21-01-2023, 08:53 PM
প্রতিটি মানুষের মনের ভিতর লুকিয়ে থাকে অবচেতনে আরও একটি মন। অস্থিরতা ক্রমশঃ তীব্র হলে বিচলিত মন যখন সংশয়ে আত্মসমর্পণ করে, যখন আত্মপ্রত্যয় মুষ্টিবদ্ধ হাতদুটি শূন্যে ছুঁড়ে দেয়, সবার অলক্ষে যখন সময়ের উথালপাতাল অবগাহন আর স্পর্শকাতর মুহূর্ত তারই এলোমেলো হাওয়া চারপাশে, তখন দুটি মনই একসাথে দুলে ওঠে আর পথ জুড়ে উথলে ওঠে আরও দীর্ঘ পথ। দীর্ঘ সেই পথের বুকে নামে মেঘভাঙা রোদ্দুর এবং দু'চোখ ভরে সৃষ্টি হয় জীবনের বিস্ময়কর স্বপ্ন। এইসব চলতে থাকলে বুকের ভেতর মুগ্ধতা জমে, নৈঃশব্দে জ্বলে ওঠে আলোর রোশনাই। মনে মনে তখন খুব সংশয়ে থাকতে হয় এই ভেবে যে, পরস্পরের ভিতরের দু-দুটি মন কিভাবে গ্রহণ করতে সমর্থ হবে সমস্ত শিহরণ! সংশয়ে থাকতে হয় দু-দুটি মনের কার মানসিকতায় কার চেয়ে কে কতটা শ্রেয় .. এই ভেবে। এভাবেই অতিবাহিত হতে থাকে দিনের পর দিন, দু'চোখে ঘন ঘন পলক পড়ে আর সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের সম্ভাবনার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। যে অপেক্ষার মধ্যে পরতে পরতে ঝরে পড়ে প্রশ্নচিহ্নের মতো তীব্র অবিশ্বাস এবং আশঙ্কা।
সেদিন রাতে গোগোলদের বাড়ি থেকে চলে আসার পর পরস্পরের সঙ্গে আর দেখা হয়নি ওদের দু'জনের। মাঝে মাত্র একটি দিন অতিবাহিত হয়েছে। তবুও হিয়ার কাছে তা প্রায় এক যুগের সমান। তবে ফোনে যোগাযোগ আগের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে। সকালে এলার্ম ক্লকের মতো তার প্রেয়সীর ঘুম ভাঙ্গানো থেকে শুরু করে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে গুডনাইট কিস দেওয়া .. এই সবকিছু একজন বাধ্য এবং সৎ প্রেমিকের মতো করে গেলেও গোগোলের মনের কোণেও কোথাও যেন একটা সংশয় তৈরি হয়েছিলো। এটা যে শুধু টগরের শারীরিক অবস্থার জন্য সেটা পরিষ্কার করে বলা যায় না। এই সংশয়ের উৎস এবং কারণ তার কাছে স্পষ্ট নয়, তবে সে একটা অদৃশ্য টান অনুভব করছিলো টগরের প্রতি।
বাতের ব্যথায় কাবু স্বপনবাবু এখন আর আগের মতো সচল নয়। তাই কলেজের মিড-ডে মিলের মালগুলো স্বপন সাধুখাঁর দোকান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেই আনার ব্যবস্থা করে। টগর এসে একদিন অন্তর হিসেব দিয়ে যায় আর তার সঙ্গে টাকাও নিয়ে যায় এই কলেজের প্রধানশিক্ষক পঙ্কজ বাবুর কাছ থেকে। গোগোল ভেবেছিলো এখানে টগর এলে তার সঙ্গে তো তার দেখা হবেই, তাই তার মামণি এবং হিয়াকে যখন সে কথা দিয়েছে, তখন আর সে ওদের বাড়ি যাবে না। দিন পনেরো পর ডাক্তার বসাক অবশ্য তার ক্লিনিকে একবার টগরকে নিয়ে যেতে বলেছেন, সেইসময় একটা ব্যবস্থা ঠিক করা যাবে। কিন্তু দিন দু'য়েক টগরকে দেখতে না পেয়ে কোনো কাজে ঠিক মতো মনোনিবেশ করতে পারছিলো না সে। এরপর পঙ্কজ বাবুকে জিজ্ঞাসা করে যখন সে জানতে পারলো - টগর জানিয়ে দিয়েছে, সে আর এর মধ্যে আসবে না, তাই কলেজ থেকে যারা স্বপন সাধুখাঁর দোকানে মাল আনতে যায় তারাই হিসেব নিয়ে টাকা দিয়ে আসে। তখন তার কপালে চিন্তার ভাঁজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলো। সে চিরকাল দায়িত্ব পরায়ণ একজন মানুষ। পরিস্থিতি পরিপ্রেক্ষিতেই হোক অথবা যে কোনো কারনেই হোক একজনের দায়িত্ব যখন সে নিয়েছে, তখন কাউকে কথা দেওয়ার জন্য সেই দায়িত্ব পালন না করতে পারাটা, গুরুতর অপরাধ বলেই সে মনে করে। কয়েক মুহূর্ত কিছু একটা চিন্তা করে সাইটের সহকারী সুপারভাইজারকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বাইকে করে কলেজ থেকে বেরিয়ে গেলো গোগোল।
