Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
|| এক্কাদোক্কা ||

 
সৌরভ ভট্টাচার্য 
==============
কপালে শেষ ট্রেনই ছিল কাঁচরাপাড়ায় নামলাম ঠাণ্ডা জাঁকিয়ে পড়েছে যা ভেবেছিলাম তাই কিচ্ছু নেই আমার গন্তব্য হাঁটাপথে আধঘন্টা এখন 
 
     প্লাটফর্ম থেকে নেমে আগে একটা লাঠি খুঁজলাম কুকুরগুলো জ্বালিয়ে মারবে নইলে পেয়েও গেলাম হাঁটা শুরু করলাম 
 
     সামনেই রেলের হাস্পাতাল এদিকটায় আসতে একটু গা ছমছম করে রাতে অল্প কুয়াশা কুয়াশা পড়েছে হাঁটার স্পিড বাড়িয়ে দিলাম 
 
     সবে ফার্স্ট এভিনিউটা ধরেছি, হঠাৎ পাশে আলো এসে পড়ল টোটো একটা 
 
     কোথায় যাবেন?
 
     দরকার নেই দাদা.. এগিয়ে যান..
 
     আরে কোথায় যাবেন বলুন না
 
     চাকলা 
 
     আসুনআমিও ওদিকেই যাব.. ছেড়ে দিইপঞ্চাশ টাকা দেবেন 
 
      আসলে সমস্যাটা হল সেইখানেই টাকা নেই একটা দশ টাকা পড়ে আছে বললাম, যান না দাদালাগবে না বললাম তো….
 
     চলে গেল 
 
                          =======
 
     আমার সমস্যাটা হল হিসাবের কাঁকিনাড়াতে মামাদের চশমার দোকান নতুন করে সাজানো হচ্ছে আমার উপর দায়িত্ব দোকান বন্ধ করে ফেরার আজ মিস্ত্রি দেরি করল কাজ শেষ করতে খিদে পেয়ে গিয়েছিল এটা সেটা খাওয়ায় পর এই পড়ে আছে পকেটে 
 
     ফার্স্ট এভিনিউয়ের শেষে টোটোটা দাঁড়িয়ে চালক মুখটা বার করে আমার দিকে তাকিয়ে
 
    আসুন না দাদাআচ্ছা তিরিশ দেবেন….
 
    নেই... দশ আছেহবে? তাছাড়া সেটাই বা দেব কেনযাব না তো বললামহ্যাজাচ্ছেন কেন?
 
     যা শালা!
 
     চলে গেল 
 
     আমি ডানদিকে ঘুরে ফিফথ এভিনিউয়ের দিকে এগোলাম বেশ কনকন করছে পা কিটো পায়ে মোজাটা কেন যে আনলাম না ইচ্ছা করছে জ্যোৎস্নার সঙ্গে কথা বলি থাক প্রচুর লোক ওদের বাড়ি ওর দাদার বিয়ে কাল আমাকে সময় দিয়েছে চার বছর তার মধ্যে দোকান দাঁড় করিয়ে দেব বড়মামা হেল্প করবে তিরিশ বছর হবে তখন আমার আজকাল বিয়ের জন্য এমন কিছু দেরী নয় জোনপুরে দোকান ভাড়া পাওয়া যাবে 
 
     ফিফথ এভিনিউয়ের সামনে আবার দাঁড়িয়ে টোটোটা 
 
     আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম রাস্তা চেঞ্জ করব? একটু ঘুর হবে এই ফোর্থ এভিনিউ ধরে এগোলে যাব? কিন্তু কেন? ব্যাটার কোনো বদ মতলব আছে কি? কিন্তু কি নেবে আমার কাছে? মাল খেয়ে আছে?
 
     এগোলাম সে টোটো থেকে নেমে দাঁড়ালো আমার মুখোমুখি রাস্তা আটকে দাঁড়ালো খপ্ করে আমার হাতটা ধরে বলল, টাকা লাগবে না…. বোনটা মর্গেসুইসাইড…. লাশ কাল দেবেবড্ড ভয় লাগছেআমি বেরিয়েছিলাম সুইসাইড করতে….. মনে মনে ভেবেছিলাম রাস্তায় যদি কাউকে দেখি.. তবে জানব ঠাকুর চাইছেন আমি বাঁচিকেউ না থাকলে ভাবব.. তাই ইচ্ছা করে রেলকলোনিতে এলামজানি কেউ থাকে না এই সময়ে…  আপনি বলুন তো ঠাকুর আমায় কেন বাঁচতে বলছেন….
 
                         =======
 
     কেন মরলেন উনি?
 
     বরটার অন্য মেয়ের সঙ্গে লাফড়া ছিলআমার বোনও কিছু ধোয়া তুলসীপাতা ছিল না দাদাকিন্তু হাজার হোক বোন তোকি জানি হঠাৎ সেন্টি খেয়ে কেন গলায় দড়ি দিয়ে দিল….
 
     আমি আর বিশ্বজিৎ সামনা সামনি বসে বোনের নাম বলেনি 
 
     হঠাৎ নেমে গেল টোটোর মাথায় হাত দিয়ে বলল, কি শিশির পড়েছে দেখুনআসুন 
 
     অন্য সময় হলে হাত দিতাম না এখন নামলাম হাত শিশিরে ভিজল বললাম, বাড়িতে কে আছে?
 
     মা, বাবা, আমিব্যস...
 
