30-12-2022, 12:33 PM
অসমাপ্ত...
ক'দিন আগেই জিয়া একটা অ্যাপ ইনস্টল করে দিয়েছে ফোনে। আর বলেছে "মা, এই অ্যাপটাতে এন্ড অফ দ্য ইয়ার সেল চলছে গোটা ডিসেম্বর মাস জুড়ে। লিপস্টিক টিপস্টিক সবেতেই প্রচুর ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। তুমি কেনো না কিছু।"
মেয়ের কথা শুনে হেসেছেন সঞ্চারী।
যখন সময় ছিল, নতুন বিয়ের গন্ধ লেপ্টে ছিল গায়ে - সেই আটের দশকের শেষের দিকে, তখনই সেভাবে কিছু কেনেন নি কখনও। সঙ্গতিও ছিল না অবশ্য। নইলে, ইচ্ছে কি হতো না! তারপর তো একের পর ঝড় গেল। আর সেইসব ঝড় সামলাতে সামলাতেই সুনামি বয়ে গেল জীবন ভর! আর কি, "যে যেমন ভাগ্য নিয়ে আসে!" ভাবেন সঞ্চারী।
জিয়া অবশ্য রাগ করে আজকাল। বড় হচ্ছে তো, কুড়ি সালের ওই বিচ্ছিরি সময়েও চাকরি পেয়ে গেছিল, দেখে তো মনে হয় ভালোই কাজ করছে। তাই নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ও খুব বেড়েছে মেয়ের। প্রায়ই দাপটের সঙ্গে বলে ওঠে "মা, তুমি তো এমন কিছু গাঁইয়া না, মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়স। আমাদের বম্বে অফিসের একজন সিনিয়র ভি পি ম্যাডামের বয়স পঁয়তাল্লিশ - এই নভেম্বর মাসে বিয়ে করলেন। আর তুমি! সারাজীবন ওই হাল্কা লিপস্টিক আর একটা টিপের বাইরে কিচ্ছু পরলে না।"
"আমার ভাল লাগে না সাজতে, জিয়া।" ক্লান্ত স্বরে বলে ওঠেন সঞ্চারী। যতই নিজেকে খুব বড় হয়েছে ভাবুক না কেন, আদতে তো সংসারের মারপ্যাঁচ এখনও কিছুই দেখেনি মেয়ে! বম্বেতে ওদের কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাডাম যেটি করতে পারেন… ওনার পক্ষে এখানে সম্ভব? আর, যখন বয়স কম ছিল তখন বেঁচে থাকাটাই ছিল তীব্র অনিশ্চিত। কুড়িতে বিয়ে, পঁচিশে বিধবা! তখন জিয়া আড়াই। ব্রতীন প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন, খুব বড় কোম্পানি নয়, কিন্তু কমপেনসেটারি গ্রাউন্ডে চাকরি পেয়েছিলেন উনি। তবে, টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকায় স্যালারি ছিল খুব কম। তারমাঝেও শ্বশুরবাড়ি থেকে কাজ করা নিয়ে আপত্তি ছিল। অশান্তিও হতো মাঝেমাঝেই…। পরে শাশুড়ি মা গত হবার পরে ভাসুরের প্রস্তাব মেনে বাড়ির ভাগ ছেড়ে দিয়ে, পাওনা টাকা থেকে ফ্ল্যাট কেনা… তারমাঝেই মেয়ের পড়াশোনা, কাজকর্ম সব দেখা - পঁচিশ যে কখন আটচল্লিশ হয়ে গেল!