বাইকটা টগরদের বাড়ির সামনে স্ট্যান্ড করে রেখে ভিতরে ঢুকতে গিয়ে গোগোল দেখলো স্বপনবাবুর দোকান বন্ধ। সপ্তাহে সাতদিনই খোলা থাকে এই মুদিখানার দোকান। কিছুটা বিচলিত হয়ে বাইরে থেকে দু-একবার "স্বপনকাকু" বলে ডেকেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে গিয়ে দেখলো দরজা ভেজানো রয়েছে। আলতো ঠ্যালা দিতেই দরজার পাল্লাটা খুলে গেলো। বৈঠকখানার ঘরেও কেউ নেই। "টগর .. কোথায় তুই? তোরা সব কোথায় বলতো .. বাইরের দরজা খুলে বাড়ি ফাঁকা রেখে সব কোথায় গিয়েছিস?" এই কথাতেও কোনো উত্তর না পেয়ে ধীরে ধীরে বেডরুমে প্রবেশ করলো গোগোল।
শোওয়ার ঘরের ঢুকেই চমকে উঠলো গোগোল। বিছানার উপর হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে টগর। ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে তার। খাটের সামনে এসে টগরের দিকে তাকাতেই প্রচন্ডরকম অস্বস্তি বোধ করলো সে। তার চোখের সামনে বছর কুড়ির সদ্য যৌবনা ভরাট শরীরের অধিকারিনী টগর কোনোরকমে শুধুমাত্র একটি টাওয়েল জড়িয়ে শুয়ে রয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে কিছুক্ষণ আগেই স্নান করে এসেছে সে। সদ্যস্নাতা টগরের ভিজে চুলগুলো তার ফর্সা মুখমন্ডলে অবিন্যস্ত ভাবে ছড়িয়েছিলো, কানের লতি আর নাকের ডগায় কয়েকবিন্দু জল তখনো দৃশ্যমান। টাওয়েল আবৃত ভারী বক্ষযুগল ঘনঘন নিঃশ্বাসের সঙ্গে প্রকটভাবে ওঠানামা করছে। অত্যাধিক ফর্সা সামান্য ফাঁক হয়ে থাকা সুগঠিত দুই নগ্ন উরু যেন আহ্বান জানাচ্ছিলো নিজেদের দিকে। সেদিকে তাকিয়ে মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করে উঠলো গোগোলের। তৎক্ষণাৎ নিজের দুই চোখ বন্ধ করে ফেললো সে। কয়েক সেকেন্ড স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে আলতো করে তার কপালে হাত দিয়ে সে ডাকলো "টগর .. এই টগর .. ঘুমিয়ে পড়েছিস নাকি?" কপালে হাত ছোঁয়াতেই গোগোল বুঝতে পারলো জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে টগরের।
তখনই নিজের মায়াবী চোখদুটো সামান্য খোলার চেষ্টা করে জড়ানো কন্ঠে টগর বলে উঠলো "ওহ্ , তুমি এসেছো গোগোল দাদা! জানো তো বরফের কুচি মাখা মুখে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বলেছি আবার আগের মতো ভালো হয়ে গেলে একদিন হেঁটে হেঁটে বাজারে যাবো। তুমি তো ইলিশ মাছ খেতে খুব ভালোবাসো। মেছুনির সাথে দু'একটা আলগা তামাশা করে কিনে নিয়ে আসবো তোমার পছন্দের মাছ। আমি নিজে বাড়িতে মাছ কাটবো, বঁটির আগায় লেগে থাকবে রক্ত আর আঁশ। একদিন মনে মনে ভেবেছি গভীর রাতে, আলোয় আলোয় ভরে যাচ্ছে চারদিক। সেই আলোয় আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম আমার মায়ের মুখ। তবু আমার অসুখ সারে না কেনো গোগোল দাদা?"
