Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
প্রথম_প্রেম
#13
#প্রথম_প্রেম
পর্ব-০৭(শেষ)
লেখিকা- #খেয়া

এসব কী বলছ তুমি নিবির ভাইয়া।

---- আমি ঠিকই বলছি।আগে তুই রোজ আমাকে বিরক্ত করতি,আমিও বিরক্ত হতাম।কিন্তু ইদানিং তোর ঐ বিরক্তি গুলোকে বড্ড মিস করি।

---- তুমি তো কথা আপুকে ভালোবাসো, তাইনা।

---- জানিনা।আমি কথার সাথে থাকলেও আমার মন বারবার শুধু তোকেই খোঁজে।তুই জানিস,যখন প্রহর আমাকে বলেছিল ও তোকে ভালোবাসে তখন এক মুহূর্তেরর জন্য মনে হয়েছিল আমি বুঝি তোকে হারিয়ে ফেলবো।

---- আপনার ভাই আমাকে ভালোবাসতেই পারে কিন্তু আমি তাকে ভালোবাসিনা।

---- তুই তো আমাকে ভালোবাসিস তাইনা,আফরা।

---- ভালোবাসতাম হয়ত এখনো বাসি।কিন্তু আপনার প্রতি আমার তীব্র ভালোবাসা আপনার করা অপমান অবহেলার নিচে চাপা পরে গেছে।

---- আফরা!

---- দেখুন নিবির ভাইয়া একটা সময় আমি আপনার জন্য পাগলামি করছি,রাতের পর রাত কেঁদে কাটিয়েছি ঠিকই । কিন্তু এখন এসব পাগলামি আমায় মানায় না।
আমি এখন এসব কিছু নিয়ে ভাবতে চাইনা। আমি এখন আমার পুরো ফোকাসটা আমার ক্যারিয়ারের ওপর দিতে চাই।

---- কিন্তু আফরা,,,

---- আপনি কী আমায় বাড়ি দিয়ে আসবেন নাকি আমি একাই যাবো।

---- না, চল আমি দিয়ে আসছি।

--------------

সেদিন এভাবে নিবির ভাইয়াকে রিজেক্ট করে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।তবুও নিজের পড়াশোনায় যথেষ্ট ফোকাস করেছি।

আজ এডমিশন টেস্ট।ভাইয়ার সাথে এসেছি কেন্দ্রে।চারিদিকে এত মানুষ দেখে সত্যি খুব ভয় হচ্ছে।এত সব ট্যালেন্টটেড মানুষের মাঝে কী নিজের জায়গাটা করে নিতে পারব।

অবশেষে পরীক্ষাটা দিয়েই দিলাম।একদম ভালো না হলেও যথেষ্ট ভালো হয়েছে পরীক্ষাটা।
হলে ঢোকার আগে নিবির ভাইয়া ফোন দিলেও ফোনটা ধরিনি।

আজ এডমিশনের রেজাল্ট দিবে।সকাল থেকে প্রচন্ড টেনশনে আছি।বসে বসে নখ কামড়াচ্ছি।
আর ভাইয়া নেটে রেজাল্ট দেখার চেষ্টা করছে।অনেকজনের পরে অবশেষে লিস্টে আমার নামটা পাওয়া গেলো।
লিস্টে নিজের নামটা দেখা মাত্রই আনন্দে কেঁদে দিলাম।এবার হয়ত আমি আম্মুর স্বপ্নটা পূরণ করতে পারব।

------------
আজ ভার্সিটি তে প্রথম দিন।ভাইয়া আমায় রেখে গেছে।

দিনটা বেশ ভালোই কাটল।অনেক জনের সাথে বেশ ভালোই পরিচিত হয়েছি।

ক্লাশ শেষে গেটের বাইরে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম নিবির ভাইয়ার ফ্রেন্ডরা মিলে আড্ডা দিচ্ছে।নিবির ভাইয়া আর কথা আপু যথেষ্ট ক্লোজ হয়ে বসেছিল।ওদেরকে দেখেই বোঝা যায় তাদের সম্পর্কটা কী।

বেশ কিছুদিন হলো ভার্সিটি যাচ্ছি।এই কয়দিন নিবির ভাইয়া অনেকবার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে।কিন্তু আমি প্রতিবারই তাকে ইগনোর করেছি।
যদি সে আমাকে সত্যি ভালোবাসতো তাহলে এখনও কথা আপুর সাথে এতটা ক্লোজ থাকতোনা।

খুব চেষ্টা করেছি তাকে ভুলে যাওয়ার কিন্তু পারিনি।কারন সে যে আমার প্রথম প্রেম।
মাঝে অবশ্য প্রহর অনেকবার তার মনের কথা আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।কিন্তু আমি এখন এসবে জড়াতে চাই না।

এই কয়দিন একদমই মামা বাড়ি যায়নি।খালামণিরাও আর যোগাযোগ করেনি তবে আরাব ভাইয়া আর রাদিফের সাথে প্রায়ই কথা হয়।

