24-12-2022, 03:39 PM
(31-08-2021, 03:52 PM)Bumba_1 Wrote:
বন্যেরা বনে সুন্দর
লেখা এবং প্রচ্ছদ :- বুম্বা
মুখবন্ধ : একেবারে ছোটদের জন্য আমার এই গল্পটি একসময় লিখেছিলাম। এই থ্রেডে বিশেষ করে এই সাইটে হয়তো একেবারেই বেমানান এই গল্পটি। তবুও পোস্ট করলাম। কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন পাঠক বন্ধুরা।
শহর থেকে সংরক্ষিত বন বেশি দূর নয়। বনে থাকে নানা রকমের পশু .. বাঘ, হাতি, শিয়াল, হায়না, নেকড়ে আরো কতো রকমের পশু .. যেমন মাংসাশী পশু থাকে তেমনি আবার তৃণভোজী পশুও থাকে।
তবে মাংসাশী পশু গুলো ছোট ছোট তৃণভোজী পশুগুলোকে খেয়ে ফেলে, ওরা আবার গাছপালা খেতে পারে না। ফলে বনে অনেক সময় ওদের খাবার মতো পশুর আকাল পড়ে যায়। তাই অনেক সময় খাবারের সন্ধানে ওরা বেরিয়ে পড়ে এবং লোকালয়ে চলে আসে। আর তখনই হয় বিপত্তি .. হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার।
সেদিন এইরকমই একটা কাণ্ড ঘটে গেলো। আমাদের শহরে হঠাৎ করে একটা চিতাবাঘ খাবার খুঁজতে খুঁজতে বেরিয়ে পড়েছে বন থেকে। এধার ওধার খুঁজে ওর চোখে পড়লো একটা কুকুর।
কুকুরটি কি যেনো একটা খাচ্ছে .. বেশ হৃষ্টপুষ্ট, চকচকে চামড়া .. সঙ্গে সঙ্গে চিতাটার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো .. মারলো এক লাফ। এক্কেবারে কুকুরটার সামনে।
কুকুরটিও কিছু একটা আন্দাজ করেছিলো, আসলে ওদের ঘ্রাণশক্তি তো ভীষণ প্রখর! চিতাটা কাছে পড়বার আগেই ও দিলো দৌড়। ছুটতে লাগলো প্রানপনে . চিতাটাও ছুটতে লাগলো পেছন পেছন। ছুট ছুট .. কুকুরটাও ছুটছে চিতাও ছুটছে .. খানাখন্দ মাঠ-ঘাট পেরিয়ে ছুটছে দুজনে।
চিতা বাঘের সঙ্গে কি কুকুর দৌড়ে পারে! তবুও আত্মরক্ষা করার আপ্রান চেষ্টা। কুকুরটি ঢুকে পড়লো লোকালয়ের মধ্যে; চিতাটিও ঢুকলো। ভয় মানুষের প্রাণ উড়ে গেলো .. যে যার ঘরে ঢুকে পড়লো আর দরজায় খিল দিলো।
এদিকে কুকুরটার পথঘাট সবই চেনা। সে জানতো সামনে একটা কুয়ো আছে। কোনো দিকে না তাকিয়ে ও ঝাঁপ দিলো কুয়োতে .. পড়লো গিয়ে জলে ঝপাৎ করে। সঙ্গে সঙ্গে চিতাটাও দিলো ঝাঁপ .. পড়লো গিয়ে একেবারে কুকুরটির ঘাড়ের উপর। কুকুরটি তাল সামলাতে না পেরে জলে ডুবে যেতে লাগলো .. চিতাটা তার উপরেই ঝাপিয়ে পড়লো .. আঁচড়ে কামড়ে অস্থির করে তুললো কুকুরটাকে। চিতার আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত হলো কুকুরের দেহটা .. কুয়োর জল লাল হয়ে উঠলো। কুকুরটি আস্তে আস্তে তলিয়ে গেলো কুয়োর জলের মধ্যে দিয়ে একেবারে নিচে পাতালে।
এদিকে কুকুরের পেছনে চিতাকে ছুটতে দেখে এলাকায় শোরগোল পড়ে গেছে .. তার উপরে দুটোই কুয়োতে পড়েছে জানতে পেরে শহরসুদ্ধ মানুষ যেনো ভেঙে পড়েছে সেখানে দৃশ্যটি দেখবার জন্য .. কার আগে কে কুয়োতে ঝুঁকবে ভেবে পাচ্ছে না। কুয়োতে জল ছিলো বেশ খানিকটা নিচে, এলাকার মানুষ তা জানতো।
চিতাটা জলে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে .. হর্ণ দিতে দিতে এসে পড়লো বনবিভাগের কর্মীরা, এলো পুলিশ বাহিনী .. ভিড় সরিয়ে তারা কুয়োর কাছে চলে এলো .. এবার শুরু হলো চিতা উদ্ধারের তোড়জোড়।
