11-01-2023, 07:02 PM
পার্ট :০৩
স্নেহা পরে আছে ফ্লোরে হাত দিয়ে অজস্র রক্ত ঝরছে, ফ্লোরটার একটা অংশ স্নেহার রক্তে মেখে গিয়েছে,,,
স্নেহার বাবা আর মা দুজনেই স্নেহার কাছে গিয়ে স্নেহাকে ডাকতে থাকলো,
- স্নেহা মামনি কথা বলো, স্নেহা।
কিন্তু স্নেহার কোনো জ্ঞান নেই, রুদ্র স্নেহাকে ধরতে যাবে ঠিক তখনি,
- তুই আমার মেয়ের কাছে আসবি না, তোর জন্য আজ আমার মেয়েটার এ অবস্থা। আমি তোকে ছাড়বো না,
- কে কাকে ছাড়বে না, ধরে রাখবে তা পরেও দেখা যাবে আগে ওর জান টা বাচুক। রুদ্র স্নেহাকে কোলে করে বেড়িয়ে গেলো, আর পেছনে পেছনে স্নেহার বাবা মা ও।
রুদ্র স্নেহাকে স্নেহার মায়ের কোলে শুইয়েই গাড়ি স্টার্ট দিলো, আর পাশে বসে আছে স্নেহার বাবা।
হাসপাতালে পৌছেই স্নেহাকে ডাঃ ভেতরে নিয়ে ট্রিটমেন্ট করতে শুরু করলো,,
রাত ৯ টা,,
স্নেহা ঘুমিয়ে আছে, অনেক রক্ত বের হয়েছে আর একটুর জন্য হাতের রগ টা কাটেনি। যদি কাটতো তবে ভয়াবহ কিছু হয়ে যেত। স্নেহাকে ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়েছে,,, এখন ঘুমাচ্ছে,
কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র,
কাচ ভেদ করে প্রিয় মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, খুব ইচ্ছা করছে প্রিয় মানুষটার পাশে গিয়ে বসতে, কিন্তু চাইতেও পারছে না সে।
কোথাও বা কোথাও এসবের জন্য তো সেই দায়ী,,,
২ বছর আগে যখন সে স্নেহাকে প্রায় পাগলের মতো ভালোবাসতো। যে ভালোবাসায় ছিলোনা কোনো প্রতিশোধের আগুন তখন স্নেহার একটুখানি কেটে গেলেও রুদ্রের যেন ঘুম হারাম হয়ে যেত, আর আজ সেই ভালোবাসার মানুষটার শরীর থেকেই অঝোরে রক্ত ঝরেছে। সে তো রক্ত ঝরিয়ে কোনো প্রতিশোধ নিতে চায়নি, সে তো চেয়েছে অন্তর থেকে অন্তরের প্রতিশোধ। কারন তার ভালোবাসার মানুষটাকে সেই অন্তর দিয়ে ক্ষত করবে , আবার সেই অন্তরেই সে নিজের ভালোবাসার মলম লাগাবে, কিন্তু আজ তো অন্য কিছুই হয়ে গেলো, শারীরিক যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছে তার ভালোবাসা আর সে নিজের চোখে দেখেও কিছু করতে পারছে না।
রুদ্রের অজান্তেই তার চোখ দিয়ে দু- ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো, আজ অনেকদিন পর কাদলো রুদ্র,
২ বছর হাজার বার কাদার চেষ্টা করেও কাঁদতে পারেনি, তবে আজ না চাইতেও কেঁদে ফেললো।
সকালের মিষ্টি রোদ স্নেহার মুখে এসে পড়ছে, চোখ টিপ,টিপ করেই চোখ খুলছে স্নেহা।
স্নেহার মনে হলো তার হাতের ওপরে অন্য কোনো হাত স্পর্শ করে আছে,
পাশে তাকাতেই স্নেহা রুদ্রকে দেখলো,,,
- পাপা, পাপা, মামোনি। ( বলেই চিৎকার করছে স্নেহা।
- কি হয়েছে আমাকে বলো, কি সমস্যা বলো।
- পাপা, পাপা আমাকে বাচাও পাপা( কান্না করে স্নেহা ডাকছে তার বাবাকে)
- প্লিজ স্নেহা আমাকে বলো কি হয়েছে,
রুদ্রের কথার কোনো উত্তর দিচ্ছেনা স্নেহা।
