Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
ইউটোপিয়া

 
-"কি গো, রাগ করেছ?"
-"হুম!"
-"প্লিজ, রাগ করো না।"
-"..."
-"অ্যাই, প্লিজ, রাগ করো না! আমি কি করব বলো? দেরি হয়ে গেল তো.."
-"হ্যাঁ, তোমার তো আমার কথা মনেই থাকে না। আমি আর কে…"
-"উফ, কত্ত অভিমান! তুমিই তো আমার সব!"
-"তাই আমার কাছেই আসতে চাও না তুমি… সবার জন্যে তোমার সময় আছে, আমার জন্যই নেই…"
-"আহা রে, যত বোকা বোকা কথা। কত কাজ ছিল তুমি তো জানো… আমারও তো ইচ্ছে করে তোমার কাছে কাছে থাকতে সবসময়… কিন্তু কাজ ছেড়ে…"
-"রাখো তো তোমার কাজ! সবসময় আমার কাছেই থেকো! জানো তো, পতিই পরমেশ্বর! তাই, আমার কাছে থাকাই তোমার সবচেয়ে বড় কাজ…"
-"আহা রে! অ্যাই ছাড়ো, কি করছ… ছাড়ো… কেউ এসে পড়বে… উফ, অনি… ধ্যাত!"
-"ছাড়বই না… এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি তোমার জন্য… এখন আর ছাড়াছাড়ি নেই…"
কোনোমতো অনির্বাণের আলিঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় নিবেদিতা।
উফ, পাগল বটে, বরটা ওর!
ছুটির দিনগুলোতে একটুখানি সময় ওকে দেখতে না পেলেই যেন মাথাখারাপ হয়ে যায় ওর। বাচ্চাদের মতো অভিমান করে, ঠোঁট ফোলায়। যেন চল্লিশ পেরোনো, গম্ভীর মানুষটা নয়, জাদুমন্ত্র দিয়ে নিজেকে সেই কুড়ির কোঠায় আটকে রেখেছে।
অভিমান করে, আবার পলকে সেই অভিমান ভেঙে প্লাবনও আসে। তখন আবার নিবেদিতার বড্ড লজ্জা লাগে… ইস! কেউ দেখে ফেললে কি হবে! কী ভাববে সবাই! যে, এত বয়স হলো, এতবছর একসঙ্গে কাটিয়ে দিল ওরা, তাও ওর বর এখনও ওকে ছাড়া থাকতে পারে না! সবসময় ওকেই চাই!
ধ্যাত!
বড় লজ্জা!
আর, বড় আনন্দও!
কাছের মানুষ, নিজের মানুষ ভালবাসবে, আদর করবে, আঁকড়ে রাখবে, তবেই না! কতলোক তো আছে পান থেকে চুন খসলেই বৌয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে। কী খারাপ খারাপ কথা বলে! জোর জবরদস্তিও করে। ভেবে যে কী খারাপ লাগে নিবেদিতার! মেয়েগুলো যে কিভাবে পারে ওইসব বর্বর লোকের সঙ্গে জীবন কাটাতে…।
হয়ত তাদের কোনো যাবার জায়গা নেই, নিজস্ব উপার্জন নেই - তাই পারে, পারতে হয়।
অবশ্য, নিবেদিতারও কোনো যাবার জায়গা নেই। মা আর বাবা দুজনেই নেই, বাড়িটা ছিল, অনি একদিন বলল শুধু শুধু বাড়িটা রেখে লাভ নেই, মেইনটেইন করা সমস্যা। বিক্রি করে দেওয়াই ভাল। আর দালাল লাগিয়ে বিক্রিও করে দিয়েছে। তাই সে অর্থে অন্য কোনো জায়গা নেই নিবেদিতার যাবার।
আবার, একটা কথা মনে পড়ে গেল। যেদিন বাড়িটার রেজিস্ট্রি হয়ে গেল, কেঁদে ফেলেছিল নিবেদিতা। অনি এসেছিল ওর কাছে। জড়িয়ে ধরে বলেছিল "মহারানির চোখে জল কেন?"
"এমনি।"
"উঁহুঁ, এমনি এমনি না… বাড়ির জন্য, তাই না?"
"হুম.."
"কিন্তু তুমিই তো মত দিলে…"
"তুমি বললে, তাই…"
"আমি বললেই কি সেটা ঠিক হয়, পরী? হয় না তো! তোমাকে তো মুখ ফুটে বলতে হবে!"'
"আমি বলতে চাইই না, তুমি বুঝে নাও নি কেন?"
