Thread Rating:
  • 159 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL গোলকধাঁধায় গোগোল (সমাপ্ত)
[Image: Polish-20221231-100927239.jpg]

(১২)

ভুলের পথে চললে হয়তো সাময়িকভাবে সুখ আসে, হয়তো বা বেশ কিছু আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি ঘটে। কিন্তু সেই ভুলকেই চলার পথের পাথেয় করে নিলে জীবনে শান্তি লাভ হয় না কোনোদিন। তাই ভুল করা অতি সহজ, তবে সেই অতি সহজ পন্থা সর্বক্ষেত্রে অবলম্বন করলে জীবনে সর্বদা পরাজয় ঘটে। ভুল দিয়ে যাদের জীবন শুরু, ভুল দিয়েই তাদের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। কামক্ষুধার বশবর্তী হয়ে এবং অতিরিক্ত লোভে ভুল পথে পা বাড়ালে পিছলে পড়া অবশ্যম্ভাবী। আর সেই ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে কিছুক্ষেত্রে নিজের জীবনটাও বিসর্জন দিতে হয়। প্রতিমা দেবীর সঙ্গেও এমনটাই ঘটলো।

সবার সন্তান কি কলকাতার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সুযোগ পায়? দূরদূরান্তে পড়াশোনা করে। ছাত্রাবাস্তায় বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে গিয়েই তো মানুষের মতো মানুষ হতে হয়। হলোই বা সাতান্ন বছর বয়সী স্বামীর সঙ্গে তার বয়সের অনেকটাই পার্থক্য। হলোই বা তিনি বহুদিন ধরে মধুমেহ এবং স্নায়ুরোগের সমস্যায় ভুগছেন, যার ফলস্বরূপ তার শরীরের যাবতীয় উদ্দাম উদ্দীপনা সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে। এই সব কিছু প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শারীরিক চাহিদা আর অতিরিক্ত লোভের বশবর্তী হয়ে প্রতিমা দেবী যদি বিপথে পা বাড়িয়ে এরকম উদ্দাম উশৃংখল জীবন বেছে না নিতেন, তাহলে বোধহয় আজ বেঘোরে তার প্রাণটা চলে যেত না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বিধায়ক মানিক সামন্তর বাগানবাড়িতে এসে উপস্থিত হলেন মিউনিসিপাল হসপিটালের সুপারিনটেনডেন্ট ডক্টর আচার্য্য। যিনি এমএলএ সাহেবের আর এক রক্ষিতা কাকলি দেবীর স্বামী .. এ কথা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। একসময় এই হসপিটালেরই আর.এম.ও ছিলেন। মাঝে খড়গপুর বদলি হয়ে গিয়েছিলেন, বর্তমানে ডক্টর দাশগুপ্তের বদলে আবার ফিরে এসেছেন এখানে। নিজের পুরনো জায়গায় ফিরে এসে ডক্টর আচার্য্য ভীষণ খুশি, কারণ এটাই তার জন্মস্থান। তার স্ত্রীর সঙ্গে মানিকবাবুর অবৈধ যৌন সম্পর্কের কথা এলাকার অনেকে জানলেও তিনি এমন একটা ভাব করে থাকেন, যেন কিছুই জানেন না। অথবা সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে, তাই হয়তো জেনেও কিছু করার নেই। তাছাড়া এই বয়সে তিনি সংসার ত্যাগ করে যাবেনই না কোথায় .. সেজন্য অন্য কোনো বিষয় মাথা না ঘামিয়ে শুধুমাত্র নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। আর একটা কাজ অবশ্য তিনি করেন .. ওনাকে এখানে ফেরত নিয়ে আসার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সর্বদা এমএলএ সাহেবের হুকুম তামিল করে চলেন।

