15-01-2023, 12:56 PM
#___Part___10
.
.
প্রিয়া এখন মোটামুটি সুস্থ।ওর শশুর বাড়ি থেকে নিতে এসেছিল তবে আম্মা কিছুতেই যেতে দিবে না।
তার মতে ওর নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। এতবড় ঝড় বয়ে গেলো ওর জীবনে।এখন রেস্টে থাকা প্রয়োজন।যাওয়ার হলে যাবে তার জন্য সময়ের প্রয়োজন।
এর মাঝে নুপু একদিন নীলের সাথে করে আমাদের বাসায় এসে দেখা করে গেছে।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো কয়েক্টা দিন।
.
সারাদিন ক্লাস,কোচিং নিয়ে এত্ত বিজি থাকি যে দম ফেলাবার সময় টুকু দেয় না ঐ ব্যাটা কুভ্র।
তবে আমিও নাছোড়বান্দা! সারাদিন ওর পেছনে কাঁঠালের আঠার মতো লেগে থাকি।সারাক্ষণ শয়তানি করি শোভা কে সাথে নিয়ে।আমার দল টাই বেশি ভারী।
আঙ্কেল,সোনা মা, শোভা আমার দলে আর আমার আম্মার কথা কি বলবো।মাঝেমাঝে মনে হয় আমার নিজের মা তো নাকি। নাহলে কিভাবে মেয়েকে সাপোর্ট না করে ডেভিল টার পক্ষ নেয়।
কখনো গাড়ির চাকা ফুটো করে,কখনো বা খাবারে কিছু গন্ডগোল করি আবার একেক সময় একেক রকম ফন্দী আটি।কিন্তু তাতে কোনো লাভই হয় না।
কেনো জানি আমার সব প্ল্যানিং ভুন্ডুল করে আমায় ফাসিয়ে দিয়ে চলে যায় গোমরামুখো টা।
এতো নিপুণ ভাবে প্ল্যানিং করি তারপরেও বুঝে ফেলে কিভাবে মাথায় ঢোকে না আমার।
তবে আমিও হাল ছাড়ার পাত্রি নই।সময় আমারো একদিন আসবে আর সেদিনই সব উশুল করে নেবো।
.
ইদানিং অভি ভাইয়া টা ঘনঘন আসা ধরেছে আমাদের বাসায়।
যাকে ফোনের পর ফোন করে ও আনা যায় না সে এখন প্রতিদিন আসে ব্যাপারটায় কেমন জানি রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।
আর একটা ব্যাপার লক্ষ করেছি অভি ভাইয়া আসার কিছুক্ষণ পরই শোভা ও আসে।
ব্যাপার টা কেমন জানি আমার সুবিধার ঠেকছে না।ডাল মে কুছ কালা হে।
আমি যে কিছু আন্দাজ করতে পারছি তা ওদের কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না।
সময় মতো বোম ব্লাস্ট করবো।?
,
শোভা!চল ঘুরতে যাই।
-----
---এই শোভা!!শুনছিস?
--উউ,,,কিছু বলছো আপি?
--হুম,সেই কখন থেকে ডাকছি।
--ওহহ!শুনতে পাইনি।বলো কি বলবে?
--তা শুনতে পাবি কি করে?মন এখানে থাকলে তো শুনবি।
--হুমম,,,,এ্যাাাাহহহহ কি বলছো?
--হুম ঠিকই বলছি।
আচ্ছা বাদ দে অভি ভাইয়া কে আসতে বল ঘুরতে যাবো।
--তোমার ভাই তুমি বলো।আমায় বলছো কেনো?
--ন্যাকা,যেনো কিছুই বোঝে না।ঢং বাদ দিয়ে বলেন।
"এই শোন তুই যে কলেজে পড়তিস না সেই কলেজের প্রিন্সিপাল আমি।"
সো আমার সাথে একদম চালাকি করার চেষ্টা করবি না।
--আপিিিিিিিিিিিি,,কান্না করে দেবো কিন্তু।
কি বলছো এসব?
---এই তোকে বললাম না আমার সাথে ঢং করবি নাহ।
--অকে করবো না।
--হুমম,গুড গার্ল।এবার সত্য করে বল তো বাছা এসব চলছে কবে থেকে?
---কোন সব আপি?ক্লিয়ার করে বলবা কি?
--সত্যি সত্যি বলবি নাকি সোনা'মা কে গিয়ে বলতে হবে?