স্নেহার চিৎকার শুনে স্নেহার বাবা, মা, নার্স সবাই হাজির।
- কি হয়েছে মামনি? কি হয়েছে?( স্নেহার বাবা)
- পাপা এই লোকটা আমাকে বাচাও পাপা, এই লোকটাকে যেতে বলো। প্লিজ পাপা।( অনেক কান্না করে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলছে স্নেহা)
- তুই কেবিনে কি করে এলি? কাল রাতে আমি তোকে কতো বার চলে যেতে বলাম? তুই কেন এসেছিস আমার মেয়ের কাছে?( কথাগুলো স্নেহার বাবা রাগে গজগজ করতে করতে রুদ্রকে বলছে)
কাল রাতে,
রুদ্রকে অনেকবার অনেক অপমান করে বের করে দিতে চেয়েছে স্নেহার বাবা, কিন্তু স্নেহাকে ছেড়ে সে যায়নি। আর কাল মন খারাপ ছিলো তার স্নেহার এ অবস্থা মেনে নিতে পারছিলোনা সে তাই সব অপমান মুখ বুজে সয়ে নিয়েছে,
সারারাত ঘুমায়নি রুদ্র, ভোরের দিকে স্নেহার কেবিনে যায়, স্নেহার দিকে তাকিয়ে থাকতে, থাকতে স্নেহার হাত ধরেই ঘুমিয়ে পড়ে রুদ্র। কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেই জানে না। আর ঘুম ভাঙে স্নেহার চেঁচামেচিতে।
- আপনার মেয়ে মানে? কাল রাতে আপনাকে কিছু বলিনি কারন স্নেহা অসুস্থ ছিলো, আমি বুঝতে পেরেছিলাম বাবা হিসেবে আপনার মন মেজাজ কতোটা খারাপ ছিলো, আর একি অবস্থা ছিলো আমারো, তাই আপনার সব অপমান মুখ বুজে মেনে নিয়েছি। কিন্তু ভাববেন না আমার সাথে যা ইচ্ছা তা করবেন আর আমি মেনে নেবো!!!
কাল প্রেস আর মিডিয়ার সামনে আপনি নিজের মুখে স্বীকার করেছে হে স্নেহা আমার বউ। হাসবেন্ড হিসেবে নিজের ওয়াইফ এর কাছে আসার সব ধরনের রাইট আমার আছে, আপনাদের থেকেও বেশি অধিকার আমার। আর আপনি আমাকে আমার ওয়াইফ এর কাছে আসা নিয়ে প্রশ্ন করছেন? কোন সাহসে???( রাগে লাল হয়ে কথাগুলো বললো রুদ্র)
- রুদ্রের কথা শুনে আফজাল খানের মুখ যেন একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে, আর কিছু বলার কোনো উপায় নেই, কারন এখন বেশি বাড়াবাড়ি করলে রুদ্র যে সব ওলট পালট করে দেবে তা বেশ ভালো করেও জানা আছে আফজাল খানের।
রুদ্র স্নেহার বাবাকে কথা বলেই, স্নেহার কাছে গেলো, স্নেহা তখনো তার বাবাকে বাচ্চাদের মতো আকরে ধরে আছে,,
- আর এই যে তুমি? কাল অনেক অনেক বড় অন্যায় করেছো! এটা করা তোমার ঠিক হয়নি। আমার অনেক রাতের ঘুম কেড়েছো তুমি, কিন্তু কাল আমার মনে হচ্ছিলো আমার প্রানটাই বেড়িয়ে যাবে, সারারাত তোমার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করছিলাম। আজ তোমার জ্ঞান ফিরেছে আমি নতুন করে আমার প্রান ফিরে পেলাম, আর আজকের পরে যদি কালকের মতো কিছু করার চেষ্টাও করো তবে তার ফল অনেক খারাপ হবে,
আর আমাকে দেখে এতো ভয় কেনো পাচ্ছো? ভয় নেই তোমার কোনো ক্ষতি করবো না,তোমাকে বুকে আগলে রাখবো।
স্নেহা ভয়ে গুটিসুটি মেরে আছে
রুদ্র তার কথাগুলো বলা শেষ করেই বের হয়ে গেলো, রাগে যেন তার মাথা ফেটে যাচ্ছে,
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে রুদ্র বাড়ির দিকে রওনা হলো,