"শোনো .. গা হাত পা পরিষ্কার করিয়ে, জামাকাপড় পড়িয়ে পাশের ঘরে একদম রেডি করে রাখা হয়েছে ওই মহিলাকে। সঙ্গে করে যে ডকুমেন্টসটা আনতে বলেছিলাম, এনেছো তো? তাহলে এখনই একটা ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দাও যে death due to cardiac arrest , বাকিটা আমি বুঝে নিচ্ছি।" মানিকবাবুর মুখে  কথাগুলো শোনার পর ডক্টর আচার্য্য ভাবলেন, 'একটা মানুষ কতটা নৃশংস হলে এই ধরনের কাজ বা উক্তি করতে পারে। একজন মহিলা যার মৃত্যুর জন্য প্রত্যক্ষভাবে এই মানুষটাই দায়ী, মৃত্যুর পর সেই মহিলাকে সাজিয়ে গুজিয়ে দিয়ে তার ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দিতে বলছে। শরীরে কোনো মায়া-দয়া অবশিষ্ট নেই এই লোকটার। সম্পূর্ণরূপে নরপিশাচে পরিণত হয়েছে।'

কিন্তু এই কাজটা করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে, সর্বোপরি তিনি নিজেই ফেঁসে যেতে পারেন। তাই ব্রিফকেস থেকে কাগজ বের করে সেটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে ডক্টর আচার্য্য বললেন "আপনি ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দিতে বলছেন বটে, কিন্তু এত সহজে ব্যাপারটা মিটবে না। আপনার বাড়িতে এসে একজন অচেনা মহিলার মৃত্যু ঘটলো .. পুলিশ কি এই বিষয়টা নিয়ে কোনো ইনভেস্টিগেশন না করে ছেড়ে দেবে মনে করেছেন? আপনার কথা পুলিশ বিশ্বাস করবে কেনো? ঘটনাটা যেহেতু আপনার বাড়িতে ঘটেছে, তাই সেক্ষেত্রে একজন নিরপেক্ষ সাক্ষীর দরকার।"

"বাহ্ তোমার তো আজকাল অনেক উন্নতি হয়েছে দেখছি। একটু বেশিই ভাবছো মাঝেমধ্যে, তার উপর আবার আমার কথার অমান্য করছো। তুমি অবশ্য একটা কথা ঠিকই বলেছো, ঘটনাটা যেহেতু আমার বাড়িতে ঘটেছে, তাই এক্ষেত্রে একজন নিরপেক্ষ সাক্ষীর দরকার .. যে ওই মহিলার মৃত্যুর সময় এখানে উপস্থিত ছিলো। সাক্ষী আছে তো .. একজন প্রকৃত নিরপেক্ষ সাক্ষী আছে, যে কিনা আবার এই মহিলা মানে মিসেস প্রতিমা কুন্ডুর বান্ধবী। এসো কাকলি, এই ঘরে এসো, তোমার বর এসেছে তো। ওকে না হয় বাকিটা তুমি নিজেই বুঝিয়ে বলো।" এমএলএ সাহেবের এই উক্তির পর ডক্টর আচার্য্য কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাশের ঘর থেকে পর্দা সরিয়ে বৈঠকখানা ঘরে প্রবেশ করলো তার স্ত্রী কাকলি দেবী।

ঘরে ঢুকেই প্রায় নির্দেশের সুরে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে কাকলি দেবী বললো "এই শোনো, তোমার এইসব তত্ত্বকথা এখন রাখো তো! তোমাকে ফোন করে যে জন্য ডাকা হয়েছে সেই কাজটা করো। এত কাঁচা মাথার লোক ভাবো নাকি তুমি মিস্টার সামন্তকে? পুলিশকে উনি নিজেই ফোন করে দিয়েছেন, ওরা এলো বলে। তার আগে কয়েকটা কথা বলছি মন দিয়ে শুনে নাও। পুলিশ এলে আমি বলবো .. আমি যে এনজিওটার সঙ্গে যুক্ত আছি, তার ডোনেশানের ব্যাপারে আমি আর আমার বান্ধবী প্রতিমা একসঙ্গেই আজকে এমএলএ সাহেবের বাড়ি এসেছিলাম। এখানে আসার আগে থেকেই ও মানে আমার বান্ধবী বলছিলো ওর শরীরটা খারাপ। তারপর এখানে এসে কথা বলতে বলতে প্রতিমার শরীরটা আরও খারাপ হতে শুরু করে। এরপর হঠাৎ করেই ও সেন্সলেস হয়ে যায়। আমরা দু'জনে মানে আমি আর মিস্টার সামন্ত ভয় পেয়ে গিয়ে কি করবো কিছু বুঝে উঠতে না পেরে তোমাকে ফোন করি। তারপর তুমি এসে প্রতিমাকে পরীক্ষা করে দেখো ও আর বেঁচে নেই। ঘটনাটা ঘটার পর যেহেতু ঘন্টা তিনেক পার হয়ে গিয়েছে, তাই তুমি ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দিয়েছো। নাও নাও তাড়াতাড়ি করো .. ওরা এক্ষুনি এসে যাবে।"

