Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
প্রথম_প্রেম
#18
#প্রথম_প্রেম_২
পর্ব-০৭(স্পেশাল)+৮
লেখিকা-#খেয়া

সময় চলেছে তার আপন গতিতে।দিনও কারো জন্য থেমে থাকেনা।সেও তার আপন গতিতে এগিয়ে চলেছে।

আমার পায়ের ক্ষত অনেকটাই সেরে গিয়েছে।সেদিন অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়ার কারনেই এতটা সময় লাগল।
সেদিন আমি অযথাই এত ভয় পেয়েছিলাম।আমার মাথায় সেদিন এটা আসেইনি যে ওটা নিহান না হয়ে রুহানও হতে পারে।রুহান হলো নিহানের ছোট ভাই।রুহান ছোটো হলেও ওর চেহারা একদম নিহানের মতো।খুব কাছে থেকে কেউ না দেখলে ওদের পার্থক্য করতে পারত না।
ওনাকি নিহানের ঘরে আমার কিছু জিনিস পেয়েছিল তাই দিতে এসেছিল।তবে সেগুলো এতদিন পরে দিতে আসার কারণটা ধরতে পারিনি।

মাঝে কেটেছে তিনদিন।একদিন আমার প্রহরের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি।ফোনটাও বন্ধ।মামির থেকে জেনেছি সে নাকি দেশের বাইরে গেছে।
মামির কথা শুনে একটু খারাপ লেগেছিল, সে আমায় বলে তো যেতে পারতো।

---------------

সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা তাই মনপ্রাণ দিয়ে পড়ছি।আপাতত দুনিয়ার সবকিছু মাথা থেকে বের করে দিছি।

পরীক্ষা শেষ হতে প্রায় দুইসপ্তাহ লেগে গেলো।একদিন প্রহরের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি।উনিও কোনো যোগাযোগের চেষ্টা করেননি।

পরীক্ষা শেষ করে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে একটা লম্বা ঘুম দিলাম।একদিন টেনশনে একদম ঘুম হয়নি।
এখন একটা লম্বা ঘুম দরকার।

ঘুমের মাঝেও আজ বারবার প্রহরকে দেখতে পারছি।এই লোকটা এখন স্বপ্নেও এসে জ্বালায় আমায়।অসহ্য লোক একটা।

ঘুম থেকে উঠে কিচেনে যাচ্ছিলাম কফি বানাতে।ড্রয়িংরুমে এসে দোখি এখানেও প্রহর বসে আছে।এখন তো জেগে জেগে ও উনাকে দেখতে পাচ্ছি।

----কী ম্যাডাম, এত কী ভাবেন।

----আপনি কি এখানে সত্যি আছেন।

----বাহ,মাথার সাথে কী এখন চোখটাও খারাপ হয়ে গেছে।

" উনার এই রসকসহীন কথা শুনে বুঝলাম যে উনি সত্যি আছেন।তবে উনি এখানে কেন?"

---- আপনি কখন এসেছেন?

---- তিনঘন্টা আগে।

---- তো এতক্ষন কী করলেন আর আমায় ডাকেননি কেন?

---- তোমায় ডাকতে ডাকতে গলা ব্যাথা হয়ে গেছে আমার অথচ তোমার ঘুম ভাঙার নামই নেই।
শেষে বিরক্ত হয়ে নিচে নেমে এলাম।কিচেনে গিয়ে কফি বানিয়ে খেলাম।তারপর টিভি দেখলাম।তারপর ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম খেলাম। আর এখন অবশেষে তোমার ঘুম ভাঙল।

---- কীহহ! আপনি আইসক্রিম কেন খেয়েছেন হ্যা,ওগুলো তো ভাইয়া আমার জন্য এনেছিল।

---- এই মেয়ে এত ছোটোলোকি করো কেন তুমি।তোমাকে আমি পুরো আইসক্রিমের দোকান কিনে দিবো।

----আপনি কেন এসেছেন? আর একদিন কই ছিলেন? আমার সাথে যোগাযোগ কেন করেননি?

