17-01-2023, 06:44 PM
#__Part__12
.
.
সেটা আর কেউ নয় শুভ্র।যাক একদিক দিয়ে ভালোই হলো।ছাদে কেউ নেই এখানে সরি বলা যাবে।বকা দিলেও কেউ শুনতে পারবে না।
--স,,সরিি(দুজনে একসাথে বলে ওঠে)
--সরি স্যার আসলে,,
--নো নো ইটস অকে।সরি তো আমার বলা উচিৎ।কথার মাঝখানে ঋতু কে থামিয়ে দিয়ে।
এতদিন আমি একটা ঘোরের মাঝে ছিলাম। সবার সাথে রুড বিহাভ করতাম।না জেনে কতজনের মনে যে কষ্ট দিয়েছি কে জানে।তুমি আজকে আমার চোখে আঙুল দিয়ে আমার ভুল গুলো ধরিয়ে দিয়েছ। তারজন্য তোমায় ধন্যবাদ দিয়ে আর ছোট করতে চাই না।
--হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না আপনাকে। আমি বুঝতে পারছি।
খুব হাসি পাচ্ছে আমার,লাটসাহেব সরি বলছে তাও আবার আমায়।হুশে বলছে নাকি বেহুশে আছে কে জানে।
--কি এত ভাবছো?
--ক,ককই কিছু না তোহ।
--মনে হলো ভাবছো কিছু।যাই হোক।
ফ্রি আছো তো?
--হু,কেনো বলুন তো?
--না মানেে মাথা চুলকিয়ে আসলে ভাবলাম তোমাদের কে নিয়ে বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি।
---ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে তো আমার খুশি তে বাকবাকম অবস্থা। ঘুরতে আমি ভীষণ ভীষণ পছন্দ করি।
খুশিতে মুখে চওড়া হাসির রেখা ফুটে উঠলো ঋতুর।
--এইইই না নাাা,,তোমার না এক্সাম চলছে।
ওহহহ শীট আমি ভুলেই গেছিলাম। আর পড়া চুন্নি পড়া বাদ দিয়ে ঘুরতে যেতে চাইছে।
মনে হলো।কেউ ধপ করে জলন্ত আগুনের উপর পানির ঝাপটা মেরে দিয়ে গেলো।
যত তাড়াতাড়ি খুশি হয়েছিল তার থেকেও দ্বিগুণ স্পিডে মন খারাপ হয়ে গেলো ঋতুর শুভ্রের কথা শুনে।
--শুভ্র বিষয় টা বুঝতে পারলো।
অকে আমি নিয়ে যেতে পারি তবে এক শর্তে।
---আমি আপনার সব শর্তে রাজি।বলুন কি করতে হবে।
--তোমার নেক্সট কি এক্সাম আছে?
--ব্যবস্থাপনা।
--ঘুরে এসে ঠিক মতো পড়তে যদি বসার কথা দাও তাহলেই হবে।
--অকে ডান।
,
৫ টার দিকে বেরিয়েছিলাম বাসা থেকে ফিরতে ফিরতে রাত ৮ টা বেজে গেছিল।আমার এক্সামের জন্য বেশিক্ষণ ঘুরলো না।
শহরের মধ্যেই ঘুরাঘুরি করে কিছু কেনাকাটা করলাম।
বাইরে থেকে খাওয়াদাওয়া করে আসলাম।
আজকে আর কোনো কারণে বকাঝকা করেনি।
আর ভয়ে আমরাও কোনো রকম দুষ্টামি করি নি।কখন জানি বাঘ আবার গর্জন করে ওঠে।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলাম। স্যার কে কথা দিয়েছি পড়বো একদিন ঠিক মতো।আর আমাকে সে কথা রাখতেই হবে।
,