আর, বিপদও তো ছিল কতরকমের। সাধারণ দেখতে ছিলেন, তবু কত চাউনিই যে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেত। বেশিরভাগ দৃষ্টিতেই অবশ্য লালসা লেখা থাকত। তাই তো বড্ড গা ঘিনঘিন করত। নিজেকে প্রায় লুকিয়েই রাখতেন তখন সঞ্চারী। মেয়ে যে লিপস্টিকের কথা বলছে, সে ও তো অবরে সবরেই পরতেন…। আজকালকার কথা আলাদা… তবে সেইসময় কেউ দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবেনইনি ওঁর জন্য। উনিও…মাঝে মাঝে খুব অসহায় লাগত… কাঁচাবয়সের আকুলতাও ছিল যথেষ্ট। মেয়েকে আঁকড়ে ধরে কত যে নিদ্রাহীন রাত কেটেছে…। কিন্তু কারো লালসাকে প্রশ্রয় দেবার কথা ভাবলেই ঘেন্না হতো। আর সেই করতে করতেই… কখন যে মনের কষ্টের সীমাবদ্ধতা পালটে 'লোয়ার ব্যাক পেইন' হয়ে গেল…
আজ জিয়ার জন্য একটা অন্যরকম টিফিন বানিয়েছেন সঞ্চারী। সুজি আর টকদই মিক্সিতে মিশিয়ে, সেই দিয়ে ব্যাটার তৈরি করে ধোসার মতো। মেয়েটা একটু পালটে পালটে খাবার খেতে ভালোবাসে। ওঁকে তো কেউ করে দেবার ছিল না…
"উফ মা, কি বানাচ্ছ গো আজ? বেশ স্মোকি একটা গন্ধ ছাড়ছে?" জিয়ার স্নান হয়ে গেছে।
"এই একটু ধোসার মতো। তেল ছাড়াই বানাচ্ছি।"
"আরে জিও মাই মাস্টার শেফ! তা একটা বা দুটো বেশি দিতে পারবে? মানে, তোমার হবে?"
একটু থমকে গেলেন সঞ্চারী। তারপর জিজ্ঞেস করলেন "বেশি? তুই খেতে পারবি? এটা কিন্তু আজই প্রথম করলাম - যদি খেতে সেরকম না হয়?"
"আরেএএ মাম্মিজান! আমার বস তো তোমার জন্য ফিদা!"
"আমার জন্য?" লাল হতে হতে বলেন সঞ্চারী।
"হ্যাঁ! রোজই লাঞ্চের সময়ে আমার খাবার টেস্ট করেন তো। বলেন তোমার হাতে নাকি জাদু আছে।"
"ধ্যাত, ওসব কিছু না।" তাড়াতাড়ি পুদিনাপাতা আর বাদাম দিয়ে ধনেপাতার একটা চাটনি বানাতে বানাতে বলেন সঞ্চারী।
"না গো শাক্য খুব খেতে ভালবাসে। আর তুমি তো কত কম জিনিস দিয়েও কত কিছু বানিয়ে দাও।" তাড়াতাড়ি রেডি হতে হতেই বলে জিয়া।
"বস? শাক্য? কি ব্যাপার ম্যাডাম?" হাল্কা একটা উৎকন্ঠা নিয়ে বললেন সঞ্চারী।
"আরে চিল মম! আমাদের অফিসে সবাই সবাইকে নাম ধরে ডাকে। স্যার ম্যাম বলার রেওয়াজ নেই এখানে, যদি না কোম্পানির ডিরেক্টর লেভেলের কেউ হন।"
"আমি জানি শাক্য কে" বলতে গিয়েও চুপ করে যান সঞ্চারী।
সবাইকে সবকথা বলতে নেই। মেয়েকে তো নয়ই।
আর কীই বা বলতেন! যে, জিয়ার ফেসবুক পোস্ট দেখে দেখে ওর সব কলিগদের প্রোফাইল খুলে দেখেছেন উনি? আর এখন এটাই ওনার একটা বড় পাসটাইম?
