Thread Rating:
  • 167 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছিন্নমূল ঃ কামদেব

ত্রয়োষষ্টিতম অধ্যায়



কিছুক্ষন কাত হয়ে শুয়ে থাকে কিন্তু  ঘুম আসেনা। সুখ উঠে লাইব্রেরী ঘরে গিয়ে আলমারিতে বই দেখতে থাকে।মোমো মনে হল অসন্তুষ্ট হয়েছে।সুন্দরী বিদুষী চাকরি করে এমন মেয়েকে অপছন্দ হবার কোনো কারণ নেই।কিন্তু এই ফ্লাটের লোকজন কলেজের সহকর্মীরা এতদিন যে চোখে দেখে আসছে তাদের চোখে কোথায় নেমে যাবে ভেবে  মোমোর এই আবেগকে মন থেকে প্রশ্রয় দিতে পারেনি।কারো দুর্বল মুহূর্তের  সুযোগ নেওয়াকে ঘৃণা করে। সুখ জানে এক সময় নিজের কাজের জন্য মোমোর আফশোসের সীমা থাকবে না।নিজের কাছে নিজেই ছোটো হয়ে যাবে।একজন মহিলার সরলতার সুযোগ নিয়ে এতবড় অন্যায় করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।মোমোর কাছে তার যা ঋণ কখনো শোধ হবার নয়। বই ঘাটতে ঘাটতে বুঝতে পারে বিভিন্ন বিষয়ের বই পড়তে ভালবাসে মোমো।একটা বই নিয়ে পাশের ছোটো খাটে কাত হয়ে শুয়ে চোখ বোলাতে থাকে।     
মনে মনে গড়া কল্পনার প্রাসাদ এভাবে ভেঙ্গে পড়বে ভাবেন নি।এরকম একজন বয়স্ক মহিলাকে রাজী না হওয়াটা দোষের নয়।সরাসরি না বলে সামাজিক সম্মানের দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যেতে চাইছে।ছেলেটি ভদ্র তাই মুখের উপর না বলেনি। যেখানে যেতে চায় যাক দীপশিখা বাধা দেবে না।আসলে এরা পেশাদার এদের কাছে অন্যরকম কিছু প্রত্যাশা করাই ভুল হয়েছে।আবার আরেকটা ভুল করলেন ভেবে নিজেকে মনে মনে ভর্ৎসনা করেন।একের পর এক ক্লাস শেষ করে দীপশিখা কলেজ থেকে বেরিয়ে বাস স্টপেজে এসে দাড়ালেন।অতসীর কথা মনে পড়তে কেমন এক গ্লানিবোধ তাকে জড়িয়ে ধরে।যে লোকটা তাকে উপভোগ করেছে সে তার চোখের সামনে থাকবে ভেবে অস্বস্তিবোধ করেন।কি বলছিল মেসের কথা,যত তাড়াতাড়ি যায় ভাল।ওকে এখনই কিছু বুঝতে দেওয়া ঠিক হবে না।বাস আসতে উঠে পড়লেন।কি করছে বাসায় কে জানে।বাইরে থাকে তালা দেওয়া আছে ভেবে স্বস্তি বোধ করেন। 
তিন তলায় উঠে দরজা খুলতে গিয়ে কিছুটা দ্বিধান্বিত। ওর চোখের সামনে দাড়াতে হবে ভেবে অস্বস্তি বোধ করেন।মনে মনে হিসেব করলেন মাঝে আর তিনদিন তারপর চেকআপের জন্য হাসপাতাল যেতে হবে।সেখান থেকে মেসে পাঠিয়ে দেবেন। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে মনে হল ঘুমোচ্ছে।নিজের ঘরে গিয়ে শাড়ি বদলে রান্না ঘরে গিয়ে চায়ের জল চাপালেন।চায়ের জল ফুটছে।কমল যে কাজ করেছিল তিনিও তো সেই কাজই করেছেন।কমলের সঙ্গে তার ফ্যারাক কি রইল।ড.কাঞ্জিলাল না বললে এইসব লেজার-টেজার দীপশিখা কিছুই জানতেন না।ভেবেছিলেন স্বামী-স্ত্রী হয়ে গ্লানিমুক্ত হবেন।দু-কাপ চা ঢেলে বাকীটা ফ্লাক্সে রেখে বসার ঘরে এসে এক কাপ নামিয়ে রেখে আরেককাপ লাইব্রেরী ঘরে টেবিলে রেখে বললেন,চা রেখে গেলাম।
বসার ঘরে এসে টিভি চালিয়ে চায়ে চুমুক দিতে থাকেন।টিভি চলছে দীপশিখার সেদিকে মনোযোগ নেই।তার ডেস্কটপ সারাতে কমল এসেছিল। দীপশিখা নিজের ঘরে শুয়েছিলেন।বেশ কিছুক্ষন পর সারানো হল কিনা দেখার জন্য এসে দেখলেন ঘরে কেউ নেই, কম্পিউটার চলছে স্ক্রিনে দুই উলঙ্গ ছেলে মেয়ে।মেয়েটি ছেলেটার পেনিসটা ধরে  ছালটা খুলছে আবার বন্ধ করছে।এক সময় মুখে পুরে নিল। দেখতে দেখতে সারা শরীর ঝিন ঝিন করতে থাকে।সারা শরীরে অদ্ভুত এক জ্বালা অনুভুত হয়।আচম্বিতে কোথা থেকে এসে কমল ঝাপিয়ে পড়ল তার উপর।সোফায় ফেলে বুকের উপর উঠে মুখে মুখ চেপে ধরল।বাধা দেবার সামর্থ্য ছিল না।কমল বলেছিল তাকে বিয়ে করবে।সেই থেকে একসঙ্গে থাকতো।কমলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক  বিয়ে তো তার হয়নি।দীপশিখা ভাবেন মনুর আর দোষ কি?