এখন আর শুভ্র আগের মতো রাগারাগি করে না।ভার্সিটি,বাসা সব খানেই ফ্রেন্ডলি আচরণ করে।সবাই শুভ্রের এহেন আচরণে সত্যিই অবাক আর সেই সাথে খুশি ও।
শুভ্রের সাথে ঋতুর সম্পর্ক টা আগের থেকে উন্নতি হয়েছে।
দেখতে দেখতে ঋতুর এক্সাম টা খুব সুন্দর ভাবেই কেটে গেলো।
অর্থায়নের নীতিমালা টা একটু খারাপ হয়েছে এ নিয়ে ঋতুর মন খারাপ।শুভ্র ঋতুকে মানসিক সাপোট দিচ্ছে। কিচ্ছু হয় না একটা সাবজেক্টে খারাপ হলে।এবার খারাপ হয়েছে তো কি হয়েছে সামনে বার আরো ভালো হবে।
ঋতুর মন ভালো করার জন্য অবশ্য বাইরে নিয়ে যেতে হয়েছিল শুভ্র কে।
,
এদিকে দুই পরিবারে বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে।
আগাম সপ্তাহে শোভা আর অভির বিয়ে।
কত্ত কাজ পরে আছে।কত্তো কিছু কেনাকাটা বাকি আছে।
ঋতুর হয়েছে ঝামেলা।দুই পরিবারেই থাকতে হবে।
একদিকে সোনা মার কড়া আদেশ অন্যদিকে মনি মার।
মনি মায়ের কথা সে বুড়ো মানুষ,বয়স হয়েছে তার। এসব কি আর একা হাতে সামলাতে পারে নাকি সে।
আবার সোনা মাও কেমন জিদ ধরে বসে আছে।ঋতু কে ছাড়া নাকি বিয়ে বাড়ি মজা হবে না।
আমার এখন মনে হচ্ছে করাতের নিচে নিজেকে দিয়ে দুই খন্ড করে ফেলি।
,
এক্সামের পরে কয়েকদিন হলো ভার্সিটিতে যাওয়া হয় না।
তার জন্য সব হাম্রিগুলা আমার বাসায় চলে এসেছে।
--তোরা কখন এলি?আর আমায় কল দিলেই তো পারতিস আমিই চলে যেতাম দেখা করার জন্য।(আমি)
--ওমাাাাা!!আমরা কি তোর সাথে দেখা করতে এসেছি নাকি?শুভ্র স্যার আমাদের সবাইকে ইনভাইট করছে।
তাই গায়ে হলুদের আগেই চলে এসেছি।
--স্যার ওদেরকে ইনভাইট করেছে"কই আমায় তো কিছু বললো না একবারো।
যাক গা যার যা খুশি তাই করতে পারে তাতে আমার কি,হুহহহ
,
আসার পর থেকেই লক্ষ্য করছি সায়নী কেমন শুভ্র স্যারের পেছন পেছন ঘুরঘুর করছে।
কি ছ্যাঁচড়া ছেমড়ি রে বাবা গায়ে পড়া স্বভাব।মনে হচ্ছে শাঁকচুন্নি টারে ব্লেন্ডারের মধ্যে ঢুকিয়ে ব্লেন্ড করে জুস বানিয়ে খেয়ে ফেলি।এই লুচ্চা মাইয়্যারে ইনভাইট করতে বলছে কে ঐ খারুস টারে।অসহ্য লাগছে আমার ঐ ডাইনী টাকে।আমি বুঝতে পারছি না কেনো এমন হচ্ছে।স্যারের আশেপাশে কেনো জানি আমার অন্য কাউকেই সহ্য করতে পারি না।কেনো এমন হয় জানি না।আমি কি তাহলে স্যারকে মনে মনে..!!না নাাাহহহ
আমি কি এসব ভাবছি এসব।
সারাদিন শপিং এ ঘুরতে ঘুরতে বেহাল অবস্থা।এতো ঘুরাঘুরি করা যায় নাকি।কি আর করার বিয়ের শপিং কি আর যেমন তেমন ভাবে করা যায় নাকি..!
