12-01-2023, 08:54 PM
পর্ব ২৮
পরের দিন সকালে তনিমা আর সীমা রান্নাঘরে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে, পরমদীপ রাজবীরকে বাড়ীর আশেপাশে ঘুরিয়ে নিজেদের জমি দেখাচ্ছে। সীমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কাল রাতের গাদন খেয়ে খুব খুশী, তনিমাকে হেসে জিজ্ঞেস করল, 'উফফফফ ষাঁড়টাকে সামলাও কি করে? কি বিশাল যন্তর গো?'
- পাঁচ বছর তো সামলাম, দুটো বাচ্চাও হ’ল, তনিমা হেসে জিজ্ঞেস করল, কাল খুব জ্বালিয়েছে তাই না?
- জ্বালিয়েছে মানে?
সীমা নির্লজ্জের মত শাড়ী তুলে পাছা দেখাল, তনিমা অবাক হয়ে দেখল, ওর ফর্সা পাছা এখনো লাল হয়ে আছে, পরমদীপের আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট।
- এমা, রাজবীর দেখলে কি বলবেন?
- কি আবার বলবে? ও নিজে করে না নাকি?
সীমা হেসে শাড়ী নামিয়ে দিল।
- তোমার ভাল লাগে?
- ভাল না লাগলে আবার এলাম কেন? ভাবছিলাম মাঝে মাঝে তোমার মরদটা ধার নেব।
- মাঝে মাঝে হলে আপত্তি নেই, তনিমা হেসে বলল, তবে পার্মানেন্টলি না।
- না বাবা না, মাঝে মাঝেই, পার্মানেন্টলি না, সীমা তনিমার গাল টিপে দিল।
ব্রেকফাস্ট খেয়ে রাজবীর আর সীমা চলে গেল, ক্ষেতে কাজ করে একটা লোককে ডেকে তনিমা বাসন কোসন ধুয়ে ঘরদোর পরিস্কার করতে বলল, ও আর পরমদীপ অরগ্যানিক ফার্মিং দেখতে গেল। অনেকক্ষন ঘুরে ঘুরে ওরা দেখল, খুব সুন্দর হচ্ছে সব্জীগুলো, বিশেষ করে টোম্যাটো আর ফুলকপি, পরমদীপ খুব খেটেছে। অনেক ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এখন অরগ্যানিক শাক সব্জী বেচে, ভাল দাম পাওয়া যায়, অরগ্যানিক চাল ডালেরও চাহিদা হচ্ছে।
ক্ষেত থেকে ফেরবার পথে তনিমা বলল, 'এবার খরিফে খানিকটা জমিতে অরগ্যানিক বাসমতীর চাষ করলে কেমন হয়?'
- হ্যাঁ রানী, তুই বললে নিশ্চয় করব।
- আহা শুধু আমি বলব কেন? তোমার ইচ্ছে নেই?
- অবশ্যই আছে, কিন্তু তুই না হলে আমি এইসব জানতেও পারতাম না।
- কাল রাতে সীমার খুব সুখ হয়েছে, একটু পরে তনিমা বলল।
- তুই কি করে জানলি?
- সকালে আমাকে বলল।
- তোকে সত্যি বলল?
পরমদীপ অবাক হয়ে তনিমার দিকে তাকাল।
- হ্যাঁ বলল। তনিমা পরমদীপের হাত ধরল, 'তোমার কেমন লাগল?'
