18-01-2023, 12:28 PM
ঘূনপোকা
অন্যদিনের তুলনায় আজ অনেকটা আগে উঠে পড়েছে মিলি।
আজ অফিস ছুটি নিয়েছে, তাও।
আসলে আজ যে ওর প্রাণের বন্ধু প্রীতি আসছে ওদের বাড়ি। আজ, কাল থেকে, একেবারে পরশু, রবিবার বাড়ি ফিরবে। ওর জন্যই মিলি আজ ছুটি নিল। একসঙ্গে দুই বন্ধু নতুন বছরকে 'ওয়েলকাম' করবে।
প্রীতির জন্য এত কষ্ট হয়, মিলির।
মেয়েটা তো জীবনে কিছুই পেল না! অথচ… সম্ভাবনা ছিল অনেক।
মিলি আর প্রীতি কলেজের বন্ধু। সেই দুহাজার চারে দুজনেই এক সাবজেক্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিল কলেজে। আর মাসদুয়েকের মধ্যেই জমে গেছিল বন্ধুত্বটা। কলেজে যেমন হয় আর কি! এমনকি মিলির যে প্রথম প্রেম, দিব্যেন্দু - তার ব্যাপারে সবার আগে প্রীতিই জেনেছিল। ক্লাসে প্রক্সি দেওয়া, লাইব্রেরি তে নোট বানানো, নন্দন--রবীন্দ্রসদনে ঘোরা - সবেতেই দুই বন্ধু একত্রে। তারপর মাস্টার্সে অবশ্য আলাদা আলাদা ইউনিভার্সিটিতে পড়েছে দুজন। মিলি মাস্টার্সের পরে এম বি এ করেছে। প্রীতি একটা প্রাইভেট কলেজে চাকরি পেয়েছে। তখন থেকেই যোগাযোগ টা একটু করে কমছিল। ওই, সবাই ব্যস্ত হয়ে গেলে যা হয় আর কি! তারমধ্যে মিলির তো আবার কর্পোরেট জব। যেমন মাইনে বেশি, তেমনি খাটনিও।
ফেসবুকের হাত ধরেই দুই বন্ধুর আবার কাছাকাছি আসা। ততদিনে প্রীতির বিয়ে হয়ে গেছে। বোটানিক্যাল গার্ডেনে শ্বশুরবাড়ি। মিলি তখন দিল্লিতে, অদ্রীশের সঙ্গে প্রেমপর্ব চলছে। সেইসময় মিলিই একটু ব্যস্ত হয়ে গেছিল। অদ্রীশ আর ও দিল্লি থেকে কলকাতা ফিরল। বিয়ে হল। বিয়ের পরে চিনার পার্কের কাছে এই ফ্ল্যাটটা বুক করেছিল, কোভিডের জন্য পজেশান পেতে দেরি হয়ে গেল। এইবছরেই পজেশান পেয়ে, বেশ মনের মতো করে সাজিয়েছে বাড়িটা। টু বি এইচ কে - কিন্তু দু' দুটো ব্যালকনি, ড্রয়িংরুম আর মিলির বেডরুমটার লাগোয়া। ড্রয়িংরুমের লাগোয়া ওপেন কিচেন - সেখানে আবার এমন স্টাইল করে একটা স্ল্যাব লাগিয়ে বার স্টুল দিয়ে সাজিয়েছে মিলি যে গেস্টরা কিচেন পার্টে বসে গল্প করতেই ভালবাসে। প্রীতিরও ভাল লাগবে নিশ্চয়ই।
আজ অবশ্য প্রীতি আসার আগেই রান্না সেরে রাখবে ও। বিশেষ কিছু করবে না, একটু বাটার গার্লিক হার্ব রাইস, ম্যাশড পোট্যাটো, বয়েলড ভেজিস আর হার্ব চিকেন। ছিমছাম কন্টিনেন্টাল খাবার। করতেও বেশি সময় লাগবে না, প্লেটিং করার পরে দেখতেও সুন্দর লাগবে। আবার দুইবন্ধুর গল্প করার মাঝে কোনো বাধাও আসবে না।
তাছাড়া, বেচারা প্রীতি… যে জীবনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে… কন্টি খাবার কি খায় খুব একটা? কে জানে! একেবারেই ছাপোষা জীবন ওর। সকালে কলেজ, ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে। তারপর একটু রেস্ট নেয়, ফেসবুক- টুক দেখে, হোয়াটসঅ্যাপে আড্ডা মারে ওর সাথে কখনও। সাড়ে দশটার মধ্যে ঘুমিয়েই পড়ে…আবার পরেরদিন কলেজ।