---- তোমার এক্সাম কেমন হয়েছে?

---- খুব ভালো।

---- আমি তোমার কাছাকাছি থাকলে তুমি কখনো এতটা ভালোমতো পরীক্ষা দিতে পারতে না।আর আমি এখানে থাকলে তোমার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারতাম না।তাই চলে গিয়েছিলাম।

---ওহ। তাহলে আজ কেন এলেন?

---- তোমাকে দেখার তীব্র আকাঙ্খাটা আর দমিয়ে রাখতে পারিনি।
যাইহোক তুমি রেডি হয়ে নাও।

---- কোথায় যাবো?

---- সেটা সারপ্রাইজ।

---- আমি যাবনা।যদি আমায় নিয়ে গিয়ে আপনি আমায় মেরে ফেলে।

---- আমি পাপ করিনা।জানোতো আত্মহত্যা মহাপাপ।আর তোমাকে মেরে ফেলা মানে নিজেকে নিজে মেরে ফেলা।আর এই কাজ আমি কখনো করতে পারব না।আর তুমি স্টুপিটের মতো সারাদিন এসব উল্টোপাল্টা চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘোরো কেন?

---- আচ্ছা বাবা,আপনি দাঁড়ান আমি তৈরি হয়ে আসছি।

_________

অন্যদিকে "

---- নিবির ভাইয়া, আমার কথাটা একটু শোনেন না।

---- রাহা প্লিজ,তোমাকে না নিষেধ করেছি আমার পিছনে আসবেনা।তোমার কী সেলফ রেসপেক্ট বলতে কিছু নেই।তোমার এই ধরনের কাজে আমি প্রচন্ড বিরক্ত, রাহা।দয়াকরে আর আমার পেছনে এসোনা।আমাকে একটু শান্তিতে বাঁচতো দাও, প্লিজ।

" কথাগুলো বলেই চলে যায় নিবির।নিবিরের এহেন কথায় খুব কষ্ট পেলো রাহা।ও তো ওর ভালোবাসা গোপনই রাখতে চেয়েছিল।শুধু মাত্র আফরার কথায় ও নিবিরকে ওর মনের কথাটা বলেছিল, বাকিটা তো জানেনই।"

রাহাও বাড়ি চলে যায়।ও ঠিক করেছে আর কখনো ও নিবিরের সামনে যাবেনা।

_________

----আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?

---- ভয় পাচ্ছো নাকি,আফরা।

---- মোটেও না। আমি তো এমনি বললাম রাত হয়ে যাচ্ছে তাই। আর ভাইয়াও তো টেনশন,,,

---- করবে না।তোমার ভাইয়াকে বলেই এসেছি।

---- ওহ।

প্রহর আমাকে একটা ফাঁকা মাঠে নিয়ে এলো। চারিদিকে অন্ধকার।আমি একটু সামনে এগিয়ে গেলাম।একটু পরে পিছনে তাকিয়ে দেখি প্রহর নেই।

খানিকক্ষণ পরেই আকাশে অনেক গুলো ফানুস দেখতে পেলাম।চারিদিকে আলো ছড়িয়ে গেলো।অনেকগুলো আতসবাজি একসাথে ফুটে উঠল।আমার চারপাশে অনেক বেলুন উড়ে উঠল।কিন্তু এগুলো কীভাবে হচ্ছে।আর কে করছে?
পিছনে তাকিয়ে দেখি প্রহর আমার সামনে হাটুগেড়ে বসে আছে।উনি আমার হাতটা ধরে বললেন