"স্যরি বাবু… আচ্ছা, আমার দিকে তাকাও… তাকাও, প্লিজ…"
"হুম…"
"এবার থেকে তোমার সবকথা বুঝে নেব আমি। আর এমন ভুল করব না…"
"..."
"আর শোনো, এটা তো তোমার বাড়ি… আমি বরং এইবাড়িটা তোমার নামে ট্রান্সফার করে দিই।"
"এই না না.."
"না না কেন? যা আমার সবই তো তোমার। আমি আইন জানি না ঠিক, গিফট ডিড করে ট্রান্সফার করে দেওয়া যায় মনে হয়। কথা বলে দেখি…"
"না না না। একদম না।"
"কেন, পরী?"
"ওই যে, যা তোমার সব আমার! তাই…"
"আচ্ছা বেশ! তাহলে এবার একটু হাসো, প্লিজ! না না… ওইরকম হাসি না, একটু বেশি বেশি হাসি… নইলে এমন কাতুকুতু দেব না…"
শুধু কাতুকুতুতেই থামেনি সেদিন অনি। ওর মন ভাল করার জন্য সঙ্গেসঙ্গেই অনলাইনে অর্ডার করে দিয়েছিল একটা সুন্দর শাড়ি।
পাগল এক্কেবারে ওর বরটা!
নইলে সবাই ওকে 'নিবেদিতা' বলেই ডাকে, বা ওর ডাকনাম 'শম্পা' বলে। কিন্তু অনি ওকে আদর করে 'পরী' নামে ডাকে। তাতেও লজ্জা লাগে ওর। প্রথম প্রথম তো ব্লাশ করত খুব। আর… মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকত অনি।
এই ক'দিন আগেই একটা জড়ানো মুহূর্তে বলেছিল "আচ্ছা, তুমি আমাকে পরী কেন বলো?"
"কারণ তুমি তো পরীই… এঞ্জেল অন আর্থ!"
"ধ্যাত!"
"ধ্যাত না, সত্যি… এত ভাবো তুমি মানুষের জন্য, এতবড় মন তোমার… আমার তো নিজেকে ভীষণ লাকি মনে হয়, এই এত্তবড় পৃথিবীতে তুমি আমাকেই বেছে নিয়েছ নিজের মানুষ বলে.."
"আহা"... লজ্জা পেয়ে অনির বুকে মাথা গুঁজে দিয়েছিল নিবেদিতা।
এভাবেই ভাল আছে ওরা দুটিতে। ভালোয় - মন্দয়, হাসিতে-কান্নায়…
ভাল আছে! খুউউব ভাল আছে!
হ্যাঁ, বাইরে থেকে লোকে তো কতকিছুই বলে! ওদের বাচ্চা হলো না, সেই নিয়ে বাইরের লোকের যত সমস্যা! ওপরের ফ্ল্যাটের মাসিমা সেদিন কেক বানিয়েছিলেন, দিতে এসে বলে গেলেন "তোমাকে দেখে বুকটা ফেটে যায় বৌমা! যখন বিয়ে হয়ে এলে, আমরা বলেছিলুম, 'চাঁদের মতো বৌ'। তখন কি আর জানতুম গো বৌমা, কার মনে কী আছে! বাপ মা ও নেই… বাড়িটাও বেচে দিলে… লেখাপড়া জানো, কেন যে একটা চাকরি করলে না বৌমা! এখনও সময় আছে, চেষ্টা করো না একটা কাজের।"
একটু বিরক্ত হয়েছিল ও। তাই বলে উঠেছিল "না না, মাসিমা, আমি ভাল আছি খুব। আসলে ও চায় না আমি চাকরি বাকরি করি… আমি সেভাবে রাস্তায় চলতে ফিরতে পারি না তো… আর প্রাইভেট অফিসে চাকরি মানেই তো অনেক খাটনি… আমার কষ্ট একদম সহ্য করতে পারে না তো ও…"
চুপ করে ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়েছিলেন মাসিমা।
হাসতে হাসতে ও বলছিল "কিছু বলতে গেলেই বলে, 'পরী, আমি আছি তো, তোমার কি লাগবে আমাকে বলো, সব এনে দেব, তুমি বললে আকাশের চাঁদটাও এনে দিতে পারি!' খালি 'পরী আর পরী'... হি হি…"।
"আচ্ছা… ভাল… তোমার শরীর ঠিক আছে তো বৌমা?" জিজ্ঞেস করেছিলেন মাসিমা।
"হ্যাঁ হ্যাঁ মাসিমা, খুব ভাল আছি। একটু রোগা হয়ে গেছি, তাতেই ওর মাথা খারাপ হয়ে যাবার জোগাড়! খালি বলে 'ডাক্তার দেখাও, ওষুধ খাও।' আমার কিছু হলেই অস্থির হয়ে যায় একেবারে…"
"তা ডাক্তার দেখাও একবার বৌমা… এভাবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ কেন?"