ওর বরটা, কি যেন নাম ছিল… প্রীতম… ঘোর অমানুষ ছিল একটা। বউকে বাড়িতে রেখে অফিসে লীলাখেলা চালাচ্ছিল। তা সে মেয়েও ঘোড়েল ছিল যথেষ্ট। ফেসবুক থেকেই প্রীতির নাম্বার জোগাড় করে ফোন করে সব কীর্তি ফাঁস করে দিয়েছিল। প্রীতি অবশ্য বরকে ছাড়তে চায়নি। কান্না-কাটি, এমনকি তাবিজ-জলপড়া-উপোস-রত্নধারণ সব ই করেছে। কিন্তু, শেষপর্যন্ত সম্পর্কটা আর টেকে নি। এইবছরই গোড়ার দিকে সইসাবুদ হয়ে গেছে। এখন প্রীতি আবার পাইকপাড়া ফিরে এসেছে। এখন অবশ্য কাকু আর নেই, ও আর কাকিমাই থাকে। আর কী যে পরিশ্রম যায় মেয়েটার! মাত্র ছত্রিশেই মোটা হয়ে গেছে অনেকটা। চোখের নিচে কালি। আর হবে না? এরকম থোড়-বড়ির জীবন ভাল লাগে কারো? তাই তো এবার মিলি জোর করে বলল তিরিশ তারিখ চলে আসতে ওদের বাড়ি। অদ্রীশ এমনিতেই বাড়ি থাকবে না। আর ওর ও অনেক ছুটি জমে আছে। শুক্র-শনি দুই বন্ধু নিজেদের মতো পার্টি করবে। প্রীতি গাঁইগুঁই করছিল। বলছিল "মায়ের কি হবে?" কিন্তু মিলি নিজেই কাকিমার সঙ্গে কথা বলেছে। কাকিমা বলেছেন "মেয়েটা কেমন একটা হয়ে গেছে রে। কোত্থাও যেতে চায় না। ছুটির দিনে অনেকক্ষণ ঘুমোয়, ওইটুকুই যা। বাকিসময় মোবাইল আর নইলে বই। আমি চোখ বুজলে যে কি হবে?"'
কাকিমার সঙ্গে কথা বলে মিলি বুঝেছিল দুটো রাত্তির কাকিমা একা থাকতেই পারবেন। আর ওরা থাকে একতলায়, প্রীতির জ্যেঠু -জ্যেঠিমা-দাদা-বৌদি থাকেন দোতলায়, একই বাড়ি। তাই কোনো অসুবিধাই নেই। আর চিনার পার্ক থেকে পাইকপাড়াও এমন কিছু দূরে না। তাই প্রীতির কোনো আপত্তিই ধোঁপে টেকে নি। শেষমেষ ওকে মত দিতেই হয়েছে। আজ কলেজ করে চলে আসবে, আর মিলি ততক্ষণে রান্না সেরে, ওর এমনিতেই ঝকঝকে বাড়িটা আরেকটু চকচকে করে নেবে। প্রীতি খায় না হয়ত, তাও একটা রেড ওয়াইন এনে রেখেছে। দুপুর বেলা ফ্রেশ ফুল অর্ডার করে দেবে, ড্রয়িংরুমে সাজিয়ে রাখবে। দুই বন্ধু মিলে আনন্দ করবে সারা রাত, আর পরের দিনও…
অদ্রীশ বেরিয়ে গেল নিজের মতো। বাড়িতে এখন মিলি একা। কাজ সারতে সারতেই প্রীতির ফোন। চিনার পার্কে এসে গেছে, ফ্ল্যাটটা কোনদিকে বুঝতে পারছিল না। ওকে ডিরেকশান দিয়ে, বাড়িতে, বাথরুমে আরেকপ্রস্থ রুম ফ্রেশনার দিতে দিতেই কলিং বেল বাজল।
"প্রীতিইইইইইই!!! শেষ পর্যন্ত আমাদের দেখা হলো!" জড়িয়ে ধরল মিলি বন্ধুকে।
"হ্যাঁ বাবু… কবে থেকে প্ল্যান… সিনেমা যাব, মলে দেখা করব… আর এখন এক্কেবারে তোর বাড়ি।" একগাল হাসল প্রীতি।
"একদম… আর এটাই বেশি ভাল হলো, বল? কোনো ঝামেলা নেই। দুই বন্ধু নিজেদের মতো করে টাইম কাটাব।"
"তা ঠিক বলেছিস। উফ, কী সুন্দর ফুল! আর তোর বাড়িটাও কী সুন্দর!" মুগ্ধ গলায় বলল প্রীতি।
আনন্দে গলে যাচ্ছিল মিলি।
বাড়িটা ওর বড্ড প্রিয়। অদ্রীশ আর ও দুজনেই ইএমআই দেয়। তবে সাজানোর খরচ সবটাই ওর। অদ্রীশ বলেই দিয়েছে "যার সখ সে করো বাবা"। তবে, কেউ ভাল বললে সব পুষিয়ে যায় এক্কেবারে।
"আগে বস তো। ব্যাগটা রাখ। চেঞ্জ করবি তো আগে?"