---- আর পাঁচজনের মতো কথার মায়ায় জড়িয়ে তোমাকে প্রপোজ করার সাধ্য আমার নেই।তবু শুধু তোমাকে নিজের বলে দাবি করার অধিকারটা চাইব তোমার থেকে।মানুষের জন্য নিঃশ্বাস যতটা জরুরী আমার কাছে তুমিও ঠিক তেমনই অপরিহার্য।তোমাকে ছাড়া নিজেরে অস্তিত্ব কল্পনা করতে গেলেও আমি ভয় পায়।
জানি না আমি মানুষটা কেমন তবুও তোমাকে ভালোরাখতে বিন্দুমাত্র কার্পন্য করব না।আমি তোমাকে শুধু একটাই অনুরোধ করব,আমার ভালোবাসাটাকে একটু অনুভব করো, আফরা।ভালোবাসা বোঝাবুঝির ব্যাপার না।এটা অনুভবের ব্যাপার।

"উনার কথায় আমি বাকরুদ্ধ হয়ে রইলাম।খানিক থেমে উনি আবারও বলতে লাগলেন"

---- আমি জানি তোমার বয়সটা কম।তবুও তোমাকে ছাড়া আর একটা দিনও কাটানো আমার পক্ষে সম্ভবনা।তোমার একটু ইগনোরেন্স যে আমাকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে, আফরা।তোমাকে একদিন সামনাসামনি না দেখলে যে দম বন্ধ হয়ে আসে।তোমার মাঝে আমি আমার নিজের অস্তিত্বটা অনুভব করতে চাই,আফরা।আমাকে বুঝি আজ তুমি ফিরিয়ে দিবে।
তোমার কাছে আমি কী সেটা আমি জানিনা। কিন্তু আমার কাছে তুমি এমনকিছু যা আমি বলে বোঝাতে পারব না।জানি প্রথমপ্রেম স্পেশাল হয়।প্রথম প্রেম ভুলেও কিন্তু ভালো থাকা যায়।তুমিও তো আমার প্রথম প্রেম।তোমার প্রেমটা পূর্ণতা পায়নি বলে কী তুমি আমার প্রেমটাকেও পূর্ণতা দিবেনা,আফরা।

" উনার প্রতিটি কথা যেন আমার শিঁরা- উপসিরায় প্রবেশ করছে।শরীর- মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভূত হচ্ছে।সত্যি কী প্রথম প্রেমকে এত সহজে ভুলে যাওয়া যায়।
আমার প্রথম প্রেম পূর্ণতা পায়নি।তাই বলে কী প্রহরের প্রথম প্রেমকে তার থেকে কেড়ে নেওয়ার কোনো অধিকার আছে আমার?"

---- তোমার মৌনতায় কী তোমার সম্মতির লক্ষণ?

---- হয়ত বা।আপনার ভালোবাসটাকে আমিও অনুভব করতে চাই, প্রহর।প্রথম প্রেম নয়, সত্যিকার ভালোবাসা চায় আমার।

" আমার উত্তরে প্রহর যে কী পরিমান খুশি হয়েছে তা বলে বোঝানোর মতো না।কোনো মানুষ বুঝি কাউকে সত্যি এতটা ভালোবাসতে পারে।"

প্রহর আমার হাতে একটা আংটি পড়িয়ে দিলেন।আর বললেন

---- তোমাকে একটু ছুঁয়ে দেখার তীব্র আকাঙ্খা জাগে আমার মনে।কিন্তু এখননা।খুব শীঘ্রই তা হবে।সেদিন তুমি সম্পূর্ণরূপে আমার হবে।একদম হালাল ভাবে।

" এই মানুষটাকে যে এখন আমার বড্ড প্রয়োজন।বড্ড বেশি প্রয়োজন।সবাই তো আমায় ছেড়ে চলে যায়।কিন্তু এই মানুষটা নাহয় একান্তই আমার থাকল।তাতে ক্ষতি কী?

