09-01-2023, 10:06 PM
পর্ব ১৯
"কারা যেন কথা বলছে, তাই না?", স্বাতি ভিত গলায়, ফিস ফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল। তবে রতন কিন্তু তখন পাথরের মতো স্থির হয়ে গেছে। আর স্বতির সেই প্রশ্ন শুনে সে নিজের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে সকলকে চুপ করতে বলে মাটিতে বসে পড়ল। তার দেখাদেখি বাকিরাও সেই ভাবে বসে পড়ল। কিন্তু সেই আওয়াজ থামলো না। মনে হল যেন দূরে কারা কথা বলছে। কিন্তু তারা কি যে বলছে, কিছুই বোঝার উপায় নেই।
"ম্যাডাম, ওরা কিন্তু জলদশ্যু হতে পারে। আমাদের খুব সাবধান থাকতে হবে। আমরা এখানে আছি জানলে আমাদের আক্রমনও করতে পারে", রতন বলে উঠল।
"ওরে বাবা, আমার খুব ভয় করছে। এখান থেকে চলো..."
"ভয় পাসনি, স্বাতি, আমরা আছি তো..." তুলসী তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে উঠল। "আলসো অন আ পসিটিভ নোট, এটা একটা অ্যাডভেঞ্চারও হতে পারে, তাই না...", মুখে এ কথা বললেও ভেতরে ভেতরে তুলসীরও একটা চাপা অশান্তি হচ্ছিল।
"সুস! সুস! একটুও আওয়াজ নয়" রতন আবার ফিসফিস করে বলে উঠল, "তোমরা বরং এখানে দাঁড়াও, আমি একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি ব্যাপারটা কি হচ্ছে..."
ওদিকে আমাদের তুলসীও পিছিয়ে থাকার পাত্রি নয়, তাই সেও বলল,"হমমম চলও সারেঙ, আমিও যাচ্ছি তোমার সাথে..."
রতন আর তুলসী, সারেঙ আর তার ম্যাডাম, হামাগড়ি দিয়ে ওপরে উঠল। তারা যে সেখানে আছে সেটা না জানলে তাদের দেখতে পাওয়া খুবই শক্ত। ওপারেই বড় সমুদ্র আর তার কোলে ছোট্ট মন্দির। মন্দিরের পেছনে একটা বেশ উঁচু পাথরের টিলা । হতে পারে টিলার পাথর কেটেই মন্দির তৈরি করা হয়েছে । মন্দির আর সমুদ্রের মাঝে চওড়া বালির বিচ। সেই বিচে একটা ইনফ্লেটেবল নৌকো রাখা আছে। আর দুটো লোক সেই নৌকো থেকে নেমে সেই দিকে হেঁটে যাচ্ছে একটা বড় বাক্স নিয়ে। রতন আর তুলসী, বিচে না নেমে, গাছের ঝোপের ভেতর দিয়ে মন্দিরটার কাছে এগিয়ে গেল। লোকদুটো তাদের অবশ্য দেখতে পেল না। ভারি মাল টানতে ওদের বেগ পেতে হচ্ছিল। ওরা একটু পরে এসে পৌঁছোলে, ওদের কথোপকথন শোনা গেল।
"এখানে যাদের থাকার কথা ছিল তাদের কাউকে দেখছি না যে"
"অপেক্ষা করব? নাকি জাহাজে ফিরে যাবো? এখানে একবার জোয়ার নেবে গেলে সেই ভোরের আগে আবার ফেরা যাবে না কিন্তু"
"হ্যাঁ জানাব, আর দিনের আলাতে ফেরাও তো মুস্কিল। আমাদের দেখলেই কোস্ট গার্ড ধরে ফেলবে..."
"হমম, তবে তুই এক কাজ কর, চাটগাঁয়ে একবার জিজ্ঞেস করে নে..."
আর ওরা তাই করল। "হাঙ্গর কলিং বাজপাখি। হাঙ্গর কলিং বাজপাখি। ওভার।" দুই আগন্তুক রেডিওতে কল করতে শুরু করল। বেশ কয়েকক্ষন সেই ভাবে কল করার পর ওপাশ থেকে উত্তর এল।
"বাজপাখি কলিং হাঙ্গর। শুনতে পাচ্ছি। ওভার।"
রেডিওতে এবার ওদের কথোপকথন শুরু হল। মোদ্দা কথা বোঝা গেল যে এরা এখানে ওরা দু-একদিন থাকবে। এদের লোকাল কনট্যাক্টের আসার একদিন দেরী হয়ে গেছে। ওরা এসে পৌঁছলেই মাল হ্যান্ডওভার করে চলে যাবে। যে জাহাজে ওরা এসেছে, সেটা মাঝ সমুদ্রে অপেক্ষা করবে। ইতিউতি মাছ ধরার ভান করবে।
সব ব্যাপার বুঝে রতন আর তুলসী চুপিচুপি পেছু হেঁটে ফিরে এল যেখানে বাকি দু-জন অপেক্ষা করছিল। তারপর ওরা সবাই মিলে নিজেদের জাহাজে ফিরে এল।
"এত পরিস্কার বোঝাই যাচ্ছে যে এরা টেররিস্টদের আর্মস এন্ড এমুনিশান সাপ্লাই করছে..."
"হমম, আর তাই জন্যই আমাদের এখান থেকে মানে মানে পালিয়ে যাওয়াই ভাল ম্যাডাম। নিজের দায়িত্বে আমি আপানাদের এখানে এনেছি, আপনাদের কোন ক্ষতি হলে সেটাও তো আমার দায়িত্ব হবে", রতন বলে উঠল।
"না সারেঙ, তুমি আমাদের নিয়ে ভয় পেয়োনা। আমরা সবাই এডাল্ট। আমাদের ভাল আমরা বুঝি আর দরকার পড়লে, দরকার পড়লে নিজের দেশের জন্যে আমরা লড়ে যেতে পারি",গলায় একটা দৃঢ়তা নিয়ে বলে উঠল তুলসী।
"কিন্তু আমরা ঠিক কি করতে পারি, মাসি? আমাদের কাছে না আছে কোন আর্মস না আছে কোন অ্যামিউনিসান্স..."
"তবে শোন", বলে তুলসী একটা ছক তৈরি করতে লাগল।