"হ্যাঁ, সেই সকালের সালোয়ার কামিজ…ছেড়ে আসি। বাথরুমটা কোথায় রে?"
"তুই আমার ঘরেই যা। নাইটি দিই একটা? ফ্রি হয়ে যা একদম" বলে বন্ধুকে ওর ঘরে ঢুকিয়ে দেয় মিলি। তারপর মাইক্রোওয়েভে ফিঙ্গার- ফুড গুলো গরম করতে থাকে। মেয়েটা সারাদিন পড়িয়ে এসেছে, খিদে পেয়ে গেছে নিশ্চয়ই…
দেখতে দেখতে যে কিভাবে কেটে যাচ্ছিল সময়টা। কলেজের গল্প, ফেলে আসা সময়টার গল্প, নন্দনের ফিল্ম ফেস্ট আর ময়দানের বইমেলার গল্প… সেইসব সোনালী দিনকে ছুঁয়ে দেখা… কথা যেন আর শেষ হয় না!
আর বারবারই মিলির মনে হচ্ছিল একটাই কথা "মাত্র ছত্রিশ বছর বয়স… কীই বা এমন বয়স! তবু আমাদের সমাজে 'ডিভোর্সি' এখনও একটা ট্যাবু। কাকিমার পরে যে কি হবে মেয়েটার! আহা রে!"
আজ অবশ্য প্রীতিও একটা গুগলি দিয়েছে। ওয়াইনের কথা বলায় বেশ আগ্রহ নিয়েই রাজি হয়েছে। তাই ক'টা মোমবাতি জ্বালিয়ে দুই বন্ধু দুটো গ্লাস নিয়ে বসেছে ব্যালকনির বেতের দোলনাটায়।
অন্যদিনের তুলনায় আজ অনেকটা আগে উঠে পড়েছে মিলি।
আজ অফিস ছুটি নিয়েছে, তাও।
আসলে আজ যে ওর প্রাণের বন্ধু প্রীতি আসছে ওদের বাড়ি। আজ, কাল থেকে, একেবারে পরশু, রবিবার বাড়ি ফিরবে। ওর জন্যই মিলি আজ ছুটি নিল। একসঙ্গে দুই বন্ধু নতুন বছরকে 'ওয়েলকাম' করবে।
প্রীতির জন্য এত কষ্ট হয়, মিলির।
মেয়েটা তো জীবনে কিছুই পেল না! অথচ… সম্ভাবনা ছিল অনেক।
মিলি আর প্রীতি কলেজের বন্ধু। সেই দুহাজার চারে দুজনেই এক সাবজেক্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিল কলেজে। আর মাসদুয়েকের মধ্যেই জমে গেছিল বন্ধুত্বটা। কলেজে যেমন হয় আর কি! এমনকি মিলির যে প্রথম প্রেম, দিব্যেন্দু - তার ব্যাপারে সবার আগে প্রীতিই জেনেছিল। ক্লাসে প্রক্সি দেওয়া, লাইব্রেরি তে নোট বানানো, নন্দন--রবীন্দ্রসদনে ঘোরা - সবেতেই দুই বন্ধু একত্রে। তারপর মাস্টার্সে অবশ্য আলাদা আলাদা ইউনিভার্সিটিতে পড়েছে দুজন। মিলি মাস্টার্সের পরে এম বি এ করেছে। প্রীতি একটা প্রাইভেট কলেজে চাকরি পেয়েছে। তখন থেকেই যোগাযোগ টা একটু করে কমছিল। ওই, সবাই ব্যস্ত হয়ে গেলে যা হয় আর কি! তারমধ্যে মিলির তো আবার কর্পোরেট জব। যেমন মাইনে বেশি, তেমনি খাটনিও।