----চলো তোমাকে বাসায় রেখে আসি।অনেক রাত হয়ে গেছে।

---- হুম চলেন।

----------------

বাসায় এসে দেখি ন'টা বাজে।কিন্তু ভাইয়া এখনো আসেনি।
অনেকবার কল করলাম কিন্তু ধরল না।হয়ত বিজি আছে।

মাঝে কেটে গেছে চারদিন।এই চারদিন আমার কাছে খুব দীর্ঘ একটা সময় লেগেছে।ইদানিং সবকিছুই খুব ভালোলাগে।রংহীন জিনিসগুলো রঙিন লাগে।মনে ভালোবাসার রং লেগেছে যে।

বসে বসে কার্টুন দেখছিলাম তখনই নিবির ভাইয়ার ফোন এলো।দেরি না করে ফোনটা ধরলাম।

---- কেমন আছিস,আফরা।

---- ভালোই আছি।

---- ওহহ।তোর বান্ধবী রাহার কী খবর।

---- আপনি আবার ওর খবর কেন নিচ্ছেনন।

---- না মানে ওর ফোনটা বন্ধ তো, তাই।

---- আপনি আবার ওকে ফোনও করেন। কী কেস বলেনতো।

---- তুই তো সবই জানিস, আফরা।চারদিন ধরে ফোন বন্ধ করে রেখেছে।

---- টেনশনে ছিলেন বুঝি।যাইহোক, আমি ওর খবর নিয়ে তোমাকে জানাচ্ছি।

---- আচ্ছা।

নিবির ভাইয়া ফোন রাখতেই দরজার বেল বেজে উঠল।আমি দরজা খুলে যা দেখলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
দেখলাম ভাইয়া,,,,

( চলবে)

#প্রথম_প্রেম_২
পর্ব-০৮
লেখিকা-#খেয়া

এসব কী ভাইয়া!
তুই বিয়ে করে ফেললি। আমাকে একবার বললিও
না।তুই আমাকে একটুও ভালোবাসিসনা।

---- আফরা,এমন করিসনা প্লিজ।এমনিতেই প্রচুর ঘেটে আছি।

---- তুই বিয়ে কেন করলি।

---- না হলে আজ জেলে চলে যেতাম।এই স্টুপিটটা আজ আবার মরতে বসে ছিল।

---- এভাবে বলিসনা ভাইয়া, অনন্যা আপু সত্যি তোকে অনেক ভালোবাসে।
আচ্ছা তুই ঘরে যা আমি আপুকে নিয়ে ভেতরে যাচ্ছি।

---- হুম।

" আমি অনন্যা আপুকে নিয়ে আমার রুমে চলে গেলাম।'

---- থ্যাংক গড! আমি তো ভেবেছিলাম তুমি ভয়ে সব গুলিয়ে ফেলবে।

---- সিরিয়াসলি, তোমার আইডিয়া যে এভাবে কাজ করবে বুঝতেই পারিনি।
কিন্তু এখন কী হবে।

---- তুমি একদম চিন্তা করো না।ভাইয়া যে তোমায় পছন্দ করে সেটা আমি জানি।কিন্তু ও জীবনেও এটা স্বীকার করত না।বিয়েটা তো হয়ে গেছে, বাকিটা আমি দেখে নিবো।

---- লাইক সিরিয়াসলি, আমি তো ভাবতেও পারিনি যে তুমি মাথায় এত দুস্টু বুদ্ধি মাথায় নিয়ে ঘোরো।

----- আমি কিন্তু এমনই।

---- তাই নাকি!

---- হুম।

---- তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি ভাইয়াকে দেখে আসি।

---- আচ্ছা।

"আসলে অনন্যা আপুকে এসব করতে আমি বলেছিলাম। নাহলে ভাইয়া যা মানুষ কখনোই নিজের মনের কথা বলতোনা।"

---- আসব, ভাইয়া।

---- হুম আয়।

---- মুখটাকে এমন করে রেখেছিস কেন? নতুন নতুন বিয়ে করেছিস একটু চিল মুডে থাকতে পারিস না।

---- আফরা"

---- তুই তো অনন্যা আপুকে পছন্দ করতি তাহলে বিয়ে কেন করতে চাসনি।

---- তোর জন্য।বাবা-মা চলে যাওয়ার পর তোকে ভালোরাখার দায়িত্ব আমার।আমি চায়না অন্য কারোর জন্য তোর কোনো কষ্ট হোক।
অনন্যা তোকে কেমন ভাবে এক্সেপ্ট করবে সেটা আমি সত্যি বুঝতে পারছিনা।

