20-01-2023, 08:42 PM
(This post was last modified: 20-01-2023, 09:02 PM by Anuradha Sinha Roy. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
শেষের কথা
২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তনিমা সোমেনের সাথে ইন্টারনেটে চ্যাট করতে শুরু করে, ডিসেম্বরে ওদের দিল্লীতে দেখা এবং প্রেম হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০০৬ সাল তনিমার জীবনে খুবই ঘটনা বহুল, জানুয়ারী মাসে ও প্রথম বার অমৃতসর আসে সোমেনের কাছে, এপ্রিল মাসে তনিমা দ্বিতীয়বার অমৃতসর ঘুরে যাওয়ার অল্পদিন পরেই সোমেনের পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। অগাস্টে তনিমা আবার অমৃতসর আসে আর ডিসেম্বরে পরমদীপের সাথে ওর বিয়ে হয়। সাড়ে পাঁচ বছরের সুখের বিবাহিত জীবনে, দুটো বাচ্চা আর অনেক স্মৃতি রেখে পরমদীপ মারা যায় ২০১২'র জুন মাসে। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তনিমা বিদেশ যায় এবং পাঁচ সপ্তাহ বিদেশে কাটিয়ে মে মাসের শেষে অমৃতসর ফিরে আসে।
জুনের মাঝামাঝি বর্ষা শুরু হল, তনিমা পুরো ক্ষেতেই অরগ্যানিক বাসমতী লাগাল, জৈবিক সার আর জৈবিক কীটনাশক ব্যাবহার করল, খরচা এতে বেশী পড়ল, খাটতেও হল প্রচুর। কিন্তু রৌদ্র, জল, বৃষ্টি উপেক্ষা করে তনিমা প্রায় প্রতিদিন ক্ষেতে গেল, চোখের সামনে একটু একটু করে ধানের চারা বাড়তে দেখল।
আর রোদে পুরে ওর গায়ের রঙ একটু তামাটে হয়েছে, কিন্তু স্বাস্থ্যে আরো চেকনাই এসেছে। মাঝে মধ্যে যোগিন্দরকে নিয়ে ও পুরোনো বাড়ীতে গেছে ঠিকই, কিন্তু সেটা শুধুই শরীরের প্রয়োজনে।
নতুন কোনো সম্পর্কের কথা তনিমা আর ভাবে না, কারণ পরমদীপ এখনো ওকে ঘিরে থাকে, বিশেষ করে নিজেদের জমিতে এলে। ক’দিন আগেই বিকেলবেলা ধান ক্ষেতের মধ্যে আল ধরে একা একা হাটছিল, হঠাৎ যেন পরমদীপ কানের কাছে ফিস ফিস করে বলল, 'রানী ক্ষেতের মধ্যে যাবি?'
চমকে উঠে তনিমা এদিক ওদিক তাকাল, কোথায় কি, আশে পাশে তো কেউ নেই....
সেপ্টেম্বরে ধান পাকতে শুরু করল। খুব ভাল ধান হয়েছে এবারে, অরগ্যানিক ফার্মিংএর কথা শুনে আশে পাশের চাষীরাও দেখতে আসছে, গুরদীপজী তনিমাকে বললেন, 'ছোটী সবাই গিয়ে দেখে আসছে, তুই আমাকে নিয়ে যাবি না?'
গুরদীপজীর মুখে সেই কথা শুনে তনিমা লাফিয়ে উঠে বলল, 'আপনি যাবেন পিতাজী?' আর সেই মত দুই জা মিলে বুড়োকে নিয়ে জমিতে এল।
ধানক্ষেতের মাঝে দাঁড়িয়ে বুড়ো গুরদীপ পাগড়ীর খুঁট দিয়ে চোখ মুছে বললেন, 'ছোটবেলায় বাবার সাথে ক্ষেতে এলে এইরকম গন্ধ পেতাম'। গুরদীপজীর সমবয়সীরা বলল, 'বাসমতীর এমন সুগন্ধ অনেকদিন পাওয়া যায় নি'
বাসমতী চাল সাধারনতঃ এক বছর পুরোনো হলে বাজারে ছাড়া হয়। কিন্তু তনিমা পুরো এক বছর অপেক্ষা করল না, এক মাস আগে, অর্থাৎ ২০১৪র এপ্রিলের শেষে, কিছুটা অরগ্যানিক বাসমতী পরীক্ষামূলকভাবে অমৃতসর আর জলন্ধরের বাজারে ছাড়ল।
এরই মধ্যে একদিন খবরের কাগজে রাজবীরের নাম বেরল, কিন্তু কোন ভালো কাজের জন্য নয়। তবে খবর পোড়ে এটা বোঝা গেল যে তনিমার সরিষার ঘানি টানার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে এবার শ্রীঘরে ঘানি টানতে চলেছিল সে।
ওদিকে আস্তে আস্তে তনিমার নাম সবাই জানতে লাগল। এত অল্প সময়ে কিছুই বোঝা না গেলেও, শোনা গেল, যে ওদের বাসমতী ক্রেতাদের পছন্দ হয়েছে, এবং অন্য বাসমতীর থেকে বেশী দাম দিয়েও লোকেরা সেটাই কিনছে।
তবে চালের ব্রান্ডের নামকরন নিয়ে তনিমা আর সুখমনির মধ্যে একটা ঝগড়া হয়েছিল, কারণ সুখমনির প্রস্তাব শুনে তনিমা বলেছিল, 'এ কি আদেখলাপনা দিদি, নিজের মেয়ের নামে কেউ চালের নাম রাখে?' তবে সেই ঝগড়ায় অবশ্য সুখমনিরই জীত হয়েছিল। তনিমাদের ক্ষেতে জৈবিক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন বাসমতীর নাম রাখা হল "অমৃতা"।