Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
একটু শান্ত হয়ে রমাদি বললেন, আমি এখান থেকে চলে যাব। এখানে আমাকে সবাই চেনে। সবাই ঘৃণার চোখে দ্যাখে। ললিতের কল্যাণে আমার ভিসার ঝামেলা তো নেই তাই এখানেই অন্য কোন জায়গায় চলে যাব যেখানে আমাকে কেউ চিনবে না। আমার যা বিদ্যে বুদ্ধি আছে তাতে আমি চালিয়ে নিতে পারব আশা করছি। ভয় নেই। আমি তোমাদের তন্দ্রাদির কাছ থেকে কোন কিছুই কেড়ে নেব না। শুধু রোমিও আর জুলিয়েটকে সঙ্গে নিয়ে যাব। এদেরও আমার মতন কেউ নেই।“   
দিশা নিজের জমানো কিছু ডলার এনেছিল, সেগুলো রমাদির হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, এটা তুমি রাখো রমাদি। তোমার লাগবে।
রমাদি নিতে চাইছিলেন না কিন্তু আমরাই জোর করলাম।  
ললিতদার সব জিনিসপত্র, জামাকাপড় দান করে দিয়ে রমাদি আমাদের ওখান থেকে বেরিয়ে চলে গিয়েছি্লেন। আর কারো সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখেননি। দিশার সঙ্গেও না।
এর পর কেটে গেল আরো কয়েক বছর। রমাদির কথা আমি অন্তত ভুলতে বসেছিলাম।  
সেদিন রাতে শোওয়ার তোড়জোড় করছি এমন সময় দিশার ফোনটা বেজে উঠল। অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলে ওকে তুলতে বারণ করি তাও সেদিন  তুলে বসল। হুঁ, হাঁ করে কয়েকটা কথা বলে ফোনটা ছেড়ে দিয়ে বলল, আমাদের হ্যারিসবার্গে যেতে হবে। রমাদি মারা গেছেন।
রমাদি? মানে সেই রমাদি? কার ফোন ছিল?
পুলিশের। উনি দরজা খুলছিলেন না বলে প্রতিবেশীরা পুলিশ ডাকে। তারা এসে ভিতরে ঢুকে মৃতদেহ পেয়েছে। আমার ফোন নম্বর নাকি ওখানে ছিল তাই আমাকে ফোন করেছে। আমাদের পদবি এক বলে আত্মীয় মনে করেছে।
তোমার নম্বর?
হ্যাঁ, তাই তো বলল। বলল বডি ওরা মর্গে নিয়ে যাচ্ছে। হার্ট অ্যাটাক কিনা সেটা কনফার্ম করবে। তবে আমাদের যেতে হবে।
এবার আমি বেঁকে বসলাম। রেগে গিয়ে বললাম, কোনও দরকার নেই। এখান থেকে যখন চলে গেছেন তখন আমাদের দায়িত্ব শেষ। ওই দু ঘন্টা পথ ঠেঙিয়ে  আমরা কিছু করতে পারব না। উনি কে হন আমাদের? তাছাড়া এখানে সৎকার খুব খরচ সাপেক্ষ।
দিশার চোয়াল শক্ত হল, উনি একজন মানুষ। একজন মানুষ যাঁকে আমরা চিনতাম। মৃত্যুর পর সৎকারটুকু নিশ্চয়ই একজন মানুষ হিসেবে আমরা তাঁকে দিতে পারি! তুমি না গেলে আমি একাই বাস ধরে চলে যাব। খরচ যা লাগে তার ব্যবস্থাও আমি করে নিতে পারব। কাল তো শনিবার কোনও অসুবিধা হবে না। ছুটিও নিতে হবে না।
দিশা জানে আমি কিছুতেই ওকে একা ছেড়ে দিতে পারি না ওই রকম একটা কাজের জন্যে তাই আমরা দুজনেই গেলাম। পাড়াটাতে ঢুকেই চমকে উঠলাম আমরা দুজনেই। রমাদি এখানে থাকতেন? খুবই নিম্নবিত্ত গরিব একটা পাড়া। পাড়ার বেশিরভাগ বাসিন্দাই কালো। ঘরবাড়িগুলোর অবস্থা অতিশয় জীর্ণ। পাড়াটা বেশ নোংরাই বলা যায়। আমি কোনমতে একটা জায়গা খুঁজে বার করে গাড়িটা পার্ক করলাম। তাও খুব ভয় হচ্ছিল,  যা পাড়া সেখানে গাড়ি চুরিটা অপরাধের পর্যায়ও পড়ে না!  
গাড়ি থেকে নেমে আমরা কী করব ভাবছিকোন দিকে এগোবো কিন্তু এর মধ্যেই ওখানে ভিড় লেগে গেল। আমাদের ঘিরে ধরল বেশ কিছু পুরুষমহিলা এবং শিশু। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের চোখে জল। তারা সবাই বুঝতে পেরেছে আমরা রমাদির জন্যে এসেছি।
একজন আমাদের জিগ্যেস করল, উনি তোমাদের কে ছিলেন?
দিশা এক মুহূর্ত না ভেবে বলল, আমার দিদি।
ভীষণ ভালো মানুষ ছিলেন। আমাদের, আমাদের বাচ্চাদের সবাইকে বিনা পারিশ্রমিকে পড়াতেন।
ওরা সবাই পথ দেখিয়ে আমাদের রমাদির বাড়ি অবধি নিয়ে গেল। যিনি বাড়িওয়ালা তাঁর কাছে চাবি ছিল। তিনিই খুলে দিলেন। বাড়িওয়ালা ভদ্রলোক আর তাঁর স্ত্রী ছাড়া সবাই বাইরেই দাঁড়িয়ে রইল। আমরা দুজন ওঁদের সঙ্গে ভিতরে ঢুকলাম। এক চিলতে একটা ঘর, সেটাই বসবার ঘর শোবার ঘর সব কিছু আর একটা খুব ছোটো রান্নাঘর আর বাথরুম। এক পাশে একটা টেবিলে রমাদির প্রিয় দুই সান কনিওর পাখি দুটো। তাদের খাঁচার সামনেই টেবিলে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা রয়েছে ‘আমার কিছু হলে আমার বোন দিশাকে এই নম্বরে ফোন করা হয় যেন। সে আমার পাখিদের নিয়ে যাবে।‘ ওই পাখিদুটো ছাড়া যেন আর ওঁর কোন প্রিয় জিনিস ছিল না।  
দিশার চোখে জল।  
আমি দিশাকে বললাম, যে কাজের জন্যে এসেছো সেটা করতে হবে। শেষকৃত্য তো হয়নি। দেহ তো এখনও মর্গে।
বাড়িওয়ালা ভদ্রলোক বললেন, “আমরা জানি। কিন্তু আমরা কেউ তো আত্মীয় নই তাই পুলিশ আমাদের হাতে বডি ছাড়ছে না। ওদের কী সব ব্যাপার আছে কাগজপত্রের। আপনি শুধু আমাদের সঙ্গে চলুন। আমরাই সব করব।“
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 24-01-2023, 12:51 PM



Users browsing this thread: 21 Guest(s)