ফেসবুকের হাত ধরেই দুই বন্ধুর আবার কাছাকাছি আসা। ততদিনে প্রীতির বিয়ে হয়ে গেছে। বোটানিক্যাল গার্ডেনে শ্বশুরবাড়ি। মিলি তখন দিল্লিতে, অদ্রীশের সঙ্গে প্রেমপর্ব চলছে। সেইসময় মিলিই একটু ব্যস্ত হয়ে গেছিল। অদ্রীশ আর ও দিল্লি থেকে কলকাতা ফিরল। বিয়ে হল। বিয়ের পরে চিনার পার্কের কাছে এই ফ্ল্যাটটা বুক করেছিল, কোভিডের জন্য পজেশান পেতে দেরি হয়ে গেল। এইবছরেই পজেশান পেয়ে, বেশ মনের মতো করে সাজিয়েছে বাড়িটা। টু বি এইচ কে - কিন্তু দু' দুটো ব্যালকনি, ড্রয়িংরুম আর মিলির বেডরুমটার লাগোয়া। ড্রয়িংরুমের লাগোয়া ওপেন কিচেন - সেখানে আবার এমন স্টাইল করে একটা স্ল্যাব লাগিয়ে বার স্টুল দিয়ে সাজিয়েছে মিলি যে গেস্টরা কিচেন পার্টে বসে গল্প করতেই ভালবাসে। প্রীতিরও ভাল লাগবে নিশ্চয়ই।
আজ অবশ্য প্রীতি আসার আগেই রান্না সেরে রাখবে ও। বিশেষ কিছু করবে না, একটু বাটার গার্লিক হার্ব রাইস, ম্যাশড পোট্যাটো, বয়েলড ভেজিস আর হার্ব চিকেন। ছিমছাম কন্টিনেন্টাল খাবার। করতেও বেশি সময় লাগবে না, প্লেটিং করার পরে দেখতেও সুন্দর লাগবে। আবার দুইবন্ধুর গল্প করার মাঝে কোনো বাধাও আসবে না।
তাছাড়া, বেচারা প্রীতি… যে জীবনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে… কন্টি খাবার কি খায় খুব একটা? কে জানে! একেবারেই ছাপোষা জীবন ওর। সকালে কলেজ, ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে। তারপর একটু রেস্ট নেয়, ফেসবুক- টুক দেখে, হোয়াটসঅ্যাপে আড্ডা মারে ওর সাথে কখনও। সাড়ে দশটার মধ্যে ঘুমিয়েই পড়ে…আবার পরেরদিন কলেজ।
ওর বরটা, কি যেন নাম ছিল… প্রীতম… ঘোর অমানুষ ছিল একটা। বউকে বাড়িতে রেখে অফিসে লীলাখেলা চালাচ্ছিল। তা সে মেয়েও ঘোড়েল ছিল যথেষ্ট। ফেসবুক থেকেই প্রীতির নাম্বার জোগাড় করে ফোন করে সব কীর্তি ফাঁস করে দিয়েছিল। প্রীতি অবশ্য বরকে ছাড়তে চায়নি। কান্না-কাটি, এমনকি তাবিজ-জলপড়া-উপোস-রত্নধারণ সব ই করেছে। কিন্তু, শেষপর্যন্ত সম্পর্কটা আর টেকে নি। এইবছরই গোড়ার দিকে সইসাবুদ হয়ে গেছে। এখন প্রীতি আবার পাইকপাড়া ফিরে এসেছে। এখন অবশ্য কাকু আর নেই, ও আর কাকিমাই থাকে। আর কী যে পরিশ্রম যায় মেয়েটার! মাত্র ছত্রিশেই মোটা হয়ে গেছে অনেকটা। চোখের নিচে কালি। আর হবে না? এরকম থোড়-বড়ির জীবন ভাল লাগে কারো? তাই তো এবার মিলি জোর করে বলল তিরিশ তারিখ চলে আসতে ওদের বাড়ি। অদ্রীশ এমনিতেই বাড়ি থাকবে না। আর ওর ও অনেক ছুটি জমে আছে। শুক্র-শনি দুই বন্ধু নিজেদের মতো পার্টি করবে। প্রীতি গাঁইগুঁই করছিল। বলছিল "মায়ের কি হবে?" কিন্তু মিলি নিজেই কাকিমার সঙ্গে কথা বলেছে। কাকিমা বলেছেন "মেয়েটা কেমন একটা হয়ে গেছে রে। কোত্থাও যেতে চায় না। ছুটির দিনে অনেকক্ষণ ঘুমোয়, ওইটুকুই যা। বাকিসময় মোবাইল আর নইলে বই। আমি চোখ বুজলে যে কি হবে?"'
কাকিমার সঙ্গে কথা বলে মিলি বুঝেছিল দুটো রাত্তির কাকিমা একা থাকতেই পারবেন। আর ওরা থাকে একতলায়, প্রীতির জ্যেঠু -জ্যেঠিমা-দাদা-বৌদি থাকেন দোতলায়, একই বাড়ি। তাই কোনো অসুবিধাই নেই। আর চিনার পার্ক থেকে পাইকপাড়াও এমন কিছু দূরে না। তাই প্রীতির কোনো আপত্তিই ধোঁপে টেকে নি। শেষমেষ ওকে মত দিতেই হয়েছে। আজ কলেজ করে চলে আসবে, আর মিলি ততক্ষণে রান্না সেরে, ওর এমনিতেই ঝকঝকে বাড়িটা আরেকটু চকচকে করে নেবে। প্রীতি খায় না হয়ত, তাও একটা রেড ওয়াইন এনে রেখেছে। দুপুর বেলা ফ্রেশ ফুল অর্ডার করে দেবে, ড্রয়িংরুমে সাজিয়ে রাখবে। দুই বন্ধু মিলে আনন্দ করবে সারা রাত, আর পরের দিনও…
অদ্রীশ বেরিয়ে গেল নিজের মতো। বাড়িতে এখন মিলি একা। কাজ সারতে সারতেই প্রীতির ফোন। চিনার পার্কে এসে গেছে, ফ্ল্যাটটা কোনদিকে বুঝতে পারছিল না। ওকে ডিরেকশান দিয়ে, বাড়িতে, বাথরুমে আরেকপ্রস্থ রুম ফ্রেশনার দিতে দিতেই কলিং বেল বাজল।
"প্রীতিইইইইইই!!! শেষ পর্যন্ত আমাদের দেখা হলো!" জড়িয়ে ধরল মিলি বন্ধুকে।
"হ্যাঁ বাবু… কবে থেকে প্ল্যান… সিনেমা যাব, মলে দেখা করব… আর এখন এক্কেবারে তোর বাড়ি।" একগাল হাসল প্রীতি।
"একদম… আর এটাই বেশি ভাল হলো, বল? কোনো ঝামেলা নেই। দুই বন্ধু নিজেদের মতো করে টাইম কাটাব।"
"তা ঠিক বলেছিস। উফ, কী সুন্দর ফুল! আর তোর বাড়িটাও কী সুন্দর!" মুগ্ধ গলায় বলল প্রীতি।
আনন্দে গলে যাচ্ছিল মিলি।
বাড়িটা ওর বড্ড প্রিয়। অদ্রীশ আর ও দুজনেই ইএমআই দেয়। তবে সাজানোর খরচ সবটাই ওর। অদ্রীশ বলেই দিয়েছে "যার সখ সে করো বাবা"। তবে, কেউ ভাল বললে সব পুষিয়ে যায় এক্কেবারে।
"আগে বস তো। ব্যাগটা রাখ। চেঞ্জ করবি তো আগে?"
"হ্যাঁ, সেই সকালের সালোয়ার কামিজ…ছেড়ে আসি। বাথরুমটা কোথায় রে?"
"তুই আমার ঘরেই যা। নাইটি দিই একটা? ফ্রি হয়ে যা একদম" বলে বন্ধুকে ওর ঘরে ঢুকিয়ে দেয় মিলি। তারপর মাইক্রোওয়েভে ফিঙ্গার- ফুড গুলো গরম করতে থাকে। মেয়েটা সারাদিন পড়িয়ে এসেছে, খিদে পেয়ে গেছে নিশ্চয়ই…
দেখতে দেখতে যে কিভাবে কেটে যাচ্ছিল সময়টা। কলেজের গল্প, ফেলে আসা সময়টার গল্প, নন্দনের ফিল্ম ফেস্ট আর ময়দানের বইমেলার গল্প… সেইসব সোনালী দিনকে ছুঁয়ে দেখা… কথা যেন আর শেষ হয় না!
আর বারবারই মিলির মনে হচ্ছিল একটাই কথা "মাত্র ছত্রিশ বছর বয়স… কীই বা এমন বয়স! তবু আমাদের সমাজে 'ডিভোর্সি' এখনও একটা ট্যাবু। কাকিমার পরে যে কি হবে মেয়েটার! আহা রে!"
আজ অবশ্য প্রীতিও একটা গুগলি দিয়েছে। ওয়াইনের কথা বলায় বেশ আগ্রহ নিয়েই রাজি হয়েছে। তাই ক'টা মোমবাতি জ্বালিয়ে দুই বন্ধু দুটো গ্লাস নিয়ে বসেছে ব্যালকনির বেতের দোলনাটায়।