- সত্যি বলব? রাগ করবি না? পরমদীপ জিজ্ঞেস করল।
তনিমা চিন্তিত হল, কথায় কথায় বলে রাগ করবি না? মানুষটা তো এ রকম ছিল না, কি হয়েছে ওর? মিষ্টি হেসে তনিমা বলল, 'কেন রাগ করব? তুমি চাইলে আবার ওদের ডাকব'
পরমদীপ খুবই খুশী হয়ে তনিমার গাল টিপে দিল, রানী আমার।
- তুমি চাইলে সীমার কাছে যেতে পার, তনিমা বলল, আমি রাগ করব না, শুধু আমার কাছে ফিরে এসো।
ওরা খেতের মধ্যে দিয়ে হেঁটে ফিরছিল, পরমদীপ তনিমাকে জড়িয়ে ধরল, 'রানী তোকে ছেড়ে আমি কোথাও যাব না'।
রাজবীর তনিমাকে রোজই এসএমএস করে, দিনে দু তিনটে, ‘সেই রাতের কথা ভুলতে পারছি না’, ‘তোমাকে খুব মিস করছি’, ‘এখন কি করছ?’ ‘ফোন করব?’ তনিমা পড়ে মিটিয়ে দেয়, জবাব দেয় না। কালকে রাতে আবার এস এম এস করেছে, ‘জরুরী দরকার, ফোন কর প্লীজ’।
সকালে অফিসে গিয়ে তনিমা ফোন করল, ওপাশে থেকে রাজবীর বলল, কি ব্যাপার এতগুলো এস.এম.এস পাঠালাম, একটারও জবাব দিলে না।
- নানান কাজে ব্যস্ত থাকি, অফিসের কাজ, বাড়ীর কাজ, আশে পাশে কেউ না কেউ থাকে, কি করে জবাব দিই বলুন?
- তুমি বলছিলে তোমাদের ধান দরকার, কতটা?
- কেন বলুন তো? তনিমা জানতে চাইল।
- ভাল বাসমতী ধান পাওয়া যাচ্ছে, দামও ঠিকঠাক, তুমি চাইলে কথা বলতে পারি।
- হ্যাঁ প্লীজ বলুন।
- তুমি আসবে তো?
- হ্যাঁ আসব, তনিমা জবাব দিল। ধান কিনতে তনিমা অবশ্য গেল না, রাজবীরের সাথে কথা পাকা করে সুরিন্দরকে পাঠাল।
সুরিন্দর যেদিন জলন্ধর যাবে, তার আগের দিন, তনিমা ওকে ডেকে বলল, সুরিন্দর তোমাকে একটা অনুরোধ করেছিলাম?
- কি ব্যাপারে ভাবী?
- অজিত আর নিশার ব্যাপারে।
- সরি ভাবী আমি খোঁজ করেছি, আপনাকে বলার সুযোগ হয়নি, মকবুলপুরার কাছে ওদের অফিস, একটা ডি অ্যাডিকশন সেন্টারও চালায়।
- তুমি নিজে গিয়েছিলে?
- নিজে কি করে যাব? ওরা আমাকে চেনে, বিশ্বস্ত লোক পাঠিয়েছিলাম।
- কেমন চলে ডি অ্যাডিকশন সেন্টার?
- যতটা বলে তেমন কিছু নয়, তাছাড়া....
সুরিন্দর ইতস্তত করছে।
- তাছাড়া কি সুরিন্দর?
- বাজারে বদনাম আছে, মুখে বলে ফ্রি ডি অ্যাডিকশন সেন্টার, কিন্ত মোটেই ফ্রি না, নানান অজুহাতে রোগীদের থেকে পয়সা নেয়।
- তার মানে পয়সার হেরাফেরি করে?
- তাইতো মনে হয়, গাড়ী আছে, ইদানীং একটা ফ্ল্যাটও কিনেছে।
- কিন্তু কাগজে খুব পাবলিসিটি পায়, যখনই আসে, কাগজের কাটিং দেখায়।
- নিশার ভাই জার্নালিস্ট, কাগজে কাজ করে।
- ঠিক আছে তুমি যাও, অজিতকে ফোন করে বল আমার সাথে একবার দেখা করতে।
সুরিন্দর যেদিন ধান কিনতে গেল, সেদিনই অজিত এলো অফিসে তনিমার সাথে দেখা করতে। ওকে দেখেই তনিমা উচ্ছসিত হয়ে বলল, 'এসো এসো, কি ব্যাপার আজ নিশা আসেনি?'
- নিশার শরীরটা ক’দিন ধরে খারাপ যাচ্ছে, তাই আসতে পারল না।
- কি হয়েছে, সিরিয়াস কিছু?
- না না সিরিয়াস কিছু না, সর্দি জ্বর, আপনি ডেকেছিলেন।
- হ্যাঁ হ্যাঁ, তোমাদের চেক রেডী করে রেখেছি, ক’দিন ধরে আমার ড্রয়ারে পড়ে আছে, তোমার আসছ না দেখে সুরিন্দরকে ফোন করতে বললাম।
তনিমা ড্রয়ার থেকে চেক বের করে এগিয়ে দিল, চেকের অঙ্কটা দেখে অজিতের মুখ খুশীতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল, টাকার অঙ্কটা কমে নি।
- থ্যাঙ্ক ইয়ু ভাবী, কি বলে ধন্যবাদ দেব বুঝতে পারছি না, অজিত বিনয়ের মুর্তি।
- ধন্যবাদ তোমার বন্ধুর প্রাপ্য, সে বলল, এমন ভাল কাজে পয়সা কমানো ঠিক হবে না।
- পরমদীপ আসে নি?
