17-01-2023, 11:55 AM
পাট ৯-১০
_কিরে কান্না করছিস কেন?
_ তোকে কত গুলো ফোন দিয়েছি। ফোন গুলো রিসিভ করিস নাই কেন?
_ তাই বলে তুই কান্না করবি?
_ আমার চিন্তা হয় না বুঝি? ও আমার চিন্তায় তোর আবার কি আসে যায়?
_ তাই তো আমার কোন কিছু যায় আসে না।
_ যা আর কখনো তোর কাছে আসব না। জানিস আজ কত চিন্তা হচ্ছিলো? সারাটা দিন না খেয়ে আছি। আর তুই একটা বার ও আমার ফোন ধরিলি না।
_ কি বললি তুই এখনো খাবার খাস নি?
সোহানা ঠোঁট বাঁকা করে বললোঃ "না।"
রাফিও সাথে সাথে ধমক দিয়ে উঠলো।
_ থাপ্পড় দিয়ে দাঁতগুলো ফেলে দিতে মন চায়।
_ তুই আমায় আবার বকা দিচ্ছিস? যা খাবই না।
তারপর আমি সোহানাকে খাইয়ে দিতে লাগলাম। আমাদের সম্পর্কটা যে কেউ দেখলে বলবে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক। শুধু দু রুমে ঘুমাই দুজনে। বাকি সব কিছুই এক সাথে। বলা যায় এক সুতোয় বাধা দুটি প্রাণ।
খাওয়ার মাঝে সোহানা বললোঃ "রাফি তোর ভর্তির কি হল?"
রাফি মুখটা কালো করে ফেললো।
সোহানা রাফির মুখ উপরে তুলে বলে, "তুই চান্স পাস নাই বুঝি? আরে বোকা সবাই কি ডাক্তার হবে এমন কোন কথা আছে নাকি? মন খারাপ করিস না।"
_ওই এত বেশি বুঝোস কেন? আমি কি বলছি তোকে যে আমি সুযোগ পাইনি আমি? আমি তোর এত দিনের ধারণ করা স্বপ্ন, আশা আর বিশ্বাস ভাঙ্গতে পারি?
সোহানা কেঁদে দিয়ে রাফিকে জড়িয়ে ধরে।
_জানিস আল্লাহ তোর মাঝে আমার স্বপ্ন গুলো পূরুণ করে দেয়। আজ আমি অনেক খুশিরে ।
_ এই ধর? তোর জন্য আজ তোর ফেভারিট আইসক্রিম এনেছি।
_ থ্যাংকস তোর বউ এত্ত গুলা লাকী হবে। কেন যে নুসরাত গেলো?
আমি রাগ দেখিয়ে উঠে গেলাম। সোহানা আমায় পেছন থেকে চোখ ধরে ফেললো।
_মহারাজ বুঝি আমার সাথে কথা বলবে না?
_ তুই এমন কেন? তোর ছোঁয়াতে সব রাগ চলে যায়?
এই ভাবে চলছে দিন। আমি আর সোহানা আরো গভিরভাবে জড়িয়ে যাচ্ছি । ঠিক ৬ মাস পর কলেজ থেকে বন্ধুদের সাথে বের হইছি ঘুরতে। তখনই সামনে পড়ে যায় নুসরাত। প্রায় পাঁচ বছর পর প্রিয় মুখটার দেখা মিললো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে দেখে বন্ধুরা বললো, "কিরে দাঁড়িয়ে পরলি কেন? চল।"
_ তোরা যা আমি আসছি।
ওরা চলে যাওয়ার পর নুসরাত আমার সামনে আসলো। চেহারা সৌন্দর্য আগের মত নেই কিছুই। মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে। আমার সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলো, "কেমন আছো রাফি?"
তাচ্ছিল্য একটা হাসি দিলাম ওর দিকে তাকিয়ে।
_কেন ভাবছেন কবে আবার জেল থেকে ছাড়া পেলাম? নাকি আবার কোন ;., বা অন্য কিছুর অভিযোগ তুলবে নাকি?
একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে নুসরাত আমার দিকে তাকালো।
_ সে দিনের করা পাপে আমার কপালে জোটে একটা ধর্ষক। যে কিনা রাতের খুদা আমার শরীরে মিটাতো আর দিনে অন্য কারোর সাথে----।
_ হা হা হা ডাক্তার বর ---। আরো কত কি বলেছিলে--। আমি তো পাগল।
_ হ্যা তখন যদি বুঝতাম পাগলটা আমার জন্য পাগল ছিল। কি পেলাম বাবার কথায় তোমায় অবহেলা আর পুলিশ কেস করে!!বিয়ে প্রায় ৬ মাস ভালোই কাটছিলো। তারপর আর আমার সৌন্দর্য তার কাছে ভালো লাগেনা। সে বাসায় ও মেয়ে নিয়ে আসতো। আমার সামনে ওদের সাথে নোংরামি করতো। আর ওদের বলতো আমি কাজের মেয়ে। প্রায় ওর সাথে ঝগড়া করতাম। ও আমার গলা চেপে ধরে বলতো, আমি কি তোকে পূজা করার জন্য বিয়ে করেছি? তখন তোর রূপ ভালো লাগছিলো করেছি, এখন লাগে না তাই তোকে ও ছুঁই না। আমার তখন খুব করে মনে পড়তো তোমার সাথে কাটানো সময়গুলা। যে খানে আমায় এত দিন পেয়ে ও রূপের দিকে নয় মনের দিকে তাকাতে। তারপর রাতে দিনে কাঁদতাম। বাবাকে বললে বাবা বলে, ছেলে মানুষ এমন করেই। অন্য মেয়েদের যখন বাসায় এনে নোংরামি করতো আর বলতো আমি কাজের মেয়ে তখন নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হত। তারপর আমি কয়েকবার আত্মহত্যা ও করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সব সময় মনে হত ওর মত একটা জানোয়ারের জন্য কেন আমার জীবনটা নষ্ট করব?! তারপর ওর বাড়ি থেকে আমি চলে আসি। লজ্জায় বাবার বাড়ি ও যাইনি। আজ স্থান আমার পতিতালয়ে।
_ আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম, "এই নাও ১ হাজার টাকা। আমি কোন রাতেই আসব না। আর হ্যাঁ তোমার মত মেয়ের জীবনে এর থেকে ভালো কিছু হতে পারে না।
_ রাফি প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও? ক্ষমা করে দাও আমায়?
