24-12-2022, 03:55 PM
(11-08-2022, 01:54 PM)Bumba_1 Wrote:
চতুর্থ দৃশ্য
দৃশ্যপট এবং সময় :- বেনু সংঘের মাঠ, সন্ধ্যা ছটা .. মঞ্চ স্বল্পালোকিত। মঞ্চের বাঁদিকে পাগল টাকে দেখা যাচ্ছে, সে নানা রকম কাজে যেন ব্যস্ত। মঞ্চের ডান দিক থেকে ছেলের দল ঢুকছে, বলে ড্রপ দিচ্ছে, ওকে বল ছুঁড়ে দিচ্ছে। (সবই প্রায় অভিনয়ের মাধ্যমে .. অভিনয় হবে মাইমের মাধ্যমে)
(পাগলটারও যেন অন্য মূর্তি। সে একটা মুখোশ পড়েছে। লাঠি হাতে নাটকীয় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে ওঠে)
হারে রেরে রেরে রেরে
আসিস কেরে, আসিস কেরে?
সকলে - তুমি এখান থেকে যাও তো .. ভাগো .. আমরা খেলবো এখন।
পাগল - (মাথা নাড়িয়ে) হুঁ .. হুঁ .. হুঁ .. হুঁ .. রে ..
ও আমার চাঁদু রে
দেখবি এবার জাদু রে,
ভ্যানিশ করে উড়িয়ে দেবো
পড়বি গিয়ে মাদুরে।
(ডাক্তার জেঠু আর জগৎ দা মঞ্চের ডান দিকে একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে, ইশারায় ছেলেদের এগিয়ে যেতে বলছেন)
রাজু - (জোর দিয়ে) তুমি যাবে কিনা বলো? আবার ছড়া কাটা হচ্ছে! ভালো চাও তো সব গুটিয়ে নিয়ে চলে যাও, মাঠ আমাদের এক্ষুনি চাই।
পাগল - ও .. হো, মাঠ নিবি, মাঠ চাই, বল খেলবি .. আয়, আয়, আয়না .. তবে খেলি চল .. চটপট আয় .. কি হলো খেলবি না? ভয় পাচ্ছিস?
থাকে যদি প্রাণের মায়া
মারাস নে আর মাঠের ছায়া
ঘরে গিয়ে প্রাণ বাঁচা রে
হারে রেরে রেরে রেরে ..
দুলু - (এগিয়ে যায়) তবে রে।
পাগল - (সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে মঞ্চের মাঝখানে এসে দুলুর দিকে লাঠি বাগিয়ে ধরে, সেই মুহূর্তে ঝড়ের বেগে পিছন থেকে দেবুদা এসে পাগলটাকে জাপটে ধরে। পাগলটা নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে, রাজু ওর মুখোশটা খুলে নেয়। ধস্তাধস্তিতে পাগলের গোঁফদাড়ি খুলে যায়, অন্তু তাড়াতাড়ি সেগুলো টেনে খুলে নেয়, ডাক্তার জেঠু ও জগৎ দা চলে আসে।)
দেবু - এই দুলু .. জেঠুর কাছ থেকে গামছা নিয়ে হাত দুটো বাঁধ ওর, তারপর চলতো চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাই ক্লাবে।
পাগল - (তারস্বরে চিৎকার করে) বাঁচাও .. টুনুবাবু বাঁচাও।
দেবু - চুউউউপ .. মারবো এক থাপ্পড় .. চুপ কর ব্যাটা বদমাইশ, পাগল সেজেছে।
ডাক্তার - মারিস না, মারিস না .. ব্যাপারটা আগে জানা দরকার .. টুনুবাবুটা কে?
পাগল - (হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে) ছেড়ে দেন, বাবু ছেড়ে দেন। আমার কোন দোষ নাই, আপনার পায়ে পড়ি .. আমি গরীব মানুষ।
দেবু - (ধমকের সুরে) চুপ .. আগে বল পাগল সাজতে দিয়েছিলি কেন? কে তোকে সাজতে বলেছে?
পাগল - (ঢোক গিলে) বলছি বলছি .. একটু জল খাবো (হাত বাড়িয়ে দেখায়)
জগৎ - আচ্ছা ঠিক আছে .. ওকে একটু জল দে ..
অন্তু - (কোথা থেকে একটা বোতল এনে ওকে দিলো) এই নাও, খাও।
(পাগলটা জল খেয়ে মঞ্চের চারদিকে দেখে)
দেবু - এবার বল .. কে তোকে সাজতে বলেছিল?
পাগল - (কেঁদে ওঠে) বাবু ... নাম বললে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।
জগৎ - চিন্তা করিস না .. তোর কিচ্ছু হবে না, আমরা আছি তো, বল এবার।
পাগল - আমার কিছু হবে না তো? আমাকে বাঁচাবেন তো?
দেবু - (অধৈর্য হয়ে) এবার ঠিক মার খাবি, ধৈর্য চলে যাচ্ছে আমার।
পাগল - না বাবু মারবেন না, টুনুবাবু আমাকে এই কাজ করতে বলেছে।
ডাক্তার - টুনুবাবু আবার কে?
রাজু - ওই যে তখন বললাম, বিন্দা পিসির কে যেন একটা হয়।
পাগল - ভাইপো হয়।
ডাক্তার - এবার বুঝলাম, ও তোকে পাগল সাজতে বলেছে।
জগৎ - আর অমনি তুই পাগল সেজে নিলি! বোকা কোথাকার, এবার তোর কি হয় দ্যাখ..
পাগল - (জগৎ দার পায়ে পড়ে) না বাবু পেটের দেয় করেছি। আমি চুরি ডাকাতি করতে পারি না, খুন করতে পারি না, শুধু দিনমজুরি খাটি, হরবোলা হয়ে পাখির ডাক ডাকি আর যাত্রা করি। তাই টুনুবাবু আমাকে পাগল সেজে ছেলেদের ভয় দেখাতে বলেছে। (পাগল কাঁদতে থাকে)
ডাক্তার - তোমার বাড়ি কোথায়?
পাগল - মশাট বাবু, হাওড়া জেলায় ..
জগৎ - নাম কি?
পাগল - আজ্ঞে শিবু .. শিবচরণ দাস।
জগৎ - সেখান থেকে এখানে এলি কি করে?
শিবু - টুনুবাবু নিয়ে এসেছেন। মশাটে টুনুবাবুর শ্বশুরবাড়ি কিনা! টুনুবাবু বলেছে 'সারাদিন পাগল সেজে থাকবি, রাত আটটায় এসে নিয়ে যাবো।'
জগৎ - এর জন্য তোকে কি দেবে?
শিবু - টাকা দেবে বাবু .. পাঁচশো টাকা (হাতে করে দেখায়)
জগৎ - মাত্র পাঁচশো .. তার জন্য এত কান্ড!
রাজু - তোমাকে যদি এখন থানায় দিই, তাহলে কি হবে জানো?
শিবু - না বাবু থানায় দিও না, মরে যাবো।
জগৎ - আর যদি তোকে ছেড়ে দিই, তাহলে কি হবে?
শিবু - ও বাবা (ভয় সিঁটিয়ে যায়) না না বাবু ছেড়ে দিও না, তাহলে প্রোমোটার বাবু জানে মেরে ফেলবে।
জগৎ - ওহ্ .. এর মধ্যে আবার প্রোমোটারও আছে! (জেঠুর দিকে তাকিয়ে) বাপ রে এ তো আচ্ছা বিপদ .. কেস তো দারুণ প্যাঁচালো দেখছি।
ডাক্তার - (চিন্তিত হয়ে) তাই তো দেখছি, কোথাকার জল কোথায় যে গড়াবে কে জানে !
শিবু - হ্যাঁ বাবু, প্রোমোটার বাবুই তো টুনুবাবুকে বলেছে তার পিসির জমিতে 'ফেলাট' করে দেবে। তাই ...
দেবু - হ্যাঁ, তাই তুমি পাগল হয়েছো আর আমরা তোমার ভয়ে সুড়সুড় করে মাঠ ছেড়ে দেবো। টুনুবাবুকে মাঠের দখল নেওয়া দেখাচ্ছি (জেঠুর দিকে তাকিয়ে) স্যার চলুন তো বিন্দা পিসির বাড়ি যাই। পিসির মতটা আগে জানা দরকার। (এরপর শিবুর দিকে তাকিয়ে) শোন, তোকে আমরা আরো বেশি টাকা দেবো। পিসির কাছে সব কথা খুলে বলবি। না হলে এ্যায়সা ধোলাই দেবো না (বলে আবার চড় দেখায়)।
(সকলের প্রস্থান .. মঞ্চে ব্যান্ডের সুর .. ধীরে ধীরে মঞ্চ অন্ধকার হয়)
পঞ্চম দৃশ্য
দৃশ্যপট এবং সময় :- বিন্দা পিসির বাড়ি, সন্ধ্যে সাতটা। (ঘরে জেঠু, জগৎ, দেবু চেয়ারে বসে। ছেলেরা কেউ চেয়ারের পেছনের দিকে দাঁড়িয়ে, কেউ বিন্দা পিসির ঘরে রাখা পত্রপত্রিকা দেখছে, মাঝে মাঝে মুখাভিনয়ে কথা বলছে। মঞ্চের বাঁদিকে বিন্দা পিসির
বাড়ির ভিতর ঢোকার পথ। পিসি দু'হাতে দু কাপ চা নিয়ে ভিতর থেকে আসছেন - মঞ্চে আলো জ্বলে ওঠে)
বিন্দা পিসি - নিন দাদা চা খান। (জেঠু আর জগৎ দার হাতে একটা করে কাপ ধরিয়ে)
দেবু - পিসি আমাকে চা দিও না।
পিসি - কেন? একটুখানি খা.. দাঁড়া আমি আসছি। (পিসি ভেতরে যান একবার দেবুর চা নিয়ে আসেন, তারপর আবার ভেতর থেকে নিজের চা এবং একটা কৌটো আনেন)
দেবু - তুমি বসো, এখন একটা কিছু উপায় বলো।
পিসি - দাঁড়া, ছেলেদের একটা করে বিস্কুট দিই। (ছেলেদেরকে একে একে বিস্কুট দেন .. ছেলেরা বিস্কুট খায় এবং বড়রা চা খায়) সত্যি বলছি, আমি ভাবতেই পারছি না টুনু এতদূর গেছে!
জগৎ - কেন, আপনাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি কোনোদিন? আপনি কিছু জানতেন না?
পিসি - (উত্তেজিত হয়ে) আমি এ সবের বিন্দু বিসর্গও জানি না। তবে হ্যাঁ, মাঝে মাঝেই মাঠের জমিটা নেওয়ার জন্য উৎপাত করতো। (একটু থেমে কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করে) এই কিছুদিন আগের ঘটনা .. প্রায় দিন দশেক আগের কথাই হবে .. সন্ধ্যে সাতটা কিংবা সাড়ে সাতটা তখন .. বৃষ্টি পড়ছিল বাইরে একটা লোককে নিয়ে এলো টুনু ..
(বিন্দা পিসি কথা বলতে বলতে মঞ্চে অন্ধকার হয়ে গেল। একটা গোল স্পটলাইট মঞ্চের বাঁ দিকের কোনে ফেলা হলো। 'ফ্ল্যাশ-ফ্লোরে' ঘটনাটা দেখানো হবে .. সেখানে তিনজন কথা বলছে - দু'জন প্যান্ট শার্ট পরা লোক আর বিন্দা পিসি)
টুনু - পিসি, বলছি তুমি মাঠটা ছেড়ে দাও। এমন সুযোগ আর পাবে না। ওখানে অন্তত দুটো বড় অ্যাপার্টমেন্ট হবে, ৩২ টা ফ্ল্যাট হবে দু-দুটো ফ্ল্যাটের মালিক তুমি হবে .. ভাবো দেখি, কি কান্ডটা হবে। এটা কি একটা ফেলে দেওয়ার কথা?
পিসি - সে তুই যাই বলিস বাপু, ছেলেদের খেলার মাঠ আমি কেড়ে নেবো কি করে? ধর্মে সইবে আমার?