তার স্ত্রীর মুখে কথাগুলো শোনার পর কিছুক্ষণ তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন ডক্টর আচার্য্য। নিজের স্ত্রীর উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পরিস্থিতি যখন সম্পূর্ণরূপে হাতের বাইরে চলে যায় তখন বোধহয় এমনটাই ঘটে। নিজের স্বামীর বিপদের কথা বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে একজন পরপুরুষের হয়ে ওকালতি করে যাচ্ছে তার স্ত্রী। অর্থ এবং রিপুর লোভ যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন এইভাবেই বোধহয় আপনজন পর হয়ে যায়। চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো ডক্টর আচার্য্যর .. পকেট থেকে কলম বের করে ডেথ সার্টিফিকেট লিখতে শুরু করলেন তিনি। ঠিক সেই মুহূর্তে দরজা খুলে ঝড়ের গতিতে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলেন গুরুকুল বিদ্যামন্দিরের প্রধানশিক্ষক প্রতিমা দেবীর স্বামী অনাদিবাবু। "কোথায়? কোথায় আমার স্ত্রী? কোথায় ও? আমি জানি, সব এই লোকটা করেছে .. এর জন্যই আজ আমি আমার স্ত্রীকে .." এই বলে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন মানিক সামন্তর উপর। ঘড়িতে তখন প্রায় সন্ধ্যা ছ'টা।

★★★★

বিয়েতে কোনোরকম আতিশয্য তার পছন্দ নয় .. এ কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলো সুজাতা। ডক্টর দাশগুপ্তেরও অনেকটা সেইরকমই ইচ্ছে ছিলো। গত সপ্তাহে তাদের রেলপাড়ের বাড়িতেই রেজিস্ট্রি করে বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিলো দু'জনের। সাক্ষী হিসেবে ছিলেন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এবং তাদের দীর্ঘদিনের সুখ দুঃখের সঙ্গী রেলপাড় হাইকলেজের প্রধানশিক্ষক পঙ্কজবাবু, আর সুজাতার বান্ধবী হিয়ার মা কাবেরী দেবী। এছাড়াও নিমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলো গোগোলের বন্ধুরা আর টগরের পরিবার।

"এই .. আজ তোরা কিন্তু একদম বিরক্ত করবি না আমার এই মিষ্টি বান্ধবীটাকে। ওদের দু'জনের কিন্তু আজ একান্তে সময় কাটানোর দিন, পরস্পরকে আরো ভালো করে চিনে নেওয়া জেনে নেওয়ার দিন। যাও যাও, এখন সবাই বাড়ি যাও, যা কথা হবে কালকে .." এই বলে হিয়াকে নিয়ে ওইদিন ওদের বাড়ি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে সবাইকে একে একে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলো কাবেরী। তারপর নিজের বান্ধবী সুজাতার দিকে মুচকি হেসে চোখ টিপে ফিসফিস করে বলেছিলো "বেস্ট অফ লাক .. কাল গল্প শুনবো .."

কাবেরীর কথায় সুজাতা লজ্জায় রাঙা হয়ে গিয়েছিল একেবারে। তারপর একসময় সবাই চলে গেলে নিজেদের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে করতে ডক্টর দাশগুপ্তকে বলেছিলো "কাবেরীটার কোনোদিন আক্কেল হবে না দেখছি .. ঘরে সব ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রয়েছে .. তাদের সামনেই .. ইশশ, আমার তো লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিলো .." এই কথার কোনো উত্তর না দিয়ে তার নববিবাহিতা স্ত্রীকে বিছানায় নিজের কাছে ইশারায় ডেকেছিলেন ডক্টর দাশগুপ্ত।

পরিণত দুটি মন ও শরীর .. এতদিনের অপেক্ষায় ক্লান্ত পরিশ্রান্ত। জ্যোৎস্নার রাতে পূর্ণিমার চাঁদের হাতেই যেন জীবন উৎসর্গ করে শুরু হলো তাদের পথ চলা। চারিদিকে ছড়িয়ে আছে রজনীগন্ধা, চাঁপা, বেল ফুলের গন্ধ। সংশয় কাটিয়ে উঠে পরস্পরের ভয় বুক কাঁপার এটাই তো উপযুক্ত সময়। জানালার পর্দা ওড়ায় দুষ্টু হাল্কা বাতাস, মায়াজালে চাদর বিছায় রূপালী জ্যোৎস্নার আকাশ। "আজ রাতে আমরা শুধু গল্প করবো .. কেমন!" মৃদুস্বরে বলেছিলো সুজাতা। বিশেষ কোনো তারা ছিলো না ডক্টর দাশগুপ্তর দিক থেকেও। এলোমেলো অগোছালো কথা শুরু হয় উভয়পক্ষ থেকেই। উপহার দেয় মুগ্ধ সময়, ঠোঁটে আনে হাসি। চেনাজানার প্রহর কাটে, হৃদয়ের পাশাপাশি।

তারপর একসময় দুটি দেহ প্রেমের জোয়ারে ভেসে গিয়ে উত্তাল তরঙ্গ তুলে প্রাণে জাগায় ঢেউ। স্বপ্ন ভাসে চোখের পাতায় শরীর মাখা সুখ। রাতজাগা দুটি পাখি ভালোবাসার স্পর্শে কাতর। সেই মুহূর্তে নিজেকে অন্য কিছু নয় শুধুমাত্র একজন প্রেম পূজারী ভাবতে ইচ্ছে করছিলো প্রতাপের। অতি প্রাচীন বিলাসের মতো সুজাতার অকৃত্রিম অগাধ অনাবৃত স্তনযুগলের বন্দনা করার বাসনা জাগছিলো তার মানে। নারীর সুপুষ্ট স্তন বিলাসেই তো তৃপ্তি লুকিয়ে থাকে একজন প্রকৃত প্রেম পূজারীর। ঠিক যেন কোণারক অথবা মোহন শিল্প অজন্তার রুবেন্স অথবা পিকাসোর ললিত আঁকা ছবি। লাগেজ ভ্যানে নরম তুলোর মতো বেফাঁস লাফিয়ে আসা যুগলচঞ্চু উন্মুখ স্তনেই তো জন্ম নেয় আদিম ভালোবাসা।

নারীর সুপুষ্ট স্তন বিলাসেই রক্তবীর্য, স্নায়ুঘাত, লৌহপেশী .. যা সম্পূর্ণা এক নারীর স্তনেই উজ্জীবিত। সুজাতার মাঝবয়সী বর্তুল স্তনের পরতে পরতে সেই মুহূর্তে মৃত্যুবরণ করতেও রাজি ছিলো প্রতাপ। সুজাতার স্তনবৃন্তে মৃগনাভীর সুগন্ধের পসরা। লজ্জায় নিজেকে আড়াল করার ব্যর্থ চেষ্টায় স্তনের দুলুনিতে
নিজের প্রতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছিল সে। অতঃপর তার নববিবাহিতা স্ত্রীর স্তনযুগল নিয়ে খেলতে খেলতে আদিম নেশায় পাগল হয়ে গিয়েছিলো প্রতাপ।

★★★★

সন্দীপের মৃত্যুর কারণ এবং তার মৃত্যুর পর পুলিশি তদন্তে বাকি সবার মতো কাবেরীর কাছেও এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিলো, যার সঙ্গে কিছুদিন পর সে  নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে যাচ্ছিলো, সেই সন্দীপ কত বড় একটা ঘৃণ্য চক্রান্ত করেছিলো। তার উপর যেখানে সন্দীপের মা-বাবা এই সমস্ত কিছুর জন্য তাদের ছেলেকেই দায়ী করে তাদের দিক থেকে বারংবার ক্ষমাপ্রার্থনা করে, অবশেষে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন, সেখানে কাবেরীর দিক থেকে পুরনো কথাগুলো মনে রেখে শুধু শুধু জটিলতা বাড়ানোর কোনো মানেই হয় না।

একসময় তার হবু জামাই সন্দীপের হয়ে সুজাতার কাছে ওকালতি করা এবং সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে বাগ-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ার জন্য তার বান্ধবীর কাছে পরে সবিনয় ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছে কাবেরী। কিন্তু এত কিছুর পরেও হিয়া আর গোগোলের সম্পর্কটা সে এখনো মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। এর পেছনের এক এবং অদ্বিতীয় কারণ হলো গোগোলের অতীত।

আজ সকালেই হরিহর কাকাকে নিয়ে বিশেষ একটি কাজে তাদের গ্রামের বাড়ি শিমুলপুরে গেছে কাবেরী। রাতের মধ্যেই ফিরতে হবে তাকে .. হিয়া একা বাড়ি আছে। তাই আটটা'র মধ্যে বেরিয়েছে তারা .. একটা ট্রেন পাল্টে, তারপর এক ঘন্টার বাস জার্নি। শিমুলপুর পৌছতে প্রায় ঘন্টা তিনেক সময় লেগে যায়।

তার মা আর হরিহর কাকা বেরিয়ে যাওয়ার পর  বিছানায় গিয়ে আরো কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলো হিয়া। ঘুম ভাঙতেই দেখলো ঘড়িতে দশ'টা বেজে গিয়েছে। 'ইশশ .. বড্ড দেরি হয়ে গেছে। ঠিক আছে কিছু পরোয়া নেহি,  এখন তো লাটসাহেব সাইটে আছে, পৃথিবীর এদিক-ওদিক হয়ে গেলেও ওখান থেকে নড়বে না। কিন্তু ওর মতো বকুরামকে কি করে সাইজ করতে হয় সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না।' কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিজের মনেই হেসে উঠলো হিয়া। তারপর বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে প্রাতঃরাশ করে মোবাইলে গোগোলের নম্বরে রিং করলো।

ওদিক থেকে কলটা রিসিভ হতেই নিজের গলাটা যতটা সম্ভব ভেঙে নিয়ে, একজন অসুস্থ মানুষের মতো দুর্বল স্বরে বলতে আরম্ভ করলো "এই শোনো না .. আজ সকাল থেকেই আমার ভীষণ জ্বর তার সঙ্গে বমিও শুরু হয়েছে .. কি করবো কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। তাই তোমাকে ফোন করছি .. তুমি একবার আসতে পারবে?"

"আমি? আমি এখন কি করে যাবো? রাজ্যের কাজ এখানে, সেগুলো ফেলে এই মুহূর্তে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। সে না হয় সাইট থেকে ফেরার সময় তোমাকে দেখে আসবো। জ্বর এসেছে আর তার সঙ্গে যখন বমি হচ্ছে তাহলে অবশ্যই এখনই একজন ডাক্তার দেখানো দরকার। কাবেরী আন্টি আছে তো! উনাকে বলো না, হসপিটাল নিয়ে গিয়ে যদি একবার কাউকে দেখিয়ে দিতে পারে তোমাকে। না হলে বলো আমি এখনই ডাক্তার আঙ্কেলকে ফোন করে বলছি তোমাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য।" শশব্যস্ত হয়ে বললো গোগোল।

"এই চুপ করো তো, সব কথায় আগে একবার ডাক্তার আঙ্কেল পরে একবার ডাক্তার আঙ্কেল। বলছি আমার শরীরটা ভালো লাগছে না, কিরকম যেন করছে। আমার মনে হয় কোনো কঠিন অসুখ হয়েছে, বুঝলে?  আমি বোধহয় আর বাঁচবো না। চিরতরে চলে যাওয়ার আগে একবার তোমাকে চোখের দেখা দেখতে খুব ইচ্ছে করছে গো! আসবে না একবার সোনা?" প্রথমে ঝাঁঝিয়ে উঠে, তারপর কাঁদো কাঁদো ভঙ্গিতে এবং সবশেষে গলায় যতটা সম্ভব মধু ঢেলে কথাগুলো বললো হিয়া।

"কি আবোল তাবোল কথা বলছো বলো তো! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। এইতো বললে জ্বর হয়েছে আর বমি হচ্ছে। এখন আবার বলছো কঠিন অসুখ হয়েছে। আর কোনোদিন যদি আমার সামনে 'বাঁচবো না' এই কথাটা বলো, তাহলে আমার একদিন কি তোমার একদিন। ঠিক আছে ঠিক আছে তুমি বেশি মেন্টাল স্ট্রেস নিও না, আর একদম কেঁদো না। আমাকে একটু সময় দাও, আমি এখানকার কাজগুলো তাড়াতাড়ি মিটিয়ে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আসছি তোমার ওখানে। তারপর গিয়ে যদি দেখি শরীর বেশি খারাপ হচ্ছে তাহলে কিন্তু অবশ্যই ডাক্তার ডাকতে হবে, তখন বাধা দিও না যেন! তবে কি জানো তো কাবেরী আন্টি মনে হয় আমাকে খুব একটা পছন্দ করে না, তাই কিছুটা দ্বিধাবোধ হয় আজকাল তোমাদের বাড়ি যেতে।"

গোগোলের কথাগুলো শোনার পর ফোনটা কেটে দিয়ে হিয়া খিলখিল করে হেসে উঠলো। "ইশ্ কি বোকা ওই লাটসাহেব। কত সহজেই আমার কথাগুলো বিশ্বাস করে নিলো। মা'কে নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না বকুরাম। ওরা আজ কেউ বাড়িতে নেই বলেই তো তোমাকে ডেকেছি।'' স্বগোতক্তি করে বাথরুমে ঢুকে গেলো হিয়া।

একটু আগে প্রবল ঝড় হয়ে গেছে, তারপর বাতাসের বেগ কমলে শুরু হয়েছে বৃষ্টি .. অবিরত, একটানা। ধীরে ধীরে জল জমছে রাস্তায়। হিয়া জানলায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে অনেকক্ষণ ধরে। খুব জোর ছাঁট, ভিতরে জল আসছে। ভিজে যাচ্ছে পরনের পাতলা সুতির নাইটিটা, তবু তার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তার মা থাকলে বাড়িতে অন্য কোনো লোক এলে নাইটির উপর একটা হাউসকোট পড়তে বলে হিয়াকে। বাইরের লোক দেখলে হিয়াও হাউসকোট ছাড়া কখনো তাদের সামনে আসে না। কিন্তু আজ তো তার মা বাড়িতে নেই, তাছাড়া আজ তো কোনো বাইরের লোক আসছে না .. আসছে তার কাছের মানুষ, মনের মানুষ গোগোল। বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ আর গায়ে তার স্পর্শ পেলে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয় হিয়ার। গলা দিয়ে গুনগুন স্বর সোনা না গেলেও মাথা দুলছে হিয়ার।  তার সারা শরীরের আন্দোলিত হচ্ছে একটা গান .. নিঃশব্দে।

হিয়ার শরীর খারাপের খবরটা শোনার পর থেকে কাজে প্রায় মন বসাতেই পারছিলো না গোগোল।বারোটা নাগাদ একরাশ দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে হিয়াদের বাড়ি এলো সে। বাইরের দরজা খোলাই ছিলো .. যা সচরাচর থাকে না। দু'একবার হিয়া, কাবেরী আন্টি এবং হরিহর কাকার নাম ধরে ডেকে কারোর সারাশব্দ না পেয়ে ধীরে ধীরে উপরে উঠে এলো গোগোল। কাবেরী আন্টি এবং হরিহর কাকা দুজনেই বাড়িতে নেই, হিয়ার কিচ্ছু হয়নি, সে তাকে মিথ্যে বলে এখানে নিয়ে এসেছে .. এই কথাগুলো শোনার পর অন্য দিন হলে হিয়াকে ভর্ৎসনা করে সঙ্গে সঙ্গে তাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত গোগোল। কিন্তু এই মুহূর্তে সদ্যস্নাতা লাবণ্যময়ী অপরুপা একদম অন্যরূপের হিয়ার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলো না সে।
[+] 10 users Like Bumba_1's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: গোলকধাঁধায় গোগোল (চলছে) - by Bumba_1 - 03-01-2023, 08:47 PM



Users browsing this thread: