Thread Rating:
  • 30 Vote(s) - 2.63 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে)
#48
পর্ব-১৬




 

        "রুদ্র, এই রুদ্র! কি ভাবছিস?"
         ফাহিমের ডাকে সম্বিত ফিরে পেলো রুদ্র। সে ফাহিমের দিকে তাকালো। এতোক্ষণ সবাই কি নিয়ে কথা বলেছে তার সেদিকে খেয়াল নেই। সে অস্ফুট কন্ঠে বলল, "কি?"
        ফাহিম আবার বলল, "কি ভাবছিস এতো? চা খাবি তো?"
        "হ্যাঁ, খাওয়া যায়।" 
        "আচ্ছা।" বলেই ফাহিম হেঁটে গেলো চায়ের অর্ডার দিতে। 

        "তোর কি হয়েছে? আজকাল তোকে তোর মধ্যে থাকতে দেখি না। সারাক্ষণ কেমন ঘোরের মধ্যে থাকিস। আমরা বন্ধু তো? কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকলে আমাদের সাথে শেয়ার কর। দেখবি মন হালকা হবে।" ইরিনা কথাগুলো রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল।
        "হ্যাঁ, রুদ্র। ইরিনা ঠিক বলেছে। তুই আজকাল প্রায় সময় অন্যমনস্ক থাকিস। কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?" পাশ থেকে সাত্যকি বলল।
        "আরে তোরা এতো টেনশন করছিস কেনো আমাকে নিয়ে? আমি ভালো আছি। সামনেই সেমিস্টার ফাইনাল। এই সেমিস্টারে ভাল করে স্টাডি করিনি। ক্লাসও ঠিকভাবে করি নি। পরীক্ষা কেমন হবে সেটা নিয়েই চিন্তিত। এছাড়াও পরীক্ষার পর ইন্টার্নি। কোথায় করলে ভালো হবে সেটাও ভাবছি।" রুদ্র খানিকটা সত্য মিথ্যা মিলিয়ে বলল।
        "এটা একটা সমস্যা। ডিপার্টমেন্ট থেকে সুপারিশ করে দিলেও নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোথায় করবো।" ফাহিম ইতোমধ্যে চায়ের অর্ডার দিয়ে চলে এসে রুদ্রের পাশে বসতে বসতে কথাগুলো বলল।
        "তোরা এতো আগে থেকেই কেনো এই সামান্য বিষয় নিয়ে টেনশন করছিস?" ইরিনা বলল।
        "তোর-তো চিন্তা নেই। তোর বাবার অনেক পরিচিত মানুষ আছে। কোনো একজায়গায় তুই ঢুকে যেতে পারবি। আমাদের-তো সেভাবে পরিচিত কেউ নেই।" ফাহিম বলল।
        "আমি ইন্টার্নি করতে পারবো না। থিসিস করবো।" সাত্যকি বলল।
        "ভালো বলেছিস। আমিও ভেবে দেখি কি করবো।" ফাহিম কথাটা বলে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, "তুই কি করবি? আমার মতে থিসিস করাই ভালো। একটু ঝামেলা হলেও বাসায় বসে নিজের ফ্রি টাইমে করা যাবে। সকাল সন্ধ্যা অফিস তো করা লাগবে না।" 
        "এটা নিয়ে এখনো ভাবি নি। দেখি কি করি।" রুদ্র বলল।

        "দুলাভাইয়ের অফিসে জয়েন্ট হয়ে যা। একসাথে কাজ করবি, প্রেম করবি। ইন্টার্নি করা হয়ে যাবে, সেই সাথে প্রেম করাও হয়ে যাবে।" সাত্যকিকে কাঁধে ধাক্কা দিয়ে ইরিনা কথাটা বলার সাথেসাথে সবাই সম্মতি দিয়ে হেসে দিলো। 
        "তোরা আছিস সবসময় ফাজলামো মুডে।" সাত্যকি বলল।
        "ভালো একটা আইডিয়া দিলাম, ধন্যবাদ দিবি কিন্তু তা-না ফাজলামো ভাবছিস। আমিও দেখতে চাই শেষমেশ কি করিস তুই।" ইরিনা কাটাকাটা শব্দে বলল।