" বাবা- মা চলে যাওয়াট পর ভাইয়া ই আমাকে আগলে রেখেছে।আমার সব ভুল গুলোকে দুনিয়ার থেকে লুকিয়ে রেখেছে।ছোটোবেলা থেকেই ভাইয়া সবসময় আমায় বেস্ট জিনিসটাই দিয়েছে।আজ আমিও তাকে তার পছন্দের জিনিসটা দিলাম।আমার কষ্ট হলে হবে তবুও সে তো খুশি হবে।আর আমি জানি অনন্যা আপু এমন মেয়ে না।"

---- তুই চিন্তা করিস না ভাইয়া।অনন্যা আপু আমাকে একদম তার নিজের বোনের মতোই দেখবে।

" নিচে দরজায় বেল বাজার শব্দ হলো।আমি নিচে চলে গেলাম সাথে ভাইয়াও এলো।"

দরজা খুলে দেখি মামা - মামি আর প্রহরের বাবা,মা।

---- তোমরা সবাই এখানে।

---- আবিরের বউ দেখতে এলাম।

---- তোমাদের কে বলল এসব?

---- কেন প্রহর।

---- উনি কীভাবে জানলেন?

----ও তো আবিরের বিয়েতে সাক্ষী ছিল।

" মামির কথা শুনে কটমট দৃষ্টিতে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।"

---- এটা কী ঠিক হলো, ভাইয়া।তুই উনাকে বিয়ের সাক্ষী বানালি আর আমাকে জানানোর প্রয়োজন ও মনে করলিনা।

ভাইয়া আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

---------------

দুপুরবেলা মাত্রই একটু ঘুমিয়েছিলাম তখনই ফোন বেজে উঠল।না দেখেই ফোনটা তুললাম।

---- কে?

----কে কী হ্যা,তুই কী রে আফরা।বললি যে রাহার সাথে কথা বলাবি অথচ এখনও কিছু করলি না।

---- নিবির ভাইয়া, রাহা আপনার সাথে কথা বলতে চায়না তো আমি কী করতে পারি।

---- প্লিজ আফরা,কিছু একটা কর।আমি সত্যি সেদিনের বিহেবের জন্য দুঃখিত। একবার কথা বলানোর ব্যবস্থা করে দে।

---- আচ্ছা দেখছি।

ভর দুপুরবেলা যাচ্ছি রাহাদের বাড়ি।মহারানীকে কত ফোন করলাম ধরলোনা।আর এদিকে তো নিবির ভাইয়া আমাকে ফোন দিয়ে পাগল করে দিচ্ছে।

রাহাকে অনেক বুঝিয়ে নিয়ে গেলাম নিবির ভাইয়ার সাথে দেখা করাতে।ওরা দুজন কথা বলছে।আমি খানিকটা দূটে দাঁড়িয়ে আছি।ইদানিং নিবির ভাইয়ার সাথে কাউকে দেখলে আর খারাপ লাগেনা।

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বোর হচ্ছিলাম তাই প্রহরকে ফোন করলাম।উনি মহারাজ ফোন তো ধরলেন না উল্টো কেটে দিলেন।প্রচন্ড রাগ হলো উনার এমন কাজে।
অসহ্য লোক একটা।এদিকে এরা দুজন এমনভাবে কথা বলছে যা আজ আর শেষ হবেনা।
ওদেরকে বলে আমি সামনের লেকটার দিকে গেলাম।
বিকেল হয়ে এসেছে, চারিদিকে সুন্দর বাতাস।বাতাসে কিছু একটার মিষ্টি গন্ধ ভাসছে।
একা একা হাঁটতে মাঝেমধ্যে ভালোও লাগে।কিন্তু এমন জনসমাগমের জায়গায় একা হাঁটা মানে লোকের বিনোদনের মাধ্যম।

হঠাতই কেউ পিছন থেকে আমার চুল টেনে ধরল।প্রচন্ড রাগ নিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি " রাদিফ"।

---- তুই? এখানে কীভাবে। আর এভাবে পাবলিক প্লেসে চুল টেনে ধরে,মাথাটা ধরে গেলো আমার।

---- আরে, চুপ কর, মা। এতকথা একবারে কেউ বলে। তুই তো বাচালই থেকে গেলি।

---- তুই হঠাৎ এখানে কেন?