_ হা হা হা ক্ষমা??
এই বলে চলে আসলাম ওর সামনে থেকে। মনটা আজ কেন জানি অন্য রকম লাগছে। বাসায় ফিরে সোহানাকে বললাম আজকের পুরো ঘটনা।
_আল্লাহ কিছু পাপের শাস্তি দুনিয়াতে দেয় আবার কিছু আখেরাতে।
কিছু দিন পর হঠাৎ সোহানার বুকে ব্যথা শুরু হয় প্রচন্ডভাবে। তারপর তাকে হসপিটালে নিয়ে গেলাম।
,,
হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পর সোহানাকে নিয়ে ডাক্তার আই সি ইউ তে নিয়ে গেলেন। আন্টি আমায় জড়িয়ে কান্না করতে লাগলেন। আমি বললামঃ "আন্টি ভরসা রাখুন। সব ঠিক হয়ে যাবে।"
এমন সময় পেছন থেকে কেউ ডাকলো।
_ রাফি?
পেছনে তাকিয়ে আমি অবাক কারণ হুইল চেহারা করে বসে আছে
,,,,
,,,
_ আমি আড়ালে গিয়ে কাঁদতে লাগলাম আন্টি কে কি শান্তনা দেবো? আমি নিজেই যে মেনে নিতে পারছি না সোহানার এই অবস্তা। ওর নিষ্পাপ হাসিটা আর সাথে মিষ্টি শাসনটা তো ছিল আমার রোজকার অভ্যাস। আল্লাহ তুমি সোহানাকে আমার জীবনের বদলে হলে ও ফিরিয়ে দাও।বসে বসে ভাবছি, সোহানার সাথে কাটানো খুনসুঁটির সময় গুলো। প্রতিটা দিন যেন ওর খুনসুঁটি ছাড়া কাটতোই না,এমন সময় পেছন থেকে কেউ ডাক দিলো রাফি।
_ পেছনে তাকিয়ে দেখি,হুইল চেয়ারে বসে আছে আমার মা আর সাথে আছে মেঘলা।
_ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো, আম্মুর এই অবস্তা দেখে। আগের থেকে কত রোগা হয়ে গেছে ওনি আর সাথে দেখা যাচ্ছে হুইল চেয়ার হাঁটতে ও পারে না মনে হয়।
_ এমন সময় মেঘলা আম্মুকে আমার সামনে নিয়ে আসলো আমি অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে নিলাম আম্মু বললো," রাফি অনেক দিন দেখি না তোকে। একবার তাকাবি আমার দিকে।"
_ আমি তাকালাম না , কেন জানি নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। যারা কি না আমায় এত অবহেলা করেছিল প্রতিটা মূহুর্তে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল, আমি কেন তাদের জন্য চোখের জল ফেলছি?
_ আম্মু আবার ডাক দিলো "রাফি, অনেক অভিমান আর রাগ বুঝি জমিয়েছিস।আমাদের বুঝি আর কোন দিন তোর মুখ দেখাবি না?খুব যে ইচ্ছা করছে তোর মুখটা দেখতে খোকা।"
_ আম্মুর কথায় আমি আর নিজেকে সামলাতে পারি নাই। আমি রাগে বললাম, "কেন এসেছেন? আপনাদের রাফি সে দিন এ মারা গিয়েছে যে দিন আঁধার রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসছিলো আর আপনাদের মুক্ত করে চলে আসছিলো।"
_ আমার কথা শুনে আম্মু বললো," মেঘলা চল, আমরা চলে যাই। রাফি মনে হয় আর আমাদের সহ্য করতে পারছে না।"
_ এমন সময় আন্টি এসে বললো," রাফি সোহানার অবস্তা ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছে।"
_ আমি বললাম," আন্টি আপনি একদম চিন্তা করবেন না, আমি ডাক্তার নিয়ে আসছি।"
_ আন্টি বললো,"ওনারা কে রাফি?"
_" আমি চিনি না ওনাদের। " এই বলে হাঁটতে লাগলাম।
_ এমন সময় মেঘলা বললো,"হুইল চেয়ারে বসা মহিলাটি রাফির মা।"
_ আন্টি বললো,"রাফি তুমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলো, আমি ডাক্তার ডাকতে যাই।"
_" আন্টি, আমার কথা বলার প্রয়োজন নেই। সোহানার জীবনটা দরকার।"এই বলে আমি চলে যাই।
''
_ ডাক্তার নিয়ে এসে দেখি আন্টির সাথে আম্মু আর মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে।আমি বললাম,
"আন্টি, ওনারা এখানে কেন?
