Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
[Image: IMG-20220105-WA0000.jpg]

অভিষঙ্গ || অনন্যা দাশ ||
 
রমাদিকে আমাদের এখানে সবাই মনে প্রাণে ঘৃণা করত। সবাই মানে এখানকার যতজন বাঙালি আছে আমরা শুধু আমার স্ত্রী দিশা ছাড়া। দিশা কেবল বলত যেটা ঘটেছে তাতে রমাদির তো কোনও দোষ নেই।   
আসল ঘটনাটা বলি তাহলে। আমাদের মার্কিন মুলুকের এই ছোটো জায়গায় বাঙালির সংখ্যা বেশ কম। সারা এলাকা মিলে হয়তো তিরিশ ঘর হবে। তার মধ্যে বেশ কিছু মানুষ আছেন যাঁরা বহুদিন আগে এখানে এসে বসবাস শুরু করেছিলেন, অনেকদিন মানে সত্যিই অনেকদিন, সেই আশির দশকে। সেই রকম একটা পরিবার তন্দ্রাদি  তাঁর স্বামী ললিতদা। দুটো ছেলেকে নিয়ে ভরপুর সংসার তাদের। ললিতদার নিজের ব্যবসা। তা সেই ললিতদার একদিন কী ভিমরতি ধরল ষাট বছর বয়সে ‘আমি আটচল্লিশ বছরের বিপত্নিক মানুষ’ বলে ম্যাট্রিমনিয়াল বিজ্ঞাপন দিয়ে দিলেন। তারপর চুপি চুপি দেশে গিয়ে আরেকটা বিয়ে করে চলে এলেন। সেই দ্বিতীয় স্ত্রীই হলেন রমাদি। ললিতদা এই ভয়ঙ্কর কাজটি করার পর এখানকার বাঙালিরা ললিতদা আর তাঁর নতুন স্ত্রীর সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করল। সবাই হাপুস নয়নে কেঁদে পৃথিবী ভাসিয়ে দেওয়া তন্দ্রাদি আর তাঁর দুই পুত্রের পক্ষ নিল। ললিতদা আর রমাদির নামে চারিদিকে ঢি ঢি, সমস্ত বাঙালি অনুষ্ঠান থেকে বাদ দেওয়া হল তাঁদের।      
দিশা শুধু বলেছিল, আচ্ছা রমাদির দোষটা কোথায় বলতে পারো? উনি তো ভেবেছিলেন একজন আটচল্লিশ বছরের বিপত্নিক মানুষকে বিয়ে করছেন। ওঁর তো জানার কথা নয় যে ললিতদার বউ আর দুই ছেলে এখানে মার্কিন দেশে পড়ে আছে।
এদিকে তন্দ্রাদি চাকরি করেন না। ছেলেরা যে যার মতন আলাদা হয়ে গেছে। ললিতদা তাই নিজের ব্যবসার আয় দিয়ে দুই স্ত্রীকে সামলাতে লাগলেন। থাকতেন অবশ্য রমাদির সঙ্গেই আলাদা একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে। ওঁর আগের কেনা বাড়িটাতে তন্দ্রাদি রইলেন।  
ক্রমে লোকে ভুলে যেতে লাগল। সাধারণ মানুষের এই সব ব্যাপারে স্মৃতিশক্তি বেজায় কম। আমিও ভুলে যেতে লাগলাম। দিশা কিন্তু ভুলল না। একদিন হঠাৎ বলল, এই জানো রমাদি কিন্তু বেশ পড়াশোনা জানা মহিলা। দেশে একটা কলেজে পড়াতেন। এখন ললিতদার ব্যবসার সব কাজ শিখে ফেলেছেন।
আমি শুনে জিজ্ঞেস করলাম, এত সব তুমি কী করে জানলে?
ইন্ডিয়ান দোকানে দেখা হয়েছিল। তখন আলাপ করলাম। আমি তো আর বাঙালি নই তাই আমার আলাপ করতে দোষ নেই!” বলে নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে ফেলল দিশা।   
দিশারা আসলে বাঙালি নয় ঠিকই। ওরা রাজস্থানের, কিন্তু ওদের পরিবার তিন পুরুষ ধরে কলকাতায় বাস করছে। দিশা জলের মতন বাংলা বলতে পারে!
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, কী দরকার ওঁর সঙ্গে ভাবটাব করার?
দিশা কিছু বলল না। পরে জেনেছিলাম  আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে রমাদির সঙ্গে কথা বলত।  
তারপর একদিন ললিতদা দুম করে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন। কোনও উইল তিনি করে যাননি আর তন্দ্রাদির সঙ্গে আইনি বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি তাই সেই দিন এক ঝটকায় তন্দ্রাদি ললিতদার সব সম্পত্তি পেয়ে গেলেন আর রমাদি পথে বসলেন।
অফিস থেকে ফিরে দেখলাম দিশার ছটপটে ভাবটা। আমাকে বলল, একবার রমাদির বাড়িতে নিয়ে যাবে আমাকে?
আমি রেগে গিয়ে বললাম, কী দরকার? ওঁর সঙ্গে ললিতদার বিয়েটা তো বিয়েই নয়। উনি তো আইনের চোখে ললিতদার স্ত্রী নন। ডিভোর্স যখন হয়নি তখন তন্দ্রাদিই আসল স্ত্রী। বাকি সব এক্সট্রা ম্যারিটাল লিভ টুগেদার ছাড়া কিছুই নয়।”  
রাখ তো তোমার আইন! স্ত্রী না হোক মানুষ তো? যে মানুষটার সঙ্গে এত বছর এক ছাদের নিচে রইলেন সে একদিন দুম করে মরে গেল তাতে তাঁর কষ্ট হবে না? আমরা মানুষ হিসেবে তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারি না একটু ক্ষণের জন্যে?
 কথার কোনও উত্তর ছিল না আমার কাছে তাই আমি দিশাকে নিয়ে গেলাম। নিজের বড়ো বাড়িটা তন্দ্রাদিকে থাকতে দিয়ে রমাদিকে নিয়ে ছোটো একটা ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকতেন ললিতদা। কাপড় কাচার মেশিনও ছিল না। বাইরের লন্ড্রিতে গিয়ে কাপড় কাচতে হত নাকি।
রমাদি দিশাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদলেন। আমি বোকার মতন বসে রইলাম। ঘরে একটা খাঁচায় দুটো সান কনিওর পাখি। হলুদ কমলা রঙ। দেখতে ভারি সুন্দর। তবে কিছু একটা হয়েছে আন্দাজ করে তারাও চুপ করে রয়েছে। পরে জেনেছিলাম ওদের নাম রোমিও আর জুলিয়েট।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 24-01-2023, 12:49 PM



Users browsing this thread: 21 Guest(s)