শোভা জন্য বিয়ের বেনারসি, জুয়েলারি সব কিছু স্যার আগে থেকেই অর্ডার করে রেখেছিল।
হলুদের সব কিছু আজকেই কিনে নিয়ে যেতে হবে।সময় তো আর বেশি হাতে নেই।
রাতের আধার কেটে ভোর হলেই নতুন আরেকটা দিনের সূচনা হতে চলেছে।আগামীকাল কেই শোভা আর অভি ভাইয়ার গায়ে হলুদ।
,
ছাদের উপর শোভার গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
একটু পরেই শুরু হবে শোভার হলুদ সন্ধ্যা।
পার্লার থেকে লোক এসেছে শোভা কে সাজানোর জন্য।
তারা শোভা কে সাজাতে ব্যস্ত।
ঋতু একটা সিম্পল হলুদ ড্রেস পড়ে আছে।তার মতে শাড়ি পরা একটা এক্সট্রা ঝামেলা।শাড়ি পরে ভালো করে হাটতে পারে না।এই তো সেদিন ওর এক কাকার বিয়েতে মায়ের জোরাজুরিতে শাড়ি পরে গেছিল বর যাত্রীদের সাথে।সেখানে গিয়ে কি কান্ড টাই না করলো ঋতু।কনে দেখতে যাওয়ার সময় কনে বাড়ির উঠোনের মাঝে শাড়ির সাথে পা পেচিয়ে তাল সামলাতে না পেরে পরে গেলো।কি একটা অবস্থা বিয়ে বাড়ির অত লোকের মাঝে।পরে ওর ঐখানকার একটা আন্টি এসে ঠিক করে দিল।সেদিনের কথা মনে হলেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে।
ওর সব বান্ধবি গুলো শাড়ি পরেছে।আর সায়নীর কথা কি বলবো।সেই দুপুর থেকেই রুপ চর্চায় ব্যস্ত হয়ে পরেছে।যেনো ওর নিজেরই গায়ে হলুদ আজকে।
যেভাবে ময়দা মারছে ইচ্ছে করছে আমাদের বাসার সব ময়দা ওর মুখে ঢেলে দিয়ে বলি নে ধর আরেকটু নে কম হয়ে গেছে।
আদিখ্যেতা দেখলে গা জ্বলে যায়।আমি বুঝিনা কি কিছু সব কিছুই শুভ্র স্যারের ফোকাস পাওয়ার জন্য।
রিচুয়াল অনুযায়ী
অভির গায়ে ছোঁয়ানো হলুদ কনের গায়ে দেয়া হবে।
বসে বসে শোভাকে সাজানো দেখছিলাম।শুভ্র স্যার পার্লারের এক কর্মচারী কে ডেকে কি বললো জানি না।ওরা জোর করে আমার গায়ের ড্রেস খুলে একটা হলুদ রঙের জামদানি শাড়ি পরিয়ে দিলো।এত জোর করলাম তবুও শুনলো না।আমার এখন ভীষণ কান্না পাচ্ছে।আবার না জানি ঐদিনের মতো ঘটনা না ঘটে।কাচা ফুলের গহনা আর কোমড়ে একটা ফুলের বিছা দেয়া।
,
রিচুয়াল অনুযায়ী বরের গায়ে ছোঁয়ানো হলুদ কনের গায়ে দিতে হবে।ঐ বাড়ি থেকে গায়ে হলুদের তথ্য নিয়ে সবাই আসা শুরে করে দিয়েছে।
সোনা মায়ের কথা মতো আমরা সবাই মানে আমি উর্মি,মধু,সায়নী,আশিক রা মিলে ঐ বাড়ি থেকে যারা আসবে তাদের হাতে একটা করে ফুল দিবো।
সবাই কে দেয়া শেষে একজন হাত পাতল ঋতুর সামনে।
আমি রজনীগন্ধা নিবো না আমায় গোলাপ দিতে হবে।
--সরিিি!!গোলাপ তো বলে উপরের দিকে তাকিয়ে ঋতু
আপনিিিিিহহহহহ
--মিটিমিটি হেসে,,হু আমি।কেনো অবাক হলে নাকি?(ইহান)
---না মানে আপনি এখানে?
--হুম আমিই এখানে।বর পক্ষের লোক মানে বরের বন্ধু আমি।
---আপনি অভি ভাইয়ার বন্ধু??কই আমি তো কখনো আপনাকে দেখিনি?
--তাই নাকি!!আমি তো তোমাকে দেখেছি।একবার নয় বহুবার।
--তাই নাকি?
--হুম তাই।একটা কথা বলবো?
--কেনো?এতক্ষণ কি বললেন না?
--হুম বলেছি তো তারপরেও অনুমতি চেয়ে নিচ্ছি,,
--তাই নাকি!!তা বলুন কি বলবেন।
পরি কখনো দেখিনি আমি তবে আমার সামনে দাড়িয়ে থাকা এক
মাটির তৈরী হলুদ পরী কে দেখেছি।
আমি না কখনো কারো প্রেমে পরিনি তবে আজকে খুব ইচ্ছে
করছে তোমার প্রেমে হারিয়ে যেতে।
বালিকা দেবে কি আমায় সেই সুযোগ একবার?
--ফ্লার্টিং করছেন আমার সাথে?