_ "রাফি, আগে ডাক্তার সোহানাকে দেখুক বাকিটা পরে বলব।"
_ তারপর আন্টি মেঘলা আর আম্মুকে বললো, "চলে যেতে আর আগামীকাল আসতে ।"
_ ডাক্তার সোহানাকে দেখে বললো, "কোন কিছুই কন্ট্রোলের মধ্যে আসতেছে না। আল্লাহ ভালো জানে আমাদের কিছু করার ক্ষমতা নাই এখন।"
_ আন্টি কান্না করতে লাগলো, আমি কি করব বুঝতেছি না। আন্টিকে সামলাবো নাকি সোহানার সাথে থাকবো। আল্লাহ কি সত্যি এ সোহানাকে আমাদের থেকে কেরে নিবে? না, এ কিছুতেই হতে পারে না। সোহানার সাথে জড়িয়ে আছে আমার আর আন্টির প্রাণ।
_ আন্টিকে রাতে অনেক বললাম," আন্টি, আপনার শরীর ভালো নেই বাড়িতে চলে যান, আমি তো আছি।"
_ আন্টি কেঁদে কেঁদে বলে,
" রাফি, যা দেখছো এটা একটা লাস্ট আর আমার কলিজাটা তো এখন আই সি ইউ তে পড়ে আছে। আমি কি বলব এই কথার উত্তরে আমার জানা নেই ,, একটু পর ডাক্তার কে অনেক অনুরোধ করে আমি সোহানার কেবিনে ডুকলাম, মুখটা শুকিয়ে গেছে দুষ্টুমি ভাবটা আর নেই মনে হচ্ছে অনেক দিন খায় না, আমি ওর হাতটা ধরে বললাম," কিরে পাগলী, তুই আমায় ছেড়ে কোথায় যাচ্ছিস?আমি যে তোকে ছাড়া অন্ধ। তুই না বলতি আমার স্বপ্ন গুলো তুই তোর চোখে লালন করছিস, আজ চোখ বন্ধ করে আছিস কেন? ওই কথা বল আমার সাথে একদিন কথা না বলে তো থাকতে পারতি না তুই, আজ কথা বলছিস না কেন? প্লিজ একবার কথা বল সোহানা,
,আমায় এতটা ইগনোর করলো, সোহানা আর কথা বললো না।
***
পরের দিন বসে আছি হসপিটালে পাগলের মত।এমন সময় আম্মু আর মেঘলা এসে সামনে দাঁড়ালো। আম্মু বললো, "তোর আব্বুর মৃত্যুর আগে তোর জন্য একটা চিঠি লিখে গিয়েছে। অনেক খুঁজেছিল তুই চলে আসার পর পায়নি তোকে, তারপর মেঘলা যখন বলছিলো এক বছর আগে,, তোকে দেখেছিল এই হসপিটালে, কতদিন এসেছিল এখানে। এখানকার আশে পাশে ও খোঁজ নিয়েছিল,পাইনি তোকে। তাই তার মৃত্যুর আগে তোর জন্য একটা চিঠি লিখে গিয়েছিলো। আমাদের বলেছিল যদি কোন দিন দেখা হয় চিঠিটা যেন তোকে দেই।"
_আম্মুর কথা শুনে বুকের ভিতরটা যেন ফেটে যাচ্ছে, ওনি যতই হোক আমার বাবা ছিলেন। ওনার অপরাধ ছিল তাতে কি? জন্মদাতা কে আমি কখনো ভুলি নাই, এক দিকে সোহানা অন্য দিকে বাবার মৃত্যুর খবর, মায়ের প্যারালাইজড। কত কিছু হয়ে গেল এই দিন গুলোতে, হারিয়ে গেল কত কিছু।
_ বিকালে বাবার চিঠিটা হাতে নিলাম ( রাফি, জানি তোর কাছে আমি ঘৃনিত বাবা, এটা আমি ও জানি যে, আমি কোন আদর্শ বাবা না কারন আদর্শ বাবারা কখনো সন্তানদের ঘৃণা করে না,, কিন্ত জানিস চার পাশের মানুষ গুলো দিন দিন তোর নামে এত অভিযোগ করতো, আমি তখন রেগে ভাবতাম, এমন সন্তান থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। মনে আছে রাফি তুই যখন কেজি কলেজে পড়তি। একদিন বৃষ্টির সময় তোকে যখন কাঁধে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম, সে দিন তুই বলেছিলি, "বাবা আমিও একদিন তোমায় এই ভাবে কাঁধে করে বাড়ি নেবো। সে দিন আমি খুশিতে আত্মহারা হয়েছিলাম, তুই চলে যাওয়ার পর তোর আম্মু আমার সাথে একদিন ও ভালো করে কথা বলেনি। তোর ছবি বুকে নিয়ে তোর রুমেই ঘুমাতো, তোর ঘাটতিটা বুঝতে বুঝতে একটু বেশি এ সময় লেগে গেছিলো। তোকে শেষবারের মত দেখার অনেক ইচ্ছে ছিল কিন্তু ভাগ্যে যে সব থাকে না। সব শেষ। তুই তোর মা আর মেঘলার পারলে দায়িত্ব নিস।
ইতি
তোর অযোগ্য বাবা)।
,,
বাবার চিঠিটা পড়ে আম্মু কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম, তারপর আম্মুকে সোহানার ব্যাপারে আর আন্টির ব্যাপারে সব কিছু বললাম। সোহানার এখনো জ্ঞান ফিরেনি। আজ দুই দিন হয়ে গেছে, মেয়েটার মুখটা কেমন জানি কালো হয়ে গেছে। রাতে আন্টি বললো," রাফি, তোমার জন্য সোহানা আমার কাছে একটা চিঠি দিয়ে গিয়েছিল, এই নাও।"
