17-01-2023, 02:06 PM
ত্রয়োদশ পর্ব
অনিল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্লট সাপ্লায়ার কাম রাইটার হিসাবে নিযুক্ত হলো শান্তনু। ট্রামে-বাসে, চায়ের দোকান, বাজার–হাট থেকে মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনের গল্প খুঁজে আনতো সে। গল্পের খসড়াও লিখে দিতো। তাতে অল্পবিস্তর স্বকীয় স্টাইল ঢুকিয়ে দিতেন অনিলবাবু। ব্যস, তাতেই গপ্পো জমে ক্ষীর। হেভ্ভি খেলো পাবলিক। খুঁজে পেলো অনিল গঙ্গোপাধ্যায়ের ষাটের দশকের সেই বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর ঝাঁঝালো স্বাদ, যা ইদানিং ফিকে হয়ে যাচ্ছিলো। অনিলবাবু খুশী, সমুদ্র বোস খুশী, কিন্তু খুশী হতো না শান্তনু। আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগে, যখন তার লাইব্রেরির ক্যাজুয়াল চাকরিটা থেকে হাজারখানেক টাকা জুটতো, তখন অনিলবাবুর ধারাবাহিক উপন্যাসের পর্বপিছু একশো টাকা খুব কম ছিলো না। এছাড়া ছোটো গল্প পিছু দেড়শো টাকা, বড়ো গল্প পিছু দুশো টাকা এবং গোটা উপন্যাসের জন্য হাজারটাকা রেট ঠিক হয়েছিলো। অনিলবাবুর একসাথে তখন দুটো ধারাবাহিক উপন্যাস চলছিলো; একটা সাপ্তাহিক এবং আরেকটা পাক্ষিক। ফলে মাস গেলে ছশো টাকা বাঁধা।এরপর ছোটগল্প-বড়োগল্প-উপন্যাস করে, গড়ে মাসে হাজার টাকা উপায়ের একটা ব্যবস্থা হয়েই গেলো; যেটা নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় খুব একটা কম ছিলো না।
সংসারের আর্থিক অনটন অনেকটাই দুর হয়েছিলো। কিন্তু পেট ভরলেও, মন ভরতো না শান্তনুর। তার ক্রিয়েটিভ মাইন্ড চাইতো সম্পূর্ণ নিজের মতো করে কিছু লেখা; যাতে অন্য কারো মাষ্টারগিরি থাকবে না। অনিলবাবুর সঙ্গে কাজ করতে করতে নিজের লেখার দুর্বলতাগুলো ধরতে পেরে গিয়েছিলো শানু এবং দ্রুত সেগুলো সারিয়ে তুলেছিলো সে। ফলে কিছুদিন বাদেই পুরো লেখাটা তারই থাকতো. অনিলবাবুর পরিমার্জনা করার দরকারই হতো না, কিন্তু লেখাটা ছাপা হতো অনিলবাবুর নামে। ইগোয়িস্টিক শানুর পক্ষে বেশীদিন এ জিনিষ সহ্য করা সম্ভব ছিলো না। ইতিমধ্যে কলেজস্ট্রীটের বইপাড়ায় তার পরিচিতি বাড়ছিলো। প্রুফরিডার শ্যামলতনু তাকে পরিচয় করিয়ে দিলো সি গ্রেড প্রকাশক পানু দের সঙ্গে। পানুবাবু কিছু নোটবইছাড়া আর যা ছাপতেন তাকে বিশুদ্ধ বাংলায় পানুবই বলে। সেই কারণেই তার নাম হয়ে গিয়েছিলো পানুবাবু বা পানুদা। তার আসল নাম যে প্রাণকৃষ্ণ দে, সে কথা বোধহয় উনি নিজেই ভুলে গিয়েছিলেন। এই পানুবাবুর সঙ্গেই শান্তনু চুক্তিবদ্ধ হলো বছরে এক ডজন অশ্লীল উপন্যাস লেখার জন্য। রেট ঠিক হলো পার উপন্যাস দু’হাজার টাকা এবং পাঁচটি উপন্যাসের টাকা তিনি এ্যাডভান্স দিলেন। এই দশহাজার টাকাটা শানু যত্ন করে সরিয়ে রেখেছিলো সুচরিতার ডেলিভারির খরচা হিসাবে। কিন্তু মানুষ ভাবে এক, আর হয় আর এক।