---- আবির ভাইয়ার বউ দেখতে আসছি।বাই দ্যা ওয়ে,আমি কিন্তু সব জানি।

---- কী জানিস।

---- এটাই যে সবকিছু তোর প্ল্যান ছিল।প্রহর ভাইয়া আমাকে সব বলে দিয়েছে।

---- তুই প্রহরকে চিনিস?

---- হুম।আমার একটা মাত্র দুলাভাই বলে কথা।তাকে না চিনলে হয়।আর যাই বলিসনা কেন মানুষটা কিন্তু তোর জন্য একদম পারফেক্ট।

---- কী বলিস তুই এসব।

" আমি আর রাদিফ কথা বলছিলাম তখনই রাহা ফোন করে বলল নিবির ভাইয়া নাকি ওর প্রোপোজালটা নিয়ে ভেবে দেখবে বলেছেন।ওরা নাকি বাসায় চলে গেছে।আমি আর রাদিফও বাসায় চলে এলাম।"

------------------

দিন চলেছে তার আপন গতিতে।আজ আমার ফাস্ট ইয়ারের রেজাল্ট দিবে।বসেবসে নখ কামড়াচ্ছি।সামনে অনন্যা আপু খাবার নিয়ে বসে আছে।আর ভাইয়া আমাকে টেনশন করতে মানা করছে।
খানিকক্ষন পরে রেজাল্ট জানতে পারলাম।প্রথম হয়নি কিন্তু বেশ ভালো পজিশনে আছি।

মনটা একদম ফুরফুরে হয়ে গেলো।ভাইয়া আর অনন্যা আপুর সম্পর্ক বেশ ভালো চলছে সাথে রাহা আর নিবির ভাইয়াও।প্রথমে অনন্যা আপুর বাড়ির লোক না মানলেও পড়ে তারা সব মেনে নেয়।
কিন্তু ইদানিং প্রহর আমাকে খুব কম টাইম দেয়।

চারদিন পর আজ দেখা করবে বলেছে।

কতক্ষন ধরে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।অথচ উনার আসার নাম নেই।

---- সরি, একটু লেট হয়ে গেছে।

---- এতদিন কই ছিলেন?

----চাকরি খুঁজছিলাম।বউকে মেনটেন করার জন্য তো একটা চাকরি দরকার।

---- তো চাকরি পেয়ে গেছেন।

---- হুম।একটা হসপিটালে জেনারেল সার্জন এর।

---- ও আপনি কী নিবির ভাইয়ার চেয়ে বড়।

---- হুম। দুই বছরের।

---- তাহলে তো আপনি বুড়ো। শেষ পর্যন্ত একটা বুড়ো বড় জুটল আমার কপালে।

---- আর আমার কপালে যে একটা পিচ্চি বউ জুটল তার কী।

---- আহারে।

---- চলো আজ তোমাকে নিয়ে একটা জায়গায় যাবো।

---- কোথায়?