---এই না নাাা আপিি।তুমি আমার লহ্মি আপি না।
এমন করতে পারো না তুমি।
--শোনো এসব হাওয়ায় কাজ হবে না।কবে থেকে চলছে এসব আমায় বলো তাড়াতাড়ি।
--তোমার ভাইয়ের থেকেই শুনে নিও।
--গুড আইডিয়া।তুই রেডি হয়ে আয়। আর শোন তোর কিছু বলার প্রয়োজন নেই ভাইয়া কে।
যা বলার আমিই বলবো নে।
---আচ্ছা আপি।আমি গেলাম।
--যাহ।
আহাাাা!!কি যে শান্তি লাগছে।চোর দুটো ধরতে পেরে।তবে ঐ টাকে একটু ধোলাই দেওয়া উচিৎ।
আগে আসুক তারপর বুঝবে মজা কত ধানে কত গম?
.
গোসল করে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম।অভি ভাইয়া ফোন করছিল চলে এসেছে প্রায়।
নিচে অপেক্ষা করতে বলছে।
আমার আটা ময়দা মাখতে একটু লেট হচ্ছে।
মনে হচ্ছে বফের সাথে ডেটে যাচ্ছি সেরাম ফিলিং মনে।
শোভা মুখ গোমরা করে এসে সোফায় বসে পড়লো।
বেচারির মুখ টা দেখে পেট ফেপে হাসি বেরিয়ে আসতে চাইছে তবে অনেক কষ্টে সেটাকে আটকে রেখেছি।
--কিরেেে!!তুই রেডি?
--হুমম।
--মন খারাপ?নাকি পেট খারাপ?
--কোনো টাই না আপি।তোমার দেরি থাকলে বলো আমি রুমে যাই।
--কেনো এটা কি রুম না?
--না কে বলছে?
---তোর কি হইছে বলতো সত্যি করে?
---কই কি হইছে?
---কই কিছু না তো আপি।
--তাহলে মুখ টাকে এমন করে রেখেছিস কেনো?
--কই?
--কই তো পুকুরে থাকে।আমার হয়ে গেছে চল নিচে যাই।
অনেকক্ষণ ধরে নিচে ভাইয়া অপেক্ষা করছে।
,
---তাই তো বলি ময়দার এতো দাম কেনো?
তা কয় কেজি ময়দা মেখেছিস মুখে?
--দোকানের সব ময়দা মেখে এসেছি। তোমার কোনো সমস্যা?
--আমার আর সমস্যা হবে কেনো?তা কোথায় যাবি বল।
--উম!!
আপাত খাইতে চলো বনলতায়।খুব ক্ষিদা লাগছে। তারপরে ভাবা যাবে।
--যো আপকা হুকুম।
খাওয়া দাওয়া করে হাটতে লাগলাম। উদ্দেশ্য স্টেশনের দিকে।
গাড়ি নিয়ে আসলেও আমার কথায় পার্কিং করে এসেছে।
সব সময় আর গাড়িতে চড়ে ঘুরতে ভালো লাগে নাকি।
রিক্সায় চড়ে ঘোরার মজাই আলাদা।
এতসময় শোভা একটা কথাও বলেনি।চুপচাপ আছে।
চোখে মুখে স্পষ্টতর ভয়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে। হয়তো ভাবছে আমি যদি সবাই কে বলে দেই।
বিকেল টাইমে এখানে সকল শ্রেণির মানুষদেরই প্রায় দেখা যায়।
বিশেষ করে কাপল রাই তাদের সুন্দর কিছু মুহূর্ত কে স্মৃতির পাতায় বন্দি করছে।
,
ওদের দুজনকে একটু স্পেস দেওয়ার জন্য একটু দূরে চলে এলাম।
নিজেকে কেমন জানি কাবাবে হাড্ডি মনে হচ্ছিল।
এদিকে আমার জন্য আমার বন্ধুরা সবাই অপেক্ষা করছিল।
ওদের কে আগেই কল করে লোকেশন টা দিয়েছিলাম।
ছোট বোন হিসেবে তো আমার একটা দায়িত্ব আছে।
তবে সামনে অনেক বড় একটা দায়িত্ব আছে সেটা কে আমায় পালন করতেই হবে।
অভি ভাইয়ার ফোনে ছোট্ট করে একটা টেক্সট করে দিলাম
"এই যে আমার ভাবি কে স-সম্মানে বাসায় পৌছে দিয়ে আসবেন সন্ধ্যার আগেই।
আমার থেকে লুকানোর জন্য অনেক বড় শাস্তি পেতে হবে এবং তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো।"
অনেক মজা করেছি আজকে।
সারাদিনের ক্লান্তিতে বিছানায় গা টা ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
ভোর হলেই আবার শুরু হবে আমার সেই রুটিনবাঁধা জীবন।
,
এভাবে কেটে গেছে এর মাঝে কিছুদিন।
আমার ১ম বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষার আর কয়েক্টা দিন বাকি আছে।যার কারণে পড়াশুনায় নিজেকে নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় পার করছি।
আগের মতো আর আড্ডা দেয়া হয় না।আসলে পড়াশুনার এত্ত চাপ যে মনে হয় কদিন পরে আমায় হেমায়েতপুরে এডমিট করাতে হবে।
ফিন্যান্স,হিসাব বিজ্ঞান, ব্যস্টিক অর্থনীতির কিছুই পারি না মনে হচ্ছে এখন।?সারাজীবন ফাঁকি দিয়ে এসে এখন ফেঁসেছি মাইন্ক্যার চিপায়।
আম্মা বলেছে ফার্স্ট ক্লাস না পেলে রিক্সাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।?
