16-01-2023, 11:32 AM
পর্ব ৩২
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে তনিমা মোবাইলে দেখল, রাজবীরের এস এম এস, ‘ধান ঠিকমত পৌঁছেছে?’ তনিমা তখনই জবাব দিল না, এই সময়টা সুখমনি বাচ্চা দুটোকে কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরী করে, তনিমাও গিয়ে হাজির হয়। বাচ্চা দুটো সুখমনিকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরায়, আর সুখমনি সুখী পায়রার মত বক বকম করে ওদের পেছন পেছন ঘোরে, কুলদীপ দুধটা খেয়ে নে বাবা, পিঙ্কি সোনা হোম ওয়ার্কের খাতা নিয়েছিস? রোজই এক দৃশ্য, তবুও তনিমার দেখতে ভাল লাগে, দুই বাচ্চা কলেজে চলে গেলে তনিমা স্নান করতে যায়, স্নান সেরে এসে দুই জা নাস্তা করতে বসে, সংসারের নানান কথা হয়, সুখমনি ডেয়ারীর কথা বলে, তনিমা ক্ষেত আর অফিসের।
তনিমা বলল, ভাবী আমি যদি কিছুদিনের জন্য বিদেশ যাই, তোমার অসুবিধা হবে?
- বিদেশ যাবি কেন? কোথায়? কবে?
এক সাথে তিন তিনটে প্রশ্ন করল সুখমনি। তনিমা সুখমনিকে চালের এক্সপোর্ট নিয়ে কি রকম ঝামেলা হচ্ছে সে কথা বলল, জলন্ধরের এক এক্সপোর্টার ওদের বাজার কব্জা করছে, পুরোনো ক্লায়েন্টরা অর্ডার দিচ্ছে না, একবার গিয়ে কথা বলা ভীষন দরকার।
- সুরিন্দর গেলে হবে না?
- সুরিন্দরকেই পাঠাব ভেবেছিলাম, কিন্তু এতদিন ধরে আমিই এদের সাথে যোগাযোগ রেখেছি, এবারে ব্যাপারটা প্যাঁচালো, আমি কেভিনের সাথেও কথা বললাম, সে বলল আমি গেলেই বেশী ভাল হবে।
- কেভিন মানে সেই সাহেবটা, তুই প্রথম যেবার সোমেনের সাথে এসেছিলি, তোদের সাথে এসেছিল?
- হ্যাঁ সেই, পরমদীপ যখন গেল তখনও খুব সাহায্য করেছিল।
- হ্যাঁ লোকটা ভাল মনে হয়েছিল। কবে যাবি?
- এপ্রিলের শেষে, ক্ষেতে বেশী কাজ থাকবে না, বাচ্চাদের কলেজেও ছুটি থাকবে।
- তুই একা পারবি? এত দূর?
- পারব ভাবী, তুমিই তো বল আমরা না পারলে চলবে কি করে? আমার চিন্তা তোমাকে নিয়ে, বাচ্চা দুটো, পিতাজী মাতাজী, তোমার ডেয়ারী, এত সব নিয়ে তুমি একা?
এত সব সুখমনিই সামলায়, তবুও তনিমা কথাটা বলল।
- তুই চিন্তা করিস না, আমি সামলে নেব, সুখমনি খুশী হয়ে বলল, ডেয়ারীর কাজ তুই যে নতুন ছেলেটা দিয়েছিস ওই দেখে, বাকী রইল বুড়ো বুড়ি আর বাচ্চা দুটো, সে আমার ভালই লাগে। তুই কতদিনের জন্য যাবি?
- এক দেড় মাস, চেষ্টা করব তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে। জুন থেকে আবার ক্ষেতের কাজ শুরু হবে তখন আমাকে এখানে থাকতেই হবে।
নাস্তা সেরে তনিমা নিজের ঘরে গিয়ে রাজবীরকে ফোন করল, আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দেব জানিনা, আপনি না থাকলে কি বিপদে যে পড়তাম!
- আমি তো আছিই তনিমা, তোমার কোনো পাত্তা নেই, সেদিন ধান কিনতে এলে, তারপরে আর কোনো খবর নেই।
- সে কি? আমি পরের দিনই এস এম এস করলাম, আপনি পান নি?