বাসায় পৌছেই হাতের সামনে যা পাচ্ছে তাই ভেঙে চুরে একাকার করে দিচ্ছে রুদ্র,
- মেয়েটাকে ভালোবেসে শুধু কষ্টই পেলাম, কাল সারারাত কি অবস্থা পার করেছি তা শুধু আমি জানি আর আজ সকালেই আমাকে দেখতেই ও এমন ভাবে চিৎকার করলো, কেনো।
ও কি বোঝেনা আমি ওকে কতোটা ভালোবাসি ও কি বোঝেনা ওকে আমি নিজের বুকে আগলে রাখতে চাই।
কথাগুলো বলছে আর সব কিছু ভাঙচুর করছে রুদ্র, একটা ফুলদানি ভাঙতেই ফুলদানি থেকে ছিটকে আসা একটা কাচের কোনা রুদ্রের কপালে এসে সামান্য কেটে গেলো, কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই রুদ্রের,,,
- স্যার এসব কি করছেন?( আশিস)
- রুদ আশিসকে দেখেই বলতে শুরু করলো, আশিস মেয়েটা আমার ভালোবাসা বোঝেনা। ও আমাকে কখনো বোঝেনা।
- স্যার প্লিজ থামুন, ম্যাম একদিন বুঝবে। আর আপনার কপাল কেটে গেছে।
শিস অনেক বুঝিয়ে রুদ্রের মাথায় ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো,
সারারাত ঘুম হয়নি তাই বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই চোখে ঘুম চলে আসলো রুদ্রের।
৩ ঘন্টা পর ঘুম ভাঙলো রুদ্রের,
ঘুম ভেঙেই তার স্নেহার কথা মনে পরলো, তাই সে আবার হাসপাতালের উদ্দেশ্য করে বেড়িয়ে গেলো,
কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারলো ১ ঘন্টা আগেই স্নেহাকে ছেরে দেয়া হয়েছে।
তাই রুদ্র আবার স্নেহাদের বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
- এমন কেনো করলে মামনি?তোমার কিছু হলে তোমার পাপা কতো কষ্ট হয় তুমি জানোনা?( স্নেহার বাবা স্নেহাকে কথাগুলো বলছে)
- পাপা আমার জন্য তোমার অনেক সম্মানহানি হয়েছে,
- না মা তোমার জন্য কিছু হয়নি যা হয়েছে ওই রাসকেল টার জন্য।
কলিংবেল বাজতেই বুয়া দরজা খুললো,,
রুদ্র সোজা স্নেহার রুমে চলে গেলো, রুদ্রকে দেখে স্নেহা আগের মতোই ভয়ে চুপসে গেলো, স্নেহার বাবা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি রুদ্রের সকালে বলা কথাগুলো মনে পড়লো তার,
- আপনারা একটু বাহিরে জান, আমি আপনার মেয়ের একটু আলাদা সময় কাটাতে চাই।
- আশরাফ খানের ইচ্ছা করছে রুদ্রকে যেয়ে দুটো চড় দিতে, কতোবড় বেয়াদব হলে কেও বাবা মায়ের সামনে বলে মেয়ের সাথে আলাদা সময় কাটাতে চায়,, তাও সে কিছু বলতে পারছে না।
- কিন্তু ও তো তোমাকে দেখলেই ভয় পায়( স্নেহার মা বললো)
- আপনারা চিন্তা করবে না, আজ ওর সব ভয় কাটিয়ে যাবো! চিন্তা করবেন না সারাজীবন তো আমার সাথেই কাটাতে হবে, এখন ভয় না কাটলে।কিভাবে হবে।
কেও আর কোনো কথা বাড়ালো না,স্নেহার মা বাবা বেড়িয়ে গেলো স্নেহা বাবাকে অনেকবার শক্ত করে ধরেছে,তবুও তাদের কিছু করার ছিলোনা।
স্নেহার বাবা মা বেড়িয়ে যেতেই রুদ্র স্নেহার পাশে গিয়ে বসলো, বালিশ আকরে গুটিসুটি হয়ে আছে স্নেহা।
- এখন কেমন লাগছে? ব্যাথা আছে?