"সারবে .. নিশ্চয়ই সারবে .. আমি আছি তো .. আমি বলেছি না, আমি সব ঠিক করে দেবো .. কিন্তু তোর গায়ে তো এখন খুব জ্বর, আমি যে কি করি! শিউলি কোথায় রে? আর তোর বাবা?" টগরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করলো গোগোল।
"শিউলি কলেজে আর বাবা মহাজনের কাছে গেছে কোনো একটা দরকারে। জানো তো, আজ সকাল থেকে আমি ভালোই ছিলাম। বাবা যখন বেরোলো, আমি তখন স্নান করছিলাম। ভাবলাম স্নান করে বেরিয়ে বাইরের দরজাটা আটকে দিয়ে তারপর ঘরের কাজকর্ম করবো। কিন্তু হঠাৎ করে অসম্ভব কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলো। কোনোরকমে বাথরুম থেকে বেরিয়ে বিছানায় এলাম, তারপর .. তারপর মাথাটা কেমন যেন ঘুরে গেলো আর কিছু মনে নেই .. ভাগ্যিস তুমি এলে .. যদি অন্য কেউ আসতো, তাহলে এই অবস্থায় আমাকে দেখে .. ইশ্ ছিঃ ছিঃ আমি তো ভাবতেই পারছি না। আমি যে উঠে জামা কাপড় পাল্টাবো, সে ক্ষমতাও আমার নেই জানো। শরীরে কোনো জোর পাচ্ছি না।" চোখদুটো পুনরায় বন্ধ করে মৃদুভাবে কথাগুলো বললো টগর।
অন্য কেউ আর সে যে এক নয় টগরের কাছে, তার কথায় সেটা বুঝতে পারলো গোগোল। টগরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই জিজ্ঞাসা করলো "হঠাৎ করে জ্বরটা কেনো এলো বলতো! ডাক্তার বসাককে একটা ফোন করতে হবে। ওষুধ খেয়েছিস?"
"কি হবে ফোন করে? যা হবার তা হবে। আমি তো জানিও না আমার কি হয়েছে .. জানতেও চাই না। তবে এবার আমার অসুখ সেরে গেলে তোমাদের বাড়ি যাবো একদিন। সরু হচ্ছে রাস্তা, দু-ধারে বেড়েছে ঝোপ। পথের উপর সাজিয়ে রেখো ফুল শুধু আমার জন্য। সেই সরু পথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে তোমাদের বাড়ি যাবো, কেমন! খুব গল্প করবো সুজাতা মাসির সঙ্গে। তোমার কথা শুনবো, হিয়া দিদির কথা শুনবো, তোমাদের বিয়ের কথা শু..ন..বো.. তোমরা কবে বিয়ে করছো গো? আমার যে আর শ্যামা সাজা হলো না গোগোল দাদা!" জড়ানো গলায় কথাগুলো বলতে বলতে আবার নিজের দুটো চোখ খোলার চেষ্টা করলো টগর।
চোখের কোণ দুটো হঠাৎ করে জ্বালা করতে শুরু করলো গোগোলের। গলাটা কিরকম যেন ভারী হয়ে এলো তার। অনেক চেষ্টা করেও গলা দিয়ে একটা কথাও বের করতে পারলো না সে। শুধু অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো টগরের দিকে।
আধো ঘোর আধো জাগরণে টগর বলে চললো "আমার খুব লজ্জা করছে গোগোল দাদা, প্লিজ চাদরটা একটু আমার গায়ে টেনে দেবে? যেভাবে জলের পাত্র থেকে ফোঁটা ফোঁটা জলকণা বাতাসে মিলিয়ে যায়, পাত্রের জল কমে আসে ধীরে ধীরে। যেভাবে একদিন সকল জলাধার আংশিক হয়ে যায় উন্মুক্ত আকাশ নিচে .. ঠিক সেভাবেই আমার প্রাণবায়ু বোধহয় আস্তে আস্তে কমে আসছে। গোগোল দাদা .. তুমি কোথায়! আমার হাতটা ধরবে একটু? জলপান শেষে অংশত আকাশ দেখে পৃথিবীর তৃষ্ণা মিটছে ধীরে ধীরে। মেঘের ভিতরে সযত্নে রাখা জীবনের দুঃস্বপ্নে ভেঙে যায় ঘুম। নিচে মাটিতে ধুলোয় ঝুঁকে থাকা মুখগুলো হারানো খেলনা আর ভাঙা বাসনের কানা যেন প্রেম মাখামাখি করে পড়ে থেকে একত্রে ঘুমায়। সেগুলো কুড়াতে গিয়ে দেখেছো কি আমায়? সারাদিন হাবিজাবি জড়ো করা মেঘ, আকাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড় আর অপেক্ষায় আমি। গোগোল দাদা .. তুমি কোথায়! আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না কেনো .." পুনরায় জ্ঞান হারালো টগর।
"তুই এখন কোথায়?" অনেকক্ষণ ধরে বাজতে থাকা ফোনটা রিসিভ করার পর ফোনের ওপাশ থেকে সুজাতার কন্ঠ ভেসে এলো।
"গাড়িতে .. বাড়ি আসছি .." বাইকটা রাস্তার একপাশে দাঁড় করিয়ে উত্তর দিলো গোগোল।
"এক্ষুনি আয় .. দরকার আছে .." এই বলে ফোনটা তৎক্ষণাৎ কেটে দিলো সুজাতা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়িতে পৌঁছালো গোগোল। সদর দরজা খোলাই ছিলো, ভিতরে ঢুকে দেখলো ড্রয়িংরুমে তার মামণি আর ডাক্তার আঙ্কেল দুজনেই বসে রয়েছে। "বলো .. কি ব্যাপার? জরুরী তলব .."
গোগোলের এই প্রশ্নে ডাক্তার দাশগুপ্ত কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, তাকে থামিয়ে দিয়ে সুজাতা বলে চললো "আজ তুই প্রমাণ করে দিলি, তুই আমাকে ভালোবাসিস না। শুধু আমাকে কেনো, তুই পৃথিবীর কাউকেই ভালবাসতে পারিস না। সেদিন হিয়া তার মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে তোকে সাপোর্ট করলো, কেনো জানিস? ও তোকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে, তাই। আমার কথা তো ছেড়েই দে, তুই ওই মেয়েটারও কথার কোনো মূল্য দিলি না। এতবার বারণ করা সত্ত্বেও তুই আজ আবার গিয়েছিলি টগরদের বাড়ি? তোর বাইক ওর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে কাবেরী নিজে। আমি জানি ওই সর্বনাশী টগর তোকে নিজের ছলাকলায় বশ করেছে। আমি সেদিনকেই বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম কথাটা, কিন্তু ওদের সামনে বলতে পারিনি। কাবেরী ঠিকই বলে .. তুই হিয়ার যোগ্য নয়। তুই কোনোদিন কারোর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়। কেনো জানিস? কারণ তুই হলি স্বার্থপর .. ঠিক তোর বাবার মতো। অনিরুদ্ধদার রক্ত বইছে তোর শরীরে। যে নিজে কোনোদিন সুখে থাকতে পারেনি, তার চারপাশের লোকজনকেও সুখে থাকতে দেয়নি। একটার পর একটা জীবন নষ্ট হয়েছে শুধুমাত্র তোর বাবার ভুলে। তার রক্তই তো তোর শরীরে বইছে .. তুইও একই জিনিস তৈরি হয়েছিস। এত ভালো একটা মেয়েকে পেয়েও তোর মন ভরেনি। এখন টগরের পিছনে দৌড়াচ্ছিস .. ছিঃ ভাবতেও আমার ঘেন্না করে .."
"জাস্ট কিপ ইওর মাউথ শাট সুজাতা .. এইসব কি বলছ তুমি? ওকেও তো কিছু বলার সুযোগ দাও! কিছু না জেনে, না শুনে একটা ছেলেকে এইভাবে কেনো একিউস করছো তুমি?" সুজাতাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন ডক্টর দাশগুপ্ত।
"তুমি চুপ করো .. আমি যা বলছি একদম ঠিক বলছি .. কতদিন চেনো তুমি গোগোলকে? যেটুকু চেনার, আমার সূত্রই তো চিনেছো।" তার স্বামীর উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে, আবার গোগোলের দিকে তাকিয়ে বললো "ছোটবেলায় বাবা-মা কারোর ভালোবাসা পেলি না, এখন হিয়াকেও হারালি। কাবেরী আজ আমাকে ফোনে বলে দিলো .. হিয়ার সঙ্গে তোর সম্পর্কের এখানেই ইতি। আর এটা ও হিয়ার মত নিয়েই বলেছে। তুই তো এটাই চেয়েছিলি .. তাই না? তোর বাবা যেরকম তোর মায়ের জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছিলো, ঠিক তেমনি ভাবে তুইও আজকে .."