--না গো,,বিশ্বাস করো সত্যি বলছি।
হয়েছে বুঝলাম। ভেতরে গিয়ে বসুন আপনি আমি ঐদিক টা একটু দেখে আসছি।
--অকে।
অনুষ্ঠানে আসা সবার ফোকাস এখন ঋতুর উপর।ইহানের কথা গুলো ঋতু মজা হিসেবে উড়িয়ে দিলেও ইহান কথাগুলো মন থেকেই বলেছে।
ছেলেরা অনেকে ঋতুর পাশে ভাব জমানোর চেষ্টা করছে।
,
নিচে নামার সময় কেউ একজন ঋতুর হাত ধরে টেনে দেয়ালের সাথে হাত দুটি চেপে ধরে।
লোড শেডিং হলো মাত্র।অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।
নিচে নেমে রুমের দিকে যাচ্ছিল ঋতু হঠাৎ করে কে যেনো হাত ধরে টান দেয়।ইলেক্ট্রিক চলে আসায় বুঝতে পারে এটা এটা শুভ্রের রুম।
ব্যথায় ককিয়ে ওঠে ঋতু।দেয়ালের সাথে হাত চেপে ধরে দাড়িয়ে আছে শুভ্র।চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে ভয়ংকর রকমের রেগে আছে শুভ্র।মনে হচ্ছে এখনি তার চোখের আগুনে ঋতুকে ভস্ম করে দেবে।
শুভ্রকে রাগতে দেখেছে তবে এই রুপের সাথে আজকেই পরিচয় ঋতুর।ওর যতদূর মনে পরছে সে সারাদিন শুভ্রের থেকে দূরেই ছিল।তাকে তো রাগায়নি বা এমন কোনো কাজ করেনি যাতে শুভ্রর রাগ হয়।ঋতু বুঝতে পারছে না কি হলো হঠাৎ উনার।ভয়ে ঢোক গিলছে ঋতু।
---ক্্্কিিিি হয়েছে,,আমায় এখানে টেনে আনলেন কেনো?
--কি হয়েছে তুই জানিস না??ছেলেদের সাথে তোর এতো পিরিত কিসের?খুব (দাঁতে দাঁত চেপে বলছে কথাটা শুভ্র)
--ছেলেদের সাথে পিরিত করবো না তো কি মেয়েদের সাথে করবো?আমি কি সমকামী নাকি?
--খুব সাহস বাড়ছে নাহহহ,,আরো জোরে চেপে ধরে।
তোকে যেনো আমি ঐ ছেলের আশে পাশে আর না দেখি।
আর যদি দেখি তো তাহলে আগে ঐ ছেলেকে মারবো তার পরে তোকে।
---আহহহহহহ!!লাগছে ছাড়ুন।
--লাগুক,লাগার জন্যই তো দি,,,
ঋতুর চোখ থেকে দু ফুটা পানি গড়িয়ে পরলো শুভ্রের হাতে।
সাথে সাথে ঋতুকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায় শুভ্র।
সব সময় কেনো এমন করেন উনি!!একটু ভালো ব্যবহার করলে কি হয় উনার।সব সময় কেমন খারুসের মতো করে।
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো ঋতুর।কত্ত সুন্দর মজা করছে সবাই।কেউ কিছু বলছে না কাউকে আর উনি কেন জানি আমার সাথেই এমন করে।ধুরররররর ভাল্লাগে না কিছু।
রুমে এসে শাড়ি খুলে ফেলে,,সব কিছু টেনে ছিড়ে ফেলে।
উনার কি!!আরো বেশি বেশি করে করবে ও।
আমি কি করবো না করবো উনাকে বলে করতে হবে নাকি মনে মনে এসব বলছে আর রাগ কমানোর চেষ্টা করছে ঋতু।
আদৌ এসব কথাগুলো জোরে বলার মতো সাহস আছে তো ঋতুর?
এদিকে ঐ বাড়ি
থেকে আসা মেহমান রা সবাই চলে গেছে।
ছাদে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। আমার যদিও বা যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না তবে শোভার রিকুয়েস্ট না রেখেও পারলাম না।
জোর করে এসে ধরে নিয়ে গেলো।
ছাদে মাদুর পেতে গোল হয়ে সবাই বসে আছে।সবাই স্যারকে গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ করছে।
ভূতের মুখে রাম রাম।এই কর্কশ কন্ঠি কাক করবে কা কা?
'যেই না আমার গলা,নাম রাখছে সুরেলা'?
এতো তেলানোর কি আছে বুঝিনা,হুহহহহহ
ভাব দেখায় এক্সট্রা ভাব আরকি।কথা গুলো মনে মনে বলছে ঋতু।সাউন্ড হলে নিশ্চিত ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিবে জল্লাদ টা।
আসিক কে কি যেনো বললো ও নিচে চলে গেলো।
একটু পরে একটা গিটার হাতে করে নিয়ে এলো।
তারমানে গান গাইবে উনি।করুক না কিছুক্ষণ কা কা ভালই লাগবে।
.