       "হ্যাঁ রে রুদ্র। আলিফকে আজকার আড্ডায় তেমন দেখি না। ওর কি কিছু হয়েছে?" রুদ্রের কাছে ইরিনা জানতে চাইলো।
       "অনেকদিন হলো ওকে ক্যাম্পাসেও দেখি না। অনলাইনে তেমন আসে না। মেসেজ দিলে রিপ্লাই দেয় না।" ইরিনার কথার সাথে ফাহিম যুক্ত করলো।
       "ও একটা বিষয় নিয়ে খুব আপসেট আছে। আজকাল তেমন ঘর থেকে বের হয় না। সেদিন দেখা করতে ওর বাসায় গিয়েছিলাম। ওকে অনেক বুঝিয়েছি। বলেছি, বাইরে বের হওয়ার জন্য, ক্যাম্পাসে আসার জন্য, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারপরও আলিফ নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্দী করে রেখেছে। ওকে নিয়ে কি যে করি বুঝতাছি না।" রুদ্র খানিকটা ম্লান এবং হতাশ ভাবে কথাগুলো বলল।
       "কি হয়েছে? কি নিয়ে আপসেট আছে?" সাত্যকি প্রথমে প্রশ্নটা করলো।

       রুদ্র সংক্ষেপে বিষয়টা সবাইকে খুলে বলল। সবাই শুনে অবাক হলো। আলিফকে তার সবাই যতটুকু চিনে সে এরকম ছেলে না। আলিফ অনেকগুলো রিলেশন করেছে। চার মাস, ছয় মাসের বেশি কোনোটা যায় নি। কিন্তু কখনো কেউ আলিফকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখেনি। এতোটা কষ্ট পেতে দেখেনি।

       "চল সবাই মিলে ওকে একদিন দেখতে যাই। ও খুশি হবে। এছাড়া সবাই গিয়ে ওকে বুঝালে ও নিশ্চয়ই বুঝবে।" ইরিনা সবার উদ্দেশ্য বলল।
       সবাই ইরিনার কথায় সম্মতি দিলো। সাত্যকি প্রথমে বলল, "যাওয়া যায়।"
       "হ্যাঁ, যাওয়া যায়। কিন্তু কবে যাবি?" ফাহিম বলল।
       "পরশুদিন যাই চল।" ইরিনা বলল।
       "কাল গেলেই তো হয়।" রুদ্র বলল।
       "কাল আমার একটু কাজ আছে রুদ্র। পরশুদিন আমাদের ক্লাস নেই। সবাই ফ্রি আছি।" ইরিনা বলল।
       "হ্যাঁ, আমার কোনো সমস্যা নেই।" ফাহিম বলল।
       "আমিও ফ্রি আছি।" সাত্যকি বলল।
       "আচ্ছা তাহলে পরশু দিন-ই যাই। আমার কোনো সমস্যা নেই।" সবশেষে রুদ্র রাজি হলো। 
       "সবাই মিলে কিছু টাকা দিয়ে কিছু খাবারদাবার কিনে নিয়ে গেলাম। আড্ডা দিলাম, একসাথে খেলাম, হইচই করলাম।" ইরিনা সবার উদ্দেশ্য বলল।
       "সেটা করাই যায়। কিন্তু ও কোন পরিস্থিতিতে আছে সেটা আমরা ঠিক জানিনা।" রুদ্র বলল।
       "এটা নিয়ে ভাবতে হবে না। ওখানে গেলে ওকে ম্যানেজ করে ফেলবো।" ইরিনা আস্বস্ত করলো। 
       "চা খেয়ে কিছুই হলো না। ক্ষুধা লাগছে। তোরা কি অন্য কিছু খাবি?" ফাহিম সবাইকে জিজ্ঞেস করল।
       "আমি কিছু খাবো না।" রুদ্র বলল।
       "তোর কিছু খেতে ইচ্ছে করলে অর্ডার দিয়ে আয়। সমস্যা নেই।" ইরিনা বলল। 

