ওর হইলো হরিন আর আমার বাঘ , হরিন কি কোনদিন বাঘের লগে পারে হা হা হা … হালকা আলাপ চারিতায় মজিদ মিয়াঁ নিজেও অংশ গ্রহন করে । প্রথম প্রথম মনে একটু ভয় থাকলেও এখন আর ভয় পায় না । বরং নতুন এক ক্ষমতার স্বাদ অনুভব করে ।
আলোচনা চলতে থাকে লম্বা সময় ধরে , প্রায় সবাই মজিদ মিয়াঁর গুণগান করে নানা পন্থায় । ব্যাপক আমোদ হয় মজিদ মিয়াঁর, নিজের অতীত মনে পরে যায় । এক সময় কি ছিলো আর এখন কি হয়েছে । ছোট বেলায় বাবা মা মারা গিয়েছিলো নৌকা ডুবিতে। এর পর আশ্রয় হয় তখনকার চেয়ারম্যানের বাড়ি । টুকটাক ফুট ফরমায়েয়েশ খাটতো সে , এর চড় ওর লাথি সহ্য করতে হতো ছোট্ট ছোট্ট ভুলের জন্য ।
এর পর ঘটে এক ঘটনা , এক সালিস থেকে ফিরছিলো তখনকার চেয়ারম্যান, সাথে মজিদ মিয়াঁ । ততদিনে মজিদ মিয়াঁ একটু বড় হয়েছে । ২০ বছরের তাগড়া জোয়ান সে । রাতের বেলা শর্টকাট রাস্তা হিসেবে জমির আইল ধরে হাটছিলো মজিদ মিয়াঁ আর চেয়ারম্যান । মজিদ মিয়াঁর হাতে টর্চ আর বগলে ছাতা । হঠাত করেই আক্রান্ত হয় ওরা , বেশি লোক ছিলো না জনা তিনেক , অর্ধ উলঙ্গ মানুষ পড়নে সুধু লুঙ্গি , তাও কাছা দেয়া । নিজের জানের তোয়াক্কা করেনি মজিদ মিয়াঁ ,ঝাপিয়ে পরেছিলো । না চেয়ারম্যান কে রক্ষা করার কোন তাগিদ অনুভব করেনি মজিদ মিয়াঁ সেদিন । বরং নিজের ভেতর থেকে এক প্রচণ্ড রাগ উঠে এসেছিলো কেনো জানি । হাতের টর্চ দিয়ে ঘায়েল করে তিন হামলা কারিকে । তিনজন যখন পালিয়ে যায় তখন দেখতে পায় থরথর করে কাঁপছে চেয়ারম্যান । তখন চেয়ারম্যান ও খুব বয়সী না ৪০ এর মত হবে বয়স । সেই থেকে মজিদ মিয়াঁ হয়ে যায় চেয়ারম্যানের সবচেয়ে কাছের মানুষ । আর সেই সুবাদে সকল কুকর্মের সাক্ষি । সরকারি টাকা চুরি ছাড়াও প্রাক্তন চেয়ারম্যানের মেয়ে ঘটিত দুর্বলতা ছিলো । আর সেই খায়েস পুরন করতে সাহায্য করতো মজিদ মিয়াঁ ।
এর পর অবশ্য মজিদ মিয়াকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । ধিরে ধিরে বিপুল সম্পদ এর মালিক হয়েছে , নিজে ইউ পি মেম্বার হয়েছে । বিয়ে থা করেছে বড় গেরস্থ বাড়িতে । আর এখন চেয়ারম্যান হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাড়িয়ে । ভাবতে ভাবতে গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে মজিদ মিয়াঁর । কি একটা জীবন পার করেছে সে । ধ্যান মগ্ন হয়ে ভাবছিলো মজিদ মিয়াঁ আসে পাশের লোকদের কথা কানে আসছিলো না এতক্ষন । হঠাত কে জেনো ডেকে ওঠে দাদা… ও দাদা …
ধ্যান ভঙ্গ হয় মজিদ মিয়াঁর , সমবেত সবাই হাসছে কি যেন একটা হাসির কথা বলেছে বজলু । মজিদ মিয়াঁ পাশে তাকায় দেখে মজনু দাড়িয়ে , উদলা গায়ে নিজের বিশাল ভুরি বের করে ।
কি হইসে… খেঁকিয়ে জিজ্ঞাস করে মজিদ মিয়াঁ । ফুপু ডাকে আপনেরে , হেরা খাইতে বইসে , আপনেরে ছাড়া খাইবো না।