"কষ্ট? কিসের কষ্ট মাসিমা? এখন লোকে পয়সা খরচ করে রোগা হতে চায়, আর আমি তো এমনি এমনি হয়েছি। হি হি! আমি লাকি! ও আবার বলে এই এত্তবড পৃথিবীতে ওকেই আমি বেছে নিয়েছি, ও ই নাকি লাকি… হি হি!"
"আমি যাই মা… তুমি সাবধানে থেকো। কেকটা খেয়ো…" কেন জানি না চোখের জল চাপতে চাপতে চলে গেছিলেন মাসিমা।
সেদিকে তাকিয়ে খারাপ লাগছিল নিবেদিতার!
আহা রে, বয়স্ক মানুষ। তারমধ্যে আবার অনির্বাণের মায়ের বন্ধু ছিলেন উনি। এমনকি বিয়ের পরে ওকে বরণ করেছিলেন মাসিমাই, শাশুড়িমা বিধবা ছিলেন বলে বরণ করেন নি। তারপর, বিয়ের চারমাসের মাথায় তো শাশুড়ি মা ও চলে গেলেন…
সে ও কতবছর হয়ে গেল…
কতকিছু পালটে গেল…
দূরের মানুষেরা আরও দূরের হয়ে গেল…
কাছের মানুষেরা আলোকবর্ষ পেরিয়ে গেল…
"ইস! কী পোড়া পোড়া গন্ধ! কি পুড়ছে?" কর্কশ গলার স্বর শুনে ঘুরে তাকালো নিবেদিতা।
"উফ, রান্নাঘরে ডাল চাপিয়ে রেখে ভুলে গেছ? পুড়ে ঝামা হয়ে গেল সব। "
"স…স্যরি…আসলে… একটা কথা ভাবছিলাম…"
"এই তুমি আর তোমার ভাবনা! উফ, জীবনটা শেষ করে দিল আমার! শা লা! আমার কপাল! পাগলি ছাগলি আমার ঘাড়ে ফেলে বাপ মা দুটো ড্যাং ড্যাং করে কেটে পড়ল… এখন মা গীর যাবার জায়গা নেই, আর আমার ঘাড়ে বসে বসে খাচ্ছে দাচ্ছে, আর 'ভাবছে!"
চুপ করে থাকে নিবেদিতা।
বলেই চলে অনির্বাণ। "একটা ডাইনি কে নিয়ে এসেছিলাম। আমার মা কে খেল… একটা বাচ্চা দিতে পারল না… কোনো কাজের না কিছু না। শা লা, দেখেই ঘেন্না লাগে… মরতে পারো না তুমি?"
"মরব?" অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে নিবেদিতা।
"তা মরবে কেন? আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আরও শেষ করতে হবে না? সারাদিন পরে দুটো ডালভাত ও খেতে পারব না, সব পুড়িয়ে দিল… জিনিসের দাম জানিস তুই মা গী? একপয়সা রোজগারের মুরোদ নেই…"
বলেই চলে, বলেই চলে অর্নিবাণ। রোজের মতো।
এরপরেই চুলের মুঠিও ধরবে, চড়চাপড় মারবে।
রোজের মতো।
কিচ্ছু বলে না নিবেদিতা।
চোখে বুজে থাকে।
না, কাঁদবে না একটুও…
'অনি' খুব কষ্ট পায় ও কাঁদলে…
বারবার বলে "সোনা মেয়ে পরী, তুমি জানো না, তোমার চোখে জল দেখলে আমার বুকে সুনামি আসে? প্লিজ, কেঁদো না… প্লিজ…"।
তাই তো কাঁদবে না নিবেদিতা একটুও। সে অর্নিবাণ যতই চুলের মুঠি ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলুক "শা লা, ঠান্ডা লা শ একটা! এত মারি, তবু একটু আওয়াজ পর্যন্ত করে না! বাপ মা দুটোই শয়তান ছিল, লুকিয়ে বিয়ে দিয়েছে বাঁ…"
কান বন্ধ করে নেয় নিবেদিতা…
ওকে যা খুশি বলুক, বাবা মায়ের নামে কিছু শুনলে…
এবার 'পরী' হয়ে যেতে হবে…
অর্নিবাণ না, ওর অনি…অনির কা
ছে যেতে হবে…
ইউটোপিয়া?
হোক স্বপ্নরাজ্য… সেখানেই শান্তি পরীর…

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 19-01-2023, 12:07 PM



Users browsing this thread: 15 Guest(s)