"মামণি .. তুমি ঠিকই চিনেছো আমাকে .. আমি এই মুহূর্তে বেশি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই .. শুধু এটুকুই বলবো, ভালো থেকো তোমরা .. হিয়াকেও বলে দিও, ও যেন ভালো থাকে .." কথাগুলো বলে মুহূর্তের মধ্যে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো গোগোল।
"এটা তুমি কি করলে সুজাতা, কি করলে? কেনো এভাবে কথা বললে ওর সঙ্গে? ও তো চলে গেলো .. আটকাও ওকে.." উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বললেন ডক্টর দাশগুপ্ত।
"এ্যাঁ? চলে গেলো .. কোথায় চলে গেলো? সত্যিই তো, আমি .. আমি রাখতে পারলাম না আমার দিদিকে আর অনিরুদ্ধদাকে দেওয়া কথাগুলো। গোগোল .. গোগোল রে .. সোনা মানিক আমার .. রাগের মাথায় মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে রে কথাগুলো .. ক্ষমা করে দে তোর মামণিকে .." এই কথাগুলো বলতে বলতে ঘর থেকে বেরিয়ে সুজাতা দেখলো কেউ কোত্থাও নেই।
সেদিন রাতে গোগোলদের বাড়ি থেকে চলে আসার পর পরস্পরের সঙ্গে আর দেখা হয়নি ওদের দু'জনের। মাঝে মাত্র একটি দিন অতিবাহিত হয়েছে। তবুও হিয়ার কাছে তা প্রায় এক যুগের সমান। তবে ফোনে যোগাযোগ আগের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে। সকালে এলার্ম ক্লকের মতো তার প্রেয়সীর ঘুম ভাঙ্গানো থেকে শুরু করে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে গুডনাইট কিস দেওয়া .. এই সবকিছু একজন বাধ্য এবং সৎ প্রেমিকের মতো করে গেলেও গোগোলের মনের কোণেও কোথাও যেন একটা সংশয় তৈরি হয়েছিলো। এটা যে শুধু টগরের শারীরিক অবস্থার জন্য সেটা পরিষ্কার করে বলা যায় না। এই সংশয়ের উৎস এবং কারণ তার কাছে স্পষ্ট নয়, তবে সে একটা অদৃশ্য টান অনুভব করছিলো টগরের প্রতি।
বাতের ব্যথায় কাবু স্বপনবাবু এখন আর আগের মতো সচল নয়। তাই কলেজের মিড-ডে মিলের মালগুলো স্বপন সাধুখাঁর দোকান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেই আনার ব্যবস্থা করে। টগর এসে একদিন অন্তর হিসেব দিয়ে যায় আর তার সঙ্গে টাকাও নিয়ে যায় এই কলেজের প্রধানশিক্ষক পঙ্কজ বাবুর কাছ থেকে। গোগোল ভেবেছিলো এখানে টগর এলে তার সঙ্গে তো তার দেখা হবেই, তাই তার মামণি এবং হিয়াকে যখন সে কথা দিয়েছে, তখন আর সে ওদের বাড়ি যাবে না। দিন পনেরো পর ডাক্তার বসাক অবশ্য তার ক্লিনিকে একবার টগরকে নিয়ে যেতে বলেছেন, সেইসময় একটা ব্যবস্থা ঠিক করা যাবে। কিন্তু দিন দু'য়েক টগরকে দেখতে না পেয়ে কোনো কাজে ঠিক মতো মনোনিবেশ করতে পারছিলো না সে। এরপর পঙ্কজ বাবুকে জিজ্ঞাসা করে যখন সে জানতে পারলো - টগর জানিয়ে দিয়েছে, সে আর এর মধ্যে আসবে না, তাই কলেজ থেকে যারা স্বপন সাধুখাঁর দোকানে মাল আনতে যায় তারাই হিসেব নিয়ে টাকা দিয়ে আসে। তখন তার কপালে চিন্তার ভাঁজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলো। সে চিরকাল দায়িত্ব পরায়ণ একজন মানুষ। পরিস্থিতি পরিপ্রেক্ষিতেই হোক অথবা যে কোনো কারনেই হোক একজনের দায়িত্ব যখন সে নিয়েছে, তখন কাউকে কথা দেওয়ার জন্য সেই দায়িত্ব পালন না করতে পারাটা, গুরুতর অপরাধ বলেই সে মনে করে। কয়েক মুহূর্ত কিছু একটা চিন্তা করে সাইটের সহকারী সুপারভাইজারকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বাইকে করে কলেজ থেকে বেরিয়ে গেলো গোগোল।
★★★★
বাইকটা টগরদের বাড়ির সামনে স্ট্যান্ড করে রেখে ভিতরে ঢুকতে গিয়ে গোগোল দেখলো স্বপনবাবুর দোকান বন্ধ। সপ্তাহে সাতদিনই খোলা থাকে এই মুদিখানার দোকান। কিছুটা বিচলিত হয়ে বাইরে থেকে দু-একবার "স্বপনকাকু" বলে ডেকেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে গিয়ে দেখলো দরজা ভেজানো রয়েছে। আলতো ঠ্যালা দিতেই দরজার পাল্লাটা খুলে গেলো। বৈঠকখানার ঘরেও কেউ নেই। "টগর .. কোথায় তুই? তোরা সব কোথায় বলতো .. বাইরের দরজা খুলে বাড়ি ফাঁকা রেখে সব কোথায় গিয়েছিস?" এই কথাতেও কোনো উত্তর না পেয়ে ধীরে ধীরে বেডরুমে প্রবেশ করলো গোগোল।