- ওর খুব আসার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু আমরা অরগ্যানিক ফার্মিং করতে গিয়ে এমন ফেঁসে গিয়েছি, বেচারা একদম সময় পায় না। কফি খাবে তো?
তনিমা উত্তরের অপেক্ষা না করেই বেয়ারাকে কফি আনতে বলল। কফি খেতে খেতে তনিমা অজিতদের কাজের কথা জিজ্ঞেস করল, অজিত খুব উৎসাহিত হয়ে কাজের কথা বলল।
কফি শেষ করে তনিমা বলল, 'খুব ভাল লাগে অজিত, যখন দেখি তোমাদের মত ইয়াং ছেলেমেয়েরা নিজেদের ক্যারিয়ার ভুলে মানুষের সেবা করছে। এইসব গরীব মানুষরা কোথায় যাবে বল, পরশুই কাগজে পড়লাম, অনেক ডি অ্যাডিকশন সেন্টার আছে, যারা মুখে বিনা মুল্যে সেবার কথা বলে আর নানান অছিলায় রোগীদের কাছ থেকে পয়সা নেয়। তোমরা নিশ্চয়ই এমন কর না?'
- না না কি বলছেন আপনি ভাবী, আমরা এইসব করিনা, অজিত জোর দিয়ে বলল বটে, কিন্তু কথাটা তনিমার কানে একেবারেই ফাঁকা শোনাল।
অজিত যাওয়ার পর তনিমা অনেকক্ষন চুপচাপ বসে রইল। অজিত আর নিশাকে প্রথম দিন দেখে তনিমার ভাল লেগেছিল, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এদের সমাজসেবাটা লোক দেখানো ব্যাপার, আড়ালে অন্য ধান্দা করে। অজিতই নিশাকে এগিয়ে দিয়েছে পরমদীপের দিকে, রাজবীরের সাথে আলাপ করিয়েছে, রাজবীর কি চায় সেটাও স্পস্ট নয়, না চাইতেই ধান যোগাড় করে দিল, আলাদা দেখা করতে চায়, সে কি শুধুই তনিমার সাথে শোওয়ার জন্য? ওদিকে সীমা বলছে পরমদীপকে ধার দাও। সুখমনি ভাবী ঠিকই বলে, এক চোখ খোলা রেখে শুবি তনু, নইলে কার ধান কে নিয়ে যাবে, টেরও পাবি না।
তনিমা ভাবল, অজিত আর নিশার এন জি ও সম্পর্কে আরো খোঁজ করা দরকার, আর রাজবীরের সাথে একবার আলাদা দেখা করবে।
জলন্ধর থেকে ফিরে সুরিন্দর বলল খুব ভাল ধান পেয়েছি ভাবী, আর দামও একদম ঠিক।
- আমাদের যতটা দরকার ছিল ততটা পাওয়া গেল?
- তার থেকেও বেশী, এ বছর হয়ে সামনের বছরের জন্য বাঁচবে।
- বাঃ, ডেলিভারী কবে দেবে?
- ট্রাক লোড করতে শুরু করেছে, আজ বিকেলের মধ্যে পৌছবে।
- তাহলে আমাদের আর কোনো চিন্তা রইল না।
- একদম না, থ্যাঙ্ক ইয়ু ভাবী।
- কিসের জন্য, তনিমা অবাক হল।
- আপনি না থাকলে ধান জোগাড় হত না।
- আরে এ তো আমাদেরই কাজ, এর জন্য থ্যাঙ্ক ইয়ু কিসের?
