20-01-2023, 08:48 PM
(This post was last modified: 20-01-2023, 08:50 PM by nextpage. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব - নয়
মায়ের খিলখিলিয়ে হাসতে থাকার শব্দটা মাধুরীর শ্রবণযন্ত্রে ব্যাপক পীড়া দিয়ে যাচ্ছিলো। মস্তিষ্কের স্নায়ুযুদ্ধে হাত পায়ের পেশি গুলো কেমন যেন কঠিন হয়ে আসছিলো ধীরে ধীরে। এমন না ওর মায়ের হাসি এই প্রথম শুনছে সে তবে একজন অপরিচিত পুরুষের কন্ঠস্বর শোনা তাও আবার বাড়ির রান্নাঘর থেকে সেটা কোনমতেই সহ্য করতে পারছিলো না মাধুরীর চটে থাকা ইন্দ্রিয় গুলো। এখন পর্যন্ত আমাদের সমাজের শোবার ঘরের পর যদি কোন অতন্ত ব্যক্তিগত কোন স্থান থাকে বাড়িতে সেটা রান্নাঘর। আর সেখানেই অপরিচিত এক ব্যক্তির সাথে মায়ের ওমন হাসির মূহুর্ত মাধুরীর সারা গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছিলো। মাধুরী আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না ইচ্ছে করছে এখনি রান্নাঘরে প্রবেশ করে ঐ ব্যক্তিটার সামনেই কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিয়ে নিজেকে শান্ত করতে।
হিউম্যান ন্যাচার টাই এমন নিজের ব্যক্তিগত জীবনে কারও হস্তক্ষেপ গ্রহনযোগ্য না হলেও পরিচিত কিংবা আপনজনের ব্যক্তিগত জীবনের মূহুর্ত নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে খুবই উত্তেজিত হয়ে থাকে। মাধুরী তার নিজের জীবনের মায়ের কোন কথাই গ্রাহ্য করতে চায় না যেটাকে সে বলে তার ব্যক্তিগত ব্যাপারে মায়ের অনুপ্রবেশ। কিন্তু এখন সে ঠিক একই কাজ করতে চাইছে, তার মা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তার নিজের ব্যক্তিগত অনেক কিছুই থাকতেই পারে সেখানে সে মাধুরীর উপস্থিতি কিংবা কোন ধরনের মন্তব্য অগ্রাহ্য করতেই পারে। উনি কার সাথে কথা বলবে কার সাথে সময় কাটাবে সেটা একান্তই তার নিজের বিষয় অন্তত মাধুরী মতাদর্শে তো সেটাই হবার কথা। তাই নয় কি!
মাধুরী প্রায় দরজা পর্যন্ত এসেই গিয়েছিল এখন ব্যবধান মাত্র একটা রঙিন পর্দা। হঠাৎই ঠাম্মির কন্ঠস্বরটা কানে পৌঁছাতেই পা দুটো থমকে দাঁড়ায় সেখানেই,
এই বুড়ি কে তোমার মনে ধরেছে বুঝি, তাহলে তো ওকে আমার চা করেই খাওয়াতে হয় কি বলো বৌমা!
(কথাটা শেষ করেই হে হে করে হাসতে থাকে মাধুরীর ঠাম্মি)
না গো সুন্দরী তোমাকে আগুনে পুড়তে হবে না আজ। এখানে যখন এসেই পড়েছি তখন তোমার হাতে চা তো অনেক খাবো। তবে আজ আন্টি যখন চা করেই নিয়েছে তাহলে সেটাই খেয়ে নেই নইলে আন্টি যে আবার কষ্ট পাবে।
না না এখন আর আমার মন রাখতে হবে না। তুমি বরং ওনার হাতেই চা খাও আর প্রেম করো দুজনে। আমি এখানে থাকলে তোমাদের ডিস্টার্ব হবে তার চেয়ে আমি বাইরে চলে যাই কি বলো!
(আবারও মাধুরীর মা হাসতে থাকে তবে আগের চেয়ে একটু মৃদু স্বরে সেটার সাথে খানিকটা অভিমান মেশানো)
মাধুরী একটু একটু করে পিছিয়ে আসে সেখান থেকে, আর মনে মনে ভাবতে থাকে কি না কি ভাবছিলো খানিক আগেই তাও আবার নিজের মা কে নিয়ে। সেখানে ঠাম্মিও ছিল সেটা আগে একবারও ভাবে নি সে আর অপরিচিত পুরুষ কন্ঠটা যে তার ঠাম্মির সাথে ফ্লার্ট করছিলো সেটা তো কল্পনারও বাইরে। ভাগ্যিস দাঁড়িয়ে গিয়েছিল ওখানেই নয়তো কি না কি বলে ফেলতো কে জানে। মাধুরী আর সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে সিঁড়ি ধরে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।
তুলসী তলায় প্রদীপ ধরিয়ে পেছন ফিরতেই একটা ছায়া দেখে আঁতকে উঠে লক্ষ্মী। অন্ধকার বাড়িতে প্রদীপের আলোতে যতটুকু আলোকিত করে চারপাশ তার থেকে বেশি অন্ধকারের অস্তিত্বের ব্যাপকতা প্রকাশ করে বেশি। আশেপাশের ঝোপঝাড় থেকে ঝিঁঝি পোকার শব্দ প্রকৃতির নীরবতাটাকে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দিয়েছে লক্ষ্মীর চারপাশে। এমন সময়ে বাড়িতে দুটি মাত্র প্রাণ তারমাঝে ছোট্ট ছেলেটাকে নিয়ে যে কারও মনে ভয় ধরাটাই তো স্বাভাবিক। লক্ষ্মী একহাতে আঁচল টাকে সামলে ধরে প্রদীপ টা হাতে নিয়ে আশপাশ টা দেখতে থাকে আর বলে উঠে,
কে....ক... কে ওনে?
অন্ধকারের ভেতর থেকে একটা ছায়ামূর্তি বেড়িয়ে আসে ছোট্ট ছোট্ট পদক্ষেপে, মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না এখান থেকে লক্ষ্মী এবার চেঁচিয়ে ওঠে,
কে ওইখানে? সামনে আইবা না কইয়া দিলাম আমি কিন্তু চেঁচামু।
লক্ষ্মীর চেঁচানো শুনে বিপরীতের মানুষটা পা চালিয়ে ওর সামনে চলে আসে আর হাত দিয়ে ওর মুখ চেঁপে ধরে বলে উঠে,
আরে আরে কি করতাছো, আমি নিখিল গো... নিখিল। এমনে কেউ চেঁচায় নাহি৷
প্রদীপের আলো তে নিখিলের মুখখানা স্পষ্ট হতেই ভীত মস্তিষ্ক শান্ত হলেও মন বা শরীর কোনটাই শান্ত হয় না লক্ষ্মীর। খানিকের ভয়ে কপাল জুড়ে ঘামের দেখা দিয়েছে সেই সাথে দ্রুত চলতে থাকা শ্বাস টা এখনো তেমন করে থামেনি। সেই সাথে নিজের মুখের উপর নিখিলের হাতের স্পর্শ তো আগুনে ঘি ঢালার মতই কাজ করছে লক্ষ্মীর শরীর জুড়ে। নিখিলের ছোঁয়া পাওয়া মাত্রই সারা শরীর জুড়ে অদ্ভুত এক অনুভূতির ঢেউ খেলে যাচ্ছে। তবে এই অনুভূতি লক্ষ্মীর কাছে নতুন কিছু নয় তবে শরীর আর মনে যেন আজ নতুন হয়ে ধরা দিয়েছে। যেন সদ্য ফোঁটা ফুলে প্রকৃতির হিমেল বাতাসের প্রথম স্পর্শে নাড়িয়ে দিয়ে যাওয়া। উদিত সূর্যের আলোতে দিনের প্রথম প্রকাশের আভায় রঞ্জিত মুখমণ্ডল। হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনায় লক্ষ্মীর শরীর ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে সেই কাঁপুনি নিখিলের নজর এড়ায় না। সাথে সাথেই নিখিল নিজের হাত শরীরে নেয় আর খানিকটা পিছিয়ে যায় লক্ষ্মীর কাছ থেকে।
নিখিল সড়ে যেতেই লক্ষ্মী যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। পড়নের শাড়িটা টেনে নিজের ব্লাউজ বিহীন ভারী বুকটাকে আরও একটু আড়াল করার চেষ্টা করে নিখিলের নজর থেকে। একটু আগেই কাজ থেকে ফিরে স্নান করেছিল লক্ষ্মী আর সন্ধ্যা প্রদীপ ধরাবে বলে শুধু একটা ধোঁয়া শাড়ি গায়ে পেঁচিয়ে নিয়ে তুলসী তলায় এসেছিল। পিঠ জুড়ে এখনো বিন্দু বিন্দু জলকণা সেটারই বয়ান দিয়ে যাচ্ছিলো। হালকা ভিজে থাকা শরীরের শাড়িটা একটু বেশিই চেপে বসে আছে আর তাতেই লক্ষ্মীর শরীরের প্রতিটা বাঁক আর বেশি করে ধরা দিচ্ছে নিখিলের তীক্ষ্ণ নজরে৷ সেটা যে লক্ষ্মী বুঝতে পারছে না তা কিন্তু নয় তবে কেন জানি ওমন করে চাহনির মাঝেও ভিন্ন স্বাদের একটা সুখ খুঁজে পাচ্ছিলো সে। মনের অজান্তেই প্রিয় হয়ে উঠা মানুষের চোখে নিজেকে প্রতিবিম্বিত হতে দেখাটাও মনের ক্ষুধা মেটায়। এর মাঝেই আঁচলে নিজেকে আরেকটু আবৃত করার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে সে। তবে ঐ পুরনো পাতলা শাড়ীতে ওমন ভারী অনাবৃত বুকের সৌন্দর্য কি চাইলেই আড়াল করা যায় কি!
কপালের পাশ বেয়ে নেমে যাওয়া কয়েক গোছা ভিজে চুল থেকে ফোঁটা ফোঁটায় নেমে আসা জলের বিন্দু গুলো অনেক আগেই বুকের উপরের অংশটা ভিজিয়ে দিয়েছিলো আগেই। সেখানটার ভিজে ভাবটা এখন ছড়িয়ে পড়েছে আরও অরেকটা জায়গা জুড়ে আর চেপে বসে আছে লক্ষ্মীর ভারী বুকের উপর। প্রতিটা শ্বাসের সাথে বুকের উঠানামা যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে নিখিলের চোখের সামনে। ঐ সামান্য প্রদীপের আলোতেও যেন লক্ষ্মীর সৌন্দর্য ঠিকরে পড়ছে চর্তুদিকে। এমনিতেই ভেজার চুলে নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে স্নানের পর যখন ভেজা চুলে কোন পুরুষের সামনে এসে দাঁড়ায় তখন বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষের বুকের ভেতর কেমন উথাল-পাতাল শুরু হয় সেটা কয়েকটা লাইনে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। নিখিল পলকহীন বিভোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর মুগ্ধ হচ্ছে লক্ষ্মীর মাঝারী গড়নের শ্যামলা সৌন্দর্যে। ওদিকে ওর পড়নের পাতলা শাড়ির আড়ালে থাকে স্তন বোঁটা গুলো যেন নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে বেশ ভালো করেই। কোমড়ের কাছে হালকা মেদের উপস্থিতিতে পড়া ভাজটা আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে ওকে। নিখিলের অবাধ্য চোখ জোড়া আজ যেন আয়েশ করে দেখে নিচ্ছে লক্ষ্মীকে।
নিখিলের ওমন বুভুক্ষুর মত তাকিয়ে থাকা লক্ষ্মীর শরীর জুড়ে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে যাচ্ছে, প্রতিবার চোখের পলক পড়ার সাথে সাথে শিউরে দেহের প্রতিটা লোমকূপ। শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যাওয়া শীতল স্রোত টা উষ্ণ হয়ে ফিরে আসছে নিজের নিম্নাঙ্গের কাছ থেকে আর সেই উষ্ণতা পুরোর শরীরটা একটু একটু করে তপ্ত করে তুলছে আর শেষটায় গরম নিঃশ্বাস হয়ে বেড়িয়ে আসছে নাসিকাপথে। নিজের শরীর টাকে কেমন যেন অসার লাগছে নিজের কাছে, চাইলেও নিজের জায়গাটা ছেড়ে নড়তে পারছে না সে। নাকি মন বা শরীর কেউই চাইছে না নিখিলের নজরের বাইরে যেতে, নাহলে ওমন আধা আবৃত শরীর নিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে না থেকে ঘরে চলে যেতে পারতো তখনি। ভেতরের দুর্বলতা এবার যেন বেড়িয়ে আসতে চাইছে, নিজেকে সামলানো টা কঠিন হয়ে পড়বে আর কিছুক্ষণ এভাবে কেটে গেলে। এই মূহুর্তে যদি নিখিল এগিয়ে আসে তবে ওকে বাঁধা দেবার মত শক্তি যেন আর অবশিষ্ট নেই লক্ষ্মীর শরীরের। কোন একটা ছুতো খুঁজে চলেছে দুজনার ধ্যান ভাঙার।
হঠাৎ করেই ঘরের বাইরের ঝুলতে থাকা ষাট পাওয়ারের জ্বলে উঠতেই দুজনেই দুজনার থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। এই ফাঁকেই লক্ষ্মী কোনমতে দৌড়ে ঘরে ঢুকে যায়। খানিক বাদেই বেড়িয়ে আসে পচুই কে সাথে নিয়ে, এর মাঝেই নিজের শাড়ি পাল্টে নিজেকে বেশ আবৃত করে নিয়েছে সে,
আপনে এহন এইহানে?