এই ফুপু হচ্ছে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে । বছর দুয়েক আগে যার বিয়ে হয়েছিলো । মেয়েটা বিয়ের পর একটু সাহসি হয়ে উঠছে । আগে বাবার সামনে কথা বলতে ভয় পেত । এখন প্রায়ই হুকুম জারি করে । মজিদ মিয়াঁ অবশ্য এতে আমোদ পায় । বিয়ের আগে মেয়েকে কড়া শাসনে রাখলেও এখন আর শাসন করার কিছু নেই । এখন মেয়ে স্বামীর দায়িত্বে আছে , বাবা হিসেবে সে যতদিন দায়িত্ব পালন করার করে দিয়েছে । তাই এখন বাবা কে ভয় পাওয়ার কিছু নেই , এখন ভয় পাবে স্বামী কে , আর মর্জি করবে বাবার সাথে , এটাই দুনিয়ার নিয়ম । মজিদ মিয়াও মেয়েকে লাই দেয় আজকাল । এই যেমন এখন মিটিং ভেঙ্গে দিয়ে মজনুর পেছন পেছন হাঁটা দেয় । মেয়ে আর জামাই এর সাথে নৈশ ভোজে অংশ গ্রহন করার জন্য ।
জামাইয়ের পাতে বড় কাতল মাছের মাথা দেয়া হয়েছে , মজিদ মিয়াঁ সন্তুষ্ট হয় সাইজ দেখে । তারচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট হয় জামাই আর মেয়ের মুখের খুশির ঝলকানি দেখে । যদিও জামাই বার বার বলছে মাথাটা জেনো মজিদ মিয়াঁর পাতে দেয়া হয় । কিন্তু সেটা হবার নয় , মেয়ে বলে আহা খান না আপনে , আব্বা এতো সখ কইরা আনসে আপনের লইগা ।
মজিদ মিয়াঁ আজকাল খুব বেশি খায় না , পেটে সহ্য হয় না । তাই নিজে অল্প ভাত নিয়ে , বসে বসে মেয়ে আর মেয়ের জামাই এর খাওয়া দেখে । জামাই মজা করে কাতল মাছের মাথা খাচ্ছে , তা দেখে মেয়ে খুশি হচ্ছে । আর ওদের আনন্দ দেখে মজিদ মিয়াঁর আনন্দ হচ্ছে ।
আব্বা আপনে এইটুক ভাত নিলেন ? হঠাত প্রশ্ন করে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে । আরও ভাত নেন , আর মাছ নেন আরেক টুকরা, মাছটা যা স্বাদ আর কি তেল । মজিদ মিয়াঁর পাতে ভাত দেয়ার জন্য এগিয়ে আসে মেয়ে ।
প্রতিবাদ করে মজিদ মিয়াঁ , আরে না না , জামাই রে আর এক টুকরা দে , একদম টাটকা মাছ , পাক্কা সাত কেজি ওজন ।
জামাইকে জোড় করে আরও এক টুকরা মাছ দেয়া হয় ।
আব্বা পরশু আপনেই জিতবেন , দেইখেন । মেয়ে খেতে খেতে বলে আবার ।
তাই নাকিরে মা? তুই এতো নিশ্চিন্ত হইলি কেমনে রে , তুই কি নির্বাচন কমসন এর লোক নি রে হা হা হা …… আজকাল মজিদ মিয়াঁ মেয়ের সাথে হালকা মশকরা ও করে ।
না আব্বা , আমি স্বপন দেখসি , দেইখেন আপনেই জিতবেন , আর আমি হমু চেয়ারম্যানের মাইয়া হি হি হি ……
মজিদ মিয়াঁর খুব আমোদ হয় , এই দিকটা ভাবেনি মজিদ মিয়াঁ । সুধু নিজে চেয়ারম্যান হবে এটাই ভেবেছিলো সে , কিন্তু তার আশেপাশের মানুষ গুলির ও যে পদোন্নতি হবে সেটা এতদিন ভেবে দেখেনি । তার মেয়ে হবে চেয়ারম্যানের মেয়ে , তার বউ হবে চেয়ারম্যানের বউ , মজনু হবে চেয়ারম্যানের চাকর … ভাবতে ভাবতে মুচকি হেসে ফেলে মজিদ মিয়াঁ ।
<><><>