_ আমি চিঠিটা খুললাম, সোহানা কি লিখেছিল দেখার জন্য। ( এই গাধা কাঁদছিস কেন,এটা তো আগেই জানতি আমি আর এই পৃথিবীতে বেশি দিন নাই, আর তুই কাঁদলে আমার একদম ভালো লাগে না জানিস না। তুই কিন্তু কোন কিছুতে একদম ফাঁকিবাজি করবি না।আমি যদি পারতাম না আত্মা হয়ে ফিরে আসতাম। জানিস আমিও স্বপ্ন দেখতাম তোকে নিয়ে, তুই সমাজে একদিন অনেক বড় হবি। মানুষগুলো বলবে," ছেলে হলে রাফির মত হও।" আরো কত স্বপ্ন বুনেছিলাম কিন্তু দেখ না, বিধাতার যে এক কঠিন সত্য। কিছু কাজ অসমাপ্তই মানায়। আমার স্বপ্ন গুলো প্লিজ অপূর্ণ রাখিস না, আর শোন তুই যদি কাঁদিস না আমি আর কোন দিন তোর সাথে গল্প করব না। আমার আম্মুর আমি ছাড়া কেউ ছিল না। প্লিজ তুই মায়ের মত আগলে রাখিস, আর শেষ কথা তুই তোর পরিবারের সাথে আবার সম্পর্কটা আগের মত করে নিস। একদম কাঁদবি না গাধা। আমায় দেখ আমি কতটা হাসছি আর হ্যা একটা লাল টুকটুকি বউ আনিস যে তোর অনেকটা খেয়াল রাখবে আমার সময় শেষ আমি চলে যাই।)
,,
_ রাফি কান্না করতে লাগলো। সোহানাকে ছাড়া কি করে থাকবে আল্লাহ কেন তার থেকে সব কেড়ে নিচ্ছে?
_ ডাক্তার রাফি আমি যত দূর জানি আপনি নতুন কিন্তু আজ আপনি এমন ভাবে কাজ করলেন বুঝায় যায়নি আপনি আজ এ জয়েন করেছেন। আমরা তো প্রায় এই পেশেন্ট কে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলাম ( ডাক্তার প্রিয়া) ।
_ ডাক্তার, আমি কাজটা ভালোবাসা নিয়ে করি আর সব থেকে বড় কথা কোন মানুষের ১% সম্ভাবনা থাকলে ও আমি তাকে ১০০% চেষ্টা করব ভালো করার জন্য ।
_ হ্যা রাফি আজ ডাক্তার হয়ছে আর তার প্রথম অপারেশনেই সে সাকসেস হয়েছে, এর সবটাই সোহানার অবদান।
_ ডাক্তার রাফি আজ আমার বার্থডে যদি আসতেন খুব খুশি হতাম।( ডাক্তার প্রিয়া)
_ সরি আজ পারব না।
_ কেন রাফি?
_ আজ আমার সোহানার সাথে দেখা করব।
_ ও গফ নাকি?
_ না প্লিজ এত কথা জিজ্ঞাসা করবেন না,।
_ রাফি এখন সোহানার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, হ্যা সে দিন সোহানাকে আর বাঁচাতে পারেননি রাফি। সোহানার সব স্বপ্ন গুলো একে একে পূরন করতে ব্যাস্ত রাফি। সোহানার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে রাফি কেঁদে বলে, "কতটা দিন আজ আমার সাথে কথা বলছিস না, জানিস আমি এখানে এসে তোর সাথে কথা বললে মানুষ আমায় পাগল বলে। তুই ছাড়া কেউ তোর মত করে বুঝে না রে আমায়। "এই বলে রাফি কাঁদতে লাগলো ,।
,,
এখন মেঘলা রাফির আম্মু আর সোহানার আম্মু একই বাড়িতে থাকে রাফি আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত সে। আজ সেই নেশাখোর নেই, সে এখন একটি রোলস। মেঘলা বললো, "রাফি তুই বিয়ে করে নে আর কত দিন এই ভাবে?"
_ কিছু কাজ অসমাপ্তই ভালো, গল্পটা এখানেই শেষ করছি একটা অসমাপ্ত জীবনের অসমাপ্ত কাহিনী ।
,,
( জানি না গল্পটা আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে তবে গল্পটা জুড়ে আমার নিজের এ একটা আবেগ আর ভালোবাসাযুক্ত ছিল হয়ত অনেকের কাছে সোহানার সাথে রাফির বিয়ে হলে হ্যাপি এনিডিং হত কিন্ত গল্পের হ্যাপি এনিডিং হত,, কিন্ত গল্পের সার্থক হত না গল্পটা লিখাই একটা ঘুড়ে দাড়ানোর জীবন কাহিনী নিয়ে এই গল্পতে যদি কেউ কোন ধরনের কষ্ট পেয়ে থাকেন ক্ষমা করবেন ধন্যবাদ আজকের মত বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ হাফেজ )।
,,
সমাপ্ত
_কিরে কান্না করছিস কেন?