শোওয়ার ঘরের ঢুকেই চমকে উঠলো গোগোল। বিছানার উপর হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে টগর। ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে তার। খাটের সামনে এসে টগরের দিকে তাকাতেই প্রচন্ডরকম অস্বস্তি বোধ করলো সে। তার চোখের সামনে বছর কুড়ির সদ্য যৌবনা ভরাট শরীরের অধিকারিনী টগর কোনোরকমে শুধুমাত্র একটি টাওয়েল জড়িয়ে শুয়ে রয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে কিছুক্ষণ আগেই স্নান করে এসেছে সে। সদ্যস্নাতা টগরের ভিজে চুলগুলো তার ফর্সা মুখমন্ডলে অবিন্যস্ত ভাবে ছড়িয়েছিলো, কানের লতি আর নাকের ডগায় কয়েকবিন্দু জল তখনো দৃশ্যমান। টাওয়েল আবৃত ভারী বক্ষযুগল ঘনঘন নিঃশ্বাসের সঙ্গে প্রকটভাবে ওঠানামা করছে। অত্যাধিক ফর্সা সামান্য ফাঁক হয়ে থাকা সুগঠিত দুই নগ্ন উরু যেন আহ্বান জানাচ্ছিলো নিজেদের দিকে। সেদিকে তাকিয়ে মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করে উঠলো গোগোলের। তৎক্ষণাৎ নিজের দুই চোখ বন্ধ করে ফেললো সে। কয়েক সেকেন্ড স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে আলতো করে তার কপালে হাত দিয়ে সে ডাকলো "টগর .. এই টগর .. ঘুমিয়ে পড়েছিস নাকি?" কপালে হাত ছোঁয়াতেই গোগোল বুঝতে পারলো জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে টগরের।
তখনই নিজের মায়াবী চোখদুটো সামান্য খোলার চেষ্টা করে জড়ানো কন্ঠে টগর বলে উঠলো "ওহ্ , তুমি এসেছো গোগোল দাদা! জানো তো বরফের কুচি মাখা মুখে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বলেছি আবার আগের মতো ভালো হয়ে গেলে একদিন হেঁটে হেঁটে বাজারে যাবো। তুমি তো ইলিশ মাছ খেতে খুব ভালোবাসো। মেছুনির সাথে দু'একটা আলগা তামাশা করে কিনে নিয়ে আসবো তোমার পছন্দের মাছ। আমি নিজে বাড়িতে মাছ কাটবো, বঁটির আগায় লেগে থাকবে রক্ত আর আঁশ। একদিন মনে মনে ভেবেছি গভীর রাতে, আলোয় আলোয় ভরে যাচ্ছে চারদিক। সেই আলোয় আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম আমার মায়ের মুখ। তবু আমার অসুখ সারে না কেনো গোগোল দাদা?"
"সারবে .. নিশ্চয়ই সারবে .. আমি আছি তো .. আমি বলেছি না, আমি সব ঠিক করে দেবো .. কিন্তু তোর গায়ে তো এখন খুব জ্বর, আমি যে কি করি! শিউলি কোথায় রে? আর তোর বাবা?" টগরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করলো গোগোল।
"শিউলি কলেজে আর বাবা মহাজনের কাছে গেছে কোনো একটা দরকারে। জানো তো, আজ সকাল থেকে আমি ভালোই ছিলাম। বাবা যখন বেরোলো, আমি তখন স্নান করছিলাম। ভাবলাম স্নান করে বেরিয়ে বাইরের দরজাটা আটকে দিয়ে তারপর ঘরের কাজকর্ম করবো। কিন্তু হঠাৎ করে অসম্ভব কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলো। কোনোরকমে বাথরুম থেকে বেরিয়ে বিছানায় এলাম, তারপর .. তারপর মাথাটা কেমন যেন ঘুরে গেলো আর কিছু মনে নেই .. ভাগ্যিস তুমি এলে .. যদি অন্য কেউ আসতো, তাহলে এই অবস্থায় আমাকে দেখে .. ইশ্ ছিঃ ছিঃ আমি তো ভাবতেই পারছি না। আমি যে উঠে জামা কাপড় পাল্টাবো, সে ক্ষমতাও আমার নেই জানো। শরীরে কোনো জোর পাচ্ছি না।" চোখদুটো পুনরায় বন্ধ করে মৃদুভাবে কথাগুলো বললো টগর।
অন্য কেউ আর সে যে এক নয় টগরের কাছে, তার কথায় সেটা বুঝতে পারলো গোগোল। টগরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই জিজ্ঞাসা করলো "হঠাৎ করে জ্বরটা কেনো এলো বলতো! ডাক্তার বসাককে একটা ফোন করতে হবে। ওষুধ খেয়েছিস?"
