30-12-2022, 10:05 PM
পর্ব -১৩
এখন দুপুর। রুদ্র বসে আছে ঘুড়ি কুরিয়ার সার্ভিসের মেইন অফিসে। সে সকালে এসেছে। অফিসের ম্যানেজারের আসার কথা সকাল দশ-টায়, কিন্তু সে এখনো আসে নি। বসে বসে অপেক্ষা করতে করতে এতোক্ষণে বিরক্ত হয়ে উঠেছে রুদ্র। সে উঠে গিয়ে অফিসের ডেস্কে বসা এক ভদ্রলোককে বলল, "আজ কি আপনাদের ম্যানেজার সাহেব আসবেন না?"
লোকটা তার কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে ছিলো। রুদ্রের প্রশ্ন শুনে সে রাগী চোখে তার দিকে তাকালো। এক কথা বলতে বলতে সে বিরক্ত। তবুও সে নিজেকে সংযত রেখে বলল, "স্যারের তো আজ আসার কথা। এখন স্যার আজ আসবে কি আসবে না, সেটা আমি কি করে বলি। যদিও স্যার আসে, তাহলে কখন আসবে সেটাও আমার পক্ষে জানা সম্ভব না। একমাত্র স্যারই ভালো জানেন, তিনি কখন আসবেন। আপনি আরেকটু অপেক্ষা করুণ।"
"আমি সেই সকাল থেকেই তো অপেক্ষা করছি।"
"এখন স্যার না এলে আমি কি করতে পারি? আমি সামান্য একজন কর্মচারী। স্যারদের ব্যাপার স্যাররাই ভালো জানেন।" লোকটা কথা শেষ করে তার কাজে মনোযোগ দিলো। রুদ্রের দিকে আর তাকালো না।
রুদ্র ফিরে এসে সোফায় বসল। সে ভাবলো আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখা যাক। কিন্তু এভাবে একা একা বসে থাকা খুব বিরক্তিকর। আলিফ এলে ভালই হতো। অন্তত আড্ডা দিলে সময়টা কাটানো যেতো। রুদ্রের চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।
আজ সকালে আলিফকে ফোন দেয় রুদ্র। তখন আলিফের অবস্থার কথা শুনে রুদ্র রীতিমতো নির্বাক। প্রথমে রুদ্র ভেবেছিল, আলিফ তার সাথে মজা করছে। তার সাথে কুরিয়ার অফিসে আসবে না, সেই কারণে বাহানা করছে। কারণ তারা গত সপ্তাহেও তাদের এলাকায় যে ব্রাঞ্চটা আছে সেখানে গিয়েছিল। কিন্তু সেদিনও কোনো লাভ হয়নি।
সে-বার তারা যে ভদ্রলোকের সাথে কথা বলেছিল সে তাদের জানিয়েছিল, "চিঠিগুলো একবারে আমাদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটা চিঠিতে নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করা ছিলো। সেই তারিখ অনুযায়ী চিঠিগুলো আমরা ডেলিভারি করেছি। এভাবেই আমাদের নির্দেশনা দেওয়া ছিলো।"
"কোনো চিঠিতেই প্রেরকের ঠিকানা নেই। শুধুমাত্র নাম ছাড়া আর কিছুই নেই। প্রেরকের ঠিকানা জানা আমার জন্য খুব জরুরি। প্লিজ, আপনি কিছু করতে পারেন কি-না একটু দেখুন।" রুদ্র বলেছিল।
লোকটা কম্পিউটারে কীসব দেখে সে বলেছিল, "অনেক মাস আগের ঘটনা। চিঠিগুলো একদিনেই আমাদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছিলো। একটা নির্দিষ্ট তারিখে। কোনো চিঠিতে প্রেরকের ঠিকানা নেই। যদি তখন কে চিঠিগুলো গ্রহণ করেছিল সেটা জানতে পারি হয়তো কিছু তথ্য পাওয়া সম্ভব। কিন্তু এটা অনেক মাস আগের ঘটনা, কে চিঠিগুলো গ্রহণ করেছিল সেটা জানা অসম্ভব। মূলত মেইন অফিস থেকে চিঠিগুলো আমাদের ব্রাঞ্চে আসতো, আমরা আপনার ঠিকানায় ডেলিভারি দিতাম। আপনি ওখানে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। তারা কোনো তথ্য দিলেও দিতে পারে।"
রুদ্র সবটা শুনে অনেক অবাক হয়েছে। সবগুলো চিঠি তরু একবারে পাঠিয়েছে। এক সাথে সে এতোগুলা চিঠি লিখেছে? কি করে সম্ভব? রুদ্র কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না। সে ভদ্র লোককে প্রশ্ন করেছিল, "সবগুলো চিঠি কি একবারে জমা দেওয়া হয়েছিল? মানে এই পর্যন্ত আমাকে ডেলিভারি করা চিঠি কি একবারে কুরিয়ার অফিসে জমা দেওয়া হয়েছিল?"
