23-01-2023, 09:41 AM
(This post was last modified: 23-01-2023, 09:52 AM by Bumba_1. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
আজ এই মহান দেশনায়কের জন্মদিন। বিভিন্ন জায়গায় সবাই তার কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলছে, কোথাও আবার তার শৈশব কৈশোর যৌবন নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, তার মৃত্যুরহস্য নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এখানে সম্পূর্ণ একটি অন্য বিষয় নিয়ে একটা প্রতিবেদন দিলাম। সময় করে অবশ্যই পড়ে দেখবেন।
~ কার্টুনে সুভাষচন্দ্র ~
১৯৪৬ সালের ২৩ জানুয়ারি। সুভাষচন্দ্র বসু নিখোঁজ প্রায় এক বছর হল। সে বছর সুভাষের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ছাত্ররা বিরাট এক মিছিল করল। সবচেয়ে বড়ো মিছিল হয়েছিল বোম্বেতে (বর্তমানে মুম্বাই) ছাত্রদের। কোনো রাজনৈতিক নেতার হাত ছিল না তাতে। সরকার ভয় পেল। পুলিশ কমিশনার হ্যারল্ড এডুইন বাটলার নির্দেশ দিলেন ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করার। প্রথমে কাঁদানে গ্যাস, তারপর সরাসরি গুলি। তাতে মারা গেল সেদিনের সেই 'টুকরে টুকরে গ্যাং'-এর ৮০ জন ছাত্র, আহত ৫০০ জনের বেশি... এখন যাদের আমরা গালভরা 'শহীদ' নাম দিয়েছি। পরদিন পত্রিকায় কুট্টি আঁকলেন এই বিখ্যাত কার্টুন (Cartoons)। কমিশনার বাটলার চারদিকে সরকারি গ্যাস মুখোসধারী পুলিশে ঘেরা হয়ে বলছেন "যদি সত্যি কাঁদার ইচ্ছে থাকে, তোমাদের সে ব্যবস্থা করছি।" কোনোক্রমে গ্রেপ্তার হতে হতে বাঁচলেন কুট্টি। বোঝাই যায়, নিখোঁজ হবার পরেও নেতাজি লাইভ ওয়্যার। বিপজ্জনক।
সমকালেও সুভাষের পথ একেবারেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। একদিকে যেমন সমর্থকরা তাঁর পক্ষে প্রচার করতেন, অন্যদিকে বিরোধীরা শানাতেন সমালোচনার অস্ত্র। সমকালীন কমিউনিস্ট থেকে আর এস এস, কেউ তাঁকে ছেড়ে কথা বলেনি। আর সবক্ষেত্রেই কার্টুন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। আজ এতদিন পরে সেই সব কার্টুন দেখে কেমন অলীক রূপকথার মত মনে হয় বৈকি! তখনকার কমিউনিস্ট পার্টির একনিষ্ঠ পত্রিকা এবং এককালের মুখপত্র ‘পিপলস ওয়ার’ পত্রিকা দিনের পর দিন নেতাজিকে বিদ্রুপ করে কার্টুন এঁকে গেছে। ১৯৪২-এর ১৯ জুলাই-এর এই কার্টুনটি যেমন। এখানে স্পষ্টই সুভাষ বোসকে তোজোর গাধার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল। এতেই শেষ হল না, একের পর এক নিম্নরুচির কার্টুন প্রকাশ পেতে লাগল সেই পত্রিকায়। কোথাও সুভাষ বোস তোজোর পাশে বামন, কোথাও গোয়েবলস-এর হাতে নাচা বাঁদর, আবার কোথাও জাপানি স্বৈরতন্ত্রের মুখ। সেই পত্রিকাতেই নেতাজির অভিধা হয়েছিল “the running dog of Japanese Fascism”. সবচেয়ে ক্রুর ছবি ছিল ১৯৪২ এর ২২ নভেম্বরে ছাপা কার্টুনটি, যেখানে দেখা যাচ্ছে সুভাষ বোস নিজে জাপানি বোমায় চেপে এদেশের দুর্ভিক্ষ পীড়িত জনগণের মাথায় ল্যান্ড করছেন। এখন ফিরে দেখলে এসব ঐতিহাসিক ভুল ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।
মজার ব্যাপার, এই ধরনের আক্রমণের ব্যাপারে আর এস এস-ও পিছিয়ে ছিল না। নাথুরাম গডসের নিজের সম্পাদিত পত্রিকা ‘অগ্রণী’তে একটা কার্টুন প্রকাশ করেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, রামের পরিবর্তে আরএসএসের দুই তিরন্দাজ উদ্যত হয়েছে দশমাথা রাবণকে জ্বালাতে। সেই তিরে লেখা রয়েছে ‘অখণ্ড ভারত’। রাবণের প্রধান মুখ যেখানে মহাত্মা গান্ধীর, সেখানে পরের মুখগুলি বানানো হয়েছে সর্দার বল্লভভইি প্যাটেল, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো নেতাদের মুখের আদলে।
