24-12-2022, 03:45 PM
(28-12-2021, 05:31 PM)Bumba_1 Wrote:
বিল্টুর কেরামতি
লেখা এবং প্রচ্ছদ :- বুম্বা
বহুদিন আগের কথা। আমাদের ক্যাম্পাসের পিছনে একটি বস্তি ছিলো (আছে হয়তো এখনও)। সেখানে ছিলো সমাজের নিম্নবিত্ত বিভিন্ন শ্রেণীর খেটে খাওয়া মানুষের বাস। সবাই সকালবেলা যে যার কাজে বেরিয়ে যেত .. সন্ধেবেলা অথবা কেউ কেউ রাত্রিবেলা ফিরে এসে গান-বাজনা হই হট্টগোল সহযোগে মিলেমিশে আনন্দ করে দিন কাটাতো। বিল্টু ছিলো ওদের সকলের নয়নের মণি।
ওহো, বিল্টুর পরিচয়টাই তো দেওয়া হয়নি। বিল্টু হলো মুচির ছেলে। বয়স তার বেশি নয় .. এই দশ কি এগারো হবে। জুতো মেরামত করতে পারে না, কিন্তু কালি লাগিয়ে বুরুশ করতে ওস্তাদ। সকাল না হতেই কালি আর বুরুশের ছোট্ট ঝোলাটা নিয়ে সে বেরিয়ে গান করতে শুরু করে দেয় ..
"একটি টাকা দাও গো বাবুএকটি টাকা দাও -ময়লা জুতো সয় না পায়েপালিশ করে নাও .."
খদ্দের জুটতে দেরি হয় না। সে চটপট জুতোয় কালি লাগায়, বুরুশ করে আর গান গায়। খদ্দের খুশি হয়ে ওর প্রাপ্য একটি টাকার সঙ্গে আরেকটি টাকা বকশিশ দিয়ে যায়।
কিন্তু এই শহরে দুষ্টু লোকেরও তো অভাব নেই! এই তো দিন কয়েক আগে, চশমা পরা একটি বাবু ওকে দিয়ে জুতো পালিশ করিয়ে নিয়ে সরে পড়েন, আর ফেরেন না। বিল্টু মনে মনে সেদিন বুঝে উঠতে পারেনি যে ভদ্রলোকেরও কেন এমন মনোবৃত্তি হয়! তাও সামান্য একটা টাকার জন্য।
এই ঘটনার দিন কয়েক পরের কথা। সেদিন খদ্দেরের অন্ত নেই .. বিল্টু জুতো পালিশ করে যাচ্ছে .. আর গান গেয়ে চলেছে ওর মিষ্টি মধুর গলায়।
একজন বাবু তো ওর গান শুনেই একটি টাকা দিতে যাচ্ছিলেন .. কিন্তু বিল্টু তাকে থামিয়ে বললো "কই .. আপনার জুতো তো পালিশ করিনি বাবু! জুতো পালিশ করিয়ে নিন, তারপর না হয় মনে হলে আরও একটা টাকা বকশিশ দেবেন।"
ওর কথায় খুশি হয়ে ভদ্রলোক জুতো পালিশ করিয়ে নেন, আর যাওয়ার সময় দুটো টাকা বকশিস্ দিয়ে যান। বিল্টু ভাবে এমন লোকও তবে আছে ..
বিল্টুর খদ্দের প্রায় কমে এসেছে .. এমন সময় সে দেখতে পেলো, টাকা না দিয়ে পালিয়ে যাওয়া সেই বাবুটি আসছেন ওদিক থেকে। দেখামাত্রই বিল্টুর মাথায় এক ফন্দি খেলে গেলো। সে গলা উঁচু করে বললো "বাবু, একবারটি পালিশ করিয়ে নিন .. দেখবেন জুতো কেমন ঝকঝক করছে .. টাকা আজ না থাকে আরেকদিন দেবেন .. আসুন।"
বাবুটি ভাবলেন - মন্দ কি! আগে পালিশটা তো করিয়ে নিই তারপর না হয় টাকা .. একবার সরে পড়লে, কে আর ধরে!
ছোট্ট বাক্সটার উপর বাবু নিজের ডান পা'টা রাখেন .. বিল্টুও শুরু করে দেয় পালিশ করা। দক্ষিণ দিকের পর্ব সমাপ্ত হলে পরে বাবু তার জুতোসুদ্ধ বাঁ পা'টা বাক্সের উপরে তুলে ধরেন .. "নে, এবার এটা পালিশ কর" বিল্টুর দিকে চেয়ে বলেন বাবু।
ঘাড় নেড়ে বিল্টু জবাব দেয় "না বাবু .. একটাই থাক। আগে সেদিনকার টাকা'টা ফেলুন.. তারপর না হয় ওটা হবে।"
বিল্টুর কথা শুনে বাবু তো অবাক - ছোঁড়া'টা বলে কি .. আচ্ছা চালাক তো! আরেক পাটি জুতো পালিশ না করালে যে ব্যাপারটা খুব বিচ্ছিরি দেখাবে তা বলাই বাহুল্য। মহা মুস্কিলে পড়ে গেলো .. বেশি দেরি করলে ছোঁড়া'টা হয়তো লোক জড়ো করতে পারে .. কাজ নেই বাপু অত হাঙ্গামা করে .. তার চেয়ে আগের দিনের বকেয়া মিটিয়ে দু'টো টাকা দিয়ে দেওয়াই ভালো - এই ভেবে বাবুটি তখন বিল্টুকে দু'টো টাকা দিয়ে বললেন "নে বাপু .. খুব আক্কেল হয়েছে, তাড়াতাড়ি এখন এটা পালিশ করে দে।"
পয়সা পেয়ে বিল্টু তখন বাকি জুতোটা পালিশ করে দেয়। আর যাওয়ার সময় বাবুর দিকে চেয়ে বলে ওঠে "মনে রাখবেন বাবু, কাউকে ঠকালে নিজেকেই শেষটায় ঠকতে হয়।"
ছোট্ট ছেলে বিল্টুর মুখে এইরূপ কথা শুনে বাবুটি তখন পালাবার পথ পায় না।
lekata to valoi, kitu ei storyr kichu portion ek jayega theke anupranito hoye lekha, prapti swikar korle aro valo lagto, anyways nice story