"কি হবে ফোন করে? যা হবার তা হবে। আমি তো জানিও না আমার কি হয়েছে .. জানতেও চাই না। তবে এবার আমার অসুখ সেরে গেলে তোমাদের বাড়ি যাবো একদিন। সরু হচ্ছে রাস্তা, দু-ধারে বেড়েছে ঝোপ। পথের উপর সাজিয়ে রেখো ফুল শুধু আমার জন্য। সেই সরু পথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে তোমাদের বাড়ি যাবো, কেমন! খুব গল্প করবো সুজাতা মাসির সঙ্গে। তোমার কথা শুনবো, হিয়া দিদির কথা শুনবো, তোমাদের বিয়ের কথা শু..ন..বো.. তোমরা কবে বিয়ে করছো গো? আমার যে আর শ্যামা সাজা হলো না গোগোল দাদা!" জড়ানো গলায় কথাগুলো বলতে বলতে আবার নিজের দুটো চোখ খোলার চেষ্টা করলো টগর।
চোখের কোণ দুটো হঠাৎ করে জ্বালা করতে শুরু করলো গোগোলের। গলাটা কিরকম যেন ভারী হয়ে এলো তার। অনেক চেষ্টা করেও গলা দিয়ে একটা কথাও বের করতে পারলো না সে। শুধু অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো টগরের দিকে।
আধো ঘোর আধো জাগরণে টগর বলে চললো "আমার খুব লজ্জা করছে গোগোল দাদা, প্লিজ চাদরটা একটু আমার গায়ে টেনে দেবে? যেভাবে জলের পাত্র থেকে ফোঁটা ফোঁটা জলকণা বাতাসে মিলিয়ে যায়, পাত্রের জল কমে আসে ধীরে ধীরে। যেভাবে একদিন সকল জলাধার আংশিক হয়ে যায় উন্মুক্ত আকাশ নিচে .. ঠিক সেভাবেই আমার প্রাণবায়ু বোধহয় আস্তে আস্তে কমে আসছে। গোগোল দাদা .. তুমি কোথায়! আমার হাতটা ধরবে একটু? জলপান শেষে অংশত আকাশ দেখে পৃথিবীর তৃষ্ণা মিটছে ধীরে ধীরে। মেঘের ভিতরে সযত্নে রাখা জীবনের দুঃস্বপ্নে ভেঙে যায় ঘুম। নিচে মাটিতে ধুলোয় ঝুঁকে থাকা মুখগুলো হারানো খেলনা আর ভাঙা বাসনের কানা যেন প্রেম মাখামাখি করে পড়ে থেকে একত্রে ঘুমায়। সেগুলো কুড়াতে গিয়ে দেখেছো কি আমায়? সারাদিন হাবিজাবি জড়ো করা মেঘ, আকাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড় আর অপেক্ষায় আমি। গোগোল দাদা .. তুমি কোথায়! আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না কেনো .." পুনরায় জ্ঞান হারালো টগর।
★★★★
"তুই এখন কোথায়?" অনেকক্ষণ ধরে বাজতে থাকা ফোনটা রিসিভ করার পর ফোনের ওপাশ থেকে সুজাতার কন্ঠ ভেসে এলো।
"গাড়িতে .. বাড়ি আসছি .." বাইকটা রাস্তার একপাশে দাঁড় করিয়ে উত্তর দিলো গোগোল।
"এক্ষুনি আয় .. দরকার আছে .." এই বলে ফোনটা তৎক্ষণাৎ কেটে দিলো সুজাতা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়িতে পৌঁছালো গোগোল। সদর দরজা খোলাই ছিলো, ভিতরে ঢুকে দেখলো ড্রয়িংরুমে তার মামণি আর ডাক্তার আঙ্কেল দুজনেই বসে রয়েছে। "বলো .. কি ব্যাপার? জরুরী তলব .."