আমার মনে হচ্ছে ৬ টা সাবজেক্টেই ইনপ্রুভ দিতে হবে।কি এক্টাবস্থা আমার।
এতদিন ফাঁকি দিলেও ভয়ে ভয়ে বই নিয়ে পড়তে বসি।কি পড়ি সব তো মাথার উপর দিয়ে চলে যায়।
এর মধ্যে একবারো স্যারের বাড়িতে যাইনি।
,
সন্ধ্যায় পড়তে বসেছি আর সে সময় শোভা এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।
--কি করে পাগলি কি হলো?হঠাৎ এমন জড়িয়ে ধরে কান্না করছিস?
--আপিিিি
--হুমম!!কি হলো?কাহিনী টা কি?
--আপি আজকে অভির আম্মা এসেছিল আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
--ওহহ ভালো তো।
--বাবা মা। রাজি হয়েছে।
--ওহহ এই ব্যাপার।তো কান্নাকাটি করার কি আছে?
--আমি জানি আপু এই সব কিছু সম্ভব হয়েছে তোমার জন্য।
তুমি না থাকলে হয়তো এসব সম্ভব হতো না।
--হয়েছে হয়েছে এতো সেন্টিমেন্টাল হতে হবে না।বিয়ের পর কিন্তু আমি তোকে অনেক জ্বালাবো আফটার অল আমি ননদ বলে কথা।
আমার ভাইগত অধিকার এটা।?
--অকে তোমার ইচ্ছা।
অভি ভাইয়া ও এসে দেখা করে গেছে।বিয়ের ডেট টা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে আমার এক্সামের কারণে।
,
আপনারা হয়তো ভাবছেন এতকিছু হলো কখন?
অকে তাহলে শুনুন বলছি।
সেদিন মানে যেদিন ওদের ঘুরতে নিয়ে গেছিলাম সেদিনই আমি আমার মণির কাছে গিয়েছিলাম মানে অভি ভাইয়ার মায়ের কাছে।
---মনি মা কেমন আছো?
--এই তো আমার কথা বাদ দে।তোর কি অবস্থা বল?
--এখন তো আসা বাদই দিয়েছিস।তা পথ ভুল করে চলে আসিস তো নি?
---না গো।একদম কারেক্ট পথেই এসেছি। খুব ক্ষিদা লেগেছে তাড়াতাড়ি কিছু নিয়ে এসো তো যাও।
--তুই বস আমি আসছি।
---ঐঐঐঐ আপনারা আবার ভাইবেন না যে আমি খাদক আসলে আমার মুখে একটু রুচি বেশি তো তাই আর কি।
--ওয়াওওওওও!!সরষে ইলিশ,কালো জিরা বাটা,ডালের বড়া,আর সাথে তো মনি মায়ের স্পেশাল পায়েস।
দেখেই জীভে জ্বল এসে যাচ্ছে।
মনি মাাাাা এসব কি সব আমার?
--হ্যাঁ সব তোর।কেউ ছিনিয়ে নেবে না।আস্তে আস্তে খা।
--হুমমম খাবোই তো।
আচ্ছা মনি মা।তোমার বয়স তো আর কম হলো না।তোমার ঐ বুড়ো ব্যাটারে বিয়া দিলেও তো পারো।তহন পায়ের উপর পা তুলে খাইতে পারবা।
---কথা টা কিন্তু মন্দ বলিস নি।কিন্তু তেমন মেয়ে পাবো কই বল?