     সুইসাইড করে নিই? আসলে বোনটা আমার জান ছিলআমার বাইক ছিল জানেনগায়ের রক্ত জল করে কিনেছিলামমালটার বিয়ের জন্য বেঁচে দিলাম…..
 
     হুস্ করে কেঁদে ফেলল স্বাভাবিক না কান্নাটা রাস্তায় উবু হয়ে বসে চালকের আসনে হাতটা দিয়ে কাঁদছে কি সব বলছে 'টা কুকুর ঘেউঘেউ করে তেড়ে এলো আমি ভিতরে গিয়ে বসলাম কি করব, চলে যাব
 
                         =======
 
     ঠক্ করে একটা আওয়াজ হল বিশ্বজিৎ সিট থেকে মাথাটা তুলে বলল, এখনই! দাদার সঙ্গে একটু কথা বলছিলাম যে
 
     আমি কিছু বুঝতে না পেরে হাঁ করে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কুকুরগুলো অসম্ভব ডাকছে রেললাইনটা খুব দূরে নয় মনে হচ্ছে একটা মালগাড়ি যাচ্ছে 
 
     বিশ্বজিৎ আমার সামনে এসে টোটোর ছাদে দুটো হাত দিয়ে আমার মুখের কাছে মুখ এনে বলল, বোনটা এসেছে খেলবে বলছে আপনি একটু বসবেন?
 
     আমি 'হ্যাঁ, না' কিছু বলার আগেই দেখলাম ফোর্থ এভিনিউয়ের পীচের রাস্তার ওপর খসখস করে এক্কাদোক্কার ছক কাটা হয়ে গেল
 
     বিশ্বজিৎ ওদিকে তাকিয়ে বলল, প্রথমে তোর দান তুই খেল আমি আসছি
 
     আমার কপাল ঘামে ভিজছে তলপেটে মাংসপেশিগুলো খামচে ধরছে আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যা দেখছি বিশ্বজিৎ হাসছে খেলছে আমি আর কাউকে দেখছিও না, কথাও শুনতে পারছি না 
 
                         =======
 
     হঠাৎ "দাদা একটু আসছি", বলে বিশ্বজিৎ অন্ধকারে মিলিয়ে গেল আমি উঠতে চাইছি, কিন্তু শরীরে ওঠার শক্তি নেই মামাকে ফোন করব? থাক টোটো থেকে নামলাম বলতে গেলে জোর করে নামালাম নিজেকে দুটো পায়ে ঝিঁ ঝিঁ ধরে টোটোটা ধরে দাঁড়ালাম কিছুক্ষণ যতক্ষণ না পায়ে সাড় আসে প্রায় ছুটতে শুরু করলাম
 
     চাকলা ঢোকার মুখে হঠাৎ মনে হল পিছন থেকে টোটোটা আসছে দেখলাম প্রচন্ড স্পীডে টোটো চালিয়ে আসছে বিশ্বজিৎ একবার ভাবলাম দৌড়াই লাভ নেই ধরে ফেলবে যা থাকে কপালে দাঁড়িয়ে পড়লাম নিজের বুকের আওয়াজ রেলের চাকার মতোন ঘটাশ ঘটাশ করছে
 
      বিশ্বজিৎ টোটোটা সামনে দাঁড় করাল বলল, সরি দাদা আপনাকে অকারণে অনেকটা বিব্রত করে ফেললাম আপনি একটা কথা শুধু আমায় বলুন, আমি কি বোনের সঙ্গে যাব, না থাকব? বোন বলল, মদনপুর থেকে ডাউনে একটা মালগাড়ি আসছে অপেক্ষা করছে রেলের হাস্পাতালের সামনে রেললাইনের ধারটায় ওখানে আমি আর বোন লাইনের ওপর পাথর রেখে, পয়সা রেখে দেখতাম লাইনে চাপা পড়লে কি হয় গলাটা রেখে দেব দাদা? নইলে বোনটা একা হয়ে যাবে
 
       আমার মাথাটা সম্পূর্ণ চিন্তাশূন্য কিচ্ছু ভাবতে পারছি না বুকের মধ্যে ভুটভুটি কাটার শব্দ স্পষ্ট নয় বিশ্বজিৎ ফ্যালফ্যাল করে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে যেতেই তো পারে আমিও যেতেই পারি এই গলি, এই মাটি, এক আকাশ তারা --- এরাই তো থাকবে অনন্তকাল আমাদের থাকায় কি আসে যায়?
 
     টোটোটা দাঁড়িয়ে থাক রাস্তায় ডাউনে আসুক মালগাড়ি ছিন্ন হয়ে যাক, শেষ হয়ে যাক সব কার কি ক্ষতি?
 
     বললাম, বিশ্বজিৎ, কেন যাবেন... থাক না
 
     ফিরে এলাম তাকালাম না পিছনে টোটোর শব্দ মিলিয়ে গেল মাথার মধ্যে অঙ্কুরিত হচ্ছে দ্বন্দ্ব ভুল করলাম
 
     পরের দিন ভোরে মামার বাইকটা নিয়ে ছুটলাম লাইনের দিকে কি দেখতে চাইছি? কি দেখলে খুশি হবো
 
     আকাশ অল্প অল্প ফরসা হচ্ছে কয়েকজন এই ভোরেও মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছে এত ঠান্ডাতেও বাঁচার কি প্রবল তাগিদ মানুষের! বাজার বসেনি এখনও মাছের গাড়ি ঢুকছে শাক-সব্জি আসছে ভ্যানে 
 
     কেউ কাটা পড়ে নি

[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 25-12-2022, 04:39 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)