14-01-2023, 03:29 PM
(08-01-2023, 10:50 PM)_ পার্ট ------৮--------- Wrote: আজকে ইন্টারের রেজাল্ট বের হবে। আমার থেকে বেশি সোহানার চিন্তা আমার রেজাল্ট নিয়ে। ও যে আমার সাথে এক্সাম দিয়েছে এটা মনে হয় ও ভুলে গেছে। সকাল বেলা আজান শুরু হতেই সোহানার ডাক।
_ রাফি,এই রাফি?
_ এই কি হয়েছে এমন মধ্য রাতে ডাকছিস কেন?
_মধ্য রাত মানে? ফজরের আজান হয়ে গেছে। এখন সকাল হবে নামায পড়বি না তুই?
_ আজ না অন্য দিন পড়ব।
_ রাফি প্লিজ উঠনা? আজ না রেজাল্ট দিবে? আল্লাহ্ তা'লার কাছে দোয়া করব তোর রেজাল্ট যেন ভালো হয়।
_আজ দোয়া করলে কি রেজাল্ট পালটে যাবে? রেজাল্ট যা আসার আসবে।
_ ধু,র--। উঠ তো? আমি এত কথা শুনতে চাই না।
_ প্লিজ আজ অনেক ঘুম পাচ্ছে।
_ আমি ম*রে গেলে আর কে ডাকবে তোকে এই ভাবে? তখন মিস করবি।
সোহানার কথা শুনে আমি উঠে শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
_ তোকে কোথাও যেতে দেব না আমি।
_ আরে পা*গল একটু আস্তে করে ধর। আমার তো জীবন বের হয়ে যাচ্ছে ।
_ আগে বল আমায় ছে,ড়ে কোথাও যাবি না?
_ আচ্ছা যাব না। এখন চল নামায পড়বি?
তারপর দুজনে নামায পড়ে বাগানে গেলাম।
_ রাফি জানিস আমার বিশ্বাস তুই ভালো রেজাল্ট করবি?(সোহানা)
_আচ্ছা আমার রেজাল্ট নিয়ে এত না ভেবে তুই নিজের টা নিয়ে ভাব।( আমি)
_ চুপ -।তোকে ডাক্তার হতে হবে আমি এটাই জানি।
_ যদি আমি পাস না করি?
_ কি বললি হ*নু*মান?( চুল টে,নে ধরে)
_ ছাড় প্লিজ ছাড়? আমায় ব্যা,থা করছে।
_ছাড়বো না---।
_ আচ্ছা বল তুই আমায় নিয়ে এত ভাবিস কেন?
_ কারণ তোকে আমি উদাহরণ হিসেবে দেখতে চাই। যে কেউ যেন বলে, জীবনে শেষ বা অসম্ভব বলে কিছু নেই। তার প্রমাণ রাফি।
আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। চলে আসলাম উঠে। এতটা মনের মধ্যে জায়গা করে দুই দিন পর হারিয়ে যাবে মেয়েটা৷ এটা ভাবলে নিজের নিশ্বাসটাই যেন বন্ধ হয়ে আসে আমার৷ আমার জীবনটা এমন করে সাজিয়ে দেওয়ার কি দরকার ছিল ওর? যখন নিজেই চলে যাবে? এর মধ্যে আন্টি এলেন।
_রাফি কি হয়েছে?
আমি চোখ থেকে পানি মুছে নিলাম।
_ কিছু না আন্টি।
_ আমি জানি তুমি সোহানার কথা ভাবছো। কিন্ত বাবা কি বলতো ও চলে গেলে আমি কি নিয়ে থাকবো? শেষ স,ম্বল তো ছিল আমার এই মেয়েটাই। আল্লাহ তাকে ও নিয়ে যেতে চাচ্ছে। প্রতিটা মূহুর্তে মৃ*ত্যুর য*ন্ত্রণা অনুভব করি আমি।
_ আন্টি এমন ভাবে কাঁদবেন না সোহানা আমাদের মাঝে যে কয়দিন আছে একদম বুঝতে দেওয়া যাবে না এটা যে ওর শেষ সময়। এই কয়টা দিন আমরা ওর অনেক খেয়াল রাখব।
দুপুর ১২ টা। সোহানা এসে বললোঃ-" রাফি দেখতো ইন্টারনেটে রেজাল্ট বের হয়েছে কি না।"
_ হুম এখনি পাওয়া যাবে।
_ তাড়াতাড়ি দেখ।
_ আরে বাবা দেখবো তো তুই এত পা*গল হচ্ছিস কেন?