--কেনো?আমি আছি না।আমার উপর ওসব ছেড়ে দাও।
--কেন তুই কি ঘটকালী শুরু করলি নাকি?
--ওই একটু আধটু আরকি।মনি মাকে সব বললাম (মানে ওদের দুজনের বিষয়ে)
মনি মা আমার কোনো কথাই ফেলে না।আমায় নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসে।
মনি মার সাথে প্লান করে স্যারের বাসায় প্রস্তাব পাঠালাম তবে ওদের রিলেশনের বিষয়টা গোপন রেখে।কারণ যদি মেনে না নেয়।
স্যারের বাসা থেকে পজিটিভ আনসার আসে।নেগেটিভ আসার মতো কোনো কারণ ই নেই অভি ভাইয়ার মধ্যে।
আমার অভি ভাইয়া লাখে নয় কোটিতে এক পিছই।
খুব ভালো লাগছে যে ওদের দুজনকে মেনে নিয়েছে সবাই।
,
১ তারিখ থেকে আমার এক্সাম শুরু হয়েছে।গতকালকে সীট দেখাতে নিয়ে গেছিল শুভ্র স্যার।
আমাদের বুলবুল কলেজের সীট পড়েছে এডওয়ার্ড কলেজে আর ওদের সীট পড়ছে আমাদের কলেজে।
আমার সীট পড়ছে এডওয়ার্ডের ০২ নং মিলনায়তনে।ফ্রেন্ডসারর্কেল এর সবারই সীট এলোমেলো ভাবে পড়ছে।
নিশ্চয়ই স্যার রা এমন করছে।সবাই একসাথে বসতে পারলে কতো ভালো হতো।নুপু বসছে সেই ০৪ নং এ।
এত ভেবে এখন লাভ নেই।প্রথমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভূদ্যয়ের ইতিহাস পরিক্ষা।
প্রিপারেশন মোটামুটিভাবে ভালো।তারপরেও ভয় করছে একটু।আমি একাই যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তা আর হলো কই?স্যার কে আমার সাথে পাঠিয়ে দিয়েছে আম্মা।
পরিক্ষার টেনশনে খেয়ে আসি নি।গাড়ির ভেতরে বই রিভিশন দিচ্ছি।
একটা কেক মুখের সামনে ধরে,,মামনি বললো খেয়ে আসো নি।তাড়াতাড়ি এটা শেষ করে নাও চার ঘন্টা এক্সাম দিতে দিতে ক্ষুধা লেগে যাবে।
--আমি এখন খাবো না।ক্ষুধা নেই আমার।
--আমি খেয়ে নিতে বলছি সো চুপচাপ খেয়ে নাও।
--কিছু বলতে চেয়েও বললাম না কারণ বলে লাভ নেই।
চুপচাপ খেয়ে নিলাম।
কলেজে চলে আসছি গাড়ি থেকে নামার সময় ডাক দিলো আবার।
--এদিকে এসো।
--কি হইছে বলুন।
--তোমার মুখে
আমার মুখে কি?বলে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে আরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলাম মুখে লেগে থাকা খাবার।
---টিস্যু দিয়ে মুছে দিলাম ওর মুখে লেগে থাকা খাবার টুকো।
শোনো!!একদম তাড়াহুড়া করবে না লেখার সময়।রোল রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভালো করে দেখে তুলবে।
কোনো কিছু না বুঝলে স্যার কে আস্ক করবে।নিজে পন্ডিত গীরি করবা না।আর এক্সাম শেষ হলে এখানেই দাড়িয়ে থাকবে আমি না আসা পর্যন্ত।
--হু।
শুভ্রের ডিউটি থাকায় সে থাকতে পারবে না চাইলেও।
,
দুই পাশে ব্যবস্থাপণা আর মাঝখানে হিসাব বিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট দের সীট ফেলছে।
দুই পাশে অন্য কলেজে বেড়া আর চাটমোহর কলেজের স্টুডেন্ট দের সীট পড়ছে।
ভয়ে হাত পা কাপাঁকাপিঁ শুরু করছে।০৪ টা রুম একত্রে একটা মিলনায়তন রুম।যেখানে কয়েকশ স্টুডেন্ট আর প্রায় ২০ জনের মতো টিচার্স।
এতলোক এক সঙ্গে দেখে নার্ভাস হওয়ারই কথা।টিচার্স দের মাঝে একজনকে দেখে একটু হলেও ভয় কেটে গেলো ঋতুর।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
To be Continue
.
.
প্রিয়া এখন মোটামুটি সুস্থ।ওর শশুর বাড়ি থেকে নিতে এসেছিল তবে আম্মা কিছুতেই যেতে দিবে না।
তার মতে ওর নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। এতবড় ঝড় বয়ে গেলো ওর জীবনে।এখন রেস্টে থাকা প্রয়োজন।যাওয়ার হলে যাবে তার জন্য সময়ের প্রয়োজন।
এর মাঝে নুপু একদিন নীলের সাথে করে আমাদের বাসায় এসে দেখা করে গেছে।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো কয়েক্টা দিন।
.
সারাদিন ক্লাস,কোচিং নিয়ে এত্ত বিজি থাকি যে দম ফেলাবার সময় টুকু দেয় না ঐ ব্যাটা কুভ্র।
তবে আমিও নাছোড়বান্দা! সারাদিন ওর পেছনে কাঁঠালের আঠার মতো লেগে থাকি।সারাক্ষণ শয়তানি করি শোভা কে সাথে নিয়ে।আমার দল টাই বেশি ভারী।
আঙ্কেল,সোনা মা, শোভা আমার দলে আর আমার আম্মার কথা কি বলবো।মাঝেমাঝে মনে হয় আমার নিজের মা তো নাকি। নাহলে কিভাবে মেয়েকে সাপোর্ট না করে ডেভিল টার পক্ষ নেয়।
কখনো গাড়ির চাকা ফুটো করে,কখনো বা খাবারে কিছু গন্ডগোল করি আবার একেক সময় একেক রকম ফন্দী আটি।কিন্তু তাতে কোনো লাভই হয় না।
কেনো জানি আমার সব প্ল্যানিং ভুন্ডুল করে আমায় ফাসিয়ে দিয়ে চলে যায় গোমরামুখো টা।
এতো নিপুণ ভাবে প্ল্যানিং করি তারপরেও বুঝে ফেলে কিভাবে মাথায় ঢোকে না আমার।
তবে আমিও হাল ছাড়ার পাত্রি নই।সময় আমারো একদিন আসবে আর সেদিনই সব উশুল করে নেবো।
.
ইদানিং অভি ভাইয়া টা ঘনঘন আসা ধরেছে আমাদের বাসায়।
যাকে ফোনের পর ফোন করে ও আনা যায় না সে এখন প্রতিদিন আসে ব্যাপারটায় কেমন জানি রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।
আর একটা ব্যাপার লক্ষ করেছি অভি ভাইয়া আসার কিছুক্ষণ পরই শোভা ও আসে।
ব্যাপার টা কেমন জানি আমার সুবিধার ঠেকছে না।ডাল মে কুছ কালা হে।
আমি যে কিছু আন্দাজ করতে পারছি তা ওদের কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না।
সময় মতো বোম ব্লাস্ট করবো।?
,
শোভা!চল ঘুরতে যাই।
-----
---এই শোভা!!শুনছিস?
--উউ,,,কিছু বলছো আপি?
--হুম,সেই কখন থেকে ডাকছি।
--ওহহ!শুনতে পাইনি।বলো কি বলবে?
--তা শুনতে পাবি কি করে?মন এখানে থাকলে তো শুনবি।
--হুমম,,,,এ্যাাাাহহহহ কি বলছো?
--হুম ঠিকই বলছি।
আচ্ছা বাদ দে অভি ভাইয়া কে আসতে বল ঘুরতে যাবো।
--তোমার ভাই তুমি বলো।আমায় বলছো কেনো?
--ন্যাকা,যেনো কিছুই বোঝে না।ঢং বাদ দিয়ে বলেন।
"এই শোন তুই যে কলেজে পড়তিস না সেই কলেজের প্রিন্সিপাল আমি।"
সো আমার সাথে একদম চালাকি করার চেষ্টা করবি না।
--আপিিিিিিিিিিিি,,কান্না করে দেবো কিন্তু।
কি বলছো এসব?
---এই তোকে বললাম না আমার সাথে ঢং করবি নাহ।
--অকে করবো না।
--হুমম,গুড গার্ল।এবার সত্য করে বল তো বাছা এসব চলছে কবে থেকে?
---কোন সব আপি?ক্লিয়ার করে বলবা কি?
--সত্যি সত্যি বলবি নাকি সোনা'মা কে গিয়ে বলতে হবে?