---- আমাদের বাড়ি, মা নিয়ে যেতে বলেছে তোমায়।

প্রহরদের বাসায় এসেছি।প্রহরের মা খুব ভালো মানুষ একদম নিজের মেয়ের মতো দেখে আমায়।
আমি ওদের পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখছিলা।প্রহরের রুমে ঢুকেই আমার চোখ আটকে গেলো সামনের দেয়ালের দিকে।পুরো দেয়াল জুড়ে আমার বিভিন্ন সময়ে তোলা ছবি।কিন্তু এত ছবি উনি কোথায় পেয়েছেন।
ছবিগুলো খুব সুন্দর আর যত্ন করে রাখা।সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।উনার রুমের সবকিছু খুব সুন্দর সাজানো গোছানো।নরমালি ছেলেদের ঘর এতটা পরিপাটি হয়না।আমি খুব মনোযোগ দিয়ে ঘরের সবকিছু দেখছিলাম।তখনই প্রহর রুমে এলো আর বলল

---- ভালো করে দেখো কিছু পছন্দ না হলে বদলে ফেলবো।তাছাড়া বিয়ের পর তো এখানে শুধু তোমার সাজগোজের জিনিসই থাকবে।

---- আমি মোটেও এত সাজিনাএত কী আমি তো একটুও সাজিনা।

" প্রহর বিছানায় বসে একটান দিয়ে আমাকে উনার কোলে বসিয়ে বললেন"

---- তোমার যা রূপ আছে তা কারো হৃদয় ঝলসে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর কিসের দরকার বলো।

---- হু হয়েছে,আর তেল দিতে হবেনা।আমি জানি আমি কতটা সুন্দর।

---- হোয়াট! তুমি সুন্দর, লাইক সিরিয়াসলি। তোমার মতো পেত্মীকে সুন্দর কে বলেছে।

" উনার এই সেকেন্ডে সেকেন্ডে রং বদলানোর স্বভাবটা আমার মোটেও পছন্দ না।আমি রাগ করে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলাম।"

আন্টি রান্না ঘরে ছিল।আমি উনার কাছে গিয়ে উনাকে সাহায্য করতে চাইলও উনি না করে দেন।
উনি আমাকে উনার ঘরে নিয়ে গেলেন।খুব সুন্দর একটা চেন আমার গলায় পড়িয়ে দিলেন আর বললেন

---- এটা আমার মেয়ের ছিলো।কিন্তু এটা বেশিদিন পড়ার সৌভাগ্য ওর হয়নি।তাই তোমায় দিলাম।আমার ছেলের মতো এটাকেও আগলে রেখো,আফরা।

---- আপনার একটা মেয়েও আছে।প্রহর তো কখনো বলেনি আমায়।

---- আমার মেয়ে ছিলো।এখন নেই।আমার পরি আর নেই আমার কাছে।

---- মানে?

---- চারবছর আগে ও মারা গেছে।আমাদের একটা ভুল সিদ্ধান্ত ওকে শেষ করে দিয়েছে।
আমি চাইনা আমার পরির মতো প্রহরও আমাদের ছেড়ে চলে যাক।তাই ওর কোনো কাজে ওকে না করিনা।

---- আপনার মেয়ে কী মারা গেছে, আন্টি।

---- না ও মারা যায়নি।শুধু আমাদের থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।

---- মানে?

---- মানে চারবছর আগে,,,,,

(চলবে)
[+] 2 users Like joker00777's post
Like Reply


Messages In This Thread
প্রথম_প্রেম - by Yourpriya - 22-12-2022, 12:08 PM
RE: প্রথম_প্রেম - by ddey333 - 22-12-2022, 12:23 PM
RE: প্রথম_প্রেম - by S_Mistri - 22-12-2022, 08:01 PM
RE: প্রথম_প্রেম - by Somnaath - 22-12-2022, 10:51 PM
RE: প্রথম_প্রেম - by ddey333 - 23-12-2022, 11:06 PM
RE: প্রথম_প্রেম - by NaimZ - 23-12-2022, 11:22 PM
RE: প্রথম_প্রেম - by joker00777 - 24-12-2022, 01:24 AM
RE: প্রথম_প্রেম - by Somnaath - 24-12-2022, 11:17 AM
RE: প্রথম_প্রেম - by ddey333 - 25-12-2022, 04:45 PM
RE: প্রথম_প্রেম - by ddey333 - 28-12-2022, 12:37 PM



Users browsing this thread: