24-12-2022, 03:47 PM
(02-01-2022, 08:55 PM)Bumba_1 Wrote:
ভীতি
কাহিনী এবং প্রচ্ছদ :- বুম্বা
দক্ষিণপাড়ার চার মন্দিরতলায় মালতীবালা হাইকলেজের উল্টোদিকে নিজস্ব সাইকেলের গ্যারেজ ছিলো শম্ভুর।
মালতীবালা মহাবিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়তো কুসুম। বড়লোক বাড়ির মেয়ে .. তাদের হাতিশালে হাতি আর ঘোড়াশালে ঘোড়া না থাকলেও শহরের পশ্চিমপ্রান্তে একটি বিশাল দোতলা বাড়ি - যা 'রায়চৌধুরী বাড়ি' নামে খ্যাত ছিলো এবং দু'টি বড় চার-চাকার গাড়ি ছিলো। কুসুমের বাবা মনোতোষ বাবু দু'টি তেলকলের মালিক ছিলেন।
পড়াশোনাতে তেমন মেধাবী ছাত্রী না হলেও মুখস্ত বিদ্যার দরুন এবং গৃহশিক্ষকের অধ্যাবসায়ে প্রতি ক্লাসে ভালোভাবেই উত্তীর্ণ হয়ে যেতো কুসুম। শরীর বিশেষ খারাপ না হলে, কলেজে অনুপস্থিত থাকার পক্ষপাতী সে কোনোদিনই ছিল না। বাবার গাড়ি থাকলেও সাইকেল করেই কলেজে আসতো সে।
মূলত সাইকেলে পাম্প দেওয়ার জন্য বা সাইকেলের কোনো কলকব্জা বিকল হয়ে গেলে শম্ভুর গ্যারেজে প্রথম প্রথম সারাতে আসতো কুসুম। তারপর কলেজের ভিতরে না রেখে পাকাপাকিভাবে শম্ভুর গ্যারেজেই সাইকেল রাখা শুরু করল সে।
অনুরাগের প্রভাবে মনুষ্যজাতি এমন স্থানে গিয়ে পৌঁছেছে, যেখানে সকল মানুষই সমান, যেখানে কারও সঙ্গে কারো এক চুল তফাৎ নেই .. যেখানে সুন্দর, কুৎসিত প্রভৃতি তুলনা যেনো আর খাটেই না .. সীমা এবং তুলনীয়তা কেবল উপরে .. একবার যদি তা ভেদ করে ভিতরে প্রবেশ করতে পারা যায়, তাহলে দেখা যাবে সেখানে সমস্তই একাকার, সমস্তই অনন্ত।
এইরূপ ধারণার বশবর্তী হয়ে কালো, মোটা, কদাকার মুখশ্রীর শম্ভুকে কখন যে সুদর্শনা কুসুম তার মন দিয়ে বসলো তার হিসেব সে বোধহয় নিজেও রাখেনি। দুজনের প্রেম ক্রমে গভীর থেকে গভীরতর হলো .. অবশেষে পরস্পর বিয়ের সিদ্ধান্তে উপনীত হলো।
মনোতোষ বাবু তার কন্যার বিবাহ অন্যত্র স্থির করে রেখেছিলেন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই অত বড় বনেদি বাড়ির তার সুদর্শনা কন্যা ঐরূপ কুৎসিত দর্শন সাইকেল গ্যারেজ চালায় এমন একজনকে পালিয়ে গিয়ে শহরের বাইরের মন্দিরে বিবাহ করায় মনোতোষ বাবু একটা বড়সড় আঘাত পেলেন।
মেয়ের বিয়ের রাতেই তার বুকে প্রচণ্ড ব্যথা উঠলো। অনেক রাতে ডাক্তারবাবু এসে পরীক্ষা করে বললেন "মনোতোষ বাবুর হৃদযন্ত্র বিকল হয়েছে .. কৃত্তিম ভাবে তা প্রতিস্থাপন করতে হবে .."। পেসমেকার বসার ফলে অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হলেও চিরতরে পক্ষাঘাতে পঙ্গু হয়ে বিছানা নিলেন মনোতোষ বাবু।
পিতার এইরূপ অসহায় অবস্থায় তাকে একবার দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলো তার কন্যার মন। কিন্তু উপায় কি .. ওই বাড়িতে ঢোকার অনুমতি নেই কুসুমের।
শরীরের সঙ্গে মন অতপ্রতভাবে জড়িত। তাই শরীর যখন দুর্বল হয় তখন মনও অত্যধিক দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই কন্যা কুসুমের বারংবার আকুতিকে আর উপেক্ষা করতে পারলেন না মনোতোষ বাবু।
শুধু যে তার জামাতা এবং তার কন্যাকে এই বাড়িতে ঢোকার অনুমতি দিলেন তা নয় .. ওদের জন্য 'রায়চৌধুরী বাড়ির' একতলায় থাকবার স্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিলেন .. রক্তের টান বড়ো টান।
বিবাহের পূর্বেই শম্ভুর চারিত্রিক দোষ সম্পর্কে কানাঘুষো শুনলেও প্রেমের অমোঘ আকর্ষণে সেই বিষয়ে কর্ণপাত করেনি কুসুম। বিবাহের পর থেকেই যা ক্রমে স্পষ্ট হতে থাকলো কুসুমের সম্মুখে।
বাইরে একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত ছিলো শম্ভু। যার মধ্যে কিছু ঘটনা কুসুমের কানে এলে সে প্রতিবাদ করতো। প্রথমদিকে "এইসব হচ্ছে গুজব" এই বলে শম্ভু ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলেও। পরবর্তীতে কোনোকিছুই আর ধামাচাপা থাকলো না। মদ এবং মেয়েমানুষের প্রতি শম্ভুর আসক্তি ক্রমশ প্রকট হতে লাগলো কুসুমের সামনে। এমত অবস্থায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই কুসুমের কপালে জুটতো প্রহার।
একে তো বাড়ির অমতে সে বিয়ে করেছে। তার উপর বাপের বাড়িতে আসার পর তার স্বামী গ্যারেজের ব্যবসা লাটে তুলে দিয়ে নিষ্কর্মার মতো শ্বশুরের অন্ন ধ্বংস করে চলেছে .. এরূপ অবস্থায় সে যদি প্রতিনিয়ত তার উপর ঘটে চলা অত্যাচারের কথা তার পিতাকে বলে তাহলে শারীরিক এবং মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়া মনোতোষ বাবু তা সহ্য করতে পারবেন না। তাই মৌন থাকা স্থির করলো কুসুম।
বিবাহের পরবর্তী পর্যায়ে 'রায়চৌধুরী বাড়িতে' প্রায় এক বৎসর অতিক্রান্ত হতে চললো তাদের। শম্ভুর লাম্পট্য এবং উশৃঙ্খলতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে শুরু করলো। একে একে এই বাড়ির বিশ্বস্ত কর্মী এবং ভৃত্যশ্রেণীর লোকেরা অপসারিত হতে শুরু করলো। বলাই বাহুল্য দুষ্ট শম্ভুর এখন একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ালো এই বাড়ির সম্পত্তি। স্বভাবতই বাড়িতে একটা ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হলো। কামিনী নামের একটি বাঁধা মেয়েমানুষ ছিলো শম্ভুর। বাড়ির কাজকর্ম করে দেবে, তার সঙ্গে কুসুমের সেবা-শুশ্রূষা করবে - এই অজুহাতে কামিনীকে নিয়ে সে তুললো এই বাড়িতে। কুসুম তখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার প্রতি স্বামীর অবহেলা এবং স্ত্রীর সামনেই অন্য মহিলার সঙ্গে অবৈধ যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়া - এইসব ঘটনাপ্রবাহে কুসুমের মন এবং শরীর ক্রমশ ভাঙতে শুরু করলো।
যথা সময় সে একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তানের জন্ম দিলো ঠিকই। কিন্তু তার ক্রমবর্ধমান ভগ্ন হতে থাকা শরীর কুসুমকে ধীরে ধীরে মৃত্যু মুখে পতিত করলো। আদর করে ছেলের নাম রেখেছিলো বুবুন .. সেই বুবুন জন্মাবার সাত দিনের মধ্যেই মনোতোষ বাবুকে কাঁদিয়ে তার একমাত্র কন্যা কুসুম মারা গেলো। তবে এই পৃথিবী ছেড়ে চিরতরে চলে যাওয়ার আগে সে তার সন্তানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলো .. মা হয়ে তার সন্তানকে হয়তো সে রক্ষা করতে পারলো না .. কিন্তু সে যদি জীবনে কোনো পুন্যের কাজ করে থাকে তাহলে ভগবান নিশ্চয়ই তার সন্তানকে রক্ষা করবেন।
জন্মাবার পর থেকেই অবহেলায় বেড়ে উঠতে থাকলো বুবুন। পক্ষাঘাতে পঙ্গু দাদু ছাড়া আর কারো ভালোবাসা তো তার কপালে জুটতোই না .. তার বদলে পান থেকে চুন খসলেই জুটতো নিজের বাবার ভর্ৎসনা এবং কখনও কখনও প্রহার। এছাড়া কামিনীর বিষ-নজরে তো সে ছিলোই। শিশুমনে ক্রমশ ভীতির সঞ্চার হওয়ার দরুন বুবুন সব সময় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে থাকতো। এই বাড়িতে তাঁর একমাত্র সম্বল এবং কিছুটা হলেও সাহস জোগানোর মানুষ ছিলো তার দাদু মনোতোষ বাবু।
মনোতোষ বাবু এতদিনে তার জামাতা শম্ভুর স্বভাব চরিত্র এবং কার্যকলাপ সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণেই অবগত হয়েছেন। একজন বৃদ্ধ, পঙ্গু, অসহায় মানুষের পক্ষে শম্ভুর মতো একজন শক্তিশালী দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে যাওয়া তো সম্ভব নয়। তাই বুবুনের যখন পাঁচ বছর বয়স .. তখন তিনি পারিবারিক বন্ধু সলিসিটর রাধানাথ বাবুকে ডেকে একটি উইল তৈরি করালেন। যেখানে তার সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকার করে গেলেন তার নাতি বুবুনকে। এই ভাবেই হয়তো কিছুটা শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন তার জামাতাকে।
এরই ফলস্বরুপ কিনা জানা নেই .. উইল করার দিন দশেকের মধ্যেই আকস্মিকভাবে হুইলচেয়ার সমেত দোতলার সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে নিচে পড়ে মৃত্যু ঘটলো মনোতোষ বাবুর। সলিসিটরের তৎপরতায় থানা পুলিশ করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেই কেসের কোনো কিনারা হয়নি।
এই ঘটনার পর থেকে বুবুন আরো একা হয়ে গেল ওই বাড়িতে। সবসময় একটা ভয় গ্রাস করতে আসতো ওকে। ক্রমশ ভীতু হয়ে উঠতে থাকলো ছেলেটা। মাঝে মাঝে সলিসিটর রাধানাথ বাবু দেখা করতে আসতেন বুবুনের সঙ্গে। ওই একটি লোককেই সমীহ করতো বলা ভালো ভয় পেতো শম্ভু।
কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে। যে কারণের জন্য বড়লোক বাড়ির মেয়েকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করা, যে কারণের জন্য এত বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকা .. সেই সম্পত্তি কি তাহলে এবার হাতছাড়া হয়ে যাবে! তা কি করে সম্ভব .. এই সম্পত্তি আর তার মাঝখানে যে কাঁটা হয়ে আসবে, তাকেই উপড়ে ফেলবে শম্ভু। সে যদি তার পুত্র হয় তাতেও এই পাপ কাজ করতে সে পিছ'পা হবে না।
শম্ভু আর কামিনী মিলে পরামর্শ করলো যা করার এই ক'দিনের মধ্যেই করতে হবে। শুধু বুবুনের মৃত্যুটা যেন স্বাভাবিক মনে হয়। তা না হলে পুলিশ এবং সলিসিটর রাধানাথ বাবুর যাঁতাকলে পড়ে এই সম্পত্তি তাদের চিরতরে হাতছাড়া হয়ে যাবে। পারিবারিক ঘটনাপ্রবাহে এমনিতেই ভীতু প্রকৃতির ছেলে বুবুন। তাই ঠিক হলো তাকে যদি কোনো উপায় ভয়ঙ্কর ভূতের ভয় দেখানো যায় তাহলে নির্ঘাত সে হার্টফেল করে মারা যাবে। তাহলে আর কেউ সন্দেহ করবে না .. ভাববে মৃত্যুটা স্বাভাবিক। ব্যাস তাহলেই কেল্লাফতে .. এই পুরো সম্পত্তির মালিক হবে শম্ভু।
সেদিন গভীর রাতে একটা আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো শম্ভুর। ঘুম ভেঙে দেখলো পাশে তার রক্ষিতা, রাতের সঙ্গিনী কামিনী নেই। অনেকক্ষণ থেকে কে যেন ক্ষীণকণ্ঠে ডেকে যাচ্ছে, ‘"বাবা .. বাবা ..'’
বুবুন ভয় পেলে এভাবে অনবরত ডাকতে থাকে। এটা নতুন কিছু নয়। তাই শম্ভু বিছানা ছেড়ে উঠে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো পাশের ঘরের দিকে। এটা বুবুনের ঘর .. তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাকে একা থাকতে হয় এই ঘরে। ঘরে ঢুকে শম্ভু দেখলো বুবুন গুটিসুটি মেরে দেয়াল ঘেঁষে বিছানার ওপরে বসে আছে।
শম্ভু মনে মনে ভাবলো তাহলে কি ওদের প্ল্যান মতো আজ রাতেই কামিনী নিজের খেলা শুরু করে দিয়েছে! তারপর বিরক্তির স্বরে বললো "এই .. কি হয়েছে কি? ভয় পেয়েছো নাকি আবার কোনো কারনে?"
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে বুবুন। কিচ্ছু বলতে পারছে না। ইশারায় দেখালো খাটের নিচে।
"স্বপ্ন দেখেছো?" প্রশ্ন করলো শম্ভু।
"না .." সংক্ষিপ্ত জবাব বুবুনের।
"তাহলে?" এবার অধৈর্য্য হওয়ার পালা শম্ভুর।
বুবুন আবারও খাটের নিচে হাতের ইশারা করে দেখালো শুধু .. তার মুখের কথা যেন আটকে গিয়েছে।
"ভয়ের কিছুই নেই। মিছিমিছি ভয় পাচ্ছো কেন? তুমি এখন বড় হয়েছো। তোমাকে অনেকদিন বলেছি একা ঘুমোবার অভ্যাস করতে হবে। চুপচাপ শুয়ে পড়ো এবার না ঘুমোলে কিন্তু .. আমাকে তো চেনো তুমি.." এইভাবে নিজের ছেলেকে শাসিয়ে ঘর থেকে চলে যাবার উপক্রম করতে লাগলো শম্ভু।
শম্ভু ঘুরে দাঁড়াতেই তার জামার কোনায় টান পড়লো। বুবুন ওর জামা ধরে রেখেছে। মাথা ঘোরাতেই শম্ভু লক্ষ্য করলো তার ছেলে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এইরকম শান্ত অথচ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বুবুনের চোখে আগে কখনো দেখেনি সে।
মৃদু অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বুবুন বলে উঠলো "খাটের নিচে কে যেন আছে বাবা .. প্লিজ একটু দেখো না .."
কথাটা শুনেই মনের মধ্যে তরঙ্গ খেলে গেলো শম্ভুর। তাহলে কি এই সবকিছুই কামিনীর কেরামতি .. আজ কি তবে ভবলীলা সাঙ্গ হতে চলেছে! মনে মনে এইসব ভাবলেও। মুখে কপট রাগ দেখিয়ে বললো "খাটের নিচে কে থাকবে? যত্তসব আজগুবি কথা .."
শম্ভু মাথা নিচু করলো। আর ঠিক তখনই খাটের নিচে ধুপ করে একটা শব্দ হলো। বিছানার ঝুলে থাকা চাদর সরিয়ে কিছু সময় অন্ধকারে তাকিয়ে থাকলো শম্ভু। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে চোখে অন্ধকার কিছুটা সয়ে আসতেই সে লক্ষ্য করলো এক জোড়া জ্বলন্ত চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে।
শম্ভুর মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো। গায়ে কাঁটা দিয়ে ভয়ের একটি শীতল স্রোত তার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেলো। নিজের দৃষ্টিকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা কী করে সম্ভব! বিছানার নিচে জ্বলন্ত চোখে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে শম্ভুর দিকে দিকে তাকিয়ে আছে আর কেউ নয় .. তারই ছেলে বুবুন।
এখানে বুবুন এলো কীভাবে .. তাহলে বিছানার ওপরে কে .. শম্ভু নিজের হৃৎপিণ্ডের কম্পন শুনতে পাচ্ছে। ক্রমশ উদ্বেলিত হতে শুরু করেছে তার হৃদপিণ্ড।
সেই মুহূর্তে খাটের তলা থেকে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে ফিসফিস করে বুবুন বলে উঠলো '‘কে যেন আমার বিছানার ওপরে বসে আছে বাবা..'’
শম্ভু ধীরে ধীরে অনুভব করছে তার হৃদকম্পন ক্রমশ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে। অসহ্য যন্ত্রণা করছে তার বুকের বাঁ দিকে।
পুনশ্চঃ দেখতে দেখতে কুড়ি'টা বছর কেটে গেলো। শহর থেকে পাশ দিয়ে মালতীবালা হাইকলেজের মর্নিং কো-এড সেকশনে প্রধানশিক্ষক হয়ে এসেছে আমাদের বুবুন। রাধানাথ বাবু বিপত্নীক মানুষ .. তাই তার বন্ধু মনোতোষ বাবুর নাতিকে মানুষ করতেই 'রায়চৌধুরী বাড়িতে' কাটিয়েছিলেন তার জীবনের বাকি দিনগুলি। বছর তিনেক আগে তিনি পরলোক গমন করেছেন। বাড়ির প্রকাণ্ড বৈঠকখানার ঘরে দাদু মনোতোষ বাবুর ছবি এক পাশে তার আরেক দাদু রাধানাথ বাবুর ছবি লাগিয়েছে বুবুন .. আর মাঝখানে জ্বলজ্বল করছে তার মাতৃদেবী কুসুমের ফ্রেমে বাঁধানো ছবি।
একটা কথা যে বলাই হয়নি .. বিভীষিকাময় রাতের সেই ঘটনার পরের দিন সকালে 'রায়চৌধুরী বাড়ি' থেকে দু'জন পূর্ণবয়স্ক নর-নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
serar sera ...... sotti asadharon , ekei bole bhoye paowa