টুনু - উফ্, তোমার এই ধর্ম টর্ম ছাড়ো তো! বলি, ছেলেমেয়েদের খেলার জন্য তোমার কিসের গরজ? তোমার নিজের ছেলেপুলে নেই, নাতি নাতনি নেই, তাহলে ওদের জন্য তোমার মাথাব্যথা কেন? তোমার জমির কি পজিশন তুমি নিজেই জানো না। লুফে নেবে যে কোনো প্রোমোটার, কি বলেন অভয়বাবু? (অন্য ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে)
অভয় বাবু - হ্যাঁ, টুনুবাবুতো ঠিকই বলেছেন পিসিমা।
পিসি - না বাবা, সে হবার নয়। বাপঠাকুর্দার সময় থেকেই ছেলেরা ওই মাঠে খেলে আসছে, তাদের আশীর্বাদ আছে। আর আমি সেটা বিক্রি করে দেবো, এমন অন্যায় করতে পারবো না।
অভয় বাবু - এই তো .. আপনাদের এই এক সেন্টিমেন্ট! ওসব দিন এখন আর নেই। এখন এক ইঞ্চি জমি কেউ ফেলে রাখে না। কেন না জমি মানেই পয়সা, কলকাতা শহরে দেখুন না - যেদিকে তাকাবেন শুধু ফ্ল্যাট ফ্ল্যাট আর ফ্ল্যাট .. মফস্বলেও তাই। দেশের এত লোকসংখ্যা, তাদের থাকতে জায়গা তো দিতে হবে! এ ব্যাপারে আপনার তো একটা দায়িত্ব থাকবে।
টুনু - (ঘাড় নেড়ে সায় দেয়) হুঁ শুনলে তো, কত বড় কথাটা বললো অভয় বাবু (তারপর একটা কাগজ বের করে) নাও এই কাগজটায় একটা সই করে দাও। তিনজনের পার্টনারশিপে ফ্ল্যাটগুলো তৈরি হবে, এটাই তার প্রমাণ। কেউ তোমাকে ঠকাবে না।
পিসি - না রে সে হয় না, আমি সই করতে পারব না।
টুনু - (স্বগতোক্তি করে) ভালো কথায় দেখছি কাজ হবে না। (প্রকাশ্যে) তাহলে ফ্ল্যাট করাতে তোমার মত নেই, তাই তো?
পিসি - নাঃ একেবারেই না ..
অভয় বাবু - পিসিমা আর একবার ভাবুন। আপনি একা মানুষ, এরপর তো আপনাকে 'ওল্ডহোমে' যেতে হবে। এই ব্যবস্থা হলে আপনার ওখানে যাওয়ার কি দরকার?
পিসি - ওরে বাবা তোরা চুপ কর আমার মাথা ঘুরে যাচ্ছে। মাঠ আমি বেচবো না, বেচবো না, বেচবো না .. হয়েছে তো? এখন যা।
টুনু - ঠিক আছে থাকো তুমি তোমার খেলার মাঠ নিয়ে, চলুন অভয় বাবু।
(মঞ্চ অন্ধকার হয় কয়েক মুহূর্ত, আবার আগের দৃশ্য ফিরে আসে)
পিসি - তাহলে প্রোমোটার আর টুনুই এই কাজ করেছে। (পাগলের দিকে তাকিয়ে) আর তোর এত বড় সাহস, তুই এদের ভয় দেখাচ্ছিস?
শিবু - (পিসির পা ধরে ভেউ ভেউ করে কেঁদে ফেলে) ক্ষমা করো মা, ক্ষমা করো। আমাকে বাঁচাও এই কান মুলছি, এই নাকখৎ দিচ্ছি। আর হবেনা, কক্ষনো না, তুমি আমাকে বাঁচাও মা .. টুনূবাবু মেরে ফেলবে।
(শিবুর কান্না দেখে সকলেই বিচলিত হয়, কেউ কেউ গায়ে হাত দিয়ে সান্ত্বনা দেয়।)
দেবু - চুপ কর, মেরে ফেললেই হলো! কে কাকে মেরে ফেলে দেখছি।
ডাক্তার - কিন্তু দেবু করবে টা কি এখন? এটারই বা কি গতি হবে? আর মাঠের দখলই বা নেবে কি করে? এই সময় কারো সঙ্গে কোনো বিবাদে যাওয়াটাও তো ঠিক নয়। খুবই ভাবনার বিষয়, একেবারে দোটানায় পড়া গেলো।
পিসি - শুনুন দাদা অত চিন্তার কারণ নেই। টুনুর শাস্তি দরকার। আমরা 'কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলবো' ওকে দিয়েই ওদের শায়েস্তা করবো।
ডাক্তার - কি রকম, শুনি একবার। তুমি কি সেরকম কিছু ভেবেছো?
পিসি - ভেবেছি, বলবো আসুন (পিসি .. জেঠু দেবু এবং জগৎদার সঙ্গে কিছু পরামর্শ করে নেন মুখাভিনয়ের মাধ্যমে) ঠিক আছে তো?
(সকলে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়)
শিবু - পিসি আমার কি হবে?
পিসি - তোরই তো এখন সব থেকে বেশি কাজ। তুই মাঠে চলে যা, সারাদিন রোদে থেকে তোর মাথা গরম হয়ে গেছে, তুই অজ্ঞান হয়ে গেছিস - এটাই অভিনয় করবি।
শিবু - পিসি তারপর কি হবে?
পিসি - তুই মরার মতো পড়ে থাকবি, ডাক্তারবাবু তোকে দেখবার জন্য চেম্বারে নিয়ে আসবেন, তারপরে যা কাজ হবার হবে। (দেবুর দিকে তাকিয়ে) দেব নাও, চটপট কাজ শুরু করে দাও।
দেবু - নাও সবাই চলো। চলুন জেঠু, জগৎ দা চলুন, আমাদের অপারেশন শুরু করতে হবে। শিবু তুই মাঠে চলে যা। (ছেলেদের দিকে তাকিয়ে) তোরা আমার সাথে আয় জেঠুর চেম্বারে। আচ্ছা পিসি তাহলে আসি, তুমি ঠিক আটটায় চলে এসো।
পিসি - হ্যাঁ, আমি ঠিক সময়েই যাবো। তোমাদের কাজ যেন সিদ্ধ হয়। দুগ্গা দুগ্গা (সকলের প্রস্থান / মঞ্চ অন্ধকার হয়)
ষষ্ঠ দৃশ্য / শেষ দৃশ্য
দৃশ্যপট এবং সময় :- ডাক্তার জেঠুর চেম্বার, রাত আটটা। (মঞ্চ অন্ধকার, দরজা খোলা, কেউ কোথাও নেই। আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে শিবু ঘুমোচ্ছে অঘোরে। দুজন লোক চুপিসারে মঞ্চের ডান দিক থেকে ঢুকছে। একটা টর্চ হাতে নিয়ে মাঝে মাঝে জ্বালছে এবং কি যেন খুঁজছে। তারপর গোটা মঞ্চটাই একবার প্রদক্ষিণ করে নিলো।)
১ম জন - নাঃ কিছু দেখা যাচ্ছে না, ব্যাটা গেলো কোথায়?
২য় জন - কোথায় আর যাবে, এখানেই ওকে এনেছে শুনেছি।
১ম জন - ব্যাটা বদমাইশ, অজ্ঞান হওয়ার আর সময় পেলো না, আমাদের ফাঁসাবে দেখছি। (হঠাৎ টর্চের আলো দিয়ে পড়লো ঘরের কোণে হাইবেঞ্চের উপর শুয়ে থাকা শিবুর উপর) ওই তো শুয়ে আছে .. চলুন চলুন দেখি।
২য় জন - আস্তে আস্তে বেশি হড়বড় করবেন না, কেউ কোথাও টের পেয়ে গেলে বিপদ হবে। (দুজনে কাছে যায়, শিবুর নাকে হাত দিয়ে দেখে) নাহ্ মরে নি, ব্যাটা অজ্ঞান হয়ে আছে। আর না হয় ডাক্তার ঘুমের ওষুধ দিয়েছে।
১ম জন - ঠিক আছে চটপট করুন, বডিটাকে তুলে নিয়ে সোজা আপনার বাড়ি চলে যাবো। কেউ টের পাবে না।
২য় জন - হ্যাঁ, এখন এটাই আমাদের প্রথম কাজ, এখান থেকে নিয়ে গিয়ে ব্যাটাকে গিলিয়ে একেবারে জন্মের মতো ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারলেই, ব্যাস .. কেল্লাফতে। তারপর কাল থেকে নতুন প্ল্যান .. টুর্নামেন্ট খেলা দেখাচ্ছি! আমার নাম অভয়চরণ সামন্ত, কেলুপাড়ার ছেলে।
১ম জন - (টরচ ঘুরিয়ে) যাক এখন কেউ কোথাও নেই, আপনি ব্যাটার মুখটা চেপে বাঁধুন, আমি তুলে নিয়ে বাইরে চলে যাবো।
(২য় জন শিবুর মাথার কাছে গিয়ে, তার মুখের উপর একটা কাপড়ের ফেট্টি ধরেছে, আর ১ম জন কোমরের নিচে যেই না হাত দিয়েছে .. সঙ্গে সঙ্গে শিবু তরাক করে লাফিয়ে উঠে বসে পড়েই চিৎকার করে উঠলো 'দেবুদা, জেঠু পিসি ..')
(সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চের জোরালো আলো জ্বলে উঠলো। আর মঞ্চের চারদিক থেকে রাজু, রনি, শঙ্কু, দুলু, অন্তু, দেবুদা, জগৎদা ও জেঠু এক পা এক পা এগিয়ে এসে করে ঘিরে ধরলো ওদের দুজনকে। শিবুও বেঞ্চ থেকে নেমে পড়লো তাড়াতাড়ি। ওরা দু'জন পালাবার চেষ্টা করলে সকলেই মঞ্চের ডানদিক থেকে বাঁদিক পর্যন্ত অর্ধ বৃত্তাকারে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো।)
দেবু - কি টুনুদা পালাচ্ছো কার ভয়ে . পাগলের ভয়ে না আমাদের ভয়ে?
টুনু - দেবু .. হাত ছার, ভালো হবে না। হাত ছেড়ে কথা বল। (হাত ছাড়াবার চেষ্টা করে)
ডাক্তার - (অভয়ের হাতটা সজোরে ধরেন) ও তুমি এখন এই করছো? ও হলো কেলুপাড়ার অভয়। তুমি নিজেও তো একদিন এই মাঠে খেলেছো, তার এই প্রতিদান দিলে? বড় তালেবর হয়েছো, কায়দা করে জমি নেবে?
অভয় - (বিনীত ভাবে) ছাড়ুন ডাক্তার বাবু .. ছাড়ুন ..
ডাক্তার - বয়স্ক বিধবা মানুষকে ঠকাতে লজ্জা করে না? তোমরা কি বলো তো? মানুষ তো?
অভয় - (লজ্জিত ভঙ্গিতে) ভুল হয়ে গেছে ডাক্তারবাবু।
(পিসির প্রবেশ সঙ্গে থানার মেজবাবু)
ডাক্তার - আসুন এই যে দুই মক্কেল। একজনকে পাগল সাজিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে, বিধবার সম্পত্তি মারার ধান্দায় ছিলো।
মেজবাবু - (পিছনে কনস্টেবল) আপনারা ওদের হাত ছেড়ে দিন, আমি থানায় নিয়ে যাচ্ছি (কনস্টেবলের দিকে তাকিয়ে) এদের গাড়িতে তোলো।
(কনস্টেবল টুনুবাবু এবং অভয়চরণ দুজনকেই গাড়িতে নেওয়ার জন্য উইংসের কাছে যেতেই, পিসি ওদের দাঁড়াতে বললো)
পিসি - দাঁড়ান মেজবাবু, একটু দাঁড়ান। (চারজনেই ঘুরে দাঁড়ায়) - এই যে (একটা কাগজ দেখিয়ে) এইটা আমার 'দানপত্র' করা কাগজ .. এই কাগজে আমি লিখে দিলাম যে - আমার এই চার বিঘা জমি যুগ যুগ ধরে ছেলেদের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আপনারা (সকলের দিকে তাকিয়ে ( সকলের সাক্ষী থাকলেন .. এবার আসুন।
(ছেলেরা ছুটে এলো সবাই, পিসিকে তুলে ধরলো)
দেবু - থ্রি চিয়ার্স ফর বিন্দা পিসি ..
সকলে - হিপ্ হিপ্ হুররে ..
দেবু - থ্রি চিয়ার্স ফর বিন্দা পিসি ..
সকলে - জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ ..
|| সমাপ্ত ||
Multi talented bhai Bumba amader, hats off to you bhai