"জি, সেরকমই।"
"কিন্তু সর্বশেষ আমি গ্রহণ করেছি একটা পার্সেল।সেটা চিঠি ছিলো না। এটা নিশ্চয়ই চিঠিগুলো সাথে একবারে আপনাদের অফিসে জমা দেয় নি?"
লোকটা কম্পিউটার আবার কিছু একটা চেক করে বলল, "হ্যাঁ, পার্সেলটা আমরা গ্রহণ করি দুইমাস আগে।"
"কিন্তু পার্সেলটা তো দুই সপ্তাহ আগে আমাকে ডেলিভারি দেওয়া হয়।"
"পার্সেলের উপরে আমাদের গ্রাহক যে তারিখ উল্লেখ করেছিল আমরা সেই তারিখে আপনাকে ডেলিভারি দিয়েছি।"
"তাহলে দুই মাস আগে কে পার্সেলটা গ্রহণ করেছিল?"
"আমাদের এই ব্রাঞ্চে গত সপ্তাহেই পার্সেলটা আসে। আমরা তার পরের দিন আপনাকে ডেলিভারি করে দেই। পার্সেলেও প্রাপকের কোনো ঠিকানা দেখছি না। সরি, স্যার। আপনাকে আর কোনো ভাবে সাহায্য করা আমার পক্ষে সম্ভব না। "
রুদ্রের মাথায় তখনই আকাশ চেঙে পড়েছিল। তরুর ঠিকানা পাওয়ার যতটুকু আশা ছিলো, এখন তা-ও নেই। সে কি করে তরুকে খুঁজে বের করবে? তরুকে কোথায় খুজবে? তরু কোথায় আছে? কোথায়!
রুদ্র পরে আবার যোগাযোগ করেছে। অনেক রিকোয়েস্ট করেছে। অবশেষে একজন রুদ্রকে তাদের ম্যানেজারের সাথে দেখা করতে বলেছে। সেই ম্যানেজারের সাথে দেখা করতেই আজ সকালে ঘুড়ি কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসে এসেছে। কিন্তু দুপুর চলে যাচ্ছে এদিকে ম্যানেজারের আসার সম্ভব নেই।
রুদ্র রাগে, ক্ষোপে, বিরক্ত হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। বাইরে প্রচন্ড রোদের উত্তাপ। ভয়ংকর গরম। সে ঘেমে যাচ্ছে। তার বড্ড পানি পিপাসা পেলো। সে হেঁটে রাস্তা পার হয়ে একটা চায়ের দোকানের দিকে গেলো। সেই মুহুর্তে রিয়াকে দেখতে পেলো সে। রিয়া কুরিয়ারের অফিসের দিকে যাচ্ছে। সে একবার ভাবলো তাকে ডাকবে। কিন্তু ডাকলো না। রিয়া অফিসে ঢুকে গেলো। হয়তো কোনো পার্সেল এসেছে তার। এটা ভেবে রুদ্র চায়ের দোকানের ভেতর ঢুকে একটা ড্রিংক নিলো, তার সাথে একটা সিগারেট।
সিগারেট খাওয়ার অর্ধেক হতেই আলিফের কল এলো। রুদ্র ফোন রিসিভ করল।
"হ্যালো, রুদ্র।" আলিফ বলল।
"হ্যাঁ, আলিফ বল।" রুদ্র বলল।
"তরুর ব্যাপারে কিছু জানতে পেরেছিস?"
"না, ম্যানেজার আজকে আসেনি। সেই সকাল থেকে অপেক্ষা করে কোনো লাভ হলো না।"
"কই তুই এখন?"
"কুরিয়ারে অফিসের এদিকেই।"
"এলাকার দিকে কখন আসবি?"
"জানিনা, দেখি কখন আসি। তোর কি অবস্থা?"
"আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।"
"আঘাতে কি অবস্থা? মাথায় ব্যথা আছে?"
"না, নেই। অনেকটা ভালো।"
"নদীর সাথে কথা হয়েছে?"
"দুই একটা কথা হয়েছে। কিন্তু আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি নদী রাগ করে আছে।"
"এমন কিছু করতে গেলি কেনো?"
"আমি কি ইচ্ছে করে করেছি। তখন যে কি হলো আমার আমি বুঝতেই পারিনি। আর এক মুহুর্তের জন্য আমার মনে হয়েছিলো নদী সেটাই চাচ্ছে। ওভাবে তাকিয়ে থাকা, নদীর চোখে কিছু একটা ছিলো। আমিও কি ভেবে কি করলাম তাৎক্ষণিক বুঝতেই পারি নি।" আলিফ থামলো। তারপর সে আবার বলল, "কি করবো রুদ্র? আমার ভালো লাগছে না। আমার খুব গিলটি ফিলিং হচ্ছে।"
"তুই এতো চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।"
"আচ্ছা দেখি কি হয়।"
"আচ্ছা, দেখ। এখন রাখি তাহলে।"
"ওকে, ব্রাদার্স।"
কল কেটে দেওয়ার পরেও আলিফ ফোন কানের কাছে কিছুক্ষণ ধরে রাখল। সে কিছু একটা ভাবছে। তার ভাবা শেষ হলে সে নদীকে মেসেজ দিলো।
"নদী, আমি আমার কাছের জন্য লজ্জিত। প্লিজ, আমার উপর এভাবে রাগ করে থেকো না। আমার কষ্ট হচ্ছে।"
বিশ মিনিট পরে নদী মেসেজের রিপ্লাই করলো।
"আর কতবার সরি বলবে? আমি বলেছি, আমি কিছু মনে করি নি। যা হয়েছে ভুলে গেছি। তুমিও ভুলে যাও। এটাই ভালো হবে। তাহলে খারাপ লাগবে না।"
"আমি ভুলতে পারছি না। আমার কেবল মনে হচ্ছে আমি খারাপ একটা কাজ করে ফেলেছি। প্রথমে তোমার অনুমতি নেওয়ার দরকার ছিলো। কিন্তু তখন কেনো যে এরকম কিছু করতে গেলাম, বুঝে উঠতে পারিনি কিছুই।"
"তুমি বাচ্চাদের মত করছো, আলিফ। বারবার সরি বলছ, সেদিন কান্না করলে, এছাড়া তারপর বারবার সেই এক কথা বলে যাচ্ছ। প্লিজ, এটা আরো বিরক্ত করছে আমাকে। এই ব্যাপারটা আমরা এখানেই ভুলে যাই। আমি এই বিষয়টা নিয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না।"
আলিফ লিখলো, "আচ্ছা ঠিক আছে।" আলিফ আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু সে আর বলেনি। সে বুঝতে পেরেছে ওপাশের মানুষটা বিরক্ত হচ্ছে। সে নদীকে বিরক্ত করতে চায় না।
আলিফের বুকের মধ্যে আবার সেই ব্যথাটা শুরু হয়েছে। এই ব্যথাটা অদ্ভুত। প্রথম চিনচিন করে শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে পুরো বুকটাতে ছড়িয়ে যায়। সর্বশেষ পুরো বুকটায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়। তার সেরকম হচ্ছে। সে কি করবে এখন? আলিফের সময়গুলো বড্ড বিচ্ছিরি ভাবে কাটতে থাকলো।
নদী বেলকনিতে বসে ছিল। আলিফের শেষ মেসেজ দেখে সে আর কোনো কথা বাড়ায়নি। সে বুঝে উঠতে পারছে না। আলিফের উপর রাগটা এখন নেই। তবুও আলিফের সাথে সে এই দুইদিন ভালো করে কথা বলতে পারে নি। কেমন একটা জড়তা কাজ করেছে তার মধ্যে। কেনো এমন হচ্ছে?
আলিফ এমন কিছু করবে সে ভাবতে পারে নি। সেই মুহুর্তে তার প্রচন্ড রাগ হয়েছিল। আলিফের কাছ থেকে সে সত্যিই এরকম কিছু আশা করে নি। সেই কারণে সে হঠাৎ ওভাবে আলিফকে ধাক্কা দিয়ে বসে। তাৎক্ষণিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিল সে। তখন সে কিছুই পাবতে পারেনি।
নদী ঘরে চলে এলো। এখন প্রায় বিকাল। সে দুপুরে কিছুই খাই নি। তার ক্ষুধা লেগেছে, কিন্তু এখনও তার খেতে ইচ্ছে করছে না। তার মন ভালো নেই। একটুও ভালো নেই। সে কি কোনো ভুল করে ফেলেছে? আলিফকে এভাবে কাছে আসতে দেওয়া তার উচিত হয়নি। কিন্তু ছেলেটা কেমন করে তার কাছে চলে এসেছে সে বুঝতেই পারেনি। সে সেই কাছে আসাকে আটকাতে পারে নি। কিন্তু এখন তাকে আটকাতে হবে। আলিফকে সে ভালোবাসতে পারে না। তার ভাগ্যে ভালোবাসা বলতে কিছু নেই।
নদী শুয়ে পড়লো। একটা বালিশ টেনে নিয়ে সেটা দিয়ে মুখটা চেপে ধরল। সে কি কান্না করছে? হয়তো নিরব কান্না। যে কান্নার শব্দ শোনা যায় না। হয়তো ওই বালিশটা শুধু জানলো, নদীর বুকে গভীর ক্ষতবিক্ষত আরেকটা নদী লুকিয়ে আছে। যে নদীতে কোনো জোয়ার ভাটা নেই। কোনো আলো নেই। কোনো আনন্দ নেই। আছে শুধু একরাশ দুঃখ-কষ্ট!
নদীর চোখ ফুলে গেছে। লাল হয়ে উঠেছে। তার মা তার রুমে এলে সে তড়িঘড়ি করে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলেও সে কিছুই লুকাতে পারলো না।
দুইদিন পর আকস্মিক ভাবে আলিফের সাথে নদীর সিঁড়িতে দেখে হয়ে গেলো। নদীকে দেখে আলিফ হাত নাড়িয়ে বলল, "তুমি কি সত্যি এখনো রাগ করে আছো? আমি মেসেজ দিলে আগের মত রিপ্লাই দেও না। সেদিন দেখা করতে বললাম, দেখা করলে না। আমাকে কি এইবারের মত ক্ষমা করে দেওয়া যায় না?"
"আমি রাগ করে নেই আলিফ। আমি শুধু আমাদের সম্পর্কটা বুঝতে নিজেকে সময় দিচ্ছি।" নদী সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে বলল।
"আমাদের সম্পর্ক!" আলিফ সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে এটুকু বলে থামলো। তারপর সে আবার বলল, "তুমি কি আমাকে পছন্দ করো না?"
নদী তাৎক্ষণিক উত্তর দিলো না। সে হেঁটে নিচে নেমে এলে আলিফও তার পিছে পিছে নিচে নেমে এলো। সিঁড়িতে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা নদীর উচিত মনে হয়নি।
নদী নিচে এসে আলিফকে বলল, "এখানে পছন্দ অপছন্দের চেয়ে বড় বিষয়, বয়সে আমি তোমার বড়। এছাড়া আরো বড় একটা সমস্যা আছে।" নদী সরাসরি আলিফকে বলতে পারলো না সে তাকে অপছন্দ করে। সে চেয়েছিল, এটাই বলবে কিন্তু তার মনকে সেটা বলতে রাজি করাতে পারেনি। কথাটা বলতে তার কষ্ট হচ্ছিল।
আলিফ বলল, "কি সমস্যা? আমি সবকিছু সামলে নিবো।"
"মানুষ চাইলেই সবকিছু করতে পারে না। মানুষ শুধু মুখেই বলতে পারে, সে সবকিছু সামলে নিবে। সবকিছু করতে পারবে। কিন্তু দিন শেষে দেখা যায়, সে কিছুই করতে পারে না। সমস্যা দেখে পালিয়ে যায়। শুধু শুধু আগ বাড়িয়ে সমস্যা মধ্যে নিজেকে জড়াতে চায় না।" নদী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সে কিছুটা সময় তার কথা গুছিয়ে নিয়ে আবার বলল, "আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বাইরে অন্য কোনো সম্পর্কে গড়ে উঠা সম্ভব না। তুমি এটা এখনই বুঝে উঠলে আমাদের দুইজনের জন্যই ভালো।"
"কেনো সম্ভব না? বয়স শুধু মাত্র অযুহাত। এছাড়া আমাদের বয়সের পার্থক্য মাত্র দুই বছর। এটা কোনো বড় বিষয় না। যদি অন্য কোনো সমস্যা থাকে তাহলে সেটা আমাকে বলতে পারো।"
নদী একবার ভাবলো সে সবকিছু আলিফকে খুলে বলবে। কিন্তু পরক্ষণেই সে সিন্ধান্ত পরিবর্তন করলো। সে কিছু বলল না।
"আলিফ, আমাকে তোমার পরিবার মেনে নিবে না। আমার মত একটা মেয়েকে তোমার পরিবার কেনো, কোনো পরিবার স্বইচ্ছায় মেনে নিবে না।" নদী এটুকু বলে থামলো। আলিফ কোনো কথা বলল না। নদী আবার বলল, "এখনো সময় আছে, আমরা চাইলেই এটা থেকে বের হতে পারি। এখনো দেরি হয়ে যায়নি।"
নদী কথা শেষ করে হাঁটা শুরু করল। আলিফ তাকে আটকালো না। সে পাথর হয়ে গেলো। সে দাঁড়িয়ে নদীর চলে যাওয়া দেখলো। সে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না এখন তার কি করা উচিত। নদী বলে গেলো, এখনো দেরি হয়নি। কিন্তু আলিফের জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। সে নদীকে ভালোবাসে। এখন তার পক্ষে নদীকে চাইলেই ভুলে যাওয়া সম্ভব না।
নদীর সাথে আলিফের যোগাযোগ কমে এলো। নদী ইচ্ছে করেই কমিয়ে দিয়েছে। নদী দেখা করাও কমিয়ে দিলো। মাঝেমাঝে আলিফ নদীকে দেখার জন্য প্রবল তৃষ্ণা অনুভব করে বুকের গহীনে। সেখানে খাঁ খাঁ মাঠ। প্রচন্ড রোদের তাপে মাঠি ফেটে চৌচির। একবিন্দু পানি অভাবে মরে যাচ্ছে তার বুকের সব সবুজ অরণ্য। নদী কি তাকে একটু ভিজিয়ে দিতে পারে না? নদী হঠাৎ এমন কঠিন, রূর হয়ে গেলো কীভাবে? আলিফ কিছু বুঝে উঠতে পারে না। তার দিন কাটতে থাকে এক বিন্দু পানির অপেক্ষায়। একমাত্র নদীই পারে তাকে এই অবস্থা থেকে রক্ষা করতে।
আলিফ কতদিন ক্যাম্পাস যায় না, তার ঠিক নেই। ক্লাসের কোনো খোঁজ খবর নেয় না। তার ফোন আজকাল দিনের অর্ধেক সময় বন্ধই থাকে। রুদ্র প্রায় তাকে ফোন করে, কিন্তু সে রিসিভ করে না। সে বেলকনিতে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে নদীকে দেখতে পেলে, সে ছুটে নদীর কাছে চলে যায়। কিন্তু নদীর শীতল জলে সে পা ভেজাতে পারে না। নদী কেমন যেনো বরফে পরিনত হয়েছে।
আলিফ নদীকে প্রায় মেসেজ দেয়। নদী যেইসব মেসেজের কোনো রিপ্লাই দেয় না। আলিফ মাঝেমধ্যে ফোন দেয়। কিন্তু সে জানে নদী ফোন রিসিভ করলেও কোনো কথা বলতে পারবে না। তবুও ফোন দেয়৷ ফোন দিতে ইচ্ছে করে। ফোন রিসিভ করলেই হবে, সে নিরবতার ভাষায় সবকিছু বুঝে নিবে। কিন্তু নদী ফোন রিসিভ করে না।
আলিফ একদিন মধ্যরাতে নদীকে দীর্ঘ একটা মেসেজ দিলো। একটা কবিতা। সে এই কবিতাটা রুদ্রের ডায়েরিতে পড়েছিল। তার আজ, এখন সেই লেখাটা ভীষণ মনে পড়ছে। তার মনে হচ্ছে, সেই লেখাটা একমাত্র তার জন্যই লেখা হয়েছে। তার মনের সকল কথা, সেই ছোট্ট লেখায় ফুটে উঠেছে। সে নদীকে যা বলতে চায়, সেটা এই লেখায় মধ্যেই আছে। সে লেখাটা মনে করার চেষ্টা করতেই, পুরো লেখাটা তার মাথায় ফুটে উঠলো। সে সেটা টাইপ করে নদীকে পাঠিয়ে দিলো।
খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখে নদীর ঘুম ভাঙে। সে আর ঘুমাতে পারে না। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আলিফ মেসেজ দিয়েছে। সে আলিফের মেসেজের রিপ্লাই না দিলেও প্রতিটা মেসেজ পড়ে। সে মেসেঞ্জারে ঢুকে আলিফের মেসেজটা পড়লো।
আমি তোমাকে চাই,
সকাল, দুপুর, রাত্রির মত করে।
আমি তোমাকে চাই,
মেঘেদের মত করে, বৃষ্টির মত করে।
আমি তোমাকে চাই,
আমার সকল সুখে, আনন্দে, দুঃখে।
আমি শুধু তোমাকে চাই,
আমার মন খারাপে, আমার একাকিত্বে!
আমি তোমাকে চাই,
আমার সকল চাওয়াতে, হাসিতে।
আমি শুধুই তোমাকে চাই,
আমার সকল ভালোবাসাতে!
নদী মেসেজটি তিনবার পড়ে ফেলল। তারপর তার চোখ থেকে অবাধ্য শিশুর মত অশ্রু বেরিয়ে এলো। আলিফ এমন কেনো? নদীর কান্না থামে না। সময়ের সাথে সেটা বাড়তে থাকে। তখন বাইরে থেকে ফজরের আজান ভেসে আসে। কিন্তু নদী তা শুনতে পায় না। সে গুঙিয়ে গুঙিয়ে কাঁদে। তার ছোট্ট বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়।
চলবে...
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)