এখন মনে হয় বাবার অবাধ্য হওয়ার জন্য হয়তো তার আজ এই পরিণাম।সেদিন যদি শহুরে মোহে গ্রাম ছেড়ে--।ফোন বাজতে কানে লাগালেন।
হ্যা দীপুদি...ঠিক সময়ে যাবো...তুই কি সবাইকে এভাবে রিমাইণ্ডার দিচ্ছিস...আমি আলাদা? কতটুকু জানিস তুই আমাকে...আচ্ছা যাব...রাখছি?
ফোন বন্ধ করে মনটা অতীতে বিচরণ করতে থাকে।খেয়াল করেন মনু পাশে এসে বসেছে।এক্টু সরে গিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে বসেন দীপশিখা। মনুর দিকে খেয়াল নেই টিভির পর্দায়  এমনভাবে চোখ রাখেন যেন কি গুরুত্ব বিষয় দেখছেন।
মোমোর আচরন লক্ষ্য করে সুখ।তার ব্যবহারে মোমো কি ব্যথিত ভেবে কষ্ট পায়। এরকম চুপচাপ বসে থাকতে দেখে সুখ বলল,মোমো তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো?
কেন তোমার উপর রাগ করব কোন অধিকারে?তাছাড়া তুমি তো কোনো অন্যায় করো নি।বরং আমিই কলঙ্ক মোচনের জন্য অন্যায় প্রস্তাব দিয়েছি।
কলঙ্ক মোচন?
তুমি কে তুমি আমাকে উপভোগ করো নি?আমি কি হারলট?একজন নারীর এর চেয়ে বড় কলঙ্ক আর কি হতে পারে?
মোমো তুমি বিশ্বাস করো তুমি-আমি ছাড়া কেউ এসব কোনো দিন জানবে না।
কেউ জানুক না জানুক সত্যি তো আর মিথ্যে হতে পারে না।অন্ধ সূর্যকে দেখতে পায় না তাহলে কি সূর্যোদয় হয় না। যাক এসব নিয়ে কথা বলতে আমার ভাল লাগছে না। 
সুখ কিছুক্ষন গুম হয়ে বসে থাকে।দীপশিখা উঠে রান্না ঘরে চলে গেলেন।ভাত চাপিয়ে দিলেন কাল অনেক কাজ কলেজ আছে কলেজ থেকে ফিরে ওর জন্য রান্না করে শুক্লার বিয়েতে যেতে হবে মনে মনে হিসেব করেন।সোমবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে তারপর মেসে পাঠিয়ে দিয়ে শান্তি।
রান্না শেষ হলে দীপশিখা ডাইনিং টেবিলে দুজনের খাবার সাজিয়ে ডাকলেন,রাত হয়েছে খাবে এসো।
অপরাধীর মত মুখ নিয়ে সুখ ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসল।একটু আগে বলা মোমোর কথাগুলো নিয়ে মনে মনে নাড়াচাড়া করতে থাকে।এই অবৈধ সম্পর্ক দীর্ঘকাল চালিয়ে নেওয়া যায়না।ভাত নাড়াচাড়া করতে দেখে দীপশিখা বললেন,কি হল?
মোমো আমার আপত্তি নেই।
মাথার মধ্যে চিড়িক করে উঠল ভ্রু কুচকে দীপশিখা বললেন,তুমি কি আমাকে অনুগ্রহ করছো? 
না না মোমো বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভালোবাসি--তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
মনুর কথাগুলো শুনে দীপশিখার মন নরম হয় বললেন,শোনো বিয়ে কোনো ছেলে খেলা নয়। অনেক দায়-দায়িত্ব--যা বলছো ভেবে বলছো তো?
আমি জানি ছেলে খেলা নয়।আমি তোমাকে বিয়ে করবো তোমার ভরণ পোষণ সব দায় আমি নেবো।কিছুদিন সময় আমাকে দেও একটা চাকরি ঠিক জুটিয়ে নেবো--।
চাকরি তোমাকে জোটচ্ছি।দীপশিখা মনে মনে নিজেকে শক্ত করেন।আবেগে গা ভাসিয়ে দিলে চলবে না।বললেন,ঠিক আছে রাত হয়েছে এবার খেয়ে নেও।কাল আমার আবার অনেক কাজ। 
হঠাৎ মত বদলের কারণটা বুঝতে পারেন না।সোমবার ওর চেকআপ এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌছাতে চান না।আগু পিছু সবটা ভাল করে ভেবে দেখতে হবে।খাওয়া শেষ হলে লাইব্রেরী ঘরে মনুর বিছানা করে দিয়ে দীপশিখা নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন।কাল শুক্লার বিয়ে প্রেজেণ্ট কেনা হয়ে গেছে।সোমবার ওর চেকআপ করিয়ে মেসে পাঠিয়ে দেওয়া তাহলেই কাজ শেষ।শুক্লার ভাই বাড়ী বাড়ী গিয়ে নেমন্তন্ন করেছে।এখন মনে হল কার্ডে মি এয়াণ্ড মিসেস বোস লেখানোটা ঠিক হয়নি।ব্যাপারটা কার্ডেই সীমাবদ্ধ থাকলে সমস্যা নেই যদি চাউড় হয়ে যায় আরেকটা সমস্যা।একটা যায় নতুন একটা এসে সামনে দাঁড়ায়।  
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছিন্নমূল ঃ কামদেব - by kumdev - 20-01-2023, 03:59 PM



Users browsing this thread: 20 Guest(s)