তনিমা নিপাট মিথ্যা বলল।
- না পাইনি, মিস করেছি হয়তো, রাজবীর বলল, তনিমা একবার দেখা করবে না?
- কবে?
- আজকে।
- আজ আমার বেরোতে দেরী হবে।
- তা হলে কালকে?
- ঠিক আছে, তনিমা বলল, আপনাকে নিতে আসতে হবে কিন্তু।
- সে তো আসবই।
পরের দিন তনিমা যোগিন্দরকে বলল, 'আজ তোকে সেই কাজটা করতে হবে'
- জাসুসীর কাজটা ভাবী?
- হ্যাঁ, এই নে ডি অ্যাডিকশন সেন্টারের ঠিকানা, অফিসে গাড়ী রেখে চুপ চাপ বেড়িয়ে যাবি, কেউ যেন জানতে না পারে, আর তাড়া হুড়ো করবি না, সাবধানে সময় নিয়ে খোঁজ করবি, পারলে রোগীদের সাথে বা তাদের আত্মীয়দের সাথে কথা বলবি। অফিস ফিরে যদি দেখিস আমি নেই তাহলে অপেক্ষা করবি।
তনিমা যোগিন্দরকে দুটো পাঁচশো টাকার নোট দিল।
সুরিন্দর অফিসে ছিল না, বৌকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছে, লাঞ্চের পরে আসবে, তনিমা নতুন ম্যানেজার নীতিশকে বলল, 'আমি একটু বেরোচ্ছি, সুরিন্দর এলে অপেক্ষা করতে বোলো'
আগের মতই রাজবীর গাড়ী নিয়ে বাজারে অপেক্ষা করছিল, তনিমা পৌছতেই গাড়ী স্টার্ট করল।
- বিয়াস যেতে আসতেই অনেকটা সময় বেরিয়ে যায়, গাড়ীতে বসে তনিমা বলল।
- এখানেই কোনো হোটেলে যাবে? রাজবীর জিজ্ঞেস করল।
- না না এখানে হোটলে না, আপনাকে আগেই বলেছি এখানে অনেক চেনাশোনা। শহরের বাইরে কিন্তু বেশী দূরে না, এমন কোনো জায়গা হলে সুবিধে হত।
'ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা করব', রাজবীর বলল।
বিয়াস পৌঁছে এক নৈর্ব্যক্তিক চোদনের পর, ওরা লাঞ্চের অর্ডার দিল। তনিমা উঠে বাথরুম গিয়ে জামা কাপড় পরে এলো, রাজবীর বলল, 'একি জামা কাপড় পরে ফেললে, আমি ভাবছিলাম আর একবার....'
- আজ আর না প্লীজ, বাড়ি ফিরতে হবে।
- কিন্তু তোমার তাড়া কিসের? পরমদীপ তো নেই...।
- পরমদীপ নেই, কিন্তু বাচ্চা দুটো তো আছে, তনিমা হেসে বলল, বাড়ী ফিরতে দেরী হয়ে যাবে, একবার অফিসেও ঢুঁ মারতে হবে, সেখানেও হাজার ঝামেলা।
বেয়ারা লাঞ্চ নিয়ে এল, তনিমা ভেবেছিল লাঞ্চ খেতে খেতে চাল এক্সপোর্টের কথাটা তুলবে, তার আগেই রাজবীর বলল, 'তনিমা আমার একটা প্রস্তাব ছিল'
- কি?
- একা তুমি এত বড় ব্যবসা কি করে সামলাবে? এ সব মেয়েদের কাজ না, তোমাদের ব্যবসাটা আমাকে বেচে দাও, যত টাকা চাও দেব।
তনিমা চমকে উঠে জিজ্ঞেস করল, 'আর মিল অফিস এগুলো?'
- সেগুলোও আমিই চালাব, তার জন্য আলাদা টাকা দেব, মাসে মাসে বা একবারে, যা তোমার সুবিধে, তোমাদের ক্ষেতের ধানও আমি কিনে নেব।
এতদিনে তাহলে বেড়ালটা থলি থেকে বেরোল, যাক মতলবটা পরিস্কার হল, তনিমা একটুক্ষন চিন্তা করে বলল, 'মন্দ বলেননি, আমারও আর ভাল লাগছে না, আজ ধান নেই তো কাল লেবার নেই, এক্সপোর্টের অর্ডারও আসছে না, এসব আমার পোষায় না'
- তোমায় এইসব নিয়ে একদম মাথা ঘামাতে হবে না, তুমি শুধু মাঝে মাঝে আমার কাছে এসে থাকবে, আমি অমৃতসরে একটা ফ্ল্যাট নেব, তুমি চাইলে সীমাও আসবে, বলে রাজবীর চোখ টিপল।
আচ্ছা! উনি গাছেরটা খাবেন, তলারটাও কুড়োবেন!
তনিমা মনে মনে না হেসে পারল না, মুখে বলল, 'ঠিক আছে, আমাকে একটু সময় দিন, পিতাজীর সাথে, ভাবীর সাথে কথা বলতে হবে'
- হ্যাঁ হ্যাঁ, এই সব কাজ তাড়াহুড়ো করে হয় না।
লাঞ্চের পর রাজবীর তনিমাকে আর একটু চটকালো, মাই টিপে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করল, 'তনিমা আমার সাথে একদিন টিচার স্টুডেন্ট খেলবে?'
- আমাকে টাস্ক দেবেন?
- হ্যাঁ।
- আমি না পারলে?
- শাস্তি দেব।
- ঠিক আছে, আগে ফ্ল্যাট কিনুন।
অফিস ফিরে তনিমা দেখে যোগিন্দর তখনো ফেরে নি, সুরিন্দর ওর জন্য অপেক্ষা করছে। তনিমার একটু চিন্তা হল, কিন্তু মুখে কিছু প্রকাশ করল না, সুরিন্দরের সাথে বসে এপ্রিল মাসে লন্ডন যাওয়ার প্ল্যান করতে লাগল। সুরিন্দর আগে একবার কানাডা আমেরিকা ঘুরে এসেছে, বলল ওর চেনা ট্রাভেল এজেন্ট আছে, সেই পাসপোর্ট ভিসা করিয়ে দেবে।
একটু পরেই যোগিন্দর ফিরে এল, তনিমা অফিস থেকে বেরোবার আগে সুরিন্দরকে বলল, 'কি হল তোমার অজিত আর নিশার দেখা নেই যে?'
- আপনার কোনো কাজ ছিল ভাবী?
- হ্যাঁ আমাদের ক্ষেতে এক মজুরের ছেলে নেশা ধরেছে, ভাবছিলাম ওকে যদি অজিতদের সেন্টারে পাঠানো যায়।
- আমি আপনার সাথে দেখা করতে বলব, সুরিন্দর বলল।
সুরিন্দর আগেই বলেছিল, যোগিন্দর একই খবর দিল, অজিত আর নিশাদের ওটা নামেই ফ্রি ডি-অ্যাডিকশন সেন্টার, আসলে ওটা একটা প্রাইভেট ক্লিনিক, রোগীদের কাছ থেকে যথেচ্ছ পয়সা নেয়।
- তুই কি করে জানলি ওরা পয়সা নেয়?
- আমার ভাইয়ের ভর্তি হওয়ার কথা বললাম, আমাকে কত খরচা হবে তার হিসেব লিখে দিল, এই দেখুন। তনিমা কাগজটা নিয়ে দেখছে, অজিতদের সংস্থার প্যাডে হিসেব লেখা আছে।
যোগিন্দর বলল, ঠিকঠাক চিকিৎসাও নাকি হয়না ভাবী।
- তোকে কে বলল?
- আমার মতই একজন তার ভাইকে ভর্তি করিয়েছে, সে বলল।
- বাব্বা, তুই একদিনেই অনেক খবর এনেছিস।
- আপনি বললেন ভাবী, আর আমি করব না?
যোগিন্দর ভাবীকে খুশী করতে খুবই উৎসুক।
তনিমা বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পাসপোর্ট ভিসার জন্য দৌড় দৌড়ি আছে, বিদেশে কোথায় যাবে, কার সাথে দেখা করবে সে সব ঠিক করা আছে, এ ব্যাপারে সবচেয়ে সাহায্য করছেন কেভিন ওয়াকার, প্রায় রোজ রাতেই ওর সাথে চ্যাটে কথা হয়, এতদিনের পুরোনো ক্লায়েন্টদের কি করে ফেরত পাওয়া যায় সে নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়, অভিজ্ঞ কেভিনের শলা পরামর্শ তনিমার মনঃপুত হয়। কেভিন বললেন, তনিমা যখন লন্ডন পৌছবে উনি সেখানে থাকবেন, লন্ডনের কাজ সেরে ওরা প্যারিস যাবে, তনিমা প্যারিস থেকে রোম হয়ে দেশে ফিরতে পারে। তনিমা একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করল, কেভিন কি ওর সাথে রোম যেতে পারবেন? কেভিন বললেন, ওঁর কোনও আপত্তি নেই, তাহলে ওরা লন্ডন থেকে আগে রোম যাবেন, সেখান থেকে প্যারিস আসবেন, তনিমা প্যারিস থেকে দেশে ফিরতে পারে। তনিমা কেভিনকে অনেক ধন্যবাদ দিল।
দুদিন পর অজিত সকালবেলা ফোন করল, 'ভাবী আপনি আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছেন?'
তনিমা বলল, 'হ্যাঁ, তুমি কি আজ একবার অফিসে আসতে পারবে?'
অজিত আসতে ওর জন্য চায়ের অর্ডার দিয়ে তনিমা জিজ্ঞেস করল, 'বল অজিত তোমাদের কাজ কেমন চলছে?'
অজিত যথারীতি নিজেদের কাজের কথা বলতে শুরু করল, তনিমা ওকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল, 'এসব তুমি বলছ বটে, কিন্তু আমার কাছে অন্য খবর আছে। তোমরা আমাদের কাছ থেকে নিয়মিত পয়সা নাও ফ্রি ক্লিনিক চালাবে বলে, আর রোগীদের কাছ থেকে পয়সা নাও প্রাইভেট ক্লিনিকের মত'
সেই শুনে অজিত বলল, 'ভাবী, আর একটা বেসরকারী সংস্থা আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়াচ্ছে, আপনি প্লীজ বিশ্বাস করবেন না
তনিমা বলল, 'তুমি মিথ্যা কথা বলছ, কয়েকদিন আগে আমি একজনকে পাঠিয়েছিলাম তোমাদের ওখানে চিকিৎসার জন্য, তার কাছ থেকে তোমার পয়সা চেয়েছ'
তনিমা যোগিন্দরের দেওয়া কাগজটা এগিয়ে দিল।
আর সেটা দেখতেই অজিতের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, তনিমা বলল,'শুধু এটাই না, এই রকম আরো প্রমান আছে আমার কাছে। এই অফিসের উদ্বোধনের দিন তুমি এসেছিলে অজিত, নিজের চোখে দেখছে, সরকারী মহলে আমাদের কি রকম চেনাশোনা, তোমাদের ওই সংস্থা বন্ধ করতে আমার দু’দিনও লাগবে না, চাচাজী উকিল, উনি বললেন জালিয়াতির কেসও হয়, মিথ্যে বলে এত দিন আমাদের কাছ থেকে পয়সা নিচ্ছ'
অজিত তো চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে তনিমার সামনে মেঝেতে বসে পড়ল, পা জড়িয়ে ধরে দিয়ে মিনতি করল, 'প্লীজ ভাবী আমরা মরে যাব, কথা দিচ্ছি ভবিষ্যতে এরকম হবে না'
অনেকদিন পর তনিমার প্রথম স্বামী অসীমের কথা মনে পড়ল, তনিমা যখন তাকে ডিভোর্সের কথা বলেছিল, সেও এই ভাবে পা ধরে কাকুতি মিনতি করেছিল। তনিমা তখন বিরক্তি ঘেন্নায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, কিন্তু এই তনিমা সে তনিমা নয়।
তনিমা শান্ত ভঙ্গিতে অজিতকে জিজ্ঞেস করল, 'তোমার শালাবাবু নাকি সাংবাদিক? তোমাদের সংস্থা সম্বন্ধে ভাল ভাল খবর সেই ছাপিয়ে দেয়, তাই তো?'
আরো আধঘন্টা তনিমা অজিতের সাথে কথা বলল।
"তোমাদের ব্যবসাটা আমাকে বেচে দাও", রাজবীরের এই কথাটা তনিমার মাথা থেকে কিছুতেই যাচ্ছে না। রাজবীরের সাথে একটা লেনদেনের সম্পর্কে তনিমার আপত্তি ছিল না, ব্যবসায় একে অপরকে সাহায্য করতেই হয়, মাঝে মধ্যে চোদাচুদি, সেটাও চলতো, কিন্তু এ যে একেবারে গিলে খেতে চাইছে। তনিমাদের এত দিনের ব্যবসা, বাজারে, বিশেষ করে বিদেশের বাজারে, যথেষ্ট সুনাম, অমৃতসরে মিল, গোডাউন, অফিস, অজনালায় অতটা জমি, গুরদীপজী বৃদ্ধ এবং অসুস্থ, বাড়ীতে শুধু সুখমনি আর তনিমা, রাজবীরের জিভে জল ঝরছে, ভাবছে এই মওকায় ব্যবসাটা পুরো হাতিয়ে তনিমাকে রক্ষিতা করে রাখবে, মুখেও তো বললো, "তুমি শুধু মাঝে মাঝে আমার কাছে এসে থাকবে!" বিদেশে পর্যন্ত ওদের নামে মিথ্যা বলেছে।
ভাবলেই তনিমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মাথা গরম করার সময় এটা নয়, ঝামেলা না বাড়িয়ে রাজবীরকে কি ভাবে কাটানো যায় সেটাই ভাবতে হবে। রাজবীর রোজই এস.এম.এস করে, তনিমা জবাব দেয় না, ফোন করে দেখা করতে চায়, তনিমা নানান বাহানা দেখিয়ে এড়িয়ে যায়।
সব থেকে বড় সমস্যা হল তনিমা ঠিক করতে পারছে না, কার সাথে এ নিয়ে আলোচনা করা যায়? সুখমনি ব্যবসার ব্যাপারে মাথা ঘামাতে চায় না, তার মানে এই নয় যে সুখমনিকে বললে সে কিছু করবে না, উলটে তনিমার আশঙ্কা চরম একটা কিছু করবে। আরও একটা বিপদ আছে, তনিমা আর পরমদীপের যে রাজবীরদের সাথে একটা সম্পর্ক ছিল, তনিমা রাজবীরের সাথে একাধিকবার শুয়েছে এ ব্যাপারটা জানাজানি হোক সেটা ও চায় না। অনেক ভাবনা চিন্তা করে তনিমা ঠিক করল আপাততঃ সুরিন্দরকে ব্যাপারটা বলবে, তবে পুরোটা না, কাটছাঁট করে।
সুরিন্দর শুনে মাথায় হাত দিল, 'এত বড় একটা ঝামেলা চলছে, ভাবী আপনি আমাকে বলেন নি?'
- তোমাকেই তো বললাম সুরিন্দর, আর কাকে বলব?
তনিমা বলল, 'পরমদীপের বন্ধু, প্রথমবার ধান চাইতেই এক কথায় যোগাড় করে দিল, তখন মনে হয়েছিল লোকটা খুব ভাল। এবার যখন গেলাম তখন একেবারে অন্য সুর গাইল, খারাপ ইঙ্গিত দিল। আমি জানতে পেরেছি, রাজবীরই বিদেশে রটিয়েছে যে মালিক মারা গেছে বলে আমাদের কোম্পানী বন্ধ হয়ে গেছে'
- লোকটাকে পেটানো উচিত, আপনি বলুন, আমি গুন্ডা লাগিয়ে পিটিয়ে দিচ্ছি।
- তোমার মাথা খারাপ হয়েছে সুরিন্দর? আমরা গুন্ডা লাগাতে পারি, আর রাজবীর পারে না? ওই সব গুন্ডা ফুন্ডা দিয়ে কিছু হবে না। আমাদের নিজেদের আরো শক্তপোক্ত হতে হবে যাতে রাজবীর নাক গলাবার সুযোগ না পায়।
অনেকক্ষন ধরে তনিমা আর সুরিন্দর বসে আলোচনা করল। তনিমা বলল, বিদেশের বাজার নিয়ে ও খুব একটা চিন্তিত নয়, বেশীর ভাগ ক্লায়েন্টদের সাথে ওই এতদিন যোগাযোগ রেখেছে, পরমদীপ মারা যাওয়ার পর ঢিলে দিয়েছিল, রাজবীর সেটারই সুযোগ নিয়েছে। তনিমার বিশ্বাস একবার ও গিয়ে কথা বললে ক্লায়েন্টরা আবার ওদের চাল কিনতে শুরু করবে। ওর মতে এই মুহূর্তে সবথেকে জরুরী কাজ হল মিলের জন্য ধানের যোগান নিশ্চিত করা, যাতে রাজবীরের সাহায্য আর নিতে না হয়। একাজে এখনই লেগে পড়তে হবে, অজনালার আশে পাশে ফতেগড় চুরিয়াঁ আর মাজিথার চাষীদের সাথেও আগাম কথা বলতে হবে, দরকার হলে আর একটা গোডাউন ভাড়া নিতে হবে।
আলোচনা সেরে উঠবার সময় তনিমা বলল, 'সুরিন্দর আর একটা কথা ছিল'
- কি ভাবী? সুরিন্দর জিজ্ঞেস করল।
- এক দেড় মাস থাকব না, বাচ্চা দুটো, পিতাজী, মাতাজী আছেন, সুখমনি ভাবীরও বয়স হচ্ছে....
- ভাবী, সুরিন্দর তনিমাকে থামিয়ে দিল, আমি আর পরমদীপ ছোটবেলার বন্ধু, এক সাথে বড় হয়েছি, এক কলেজে, এক কলেজে পড়েছি, গুরদীপজী আমার বাবার মত, বড় ভাবী আর আপনি আমাকে ভাইয়ের মত ভালবাসেন, পিঙ্কি কুলদীপ আমার ভাইপো ভাইঝি, আমি যদি এখানে কাজ না করতাম তাহলেও ওদের ভালমন্দের দায়িত্ব আমার, আর আপনি তো আমাকে কোম্পানীর অংশীদার করেছেন, আমি থাকতে আপনাদের কারো গায়ে একটি আঁচড়ও লাগবে না, আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে যান।
এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে তনিমা দিল্লী হয়ে লন্ডন যাবে। তার আগে তনিমা, সুরিন্দর আর আদেশ ঘুরে ঘুরে অজনালায় পরিচিত চাষীদের সাথে কথা বলল, বেশীর ভাগ চাষীর সাথেই গুরদীপজীর পারিবারিক বন্ধুত্ব, প্রতিটি বাড়ীতে তনিমা গুরদীপজীর ছোটি বহুর সম্মান ও আপ্যায়ন পেল। তনিমা আগামী মরশুমের ধানের জন্য ওদের আগাম পয়সা দিল, প্রত্যেকে কথা দিল, ধান ওরা তনিমাদেরই বেচবে। এই সময় ক্ষেতে বেশী কাজ থাকে না, তনিমা আদেশকে বলল মাঝে মাঝে অফিসে গিয়ে সুরিন্দরকে সাহায্য করতে।
এরই মধ্যে ইংরেজী কাগজে তনিমাদের অরগ্যানিক ফার্মিং নিয়ে একধিক লেখা বেরোল, রাসায়নিক সার আর কীটনাশকের বেহিসাবী ব্যবহারের ফলে কি ভাবে ক্যান্সারের মত রোগ ছড়াচ্ছে, অবস্থা এতই খারাপ যে পাঞ্জাবে ক্যান্সার রোগীর গড় সংখ্যা দেশের অন্যান্য প্রদেশ থেকে বেশী। এই দুরবস্থা থেকে বাঁচতে তনিমাদের ফার্মে কি ভাবে রাসয়ানিক সার আর কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে অরগ্যানিক ফার্মিং চালু হয়েছে সেই নিয়ে প্রসংশামুলক লেখা। স্থানীয় নিউজ চ্যানেলও একটা স্টোরি করল।
তনিমা ভাবল যাক অজিতকে ধমকানোটা কাজে দিয়েছে, ভবিষ্যতেও ওকে প্রয়োজন মত ব্যবহার করা যাবে। প্রতিটি লেখার একাধিক কাটিং আর টিভি স্টোরির ক্লিপিং সংগ্রহ করা হল, এগুলো বিদেশে ক্লায়েন্টদের দেখাতে হবে।