- স্নেহা চুপ করে আছে,
- জান প্লিজ কথা বলো! এভাব চুপ করে থেকোনা। কাল কেনো এমন করলা? যদি কিছু হয়ে যেত?
- আমার কিছু হলে আপনার কি, বেড়িয়ে যান এখান থেকে,,,
- আমি যেতে আসিনি, রুদ্র স্নেহার আরো কাছে ঘেসে বসলো।
- আপনি আমার কাছে আসবেন না,,,
-স্নেহা আমার কথা শোনো প্লিজ,
- না আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাইনা, বেড়িয়ে যান ( চিৎকার করে বললো স্নেহা)
- স্নেহাকে অনেকবার বোঝানোর পর ও যখন স্নেহা কিছু বুঝতে চাইলো না, এবংকি রুদ্রের কোনো কথা শুনতেই সে প্রস্তুত না।
তখন রুদ্র বেস রেগে গেলো,,,
স্নেহার দুই গাধে শক্ত করে হাত রেকে স্নেহাকে ঝাকিয়ে,ঝাঁকিয়ে বলতে লাগলো
- আমাকে দেখে এমন করছো কেনো তুমি? ভালো ব্যাবহার করছি ভালো লাগছে না??? তুমিকি জানো বাকিটা জীবন তোমার এই রুদ্রের সাথেই থাকতে হবে,, তুমি না চাইলেও হবে।
- আমি মরে যাবো তবুও তোর মতো জানোয়ারের সাথে কখনো থাকবোনা,
- ঠাসসসসসসস( রুদ্র) স্নেহাকে এক থাপ্পড় দিয়ে নিচে ফেলে দিলো, তার সামলাতে না পেরে বিছানায় পরে গেলো স্নেহা,
রাগে যেন রুদ্রের মাথায় আগুন জ্বলছে, রুদ্র স্নেহাকে বিছানা থেকে উঠিয়ে আবার বসালো আর বলতে শুরু করলো,
- এই জানোয়ারের সাথে তোর সারাজীবন থাকতে হবে, একি রুমে একি বিছানায়। প্রতিটা সময় এই জানোয়ারের সবটুকু জুরে তুই থাকবি। বলেই রুদ্র স্নেহার ঠোটে ৎোট ডুবিয়ে দিলো,
স্নেহা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না, প্রায় ৫ মিনিট পর স্নেহাকে ছেড়েই বেড়িয়ে গেলো, রুদ্র।
ড্রয়িং রুনে স্নেহার মা, বাবাকে দেখতে পেয়েই রুদ্র বললো,
- কাল পরশু বিয়ের ব্যাবস্থা করুন, আপনাদের মেয়ের অনেক তেজ। ওকে এখানে আর রাখতে চাইনা।
বলেই বেড়িয়ে গেলো রুদ্র।
( নেক্সট পর্বেই আসল ধামাকা?)