_ আচ্ছা রাফি তুই ডাক্তার হওয়ার পর প্রথম কার চিকি,ৎসা করবি?
_ তোর মাথায় কি সারা দিন শুধু আমাকে নিয়েই চিন্তা থাকে? বিয়ার পর তোর জামাই তোরে তিন বেলা নিয়ম করে পি*টানি দিবে।
_ গা*ধা*রা*ম এবার দয়া করে রেজাল্ট গুলা দেখুন। আর আমায় উ*দ্ধার করুন। আমাকে আবার একটা জায়গায় যেতে হবে।
_ কোথায় যাবি?
_ তোর কাছে সব কিছুর কৈ,ফিয়ত দিতে পারব না ।
আমি অনেকটা ভয় নিয়ে রেজাল্ট দেখলাম। তবে আমারটা না সোহানারটা। ওর রেজাল্ট ভালোই হয়েছে 4.80। এখন ভয় করছে আমারটা দেখার সময়। আল্লাহ জানে কি হয়। এই রেজাল্টার সাথে কত কিছু জড়িত। বিশেষ করে সোহানা, ওর সম্মান আর খুশি দুটাই মিশিয়ে আছে এর সাথে।
হ্যাঁ আমার রেজাল্ট সোহানার কথামতই হল। আমি গোল্ডেন এ+ পেয়েছি। আমার রেজাল্ট দেখে সোহানা আমায় জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।
_ আজকের মত খুশি আমি এর আগে কোন দিন হয় নি। চল আমাদের একটা জাগায় যেতে হবে।
_ এখন আবার কোথায় যাবি?
_ আমি মানত করেছিলাম তুই যদি গোল্ডেন এ+ পেয়ে পাস করিস তাহলে আমি এ,তিম বাচ্চাদের খাওয়াবো।
আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছি না মেয়েটার এত উদারতা দেখে। একটা মানুষ কি করে এত উদার মনের মানুষ হতে পারে! সেটা এই পরিবারে না আসলে বুঝতে পারতাম না। তারপর সন্ধ্যায় আমি আর সোহানা বের হলাম। ও এ,তিম বাচ্চাদের খাবার দিচ্ছে। আর আমি পাশে দাঁড়িয়ে আছি।
_ রাফি জানিস এই বাচ্চাদের মুখে হাসিটা দেখলে কেন জানি মনটা ভালো হয়ে যায়।
তারপর থেকে শুরু হয় সোহানার আমার উপর শা*সন। পড়া ছাড়া আর অন্য কিছুর সুযোগ নেই। আমি সোহানার হাত ধরলাম।
_ সোহানা তুই না আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়ে গেছিস। মনে হয় আমি তোর প্রেমে পরে যাব। যেই হারে দিন দিন সুন্দর হচ্ছিস।
_ তাই না? তা আমার এত গুণগান গাওয়ার ম*তলবটা কি জানতে পারি?
_ আরে এত পড়ে কি করমু? চল ঘুড়ে আসি।
_ আমি জানতাম আপনি এমন আবদার করবেন। কিন্ত স্যার আপনার ছুটি তখন ই হবে---।
_ হুম তারপর থেকে আমার শুরু হল ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির টা,র্গেট। দিন দিন সোহানার উপর আমার মায়া বেড়ে যাচ্ছে। আমার পাশে থেকে বিনা স্বা,র্থে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে মেয়েটা কত দূর পৌঁছে দিয়েছে আমায়। এই বন্ধুটা চলে যাবে ভাবতেই পারি না। ও প্রতিটা দিন এমন ভাবে আমার কেয়ার নেয় আমি ওর মাঝে হারিয়ে যাই ।
হ্যাঁ আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়ে যাই। যার পুরো কৃতিত্বই সোহানার। যে কিনা আমায় এই পর্যন্ত পৌছে দিয়েছে তাই আজ বাসায় যেতে ওর পছন্দের আইসক্রিম আর সাথে মিষ্টি নিয়ে বাসায় আসলাম। বাসায় এসেই দেখি সোহানা কান্না করছে।
(গল্পটা হয়ত আগামী দুই পর্বের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তাই গল্প সম্পর্কে অথবা এনডিং সম্পর্কে যে কোন মতামত জানাতে পারেন কমেন্ট বক্সে। ভালো লাগলে আপনার কমেন্টের মত ও হতে পারে এনিডিং। ধন্যবাদ ও ভালোবাসা অবিরাম যারা গল্পটা শুরু থেকে এই পর্যন্ত পড়ে আসছেন)
চলবে।