_ তোকে কত গুলো ফোন দিয়েছি। ফোন গুলো রিসিভ করিস নাই কেন?
_ তাই বলে তুই কান্না করবি?
_ আমার চিন্তা হয় না বুঝি? ও আমার চিন্তায় তোর আবার কি আসে যায়?
_ তাই তো আমার কোন কিছু যায় আসে না।
_ যা আর কখনো তোর কাছে আসব না। জানিস আজ কত চিন্তা হচ্ছিলো? সারাটা দিন না খেয়ে আছি। আর তুই একটা বার ও আমার ফোন ধরিলি না।
_ কি বললি তুই এখনো খাবার খাস নি?
সোহানা ঠোঁট বাঁকা করে বললোঃ "না।"
রাফিও সাথে সাথে ধমক দিয়ে উঠলো।
_ থাপ্পড় দিয়ে দাঁতগুলো ফেলে দিতে মন চায়।
_ তুই আমায় আবার বকা দিচ্ছিস? যা খাবই না।
তারপর আমি সোহানাকে খাইয়ে দিতে লাগলাম। আমাদের সম্পর্কটা যে কেউ দেখলে বলবে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক। শুধু দু রুমে ঘুমাই দুজনে। বাকি সব কিছুই এক সাথে। বলা যায় এক সুতোয় বাধা দুটি প্রাণ।
খাওয়ার মাঝে সোহানা বললোঃ "রাফি তোর ভর্তির কি হল?"
রাফি মুখটা কালো করে ফেললো।
সোহানা রাফির মুখ উপরে তুলে বলে, "তুই চান্স পাস নাই বুঝি? আরে বোকা সবাই কি ডাক্তার হবে এমন কোন কথা আছে নাকি? মন খারাপ করিস না।"
_ওই এত বেশি বুঝোস কেন? আমি কি বলছি তোকে যে আমি সুযোগ পাইনি আমি? আমি তোর এত দিনের ধারণ করা স্বপ্ন, আশা আর বিশ্বাস ভাঙ্গতে পারি?
সোহানা কেঁদে দিয়ে রাফিকে জড়িয়ে ধরে।
_জানিস আল্লাহ তোর মাঝে আমার স্বপ্ন গুলো পূরুণ করে দেয়। আজ আমি অনেক খুশিরে ।
_ এই ধর? তোর জন্য আজ তোর ফেভারিট আইসক্রিম এনেছি।
_ থ্যাংকস তোর বউ এত্ত গুলা লাকী হবে। কেন যে নুসরাত গেলো?
আমি রাগ দেখিয়ে উঠে গেলাম। সোহানা আমায় পেছন থেকে চোখ ধরে ফেললো।
_মহারাজ বুঝি আমার সাথে কথা বলবে না?
_ তুই এমন কেন? তোর ছোঁয়াতে সব রাগ চলে যায়?
এই ভাবে চলছে দিন। আমি আর সোহানা আরো গভিরভাবে জড়িয়ে যাচ্ছি । ঠিক ৬ মাস পর কলেজ থেকে বন্ধুদের সাথে বের হইছি ঘুরতে। তখনই সামনে পড়ে যায় নুসরাত। প্রায় পাঁচ বছর পর প্রিয় মুখটার দেখা মিললো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে দেখে বন্ধুরা বললো, "কিরে দাঁড়িয়ে পরলি কেন? চল।"
_ তোরা যা আমি আসছি।
ওরা চলে যাওয়ার পর নুসরাত আমার সামনে আসলো। চেহারা সৌন্দর্য আগের মত নেই কিছুই। মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে। আমার সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলো, "কেমন আছো রাফি?"
তাচ্ছিল্য একটা হাসি দিলাম ওর দিকে তাকিয়ে।
_কেন ভাবছেন কবে আবার জেল থেকে ছাড়া পেলাম? নাকি আবার কোন ;., বা অন্য কিছুর অভিযোগ তুলবে নাকি?
একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে নুসরাত আমার দিকে তাকালো।
_ সে দিনের করা পাপে আমার কপালে জোটে একটা ধর্ষক। যে কিনা রাতের খুদা আমার শরীরে মিটাতো আর দিনে অন্য কারোর সাথে----।
_ হা হা হা ডাক্তার বর ---। আরো কত কি বলেছিলে--। আমি তো পাগল।
_ হ্যা তখন যদি বুঝতাম পাগলটা আমার জন্য পাগল ছিল। কি পেলাম বাবার কথায় তোমায় অবহেলা আর পুলিশ কেস করে!!বিয়ে প্রায় ৬ মাস ভালোই কাটছিলো। তারপর আর আমার সৌন্দর্য তার কাছে ভালো লাগেনা। সে বাসায় ও মেয়ে নিয়ে আসতো। আমার সামনে ওদের সাথে নোংরামি করতো। আর ওদের বলতো আমি কাজের মেয়ে। প্রায় ওর সাথে ঝগড়া করতাম। ও আমার গলা চেপে ধরে বলতো, আমি কি তোকে পূজা করার জন্য বিয়ে করেছি? তখন তোর রূপ ভালো লাগছিলো করেছি, এখন লাগে না তাই তোকে ও ছুঁই না। আমার তখন খুব করে মনে পড়তো তোমার সাথে কাটানো সময়গুলা। যে খানে আমায় এত দিন পেয়ে ও রূপের দিকে নয় মনের দিকে তাকাতে। তারপর রাতে দিনে কাঁদতাম। বাবাকে বললে বাবা বলে, ছেলে মানুষ এমন করেই। অন্য মেয়েদের যখন বাসায় এনে নোংরামি করতো আর বলতো আমি কাজের মেয়ে তখন নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হত। তারপর আমি কয়েকবার আত্মহত্যা ও করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সব সময় মনে হত ওর মত একটা জানোয়ারের জন্য কেন আমার জীবনটা নষ্ট করব?! তারপর ওর বাড়ি থেকে আমি চলে আসি। লজ্জায় বাবার বাড়ি ও যাইনি। আজ স্থান আমার পতিতালয়ে।
_ আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম, "এই নাও ১ হাজার টাকা। আমি কোন রাতেই আসব না। আর হ্যাঁ তোমার মত মেয়ের জীবনে এর থেকে ভালো কিছু হতে পারে না।
_ রাফি প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও? ক্ষমা করে দাও আমায়?