মাঝে মাঝে আরশি আর রাহা এসে আমার সাথে থাকে।তবুও যে দিনশেষে বাবা - মায়ের শূন্যতাটা বেশ উপলব্ধি করতে পারি।

আজ যদি তারা থাকত তাহলে হয়ত আমার জীবনটাই অন্যরকম হতো।

-----------

আজ আমাদের ভার্সিটিতে নবীনবরণ অনুষ্ঠান।
নিবির ভাইয়া তো এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে।তাই অন্য সবার মতো তার ওপরও অনেক কাজের দায়িত্ব পড়েছে।আমি আর রাহা দুজনেই এই ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি।

আজ রাহার কথায় একটা নীল শাড়ি পড়েছি।অবশ্য দুজনেই একরকম শাড়ি পরেছি।

স্টেজের সামনে বসায় নিবির ভাইয়ার চোখে খুব সহজেই পরেছি।ভাইয়া বেশ কয়েকবার আমার দিকে তাকিয়েছে।সেটা আমি দেখেছি।তবুও এমন একটা ভান ধরে আছি যেন আমি ভাইয়াকে চিনি না ।

ভার্সিটিতে নিবির ভাইয়া সবার ক্রাশ বয়। সবাই তার পিছনে লেগে থাকে।আর নিবির ভাইয়াকে আমার এভাবে ইগনোর করাটা আমার নতুন বন্ধুদের ঠিক হজম হচ্ছেনা।

---- আচ্ছা, নিবির ভাইয়ার জন্য যেখানে সবাই পাগল সেখানে তুই উনাকে এভাবে ইগনোর করিস কেন।?(দিয়া)

---- হ্যা, তাই তো। এমন করিস কেন, আফরা।(মাহি)

---- আরে তোরা জানিস না আমার সবসময় আনকমন জিনিস পছন্দ। আর নিবির ভাইয়াকে তো সবাই পছন্দ করে আমি নাহয় অন্য কাউকে পছন্দ করলাম।

আমার এমন উত্তরে যেন ওরা একটুও খুশি হয়নি।দিয়া আবারো বলল

---- জানিস নিবির ভাইয়া আর কথা আপু নাকি একে অপরকে ভালোবাসে।তারা নাকি সামনে মাসেই বিয়ে করবে।

দিয়ার এমন কথা শুনে বুকের বা পাশে একটা চিনচিন ব্যাথ্যা অনুভব করলাম।ওখানে আর একমুহূর্ত দাড়ালাম না।রাহাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ির জন্য।

মাঝে কেটে গেছে সাতদিন।আজ আরাব ভাইয়ার বিয়ে।মেয়ে অবশ্য ভাইয়ারই পছন্দ করা।আমাদের দাওয়াত করা হলেও আমরা যাবোনা ঠিক করেছি।আমাদের দাওয়াত দেওয়ার আসল কারন অবশ্য তারা কতটা যোগ্য মেয়ে পেয়েছে সেটা দেখানো।সেদিন আব্বুর 'না' টা আজও মেনে নিতে পারেনি আংকেল।
ভাইয়া আমাকে নিষেধ করে গেছে যেন এসব নিয়ে একদম না ভাবি।তবুও শত ভাবনার মাঝে বারবার একজনের কথাই মনে পড়ে " নিহান"।

আমার কিশোরী বয়সের আবেগ।ছোটো ছিলাম কিন্তু প্রচন্ড আবেগী ছিলাম।তখন সবটাই আবেগ দিয়ে ভাবতাম।
সবে মাত্র ক্লাস টেনে পড়ি আমি।তখম নিহানের প্রতি একটা প্রবল আকর্ষন কাজ করত আমার।কিন্তু সেটা শুধুই একপ্রকার মোহ ছিল, যা সময়ের সাথে সাথে কেটে যায়।কিন্তু নিহান আমার পিছু ছাড়েনি। সে আমার পিছনেই পড়ে থাকত।ভাবত আমি হয়ত রূপের অহংকারে তাকে ইগনোর করছি।

তাই সে আমার রূপ নষ্ট করারও চেষ্টা করেছিল।একদিন সন্ধ্যেবেলা কোচিং শেষে ফেরার পথে নিহান আর ওর বন্ধুরা আমার পথ আটকায়।
নিহান আমার মুখে এসিড ছুড়ে মারে।কিন্তু সৌভাগ্য বশত কিছুটা এসিড আমার হাতে আর বাকিটা মাটিতে পরেছিল।
চোখের সামনে নিজের ঝলসে যাওয়া চামড়া দেখে এক গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলাম।

জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করেছিলাম।দীর্ঘদিন সাফার করেছিলাম।অনেকগুলো সার্জারির প্রয়োজন হয়েছিল।

বাবারা নিহানের নামে মামলা করেছিল।ওকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল।

ঐ ঘটনার পর নিজেকে একদম ঘরবন্দি করে নিয়েছিলাম।তখন আমরা চট্টগ্রাম থাকতাম।তাই এব্যাপারে নিবির ভাইয়া কিছু জানেনা।পরে অবশ্য আমার জন্যই সবাই ঢাকা শিফট করেছিল।

অনেকদিন পরে শুনেছিলাম নিহানের জামিন হয়ে গেছে।তার কিছুদিন পরেই ও সুইসাইড করেছিল।কিন্তু কোন তা এখনো অজানা।

আমি এতদিন ভাবতাম হয়ত নিহানই আমার প্রথম প্রেম ছিল।কিন্তু পরে বুঝেছি যে ও আমার মোহ ছিল আর নিবির ভাইয়া ছিল আমার প্রথম প্রেম।

নিহানকে যে আমি পুরোপুরি ভুলতে পেরেছি তা না।আজও সেই রাতের কথা মনে পড়লেই গা শিউরে ওঠে আমার।কী অসহ্য ছিল সে যন্ত্রনা।সেদিনের সবকিছু হয়ত আমি সহ্য করে ছিলাম।কিন্তু আজ যদি নিবির ভাইয়া আমায় কোনো কষ্ট দেয় তাহলে সেটা আমি সামলাবো কী করে।

নিহান সুইসাইড করার আগে আমার জন্য একটা চিঠি লিখে রেখে গেছিল।যেটা আমি অনেক পরে পেয়েছিলাম।
ওখানে ও বলেছিল যে আমার ওপর করা অন্যায় নাকি ওকে প্রতিমুহূর্তে কুঁড়েকুঁড়ে খাচ্ছে।তাই সে আর সহ্য করতে না পেরে সুইসাইড করেছে।

এখনো মাঝেমাঝে নিহানের মৃত্যর জন্য নিজেকে দায়ী মনে হয়।

--------------

আজ ভার্সিটি শেষে গেটের বাইরে দাড়িয়ে আছি।আজ ভাইয়া নিতে আসবে না।আর আজ একটা রিক্সাও পাচ্ছিনা।তাই খানিকটা রাস্তা হেঁটেই এগিয়ে গেলাম।

ওখানেই দেখলাম কথা আপু আর নিবির ভাইয়া একসাথে হাত ধরে হাঁটছে।না চাইতেও চোখ দিয়ে দু'ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
আমাকে দেখেই নিবির ভাইয়া কথা আপুর হাত ছেড়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল

---- আমাকে যখন কথার সাথে দেখে এতটাই খারাপ লাগছে তাহলে সেদিন না করে দিলি কেন?
নাকি তুই কখনো আমায় ভালোই বাসিসনি।আমি কী শুধুই তোর মোহ ছিলাম।

---- না,,,,আপনি আমার মোহ ছিলেন না। আপনি আমার ভালোবাসা ছিলেন আমার প্রথম প্রেম ছিলেন।কিন্তু আমি শুধুই আপনার মোহ ছিলাম।ক্ষণিকের মোহ।যা কিছু সময়ের জন্য আমার প্রতি আপনাকে আকৃষ্ট করেছিল।কিন্তু তা তো স্থায়ী ছিলনা।কখনো হতো না।
বরং আপনাকে বিয়ে করলে নিজেকে পস্তাতে হতো।

আমার কথাগুলো শুনেই নিবির ভাইয়া মাথা নামিয়ে নিলেন।আমার কথাগুলো যে ভুলনা সেটা উনি বুঝেছেন।

নিবির ভাইয়াকে কিছু বলতে না দিয়েই ওখান থেকে চলে এলাম।খানিকক্ষণ পরেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে। আমি দ্রুত ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে নিলাম।

সামনে তাকিয়ে দেখলাম একটি ছেলে ও মেয়ে হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, এরা নতুন নতুন প্রেমে পড়েছে এরা।

আকাশের দিকে তাকিয়ে এই বৃষ্টিফোটাকে সাক্ষী করে সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই চাইলাম যেন,এদের প্রথম প্রেমটা পূর্ণতা পায়।

(সমাপ্ত)

( সবাই হ্যাপি এন্ডিং চান।সবার গল্পেই কী হ্যাপি এন্ডিং হয়।কিছু ভালোবাসা অপূর্ণ থেকে যায় আর সেসব ভালোবাসার গল্পগুলো রয়ে যায় অজানা।)
[+] 2 users Like joker00777's post
Like Reply


Messages In This Thread
প্রথম_প্রেম - by Yourpriya - 22-12-2022, 12:08 PM
RE: প্রথম_প্রেম - by ddey333 - 22-12-2022, 12:23 PM
RE: প্রথম_প্রেম - by S_Mistri - 22-12-2022, 08:01 PM
RE: প্রথম_প্রেম - by Somnaath - 22-12-2022, 10:51 PM
RE: প্রথম_প্রেম - by ddey333 - 23-12-2022, 11:06 PM
RE: প্রথম_প্রেম - by NaimZ - 23-12-2022, 11:22 PM
RE: প্রথম_প্রেম - by joker00777 - 24-12-2022, 01:04 AM
RE: প্রথম_প্রেম - by Somnaath - 24-12-2022, 11:17 AM
RE: প্রথম_প্রেম - by ddey333 - 25-12-2022, 04:45 PM
RE: প্রথম_প্রেম - by ddey333 - 28-12-2022, 12:37 PM



Users browsing this thread: