19-01-2023, 10:26 PM
#__Part__14
শুভ্রের খুব হাসি পাচ্ছে এখন কিন্তু হাসতে গেলে এখন অবস্থা বেগতিক হতে পারে।
পেট ফেপে শুভ্রের হাসি আসছে।এই প্রথম ও কাউকে দেখছে যে একজনের কান্না থামাতে এসেই নিজেই কান্না করছে।
হাহাহা করে হেসে দিল শুভ্র।হাসি যেনো থামছেই না।শুভ্রের খুব মজা পাচ্ছে।
স্যারের সাথে সাথে আমিও যে কখন বাচ্চাদের মতো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করে দিছি বুঝতেই পারি নি।
খুব রাগ হচ্ছে স্যারের উপর।কেমন শয়তানের মতো করে হাসছে দেখো ব্যাটা বিটকেল একটা।
রাগে আমার শরীর রি রি করছে।যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।
চলে যাচ্ছিলাম স্যার এক ঝটকায় হাত ধরে টান দেয়ায় হুরমুর করে স্যারের বুকে এসে আছড়ে পড়লাম।
এত কাছে কখনো আসি নি।স্যারের গায়ের পারফিউম এর তীব্র কড়া ঘ্রাণ আমার নাকে এসে লাগছে।কেমন মাতাল করা একটা ঘ্রাণ।
আমি স্পষ্ট স্যারের বুকের হৃদ স্পন্দন শুনতে পাচ্ছি। গণনা করার চেষ্টা করছি ১,২, ৩,,,,,,,
--পিচ্চি মানুষের এত রাগ?অবশ্য লাগলে তোমায় তোমাদের পাড়ার কুনুর মতো লাগে দেখতে।
---কিহহহহহ!!এত বড় অপমান।
হাত সরানোর যতই চেষ্টা করছি স্যার ততোই বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরছে।কে বলছে আমায় দেখতে হুহহ
যান না আপনার সেই ন্যাকু এনার কাছে।
--পিচ্চি মানুষের গায়ে যে এত জোর আগে জানতাম না তোহ।আর হ্যাঁ যাবোই তো আমার এনার কাছে।
তাতে তোমার কি হু?
--হ্যাঁ আমার কি?
--সত্যি তোমার কিছু না তো?
--নাহহ কিছুনা।
--ভেবে বলছো তো?
--এত ভাবার কি আছে?
--যদি কিছুই না হবে তাহলে তোমার এত জ্বলে কেনো আমার পাশে কোনো মেয়ে কে দেখলে?
--ক,,, কককিিিি ব,,বললছেনন?জ,,জ্বললবে কেেনো?
--ভালোবাসো?
-ক,,,কিিিি বলছেন এসব?ছাড়ুন কেউ এসে দেখে ফেলবে।
--না ছাড়বো না আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
ঋতুর ঘাড়ের মুখ গুজে আছে শুভ্র।মাঝেমাঝে ঘাড়ে গলায় সুরসুরি দিচ্ছে। ঋতুর সারা শরীর জুরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।
রক্ত চলাচল যেনো বন্ধ হয়ে গেছে।জমে পুরো শরীর পাথর হয়ে গেছে।নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেছে।
কি বলছে শুভ্র এসব?শুভ্রের ভালোবাসো কথাটায় যেনো পুরো শরীর জুরে একটা বাতাস বয়ে গেলো।
ঋতু কি বলবে ভাবছে।
--কি হলো কিছু বলছো না কেনো?ভালোবাসো আমায়?
--মোটেই নাহহ।আমি আপনাকে ভালোবাসতে যাবো কেনো?
--সত্যি তো?
--হু সত্যি।
--তাহলে কেনো আমার কষ্টে তোমার চোখে পানি আসে?কেনো তুমি আমার পাশে সায়নী বা এনাকে সহ্য করতে পারো না?আনসার মি ড্যামন।
--ঋতু কিছু না বলে ছাদ থেকে নেমে যায়।
আমিও দেখে নিবো মিসেস চৌধুরী কতদিন এভাবে তোমার মনের মধ্যে আমার জন্য আস্তে আস্তে গড়ে ওঠা ভালোবাসাকে ইগনর করো।তোমায় তো আমার কাছে আসতেই হবে।
তুমি নিজে আমায় এসে ভালোবাসি বলবে।শুভ্র মনে মনে নিজের সাথে কথাগুলো বলছে।
,
বর যাত্রীরা অনেকক্ষণ হলো কনে নিয়ে চলে গেছে।নিচে গিয়ে শোভার সাথে কথা বলে নিয়েছে ঋতু।ওরা ভালোভাবেই পৌছে গেছে বাসায়।শুভ্রদের বাড়ি টা কেমন চুপচাপ কারো মুখে কোনো কথা নেই আর ঐদিকে অভিদের বাসায় তার উল্টো টা।সবাই নতুন বউকে বরণ করায় ব্যস্ত।
বর বউয়ের সব রিচুয়াল শেষ করে শোভা কে অভির ঘরে রেখে এসেছে। খুব ভয় করছে শোভার।এতদিন ধরে দুজন এই দিনটার অপেক্ষা করে এসেছে। আজ ওরা এক হতে পেরেছে।ঘড়িতে ১১ টা বাজতে চললো এখনো রুমে অভির আসার কোনো খবর নাই।এই ছেলেটা কে আমি আজো বুঝে উঠতে পারলাম না।কোনো কান্ড জ্ঞান নেই নাকি।ঘরে নতুন বউকে রেখে আড্ডা দিচ্ছে আগে আসুক রুমে তারপর জম্মের মতো আড্ডা দেয়াবো।মনে মনে রাগ করছে শোভা।
দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ হওয়া শোভা ঠিক ঠিক করে বসলো।ঘোমটা টা আরো নিচে টেনে দিল।
নিজেকে যথা সম্ভব গুটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।
নার্ভাস নেসে ঘিরে রেখেছে যেনো চারিপাশ।
আজকে শোভার নতুন জীবনের প্রথম সকাল।
সকালে ফোনে বাবা মায়ের সাথে কথা বলেছে।ওরা কিছুক্ষণের মাঝেই চলে আসবে।অভির মা খুব ভালো।
অমায়িক ব্যবহার তার।অল্প সময়েই কেমন শোভা কে আপন করে নিয়েছেন।
,
সকাল থেকে শুভ্র কেমন ঋতুকে ইগ্নোর করছে।ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে এনার সাথে ঘুরছে।
ঋতুর খুব কষ্ট হচ্ছে এসব কেনো যেনো। সহ্য করতে পারছে না।
এনা টা ও না কেমন বেশরম যে শুভ্রের গায়ে ঢলে ঢলে পরছে।
সবাই রেডি হচ্ছে অভি দের বাসায় যাওয়ার জন্য।
মেয়েরা সবাই একসাথে রেডি হচ্ছে।
শুভ্র এসে এনা কে ডাকছে।
এনা এদিকে এসো তো।এই ড্রেস টা পরে রেডি হয়ে আসো।
ঋতুকে দেখিয়ে দেখিয়ে বলছে শুভ্র।
--শুভ্র বেবি এসবের কোনো দরকার ছিল না।আম ফাইন।
--কে বলছে দরকার ছিল না?যাও রেডি হয়ে আসো কুইক।
--অকে বেবি।যাস্ট ওয়েট করো।
শুভ্র মনে মনে বলছে "দেখবে শুনবে আর লুচির মতো ফুলবে"।
এই ন্যাকু টাও হয়েছেএকটা ড্রেস পেয়ে খুশিতে কেমন গদগদ করছে দাড়াও তোমায় দেখাচ্ছি মজা।
একবার তোমায় বাগে পেয়ে নেই চান্দু তারপর বুঝাবো কত ধানে কত চাল।কেঁদেও কুল পাবে না তখন তুমি।
,
ঋতু টকটা নীল শাড়ি পরেছে যার পার দিয়ে কালো রঙের কাজ করা।সাথে ম্যাচিং কানের দুল গলায় সিম্পল একটা চেইন।হাতে এক গুচ্ছো রেশমি চুড়ি।
চোখে হাল্কা কাজল দিয়ে চুল গুলো এক পাশে সিথি করে ছেড়ে দেয়া।
--ওয়াওওওও!!দোস্ত তোকে না খুব সুন্দর
লাগছে আজকে।নজর ফেরানো দায় তোর থেকে।
আমি নিজেই ক্রাশ খেয়ে ফেলছি তোর উপর।
আমি ছেলে হলে তোকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলতাম।
--হয়েছে তোর বকবক?আমি মরি আমার জ্বালায় আর উনি আছেন বিয়ে নিয়ে।
আদিখ্যেতা দেখে গা জ্বলে যায় আমার।
শুভ্র ও আজকে একটা নীল পান্জাবী পরেছে।এই ছেলে যাই পরে না কেনো সব কিছুতেই ওকে সুন্দর লাগে।
শেভিং করে না কয়েকদিন মনে হয়। দাড়ি গুলো কে ধরে রেখেছে।ছোট ছোট করে ছেটেছে।
খোচা খোচা দাড়িতেই ছেলেদের কে মানায়।
ঐ বদ লোকটা ও নীল পরছে।
আমি যে ওর সামনে এসে দাড়িয়ে আছি সেটা দেখেও না দেখার ভান করে আছে।অন্য সময় হলে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকতো আর এখন ফিরে তাকাচ্ছে না।
--ছটু,এই ছটু দেখতো আমায় কেমন লাগছে?
--কেমন লাগছে আবার? সুন্দরই তো লাগছে।
--সত্য করে বলতো কেমন লাগছে?একটু ভালো করে দেখ তাকিয়ে।
---এক কথা কয়বার জিজ্ঞাস করিস?বললাম তো ভালো লাগছে।
---ধুরররররর ভাল্লাগে না।
ঋতু শুভ্রকে দেখিয়ে দেখিয়ে ছটুকে ডেকে বলছিল।ভেবেছিল শুভ্র ওর দিকে তাকাবে।কিন্তু শুভ্রের মাঝে কোনো পরিবর্তন নেই।শুভ্র মনে মনে হাসছে ঋতুর কান্ড দেখে।
,
সবাই গাড়িতে উঠে গেছে শুধু ঋতু ছাড়া।ও মধুদের গাড়িতে গিয়ে দেখলো সবাই বসে পড়ছে কোনো সীট খালি নেই।
একে একে সব গাড়িই দেখলো কোথাও সীট ফাঁকা নেই শুভ্রদের গাড়ি ছাড়া।শুভ্র আর এনা আছে বসে।
এনা তুমি আমার ঐখানে বসলে কেনো?আমার পাশে এসে বসো।
--ওহহ শীট।ওয়েট বেবি আমি আসছি এখনি।
শুভ্র ড্রাইভ করছে আর তার পাশে এনা বসে আছে।
এত অবহেলা আর ভালো লাগছে না ঋতুর।চোখ দুটো ছলছল করছে মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে দিবে।না এখন কাঁদলে শুভ্র দেখে ফেলবে।ওর কাছে আমার চোখের পানির কোনো মূল্যই নেই।যদি থাকতোই তাহলে আর এত কষ্ট দিতে পারতো না আমায়।
ঋতু বুঝতে পারছে শুভ্র সব ইচ্ছে করেই করছে ওর মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য।কিন্তু ঋতু তো ভালোবাসে না শুভ্রকে।তাহলে কেনো এত কষ্ট হচ্ছে শুভ্রের অবহেলায়।
পুরো রাস্তা জুরে এনা শুভ্রের বকবক শুনে মাথা ধরে গেছে।কই আমার সাথে তো কখনো এত কথা বলেনি আর ঐ ত্যানার সাথে এত কথা বলে।হুহহহহ বললে বলুক আমার কি?
আমি তো ওকে ভালোই বাসি না।ঋতু ওর মনের সাথে যুদ্ধ করছে।সত্যিই কি তাই?নাকি ওর মনের ওপর জোর করছে ঋতু?ও নিজের মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে।
নাহহ এখন আর নিজের মন কে বেধে রাখবে না শিকলের বাধন দিয়ে।ওর মন টাকে মুক্ত করে দিল। সে যা চাইবে তাই করবে ঋতু।আর যাই হোক মনের উপর কারো জোর চলে না।
,
শোভার সাথে দেখা করে এসেছে ঋতু।মনি মা তো আমার সাথে কোনো কথাই বললো না। গিয়ে দেখি খুব রাগ করে আছে।কত্ত কষ্ট করে তার রাগ ভাঙ্গাতে হলো।
আমি আজকে এখানে থাকবো বলে রাগ ভাঙ্গল।
মধু রা এখানে সবাই নতুন তাই ওদের পুরো বাড়ি টা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিলাম।
কোথা থেকে যেনো ইহান এসে সামনে দাড়িয়ে পরে।
--বালিকা কেমন আছো?
--দেখতেই পারছেন কেমন আছি।
--ইশশ!!এভাবে হাসি দিয়ো না বালিকা।আমি তোমার হাসিতেই ঘায়েল হয়ে গেছি।
--কি আবোলতাবোল বলছেন এসব?আপনার মাথা ঠিক আছে তো?
---সে তো কবেই হয়েছি পাগল তোমার প্রেমে।সে তো নতুন না।তোমার একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল এই পাগল।
বালিকা বাসলে ভালো একটু ক্ষতি কি?
--আপনি ফ্লার্টিং করতে খুবই ভালো পারেন।
--ওহে বালিকা
ফ্লার্টিং না,মত্ত তোমার প্রেমে দিওয়ানা।
--এবার কিন্তু আমার সত্যি সত্যি রাগ হচ্ছে।
--রাগো না।রাগলে তোমায় রসগোল্লার মতো লাগে।
--কি বললেন?
--সত্যি তো বলেছি।
--ধুরররররর!!থাকেন আপনি।
---আরে আরে বালিকা কই যাও?
---জাহান্নামে।যাবেন?
--সে তুমি বললে তো আমি পাতালেও যেতে রাজি।
পাতালে যেতে হবে না আপাতত ছাদে যাবো।এত কোলাহল আমার ভালো লাগে না।যাবেন নাকি আমি একাই যাব?
--না তো বলিনি বালিকা।
--তো চলুন।
চারিদিকে অন্ধকার নামতে চলেছে।যে যার নীড়ে ফিরে চলেছে।
--গৌধুলি সন্ধ্যা ভালো লাগে?
-হুমমম,,খুউউব।
--কবিতা পারেন?
--পারি কিনা জানিনা তবে
তবে কি?
তোমার জন্য আমি কবি হতেও রাজি।
"চোখ কেড়েছে চোখ
উড়িয়ে দিলাম ঝড়া পাতার শোক।"
--বাহহ! সুন্দর ছন্দ মিলান তো।
আপনার প্রিয় কবি কে?
-রুদ্র গোস্বামী।
কয়েক লাইন বলুন আপনার পছন্দ মতে।
অসুখ
আজকাল কি যে উল্টোপাল্টা বায়না শিখেছে ও
যখন তখন এসে বলবে,ওর একটা আকাশ চাই।
আর আমিও বোকার মত সব কাজ ফেলে
ওর চোখের মাপের আকাশ খুঁজতে থাকি।
শুধু কি তাই!তাতেও আবার ওর আপত্তি
এটাতে বলে মেঘ ভর্তি তো ওটাতে এক ঘেয়ে আলো
গৌধুলি আকাশ দেখলেই ও আবার লজ্জায় মরে যায়।
আমার হয়েছে জ্বালা,মেঘ থাকবে না রোদ থাকবে না
এমন একটা আকাশ আমি কোথেকে খুঁজে আনব?
গোলাপ হবে অথচ কাঁটা হবে না।
রঙটাও আবার লাল?এমন আবার হয় নাকি!
একটা আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না,
ভালোবাসা বুকে এসে বসলেই মানুষ কেন পাখি হতে চায়।
---রুদ্র গোস্বামী
ঋতু এতক্ষণ গভীর মনোযোগে ইহানের কবিতা আবৃত্তি শুনছিলো।এত সুন্দর করে কবিতা আবৃত্তি করছিল যেনো মনে হচ্ছিল মনের সব টা ঢেলে দিয়েছে কবিতার মাঝে।
নিজেকে বিলীন করে দিয়ে রেখেছে।
খুব সুন্দর কবিতা বলেন তো আপনি।
-তোমার মতো সুন্দর করে তো আর না।
--কি বিরবির করছেন একা একা?
-হু,কই কিছু না তোহ।চলো নিচে যাওয়া যাক।তোমায় খুজতে পারে নিজে অনেকক্ষণ হলো এসেছো।
-- হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাত টা বাজতে চললো।আসলে শহরে কখন সকাল, কখন রাত বোঝা যায় না।দেখতে কখন আধা ঘন্টা পার হয়ে গেছে খেয়ালই করে নি ঋতু।
কি করবে নিচে গিয়ে শুভ্র আর এনার কার্যকলাপ সহ্য করার থেকে এখানেই শ্রেয় বসে থাকা।
ফোন বেজে উঠলো হঠাৎ ঋতুর।মধু কল দিয়েছে।হয়তো খুজে পাচ্ছে না নিচে তাই।পাবে কি করে আমি তো ছাদে।
,
--কিরেেে কই ছিলি তুই এতক্ষণ? তোকে স্যার খুজছে সেই কখন থেকে।
--উনি আমায় খুজবে কেনো?যা গিয়ে দেখে আয় কেনো ডাকছে।
বলতে বলতে ফোনের স্কিনে জল্লাদ লেখা নাম্বার টা ভেসে উঠলো।ধরবো না ধরবো না করেও ধরলাম।
---কোথায় তুমি?
--আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নই।ফোন দিয়েছেন কেনো সেটা বলুন।মধু বললো আমায় খুজছেন আপনি
--ওহহ হ্যাঁ আসলে আমার আর এনার কয়টা কাপল পিক তোলার জন্য তোমায় ডেকেছিলাম।
এখানে ভালো কাউকে পাচ্ছি না যে তুলে দিবে।
কত্তবড় বেয়াদব দেখছো আমায় বলে কিনা কাপল পিক তুলে দিতে।তোর পিক তুই তোল খবরদার আমায় কল দিবি না।
রাগে আমার মেজাজ গরম হয়ে আছে মনে হচ্ছে সামনে পেলে দুইটাকেই আমি লবন মশলা ছাড়া চিবিয়ে গিলে খাইতে পারলে গায়ের জ্বালা মিটতো।
পেছনে ঘুরে দেখি বদ লোক,লুচু ব্যাটা দাড়িয়ে আছে।
হলুদের দিনে ইহানের সাথে দেখায় রেগে গেছিল না?
মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি চাপলো।
দাড়াও চান্দু কি ভেবেছো মজা শুধু তুমিই নিতে পারো আমি পারি না???এখন দেখবা আর জ্বলবা।
লও ঠ্যালা জ্বলা কারে কয়।
শুভ্রের সামনে ইহানের হাত ধরে নিয়ে আসলাম। এহেন ঘটনায় ইহান অবাক আর শুভ্র রেগে ফায়ার।তাতে আমার কি আমি ও তো তাই চাইছি।এই ঋতু রশনিও পাল্টা চাল দিতে জানে।
শুভ্রকে দেখিয়ে দেখিয়ে ইহানের সাথে ঘুরছি।শুভ্র বার বার রাগী চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকে।তাতে আমার কি?
আমিও তো এটাই চাইছি।
আমরা এখন পুকুরপাড়ে বসে আছি।ইহানের একটা ইমারজেন্সি কল আসায় সে আসছি বলে চলে গেলো।
ভয়ে আমার জান যাবার মতো অবস্থা। ভূত দেখে নয় আমার ডেভিল টিচার কে দেখে।আমার সামনে দাড়িয়ে গোঁখরা সাপের মতো শুধু ফোস ফোস করছে।চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।আমি এখন পালানোর মতো রাস্তা খুঁজছি।
কিন্তু কোনো পথ খুজে পাচ্ছি না।আজকে আর আমার বাঁচার কোনো রাস্তাই নেই।
ভয়ে আমার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি অবস্থা।
শুভ্র এগিয়ে আসছে আমার দিকে আর আমি পিছাচ্ছি পিছাতে পিছাতে একদম পানির কাছে চলে এসেছি। একটু সরলেই পরে যাবো।পা পিছলে পরতে গেলেই শুভ্র হাতটা ধরে ফেলে।ঋতু তো ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে এই ভেবে যে ও হয়তো পরে গেছে।সাঁতার জানেনা পরলে আজ আর নিস্তার থাকবে না।
শুভ্র ঋতুকে টানতে টানতে গাড়ির সামনে এনে গাড়ির ডোর খুলে ভেতরে জোর করে বসিয়ে রেখে লক করে দিল।
--কি করছেন টা কি??আমায় ধরে আনলেন কেনো?
আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন??আমি কিন্তু চিৎকার করে লোক জরো করবো।বলবো আপনি আমায় কিডন্যাপ করে বিক্রি করতে যাচ্ছেন।
--স্টপ ইট ননসেন্স।
--চুপ করবো না আমি আরো চেঁচাবো। আপনি আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
এতক্ষণ অনেক কষ্টে রাগ টাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছিল শুভ্র কিন্তু ঋতুর জন্য তা আর হলো না।এবার আর চুপ থাকতে পারলো না।
দাঁতে দাঁত চেপে খুব ভালো লাগে অন্য পর পুরুষের ছোয়াঁ তাই না?
তোকে আমি নিষেধ করছিলাম না ঐ ছেলের সাথে মিশতে?তারপরেও কেনো,কোন সাহসে তুই কথা বললি ওর সাথে?
কি হলো কথা বল,এতক্ষণ তো মুখে খুব খই ফুটেছিল।
--আমি কার সাথে মিশবো না মিশবো তা আপনাকে বলতে হবে?কই আপনি যখন এনার সাথে থাকেন আমি তো কিছু বলি নি।তাহলে আমার সাথে কেনো করছেন?
---মুখে খই ফুটছে খুব তাই না?
--হ্যাঁ ফুটছেই তো।কোন অধিকারে আপনি আমায় শাসন করছেন?কিসের অধিকারে আপনি আমার উপর জোর খাটাতে আসেন বলুন।আনসার দিন।আমি কি করবো না করবো সব আপনাকে বলতে হবে আমার।কেনো বলুন?
আপনার একটা মেয়েতে হয় না দুকা লাগে?
--ঋতুর কথায় শুভ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে।গাড়ি ঘুরিয়ে সোজা বাই পাসের দিকে ছুটে চলেছে।
হাই স্পিডে গাড়ি চালিয়ে চলেছে।যেকোনো সময় এক্সিডেন্ট হতে পারে।ঋতু ভয়ে চুপসে আসে।
মুখে হাত দিয়ে আছে কি বলতে কি বলে ফেলেছে।
শুভ্রের মাথায় শুধু ঋতুর বলা কথা গুলোর বার বার প্রতিধ্বনি হচ্ছে।
'।কোন অধিকারে আপনি আমায় শাসন করছেন?কিসের অধিকারে আপনি আমার উপর জোর খাটাতে আসেন বলুন।আনসার দিন।আমি কি করবো না করবো সব আপনাকে বলতে হবে আমার।কেনো বলুন?''
.
.
চলবে
শুভ্রের খুব হাসি পাচ্ছে এখন কিন্তু হাসতে গেলে এখন অবস্থা বেগতিক হতে পারে।
পেট ফেপে শুভ্রের হাসি আসছে।এই প্রথম ও কাউকে দেখছে যে একজনের কান্না থামাতে এসেই নিজেই কান্না করছে।
হাহাহা করে হেসে দিল শুভ্র।হাসি যেনো থামছেই না।শুভ্রের খুব মজা পাচ্ছে।
স্যারের সাথে সাথে আমিও যে কখন বাচ্চাদের মতো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করে দিছি বুঝতেই পারি নি।
খুব রাগ হচ্ছে স্যারের উপর।কেমন শয়তানের মতো করে হাসছে দেখো ব্যাটা বিটকেল একটা।
রাগে আমার শরীর রি রি করছে।যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।
চলে যাচ্ছিলাম স্যার এক ঝটকায় হাত ধরে টান দেয়ায় হুরমুর করে স্যারের বুকে এসে আছড়ে পড়লাম।
এত কাছে কখনো আসি নি।স্যারের গায়ের পারফিউম এর তীব্র কড়া ঘ্রাণ আমার নাকে এসে লাগছে।কেমন মাতাল করা একটা ঘ্রাণ।
আমি স্পষ্ট স্যারের বুকের হৃদ স্পন্দন শুনতে পাচ্ছি। গণনা করার চেষ্টা করছি ১,২, ৩,,,,,,,
--পিচ্চি মানুষের এত রাগ?অবশ্য লাগলে তোমায় তোমাদের পাড়ার কুনুর মতো লাগে দেখতে।
---কিহহহহহ!!এত বড় অপমান।
হাত সরানোর যতই চেষ্টা করছি স্যার ততোই বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরছে।কে বলছে আমায় দেখতে হুহহ
যান না আপনার সেই ন্যাকু এনার কাছে।
--পিচ্চি মানুষের গায়ে যে এত জোর আগে জানতাম না তোহ।আর হ্যাঁ যাবোই তো আমার এনার কাছে।
তাতে তোমার কি হু?
--হ্যাঁ আমার কি?
--সত্যি তোমার কিছু না তো?
--নাহহ কিছুনা।
--ভেবে বলছো তো?
--এত ভাবার কি আছে?
--যদি কিছুই না হবে তাহলে তোমার এত জ্বলে কেনো আমার পাশে কোনো মেয়ে কে দেখলে?
--ক,,, কককিিিি ব,,বললছেনন?জ,,জ্বললবে কেেনো?
--ভালোবাসো?
-ক,,,কিিিি বলছেন এসব?ছাড়ুন কেউ এসে দেখে ফেলবে।
--না ছাড়বো না আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
ঋতুর ঘাড়ের মুখ গুজে আছে শুভ্র।মাঝেমাঝে ঘাড়ে গলায় সুরসুরি দিচ্ছে। ঋতুর সারা শরীর জুরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।
রক্ত চলাচল যেনো বন্ধ হয়ে গেছে।জমে পুরো শরীর পাথর হয়ে গেছে।নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেছে।
কি বলছে শুভ্র এসব?শুভ্রের ভালোবাসো কথাটায় যেনো পুরো শরীর জুরে একটা বাতাস বয়ে গেলো।
ঋতু কি বলবে ভাবছে।
--কি হলো কিছু বলছো না কেনো?ভালোবাসো আমায়?
--মোটেই নাহহ।আমি আপনাকে ভালোবাসতে যাবো কেনো?
--সত্যি তো?
--হু সত্যি।
--তাহলে কেনো আমার কষ্টে তোমার চোখে পানি আসে?কেনো তুমি আমার পাশে সায়নী বা এনাকে সহ্য করতে পারো না?আনসার মি ড্যামন।
--ঋতু কিছু না বলে ছাদ থেকে নেমে যায়।
আমিও দেখে নিবো মিসেস চৌধুরী কতদিন এভাবে তোমার মনের মধ্যে আমার জন্য আস্তে আস্তে গড়ে ওঠা ভালোবাসাকে ইগনর করো।তোমায় তো আমার কাছে আসতেই হবে।
তুমি নিজে আমায় এসে ভালোবাসি বলবে।শুভ্র মনে মনে নিজের সাথে কথাগুলো বলছে।
,
বর যাত্রীরা অনেকক্ষণ হলো কনে নিয়ে চলে গেছে।নিচে গিয়ে শোভার সাথে কথা বলে নিয়েছে ঋতু।ওরা ভালোভাবেই পৌছে গেছে বাসায়।শুভ্রদের বাড়ি টা কেমন চুপচাপ কারো মুখে কোনো কথা নেই আর ঐদিকে অভিদের বাসায় তার উল্টো টা।সবাই নতুন বউকে বরণ করায় ব্যস্ত।
বর বউয়ের সব রিচুয়াল শেষ করে শোভা কে অভির ঘরে রেখে এসেছে। খুব ভয় করছে শোভার।এতদিন ধরে দুজন এই দিনটার অপেক্ষা করে এসেছে। আজ ওরা এক হতে পেরেছে।ঘড়িতে ১১ টা বাজতে চললো এখনো রুমে অভির আসার কোনো খবর নাই।এই ছেলেটা কে আমি আজো বুঝে উঠতে পারলাম না।কোনো কান্ড জ্ঞান নেই নাকি।ঘরে নতুন বউকে রেখে আড্ডা দিচ্ছে আগে আসুক রুমে তারপর জম্মের মতো আড্ডা দেয়াবো।মনে মনে রাগ করছে শোভা।
দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ হওয়া শোভা ঠিক ঠিক করে বসলো।ঘোমটা টা আরো নিচে টেনে দিল।
নিজেকে যথা সম্ভব গুটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।
নার্ভাস নেসে ঘিরে রেখেছে যেনো চারিপাশ।
আজকে শোভার নতুন জীবনের প্রথম সকাল।
সকালে ফোনে বাবা মায়ের সাথে কথা বলেছে।ওরা কিছুক্ষণের মাঝেই চলে আসবে।অভির মা খুব ভালো।
অমায়িক ব্যবহার তার।অল্প সময়েই কেমন শোভা কে আপন করে নিয়েছেন।
,
সকাল থেকে শুভ্র কেমন ঋতুকে ইগ্নোর করছে।ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে এনার সাথে ঘুরছে।
ঋতুর খুব কষ্ট হচ্ছে এসব কেনো যেনো। সহ্য করতে পারছে না।
এনা টা ও না কেমন বেশরম যে শুভ্রের গায়ে ঢলে ঢলে পরছে।
সবাই রেডি হচ্ছে অভি দের বাসায় যাওয়ার জন্য।
মেয়েরা সবাই একসাথে রেডি হচ্ছে।
শুভ্র এসে এনা কে ডাকছে।
এনা এদিকে এসো তো।এই ড্রেস টা পরে রেডি হয়ে আসো।
ঋতুকে দেখিয়ে দেখিয়ে বলছে শুভ্র।
--শুভ্র বেবি এসবের কোনো দরকার ছিল না।আম ফাইন।
--কে বলছে দরকার ছিল না?যাও রেডি হয়ে আসো কুইক।
--অকে বেবি।যাস্ট ওয়েট করো।
শুভ্র মনে মনে বলছে "দেখবে শুনবে আর লুচির মতো ফুলবে"।
এই ন্যাকু টাও হয়েছেএকটা ড্রেস পেয়ে খুশিতে কেমন গদগদ করছে দাড়াও তোমায় দেখাচ্ছি মজা।
একবার তোমায় বাগে পেয়ে নেই চান্দু তারপর বুঝাবো কত ধানে কত চাল।কেঁদেও কুল পাবে না তখন তুমি।
,
ঋতু টকটা নীল শাড়ি পরেছে যার পার দিয়ে কালো রঙের কাজ করা।সাথে ম্যাচিং কানের দুল গলায় সিম্পল একটা চেইন।হাতে এক গুচ্ছো রেশমি চুড়ি।
চোখে হাল্কা কাজল দিয়ে চুল গুলো এক পাশে সিথি করে ছেড়ে দেয়া।
--ওয়াওওওও!!দোস্ত তোকে না খুব সুন্দর
লাগছে আজকে।নজর ফেরানো দায় তোর থেকে।
আমি নিজেই ক্রাশ খেয়ে ফেলছি তোর উপর।
আমি ছেলে হলে তোকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলতাম।
--হয়েছে তোর বকবক?আমি মরি আমার জ্বালায় আর উনি আছেন বিয়ে নিয়ে।
আদিখ্যেতা দেখে গা জ্বলে যায় আমার।
শুভ্র ও আজকে একটা নীল পান্জাবী পরেছে।এই ছেলে যাই পরে না কেনো সব কিছুতেই ওকে সুন্দর লাগে।
শেভিং করে না কয়েকদিন মনে হয়। দাড়ি গুলো কে ধরে রেখেছে।ছোট ছোট করে ছেটেছে।
খোচা খোচা দাড়িতেই ছেলেদের কে মানায়।
ঐ বদ লোকটা ও নীল পরছে।
আমি যে ওর সামনে এসে দাড়িয়ে আছি সেটা দেখেও না দেখার ভান করে আছে।অন্য সময় হলে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকতো আর এখন ফিরে তাকাচ্ছে না।
--ছটু,এই ছটু দেখতো আমায় কেমন লাগছে?
--কেমন লাগছে আবার? সুন্দরই তো লাগছে।
--সত্য করে বলতো কেমন লাগছে?একটু ভালো করে দেখ তাকিয়ে।
---এক কথা কয়বার জিজ্ঞাস করিস?বললাম তো ভালো লাগছে।
---ধুরররররর ভাল্লাগে না।
ঋতু শুভ্রকে দেখিয়ে দেখিয়ে ছটুকে ডেকে বলছিল।ভেবেছিল শুভ্র ওর দিকে তাকাবে।কিন্তু শুভ্রের মাঝে কোনো পরিবর্তন নেই।শুভ্র মনে মনে হাসছে ঋতুর কান্ড দেখে।
,
সবাই গাড়িতে উঠে গেছে শুধু ঋতু ছাড়া।ও মধুদের গাড়িতে গিয়ে দেখলো সবাই বসে পড়ছে কোনো সীট খালি নেই।
একে একে সব গাড়িই দেখলো কোথাও সীট ফাঁকা নেই শুভ্রদের গাড়ি ছাড়া।শুভ্র আর এনা আছে বসে।
এনা তুমি আমার ঐখানে বসলে কেনো?আমার পাশে এসে বসো।
--ওহহ শীট।ওয়েট বেবি আমি আসছি এখনি।
শুভ্র ড্রাইভ করছে আর তার পাশে এনা বসে আছে।
এত অবহেলা আর ভালো লাগছে না ঋতুর।চোখ দুটো ছলছল করছে মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে দিবে।না এখন কাঁদলে শুভ্র দেখে ফেলবে।ওর কাছে আমার চোখের পানির কোনো মূল্যই নেই।যদি থাকতোই তাহলে আর এত কষ্ট দিতে পারতো না আমায়।
ঋতু বুঝতে পারছে শুভ্র সব ইচ্ছে করেই করছে ওর মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য।কিন্তু ঋতু তো ভালোবাসে না শুভ্রকে।তাহলে কেনো এত কষ্ট হচ্ছে শুভ্রের অবহেলায়।
পুরো রাস্তা জুরে এনা শুভ্রের বকবক শুনে মাথা ধরে গেছে।কই আমার সাথে তো কখনো এত কথা বলেনি আর ঐ ত্যানার সাথে এত কথা বলে।হুহহহহ বললে বলুক আমার কি?
আমি তো ওকে ভালোই বাসি না।ঋতু ওর মনের সাথে যুদ্ধ করছে।সত্যিই কি তাই?নাকি ওর মনের ওপর জোর করছে ঋতু?ও নিজের মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে।
নাহহ এখন আর নিজের মন কে বেধে রাখবে না শিকলের বাধন দিয়ে।ওর মন টাকে মুক্ত করে দিল। সে যা চাইবে তাই করবে ঋতু।আর যাই হোক মনের উপর কারো জোর চলে না।
,
শোভার সাথে দেখা করে এসেছে ঋতু।মনি মা তো আমার সাথে কোনো কথাই বললো না। গিয়ে দেখি খুব রাগ করে আছে।কত্ত কষ্ট করে তার রাগ ভাঙ্গাতে হলো।
আমি আজকে এখানে থাকবো বলে রাগ ভাঙ্গল।
মধু রা এখানে সবাই নতুন তাই ওদের পুরো বাড়ি টা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিলাম।
কোথা থেকে যেনো ইহান এসে সামনে দাড়িয়ে পরে।
--বালিকা কেমন আছো?
--দেখতেই পারছেন কেমন আছি।
--ইশশ!!এভাবে হাসি দিয়ো না বালিকা।আমি তোমার হাসিতেই ঘায়েল হয়ে গেছি।
--কি আবোলতাবোল বলছেন এসব?আপনার মাথা ঠিক আছে তো?
---সে তো কবেই হয়েছি পাগল তোমার প্রেমে।সে তো নতুন না।তোমার একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল এই পাগল।
বালিকা বাসলে ভালো একটু ক্ষতি কি?
--আপনি ফ্লার্টিং করতে খুবই ভালো পারেন।
--ওহে বালিকা
ফ্লার্টিং না,মত্ত তোমার প্রেমে দিওয়ানা।
--এবার কিন্তু আমার সত্যি সত্যি রাগ হচ্ছে।
--রাগো না।রাগলে তোমায় রসগোল্লার মতো লাগে।
--কি বললেন?
--সত্যি তো বলেছি।
--ধুরররররর!!থাকেন আপনি।
---আরে আরে বালিকা কই যাও?
---জাহান্নামে।যাবেন?
--সে তুমি বললে তো আমি পাতালেও যেতে রাজি।
পাতালে যেতে হবে না আপাতত ছাদে যাবো।এত কোলাহল আমার ভালো লাগে না।যাবেন নাকি আমি একাই যাব?
--না তো বলিনি বালিকা।
--তো চলুন।
চারিদিকে অন্ধকার নামতে চলেছে।যে যার নীড়ে ফিরে চলেছে।
--গৌধুলি সন্ধ্যা ভালো লাগে?
-হুমমম,,খুউউব।
--কবিতা পারেন?
--পারি কিনা জানিনা তবে
তবে কি?
তোমার জন্য আমি কবি হতেও রাজি।
"চোখ কেড়েছে চোখ
উড়িয়ে দিলাম ঝড়া পাতার শোক।"
--বাহহ! সুন্দর ছন্দ মিলান তো।
আপনার প্রিয় কবি কে?
-রুদ্র গোস্বামী।
কয়েক লাইন বলুন আপনার পছন্দ মতে।
অসুখ
আজকাল কি যে উল্টোপাল্টা বায়না শিখেছে ও
যখন তখন এসে বলবে,ওর একটা আকাশ চাই।
আর আমিও বোকার মত সব কাজ ফেলে
ওর চোখের মাপের আকাশ খুঁজতে থাকি।
শুধু কি তাই!তাতেও আবার ওর আপত্তি
এটাতে বলে মেঘ ভর্তি তো ওটাতে এক ঘেয়ে আলো
গৌধুলি আকাশ দেখলেই ও আবার লজ্জায় মরে যায়।
আমার হয়েছে জ্বালা,মেঘ থাকবে না রোদ থাকবে না
এমন একটা আকাশ আমি কোথেকে খুঁজে আনব?
গোলাপ হবে অথচ কাঁটা হবে না।
রঙটাও আবার লাল?এমন আবার হয় নাকি!
একটা আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না,
ভালোবাসা বুকে এসে বসলেই মানুষ কেন পাখি হতে চায়।
---রুদ্র গোস্বামী
ঋতু এতক্ষণ গভীর মনোযোগে ইহানের কবিতা আবৃত্তি শুনছিলো।এত সুন্দর করে কবিতা আবৃত্তি করছিল যেনো মনে হচ্ছিল মনের সব টা ঢেলে দিয়েছে কবিতার মাঝে।
নিজেকে বিলীন করে দিয়ে রেখেছে।
খুব সুন্দর কবিতা বলেন তো আপনি।
-তোমার মতো সুন্দর করে তো আর না।
--কি বিরবির করছেন একা একা?
-হু,কই কিছু না তোহ।চলো নিচে যাওয়া যাক।তোমায় খুজতে পারে নিজে অনেকক্ষণ হলো এসেছো।
-- হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাত টা বাজতে চললো।আসলে শহরে কখন সকাল, কখন রাত বোঝা যায় না।দেখতে কখন আধা ঘন্টা পার হয়ে গেছে খেয়ালই করে নি ঋতু।
কি করবে নিচে গিয়ে শুভ্র আর এনার কার্যকলাপ সহ্য করার থেকে এখানেই শ্রেয় বসে থাকা।
ফোন বেজে উঠলো হঠাৎ ঋতুর।মধু কল দিয়েছে।হয়তো খুজে পাচ্ছে না নিচে তাই।পাবে কি করে আমি তো ছাদে।
,
--কিরেেে কই ছিলি তুই এতক্ষণ? তোকে স্যার খুজছে সেই কখন থেকে।
--উনি আমায় খুজবে কেনো?যা গিয়ে দেখে আয় কেনো ডাকছে।
বলতে বলতে ফোনের স্কিনে জল্লাদ লেখা নাম্বার টা ভেসে উঠলো।ধরবো না ধরবো না করেও ধরলাম।
---কোথায় তুমি?
--আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নই।ফোন দিয়েছেন কেনো সেটা বলুন।মধু বললো আমায় খুজছেন আপনি
--ওহহ হ্যাঁ আসলে আমার আর এনার কয়টা কাপল পিক তোলার জন্য তোমায় ডেকেছিলাম।
এখানে ভালো কাউকে পাচ্ছি না যে তুলে দিবে।
কত্তবড় বেয়াদব দেখছো আমায় বলে কিনা কাপল পিক তুলে দিতে।তোর পিক তুই তোল খবরদার আমায় কল দিবি না।
রাগে আমার মেজাজ গরম হয়ে আছে মনে হচ্ছে সামনে পেলে দুইটাকেই আমি লবন মশলা ছাড়া চিবিয়ে গিলে খাইতে পারলে গায়ের জ্বালা মিটতো।
পেছনে ঘুরে দেখি বদ লোক,লুচু ব্যাটা দাড়িয়ে আছে।
হলুদের দিনে ইহানের সাথে দেখায় রেগে গেছিল না?
মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি চাপলো।
দাড়াও চান্দু কি ভেবেছো মজা শুধু তুমিই নিতে পারো আমি পারি না???এখন দেখবা আর জ্বলবা।
লও ঠ্যালা জ্বলা কারে কয়।
শুভ্রের সামনে ইহানের হাত ধরে নিয়ে আসলাম। এহেন ঘটনায় ইহান অবাক আর শুভ্র রেগে ফায়ার।তাতে আমার কি আমি ও তো তাই চাইছি।এই ঋতু রশনিও পাল্টা চাল দিতে জানে।
শুভ্রকে দেখিয়ে দেখিয়ে ইহানের সাথে ঘুরছি।শুভ্র বার বার রাগী চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকে।তাতে আমার কি?
আমিও তো এটাই চাইছি।
আমরা এখন পুকুরপাড়ে বসে আছি।ইহানের একটা ইমারজেন্সি কল আসায় সে আসছি বলে চলে গেলো।
ভয়ে আমার জান যাবার মতো অবস্থা। ভূত দেখে নয় আমার ডেভিল টিচার কে দেখে।আমার সামনে দাড়িয়ে গোঁখরা সাপের মতো শুধু ফোস ফোস করছে।চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।আমি এখন পালানোর মতো রাস্তা খুঁজছি।
কিন্তু কোনো পথ খুজে পাচ্ছি না।আজকে আর আমার বাঁচার কোনো রাস্তাই নেই।
ভয়ে আমার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি অবস্থা।
শুভ্র এগিয়ে আসছে আমার দিকে আর আমি পিছাচ্ছি পিছাতে পিছাতে একদম পানির কাছে চলে এসেছি। একটু সরলেই পরে যাবো।পা পিছলে পরতে গেলেই শুভ্র হাতটা ধরে ফেলে।ঋতু তো ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে এই ভেবে যে ও হয়তো পরে গেছে।সাঁতার জানেনা পরলে আজ আর নিস্তার থাকবে না।
শুভ্র ঋতুকে টানতে টানতে গাড়ির সামনে এনে গাড়ির ডোর খুলে ভেতরে জোর করে বসিয়ে রেখে লক করে দিল।
--কি করছেন টা কি??আমায় ধরে আনলেন কেনো?
আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন??আমি কিন্তু চিৎকার করে লোক জরো করবো।বলবো আপনি আমায় কিডন্যাপ করে বিক্রি করতে যাচ্ছেন।
--স্টপ ইট ননসেন্স।
--চুপ করবো না আমি আরো চেঁচাবো। আপনি আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
এতক্ষণ অনেক কষ্টে রাগ টাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছিল শুভ্র কিন্তু ঋতুর জন্য তা আর হলো না।এবার আর চুপ থাকতে পারলো না।
দাঁতে দাঁত চেপে খুব ভালো লাগে অন্য পর পুরুষের ছোয়াঁ তাই না?
তোকে আমি নিষেধ করছিলাম না ঐ ছেলের সাথে মিশতে?তারপরেও কেনো,কোন সাহসে তুই কথা বললি ওর সাথে?
কি হলো কথা বল,এতক্ষণ তো মুখে খুব খই ফুটেছিল।
--আমি কার সাথে মিশবো না মিশবো তা আপনাকে বলতে হবে?কই আপনি যখন এনার সাথে থাকেন আমি তো কিছু বলি নি।তাহলে আমার সাথে কেনো করছেন?
---মুখে খই ফুটছে খুব তাই না?
--হ্যাঁ ফুটছেই তো।কোন অধিকারে আপনি আমায় শাসন করছেন?কিসের অধিকারে আপনি আমার উপর জোর খাটাতে আসেন বলুন।আনসার দিন।আমি কি করবো না করবো সব আপনাকে বলতে হবে আমার।কেনো বলুন?
আপনার একটা মেয়েতে হয় না দুকা লাগে?
--ঋতুর কথায় শুভ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে।গাড়ি ঘুরিয়ে সোজা বাই পাসের দিকে ছুটে চলেছে।
হাই স্পিডে গাড়ি চালিয়ে চলেছে।যেকোনো সময় এক্সিডেন্ট হতে পারে।ঋতু ভয়ে চুপসে আসে।
মুখে হাত দিয়ে আছে কি বলতে কি বলে ফেলেছে।
শুভ্রের মাথায় শুধু ঋতুর বলা কথা গুলোর বার বার প্রতিধ্বনি হচ্ছে।
'।কোন অধিকারে আপনি আমায় শাসন করছেন?কিসের অধিকারে আপনি আমার উপর জোর খাটাতে আসেন বলুন।আনসার দিন।আমি কি করবো না করবো সব আপনাকে বলতে হবে আমার।কেনো বলুন?''
.
.
চলবে