এমনেই আইলাম ক্যা আমি কি আইতে পারি না নাকি?
হেইডা না, তয় মাইনসে দেখলে বাজে কতা কইবো।
কেডা কিতা কইবো! আমি কাউরে ডরাই নাকি? দিনের বেলাত তো তর লগে কতাই কওন যায় না। তাই ওহন আইলাম।
কি কইতান? (লক্ষ্মীর নিজেরও কথা বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু সমাজের কে কি বলবে সেটারও ভয় যে আছে ওর। কিছু হলে সব দোষ নারীর উপরই আসে) তাড়াতাড়ি কইন আর না হইলে ওহন যাইন গা দিনের বেলায় কইন যে।
নিখিল খানিক হলেও বুঝতে পারে লক্ষ্মীর কিসের আশঙ্কায় এমন ভাবে কথা বলছে,
তেমন কিছু না বাজারে গেছিলাম তোর লাইগা জিলাপি আনছি। (হাত বাড়িয়ে জিলাপির ঠোঙা টা লক্ষ্মীর হাতে দিয়ে দেয়) এই নেও, আমি ওহন জাইগা। অনেক কাম রাইখা আইছি।
কথাটা শেষ করেই লক্ষ্মীর দিকে একটা ক্ষীণ হাসি ছুড়ে দিয়ে নিখিল পা চালিয়ে বেড়িয়ে যায়।
লক্ষ্মী কাতর চোখে নিখিলের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। অন্তর থেকে ভেসে আসছিলো আর কিছুক্ষণ থাকার আকুতি কিন্তু সেই অব্যক্ত শব্দ গুলো গলার কাছে এসে দলা পাকিয়ে যাচ্ছিলো। ও নিজেই তাড়া দিচ্ছিলো চলে যাবার জন্য কিন্তু চলে যাবার পর কষ্ট টাও ওর বেশি হচ্ছে কেন? সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেও কেন জানি হঠাৎ ছোট্ট হাসি ফুটে উঠে ঠোঁটের কোনে আর হাতে থাকা জিলাপির ঠোঙ্গাটার দিকে তাকিয়ে সেই হাসি আরও প্রশস্ত হয়। লক্ষ্মী পচুইয়ের হাত ধরে ঘরের দিকে চলে যাবার আগে পেছন ফিরে যেন কিছু একটা খুঁজে নেয় আরেকবার।
দোকান বন্ধ করে খানিক আগেই বাড়ি ফিরে এসেছে বশির চাচা, কলপাড়ে হাত পা ধুয়ে গামছায় হাত মুখ মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকছে। আগে থেকেই মাটিতে মাদুর পেতে খাবারের আয়োজন করে রেখেছেন তার স্ত্রী ছেলে মেয়েরা একে একে নিজের জায়গায় বসে পড়েছে এবার তার বসার অপেক্ষা। গামছা আলনার দিকে ছুড়ে দিয়ে দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বড় মেয়ের পাশে বসে পড়লেন। বড় মেয়ে আলেয়ার প্রতি তার স্নেহ টা যেন একটু বেশিই, এ নিয়ে বাকিদের অনেক ক্ষোভ পিতার প্রতি তবে তিনি বরাবরই হেসে সব অভিযোগের অন্ত টানেন।