       ফাহিম উঠে চলে গেলো। তখনই রিয়াকে দূর থেকে হেঁটে আসতে দেখলো ইরিনা। রিয়াকে দেখেই সে বলে ফেলল, "কিরে রুদ্র তোরা কি আজ ডেটিং এ যাবি?" 
       ইরিনার কথা রুদ্র ঠিক বুঝতে পারলো না। হঠাৎ এই প্রশ্ন কোথাথেকে এলো। সে কিছু বলতে যাবে তার আগে ইরিনা বলে উঠল, "রিয়া, তোকে কিন্তু আজ শাড়িতে ভীষণ সুন্দর লাগছে।" 
       "ধন্যবাদ।" ফাহিমের সিটে বসতে বসতে রিয়া বলল।
       রিয়াকে দেখেই রুদ্র বুঝতে পারলো একটু আগে ইরিনা কেনো তাকে ওই কথাটা বলেছে।
       ইরিনা একইভাবে রুদ্রকে করা প্রশ্নটা রিয়াকে করলো। রিয়া উত্তর দিতে যাবে তার আগে রুদ্র রিয়াকে বলল, "তোমার কাজিন কখন আসবে?" 
       রুদ্রের প্রশ্নে কথার প্রসঙ্গ পরিবর্তন হয়ে গেলো। 
       "ভাইয়া ক্যাম্পাসে আসতে পারবে না।" রিয়া উত্তরে বলল
       "ক্যাম্পাসে আসার কথা ছিলো না?" রুদ্র জানতে চাইলো।
       "হ্যাঁ, কিন্তু ধানমন্ডির দিকে ভাইয়ার একটা কাজ পরে গেছে। কাজ শেষ করে এখানে আসতে দেরি হবে। তাই ভাইয়া বলল, ধানমন্ডি লেকের ওদিকটায় আমরা যদি যাই তাহলে ভাইয়ার জন্য সুবিধা হয়। সরি আমি তোমাকে না জানিয়ে ভাইয়াকে বলেছি, সমস্যা নেই, আমরা ওদিকটাতে সময়মত চলে আসবো। তোমার যেতে কোনো সমস্যা নেই তো?"
       "না, কোনো সমস্যা নেই।" রুদ্র হাসিমুখে উত্তর দিলো। 

       রিয়া এবং রুদ্রের কথোপকথন সবাই পাশে থেকে চুপচাপ শুনলো। কেউ বুঝতে পারলো না কোন বিষয় নিয়ে তারা কথা বলছে। ইরিনার মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন এলেও সে বুঝতে পারছে না কোন প্রশ্নটা আগে করবে। সাত্যকি এবং ফাহিম ও অবাক হলো কিছুটা। তারা যতটুকু জানতো রুদ্র এবং রিয়ার মধ্যে একটু মনোমালিন্য ছিলো। কেউ কারো সাথে তেমন কথা বলত না। তাদের ক্যাম্পাসে কিংবা আড্ডায় দেখা হলে তারা একে অন্যকে এড়িয়ে যেত। কেউ কারো সাথে তেমন একটা কথা বলত না। আজ হঠাৎ কি হলো? কীভাবে? সবার মনে এই প্রশ্নটা এলেও কে আগে প্রশ্নটা করবে সেই অপেক্ষাতে সবাই আছে। 

       ইরিনা কিছু একটা বলতে যাবে তার আগে রুদ্র সবাইকে বলল, "আচ্ছা, তোরা তাহলে থাক। আমি আর রিয়া চলে যাচ্ছি। একটু কাজ আছে। তোদের সাথে পরে কথা হবে।" 
       "কোথায় যাচ্ছিস?" ইরিনা জিজ্ঞেস করল।
       "একটু আগে তো রিয়া বলল-ই।" রুদ্র বলল।
       "হ্যাঁ, তা বলেছে। কিন্তু কেনো? কোনো সমস্যা?" ইরিনা চিন্তিত হয়ে জানতে চাইলো।
       "কোনো সমস্যা নেই। আমার একটা জরুরি কাজে রিয়ার কাজিন আমাকে সাহায্য করছে। সেদিন হুট করে রিয়ার সাথে দেখা হয়ে গেলে বিষয়টা ওকে বলি। তখন ও বলল ওর কাজিন আমাকে সাহায্য করতে পারবে। তাই ওকে বলেছিলাম ওর কাজিনের সাথে দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য।" রুদ্র দ্রুত কথাগুলো বলল।
       "কি কাজ?" ইরিনা জিজ্ঞেস করল।
       "তোদের পরে খুলে বলি, কেমন? এখন যাই।" রুদ্র কথা বলে রিয়ার হাত ধরে রিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো দ্রুত। এই মুহুর্তে সে সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে চাচ্ছে না। 

       রুদ্রের এই ব্যবহারে সবাই অবাক হলো। রিয়াকে হাত ধরে নিয়ে যাবে এটাও সবাইকে অবাক করলো। 

       "কি হলো এটা?" ইরিনার দিকে তাকিয়ে ফাহিম জানতে চাইলো।
       "আমার দিকে তোরা এভাবে তাকাচ্ছি কেনো? আমি কি করে বলব কি হলো?" ইরিনা বলল।
       "তুই না জানলে কে জানবে? রুদ্র আর রিয়া দুইজনই তোর বেস্ট ফ্রেন্ড।" ফাহিম বলল।
       "আমি কিছু জানিনা। ওরা আমাকে কিছুই বলেনি।" হতাশ কন্ঠে বলল ইরিনা।
       "আচ্ছা বাদ দে এই বিষয়। রিয়া কিংবা রুদ্রের কাছ থেকে পরে জেনে নেওয়া যাবে।" সাত্যকি বলল। 
       "হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক।" ইরিনা সম্মতি জানালো।
       "কি করবি এখন?" সাত্যকি বলল।
       "আমি বাসায় যাবো। সকালে খাইনি। বাইরের এইসব হাবিজাবি খেয়ে পেট ভরছে না। এছাড়া এখন প্রায় বিকাল। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিবো।" ফাহিম বলল।
       "ইরিনা, তুই কি বাসায় চলে যাবি? না-কি আমার রুমে যাবি?" সাত্যকি জানতে চাইলো।
       ইরিনা কিছুক্ষণ ভেবে বলল, "সাত্যকি, চল তোর রুমে যাই। একটু ফ্রেশ হয়ে নেই। কিছুটা সময় বিশ্রাম নেই। রোদ'টা পড়ে গেলে সন্ধ্যার দিকে বাসায় যাবো।" 
       "আচ্ছা তাহলে চল।" সাত্যকি কথা বলে ফাহিমের দিকে তাকালো। সে আবার বলল, "ফাহিম তাহলে তুই রুমে যা। শাওয়ার নিয়ে খেয়ে বিশ্রাম নে।" 

       "সন্ধ্যার দিকে আমি কি তোকে বাসায় পৌঁছে দিবো?" ফাহিম উঠতে উঠতে ইরিনাকে বলল।
       "তুই আবার কষ্ট করবি কেনো? দরকার নেই। আমি একাই চলে যেতে পারবো।" ইরিনা নিষ্প্রাণ কন্ঠে বলল। তার কন্ঠে এই না এর মাঝে কোথাও যেনো হ্যাঁ ছিল। সেটা সে লুকাতে পারলো না। কিংবা দরকার নেই এটা অতোটা জোর দিয়ে বলতে পারলো না ইরিনা।
       "আমি বিকালে কল দিবো। চলে যাস না একা একা।" ইরিনার না এর মধ্যে কোথাও হ্যাঁ ছিলো। সেটা ফাহিম স্পষ্ট বুঝতে পারলো। সে তাকে পৌঁছে দিবে বলে হেঁটে চলে গেলো। 

       ফাহিম চলে যাওয়ার পরে ইরিনাকে নিয়ে সাত্যকি তার হলে চলে এলো। রুমে আসতে আসতে দুই একটা কথা হয়েছে তাদের মধ্যে। ইরিনা মূলত ফাহিমের বিষয়টা নিয়ে কথা বলার জন্য সাত্যকির সাথে এসেছে। সে কি করবে সেটা সাত্যকির সাথে কথা বলে সিন্ধান্ত নিতে চায়। সে আর ফাহিমের সাথে কোনো লুকোচুরি করতে চায় না। যা বলার এবার সে সরাসরি বলে দিবে ফাহিমকে।  

চলবে...!





গল্প টা  ভালো লাগেনা মনে হয় পাঠক দের কাছে ,
তাই কেও রিপ্লে দেয়না লাইক দেয়না।

তাই আমি মনে করেছি যে এই গল্পের বাকি অংশ গুলো আর পোস্ট করবো না।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে) - by Bangla Golpo - 14-01-2023, 05:20 PM



Users browsing this thread: 16 Guest(s)