Thread Rating:
  • 12 Vote(s) - 2.58 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সাজু ভাই সিরিজ (সিরিজ নম্বর-০২) (গল্প:- হারিকেন) (সমাপ্ত গল্প)
#10
পর্ব-০৫

মাথা ফেটে রক্ত বের হয়ে গেল, জ্ঞান হারাবার আগে সাজু ভাই শুধু একবার মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেছে " রকি...! "

যারা আক্রমণ করতে এসেছে তারা তাদের কাজ করে চলে গেল, সাজু ভাইয়ের অচেতন শরীরটা বালুতে পরে রইল। 

----

রাত বেরে গিয়েছে কিন্তু সাচুর কোন খোঁজ নাই বলে রকির টেনশন হচ্ছে কিন্তু রুমের দরজা তো বন্ধ, তাহলে কি করবে? বারবার কল দিয়ে যখন সাজুর নাম্বার রিসিভ হচ্ছে না তখন রাত দশটার দিকে রকি হোটেলের রুমের মধ্যে একটা স্লিপে নাম্বার পেয়ে সেই নাম্বারে কল দিল। হোটেলের ম্যানেজার নিজে রুমের ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে দিল, কিন্তু সাজু ভাইয়ের খবর কেউ জানে না। 

সেই রাতেই পুলিশের কাছে খবর দিয়ে কয়েকটা গাড়ি নিয়ে সাজু ভাইয়ের সন্ধান করা হলো কিন্তু কোথাও কেউ নেই। রাত প্রায় দুইটার দিকে রকি এবং পুলিশ মিলে সাজু ভাইয়ের সেই আক্রমণ করার স্থানে এলো। একটা ঘড়ির উপর লাইটের আলো পরতেই সেখানে তারা গাড়ি ব্রেক করলো। গাড়ি থেকে নেমে রকি সেই ঘড়ি হাতে নিয়ে যেন অবাক হয়ে গেল, কারণ ঘড়িটা সাজু ভাইয়ের। 

তারপর সেখানে ভালো করে অনুসন্ধান করে কিছু রক্তের ফোঁটা এবং ধস্তাধস্তির চিহ্ন পেল। কিন্তু আশেপাশের কোথাও সাজুকে পাওয়া গেল না, ক্লান্ত ও হতাশা নিয়ে হোটেলে ফিরে গেল রকি।
হোটেলে বসে রকি যখন কল করেছে তখন সাজুর নাম্বার খোলা ছিল কিন্তু তারপর বন্ধ। 

 চট্টগ্রামে সজীবের কাছে কল দিয়ে কান্না করতে করতে সাজুর নিখোঁজের খবর দিল। সজীব সেই সময়ই রওনা দিতে চাইলো কিন্তু রকি সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছে। 

★★★

সাজুর যখন জ্ঞান ফিরেছে তখন সে একটু সাদা ধবধবে বিছানায় কম্বল জড়িয়ে শুয়ে আছে। কিন্তু কে তাকে এখানে নিয়ে এসেছে? মাথায় আর হাতে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে দিয়েছে, রুমটা দেখে অনুমান করা যায় যে এটাও একটা হোটেল রুম। নড়তে গিয়ে মাথা ভারি হয়ে গেল, রুমের মধ্যে কাউকে দেখা যাচ্ছে না কিন্তু বাথরুমে পানির শব্দ হচ্ছে। 

সাজু ভাই তখন আস্তে আস্তে উঠে বসে খাটের সঙ্গে একটা বালিশ দিয়ে পিঠ এলিয়ে হেলান দিয়ে রইল। জানালা দিয়ে প্রচুর আলো এসে চোখ ঝিম ধরার উপক্রম করছে তাই চোখ বন্ধ করলো। ঠিক তখনই বাথরুমে দরজা খোলার শব্দ হলো, কিন্তু চোখ মেলতে ইচ্ছে করছে না তাই চোখ সেভাবেই বন্ধ করে রইল। 

কেউ একজন গুনগুন করে গান গাইছে, আর সে একটা মেয়ে সেটাও বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু মাথার তীব্র ব্যথা আর চোখের যন্ত্রণায় চোখ মেলে সে তাকাতে পারলো না। 

- হঠাৎ করে মেয়েটা বললো, তোমার জ্ঞান ফিরে গেছে? আলহামদুলিল্লাহ, এখন কেমন লাগে? 

- চোখ বন্ধ রেখেই সাজু বললো, কে আপনি? 

- চোখ মেলে তাকিয়ে যদি পারো তো নিজেই চিনে 
নাও, আমি কেন বলতে যাবো? 