বছর বিশেক আগের কথা বশির চাচার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ তেমন অবস্থায় আলেয়ার তার মায়ের গর্ভে আসার খবর পায় তারা। অনেক অভাব অনটনের মধ্যেই বশির চাচাদের কোল আলো করে জন্ম নেয় আলেয়া। অলৌকিক ভাবে আলেয়ার জন্মের পর বশির চাচার ভাগ্যের চাকাও ঘুরে যায়। হয়তো তেমন কোন জমি জায়গা কিংবা ব্যাংক ব্যালেন্স গড়ে ওঠেনি নি তবে খেয়ে পড়ে ভালো মতেই বেঁচে আছা তারা। আর বশির চাচা মনে করে তার ভাগ্য বদল হয়েছে মেয়ে হাত ধরেই তাই হয়তো বড় মেয়ের প্রতি তার মনের দুর্বলতা টা একটু বেশিই তবে বাকিদের অনাদর করেন এমন কিন্তু নয়।
খেতে বসে বশির চাচা আজকের কোন একটা বিষয় নিয়ে আলেয়ার সাথে কথা বলে যাচ্ছে সেই তখন থেতে কিন্তু সেদিকে কোন মনোযোগ নেই আলেয়ার। আনমনা আলেয়া খাবারের প্লেটে আঙুল ঘুরিয়ে যাচ্ছে তখন থেকে আর মাঝে মাঝে কিছু একটা ভাবার অবকাশে মুচকি হেসে উঠছে। নিজের ভাবনার দুনিয়াতে সে এতটাই বিভোর হয়ে আছে যে পাশে বসা বশির চাচা যে তাকে কিছু বলছে সেটা কর্ণপাত হচ্ছে না। আলেয়ার আজ হলো টা কি তার মন কোথায় কেনই বা সে ক্ষণে ক্ষণে হেসে উঠছে আনমনে৷
কলেজ শেষে আজ সোজা বাড়ি চলে আসার কথা ছিল আলেয়ার, কলেজ শেষে যে টিউশনি টা করায় সেটা আজ ছুটি ছিল। তবে আলেয়ার মন বুঝি অন্য কিছু চাইছিলো তাই হয়তো কলেজ শেষেও সুমনের জন্য অপেক্ষা করছিলো মুক্তমঞ্চের কাছে৷ আজ সুমনের একটা এক্সট্রা ক্লাস ছিলো তাই মনে মনে ভাবছিলো আলেয়ার সাথে বুঝি দেখা হবে না। সেই জন্য মনের কোনে খানিক বিষাদের মেঘও জমে ছিল তবে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে ক্যাফেটেরিয়া তে যাবার পথে মুক্তমঞ্চে আলেয়াকে নজর পড়তেই সেই বিষাদের মেঘ সরে গিয়ে ঝলমলে রোদের দেখা দিয়েছে। সুমন পা চালিয়ে সেদিকে চলে যায়,
কারও জন্য অপেক্ষা করছো নাকি?
বইয়ের পাতায় মুখ গুজে রাখায় সুমন যে পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে সেটা আগে খেয়াল করে নি, হঠাৎ ওর গলার আওয়াজ কানে বাজতেই কিঞ্চিৎ আতকে উঠে উপরের দিকে মাথা তুলে তাকায়,
ন...না মানে কার জন্য অপেক্ষা করবো আবার!
তাহলে বসে আছো যে? আজ টিউশনি নেই?
নিজেকে ধরা দেবে না বলেই হয়তো খানিকটা জোড় গলাতেই বলে উঠে,
আমার ইচ্ছে আমি বসে থাকবো নাকি দাঁড়িয়ে থাকবো। না আজ টিউশনি নেই, আপনার কোন দরকার আছে নাকি সুমন ভাই?
সুমন মুচকি হেসে বলে উঠে,
না, তবে তেমন কোন কাজও নেই। তাই তোমার সাথে এখানে বসতেই পারি।
আলেয়া ইতস্তত বোধ করতে থাকে এখন কি বলবে সেটা বুঝে পায় না,
বসলে বসুন আমি এখন চলে যাবো...