কিন্তু চিতা উদ্ধার হলেই তো হবে না .. চিতাবাঘ যা সাংঘাতিক প্রাণী .. সে উঠে যে কার ঘাড়ে পরবে কে জানে। তাই পুলিশ আগে সামলাতে লাগলো লোকজনকে .. সবাইকে সরিয়ে তবে তারা কুয়োর ধারে গেলো।
এদিকে চিতা এখন কুকুরের ভরসা ছেড়ে নিজের প্রাণ বাঁচানোর আশায় উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের দেহটাকে জলের উপর ভাসিয়ে রেখে জুল-জুল করে তাকাচ্ছে। যদিও ওর চোখটা জ্বলছে .. তবুও তার ভাবখানা এমন যদি কেউ দয়া করে তাকে তুলে দেয়।
উদ্ধারের কাজ শুরু হলো .. কত রকমের ব্যবস্থা। প্রথমে জাল ফেলা হলো একটা .. চিতাকে জালে আটকানো হলো। কিন্তু তোলে কার সাধ্য .. কিছুটা জল তো সে খেয়েইছে .. দেহের ওজনও বেড়েছে স্বাভাবিক ভাবেই। খানিকটা উঠেই ঝপাৎ করে জাল ছিঁড়ে আবার জলে পড়ে গেলো চিতাটা। "গোঁ গোঁ" করে মাঝে মাঝেই আওয়াজ তুলছে চিতা। কুয়োর ফাঁকা বাতাসে গমগম করে উঠছে সে আওয়াজ। উপর থেকে ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলে নিচ্ছে ফটোগ্রাফারেরা।
বনবিভাগের কর্মীরাও আপ্রাণ চেষ্টা করছে চিতাকে তোলার জন্য। এবার তারা অন্য একটা উপায় বের করলো .. একটা ছোটখাটো গাছের গুঁড়ির দু'ধারে শক্ত করে দড়ি বেঁধে কুয়োয় নামিয়ে দিলো।
চিতাবাঘের তো দারুন বুদ্ধি .. ও বুঝে গেছে যে, সব আয়োজনই তাকে উপরে তোলবার জন্য .. মনে মনে হয়তো ভাবছে "একবার উঠতে পারলে হয়।"
গাছের গুঁড়িটা যেইনা জলে পড়া চিতাটা এক পলক দেখে নিয়ে সামনে দু'পা দিয়ে ঠিক মানুষের মতো করে গুঁড়িটাকে জাপ্টে ধরলো। বনবিভাগের কর্মীরা খুব সাবধানে দড়িটা ধরে আস্তে করে তোলার চেষ্টা করছে। এতক্ষণ জলে থেকে তার দেহটা হয়েছে ভয়ানক ভারী। কিন্তু এবার আর চিতাটা পড়ে গেলো না, উপরে প্রায় দশ-বারোজন মিলে দড়িটাকে ধরে আছে শক্ত করে। চিতার অর্ধেক দেহ জলে, অর্ধেক গুঁড়িটাকে আঁকড়ে ধরে। উপর থেকে বনকর্মীরা একটু একটু করে টানার চেষ্টা করছে।
গাছের গুঁড়িটা একটুখানি উপরে উঠেছে মাত্র। চিতাটা পেছনের পা দুটো গুঁড়িতে রাখার চেষ্টা করলো। ব্যাস, চোখের পলক কারোর পড়তে পারলো না। চিতাবাঘটা সর্বশক্তি দিয়ে মারলো এক লাফ .. সোজা কুয়োর উপরে। ঠিক ঐ রকমই এক পলকে এক লাফে সোজা গিয়ে পড়লো রাস্তায়। সেখান থেকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দৌড় দিলো বনের দিকে। দৌড় দৌড় .. শুধু যেন একটা হলদে কালো রেখা তীব্র গতিতে ছুটে যাচ্ছে।
সকলেই হতভম্ব, কেউ কিছু বোঝার আগেই সে একেবারে হাওয়া। তবে যতটুকু বুঝেছিলো কেউ কেউ .. তারা তো ছিটকে পড়েছে হুড়মুড় করে এ ওর ঘাড়ে।
ফটোগ্রাফারেরা চটপট তাদের ক্যামেরায় রেকর্ড করতে থাকেন লোকালয়ে এসে প্রাণভয়ে কেমন দৌড়াচ্ছে চিতাটা .. টিভিতে নিশ্চয়ই এটা দেখানো হবে।
এদিকে বনবিভাগের কর্মীরা আর কি করেন .. চিতা গেলো ফসকে .. আবার কুকুরের দেহটাও গেছে কুয়োর জলে তলিয়ে একেবারে নিচে। অগত্যা এবার কুকুরের দেহটাকেই তুলতে হবে।
বেচারা কুকুর চিতার থাবাও খেলো আবার জলে ডুবে মারাও গেলো।
As usual nice drawing, but lekha ta motamuti