চলবে,
স্নেহা পরে আছে ফ্লোরে হাত দিয়ে অজস্র রক্ত ঝরছে, ফ্লোরটার একটা অংশ স্নেহার রক্তে মেখে গিয়েছে,,,
স্নেহার বাবা আর মা দুজনেই স্নেহার কাছে গিয়ে স্নেহাকে ডাকতে থাকলো,
- স্নেহা মামনি কথা বলো, স্নেহা।
কিন্তু স্নেহার কোনো জ্ঞান নেই, রুদ্র স্নেহাকে ধরতে যাবে ঠিক তখনি,
- তুই আমার মেয়ের কাছে আসবি না, তোর জন্য আজ আমার মেয়েটার এ অবস্থা। আমি তোকে ছাড়বো না,
- কে কাকে ছাড়বে না, ধরে রাখবে তা পরেও দেখা যাবে আগে ওর জান টা বাচুক। রুদ্র স্নেহাকে কোলে করে বেড়িয়ে গেলো, আর পেছনে পেছনে স্নেহার বাবা মা ও।
রুদ্র স্নেহাকে স্নেহার মায়ের কোলে শুইয়েই গাড়ি স্টার্ট দিলো, আর পাশে বসে আছে স্নেহার বাবা।
হাসপাতালে পৌছেই স্নেহাকে ডাঃ ভেতরে নিয়ে ট্রিটমেন্ট করতে শুরু করলো,,
রাত ৯ টা,,
স্নেহা ঘুমিয়ে আছে, অনেক রক্ত বের হয়েছে আর একটুর জন্য হাতের রগ টা কাটেনি। যদি কাটতো তবে ভয়াবহ কিছু হয়ে যেত। স্নেহাকে ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়েছে,,, এখন ঘুমাচ্ছে,
কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র,
কাচ ভেদ করে প্রিয় মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, খুব ইচ্ছা করছে প্রিয় মানুষটার পাশে গিয়ে বসতে, কিন্তু চাইতেও পারছে না সে।
কোথাও বা কোথাও এসবের জন্য তো সেই দায়ী,,,
২ বছর আগে যখন সে স্নেহাকে প্রায় পাগলের মতো ভালোবাসতো। যে ভালোবাসায় ছিলোনা কোনো প্রতিশোধের আগুন তখন স্নেহার একটুখানি কেটে গেলেও রুদ্রের যেন ঘুম হারাম হয়ে যেত, আর আজ সেই ভালোবাসার মানুষটার শরীর থেকেই অঝোরে রক্ত ঝরেছে। সে তো রক্ত ঝরিয়ে কোনো প্রতিশোধ নিতে চায়নি, সে তো চেয়েছে অন্তর থেকে অন্তরের প্রতিশোধ। কারন তার ভালোবাসার মানুষটাকে সেই অন্তর দিয়ে ক্ষত করবে , আবার সেই অন্তরেই সে নিজের ভালোবাসার মলম লাগাবে, কিন্তু আজ তো অন্য কিছুই হয়ে গেলো, শারীরিক যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছে তার ভালোবাসা আর সে নিজের চোখে দেখেও কিছু করতে পারছে না।
রুদ্রের অজান্তেই তার চোখ দিয়ে দু- ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো, আজ অনেকদিন পর কাদলো রুদ্র,
২ বছর হাজার বার কাদার চেষ্টা করেও কাঁদতে পারেনি, তবে আজ না চাইতেও কেঁদে ফেললো।
সকালের মিষ্টি রোদ স্নেহার মুখে এসে পড়ছে, চোখ টিপ,টিপ করেই চোখ খুলছে স্নেহা।
স্নেহার মনে হলো তার হাতের ওপরে অন্য কোনো হাত স্পর্শ করে আছে,
পাশে তাকাতেই স্নেহা রুদ্রকে দেখলো,,,
- পাপা, পাপা, মামোনি। ( বলেই চিৎকার করছে স্নেহা।
- কি হয়েছে আমাকে বলো, কি সমস্যা বলো।
- পাপা, পাপা আমাকে বাচাও পাপা( কান্না করে স্নেহা ডাকছে তার বাবাকে)
- প্লিজ স্নেহা আমাকে বলো কি হয়েছে,
রুদ্রের কথার কোনো উত্তর দিচ্ছেনা স্নেহা।
স্নেহার চিৎকার শুনে স্নেহার বাবা, মা, নার্স সবাই হাজির।
