Thread Rating:
  • 10 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance শিলাবতী --- TamalGhosh ( incomplete )
#9
ঋতুপর্ণার মনের ভেতরে হঠাৎই কুয়াশা জমতে শুরু করল । হয়তো সেটা সংশয়ই । ছেলেটার সারল্য, সৌজন্য, অপকট কথাবার্তা, উচ্ছ্বাস – এসব মিলিয়ে একটা মুখোশ নয়তো ? তার ভেতরে একটা চতুর মানুষ লুকিয়ে নেই তো ? মাত্র আধ ঘণ্টার পরিচয় । এইটুকু সময় একটা মানুষকে চেনার পক্ষে যথেষ্ট নয় । তাই সে বলল, “আমি মোবাইল ইউজ করি না ।”


রুদ্র থ মেরে গেল । কয়েক মুহূর্ত পরে সেটা কাটিয়ে উঠে বলল, “আজকাল তো মাছের দোকানদার, রিকশওয়ালা, ঠেলাওলা, কাজের মাসি – সবার কাছেই মোবাইল থাকে । আপনি দেখছি ব্যতিক্রমী । অদ্ভুত ব্যপার ।”

ঋতুপর্ণা – “আপনার সে রকম মনে হতে পারে । কিন্তু সত্যই আমার মোবাইল নেই ।” এটা বলেই তার খেয়াল হ’ল এটা একটা ভীষণ ঠুনকো অজুহাত হয়ে গেল । কলেজে কারো কাছে খোঁজ করলেই তার নাম্বার পেয়ে যাবে । কিন্তু বলেই যখন ফেলেছে, তখন আর কিছুই করার নেই ।

রুদ্রনাথ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল । তার উচ্ছ্বাস সব কোথায় হাওয়া হয়ে গেছে, সেখানে হাজির হয়েছে বিস্ময় । এ যুগের একটা মেয়ে, যে কিনা জিন্স পরে, কো-এড কলেজে পড়াশোনা করে, এত সুন্দর বক্তৃতা দেয়, তার মতো অচেনা এক যুবকের সাথে একা একা দেখা করতে চলে এসেছে – সে বলে কিনা সে মোবাইল ইউজ করে না । মেয়েটা মনে হয় একটু ছিটগ্রস্থ । দুম করে চলে আসার পর হয়তো মনে হয়েছে কাজটা ঠিক হয়নি, তাই এখন নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাইছে ।

কিছু সময় পর রুদ্রনাথ বলল, “ঠিক আছে । আমার মনে হয় আপনি চাইছেন না আপনার সাথে যোগাযোগ রাখি । এটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে । যাই হোক, আমি একটা কাজ করতে করতে চলে এসেছিলাম । সেটা আজই কমপ্লিট করতে হবে । আসি, বাই ।” এই বলে রুদ্র চলে গেল, একবারও পিছন ফিরে তাকাল না ।

ঋতুপর্ণা চুপ করে অনেকক্ষন বসে রইল । বুঝতে পারছিল সে যে সত্য বলেনি, এড়িয়ে যেতেই চেয়েছে, সেটা রুদ্র ধরে ফেলেছে । ঋতুপর্ণার খুব খারাপ লাগল । এক সময় সে ধীরে ধীরে “রায় এন্ড রায়” –এর অফিস থেকে বেড়িয়ে এল ।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবতে লাগল – তার তো অনেক ছেলেবন্ধু আছে । কলেজে তো আছেই তাছাড়া কলেজ লেভেলের অনেকের সাথে এখনো যোগাযোগ আছে । কলেজ শেষ হবার পর বিভিন্ন জন বিভিন্ন দিকে গেছে কিন্তু যোগাযোগটা শেষ হয়ে যায়নি । প্রায়ই মোবাইলে তাদের কথা হয় । বেশিরভাগ সময়ই নানারকম মজা – হা হা, হি হি । কাজের কথা খুব কম । কাজের কথা বলতে, Graduation –এর পর কোন লাইনে গেলে সুবিধা, কোন কলেজে পড়া যায়, বিদেশে যাওয়া যায় কিনা – এই সব । যার এত বন্ধু-বান্ধব কলকাতায় এবং ভারতের বিভিন্ন Educational Institute –এ আছে, তার পক্ষে রুদ্রনাথের সঙ্গে এরকম ব্যবহার বোধহয় ঠিক হয়নি ।

বাড়ি ফেরার পর তার মনে বারে বারে ভেসে আসে সেই দৃশ্য । সে পুরু গদিওলা একটা সোফায় বসে আছে । পায়ের নীচে কার্পেট, সেন্টার টেবিলে আর্ট পেপারে ছাপা রঙিন, চোখ ধাঁধানো সব ম্যাগাজিন, আরামদায়ক শীতলতা – সব মিলিয়ে এক ভারী মনোরম পরিবেশ । কিন্তু সে সব কিছু ঠিক ভাবে এনজয় করতে পারছে না । কারন তার ভেতরে একটা উৎকণ্ঠা । মনটা পালাই পালাই করছে । এমন সময় সুদর্শন, স্মার্ট এক যুবক, চোখে হালকা ফ্রেমের ফ্যাশনেবল চশমা । গায়ের রং বাদামি । পরনে জিন্স আর হালকা মেরুন রঙের টি শার্ট । পায়ে স্নিকার । কাঁচের দরজা ঠেলে তার দিকে এগিয়ে আসছে ।

রুদ্রকে দেখে এবং তার সাথে কথা বলে ভালোই লেগেছিল । রুদ্রর মধ্যে একটা আপনকরা ভাব রয়েছে । কোনরকম নকল ভদ্রতার ভান নেই । বেশ সরল এবং অকপট ।

এই ভাবে এক সপ্তাহ কেটে গেছে । শেষে সে আর থাকতে পারল না । মনে মনে ঠিক করল রুদ্রর সাথে কথা বলতেই হবে । তাকে কী বলবে, এর মধ্যে মনে মনে তা সাজিয়ে নিল । এরপর ‘রায় এন্ড রায়’ –এর অফিসের ফোন নাম্বার যোগাড় করতে তার বিশেষ অসুবিধা হ’ল না । একদিন ১১টা নাগাদ সে ফোন করল ।
[+] 4 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: শিলাবতী --- TamalGhosh ( incomplete ) - by ddey333 - 06-01-2023, 05:51 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)