.
চলবে
.
.
সেটা আর কেউ নয় শুভ্র।যাক একদিক দিয়ে ভালোই হলো।ছাদে কেউ নেই এখানে সরি বলা যাবে।বকা দিলেও কেউ শুনতে পারবে না।
--স,,সরিি(দুজনে একসাথে বলে ওঠে)
--সরি স্যার আসলে,,
--নো নো ইটস অকে।সরি তো আমার বলা উচিৎ।কথার মাঝখানে ঋতু কে থামিয়ে দিয়ে।
এতদিন আমি একটা ঘোরের মাঝে ছিলাম। সবার সাথে রুড বিহাভ করতাম।না জেনে কতজনের মনে যে কষ্ট দিয়েছি কে জানে।তুমি আজকে আমার চোখে আঙুল দিয়ে আমার ভুল গুলো ধরিয়ে দিয়েছ। তারজন্য তোমায় ধন্যবাদ দিয়ে আর ছোট করতে চাই না।
--হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না আপনাকে। আমি বুঝতে পারছি।
খুব হাসি পাচ্ছে আমার,লাটসাহেব সরি বলছে তাও আবার আমায়।হুশে বলছে নাকি বেহুশে আছে কে জানে।
--কি এত ভাবছো?
--ক,ককই কিছু না তোহ।
--মনে হলো ভাবছো কিছু।যাই হোক।
ফ্রি আছো তো?
--হু,কেনো বলুন তো?
--না মানেে মাথা চুলকিয়ে আসলে ভাবলাম তোমাদের কে নিয়ে বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি।
---ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে তো আমার খুশি তে বাকবাকম অবস্থা। ঘুরতে আমি ভীষণ ভীষণ পছন্দ করি।
খুশিতে মুখে চওড়া হাসির রেখা ফুটে উঠলো ঋতুর।
--এইইই না নাাা,,তোমার না এক্সাম চলছে।
ওহহহ শীট আমি ভুলেই গেছিলাম। আর পড়া চুন্নি পড়া বাদ দিয়ে ঘুরতে যেতে চাইছে।
মনে হলো।কেউ ধপ করে জলন্ত আগুনের উপর পানির ঝাপটা মেরে দিয়ে গেলো।
যত তাড়াতাড়ি খুশি হয়েছিল তার থেকেও দ্বিগুণ স্পিডে মন খারাপ হয়ে গেলো ঋতুর শুভ্রের কথা শুনে।
--শুভ্র বিষয় টা বুঝতে পারলো।
অকে আমি নিয়ে যেতে পারি তবে এক শর্তে।
---আমি আপনার সব শর্তে রাজি।বলুন কি করতে হবে।
--তোমার নেক্সট কি এক্সাম আছে?
--ব্যবস্থাপনা।
--ঘুরে এসে ঠিক মতো পড়তে যদি বসার কথা দাও তাহলেই হবে।
--অকে ডান।
,
৫ টার দিকে বেরিয়েছিলাম বাসা থেকে ফিরতে ফিরতে রাত ৮ টা বেজে গেছিল।আমার এক্সামের জন্য বেশিক্ষণ ঘুরলো না।
শহরের মধ্যেই ঘুরাঘুরি করে কিছু কেনাকাটা করলাম।
বাইরে থেকে খাওয়াদাওয়া করে আসলাম।
আজকে আর কোনো কারণে বকাঝকা করেনি।
আর ভয়ে আমরাও কোনো রকম দুষ্টামি করি নি।কখন জানি বাঘ আবার গর্জন করে ওঠে।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলাম। স্যার কে কথা দিয়েছি পড়বো একদিন ঠিক মতো।আর আমাকে সে কথা রাখতেই হবে।
,
