24-12-2022, 03:32 PM
(23-06-2021, 03:46 PM)Bumba_1 Wrote:
পুরানো সেই দিনের কথা
লেখা :- বুম্বা
প্রচ্ছদ :- আমার মাতৃদেবীর নিজের হাতের সৃষ্টি
আমার ঠাকুমা আমার জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। উনাকে আমি দিদা বলে ডাকতাম। আমার যখন ১৪ বছর বয়স তখন উনি মারা যান। উনার চলে যাওয়াটা বহুদিন মন থেকে মেনে নিতে পারিনি .. তারপর আস্তে আস্তে সময় যতো গড়িয়েছে, মন ততটাই শক্ত হয়েছে .. time is the best healer.
উনি কেমন মানুষ ছিলেন সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, কারণ সব নাতি-নাতনির কাছেই তাদের দাদু/দিদা'রা সেরা হন। আমার কাছেও উনি ঠিক তাই ছিলেন।
তবে এমনিতে ভীষণ রকম রাশভারী এবং গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ হলেও উনার সম্বন্ধে একটা কথা অবশ্যই বলতে হয়, উনার sense of humour দুর্দান্ত ছিলো আর অসম্ভব সহজ কিন্তু সোজা কথা বলতে পছন্দ করতেন। সেই রকমই একটি ঘটনা আজ শেয়ার করবো আপনাদের সঙ্গে। তবে তার আগে কিছুটা মুখবন্ধের প্রয়োজন ..
আমার মাতৃদেবীর মধ্যে শিল্পসত্তা ছিলো ভরপুর। কিন্তু কোনো জিনিসটাই উনার জীবনে স্থায়ী হয়নি .. কোনো টা নিজের ইচ্ছাতে আবার কোনো টা অপরের আপত্তিতে। তবে আমার মায়ের একটা অদ্ভুত স্বভাব ছিলো .. যে সখগুলো উনি নিজে থেকে মেটাতে পারেননি বা মেটাতে চাননি সেগুলো আমার ইচ্ছে থাক বা না থাক জোর করে আমার উপর চাপিয়ে দিতেন।
এই যেমন ধরুন গান এবং অঙ্কন তো সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলই, বিবাহের আগে উনি একজন নৃত্যশিল্পীও ছিলেন। তবে বিবাহের পর আমার ঠাকুরদার 'বাড়ির বউ ধেই ধেই করে নাচবে না' এইরকম উক্তিসূচক আপত্তিতে উনার নৃত্যকলার ওইখানেই ইতি হয়ে যায়। এ তো গেলো অপরের আপত্তির কথা। এবার নিজের ইচ্ছেতে বেশিদিন কোনো কিছুর মধ্যে আটকে না থাকার কয়েকটা ঘটনা বলি ..
হঠাৎ করে নাচ ছেড়ে দেওয়ার ফলস্বরূপ বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বভাবতই উনার শরীরের নিম্নভাগে চর্বি জমতে থাকে এবং আস্তে আস্তে চেহারা ভারীর দিকে যেতে থাকে।
বাবা যে কোম্পানিতে চাকরি করতো সেই কোম্পানির সংলগ্ন একটি বড়সড় কম্পাউন্ডে থাকতাম আমরা। সেখানে ফ্যাক্টরির ডাক্তার থেকে শুরু করে মালি, সুইপার, এমনকি বাড়িতে কাজ করার লোকও ফ্রী ছিলো আমাদের।
যাই হোক সেই কোম্পানির ডাক্তার অশোকলাল গুপ্তা আমার মাতৃদেবীকে পরীক্ষা করে বললো "ভাবিজি আভি তাক তো ঠিক হ্যায় .. লেকিন এরপরে শরীর আরো ভারী হয়ে গেলে কষ্ট আপনারই হবে .. ইসি লিয়ে কুছ এক্সারসাইজ করতে হবে আপনাকে .. এই যেমন ধরুন সকালে উঠে জগিং করবেন আমাদের কম্পাউন্ডে, বিকেলে সাইক্লিং করবেন আউর daily সুইমিং করনা তো জরুরি হ্যায়"
ডাক্তারের কথা কি আর অমান্য করা যায়! সেই সময় অর্থাৎ ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে মহিলাদের জন্য 'লেডিবার্ড' নামের একটা রেসিং সাইকেল খুব বিখ্যাত ছিলো। পরেরদিন গোলাপি রঙের লেডিবার্ড সাইকেল এলো .. আমার মায়ের সাইকেল শেখার ক্লাস শুরু হলো। চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে উনি সাইকেল চালানো পুরোপুরি রপ্ত করলেও খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি উনার সাইক্লিং এর মাধ্যমে এক্সেসাইজ। অগত্যা আমার প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও মাত্র ১১ বছর বয়সে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ওই লেডিবার্ড সাইকেল দিয়ে আমার সাইকেল চালানো শেখা শুরু।
আমাদের কম্পাউন্ডের মধ্যে একটি বড়োসড়ো সুইমিং পুল ছিলো। ওখানে শুধু কোম্পানির employee এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ঢোকার অনুমতি ছিলো। একজন পার্সোনাল ট্রেনার রেখে বিদেশিনীদের মতো সাঁতারের পোশাক কিনে শুরু হলো আমার মাতৃদেবীর সুইমিং শেখার ক্লাস। আমার মা অসম্ভব সুন্দরী একজন নারী ছিলেন। তাই হয়তো তাকে খুশি করার জন্যই হোক বা অন্য কোনো কারণে হোক সেটা আমি ঠিক বলতে পারবো না .. আমার বাবা কোনোদিন তার কোনো ইচ্ছাতে বাধা দেয় নি। কিন্তু সাঁতার শেখার ব্যাপারে আমার বাবার প্রবল আপত্তি থাকলেও আমার ঠাকুমার অনুমতিতে তার আপত্তি ধোপে টেকেনি। কিন্তু এখানেও সেই একই ব্যাপার .. মাসখানেক সাঁতার শিখে দুম করে হঠাৎ একদিন ওখানে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন আমার মা। ফলস্বরূপ আমার অনুমতির তোয়াক্কা না করেই আমার উপরে দায়িত্বভার পড়লো মায়ের শখ পূর্ণ করার। সুইমিং ক্লাসে ভর্তি হয়ে গেলাম আমি।
তবে এখন আমার realization হলো ভাগ্যিস জোর করে এই সমস্ত প্রশিক্ষণ আমার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাই হয়তো অনেক কিছুই পারি এখন আবার অনেক কিছু পারিও না।
যাক সে কথা, একসময় আমার মাতৃদেবী শখ করে 'সন্তুর' নামক একটি বাদ্যযন্ত্র কিনেছিলেন শিখবেন বলে। কিন্তু সময়ের অভাবে শিখতে পারেননি। তাই শেখার দায়িত্বটা পরবর্তীকালে আমার উপরেই বর্তায়।
মায়ের যিনি মাস্টারমশাই ছিলেন তিনি খুব ভালোমানুষ ছিলেন। প্রফেশনালিজমের কিছুই জানতেন না। আমিও উনার কাছেই সন্তুরের তালিম নিতাম, কিন্তু হঠাৎ একদিন শুনলাম উনি দিল্লী চলে যাবেন। ওখানে নাকি বেটার কিছু অফার পেয়েছেন।
যাই হোক, এরপর একদিন আমার নতুন মাস্টারমশাইয়য়ের আগমন ঘটলো। এঁর নাম অরণ্য চৌধুরী। সন্তুর বাদক হিসেবে কেমন ছিলেন ঠিক বুঝতে পারিনি, তবে সাংঘাতিক প্রফেশনাল ছিলেন।
উনি মাস মাইনের ধার ধারলেন না। উনার বক্তব্য ছিলো প্রত্যেক রবিবার আসবেন আর যেদিন আসবেন ১০০ টাকা নিয়ে বাড়ি যাবেন। শুরু হলো আমার ক্লাস। প্রথম মাসে কথামতো চারদিনই এলেন। কিন্তু পরের মাস থেকে শুধু রবিবাসরীয় ক্লাসে আর সীমাবদ্ধ থাকলো না আমার সন্তুর শেখা। রবিবার ছাড়াও উনি অন্যান্য দিন'ও আসতে লাগলেন।