- এবার কণ্ঠ পরিচিত মনে হচ্ছে, কৌতূহল নিয়ে বহুকষ্টে চোখ খুললো সাজু। তারপর মেয়েটাে দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ, যতটুকু দেখছে ততটুকু যথেষ্ট। 

ঢিলেঢালা একটা নীল রঙের প্লাজু আর একদম কুচকুচে কালো একটা গেঞ্জি পরে অত্যন্ত সুন্দরী রূপবতী তরুণী দাঁড়িয়ে আছে। চেহারার মধ্যে কোথাও কোন দাগ নেই, এতটা নিখুঁত সৌন্দর্য তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আশ্চর্য। চেহারাটা তার কাছে বেশ পরিচিত লাগলো কিন্তু মনে করতে গিয়ে মাথা আবারও ব্যথা করতে লাগলো। আর তারপরে চোখ বন্ধ করে বললো,

- তুমি আমাকে কোন যায়গা আনলে আমাকে?

- আগে বলো চিনতে পারো আমাকে? 

- তোমার চোখদুটো অসম্ভব সুন্দর, আর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি বুঝতে পারছি লামিয়া। 

- ১০০ মার্কের মধ্যে মাত্র ২৮ নাম্বার পেলে, এখন বাকি উত্তর দাও। 

- কিসের বাকি উত্তর? 

- লামিয়ার বাইরে আমার আরেকটা আসল নাম আছে এবং সেটা তুমি জানো, কিন্তু তোমাকে সেই নাম মনে করতে হবে, মনে করো। 

- আমি চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না, আচ্ছা এসব বাদ দিয়ে বলো আমাকে কীভাবে পেলে? 

- তোমার সামনে এসে যখন গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল তখন আমরা অনেকটা পথ এসেছিলাম। আমার সঙ্গের বান্ধবীদের পাঠিয়ে দিয়ে আমি আবারও তোমার দিকে যাচ্ছিলাম। কিন্তু দুরে দাঁড়িয়ে যখন তোমাকে আঘাত করার শব্দ পেলাম তখন জোরে হাঁটতে লাগলাম কিন্তু আমি যাবার আগেই তারা চলে গেল। 

- খুব ভালো হয়েছে, নাহলে তারা তোমাকেও আহত করতো আর আমি এতটা সেবা যত্ন পেতাম না লামিয়া। 

- আমার নাম লামিয়া নয়, আরেকটা নাম আছে সেটা তোমাকে বের করতে হবে।

- তুমি কি আমাকে আগে থেকে চিনতে? 

- হ্যাঁ অনেক আগে চিনতাম, কিন্তু গতকাল সকাল বেলা তোমাকে দেখে অবাক হলাম এবং সেই পুরনো কথা মনে পরে গেল।

- একটু সহজ করে দাও। 

- চোখ মেলে আমার চেহারার দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে দেখো, ঠিকই চিনবে। 

এবার সত্যি সত্যি সাজু ভাই লামিয়ার মুখের দিকে খুব মনোযোগ দিল। সত্যি সত্যি বেশি পরিচিত মনে হচ্ছে কিন্তু, কে হতে পারে? 

পাঁচ মিনিট কাটলো তারপর মুখের মধ্যে হতাশা নিয়ে অস্ফুটে বললো, " কবিতা .....? "

- হাহাহা, চিনতে পারছো সাজু? 

- কবিতা তুমি? সত্যি সত্যি আগে চিনতে পারি নাই একদমই না, কেমন আছো? 

- আমি কিন্তু গতকাল সকাল বেলা তোমাকে দেখেই চিনতে পেরেছি, কিন্তু তুমি আমাকে ঠিকই ভুলে গেলে সাজু। 

- কমপক্ষে ১০/১১ বছর আগের কথা তাই আমি ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক। 

- তাহলে আমি ভুলিনি কেন? 

- জানি না, কিন্তু তুমি তো বিয়ে করে ঢাকা শহরে চলে গেলে, তাহলে গতকাল সকালে অমন সব আবোলতাবোল কথা বললে কেন? 

- একটা নিঃশ্বাস ফেলে কবিতা (লামিয়া) বললো, আমি কোনকিছু মিথ্যা বলিনি, যা বলেছি সবকিছু সত্যি বলছি। 

- মানে কি? তোমার স্বামী কোথায়? তুমি তো সেই মারুফের সঙ্গে পড়াশোনা ছেড়ে পালিয়ে গেলে। 

- মারুফের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়নাই সাজু, বিয়ে না করে সে আমাকে বিক্রি করেছিল। 

- একটু ক্লিয়ার করো তো, তুমি আর মারুফ তো দুজন দুজনকে অনেক ভালবাসতে তাহলে সে তোমাকে বিক্রি করবে কেন? 

এরপর কান্না করতে করতে সাজুকে জড়িয়ে ধরে থেমে থেমে কবিতা যা বললো সেগুলো গুছিয়ে লিখলে জানা যায়:- 

ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে পড়ার সময়ই মারুফের সঙ্গে সে পালিয়েছিল ঠিকই কিন্তু সংসার করতে পারে নাই। সাজু অবশ্য জানতো তাদের সম্পর্কের কথা কারণ সাজু আর কবিতা একসাথে কলেজে ভর্তি হয়েছিল, কিন্তু কিছুদিন পরেই সাজু যখন পলিটেকনিকে ভর্তি হলো তখন তাদের যোগাযোগ কমতে লাগলো। মাত্র মাসখানেক একসাথে ক্লাস করে খুব ভালো বন্ধু হয়েছিল তারা, আর তখনই মারুফের কথা জেনেছিল সাজু। কিন্তু কবিতার অন্ধ ভালবাসা দেখে সাজু তাকে বারবার সাবধান করতো, এতটা পাগলামি করা ঠিক নয় সেটা সে বোঝাতে চাইতো। কিন্তু কবিতা সেগুলো শোনার পাত্রী ছিল না তাই সাজু নিজেও আর বেশি কিছু বলে নাই। 

হঠাৎ করে মারুফ কবিতাকে বিয়ে করার জন্য খুব মানসিক চাপ দিচ্ছিল। মারুফ ঢাকায় চাকরি করতো, এসএসসি পরীক্ষার পরে তাদের পরিচয় হয়েছিল এই শহরের মধ্যে। 

মারুফের কথা ছিল সে তাকে বিয়ে করতে চায় নাহলে সে বাঁচবে না, কিন্তু কবিতার পরিবারের কেউ তার সম্পর্কের কথা জানতো না। এমনকি তাকে সেই মুহূর্তে বিয়ে দিতে চায় না তারা, তাই মারুফের মানসিক চাপে কবিতা সবকিছু বাদ দিয়ে মারুফের সঙ্গে পালিয়ে যায়। সাজুকে বলতে চেয়েছিল কিন্তু সাহস হয়নি, কারণ বেশি পাগলামি যে সহ্য করতে পারে না সে কীভাবে পালিয়ে গেলে সাপোর্ট করবে? 

----

এতটুকু বলার পরে সাজু ভাই বললো, " আমার পানি পিপাসা অনুভূত হচ্ছে, এক গ্লাস পানি দাও তো "

- কবিতা তখন পানি দিল, তারপর তাকে ধরে আস্তে করে আবার শুইয়ে দিয়ে বললো " এখন আর কোন কথা নয়, বাকিটা পরে বলবো কারণ আমি তো পালিয়ে যাচ্ছি না তাই না? "

- আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু মনের মধ্যে আমার তো মেলা মেলা কৌতূহল। 

- বললাম তো পরে বলবো। 

- ঠিক আছে, আমার মোবাইল কোথায়? 

- আছে তবে বন্ধ করে রেখেছি, কারণ আমি তো তোমাকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাই না। তাই তুমি জ্ঞান ফিরে সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চেয়েছি, আর এটা কিন্তু সেই হোটেল নয়। আমি তোমাকে নিয়ে আরেকটা হোটেলে উঠেছি আর সকল চিকিৎসা রুমের মধ্যে ব্যবস্থা করেছি। 

কবিতা মোবাইল বের করে দিল, চালু করে সাজু ভাই প্রথমে রকির কাছে কল দিল কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। তারপর সে সজীবকে কল না দিয়ে চট্টগ্রামে ওসি সাহেবের কাছে কল দিল। 

- ওসি সাহেব বললো, আপনি ভালো আছেন তো সাজু সাহেব? ঠিক আছেন? আপনাকে নিয়ে কিন্তু অনেক টেনশনে আছি। 

- জ্বি স্যার আমি ভালো আছি, আপনার ওখানে কি অবস্থা তাই বলেন। 

- বেশি ভালো না। 

- কেন স্যার? কি হয়েছে? 

- হাসপাতালের সেই তৃতীয় ডাক্তারের উপর তো প্রচুর সন্দেহ হচ্ছে কারণ তার সঙ্গে আহত ও নিহত ডাক্তারের শত্রুতা ছিল। এদিকে গোপনীয় প্রতিবেদনে জানা গেছে আপনার সেই রোগী রাহাত সাহেব ইয়াবা ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত। 

- বলেন কি স্যার? 

- হ্যাঁ সাজু সাহেব, কিন্তু রাহাত সাহেব অসুস্থ বলে কিছু করা যাচ্ছে না, এদিকে সিটি করপোরেশনের মেয়র বারবার আমাকে বকাঝকা করে। উপর থেকে প্রচুর চাপ যাচ্ছে আমার। 

- তাহলে কি রাহাত সাহেবের সঙ্গে তার মাদকদ্রব্য বিষয় নিয়ে কোন গন্ডগোল? 

- জানি না আমি,....... 

সাজু ভাই কিছু বলতে পারলো না কারণ রুমের দরজা খুলে ৭/৮ জন যুবক প্রবেশ করলো। আর কবিতা কখন যে বাইরে গেল সেটা সে জানতেই পারলো না। 

তারা সবাই সাজুর দিকে তাকিয়ে আবার নিজেদের মধ্যে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো একসঙ্গে। সাজু ভাই ভয়ে একদম বিছানায় মিশে গেল.... 

.
চলবে... 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সাজু ভাই সিরিজ (সিরিজ নম্বর-০২) (গল্প:- হারিকেন) - by Bangla Golpo - 14-01-2023, 05:26 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)