এক সপ্তাহ পরে অমৃতসরের এক নতুন ডিপার্টমেন্ট স্টোরের লোক এলো ওদের অরগ্যানিক ফার্ম দেখতে, পরমদীপ সকালে ব্রেকফাস্ট খেয়ে ক্ষেতে চলে গেছে, তনিমা অফিস পৌঁছে সুরিন্দরকে বলল, সুরিন্দর আজ আমায় একটা ব্যক্তিগত কাজে বেরোতে হবে, ফিরতে দেরী হবে, তুমি সামলে নেবে? কোনো ফোন এলে বোলো আমি কাজে বেরিয়েছি।
- হ্যাঁ একদম চিন্তা করবেন না, সুরিন্দর বলল।
তনিমা অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ী নিল না, একটা সাইকেল রিক্সা করে বাজারের দিকে রওনা দিল, পরমদীপ বা সুখমনি সাধারনতঃ মোবাইলে ফোন করে, মোবাইল সাথে আছে, বাজারে পৌঁছে তনিমা রিক্সা ছেড়ে দিল, সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করল, সকাল সাড়ে নটা বাজে এখনো দোকানপাট খোলেনি, একটু দূরে রাজবীরের গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে, তনিমা হেঁটে গিয়ে গাড়ীতে উঠে পড়ল। রাজবীর গাড়ী স্টার্ট করে বলল, থ্যাঙ্ক ইয়ু ডার্লিং।
তনিমা চুন্নী দিয়ে মাথাটা ঢেকে বলল, একটা কথা আছে, বাড়ী থেকে কোন ফোন এলে আমাকে তখুনি ফিরে আসতে হবে।
- চিন্তা কোরো না, আমি তোমাকে পৌঁছে দেব, রাজবীর বলল।
চিন্তার কোনো কারন ঘটল না, এক ঘন্টার মধ্যে ওরা বিয়াস পৌঁছে গেল, একটি সুন্দর চোদনের পর, রুম সার্ভিসকে বলে খাবার আনানো হয়েছে, দুজনে খেতে খেতে গল্প করছে, রাজবীর বলল, 'তনিমা, আমাদের তো একই কাজ, মিলে মিশে করলে দুপক্ষেরই সুবিধে হবে'
- মিলে মিশে মানে?
- যেমন ধর, জলন্ধরে আমার চেনাশোনা বেশী, এখানে ধান কেনা, গোডাউনের ব্যবস্থা আমরা করলাম, এদিককার মার্কেটটা আমরা দেখলাম, তোমরা অমৃতসরের দিকটা দেখলে, তোমাদের বিদেশে যোগাযোগ বেশী, রপ্তানির ব্যাপারে তোমরা আমাদের সাহায্য করলে। আমি চাইছিলাম আমাদের সম্পর্কটা আরো মজবুত হোক, রাজবীর বলল।
তনিমার মনে হল বেড়ালটা থলের ভেতর থেকে উঁকি মারছে কিন্তু বেরোচ্ছে না, একটু চিন্তা করে বলল, 'আপনার আইডিয়াটা ভাল তবে আমার মনে হয় এই প্রস্তাবটা আপনার পরমদীপকে দেওয়া উচিত'।
- সবাই জানে ব্যবসা তুমি চালাও তনিমা, পরমদীপের খুব একটা ইন্টারেস্ট আছে বলে মনে হয় না।
- না সেটা মোটেই ঠিক না, ক্ষেতের কাজ দেখবার পর ও একদম সময় পায় না, একা সুরিন্দরের পক্ষে ব্যবসা সামলানো সম্ভব না, তাই আমি সাহায্য করি। আপনি পরমদীপকে বলুন, আমার মনে হয় ও রাজী হবে।
সন্ধ্যার আগেই তনিমা অমৃতসর ফিরে এল।
তনিমা রাজবীরের সাথে বিয়াস ঘুরে আসার কয়েকদিন পরেই পরমদীপ তনিমাকে বলল, 'রানী আজ রাজবীর ভাইসাহেব ফোন করেছিল'
- কি ব্যাপার? আবার আসতে চায় বুঝি?
- সে তো চায়ই, কিন্তু আজ অন্য কথাও হল।
- কি কথা?
- রাজবীর ভাইসাহেব বলছিল, ব্যবসার ব্যাপারে আমরা একে অপরকে সাহায্য করতে পারি।
- কি রকম সাহায্য?
- ওরা আমাদের জলন্ধর থেকে ধান কিনতে সাহায্য করবে, ওদিককার হোলসেলারদের সাথে কথা বলিয়ে দেবে, ওদের অনেক চেনাশোনা।
- আর আমাদের কি করতে হবে?