আমি কিছু বলতে গেলেই উনি বলতেন "আমার অর্ধেক হলে তুমি। আমি যত বেশী করে আসবো ততই পূর্ণতা পাবে তুমি।" এইভাবেই চলতে লাগলো কয়েকমাস। কিন্তু কিছুমাস পরে যখন দেখা গেলো উনি মাসে ৮ দিন আসছেন তখন আমার বাড়ির লোকের সহ্যের সীমা ছাড়ালো।
বাবা বললেন "ঘোড়ারডিম শেখা হচ্ছে, এইসবের জন্য আমি মাসে এতগুলো টাকা দিতে পারবো না।" আর সত্যি তো সেইসময় মাসে ৮০০ টাকা মানে বিশাল ব্যাপার ছিল।
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে বেড়ালের গলায় ঘন্টা টা বাঁধবে কে? তার মানে হল কে বারণ করবে মাস্টারমশাই কে! এমনভাবে উনাকে বোঝাতে হবে যে যাতে উনি অপমানিত না হন। বাবা তো আগেই হাত তুলে দিয়েছেন। আমার মাতৃদেবী কোনোদিনই সাংসারিক খুঁটিনাটি এবং বৈষয়িক ব্যাপারে মাথা গলাতেন না। তাছাড়া জানিনা কেনো মাস্টারমশাইকে বারণ করার পক্ষে সায় ছিলো না মায়ের .. তাই তিনিও এই ব্যাপারটার মধ্যে ঢুকতে চাইলেন না। অবশেষে আমার ঠাকুমা দায়িত্ব নিলেন।
শুক্রবার বিকেল পাঁচ'টা তে উনার আসবার কথা ছিল। সেদিন দিদা আমাকে বললেন "এই শোন, আজ সাড়ে ছ'টার আগে খেলে যদি বাড়ি ঢুকিস তো ঠ্যাং ভেঙ্গে দেবো।"
আমি ভাবলাম - এ আবার কি! রোজ তাড়াতাড়ি না ফিরলে ঠ্যাং ভাঙার হুমকি দেয় যে দিদা আজ উল্টো বলছে কেনো! তারপর ভবলাম আমার অতকিছুতে দরকার কি.. অনেকক্ষণ খেলতে পারবো এই ভেবে বেড়িয়ে গেলাম। এরপর পৌনে সাত'টা তে খেলে ফিরে যা শুনলাম সেটাই বলি আপনাদের...
মাস্টারমশাই আসার পরে দিদাই সেদিন উনাকে চা করে দিয়েছিলেন। উনি জিজ্ঞেস করাতে বলেছিলেন বাড়িতে কেউ নেই। আসলে বাবা আপিসে ছিলেন ঠিকই কিন্তু মা পাশের ঘরেই ছিলো। দিদা আমার মা'কে বের হতে দেননি।
মাস্টারমশাই : বুম্বা কখন ফিরবে?
দিদা : বুম্বা পড়তে গেছে, রাত ন'টার আগে ফিরবে না।
মাস্টারমশাই : ও হো, অতক্ষণ তো বসতে পারবো না। যাগ্গে আজকের টাকা টা দিন, আমি উঠি।
দিদা : কতটাকা যেন বাপু তোমার? ১০০ টাকা তাই না? এই নাও, আর শোনো, বুম্বার এখন বিকেলে রোজই পড়া থাকবে, আর সকালে তো কলেজ থাকে, তাই তোমার এসে আর কাজ নেই। ওই না হয় সময় করে শিখতে যাবে তোমার কাছে। তুমি ওকে ৫০ টাকা করে দিয়ে দিও .. কেমন!
মাস্টারমশাই : না না, আপনি বুঝতে পারছেন না মাসিমা। আমি কেনো ওকে টাকা দেবো? actually আমি তো গুরু আর ও তো ছাত্র আমার।
দিদা : রাখো তো তোমার একচুয়ালী আর দুইচুয়ালী .. তুমি নিজেই তো বলো বুম্বা নাকি তোমার অর্ধেক .. তুমি যদি আমাদের বাড়িতে এলে ১০০ টাকা নাও তাহলে বুম্বা তোমার বাড়িতে গেলে ৫০ টাকা পাবে না কেনো?
অরণ্য চৌধুরী তো সেদিন পলায়ন করেছিলেন বটেই, উল্টে আমার ঠাকুমার কথায় এতটাই ভয়ে পেয়ে গিয়েছিলেন যে, যাওয়ার সময় বলে গেছিলেন উনি নাকি আগামীকাল'ই বাইরে কোথাও চলে যাচ্ছেন। তাই আমাকে আর শেখাতে পারবেন না।
valo lageni , nijer life niye jokhon kono lekha likhcho, tokhon setake aro interesting kora proyojon, otherwise keu porte pochhondo korbe na