এখন আর শুভ্র আগের মতো রাগারাগি করে না।ভার্সিটি,বাসা সব খানেই ফ্রেন্ডলি আচরণ করে।সবাই শুভ্রের এহেন আচরণে সত্যিই অবাক আর সেই সাথে খুশি ও।
শুভ্রের সাথে ঋতুর সম্পর্ক টা আগের থেকে উন্নতি হয়েছে।
দেখতে দেখতে ঋতুর এক্সাম টা খুব সুন্দর ভাবেই কেটে গেলো।
অর্থায়নের নীতিমালা টা একটু খারাপ হয়েছে এ নিয়ে ঋতুর মন খারাপ।শুভ্র ঋতুকে মানসিক সাপোট দিচ্ছে। কিচ্ছু হয় না একটা সাবজেক্টে খারাপ হলে।এবার খারাপ হয়েছে তো কি হয়েছে সামনে বার আরো ভালো হবে।
ঋতুর মন ভালো করার জন্য অবশ্য বাইরে নিয়ে যেতে হয়েছিল শুভ্র কে।
,
এদিকে দুই পরিবারে বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে।
আগাম সপ্তাহে শোভা আর অভির বিয়ে।
কত্ত কাজ পরে আছে।কত্তো কিছু কেনাকাটা বাকি আছে।
ঋতুর হয়েছে ঝামেলা।দুই পরিবারেই থাকতে হবে।
একদিকে সোনা মার কড়া আদেশ অন্যদিকে মনি মার।
মনি মায়ের কথা সে বুড়ো মানুষ,বয়স হয়েছে তার। এসব কি আর একা হাতে সামলাতে পারে নাকি সে।
আবার সোনা মাও কেমন জিদ ধরে বসে আছে।ঋতু কে ছাড়া নাকি বিয়ে বাড়ি মজা হবে না।
আমার এখন মনে হচ্ছে করাতের নিচে নিজেকে দিয়ে দুই খন্ড করে ফেলি।
,
এক্সামের পরে কয়েকদিন হলো ভার্সিটিতে যাওয়া হয় না।
তার জন্য সব হাম্রিগুলা আমার বাসায় চলে এসেছে।
--তোরা কখন এলি?আর আমায় কল দিলেই তো পারতিস আমিই চলে যেতাম দেখা করার জন্য।(আমি)
--ওমাাাাা!!আমরা কি তোর সাথে দেখা করতে এসেছি নাকি?শুভ্র স্যার আমাদের সবাইকে ইনভাইট করছে।
তাই গায়ে হলুদের আগেই চলে এসেছি।
--স্যার ওদেরকে ইনভাইট করেছে"কই আমায় তো কিছু বললো না একবারো।
যাক গা যার যা খুশি তাই করতে পারে তাতে আমার কি,হুহহহ
,
আসার পর থেকেই লক্ষ্য করছি সায়নী কেমন শুভ্র স্যারের পেছন পেছন ঘুরঘুর করছে।
কি ছ্যাঁচড়া ছেমড়ি রে বাবা গায়ে পড়া স্বভাব।মনে হচ্ছে শাঁকচুন্নি টারে ব্লেন্ডারের মধ্যে ঢুকিয়ে ব্লেন্ড করে জুস বানিয়ে খেয়ে ফেলি।এই লুচ্চা মাইয়্যারে ইনভাইট করতে বলছে কে ঐ খারুস টারে।অসহ্য লাগছে আমার ঐ ডাইনী টাকে।আমি বুঝতে পারছি না কেনো এমন হচ্ছে।স্যারের আশেপাশে কেনো জানি আমার অন্য কাউকেই সহ্য করতে পারি না।কেনো এমন হয় জানি না।আমি কি তাহলে স্যারকে মনে মনে..!!না নাাাহহহ
আমি কি এসব ভাবছি এসব।
সারাদিন শপিং এ ঘুরতে ঘুরতে বেহাল অবস্থা।এতো ঘুরাঘুরি করা যায় নাকি।কি আর করার বিয়ের শপিং কি আর যেমন তেমন ভাবে করা যায় নাকি..!
শোভা জন্য বিয়ের বেনারসি, জুয়েলারি সব কিছু স্যার আগে থেকেই অর্ডার করে রেখেছিল।
হলুদের সব কিছু আজকেই কিনে নিয়ে যেতে হবে।সময় তো আর বেশি হাতে নেই।
রাতের আধার কেটে ভোর হলেই নতুন আরেকটা দিনের সূচনা হতে চলেছে।আগামীকাল কেই শোভা আর অভি ভাইয়ার গায়ে হলুদ।
,
ছাদের উপর শোভার গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
একটু পরেই শুরু হবে শোভার হলুদ সন্ধ্যা।
পার্লার থেকে লোক এসেছে শোভা কে সাজানোর জন্য।
তারা শোভা কে সাজাতে ব্যস্ত।
ঋতু একটা সিম্পল হলুদ ড্রেস পড়ে আছে।তার মতে শাড়ি পরা একটা এক্সট্রা ঝামেলা।শাড়ি পরে ভালো করে হাটতে পারে না।এই তো সেদিন ওর এক কাকার বিয়েতে মায়ের জোরাজুরিতে শাড়ি পরে গেছিল বর যাত্রীদের সাথে।সেখানে গিয়ে কি কান্ড টাই না করলো ঋতু।কনে দেখতে যাওয়ার সময় কনে বাড়ির উঠোনের মাঝে শাড়ির সাথে পা পেচিয়ে তাল সামলাতে না পেরে পরে গেলো।কি একটা অবস্থা বিয়ে বাড়ির অত লোকের মাঝে।পরে ওর ঐখানকার একটা আন্টি এসে ঠিক করে দিল।সেদিনের কথা মনে হলেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে।
ওর সব বান্ধবি গুলো শাড়ি পরেছে।আর সায়নীর কথা কি বলবো।সেই দুপুর থেকেই রুপ চর্চায় ব্যস্ত হয়ে পরেছে।যেনো ওর নিজেরই গায়ে হলুদ আজকে।
যেভাবে ময়দা মারছে ইচ্ছে করছে আমাদের বাসার সব ময়দা ওর মুখে ঢেলে দিয়ে বলি নে ধর আরেকটু নে কম হয়ে গেছে।
আদিখ্যেতা দেখলে গা জ্বলে যায়।আমি বুঝিনা কি কিছু সব কিছুই শুভ্র স্যারের ফোকাস পাওয়ার জন্য।
রিচুয়াল অনুযায়ী
অভির গায়ে ছোঁয়ানো হলুদ কনের গায়ে দেয়া হবে।
বসে বসে শোভাকে সাজানো দেখছিলাম।শুভ্র স্যার পার্লারের এক কর্মচারী কে ডেকে কি বললো জানি না।ওরা জোর করে আমার গায়ের ড্রেস খুলে একটা হলুদ রঙের জামদানি শাড়ি পরিয়ে দিলো।এত জোর করলাম তবুও শুনলো না।আমার এখন ভীষণ কান্না পাচ্ছে।আবার না জানি ঐদিনের মতো ঘটনা না ঘটে।কাচা ফুলের গহনা আর কোমড়ে একটা ফুলের বিছা দেয়া।
,
রিচুয়াল অনুযায়ী বরের গায়ে ছোঁয়ানো হলুদ কনের গায়ে দিতে হবে।ঐ বাড়ি থেকে গায়ে হলুদের তথ্য নিয়ে সবাই আসা শুরে করে দিয়েছে।
সোনা মায়ের কথা মতো আমরা সবাই মানে আমি উর্মি,মধু,সায়নী,আশিক রা মিলে ঐ বাড়ি থেকে যারা আসবে তাদের হাতে একটা করে ফুল দিবো।
সবাই কে দেয়া শেষে একজন হাত পাতল ঋতুর সামনে।
আমি রজনীগন্ধা নিবো না আমায় গোলাপ দিতে হবে।
--সরিিি!!গোলাপ তো বলে উপরের দিকে তাকিয়ে ঋতু
আপনিিিিিহহহহহ
--মিটিমিটি হেসে,,হু আমি।কেনো অবাক হলে নাকি?(ইহান)
---না মানে আপনি এখানে?
--হুম আমিই এখানে।বর পক্ষের লোক মানে বরের বন্ধু আমি।
---আপনি অভি ভাইয়ার বন্ধু??কই আমি তো কখনো আপনাকে দেখিনি?
--তাই নাকি!!আমি তো তোমাকে দেখেছি।একবার নয় বহুবার।
--তাই নাকি?
--হুম তাই।একটা কথা বলবো?
--কেনো?এতক্ষণ কি বললেন না?
--হুম বলেছি তো তারপরেও অনুমতি চেয়ে নিচ্ছি,,
--তাই নাকি!!তা বলুন কি বলবেন।
পরি কখনো দেখিনি আমি তবে আমার সামনে দাড়িয়ে থাকা এক
মাটির তৈরী হলুদ পরী কে দেখেছি।
আমি না কখনো কারো প্রেমে পরিনি তবে আজকে খুব ইচ্ছে
করছে তোমার প্রেমে হারিয়ে যেতে।
বালিকা দেবে কি আমায় সেই সুযোগ একবার?
--ফ্লার্টিং করছেন আমার সাথে?