তবে মুদ্রার উলটো দিকও ছিল। ন্যাশনাল প্রেসের পক্ষ থেকে শ্যামসুন্দরলাল অগ্রবাল অদ্ভুত একটা পোস্টার ছেপে প্রকাশ করে কানপুরের দেওয়ালে দেওয়ালে লাগিয়ে দিলেন। আপাতদৃষ্টিতে গোটা পোস্টার বেশ চমকে ওঠার মতো। নেতাজিকে এখানে তুলনা করা হয়েছে কালীর অন্যতম রূপ ছিন্নমস্তার সঙ্গে। আজাদ হিন্দ ফৌজের পোশাক পরে তিনি তাঁর নিজের গলা কেটে উৎসর্গ করছেন দেশের জন্য। আশেপাশে ছড়িয়ে আছে আরও সৈনিকদের কাটা মাথা। তলায় লেখা— “सुभाष चन्द्र बोसे कि अपूर्व भेट” (সুভাষ চন্দ্র বোসের অপূর্ব উপহার)। আজাদ হিন্দের আত্মত্যাগ ঠিক কতটা সাড়া জাগালে একজন মানুষ বেঁচে থাকতেই ঈশ্বরের সঙ্গে তুলনীয় হন, তা বলাই বাহুল্য। সেই আমলেই নেতাজিকে নিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল জয় হিন্দ কেমিক্যাল ওয়ার্কস। বেশ মজার বিজ্ঞাপন। নেতাজি, গান্ধীজী, নেহেরু, প্যাটেল বা আজাদ— সবার যে একখানা করে ইন্দ্রলুপ্ত আছে, তা খেয়াল করেছিল তারা। সেই জন্যেই, একমাত্র উপায় মাথায় ‘জয় হিন্দ আমলা গন্ধনিধি হেয়ার অয়েল’।
শেষে বলি প্রমথ সমাদ্দারের সেই বিখ্যাত কার্টুনের কথা। দেশ সবে স্বাধীন। কিন্তু সবাই জুজু দেখছে। ওই বুঝি নেতাজি আসেন। জওহরলাল দূরবিনে চোখ রেখেছেন, প্যাটেল মাথা চুলকাচ্ছেন, শাস্ত্রী হতাশ হয়ে মাটিতে বসে। দেশজুড়ে গুজব "নেতাজী আসছেন নেতার বেশে"... কে জানত? পঞ্চাশ বছর পেরিয়েও নেতাজির ভূত আজও তাড়া করে বেড়াবে দেশের অনেক নেতাদের!তবে নেতাজির কার্টুন নিয়ে সেরা কাজটি করেছিলেন প্রফুল্ল চন্দ্র লাহিড়ী। একদম ঠিক ধরেছেন। ইনিই কাফি খাঁ কিংবা পিসিয়েল নামে দিনের পর দিন বাংলা ইলাস্ট্রেসন আর কার্টুনকে পৌঁছে দিয়েছেন এক নতুন উচ্চতায়। সুভাষচন্দ্রের জীবন নিয়ে সত্তরের দশকে প্রকাশিত অসামান্য বই ‘সুভাষ আলেখ্য’ তাঁর লেখায় আঁকায় ভরে তোলেন। স্বয়ং ওয়াল্ট ডিজনি তাঁর কাজে মুগ্ধ হয়ে আমেরিকায় থেকে যেতে বলেছিলেন। থাকেননি তিনি। এই বইতে কী সুন্দরভাবে নেতাজির জীবনকে ফুটিয়ে তুলেছেন পাতাজোড়া ছবি আর অন্যপাতায় লেখায়, তা না দেখলে বিশ্বাস হয় না। এ মুখার্জী থেকে প্রকাশিত এই বইটি দেখতে অনেকটা অ্যালবামের মতো। এমন অসামান্য আলেখ্য পৃথিবীতে খুব কমই লেখা হয়েছে।
-- ★★ --


![[Image: IMG-20230123-WA0014.jpg]](https://i.ibb.co/0M2RbmX/IMG-20230123-WA0014.jpg)
![[Image: IMG-20230123-WA0013.jpg]](https://i.ibb.co/RYHR9zj/IMG-20230123-WA0013.jpg)
![[Image: IMG-20230123-WA0012.jpg]](https://i.ibb.co/NrkYZYj/IMG-20230123-WA0012.jpg)
![[Image: IMG-20230123-WA0011.jpg]](https://i.ibb.co/sb9VLBy/IMG-20230123-WA0011.jpg)
![[Image: IMG-20230123-WA0007.jpg]](https://i.ibb.co/wLJ3Z6G/IMG-20230123-WA0007.jpg)
![[Image: IMG-20230123-WA0010.jpg]](https://i.ibb.co/jVqt9s9/IMG-20230123-WA0010.jpg)
![[Image: IMG-20230123-WA0009.jpg]](https://i.ibb.co/F77N51f/IMG-20230123-WA0009.jpg)
![[Image: IMG-20230123-WA0008.jpg]](https://i.ibb.co/z6gPY49/IMG-20230123-WA0008.jpg)
![[Image: IMG-20230123-WA0006.jpg]](https://i.ibb.co/xH1YjGc/IMG-20230123-WA0006.jpg)
![[Image: IMG-20230123-WA0005.jpg]](https://i.ibb.co/5BqMf26/IMG-20230123-WA0005.jpg)
![[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]](https://i.ibb.co/V2jFPGW/Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e04c001a911ac0.gif)
![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)