- কি হয়েছে মামনি? কি হয়েছে?( স্নেহার বাবা)
- পাপা এই লোকটা আমাকে বাচাও পাপা, এই লোকটাকে যেতে বলো। প্লিজ পাপা।( অনেক কান্না করে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলছে স্নেহা)
- তুই কেবিনে কি করে এলি? কাল রাতে আমি তোকে কতো বার চলে যেতে বলাম? তুই কেন এসেছিস আমার মেয়ের কাছে?( কথাগুলো স্নেহার বাবা রাগে গজগজ করতে করতে রুদ্রকে বলছে)
কাল রাতে,
রুদ্রকে অনেকবার অনেক অপমান করে বের করে দিতে চেয়েছে স্নেহার বাবা, কিন্তু স্নেহাকে ছেড়ে সে যায়নি। আর কাল মন খারাপ ছিলো তার স্নেহার এ অবস্থা মেনে নিতে পারছিলোনা সে তাই সব অপমান মুখ বুজে সয়ে নিয়েছে,
সারারাত ঘুমায়নি রুদ্র, ভোরের দিকে স্নেহার কেবিনে যায়, স্নেহার দিকে তাকিয়ে থাকতে, থাকতে স্নেহার হাত ধরেই ঘুমিয়ে পড়ে রুদ্র। কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেই জানে না। আর ঘুম ভাঙে স্নেহার চেঁচামেচিতে।
- আপনার মেয়ে মানে? কাল রাতে আপনাকে কিছু বলিনি কারন স্নেহা অসুস্থ ছিলো, আমি বুঝতে পেরেছিলাম বাবা হিসেবে আপনার মন মেজাজ কতোটা খারাপ ছিলো, আর একি অবস্থা ছিলো আমারো, তাই আপনার সব অপমান মুখ বুজে মেনে নিয়েছি। কিন্তু ভাববেন না আমার সাথে যা ইচ্ছা তা করবেন আর আমি মেনে নেবো!!!
কাল প্রেস আর মিডিয়ার সামনে আপনি নিজের মুখে স্বীকার করেছে হে স্নেহা আমার বউ। হাসবেন্ড হিসেবে নিজের ওয়াইফ এর কাছে আসার সব ধরনের রাইট আমার আছে, আপনাদের থেকেও বেশি অধিকার আমার। আর আপনি আমাকে আমার ওয়াইফ এর কাছে আসা নিয়ে প্রশ্ন করছেন? কোন সাহসে???( রাগে লাল হয়ে কথাগুলো বললো রুদ্র)
- রুদ্রের কথা শুনে আফজাল খানের মুখ যেন একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে, আর কিছু বলার কোনো উপায় নেই, কারন এখন বেশি বাড়াবাড়ি করলে রুদ্র যে সব ওলট পালট করে দেবে তা বেশ ভালো করেও জানা আছে আফজাল খানের।
রুদ্র স্নেহার বাবাকে কথা বলেই, স্নেহার কাছে গেলো, স্নেহা তখনো তার বাবাকে বাচ্চাদের মতো আকরে ধরে আছে,,
- আর এই যে তুমি? কাল অনেক অনেক বড় অন্যায় করেছো! এটা করা তোমার ঠিক হয়নি। আমার অনেক রাতের ঘুম কেড়েছো তুমি, কিন্তু কাল আমার মনে হচ্ছিলো আমার প্রানটাই বেড়িয়ে যাবে, সারারাত তোমার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করছিলাম। আজ তোমার জ্ঞান ফিরেছে আমি নতুন করে আমার প্রান ফিরে পেলাম, আর আজকের পরে যদি কালকের মতো কিছু করার চেষ্টাও করো তবে তার ফল অনেক খারাপ হবে,
আর আমাকে দেখে এতো ভয় কেনো পাচ্ছো? ভয় নেই তোমার কোনো ক্ষতি করবো না,তোমাকে বুকে আগলে রাখবো।
স্নেহা ভয়ে গুটিসুটি মেরে আছে
রুদ্র তার কথাগুলো বলা শেষ করেই বের হয়ে গেলো, রাগে যেন তার মাথা ফেটে যাচ্ছে,
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে রুদ্র বাড়ির দিকে রওনা হলো,
