12-01-2023, 07:35 PM
(This post was last modified: 10-11-2024, 07:50 PM by Baban. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
তুমি আমি - বাবান
চিলেকোঠার ঘর থেকে তোমায় দেখেছিলাম
কেন একা দাঁড়িয়ে তুমি তখন ভেবেছিলাম
কেন এতো একা সে, কেন যে নীরব এতো ?
এতো কেন গো সুন্দরী সে, এতটা না হলেই হতো
সন্ধের আকাশে মিশে গেছে তার ভাসমান নীল ওড়না
এতো ভালোও জানিনা লিখতে যে তাকে করি বর্ণনা
শুধু এইটুকুই পারি বলতে বন্ধু এই হলো সেই নারী
মনে হয় সোজা এগিয়ে গিয়ে হাতখানি তার ধরি
থাকবেনা তাতে কোনো প্রলোভন, না থাকবে লোভ
না থাকবে কোনো অভিমান , না কোনো তীব্র ক্ষোভ
না থাকবে পাবার ইচ্ছা, না থাকবে হারানোর ভয়
তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকাই হবে আমার জয়
অচেনা আমায় দেখলে পরে ভাববে এ কোন পাগল
বড্ড শান্ত ছেলেটার মুখ খানি কিন্তু চোখ দুটি চঞ্চল
এদিকে ওদিকে তাকিয়ে হয়তো দেখবে চারিপাশে
আর কেউ কি আছে আশেপাশে এই শীতল মাসে
একা সে আর একা আমি আছি দাঁড়িয়ে নগ্ন ছাদে
হলুদ সূর্য মুখ লুকিয়েছে নীল আকাশের কাঁধে
সেও চায় গো মিশে যেতে বিরাট আকাশের বুকে
পাশের বাড়ির বাচ্চাটা যেন কি দেখে অমন ঝুঁকে
ছোট্ট কুকুর বাচ্চাটা লেজ নাড়িয়ে ডাকে কাকে?
হয়তো সে আজ খুঁজে পেয়েছে হারিয়ে যাওয়া মাকে
আমিও কাউকে খুজেছিলাম ঠিক এমনি করেই
পাইনি দেখা আমি তার তাই দিয়েছিলাম আশা ছেড়েই
হয়তো পাবো দেখা তার কোনো এক ভোরের আলোয়
এই আশা নিয়ে ভ্রমণ করছি রাতের ঘন কালোয়
একাকিত্বই ছিল এতদিন আমার সবচেয়ে আপনজন
নিজের সাথেই আড্ডা দিয়ে কাটিয়েছি বহুক্ষন
প্রশ্ন করেছি নিজেকে আমি উত্তর দিয়েছি আমিই
কিছু প্রশ্নর পাইনি উত্তর যেগুলো ছিল বড্ড দামি
কেন এই রোদ এতো সুন্দর? কেন রাত এতো কালো?
কেন এই চাঁদে কলঙ্ক গুলো আমার লাগে ভালো?
ঝিকিমিকি ওই তারার একটা কেন যে খসে পড়ে
তার আমার মতোই দুঃখে চোখ থেকে জল ঝড়ে?
সেটা লুকাতেই ওই তারা কি আকাশ ছেড়ে পালায়?
প্রশ্ন গুলো আজও আমার বুকে বড্ড জ্বালায়
তার মাঝেই আসলে তুমি নতুন হয়ে এ বাসায়
দেখেই তোমায় লিখেছি কবিতা এই পুরানো খাতায়
এলোমেলো বাজে লেখাগুলোতে চোখ বুলাই যখন
হাসির রেখা ফুটে ওঠে আমার ঠোঁটে তখন
বলতে চাই অনেক কিছুই তোমায় প্রথম দেখায়
জমানো যত ইচ্ছে গুলো কিলবিল করে মাথায়
তারপরে ভাবি সামনে গেলে যদি তুমি পাও ভয়!
অশরীরী মোর রূপখানি যদি সেই ভয়ের কারণ হয়?
আর আসবেনা এই ছাদে তুমি দেখতে পাবনা তোমায়
তার চেয়ে বাবা এই ভালো তোমায় দেখেই কেটে যায় সময়
কখন যেন রাত্রি নামে আবার সূর্যি ওঠে
নতুন কুড়ি রূপ বদলে ফুলটি হয়ে ফোটে
তোমার পরশে ফুলগুলি যেন জীবন খুঁজে পায়
ওই স্পর্শ যদি একটু আমিও পেতাম হায়
নাই বা পেলাম সেই স্পর্শ নাই বা হলো দেখা
এইটুকু তো তোমার থেকেই আমার নতুন শেখা
আসবে কালো রাত্রি নেমে, ফুটবে দিনের আলো
দুয়ের মাঝের সময়টুকুই আমার লাগে সবচেয়ে ভালো
এই সময় ভেসে ভেসে আসবো চুপটি করে
দেখা পাবো তোমার আবার বুকটা যাবে ভোরে
হ্যা আমারও হৃদয় আছে তাতে আছো তুমি
তফাৎ শুধুই এইটকুই যা আকাশ আর এই ভূমির
আসার পর আজ প্রথমবার এই বন্ধ ঘরটা খোলা দেখলো শিপ্রা। ঢোকার পরে অনেক বই খাতার মাঝে এই খাতাটাই চোখে পড়ে ছিল শিপ্রার। পুরানো ছেঁড়া খাতাটা খোলা। যেন ওর জন্যই কেউ আগের থেকে খুলে রেখেছিলো সেটি। এগিয়ে গিয়ে খাতাটায় চোখ পড়তেই দেখতে পেয়েছিল সে একটা মেয়ের ছবি। খুবই কাঁচা হাতের পেন্সিল স্কেচ আর নিচে লেখা ওই আবোলতাবোল কিছু লাইন। কিন্তু পড়তে পড়তে কেমন যেন অদ্ভুত ভালো লাগার সাথে ভয় পাচ্ছিলো সে। যেন কেউ রয়েছে ওর পাশে। তাই আর বেশিক্ষন না থেকে বেরিয়ে এলো সে ঘরটা থেকে। কিন্তু হাতে তখনও চেপে ধরে আছে সেই পুরানো অংকের খাতাটা। বাইরে যেন খুব হাওয়া বইতে শুরু করেছে হটাৎ। না আর দাঁড়ানো ঠিক হবেনা। কাকিমা অর্থাৎ বাড়ির মালকিন ঘরটা খুলে নিচে গেছে কাগজওয়ালার সাথে কথা বলতে। হয়তো এই ঘরের অনেক বই খাতা চিরকালের মতো বিদায় নেবে। অন্তত একটা না হয় ও সাথে করে নিয়েই গেলো। এমন কি আর ক্ষতি হবে। খাতাটায় আবারো চোখ বুলিয়ে চুপচাপ নিচে নেমে গেলো শিপ্রা।
- বাবান