কথাটা বলেই আলেয়া উঠে চলে যেতে নেয় তখনি পেছন থেকে সুমন আলেয়ার হাতটা ধরে নেয়,
আমি কি তোমাকে বিরক্ত করছি?
সুমনের কথাটা শুনে আলেয়ার মনটা খারাপ হয়ে যায়। আসলে এই সবকিছুই ওর কাছে নতুন তাই কেমন করে সামলে উঠবে সেটা বুঝতে পারছেনা। তাই হয়তো ওর আচরনে সুমন কষ্ট পেয়েছে, কিন্তু ও তো কষ্ট দিতে চায় নি,
না না সুমন ভাই, এটা কি বলেন! বিরক্ত করবেন কেন, আমি তো এমনিতেই...
আলেয়া কে বাকিটা বলতে না দিয়েই সুমন এসে আলেয়ার পাশে দাঁড়ায়,
থাক আর কিছু বলতে হবে না, আমি সবটা বুঝে নিয়েছি। চলো বাড়িতে যাবেতো নাকি?
আলেয়া শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে সুমনের পাশেই হাঁটতে থাকে। তখনো আলেয়ার হাতটা সুমনের হাতের মুঠোতেই বন্দী।
সেটা ভাবতে ভাবতেই এখন খেতে বসেও মুচকি মুচকি হাসছে। এই প্রথম কোন অন্য পুরুষের স্পর্শ পেল আজ, সেটার অনুভূতি যে এতটা উচ্ছাস আনন্দ ছড়িয়ে দিবে মন হৃদয় শরীর জুড়ে সেটা আলেয়া কখনো কল্পনাও করতে পারে নি। দেহের প্রতিটা লোমকূপে যেন ঢেউ খেলে যাচ্ছিলো অদ্ভুত অচেনা অনুভবের জোয়ারে। এখনো যেন সেটার রেশ রয়ে গেছে শরীর জুড়ে। কেন জানি সুমনের স্পর্শ টা ভালো লাগছিল ওর কাছে তাই হয়তো টের পেয়েও হাতটা ছাড়িয়ে নেবার কেন চেষ্টাই করে নি সে।
হঠাৎ ছোট ভায়ের ধাক্কায় নিজের সম্বিত ফিরে পায় আলেয়া। পাশ থেকে ছোট ভাই বলে উঠে,
কিরে অাফা আব্বা তরে কিতা কয় তুই জবাব দেস না কে?
আলেয়া থতমত খেয়ে চারপাশে তাকিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করতে থাকে।
কানে এয়ারফোন গুজে পড়ার টেবিলে একমনে কিছুটা একটা লিখে চলেছে মাধুরী তবে তার কাজটা বেশিক্ষণ চালিয়ে যেতে পারে না ছোট বোনের হস্তক্ষেপে। ওর ছোট বোন কিছু একটা দেখানোর চেষ্টা করঠে ওকে, বিরক্তি নিয়ে মাধুরী সোজা হয়ে বসে,
কিরে তোর পড়াশোনা নেই নাকি, কি তখন থেকে গুতিয়ে যাচ্ছিস।
তোর জন্য কি এনেছি সেটা তো দেখ, তারপর আমার সাথে চিল্লাচিল্লি করিস।
হাতে থাকা একটা আর্ট পেপার মেলে ধরে মাধুরীর সামনে। সেদিকে চোখ ফেরাতেই অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে পেপারে আঁকা ছবিটার দিকে। মাধুরীর যেন নিজের চোখ জোড়াকেই বিশ্বাস হচ্ছে, আর্ট পেপারে যে ওর নিজের একটা ছবি আঁকা আছে। দেখে মনে হচ্ছে ছবিটা একদম জীবন্ত, বিস্ময় ভরা কন্ঠে বোনকে জিজ্ঞেস করে,
কিরে এটা কোথায় পেলি?
(লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো ওর মুখ খানা, কিছুটা ন্যাকামি করেই বললো)
কোথায় আবার আমার বয়ফ্রেন্ড দিয়ে গেল একটু আগে।
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
তোর বয়ফ্রেন্ড! হেঁয়ালি না করে সত্যি করে বল কে এঁকেছে এটা? না হলে মার খাবি কিন্তু বলে দিলাম।
হেঁয়ালি করতে যাবো কেন রে দিদি। সত্যি বলছি আমার বয়ফ্রেন্ড দিয়ে গেছে ঐ যে আজ বিকেলে এসেছিল বাসায়। (চোখ দুটো বড় বড় করে) জানিস ও না দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম, আর সে কিনা নিজেই বললো আমি নাকি অনেক কিউট আজ থেকে আমি তার গার্লফ্রেন্ড। তখনো কতগুলো ছবি এঁকে দিলো, তোর মনে নেই আমি যে রঙ করছিলাম।
মাধুরী অবাক হয়ে ছোট বোনের কথা শুনতে থাকে, কার কথা বলছে ওর বোন? সেটা কি ঐ বিকেলে শোনা অপরিচিত পুরুষ কন্ঠের মানুষটা নাকি?
আচ্ছা কোথায় থাকে তোর বয়ফ্রেন্ড? আমাকে দেখাবি না?
দেখাবো না কেন? ঐ তো আমাদের সামনে ঐ জংলা বাড়িটা ছিল না এখন যে রং টং করেছে। ওরা তো সেখানেই উঠেছে।
ওরা বলতে কারা? কয়জন?
উনি আর উনার মা, দুজনেই এসেছিল। এই দেখ আমার ছবিও এঁকেছে একটা।
মাধুরী বোনের হাত থেকে অন্য ছবিটা নিয়ে মুগ্ধ নয়নে
তাকিয়ে থাকে। আহা! এতো সুন্দর করেও কারও ছবি আঁকা যায় সেটা তো ওর জানাই ছিল না, এতো প্রাণবন্ত সজীব ছবি এর আগে কোথাও দেখেছে মনে পড়ছে না। মানুষটা কে? ঐ মানুষটাই কি তবে রাতে মাউতারগান বাজায়? আবার এতো সুন্দর ছবি আঁকে? একবার তো তাকে দেখতেই হচ্ছে....
রুমা খাওয়া শেষে মায়ের হাতে হাতে টুকটাক কাজ শেষ করে মাত্রই নিজের ঘরে এসেছে। গামছা দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে খেয়াল করলো টেবিলের উপর থাকা মোবাইলের নোটিফিকেশন লাইটটা বারবার জ্বলছে আর নিভছে। টুক করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বিছানার কাছে চলে যায় সে, যেটা ভেবেছিল সেটাই অনির্বাণ ফোন করেছিল। কিন্তু ও তখন ঘরে না থাকায় টের পায় নি। রাতে ছোট বোন ওর পাশেই ঘুমায় তাই চাইলেও ফোন করতে পারছে না রুমা। কিন্তু ওর মনও চাইছে কথা বলতে, তাই মেসেজ করে
জেগে আছো কি?
সাথে সাথে রিপ্লে আসে যেন মোবাইল হাতে নিয়েই বসে ছিল,
হুম, কোথায় ছিলে? ফোন করেছিলাম তো...
ঘরে ছিলাম না, খাওয়া শেষে মা কে একটু সাহায্য করছিলাম কাজে। তুমি খেয়েছো?
হুম অনেক আগেই, আজ বিকেলে তেমন কিছু খাওয়া হয় নি তো তাই খিদে পেয়ে গিয়েছিল।
ওহহ! কাল তো পরিক্ষা তা এখন ঘুমিয়ে পড়ো, কাল সকাল সকাল উঠে একটু চেক করে নিবে আবার।
হুম(মন খারাপের ইমোজি)
কি হলো?
তোমাকে একটু দেখতে ইচ্ছে করছে জান।
তা কাল পরিক্ষা শেষে দেখা করো...
নাহ! এখনি দেখতে ইচ্ছে করছে। ভিডিও কল দেই...
পাগলামি করো কেন শুধু, কাল তো দেখা করবো বললাম নাকি।
ওহহহ আচ্ছা, গুড নাইট
এইতো আবার মুখ গোমড়া করে নিলে, তোমাকে নিয়ে কি যে করি। বোন আছে ঘরে বেশিক্ষণ কথা বলতে পারবো না বলে দিলাম।
ওকে জান (হাসির ইমোজি)
মিনিটের মাঝেই হোয়াটসঅ্যাপ এ অনির্বাণ কল করে, রুমা বোনের দিকে আরেকবার ভালো করে দেখে নিয়ে রুমের দরজাটা বন্ধ করে দেয়৷ ফিরে এসে কানে এয়ারফোন লাগিয়ে কল রিসিভ করে,
দেরি হলো কেন?