- তোর বিদেশে অত যোগাযোগ, তুই কেভিনকে বলে ওদের চাল এক্সপোর্টে সাহায্য করে দিবি।
- তুমি কি বললে?
- আমি বললাম, তোর সাথে কথা বলতে, কোম্পানীর ব্যাপারে সব কিছু তুইই ঠিক করিস।
'তুমি এই কথা বললে? এটা আমার বাবার কোম্পানী?', তনিমা ঝাঁঝিয়ে উঠল।
- রানী তুই রেগে যাস কেন? কোম্পানীর কাজ তুই দেখিস, তাই তোর সাথে কথা বলতে বললাম, আর তাছাড়া....
- তাছাড়া কি?
- কোম্পানী তোর, জমি তোর, আমিও তোর, পরমদীপ তনিমাকে জড়িয়ে ধরল, তুই আমাদের সবার মালকিন, পিতাজী, ভাবী, আমি সবাই তোর কথা শুনি, শুনিনা বল?
তনিমা নরম হয়ে জিজ্ঞেস করল, 'তোমার কি মনে হয় রাজবীরদের সাথে কাজ করলে আমাদের সুবিধা হবে?'
- বাঃ তুই তো বলিস মিলে ধান নেই, রাজবীর ভাইসাহেবকে বললেই জলন্ধরের মন্ডী থেকে ধান যোগাড় করে দেবে।
- সে কি বিনা মুল্যে দেবে না কি? তার বদলে যে বিদেশের কন্ট্যাক্টসগুলো চাইছে? এত বছর ধরে তৈরী করা হয়েছে কন্ট্যাক্টসগুলো, সেই সোমেন শুরু করেছিল।
- আহা একটা দুটো দিলে কি আর হবে? আর এ সব তুই আমার থেকে ভাল বুঝিস, তুই যা ভাল বুঝবি তাই কর, আমি তোর মোবাইল নম্বর রাজবীরকে দিয়েছি, পরমদীপ বলল।
- বাঃ নিজের বৌয়ের মোবাইল নম্বর রাজবীরকে দিলে, সে যদি আমার সাথে শুতে চায়?
- আগে সীমাকে আমার কাছে পাঠাতে বলবি, পরমদীপ হেসে তনিমাকে আদর করতে শুরু করল, ঘাড়ে গলায় চুমু খাচ্ছে, মাই টিপছে।
পরমদীপের আদরে গলে যেতে যেতে তনিমার মনে হল, ইস আমার এই পাগল স্বামীটার মাথায় যদি একটু ব্যবসা বুদ্ধি থাকতো!....
বৈশাখীর দিন ওদের নতুন অফিসের উদ্বোধন হল, অনেকদিন পরে তনিমা আজ শাড়ী পরেছে। সিল্কের শাড়ী, লাল পাড়, ঘিয়ে রঙের জমি, লাল ব্লাউজ, কপালে লাল টিপ, সবাই বার বার ওকে দেখছে।
'শাড়ী পরলে তোকে এত সুন্দর দেখায় আমি জানতাম না', পরমদীপ ফিস ফিস করে বলল।
- তুমিই তো পরতে দাও না, মনে আছে বলেছিলে শাড়ী পরলে আমাকে বুড়ী দেখায়।
- ভুল বলেছিলাম রানী, বলে পরমদীপ কান ধরার ভঙ্গি করল।
সুখমনিও আজ সেজেছে, নতুন সালোয়ার কামিজ পরেছে, মেক আপ করেছে। এই নিয়ে সকালবেলা দুই জায়ে একটু ঝগড়া হয়েছে, সুখমনি কিছুতেই সাজবে না, তনিমা সাজাবেই, গুরদীপজীও তনিমার পক্ষ নিলেন, বললেন, ছোটি যা বলছে তাই কর না?
সুখমনি তাও রাজী হয় না, বলে বুড়ি মেয়েমানুষ সেজেগুজে গেলে লোকে পাগল ভাববে, কিন্তু যেই পিঙ্কি বলল, বড়মা তুমি তনুর কথা শুনছ না কেন, অমনি সুখমনি সুড় সুড় করে সাজতে গেল। সুখমনির দেখাদেখি পিঙ্কিও তনিমাকে তনু বলে ডাকে।
অফিসের সামনে ম্যারাপ বেঁধে আয়োজন করা হয়েছে, প্রথমে যজ্ঞ, তারপরে খাওয়া দাওয়া। গুরদীপজীর বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন, অফিস, মিলের কর্মচারী, তাদের পরিবার, ব্যবসার ব্যাপারে যাদের সাথে যোগাযোগ তারা সবাই, রাজবীর, সীমা, এমনকি অজিত আর নিশাও এসেছে। সবাই নতুন অফিসের খুব প্রসংশা করছে, গুরদীপজী বলছেন সবই ছোটি বহু করেছে, তনিমাকে নিজের বন্ধু বান্ধব, বিশেষ করে রাজনীতি আর অফিসার মহলের লোকেদের সাথে আলাপ করিয়ে দিলেন, বললেন সবার সাথে আলাপ করে রাখ ছোটী, কখন কার সাহায্য লাগবে বলা যায় না। পরমদীপ আর সুরিন্দর অতিথিদের আপ্যায়ন করছে, পিঙ্কি আর কুলদীপ মন্ডপ জুড়ে ছুটোছুটি করছে, পেছন পেছন সুখমনি দৌড়চ্ছে।
রাতে তনিমা পরমদীপের কাছে আবদার করল, 'কতদিন বেড়াতে যাওয়া হয় না, চল সবাই মিলে কোথাও ঘুরে আসি'
- সবাই মিলে মানে?
- পিতাজী, মাতাজী, ভাবী, বাচ্চারা, তুমি, আমি।
- ওরে বাব্বা এত লট বহর নিয়ে? আমি, তুই আর বাচ্চারা ঘুরে আসি।
- ভাবী বাচ্চা দুটোর জন্য পাগলের মত করে, ভাবীকে বাদ দিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না, আর পিতাজী মাতাজী না গেলে ভাবীও যাবে না।
- ঠিক আছে, তুই পিতাজীকে বল, আমি বললে রাজী হবে না, পরমদীপ বলল।
গুরদীপজী প্রথমে রাজী হলেন না, এই বুড়ো বয়সে আমার ছুটো ছুটি পোষাবে না, ছোটি তোরা যা।
- আপনি না গেলে ভাবী যাবে না, আমরাও যাব না। আমি আপনার সব কথা শুনি, আর আপনি আমার এই সামান্য কথাটা শুনবেন না?
গুরদীপজী আর কিছু বললেন না, সুখমনি শুনে খুব খুশী হয়ে বলল, তুই পারিস বটে তনু। আর সেই মত তনিমাদের পুরো পরিবার ডালহৌসী ঘুরে এল।
ডালহৌসী থেকে ফেরবার পর একদিন সুখমনি তনিমাকে বলল, তোর সাথে একটা কথা ছিল তনু।
- কি ভাবী?
- তোকে একটা ছেলে দেব, তোর অফিসে ওকে রাখবি?
- এভাবে বলছ কেন ভাবী? ওটা কি আমার একার অফিস? তুমি বললে নিশ্চয় রাখব, ছেলেটা কে?
- যোগিন্দর, জারনেল সিংয়ের ছেলে।
- ওই গুন্ডার মত দেখতে ছেলেটা? ও কি কাজ করবে?
- অমন বলিস না, ছেলেটা খুব ভাল, খুব বিশ্বাসী, তোর সব কথা শুনবে, তুই যা বলবি তাই করবে।
তনিমা চুপ করে আছে, পড়াশুনা জানে না, পালোয়ানি করে বেড়ায়, ওই ছেলেকে কি কাজ দেবে?
সুখমনি বলল, অন্য কিছু ভাবিস না তনু, ব্যবসার কাজে তোকে হাজার রকম লোকের সাথে দেখা করতে হয়, কার মনে কি আছে কে জানে? হাতের কাছে একটা নিজের লোক থাকলে ভরসা পাবি।
পরমদীপকে কথাটা বলতেই সে হো হো করে হেসে উঠে বলল, 'ভাবী তোকে বডিগার্ড দিল, দেখিস আমাকেই না একদিন পিটিয়ে দেয়?'
আর সেই মত যোগিন্দর অফিসে যোগ দিল। কাজ তার পিয়নের আর তনিমার ফাইফরমাশ খাটার।