--না গো,,বিশ্বাস করো সত্যি বলছি।
হয়েছে বুঝলাম। ভেতরে গিয়ে বসুন আপনি আমি ঐদিক টা একটু দেখে আসছি।
--অকে।
অনুষ্ঠানে আসা সবার ফোকাস এখন ঋতুর উপর।ইহানের কথা গুলো ঋতু মজা হিসেবে উড়িয়ে দিলেও ইহান কথাগুলো মন থেকেই বলেছে।
ছেলেরা অনেকে ঋতুর পাশে ভাব জমানোর চেষ্টা করছে।
,
নিচে নামার সময় কেউ একজন ঋতুর হাত ধরে টেনে দেয়ালের সাথে হাত দুটি চেপে ধরে।
লোড শেডিং হলো মাত্র।অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।
নিচে নেমে রুমের দিকে যাচ্ছিল ঋতু হঠাৎ করে কে যেনো হাত ধরে টান দেয়।ইলেক্ট্রিক চলে আসায় বুঝতে পারে এটা এটা শুভ্রের রুম।
ব্যথায় ককিয়ে ওঠে ঋতু।দেয়ালের সাথে হাত চেপে ধরে দাড়িয়ে আছে শুভ্র।চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে ভয়ংকর রকমের রেগে আছে শুভ্র।মনে হচ্ছে এখনি তার চোখের আগুনে ঋতুকে ভস্ম করে দেবে।
শুভ্রকে রাগতে দেখেছে তবে এই রুপের সাথে আজকেই পরিচয় ঋতুর।ওর যতদূর মনে পরছে সে সারাদিন শুভ্রের থেকে দূরেই ছিল।তাকে তো রাগায়নি বা এমন কোনো কাজ করেনি যাতে শুভ্রর রাগ হয়।ঋতু বুঝতে পারছে না কি হলো হঠাৎ উনার।ভয়ে ঢোক গিলছে ঋতু।
---ক্্্কিিিি হয়েছে,,আমায় এখানে টেনে আনলেন কেনো?
--কি হয়েছে তুই জানিস না??ছেলেদের সাথে তোর এতো পিরিত কিসের?খুব (দাঁতে দাঁত চেপে বলছে কথাটা শুভ্র)
--ছেলেদের সাথে পিরিত করবো না তো কি মেয়েদের সাথে করবো?আমি কি সমকামী নাকি?
--খুব সাহস বাড়ছে নাহহহ,,আরো জোরে চেপে ধরে।
তোকে যেনো আমি ঐ ছেলের আশে পাশে আর না দেখি।
আর যদি দেখি তো তাহলে আগে ঐ ছেলেকে মারবো তার পরে তোকে।
---আহহহহহহ!!লাগছে ছাড়ুন।
--লাগুক,লাগার জন্যই তো দি,,,
ঋতুর চোখ থেকে দু ফুটা পানি গড়িয়ে পরলো শুভ্রের হাতে।
সাথে সাথে ঋতুকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায় শুভ্র।
সব সময় কেনো এমন করেন উনি!!একটু ভালো ব্যবহার করলে কি হয় উনার।সব সময় কেমন খারুসের মতো করে।
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো ঋতুর।কত্ত সুন্দর মজা করছে সবাই।কেউ কিছু বলছে না কাউকে আর উনি কেন জানি আমার সাথেই এমন করে।ধুরররররর ভাল্লাগে না কিছু।
রুমে এসে শাড়ি খুলে ফেলে,,সব কিছু টেনে ছিড়ে ফেলে।
উনার কি!!আরো বেশি বেশি করে করবে ও।
আমি কি করবো না করবো উনাকে বলে করতে হবে নাকি মনে মনে এসব বলছে আর রাগ কমানোর চেষ্টা করছে ঋতু।
আদৌ এসব কথাগুলো জোরে বলার মতো সাহস আছে তো ঋতুর?
এদিকে ঐ বাড়ি
থেকে আসা মেহমান রা সবাই চলে গেছে।
ছাদে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। আমার যদিও বা যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না তবে শোভার রিকুয়েস্ট না রেখেও পারলাম না।
জোর করে এসে ধরে নিয়ে গেলো।
ছাদে মাদুর পেতে গোল হয়ে সবাই বসে আছে।সবাই স্যারকে গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ করছে।
ভূতের মুখে রাম রাম।এই কর্কশ কন্ঠি কাক করবে কা কা?
'যেই না আমার গলা,নাম রাখছে সুরেলা'?
এতো তেলানোর কি আছে বুঝিনা,হুহহহহহ
ভাব দেখায় এক্সট্রা ভাব আরকি।কথা গুলো মনে মনে বলছে ঋতু।সাউন্ড হলে নিশ্চিত ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিবে জল্লাদ টা।
আসিক কে কি যেনো বললো ও নিচে চলে গেলো।
একটু পরে একটা গিটার হাতে করে নিয়ে এলো।
তারমানে গান গাইবে উনি।করুক না কিছুক্ষণ কা কা ভালই লাগবে।
.
.
চলবে