---এই না নাাা আপিি।তুমি আমার লহ্মি আপি না।
এমন করতে পারো না তুমি।
--শোনো এসব হাওয়ায় কাজ হবে না।কবে থেকে চলছে এসব আমায় বলো তাড়াতাড়ি।
--তোমার ভাইয়ের থেকেই শুনে নিও।
--গুড আইডিয়া।তুই রেডি হয়ে আয়। আর শোন তোর কিছু বলার প্রয়োজন নেই ভাইয়া কে।
যা বলার আমিই বলবো নে।
---আচ্ছা আপি।আমি গেলাম।
--যাহ।
আহাাাা!!কি যে শান্তি লাগছে।চোর দুটো ধরতে পেরে।তবে ঐ টাকে একটু ধোলাই দেওয়া উচিৎ।
আগে আসুক তারপর বুঝবে মজা কত ধানে কত গম?
.
গোসল করে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম।অভি ভাইয়া ফোন করছিল চলে এসেছে প্রায়।
নিচে অপেক্ষা করতে বলছে।
আমার আটা ময়দা মাখতে একটু লেট হচ্ছে।
মনে হচ্ছে বফের সাথে ডেটে যাচ্ছি সেরাম ফিলিং মনে।
শোভা মুখ গোমরা করে এসে সোফায় বসে পড়লো।
বেচারির মুখ টা দেখে পেট ফেপে হাসি বেরিয়ে আসতে চাইছে তবে অনেক কষ্টে সেটাকে আটকে রেখেছি।
--কিরেেে!!তুই রেডি?
--হুমম।
--মন খারাপ?নাকি পেট খারাপ?
--কোনো টাই না আপি।তোমার দেরি থাকলে বলো আমি রুমে যাই।
--কেনো এটা কি রুম না?
--না কে বলছে?
---তোর কি হইছে বলতো সত্যি করে?
---কই কি হইছে?
---কই কিছু না তো আপি।
--তাহলে মুখ টাকে এমন করে রেখেছিস কেনো?
--কই?
--কই তো পুকুরে থাকে।আমার হয়ে গেছে চল নিচে যাই।
অনেকক্ষণ ধরে নিচে ভাইয়া অপেক্ষা করছে।
,
---তাই তো বলি ময়দার এতো দাম কেনো?
তা কয় কেজি ময়দা মেখেছিস মুখে?
--দোকানের সব ময়দা মেখে এসেছি। তোমার কোনো সমস্যা?
--আমার আর সমস্যা হবে কেনো?তা কোথায় যাবি বল।
--উম!!
আপাত খাইতে চলো বনলতায়।খুব ক্ষিদা লাগছে। তারপরে ভাবা যাবে।
--যো আপকা হুকুম।
খাওয়া দাওয়া করে হাটতে লাগলাম। উদ্দেশ্য স্টেশনের দিকে।
গাড়ি নিয়ে আসলেও আমার কথায় পার্কিং করে এসেছে।
সব সময় আর গাড়িতে চড়ে ঘুরতে ভালো লাগে নাকি।
রিক্সায় চড়ে ঘোরার মজাই আলাদা।
এতসময় শোভা একটা কথাও বলেনি।চুপচাপ আছে।
চোখে মুখে স্পষ্টতর ভয়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে। হয়তো ভাবছে আমি যদি সবাই কে বলে দেই।
বিকেল টাইমে এখানে সকল শ্রেণির মানুষদেরই প্রায় দেখা যায়।
বিশেষ করে কাপল রাই তাদের সুন্দর কিছু মুহূর্ত কে স্মৃতির পাতায় বন্দি করছে।
,
ওদের দুজনকে একটু স্পেস দেওয়ার জন্য একটু দূরে চলে এলাম।
নিজেকে কেমন জানি কাবাবে হাড্ডি মনে হচ্ছিল।
এদিকে আমার জন্য আমার বন্ধুরা সবাই অপেক্ষা করছিল।
ওদের কে আগেই কল করে লোকেশন টা দিয়েছিলাম।
ছোট বোন হিসেবে তো আমার একটা দায়িত্ব আছে।
তবে সামনে অনেক বড় একটা দায়িত্ব আছে সেটা কে আমায় পালন করতেই হবে।
অভি ভাইয়ার ফোনে ছোট্ট করে একটা টেক্সট করে দিলাম
"এই যে আমার ভাবি কে স-সম্মানে বাসায় পৌছে দিয়ে আসবেন সন্ধ্যার আগেই।
আমার থেকে লুকানোর জন্য অনেক বড় শাস্তি পেতে হবে এবং তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো।"
অনেক মজা করেছি আজকে।
সারাদিনের ক্লান্তিতে বিছানায় গা টা ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
ভোর হলেই আবার শুরু হবে আমার সেই রুটিনবাঁধা জীবন।
,
এভাবে কেটে গেছে এর মাঝে কিছুদিন।
আমার ১ম বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষার আর কয়েক্টা দিন বাকি আছে।যার কারণে পড়াশুনায় নিজেকে নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় পার করছি।
আগের মতো আর আড্ডা দেয়া হয় না।আসলে পড়াশুনার এত্ত চাপ যে মনে হয় কদিন পরে আমায় হেমায়েতপুরে এডমিট করাতে হবে।
ফিন্যান্স,হিসাব বিজ্ঞান, ব্যস্টিক অর্থনীতির কিছুই পারি না মনে হচ্ছে এখন।?সারাজীবন ফাঁকি দিয়ে এসে এখন ফেঁসেছি মাইন্ক্যার চিপায়।
আম্মা বলেছে ফার্স্ট ক্লাস না পেলে রিক্সাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।?
আমার মনে হচ্ছে ৬ টা সাবজেক্টেই ইনপ্রুভ দিতে হবে।কি এক্টাবস্থা আমার।
এতদিন ফাঁকি দিলেও ভয়ে ভয়ে বই নিয়ে পড়তে বসি।কি পড়ি সব তো মাথার উপর দিয়ে চলে যায়।
এর মধ্যে একবারো স্যারের বাড়িতে যাইনি।
,
সন্ধ্যায় পড়তে বসেছি আর সে সময় শোভা এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।
--কি করে পাগলি কি হলো?হঠাৎ এমন জড়িয়ে ধরে কান্না করছিস?
--আপিিিি
--হুমম!!কি হলো?কাহিনী টা কি?
--আপি আজকে অভির আম্মা এসেছিল আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
--ওহহ ভালো তো।
--বাবা মা। রাজি হয়েছে।
--ওহহ এই ব্যাপার।তো কান্নাকাটি করার কি আছে?
--আমি জানি আপু এই সব কিছু সম্ভব হয়েছে তোমার জন্য।
তুমি না থাকলে হয়তো এসব সম্ভব হতো না।
--হয়েছে হয়েছে এতো সেন্টিমেন্টাল হতে হবে না।বিয়ের পর কিন্তু আমি তোকে অনেক জ্বালাবো আফটার অল আমি ননদ বলে কথা।
আমার ভাইগত অধিকার এটা।?
--অকে তোমার ইচ্ছা।
অভি ভাইয়া ও এসে দেখা করে গেছে।বিয়ের ডেট টা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে আমার এক্সামের কারণে।
,
আপনারা হয়তো ভাবছেন এতকিছু হলো কখন?
অকে তাহলে শুনুন বলছি।
সেদিন মানে যেদিন ওদের ঘুরতে নিয়ে গেছিলাম সেদিনই আমি আমার মণির কাছে গিয়েছিলাম মানে অভি ভাইয়ার মায়ের কাছে।
---মনি মা কেমন আছো?
--এই তো আমার কথা বাদ দে।তোর কি অবস্থা বল?
--এখন তো আসা বাদই দিয়েছিস।তা পথ ভুল করে চলে আসিস তো নি?
---না গো।একদম কারেক্ট পথেই এসেছি। খুব ক্ষিদা লেগেছে তাড়াতাড়ি কিছু নিয়ে এসো তো যাও।
--তুই বস আমি আসছি।
---ঐঐঐঐ আপনারা আবার ভাইবেন না যে আমি খাদক আসলে আমার মুখে একটু রুচি বেশি তো তাই আর কি।
--ওয়াওওওওও!!সরষে ইলিশ,কালো জিরা বাটা,ডালের বড়া,আর সাথে তো মনি মায়ের স্পেশাল পায়েস।
দেখেই জীভে জ্বল এসে যাচ্ছে।
মনি মাাাাা এসব কি সব আমার?
--হ্যাঁ সব তোর।কেউ ছিনিয়ে নেবে না।আস্তে আস্তে খা।
--হুমমম খাবোই তো।
আচ্ছা মনি মা।তোমার বয়স তো আর কম হলো না।তোমার ঐ বুড়ো ব্যাটারে বিয়া দিলেও তো পারো।তহন পায়ের উপর পা তুলে খাইতে পারবা।
---কথা টা কিন্তু মন্দ বলিস নি।কিন্তু তেমন মেয়ে পাবো কই বল?
--কেনো?আমি আছি না।আমার উপর ওসব ছেড়ে দাও।
--কেন তুই কি ঘটকালী শুরু করলি নাকি?
--ওই একটু আধটু আরকি।মনি মাকে সব বললাম (মানে ওদের দুজনের বিষয়ে)
মনি মা আমার কোনো কথাই ফেলে না।আমায় নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসে।
মনি মার সাথে প্লান করে স্যারের বাসায় প্রস্তাব পাঠালাম তবে ওদের রিলেশনের বিষয়টা গোপন রেখে।কারণ যদি মেনে না নেয়।
স্যারের বাসা থেকে পজিটিভ আনসার আসে।নেগেটিভ আসার মতো কোনো কারণ ই নেই অভি ভাইয়ার মধ্যে।
আমার অভি ভাইয়া লাখে নয় কোটিতে এক পিছই।
খুব ভালো লাগছে যে ওদের দুজনকে মেনে নিয়েছে সবাই।
,
১ তারিখ থেকে আমার এক্সাম শুরু হয়েছে।গতকালকে সীট দেখাতে নিয়ে গেছিল শুভ্র স্যার।
আমাদের বুলবুল কলেজের সীট পড়েছে এডওয়ার্ড কলেজে আর ওদের সীট পড়ছে আমাদের কলেজে।
আমার সীট পড়ছে এডওয়ার্ডের ০২ নং মিলনায়তনে।ফ্রেন্ডসারর্কেল এর সবারই সীট এলোমেলো ভাবে পড়ছে।
নিশ্চয়ই স্যার রা এমন করছে।সবাই একসাথে বসতে পারলে কতো ভালো হতো।নুপু বসছে সেই ০৪ নং এ।
এত ভেবে এখন লাভ নেই।প্রথমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভূদ্যয়ের ইতিহাস পরিক্ষা।
প্রিপারেশন মোটামুটিভাবে ভালো।তারপরেও ভয় করছে একটু।আমি একাই যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তা আর হলো কই?স্যার কে আমার সাথে পাঠিয়ে দিয়েছে আম্মা।
পরিক্ষার টেনশনে খেয়ে আসি নি।গাড়ির ভেতরে বই রিভিশন দিচ্ছি।
একটা কেক মুখের সামনে ধরে,,মামনি বললো খেয়ে আসো নি।তাড়াতাড়ি এটা শেষ করে নাও চার ঘন্টা এক্সাম দিতে দিতে ক্ষুধা লেগে যাবে।
--আমি এখন খাবো না।ক্ষুধা নেই আমার।
--আমি খেয়ে নিতে বলছি সো চুপচাপ খেয়ে নাও।
--কিছু বলতে চেয়েও বললাম না কারণ বলে লাভ নেই।
চুপচাপ খেয়ে নিলাম।
কলেজে চলে আসছি গাড়ি থেকে নামার সময় ডাক দিলো আবার।
--এদিকে এসো।
--কি হইছে বলুন।
--তোমার মুখে
আমার মুখে কি?বলে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে আরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলাম মুখে লেগে থাকা খাবার।
---টিস্যু দিয়ে মুছে দিলাম ওর মুখে লেগে থাকা খাবার টুকো।
শোনো!!একদম তাড়াহুড়া করবে না লেখার সময়।রোল রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভালো করে দেখে তুলবে।
কোনো কিছু না বুঝলে স্যার কে আস্ক করবে।নিজে পন্ডিত গীরি করবা না।আর এক্সাম শেষ হলে এখানেই দাড়িয়ে থাকবে আমি না আসা পর্যন্ত।
--হু।
শুভ্রের ডিউটি থাকায় সে থাকতে পারবে না চাইলেও।
,
দুই পাশে ব্যবস্থাপণা আর মাঝখানে হিসাব বিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট দের সীট ফেলছে।
দুই পাশে অন্য কলেজে বেড়া আর চাটমোহর কলেজের স্টুডেন্ট দের সীট পড়ছে।
ভয়ে হাত পা কাপাঁকাপিঁ শুরু করছে।০৪ টা রুম একত্রে একটা মিলনায়তন রুম।যেখানে কয়েকশ স্টুডেন্ট আর প্রায় ২০ জনের মতো টিচার্স।
এতলোক এক সঙ্গে দেখে নার্ভাস হওয়ারই কথা।টিচার্স দের মাঝে একজনকে দেখে একটু হলেও ভয় কেটে গেলো ঋতুর।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
To be Continue