_ হা হা হা ক্ষমা??
এই বলে চলে আসলাম ওর সামনে থেকে। মনটা আজ কেন জানি অন্য রকম লাগছে। বাসায় ফিরে সোহানাকে বললাম আজকের পুরো ঘটনা।
_আল্লাহ কিছু পাপের শাস্তি দুনিয়াতে দেয় আবার কিছু আখেরাতে।
কিছু দিন পর হঠাৎ সোহানার বুকে ব্যথা শুরু হয় প্রচন্ডভাবে। তারপর তাকে হসপিটালে নিয়ে গেলাম।
,,
হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পর সোহানাকে নিয়ে ডাক্তার আই সি ইউ তে নিয়ে গেলেন। আন্টি আমায় জড়িয়ে কান্না করতে লাগলেন। আমি বললামঃ "আন্টি ভরসা রাখুন। সব ঠিক হয়ে যাবে।"
এমন সময় পেছন থেকে কেউ ডাকলো।
_ রাফি?
পেছনে তাকিয়ে আমি অবাক কারণ হুইল চেহারা করে বসে আছে
,,,,
,,,
_ আমি আড়ালে গিয়ে কাঁদতে লাগলাম আন্টি কে কি শান্তনা দেবো? আমি নিজেই যে মেনে নিতে পারছি না সোহানার এই অবস্তা। ওর নিষ্পাপ হাসিটা আর সাথে মিষ্টি শাসনটা তো ছিল আমার রোজকার অভ্যাস। আল্লাহ তুমি সোহানাকে আমার জীবনের বদলে হলে ও ফিরিয়ে দাও।বসে বসে ভাবছি, সোহানার সাথে কাটানো খুনসুঁটির সময় গুলো। প্রতিটা দিন যেন ওর খুনসুঁটি ছাড়া কাটতোই না,এমন সময় পেছন থেকে কেউ ডাক দিলো রাফি।
_ পেছনে তাকিয়ে দেখি,হুইল চেয়ারে বসে আছে আমার মা আর সাথে আছে মেঘলা।
_ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো, আম্মুর এই অবস্তা দেখে। আগের থেকে কত রোগা হয়ে গেছে ওনি আর সাথে দেখা যাচ্ছে হুইল চেয়ার হাঁটতে ও পারে না মনে হয়।
_ এমন সময় মেঘলা আম্মুকে আমার সামনে নিয়ে আসলো আমি অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে নিলাম আম্মু বললো," রাফি অনেক দিন দেখি না তোকে। একবার তাকাবি আমার দিকে।"
_ আমি তাকালাম না , কেন জানি নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। যারা কি না আমায় এত অবহেলা করেছিল প্রতিটা মূহুর্তে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল, আমি কেন তাদের জন্য চোখের জল ফেলছি?
_ আম্মু আবার ডাক দিলো "রাফি, অনেক অভিমান আর রাগ বুঝি জমিয়েছিস।আমাদের বুঝি আর কোন দিন তোর মুখ দেখাবি না?খুব যে ইচ্ছা করছে তোর মুখটা দেখতে খোকা।"
_ আম্মুর কথায় আমি আর নিজেকে সামলাতে পারি নাই। আমি রাগে বললাম, "কেন এসেছেন? আপনাদের রাফি সে দিন এ মারা গিয়েছে যে দিন আঁধার রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসছিলো আর আপনাদের মুক্ত করে চলে আসছিলো।"
_ আমার কথা শুনে আম্মু বললো," মেঘলা চল, আমরা চলে যাই। রাফি মনে হয় আর আমাদের সহ্য করতে পারছে না।"
_ এমন সময় আন্টি এসে বললো," রাফি সোহানার অবস্তা ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছে।"
_ আমি বললাম," আন্টি আপনি একদম চিন্তা করবেন না, আমি ডাক্তার নিয়ে আসছি।"
_ আন্টি বললো,"ওনারা কে রাফি?"
_" আমি চিনি না ওনাদের। " এই বলে হাঁটতে লাগলাম।
_ এমন সময় মেঘলা বললো,"হুইল চেয়ারে বসা মহিলাটি রাফির মা।"
_ আন্টি বললো,"রাফি তুমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলো, আমি ডাক্তার ডাকতে যাই।"
_" আন্টি, আমার কথা বলার প্রয়োজন নেই। সোহানার জীবনটা দরকার।"এই বলে আমি চলে যাই।
''
_ ডাক্তার নিয়ে এসে দেখি আন্টির সাথে আম্মু আর মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে।আমি বললাম,
"আন্টি, ওনারা এখানে কেন?
_ "রাফি, আগে ডাক্তার সোহানাকে দেখুক বাকিটা পরে বলব।"
_ তারপর আন্টি মেঘলা আর আম্মুকে বললো, "চলে যেতে আর আগামীকাল আসতে ।"
_ ডাক্তার সোহানাকে দেখে বললো, "কোন কিছুই কন্ট্রোলের মধ্যে আসতেছে না। আল্লাহ ভালো জানে আমাদের কিছু করার ক্ষমতা নাই এখন।"
_ আন্টি কান্না করতে লাগলো, আমি কি করব বুঝতেছি না। আন্টিকে সামলাবো নাকি সোহানার সাথে থাকবো। আল্লাহ কি সত্যি এ সোহানাকে আমাদের থেকে কেরে নিবে? না, এ কিছুতেই হতে পারে না। সোহানার সাথে জড়িয়ে আছে আমার আর আন্টির প্রাণ।
_ আন্টিকে রাতে অনেক বললাম," আন্টি, আপনার শরীর ভালো নেই বাড়িতে চলে যান, আমি তো আছি।"
_ আন্টি কেঁদে কেঁদে বলে,
" রাফি, যা দেখছো এটা একটা লাস্ট আর আমার কলিজাটা তো এখন আই সি ইউ তে পড়ে আছে। আমি কি বলব এই কথার উত্তরে আমার জানা নেই ,, একটু পর ডাক্তার কে অনেক অনুরোধ করে আমি সোহানার কেবিনে ডুকলাম, মুখটা শুকিয়ে গেছে দুষ্টুমি ভাবটা আর নেই মনে হচ্ছে অনেক দিন খায় না, আমি ওর হাতটা ধরে বললাম," কিরে পাগলী, তুই আমায় ছেড়ে কোথায় যাচ্ছিস?আমি যে তোকে ছাড়া অন্ধ। তুই না বলতি আমার স্বপ্ন গুলো তুই তোর চোখে লালন করছিস, আজ চোখ বন্ধ করে আছিস কেন? ওই কথা বল আমার সাথে একদিন কথা না বলে তো থাকতে পারতি না তুই, আজ কথা বলছিস না কেন? প্লিজ একবার কথা বল সোহানা,
,আমায় এতটা ইগনোর করলো, সোহানা আর কথা বললো না।
***
পরের দিন বসে আছি হসপিটালে পাগলের মত।এমন সময় আম্মু আর মেঘলা এসে সামনে দাঁড়ালো। আম্মু বললো, "তোর আব্বুর মৃত্যুর আগে তোর জন্য একটা চিঠি লিখে গিয়েছে। অনেক খুঁজেছিল তুই চলে আসার পর পায়নি তোকে, তারপর মেঘলা যখন বলছিলো এক বছর আগে,, তোকে দেখেছিল এই হসপিটালে, কতদিন এসেছিল এখানে। এখানকার আশে পাশে ও খোঁজ নিয়েছিল,পাইনি তোকে। তাই তার মৃত্যুর আগে তোর জন্য একটা চিঠি লিখে গিয়েছিলো। আমাদের বলেছিল যদি কোন দিন দেখা হয় চিঠিটা যেন তোকে দেই।"
_আম্মুর কথা শুনে বুকের ভিতরটা যেন ফেটে যাচ্ছে, ওনি যতই হোক আমার বাবা ছিলেন। ওনার অপরাধ ছিল তাতে কি? জন্মদাতা কে আমি কখনো ভুলি নাই, এক দিকে সোহানা অন্য দিকে বাবার মৃত্যুর খবর, মায়ের প্যারালাইজড। কত কিছু হয়ে গেল এই দিন গুলোতে, হারিয়ে গেল কত কিছু।
_ বিকালে বাবার চিঠিটা হাতে নিলাম ( রাফি, জানি তোর কাছে আমি ঘৃনিত বাবা, এটা আমি ও জানি যে, আমি কোন আদর্শ বাবা না কারন আদর্শ বাবারা কখনো সন্তানদের ঘৃণা করে না,, কিন্ত জানিস চার পাশের মানুষ গুলো দিন দিন তোর নামে এত অভিযোগ করতো, আমি তখন রেগে ভাবতাম, এমন সন্তান থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। মনে আছে রাফি তুই যখন কেজি কলেজে পড়তি। একদিন বৃষ্টির সময় তোকে যখন কাঁধে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম, সে দিন তুই বলেছিলি, "বাবা আমিও একদিন তোমায় এই ভাবে কাঁধে করে বাড়ি নেবো। সে দিন আমি খুশিতে আত্মহারা হয়েছিলাম, তুই চলে যাওয়ার পর তোর আম্মু আমার সাথে একদিন ও ভালো করে কথা বলেনি। তোর ছবি বুকে নিয়ে তোর রুমেই ঘুমাতো, তোর ঘাটতিটা বুঝতে বুঝতে একটু বেশি এ সময় লেগে গেছিলো। তোকে শেষবারের মত দেখার অনেক ইচ্ছে ছিল কিন্তু ভাগ্যে যে সব থাকে না। সব শেষ। তুই তোর মা আর মেঘলার পারলে দায়িত্ব নিস।
ইতি
তোর অযোগ্য বাবা)।
,,
বাবার চিঠিটা পড়ে আম্মু কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম, তারপর আম্মুকে সোহানার ব্যাপারে আর আন্টির ব্যাপারে সব কিছু বললাম। সোহানার এখনো জ্ঞান ফিরেনি। আজ দুই দিন হয়ে গেছে, মেয়েটার মুখটা কেমন জানি কালো হয়ে গেছে। রাতে আন্টি বললো," রাফি, তোমার জন্য সোহানা আমার কাছে একটা চিঠি দিয়ে গিয়েছিল, এই নাও।"