বাসায় পৌছেই হাতের সামনে যা পাচ্ছে তাই ভেঙে চুরে একাকার করে দিচ্ছে রুদ্র,
- মেয়েটাকে ভালোবেসে শুধু কষ্টই পেলাম, কাল সারারাত কি অবস্থা পার করেছি তা শুধু আমি জানি আর আজ সকালেই আমাকে দেখতেই ও এমন ভাবে চিৎকার করলো, কেনো।
ও কি বোঝেনা আমি ওকে কতোটা ভালোবাসি ও কি বোঝেনা ওকে আমি নিজের বুকে আগলে রাখতে চাই।
কথাগুলো বলছে আর সব কিছু ভাঙচুর করছে রুদ্র, একটা ফুলদানি ভাঙতেই ফুলদানি থেকে ছিটকে আসা একটা কাচের কোনা রুদ্রের কপালে এসে সামান্য কেটে গেলো, কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই রুদ্রের,,,
- স্যার এসব কি করছেন?( আশিস)
- রুদ আশিসকে দেখেই বলতে শুরু করলো, আশিস মেয়েটা আমার ভালোবাসা বোঝেনা। ও আমাকে কখনো বোঝেনা।
- স্যার প্লিজ থামুন, ম্যাম একদিন বুঝবে। আর আপনার কপাল কেটে গেছে।
শিস অনেক বুঝিয়ে রুদ্রের মাথায় ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো,
সারারাত ঘুম হয়নি তাই বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই চোখে ঘুম চলে আসলো রুদ্রের।
৩ ঘন্টা পর ঘুম ভাঙলো রুদ্রের,
ঘুম ভেঙেই তার স্নেহার কথা মনে পরলো, তাই সে আবার হাসপাতালের উদ্দেশ্য করে বেড়িয়ে গেলো,
কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারলো ১ ঘন্টা আগেই স্নেহাকে ছেরে দেয়া হয়েছে।
তাই রুদ্র আবার স্নেহাদের বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
- এমন কেনো করলে মামনি?তোমার কিছু হলে তোমার পাপা কতো কষ্ট হয় তুমি জানোনা?( স্নেহার বাবা স্নেহাকে কথাগুলো বলছে)
- পাপা আমার জন্য তোমার অনেক সম্মানহানি হয়েছে,
- না মা তোমার জন্য কিছু হয়নি যা হয়েছে ওই রাসকেল টার জন্য।
কলিংবেল বাজতেই বুয়া দরজা খুললো,,
রুদ্র সোজা স্নেহার রুমে চলে গেলো, রুদ্রকে দেখে স্নেহা আগের মতোই ভয়ে চুপসে গেলো, স্নেহার বাবা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি রুদ্রের সকালে বলা কথাগুলো মনে পড়লো তার,
- আপনারা একটু বাহিরে জান, আমি আপনার মেয়ের একটু আলাদা সময় কাটাতে চাই।
- আশরাফ খানের ইচ্ছা করছে রুদ্রকে যেয়ে দুটো চড় দিতে, কতোবড় বেয়াদব হলে কেও বাবা মায়ের সামনে বলে মেয়ের সাথে আলাদা সময় কাটাতে চায়,, তাও সে কিছু বলতে পারছে না।
- কিন্তু ও তো তোমাকে দেখলেই ভয় পায়( স্নেহার মা বললো)
- আপনারা চিন্তা করবে না, আজ ওর সব ভয় কাটিয়ে যাবো! চিন্তা করবেন না সারাজীবন তো আমার সাথেই কাটাতে হবে, এখন ভয় না কাটলে।কিভাবে হবে।
কেও আর কোনো কথা বাড়ালো না,স্নেহার মা বাবা বেড়িয়ে গেলো স্নেহা বাবাকে অনেকবার শক্ত করে ধরেছে,তবুও তাদের কিছু করার ছিলোনা।
স্নেহার বাবা মা বেড়িয়ে যেতেই রুদ্র স্নেহার পাশে গিয়ে বসলো, বালিশ আকরে গুটিসুটি হয়ে আছে স্নেহা।
- এখন কেমন লাগছে? ব্যাথা আছে?