দরজা বন্ধ করে এলাম, আর বোনও ঘরে আছে। তুমি তো এসব বুঝবে না...
বুঝার দরকার নেই, এতো বুঝে লাভ কি? আমার তুমি হলেও হলো।
বুঝেছি বুঝেছি রাত বিরাতে এতো রোমান্টিক হতে হবে না।
প্রেমে পড়লে মন এমনিতেই রোমান্টিক হয়ে যায়, তোমাকে দেখলেই আমার মনটা ভালো হয়ে যায় এখন মনে হচ্ছে কাল পরিক্ষা টা খুব ভালো হবে। লাভ ইউ জান।
লাভ ইউ টু...
রাতে নিজের ঘরে রুমা ওড়না ছাড়াই ভিডিও কলে কথা বলছিলো তার প্রেমিকের সাথে। ঢিলেঢালা জামার বুকের কাছে ফাঁক গলে মাঝেমধ্যেই নিজের ভারী বক্ষ বিভাজিকা না চাইতেও প্রদর্শিত হয়ে যাচ্ছিলো ফোনের অপরপ্রান্তে বসে থাকা অনির্বাণের চোখে। তাইতো মাঝে সাঝে চিকচিক করে উঠছিলো ওর চোখ দুটি। খানিকের মাঝেই অনির্বাণের চোখের নড়াচড়া রুমাকে সাবধান করে দেয় আর মোবাইলটা খানিক উপরের দিকে সরিয়ে দেয়। আর তাতেই বেচারা অনির্বাণ বাবুর চোখে মুখে অমানিশার আঁধার নেমে এলো মূহুর্তেই..
তুমি এমন কেন বলোতো!
বাহ! আবার কি করলাম আমি?
আর কোন ভনিতা না করে সরাসরিই বলে দেয় অনির্বাণ,
একটু দেখাবে?
কি?
চোখের ইশারায় কি দেখতে চাইছে সেটা বুঝানোর চেষ্টা করে,
ওটা।
সাথে সাথেই চোখ রাঙিয়ে শাসিয়ে উঠে চড়া গলায় রুমা বলতে থাকে,
একদম না, এখন বুঝতে পারছি ভিডিও কল করার জন্য কেন এতো তালবাহানা তোমার।
প্লিজ প্লিজ জান, শুধু একবার। অল্প দেখবো কথা দিলাম, তুমিই বলো আমি কি এখন বেশি কিছু আবদার করি?
করো না কখন আবার। এখন এসব আবদার চলবে না, একদমই না।
সোনা আমার জান আমার এমন করো কেন তুমি। আমি কি তোমার অবাধ্য হই এখন? তুমি যা বলো সেটাই তো মেনে চলি তাই নাহ!
হুমম টুকটাক কথা শুনে চলো সেটা সত্যি...
তাহলে! এখন আমার একটা আবদার রাখো না প্লিজ... তুমি তো আমার সোনা পাখি জান পাখি। তোমাকে অনেক ভালোবাসি তো।
তুমি নাহ আমাকে পাগল করে ছাড়বে, সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি।
আমি যে তোমার প্রেমে আগেই পাগল হয়ে গিয়েছি সোনা, একটু দেখাও না। একবার দেখবো ব্যাস কথা দিলাম।
বুঝেছি বুঝেছি এতো কথা দিতে হবে না, যেটা শেষে আবার রাখতে পারো না। চুপ করে বসো...
রুমা হাতের মোবাইলটা টেবিলে বইয়ের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখে ওর বোনকে আরেকবার ভালো করে দেখে আসে যে সত্যি সত্যি ঘুমাচ্ছে কি না। বোনকে পরখ করা শেষে ধীর পায়ে টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায়৷ মোবাইলের স্ক্রিনে অনির্বাণের ওমন করে অপেক্ষা করতে দেখে কিঞ্চিৎ হাসি চলে আসে ঠোঁটের কোণে। রুমার কাঁপা কাঁপা হাত দুটো পড়নের জামাটা একটু একটু করে নিচ থেকে উপরের দিকে গুটিয়ে নিতে থাকে....