এমনকি… ক'দিন আগে একটা পোস্টে ওদের একসঙ্গে লাঞ্চ করার ছবি দিয়েছিল জিয়া। নিচে লিখেছিল "হোয়েন অফিস ইজ লাইক ইয়োর এক্সটেনডেড ফ্যামিলি।" সেই ফটোর নিচে শাক্যর কমেন্ট ছিল "দেন লেট আস ইনক্লুড ইয়োর গর্জিয়াস মম ইন দিস ফ্যাম! রোজ রোজ ডিলিশিয়াস খাবার পাব তবে আমরা…"।
কমেন্টটা দেখে হেসেছিলেন উনি। তারপর শাক্যবাবুর প্রোফাইলে ঢুঁ মেরেছিলেন একবার।
বেশ কায়দা করে তোলা ছবি সব। কোনোটায় মুখ বোঝা যায়, তো কোনোটায় হাতের এক একটা বিশেষ ভঙ্গিমা। মোটা ফ্রেমের কালো চশমা পরা একজন… ছবি দেখে মনে হয় বছর পঁয়ত্রিশ হবে।
নেই কাজ তো খই ভাজ! তাই জিয়ার আর কোনো ছবিতে কমেন্ট আছি কিনা দেখতে গিয়ে প্রথমেই নজরে পড়ল জিয়ার প্রোফাইলের ছবিটা। সেই মে মাসে, মাদার্স ডে তে তোলা… বাড়ির কাছের মলটার ফুডকোর্টে। জিয়া ওঁর কাঁধের ওপরে মুখ রেখে সেলফি তুলেছিল। আর সেই ছবির কমেন্টে লেখা "কী সুন্দর ছবিটা। তোর মা খুব সুন্দরী।" তার উত্তরে জিয়া লিখেছে "আর আমি?" তার উত্তর এসেছে "তুই তো একটা উচ্চিংড়ে! শি ইজ রিয়্যাল বিউটি।" মেয়ে আবার তার উত্তরে লিখেছে "আমার মা কে লাইন মেরে লাভ নেই বস! শি ইজ আ নান!"
লেখাটা পড়েই কান গরম হয়ে গেছিল সঞ্চারীর।
মেয়ে লিখল উনি নাকি একজন 'নান'...সন্ন্যাসিনী! সে তো এখন হয়েছেন… কিন্তু একটা সময়…
কিছুক্ষণ পর থেকেই অন্য একটা কথা মনে এলো। একটা ভাল কোম্পানির ম্যানেজার র্যাঙ্কে কাজ করা কেউ তাঁকে 'গর্জিয়াস', 'সুন্দরী' বলেছেন! এ ও তো বড় পাওনা।
কেন জানি না, সেটা জানার পর থেকেই শিরশির করছে ভেতরটা।
আর সেদিন থেকেই জিয়াকে একটু বেশি বেশি করেই খাবার পাঠাচ্ছেন সঞ্চারী। মেয়ে তো খেয়ালও করেনি… তবু কেন জানি না মনে হয়েছে আহা সবাই মিলে খাবে…।
ক'দিন আগেই জিয়া একটা অ্যাপ ইনস্টল করে দিয়েছে ফোনে। আর বলেছে "মা, এই অ্যাপটাতে এন্ড অফ দ্য ইয়ার সেল চলছে গোটা ডিসেম্বর মাস জুড়ে। লিপস্টিক টিপস্টিক সবেতেই প্রচুর ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। তুমি কেনো না কিছু।"
মেয়ের কথা শুনে হেসেছেন সঞ্চারী।
যখন সময় ছিল, নতুন বিয়ের গন্ধ লেপ্টে ছিল গায়ে - সেই আটের দশকের শেষের দিকে, তখনই সেভাবে কিছু কেনেন নি কখনও। সঙ্গতিও ছিল না অবশ্য। নইলে, ইচ্ছে কি হতো না! তারপর তো একের পর ঝড় গেল। আর সেইসব ঝড় সামলাতে সামলাতেই সুনামি বয়ে গেল জীবন ভর! আর কি, "যে যেমন ভাগ্য নিয়ে আসে!" ভাবেন সঞ্চারী।
জিয়া অবশ্য রাগ করে আজকাল। বড় হচ্ছে তো, কুড়ি সালের ওই বিচ্ছিরি সময়েও চাকরি পেয়ে গেছিল, দেখে তো মনে হয় ভালোই কাজ করছে। তাই নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ও খুব বেড়েছে মেয়ের। প্রায়ই দাপটের সঙ্গে বলে ওঠে "মা, তুমি তো এমন কিছু গাঁইয়া না, মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়স। আমাদের বম্বে অফিসের একজন সিনিয়র ভি পি ম্যাডামের বয়স পঁয়তাল্লিশ - এই নভেম্বর মাসে বিয়ে করলেন। আর তুমি! সারাজীবন ওই হাল্কা লিপস্টিক আর একটা টিপের বাইরে কিচ্ছু পরলে না।"
"আমার ভাল লাগে না সাজতে, জিয়া।" ক্লান্ত স্বরে বলে ওঠেন সঞ্চারী। যতই নিজেকে খুব বড় হয়েছে ভাবুক না কেন, আদতে তো সংসারের মারপ্যাঁচ এখনও কিছুই দেখেনি মেয়ে! বম্বেতে ওদের কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাডাম যেটি করতে পারেন… ওনার পক্ষে এখানে সম্ভব? আর, যখন বয়স কম ছিল তখন বেঁচে থাকাটাই ছিল তীব্র অনিশ্চিত। কুড়িতে বিয়ে, পঁচিশে বিধবা! তখন জিয়া আড়াই। ব্রতীন প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন, খুব বড় কোম্পানি নয়, কিন্তু কমপেনসেটারি গ্রাউন্ডে চাকরি পেয়েছিলেন উনি। তবে, টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকায় স্যালারি ছিল খুব কম। তারমাঝেও শ্বশুরবাড়ি থেকে কাজ করা নিয়ে আপত্তি ছিল। অশান্তিও হতো মাঝেমাঝেই…। পরে শাশুড়ি মা গত হবার পরে ভাসুরের প্রস্তাব মেনে বাড়ির ভাগ ছেড়ে দিয়ে, পাওনা টাকা থেকে ফ্ল্যাট কেনা… তারমাঝেই মেয়ের পড়াশোনা, কাজকর্ম সব দেখা - পঁচিশ যে কখন আটচল্লিশ হয়ে গেল!
আর, বিপদও তো ছিল কতরকমের। সাধারণ দেখতে ছিলেন, তবু কত চাউনিই যে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেত। বেশিরভাগ দৃষ্টিতেই অবশ্য লালসা লেখা থাকত। তাই তো বড্ড গা ঘিনঘিন করত। নিজেকে প্রায় লুকিয়েই রাখতেন তখন সঞ্চারী। মেয়ে যে লিপস্টিকের কথা বলছে, সে ও তো অবরে সবরেই পরতেন…। আজকালকার কথা আলাদা… তবে সেইসময় কেউ দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবেনইনি ওঁর জন্য। উনিও…মাঝে মাঝে খুব অসহায় লাগত… কাঁচাবয়সের আকুলতাও ছিল যথেষ্ট। মেয়েকে আঁকড়ে ধরে কত যে নিদ্রাহীন রাত কেটেছে…। কিন্তু কারো লালসাকে প্রশ্রয় দেবার কথা ভাবলেই ঘেন্না হতো। আর সেই করতে করতেই… কখন যে মনের কষ্টের সীমাবদ্ধতা পালটে 'লোয়ার ব্যাক পেইন' হয়ে গেল…
আজ জিয়ার জন্য একটা অন্যরকম টিফিন বানিয়েছেন সঞ্চারী। সুজি আর টকদই মিক্সিতে মিশিয়ে, সেই দিয়ে ব্যাটার তৈরি করে ধোসার মতো। মেয়েটা একটু পালটে পালটে খাবার খেতে ভালোবাসে। ওঁকে তো কেউ করে দেবার ছিল না…
"উফ মা, কি বানাচ্ছ গো আজ? বেশ স্মোকি একটা গন্ধ ছাড়ছে?" জিয়ার স্নান হয়ে গেছে।
"এই একটু ধোসার মতো। তেল ছাড়াই বানাচ্ছি।"
"আরে জিও মাই মাস্টার শেফ! তা একটা বা দুটো বেশি দিতে পারবে? মানে, তোমার হবে?"
একটু থমকে গেলেন সঞ্চারী। তারপর জিজ্ঞেস করলেন "বেশি? তুই খেতে পারবি? এটা কিন্তু আজই প্রথম করলাম - যদি খেতে সেরকম না হয়?"
"আরেএএ মাম্মিজান! আমার বস তো তোমার জন্য ফিদা!"