- স্নেহা চুপ করে আছে,
- জান প্লিজ কথা বলো! এভাব চুপ করে থেকোনা। কাল কেনো এমন করলা? যদি কিছু হয়ে যেত?
- আমার কিছু হলে আপনার কি, বেড়িয়ে যান এখান থেকে,,,
- আমি যেতে আসিনি, রুদ্র স্নেহার আরো কাছে ঘেসে বসলো।
- আপনি আমার কাছে আসবেন না,,,
-স্নেহা আমার কথা শোনো প্লিজ,
- না আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাইনা, বেড়িয়ে যান ( চিৎকার করে বললো স্নেহা)
- স্নেহাকে অনেকবার বোঝানোর পর ও যখন স্নেহা কিছু বুঝতে চাইলো না, এবংকি রুদ্রের কোনো কথা শুনতেই সে প্রস্তুত না।
তখন রুদ্র বেস রেগে গেলো,,,
স্নেহার দুই গাধে শক্ত করে হাত রেকে স্নেহাকে ঝাকিয়ে,ঝাঁকিয়ে বলতে লাগলো
- আমাকে দেখে এমন করছো কেনো তুমি? ভালো ব্যাবহার করছি ভালো লাগছে না??? তুমিকি জানো বাকিটা জীবন তোমার এই রুদ্রের সাথেই থাকতে হবে,, তুমি না চাইলেও হবে।
- আমি মরে যাবো তবুও তোর মতো জানোয়ারের সাথে কখনো থাকবোনা,
- ঠাসসসসসসস( রুদ্র) স্নেহাকে এক থাপ্পড় দিয়ে নিচে ফেলে দিলো, তার সামলাতে না পেরে বিছানায় পরে গেলো স্নেহা,
রাগে যেন রুদ্রের মাথায় আগুন জ্বলছে, রুদ্র স্নেহাকে বিছানা থেকে উঠিয়ে আবার বসালো আর বলতে শুরু করলো,
- এই জানোয়ারের সাথে তোর সারাজীবন থাকতে হবে, একি রুমে একি বিছানায়। প্রতিটা সময় এই জানোয়ারের সবটুকু জুরে তুই থাকবি। বলেই রুদ্র স্নেহার ঠোটে ৎোট ডুবিয়ে দিলো,
স্নেহা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না, প্রায় ৫ মিনিট পর স্নেহাকে ছেড়েই বেড়িয়ে গেলো, রুদ্র।
ড্রয়িং রুনে স্নেহার মা, বাবাকে দেখতে পেয়েই রুদ্র বললো,
- কাল পরশু বিয়ের ব্যাবস্থা করুন, আপনাদের মেয়ের অনেক তেজ। ওকে এখানে আর রাখতে চাইনা।
বলেই বেড়িয়ে গেলো রুদ্র।
( নেক্সট পর্বেই আসল ধামাকা?)
চলবে,
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)