_ আমি চিঠিটা খুললাম, সোহানা কি লিখেছিল দেখার জন্য। ( এই গাধা কাঁদছিস কেন,এটা তো আগেই জানতি আমি আর এই পৃথিবীতে বেশি দিন নাই, আর তুই কাঁদলে আমার একদম ভালো লাগে না জানিস না। তুই কিন্তু কোন কিছুতে একদম ফাঁকিবাজি করবি না।আমি যদি পারতাম না আত্মা হয়ে ফিরে আসতাম। জানিস আমিও স্বপ্ন দেখতাম তোকে নিয়ে, তুই সমাজে একদিন অনেক বড় হবি। মানুষগুলো বলবে," ছেলে হলে রাফির মত হও।" আরো কত স্বপ্ন বুনেছিলাম কিন্তু দেখ না, বিধাতার যে এক কঠিন সত্য। কিছু কাজ অসমাপ্তই মানায়। আমার স্বপ্ন গুলো প্লিজ অপূর্ণ রাখিস না, আর শোন তুই যদি কাঁদিস না আমি আর কোন দিন তোর সাথে গল্প করব না। আমার আম্মুর আমি ছাড়া কেউ ছিল না। প্লিজ তুই মায়ের মত আগলে রাখিস, আর শেষ কথা তুই তোর পরিবারের সাথে আবার সম্পর্কটা আগের মত করে নিস। একদম কাঁদবি না গাধা। আমায় দেখ আমি কতটা হাসছি আর হ্যা একটা লাল টুকটুকি বউ আনিস যে তোর অনেকটা খেয়াল রাখবে আমার সময় শেষ আমি চলে যাই।)
,,
_ রাফি কান্না করতে লাগলো। সোহানাকে ছাড়া কি করে থাকবে আল্লাহ কেন তার থেকে সব কেড়ে নিচ্ছে?
_ ডাক্তার রাফি আমি যত দূর জানি আপনি নতুন কিন্তু আজ আপনি এমন ভাবে কাজ করলেন বুঝায় যায়নি আপনি আজ এ জয়েন করেছেন। আমরা তো প্রায় এই পেশেন্ট কে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলাম ( ডাক্তার প্রিয়া) ।
_ ডাক্তার, আমি কাজটা ভালোবাসা নিয়ে করি আর সব থেকে বড় কথা কোন মানুষের ১% সম্ভাবনা থাকলে ও আমি তাকে ১০০% চেষ্টা করব ভালো করার জন্য ।
_ হ্যা রাফি আজ ডাক্তার হয়ছে আর তার প্রথম অপারেশনেই সে সাকসেস হয়েছে, এর সবটাই সোহানার অবদান।
_ ডাক্তার রাফি আজ আমার বার্থডে যদি আসতেন খুব খুশি হতাম।( ডাক্তার প্রিয়া)
_ সরি আজ পারব না।
_ কেন রাফি?
_ আজ আমার সোহানার সাথে দেখা করব।
_ ও গফ নাকি?
_ না প্লিজ এত কথা জিজ্ঞাসা করবেন না,।
_ রাফি এখন সোহানার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, হ্যা সে দিন সোহানাকে আর বাঁচাতে পারেননি রাফি। সোহানার সব স্বপ্ন গুলো একে একে পূরন করতে ব্যাস্ত রাফি। সোহানার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে রাফি কেঁদে বলে, "কতটা দিন আজ আমার সাথে কথা বলছিস না, জানিস আমি এখানে এসে তোর সাথে কথা বললে মানুষ আমায় পাগল বলে। তুই ছাড়া কেউ তোর মত করে বুঝে না রে আমায়। "এই বলে রাফি কাঁদতে লাগলো ,।
,,
এখন মেঘলা রাফির আম্মু আর সোহানার আম্মু একই বাড়িতে থাকে রাফি আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত সে। আজ সেই নেশাখোর নেই, সে এখন একটি রোলস। মেঘলা বললো, "রাফি তুই বিয়ে করে নে আর কত দিন এই ভাবে?"
_ কিছু কাজ অসমাপ্তই ভালো, গল্পটা এখানেই শেষ করছি একটা অসমাপ্ত জীবনের অসমাপ্ত কাহিনী ।
,,
( জানি না গল্পটা আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে তবে গল্পটা জুড়ে আমার নিজের এ একটা আবেগ আর ভালোবাসাযুক্ত ছিল হয়ত অনেকের কাছে সোহানার সাথে রাফির বিয়ে হলে হ্যাপি এনিডিং হত কিন্ত গল্পের হ্যাপি এনিডিং হত,, কিন্ত গল্পের সার্থক হত না গল্পটা লিখাই একটা ঘুড়ে দাড়ানোর জীবন কাহিনী নিয়ে এই গল্পতে যদি কেউ কোন ধরনের কষ্ট পেয়ে থাকেন ক্ষমা করবেন ধন্যবাদ আজকের মত বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ হাফেজ )।
,,
সমাপ্ত