"আমার জন্য?" লাল হতে হতে বলেন সঞ্চারী।
"হ্যাঁ! রোজই লাঞ্চের সময়ে আমার খাবার টেস্ট করেন তো। বলেন তোমার হাতে নাকি জাদু আছে।"
"ধ্যাত, ওসব কিছু না।" তাড়াতাড়ি পুদিনাপাতা আর বাদাম দিয়ে ধনেপাতার একটা চাটনি বানাতে বানাতে বলেন সঞ্চারী।
"না গো শাক্য খুব খেতে ভালবাসে। আর তুমি তো কত কম জিনিস দিয়েও কত কিছু বানিয়ে দাও।" তাড়াতাড়ি রেডি হতে হতেই বলে জিয়া।
"বস? শাক্য? কি ব্যাপার ম্যাডাম?" হাল্কা একটা উৎকন্ঠা নিয়ে বললেন সঞ্চারী।
"আরে চিল মম! আমাদের অফিসে সবাই সবাইকে নাম ধরে ডাকে। স্যার ম্যাম বলার রেওয়াজ নেই এখানে, যদি না কোম্পানির ডিরেক্টর লেভেলের কেউ হন।"
"আমি জানি শাক্য কে" বলতে গিয়েও চুপ করে যান সঞ্চারী।
সবাইকে সবকথা বলতে নেই। মেয়েকে তো নয়ই।
আর কীই বা বলতেন! যে, জিয়ার ফেসবুক পোস্ট দেখে দেখে ওর সব কলিগদের প্রোফাইল খুলে দেখেছেন উনি? আর এখন এটাই ওনার একটা বড় পাসটাইম?
এমনকি… ক'দিন আগে একটা পোস্টে ওদের একসঙ্গে লাঞ্চ করার ছবি দিয়েছিল জিয়া। নিচে লিখেছিল "হোয়েন অফিস ইজ লাইক ইয়োর এক্সটেনডেড ফ্যামিলি।" সেই ফটোর নিচে শাক্যর কমেন্ট ছিল "দেন লেট আস ইনক্লুড ইয়োর গর্জিয়াস মম ইন দিস ফ্যাম! রোজ রোজ ডিলিশিয়াস খাবার পাব তবে আমরা…"।
কমেন্টটা দেখে হেসেছিলেন উনি। তারপর শাক্যবাবুর প্রোফাইলে ঢুঁ মেরেছিলেন একবার।
বেশ কায়দা করে তোলা ছবি সব। কোনোটায় মুখ বোঝা যায়, তো কোনোটায় হাতের এক একটা বিশেষ ভঙ্গিমা। মোটা ফ্রেমের কালো চশমা পরা একজন… ছবি দেখে মনে হয় বছর পঁয়ত্রিশ হবে।
নেই কাজ তো খই ভাজ! তাই জিয়ার আর কোনো ছবিতে কমেন্ট আছি কিনা দেখতে গিয়ে প্রথমেই নজরে পড়ল জিয়ার প্রোফাইলের ছবিটা। সেই মে মাসে, মাদার্স ডে তে তোলা… বাড়ির কাছের মলটার ফুডকোর্টে। জিয়া ওঁর কাঁধের ওপরে মুখ রেখে সেলফি তুলেছিল। আর সেই ছবির কমেন্টে লেখা "কী সুন্দর ছবিটা। তোর মা খুব সুন্দরী।" তার উত্তরে জিয়া লিখেছে "আর আমি?" তার উত্তর এসেছে "তুই তো একটা উচ্চিংড়ে! শি ইজ রিয়্যাল বিউটি।" মেয়ে আবার তার উত্তরে লিখেছে "আমার মা কে লাইন মেরে লাভ নেই বস! শি ইজ আ নান!"
লেখাটা পড়েই কান গরম হয়ে গেছিল সঞ্চারীর।
মেয়ে লিখল উনি নাকি একজন 'নান'...সন্ন্যাসিনী! সে তো এখন হয়েছেন… কিন্তু একটা সময়…
কিছুক্ষণ পর থেকেই অন্য একটা কথা মনে এলো। একটা ভাল কোম্পানির ম্যানেজার র্যাঙ্কে কাজ করা কেউ তাঁকে 'গর্জিয়াস', 'সুন্দরী' বলেছেন! এ ও তো বড় পাওনা।
কেন জানি না, সেটা জানার পর থেকেই শিরশির করছে ভেতরটা।
আর সেদিন থেকেই জিয়াকে একটু বেশি বেশি করেই খাবার পাঠাচ্ছেন সঞ্চারী। মেয়ে তো খেয়ালও করেনি… তবু কেন জানি না মনে হয়েছে আহা সবাই মিলে খাবে…।