গোগোলের এই প্রশ্নে ডাক্তার দাশগুপ্ত কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, তাকে থামিয়ে দিয়ে সুজাতা বলে চললো "আজ তুই প্রমাণ করে দিলি, তুই আমাকে ভালোবাসিস না। শুধু আমাকে কেনো, তুই পৃথিবীর কাউকেই ভালবাসতে পারিস না। সেদিন হিয়া তার মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে তোকে সাপোর্ট করলো, কেনো জানিস? ও তোকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে, তাই। আমার কথা তো ছেড়েই দে, তুই ওই মেয়েটারও কথার কোনো মূল্য দিলি না। এতবার বারণ করা সত্ত্বেও তুই আজ আবার গিয়েছিলি টগরদের বাড়ি? তোর বাইক ওর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে কাবেরী নিজে। আমি জানি ওই সর্বনাশী টগর তোকে নিজের ছলাকলায় বশ করেছে। আমি সেদিনকেই বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম কথাটা, কিন্তু ওদের সামনে বলতে পারিনি। কাবেরী ঠিকই বলে .. তুই হিয়ার যোগ্য নয়। তুই কোনোদিন কারোর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়। কেনো জানিস? কারণ তুই হলি স্বার্থপর .. ঠিক তোর বাবার মতো। অনিরুদ্ধদার রক্ত বইছে তোর শরীরে। যে নিজে কোনোদিন সুখে থাকতে পারেনি, তার চারপাশের লোকজনকেও সুখে থাকতে দেয়নি। একটার পর একটা জীবন নষ্ট হয়েছে শুধুমাত্র তোর বাবার ভুলে। তার রক্তই তো তোর শরীরে বইছে .. তুইও একই জিনিস তৈরি হয়েছিস। এত ভালো একটা মেয়েকে পেয়েও তোর মন ভরেনি। এখন টগরের পিছনে দৌড়াচ্ছিস .. ছিঃ ভাবতেও আমার ঘেন্না করে .."
"জাস্ট কিপ ইওর মাউথ শাট সুজাতা .. এইসব কি বলছ তুমি? ওকেও তো কিছু বলার সুযোগ দাও! কিছু না জেনে, না শুনে একটা ছেলেকে এইভাবে কেনো একিউস করছো তুমি?" সুজাতাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন ডক্টর দাশগুপ্ত।
"তুমি চুপ করো .. আমি যা বলছি একদম ঠিক বলছি .. কতদিন চেনো তুমি গোগোলকে? যেটুকু চেনার, আমার সূত্রই তো চিনেছো।" তার স্বামীর উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে, আবার গোগোলের দিকে তাকিয়ে বললো "ছোটবেলায় বাবা-মা কারোর ভালোবাসা পেলি না, এখন হিয়াকেও হারালি। কাবেরী আজ আমাকে ফোনে বলে দিলো .. হিয়ার সঙ্গে তোর সম্পর্কের এখানেই ইতি। আর এটা ও হিয়ার মত নিয়েই বলেছে। তুই তো এটাই চেয়েছিলি .. তাই না? তোর বাবা যেরকম তোর মায়ের জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছিলো, ঠিক তেমনি ভাবে তুইও আজকে .."
"মামণি .. তুমি ঠিকই চিনেছো আমাকে .. আমি এই মুহূর্তে বেশি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই .. শুধু এটুকুই বলবো, ভালো থেকো তোমরা .. হিয়াকেও বলে দিও, ও যেন ভালো থাকে .." কথাগুলো বলে মুহূর্তের মধ্যে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো গোগোল।
"এটা তুমি কি করলে সুজাতা, কি করলে? কেনো এভাবে কথা বললে ওর সঙ্গে? ও তো চলে গেলো .. আটকাও ওকে.." উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বললেন ডক্টর দাশগুপ্ত।
"এ্যাঁ? চলে গেলো .. কোথায় চলে গেলো? সত্যিই তো, আমি .. আমি রাখতে পারলাম না আমার দিদিকে আর অনিরুদ্ধদাকে দেওয়া কথাগুলো। গোগোল .. গোগোল রে .. সোনা মানিক আমার .. রাগের মাথায় মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে রে কথাগুলো .. ক্ষমা করে দে তোর মামণিকে .." এই কথাগুলো বলতে বলতে ঘর থেকে বেরিয়ে সুজাতা দেখলো কেউ কোত্থাও নেই।
(ক্রমশ)
ভালো লাগলে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন
লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন